কলকাতা
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কলকাতা বা কোলকাতা ([kolkata] (), পূর্বনাম কলিকাতা, হল )পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর এবং ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী। কলকাতা শহরটি হুগলি নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত। এই শহর পূর্ব ভারতের শিক্ষা, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র। দক্ষিণ এশিয়ায় কলকাতা তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির শহর। কলকাতা বন্দর ভারতের প্রাচীনতম সচল বন্দর তথা দেশের প্রধান নদী বন্দর। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, কলকাতার জনসংখ্যা ৪,৪৯৬,৬৯৪। জনসংখ্যার হিসেবে এটি ভারতের ৭ম সর্বাধিক জনবহুল পৌর-এলাকা। অন্যদিকে বৃহত্তর কলকাতার জনসংখ্যা ১৪,১১২,৫৩৬। জনসংখ্যার হিসেবে বৃহত্তর কলকাতা ভারতের ৩য় সর্বাধিক জনবহুল মহানগরীয় অঞ্চল। বৃহত্তর কলকাতার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সূচক (আনুমানিক)$২৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যবর্তী (ক্রয়ক্ষমতা সমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জিডিপি অনুযায়ী)। এই সূচক অনুযায়ী ভারতে কলকাতার স্থান মুম্বই ও নয়াদিল্লির ঠিক পর তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতির শহর।[10][11][13]
কলকাতা কোলকাতা, কলিকাতা | |
---|---|
মহানগরী | |
পার্ক স্ট্রিট ফ্লাইওভার সহ কলকাতা সিবিডি বামে এবং কলকাতা ময়দান ডানদিকে ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন ইডেন গার্ডেন্স | |
ডাকনাম: আনন্দনগরী ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী[1][2][3] | |
পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে কলকাতার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২২°৩৪′২২″ উত্তর ৮৮°২১′৫০″ পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
বিভাগ | প্রেসিডেন্সি |
জেলা | কলকাতা[upper-alpha 1] |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসংস্থা |
• শাসক | কলকাতা পৌরসংস্থা |
• মহানাগরিক | ফিরহাদ হাকিম |
• শেরিফ | মণিশঙ্কর মুখোপাধ্যায়[4] |
• নগরপাল | সৌমেন মিত্র |
আয়তন[5] | |
• মহানগরী | ২০৬.০৮ বর্গকিমি (৭৯.৫৭ বর্গমাইল) |
• মহানগর | ১,৮৮৮ বর্গকিমি (৭২৯ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৯ মিটার (৩০ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১১)[5][6] | |
• মহানগরী | ৪৪,৯৬,৬৯৪ |
• ক্রম | ৭ম |
• জনঘনত্ব | ২২,০০০/বর্গকিমি (৫৭,০০০/বর্গমাইল) |
• মহানগর[7][8] | ১,৪১,১২,৫৩৬ ১,৪৬,১৭,৮৮২ (পরিবর্ধিত শহরাঞ্চল) |
• ক্রম (পরিবর্ধিত শহরাঞ্চল) | ৩য় |
বিশেষণ | কলকাতাবাসী |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
ডাক সূচক সংখ্যা | ৭০০ ০০১ থেকে ৭০০ ১৬২ |
এলাকা কোড | +৯১-৩৩ |
যানবাহন নিবন্ধন | ডব্লিউবি ০১ থেকে ডব্লিউবি ১০, ডব্লিউবি ১৯ থেকে ডব্লিউবি ২২ |
উইএন/এলওসিওডিই | IN CCU |
মহানগরীয় জিডিপি | $90 বিলিয়ন (নমিনাল) এবং $262 বিলিয়ন (পিপিপি)[9][10][11] |
সরকারি ভাষা | বাংলা[12] |
ওয়েবসাইট | www |
|
সুতানুটি, ডিহি কলকাতা ও গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রাম নিয়ে মূল কলকাতা শহরটি গড়ে ওঠে। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত এই গ্রামগুলির শাসনকর্তা ছিলেন মুঘল সম্রাটের অধীনস্থ বাংলার নবাবেরা। ১৬৯০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবের কাছ থেকে বাংলায় বাণিজ্য সনদ লাভ করে।[14] এরপর কোম্পানি কলকাতায় একটি দুর্গবেষ্টিত বাণিজ্যকুঠি গড়ে তোলে। ১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলকাতা জয় করেছিলেন। কিন্তু পরের বছরই কোম্পানি আবার শহরটি দখল করে নেয়। এর কয়েক দশকের মধ্যেই কোম্পানি বাংলায় যথেষ্ট প্রতিপত্তি অর্জন করে এবং ১৭৯৩ সালে "নিজামত" বা স্থানীয় শাসনের অবলুপ্তি ঘটিয়ে এই অঞ্চলে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব কায়েম করে। কোম্পানির শাসনকালেএবং ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রত্যক্ষ শাসনকালের প্রথমার্ধ্বে কলকাতা ছিল ভারতের ব্রিটিশ-অধিকৃত অঞ্চলগুলির রাজধানী। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকেই কলকাতা ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র। ১৯১১ সালে ভারতের মতো একটি বৃহৎ রাষ্ট্র শাসনে ভৌগোলিক অসুবিধার কথা চিন্তা করে এবং বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের রাজধানী স্থানান্তরিত হয় নয়াদিল্লিতে। স্বাধীনতার পর কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়। ব্রিটিশ আমলে কলকাতা ছিল আধুনিক ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা, বিজ্ঞানচর্চা এবং সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তী দশকগুলিতে কলকাতা এক অর্থনৈতিক স্থবিরতার সম্মুখীন হয়।
উনবিংশ শতাব্দী ও বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বাংলার নবজাগরণের কেন্দ্রস্থল ছিল কলকাতা। এই শহর বাংলা তথা ভারতের ধর্মীয় ও জাতিগত বৈচিত্র্যপূর্ণ এক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও বটে। সাহিত্য, থিয়েটার, শিল্পকলা ও চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে এই শহর এক স্বতন্ত্র ঐতিহ্য বহন করে আসছে। কলকাতার অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক, চলচ্চিত্র, শিল্পকলা, বিজ্ঞান ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন। এঁদের মধ্যে কয়েকজন নোবেল পুরস্কার ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিতও হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের কেন্দ্রও কলকাতা শহর। এখানে জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন বেশ কয়েকটি খ্যাতনামা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলির মধ্যে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল, এশিয়াটিক সোসাইটি, ভারতীয় সংগ্রহালয় ও জাতীয় গ্রন্থাগারের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এগ্রি-হর্টিকালচারাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া, জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, ভারতীয় উদ্ভিদ সর্বেক্ষণ, কলকাতা গাণিতিক সমিতি, ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস সংস্থা, জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স, অ্যানথ্রোপোলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের মতো কয়েকটি পেশাদার বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান কলকাতাতেই অবস্থিত। এই শহরে একাধিক ক্রিকেট মাঠ ও ফ্র্যাঞ্জাইজি আছে। কিন্তু ভারতের অন্যান্য শহরে ক্রিকেট বেশি গুরুত্ব পেলেও, কলকাতার অধিবাসীরা ফুটবল ও অন্যান্য খেলার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।বলা হয়ে থাকে, ভারতবর্ষের ফুটবলের শহর ও কলকাতা।
সপ্তাদশ শতাব্দীর শতাব্দীর শেষভাগে সুতানুটি, ডিহি কলিকাতা ও গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রাম নিয়ে কলকাতা শহরটি গড়ে ওঠে। এর মধ্যে ডিহি কলিকাতা নামটি থেকে কলকাতা নামটির উৎপত্তি।[15]
"কলিকাতা" বা "কলকাতা" নামটির উৎপত্তি সম্পর্কে গবেষকদের মধ্যে মতান্তর রয়েছে:
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে কলকাতা শহর দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। শহরের দক্ষিণে যে অংশে ব্রিটিশরা বাস করতেন সেটিকে ইংরেজিতে বলা হত "হোয়াইট টাউন" (লাতিন লিপি: White Town) এবং উত্তরে যে অংশে ভারতীয়েরা বাস করত সেটিকে ইংরেজিতে বলা হত "ব্ল্যাক টাউন" (লাতিন লিপি: Black Town)।[32] ১৮৫০-এর দশক থেকে কলকাতা শহর বস্ত্রবয়ন ও পাটশিল্পে বিশেষ সমৃদ্ধি অর্জন করতে শুরু করে। এর ফলে ব্রিটিশ সরকার এখানে রেলপথ ও টেলিগ্রাফ প্রকল্পের মতো পরিকাঠামো উন্নয়নমূলক প্রকল্পে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেন। ব্রিটিশ ও ভারতীয় সংস্কৃতির মিশ্রণে শহুরে বাঙালিদের মধ্যে এক নব্য বাবু শ্রেণির উদ্ভব ঘটেছিল। এই বাবুরা ছিলেন সাধারণত উচ্চবর্ণীয় হিন্দু, ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ও সংবাদপত্রের পাঠক। পেশাগতভাবে এঁরা ছিলেন জমিদার, সরকারি কর্মচারী বা শিক্ষক।[33] ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার নবজাগরণ নামে পরিচিত যে যুগান্তকারী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কার আন্দোলন বাঙালি সমাজের চিন্তাধারা ও রুচির আমূল পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল তার পটভূমিও ছিল এই কলকাতা শহর। বাংলার নবজাগরণ শুধু বাংলা নয়, সমগ্র ভারতের পথপ্রদর্শক হয়েছিল। এই আন্দোলনের পুরোধাপুরুষেরা ছিলেন রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২–১৮৩৩), হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও (১৮০৯–১৮৩১), রামতনু লাহিড়ী (১৮১৩–১৮৯৮), দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭–১৯০৫), ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০–১৮৯১), বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮–১৮৯৪), রামকৃষ্ণ পরমহংস (১৮৩৬–১৮৮৬), কেশবচন্দ্র সেন (১৮৩৮–১৮৮৪), স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩–১৯০২) প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলে ব্রিটিশ বাংলা প্রেসিডেন্সির হিন্দুপ্রধান পশ্চিমাঞ্চল পশ্চিমবঙ্গ নামে ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়। কলকাতা এই রাজ্যের রাজধানীর মর্যাদা পায়। এই সময় দেশভাগ-জনিত তীব্র অর্থনৈতিক সংকট ও পূর্ব পাকিস্তান থেকে হিন্দু শরণার্থীদের ব্যাপক হারে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ রাজ্যের তথা শহরের অর্থনীতির উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। এই সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় একাধিক কার্যকরী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেন। কলকাতার জনসংখ্যার চাপ কমাতে শহরের উপকণ্ঠে চব্বিশ পরগনা জেলায় (অধুনা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা) সল্টলেক (অধুনা বিধাননগরের একটি অংশ) ও নদিয়া জেলায় কল্যাণী নামে দুটি পরিকল্পিত উপশহর গড়ে তোলা হয়। কলকাতা বন্দরের সাহায্যার্থে সহযোগী হলদিয়া বন্দর নির্মিত হয়। হুগলি নদীর নাব্যতা রক্ষার জন্য ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনাও গৃহীত হয়।[44]
স্বাধীনতার পর ১৯৫১ ও ১৯৫৬ সালে কর্পোরেশন আইন সংশোধন করা হয়। ১৯৮০ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার শেষবার এই আইন সংশোধন করেন। সংশোধিত নতুন আইন কার্যকর হয় ১৯৮৪ সালে। ১৯৯২ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৭৪তম সংশোধনী বিল পাস হলে কলকাতা পৌরসংস্থা সামাজিক ন্যায় ও আর্থিক উন্নয়নের স্বার্থে পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষমতা পায়।[45]
বিধানচন্দ্রের মৃত্যুর পর ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট, ধর্মঘট ও জঙ্গি নকশাল আন্দোলনের ফলে শহরের পরিকাঠামো ব্যবস্থা গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে শহরের অর্থনৈতিক অবক্ষয়ের সূত্রপাত ঘটে।[46] ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানের বহুসংখ্যক মানুষ শরণার্থী হিসাবে কলকাতায় আশ্রয় নিলে শহরের অর্থনীতির উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়।[47] আবার, বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে কলকাতা শহরই ছিল ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গের ৩৪ বছরের সিপিআই(এম)-নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট শাসন বিশ্বের দীর্ঘতম মেয়াদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকারের একটি উদাহরণ।[48][49]
১৯৮০-এর দশকের মধ্যভাগে কলকাতাকে ছাপিয়ে মুম্বই (তৎকালীন নাম বোম্বাই) ভারতের সর্বাধিক জনবহুল শহরের শিরোপা অর্জন করে।[50] ১৯৯০-এর দশকে ভারত সরকারের অর্থনৈতিক উদারীকরণের নীতি শহরের অর্থনৈতিক হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারে অনেকাংশে সহায়ক হয়। ২০০০ সাল থেকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প কলকাতার অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার করেছে। শহরের উৎপাদন ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে।[50] ২০০১ সালে কলকাতার ইংরেজি নাম ক্যালকাটা (লাতিন লিপি: Calcutta) বদলে কোলকাটা (লাতিন লিপি: Kolkata) করার ফলে পৌরসংস্থাটির নাম "কলিকাতা পৌরসংস্থা"-র পরিবর্তে "কলকাতা পৌরসংস্থা" করা হয়।[45]কলকাতা শহর ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পূর্বদিকে ২২°৩৪′ উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৮°২১′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শহরের গড় উচ্চতা ১.৫ মিটার (৪ ফু ১১ ইঞ্চি) থেকে ৯ মিটার (৩০ ফু) মধ্যে।[51] উত্তর-দক্ষিণে শহরের বিস্তার হুগলি নদীর পাড় বরাবর। শহরের বেশিরভাগ এলাকাই আদতে ছিল জলাজমি। শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই সব জলাজমি ভরাট করে বসতযোগ্য করে তোলা হয়।[52] অবশিষ্ট জলাভূমি এখন "পূর্ব কলকাতা জলাভূমি" নামে পরিচিত। এই জলাভূমিটি রামসার কনভেনশন অনুযায়ী একটি "আন্তর্জাতিক গুরুত্বসম্পন্ন জলাভূমি"।[53]
সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমির বেশিরভাগ এলাকার মতো, কলকাতার মাটি ও জল মূলত পলিজ (alluvial) প্রকৃতির। শহরের মাটির তলায় কাদা, পলি, বিভিন্ন ক্রমের বালি ও নুড়ি নিয়ে গঠিত কোয়্যাটারনারি যুগের পললস্তর দেখা যায়। পললস্তরগুলি দুটির কাদার স্তরের মধ্যে বদ্ধ রয়েছে। নিচের কাদার স্তরটির গভীরতা ২৫০ মিটার (৮২০ ফুট) থেকে ৬৫০ মিটার (২,১৩৩ ফুট) এবং উপরের কাদার স্তরটির গভীরতা ১০ মিটার (৩৩ ফুট) থেকে ৪০ মিটার (১৩১ ফুট)।[54] ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডসের হিসেব অনুযায়ী, কলকাতা শহর তৃতীয় ভূ-কম্পী ক্ষেত্রের অন্তর্গত, যার মাত্রা ১ (I) থেকে ৫ (V) (ভূমিকম্পের বৃদ্ধিপ্রবণতা অনুসারে)।[55] আবার রাষ্ট্রসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির রিপোর্ট অনুযায়ী বায়ুপ্রবাহ ও ঘূর্ণিঝড় ক্ষেত্র হিসেবে কলকাতা “অতি উচ্চ ক্ষয়ক্ষতি-প্রবণ” এলাকা।
বৃহত্তর কলকাতার আয়তন ১,৮৮৬.৬৭ কিমি২ (৭২৮.৪৫ মা২)।[56]:৭ ২০০৬ সালের হিসেব অনুযায়ী, মোট ৭২টি বড়ো শহর এবং ৫২৭টি ছোটো শহর ও গ্রাম এই এলাকার অন্তর্ভুক্ত ছিল।[57] ২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী, কলকাতা পৌরসংস্থা সহ চারটি পৌরসংস্থা, ৩৯টি পৌরসভা ও ২৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত বৃহত্তর কলকাতার অন্তর্ভুক্ত।[56]:৭ বৃহত্তর কলকাতার শহরতলি এলাকাগুলি উত্তর চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও নদিয়া জেলার অন্তর্গত।[58]:১৫ কলকাতা পৌরসংস্থার এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার আয়তন ২০৮.৬ কিমি২ (৮১ মা২)।[57] পৌর এলাকার প্রস্থ পূর্ব-পশ্চিমে তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ। পশ্চিম সীমায় হুগলি নদী থেকে পূর্ব সীমায় ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাস পর্যন্ত শহরের প্রস্থ মোটামুটি ৯–১০ কিমি (৫.৬–৬.২ মা)।[59] অন্যদিকে শহরের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের মধ্যবর্তী দূরত্বটি অনেকটাই বেশি। এই দূরত্বের নিরিখেই মূলত সমগ্র শহরটিকে উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতা নামে তিনটি অংশে ভাগ করা হয়ে থাকে। এছাড়া পরবর্তীকালে শহরে গড়ে ওঠা পূর্ব দিকের অংশটিকে পূর্ব কলকাতা নামে চিহ্নিত করা হয়।
উত্তর কলকাতা হল শহরের প্রাচীনতম অংশ। ১৯শ শতাব্দীর স্থাপত্যশৈলী, জীর্ণ প্রাসাদোপম বাড়িঘর, ঘিঞ্জি বস্তি, জনাকীর্ণ বাজার ও অজস্র সরু সরু গলিপথ শহরের এই অংশের বৈশিষ্ট্য। শ্যামবাজার, হাতিবাগান, মানিকতলা, কাঁকুড়গাছি, রাজাবাজার, শোভাবাজার, শ্যামপুকুর, সোনাগাছি, কুমারটুলি, বাগবাজার, জোড়াসাঁকো, চিৎপুর, পাথুরিয়াঘাটা, কাশীপুর, কেষ্টপুর, সিঁথি, বেলগাছিয়া, জোড়াবাগান ও দমদম এলাকাগুলি উত্তর কলকাতার অন্তর্ভুক্ত।[60]:৬৫–৬৬ অন্যদিকে বেলঘরিয়া, সোদপুর, ব্যারাকপুর , মধ্যমগ্রাম, বারানগর , বারাসত এগুলি কলকাতা উত্তর শহরতলির অংশ হিসাবে কলকাতার উত্তরের সীমান্তবর্তী এলাকা।
মধ্য কলকাতা হল শহরের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র। বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ (বিবাদীবাগ; পূর্বতন নাম ডালহৌসি স্কোয়ার), এসপ্ল্যানেড, স্ট্র্যান্ড রোড, চৌরঙ্গী, বড়বাজার, কলেজ স্ট্রিট (বইয়ের বাজারের জন্য ‘বইপাড়া’ নামেও পরিচিত), শিয়ালদহ, তালতলা, জানবাজার, বউবাজার, এন্টালি, চাঁদনি চক, ধর্মতলা, টেরিটি বাজার, বো ব্যারাকস, মল্লিকবাজার, পার্ক সার্কাস, বাবুঘাট প্রভৃতি এলাকা মধ্য কলকাতার অন্তর্ভুক্ত।[61] জেনারেল পোস্ট অফিস, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক, উচ্চ আদালত, লালবাজার পুলিশ সদর দফতর সহ একাধিক সরকারি ও বেসরকারি কার্যালয় এখানেই অবস্থিত। এই এলাকার কিছুদূরে মাদার টেরিজা সরণির (পূর্বতন নাম পার্ক স্ট্রিট) দক্ষিণে আরেকটি বাণিজ্য কেন্দ্র রয়েছে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সরণি (পূর্বতন নাম ক্যামাক স্ট্রিট), ড. মার্টিন লুথার কিং সরণি (পূর্বতন নাম উড স্ট্রিট), ড. উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী সরণি (পূর্বতন নাম লাউডন স্ট্রিট), শেকসপিয়র সরণি (পূর্বতন নাম থিয়েটার রোড), আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড সন্নিহিত এলাকাগুলি এই বাণিজ্য কেন্দ্রের অন্তর্গত।[62] মধ্য কলকাতায় শহরের ঠিক কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ময়দান, একটি বিশাল মাঠ। এই মাঠটি "কলকাতার ফুসফুস" নামে পরিচিত।[63] এখানে বিভিন্ন ক্রীড়ানুষ্ঠান ও জনসভার আয়োজন করা হয়।[64] ময়দানের দক্ষিণ প্রান্তে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল ও কলকাতা রেস কোর্স অবস্থিত। হুগলি নদীর তীরে স্ট্র্যান্ড রোডের ধারে অবস্থিত মিলেনিয়াম পার্ক কলকাতার একটি বিখ্যাত উদ্যান। ময়দানের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত ফোর্ট উইলিয়াম ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্ব সচীবের সদর দফতর।[65] এই দুর্গটি এবং সন্নিহিত এলাকা সেনাবাহিনীর অধিকাররভুক্ত।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর দক্ষিণ কলকাতার বৃহত্তর অংশের বিস্তার ঘটে। বালিগঞ্জ, আলিপুর, নিউ আলিপুর, শরৎ বসু রোড, ভবানীপুর, কালীঘাট,বেহালা , ঢাকুরিয়া, গড়িয়াহাট, টালিগঞ্জ, নাকতলা, যোধপুর পার্ক, লেক গার্ডেনস, গল্ফ গ্রীন, যাদবপুর, গড়ফা, কালিকাপুর, হালতু, নন্দীবাগান, সন্তোষপুর, বাঘাযতীন, গাঙ্গুলিবাগান, গড়িয়া, কামালগাজী, রানিকুঠি, বিক্রমগড়, বিজয়গড়, বাঁশদ্রোণী ও কুঁদঘাট নিয়েই দক্ষিণ কলকাতা।[66] অন্যদিকে মাঝেরহাট, বজবজ, , সরসুনা, বড়িশা, পর্ণশ্রী, ঠাকুরপুকুর, মহেশতলা ও জোকা দক্ষিণ কলকাতার শহরতলির সীমান্তবর্তী এলাকা।
বিধাননগর, নিউ টাউন, ট্যাংরা, তোপসিয়া, কসবা, আনন্দপুর, মুকুন্দপুর, পিকনিক গার্ডেন, বেলেঘাটা, উল্টোডাঙ্গা, ফুলবাগান, কৈখালি, লেক টাউন প্রভৃতি এলাকা পূর্ব কলকাতার অন্তর্গত। এই এলাকাগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকা সাম্প্রতিক নগরায়নের উদাহরণ। বৃহত্তর কলকাতার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যান সেন্ট্রাল পার্ক ছাড়াও পূর্ব কলকাতা জলাভূমি, বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন (সল্ট লেক স্টেডিয়াম), নিকো পার্ক, সায়েন্স সিটি ইকো পার্ক (প্রকৃতি তীর্থ) ইত্যাদি পূর্ব কলকাতায় অবস্থিত।
বৃহত্তর কলকাতা অঞ্চলের দুটি পরিকল্পিত নগর হল শহরের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সল্টলেক (বিধাননগরের অংশ) এবং এর পূর্বে অবস্থিত নিউ টাউন।[66][67] ২০০০-এর দশকে সল্টলেকের সেক্টর ৫ তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলির কেন্দ্র হিসেবে বিকাশ লাভ করে।[68][69] সল্টলেক ও নিউ টাউন দুটি এলাকাই কলকাতা পৌরসংস্থার বাইরে নিজস্ব প্রশাসনের এখতিয়ারভুক্ত।[67]
কলকাতার জলবায়ু ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু প্রকৃতির (কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিভাগ অনুসারে Aw)। বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৬.৮° সেন্টিগ্রেড এবং মাসিক গড় তাপমাত্রা ১৯°-৩০° সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকে।[70] এখানে গ্রীষ্মকাল উষ্ণ ও আর্দ্র। এই সময় গড় তাপমাত্রা ৩১° সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি থাকলেও মে-জুন মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কখনো কখনো ৪০° সেন্টিগ্রেড ছাড়িয়ে যায়।[70] শীতকাল সাধারণত মাত্র আড়াই মাস স্থায়ী হয়। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ১৪° সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি থাকে। শহরের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড যথাক্রমে ৪৩.৯° সেন্টিগ্রেড ও ৫.০° সেন্টিগ্রেড।[70] সাধারণভাবে মে মাস কলকাতার উষ্ণতম মাস। এই সময় শহরের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা থাকে যথাক্রমে ৩৫.৪° সেন্টিগ্রেড ও ২৬° সেন্টিগ্রেড। অন্যদিকে জানুয়ারি শীতলতম মাস। জানুয়ারির সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা যথাক্রমে ২৬.৪° সেন্টিগ্রেড ও ১৩.৮° সেন্টিগ্রেড। গ্রীষ্মের শুরুতে প্রায়শই শিলাবৃষ্টি, ঝড় ও বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। এই ধরনের ঝড়বৃষ্টি প্রকৃতিগতভাবে পরিচলন। এর স্থানীয় নাম কালবৈশাখী।[71]
দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখাটি শহরে বৃষ্টিপাত ঘটায়।[72] বর্ষাকাল সাধারণত স্থায়ী হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। শহরের বার্ষিক ১৮০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের অধিকাংশই এই সময়ে ঘটে থাকে। জুলাই মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সর্বোচ্চ থাকে। এই সময় গড়ে ৪১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। কলকাতা বার্ষিক ২১০৮ ঘণ্টা সূর্যালোক পেয়ে থাকে। অধিকাংশ সূর্যালোক প্রাপ্তির সময় মার্চ মাস।[73] দূষণ কলকাতার অন্যতম প্রধান সমস্যা। ভারতের অন্যান্য প্রধান শহরের তুলনায় কলকাতার সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটার বা এসপিএম-এর হার এতটাই বেশি যে প্রায়শই ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়।[74][75] মারাত্মক বায়ুদূষণের ফলে শহরে ফুসফুসের ক্যান্সার সহ দূষণসৃষ্ট অসুখবিসুখ বৃদ্ধি পেয়েছে।[76]
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ৩২.৮ (৯১.০) |
৩৮.৪ (১০১.১) |
৪১.১ (১০৬.০) |
৪৩.৩ (১০৯.৯) |
৪৩.৭ (১১০.৭) |
৪৩.৯ (১১১.০) |
৩৯.৯ (১০৩.৮) |
৩৮.৪ (১০১.১) |
৩৮.৯ (১০২.০) |
৩৯.০ (১০২.২) |
৩৪.৯ (৯৪.৮) |
৩২.৫ (৯০.৫) |
৪৩.৯ (১১১.০) |
মাসিক সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ২৯.৮ (৮৫.৬) |
৩৩.৫ (৯২.৩) |
৩৭.৪ (৯৯.৩) |
৩৮.৫ (১০১.৩) |
৩৮.৮ (১০১.৮) |
৩৮.০ (১০০.৪) |
৩৫.৯ (৯৬.৬) |
৩৫.০ (৯৫.০) |
৩৫.৩ (৯৫.৫) |
৩৫.১ (৯৫.২) |
৩২.৯ (৯১.২) |
২৯.৮ (৮৫.৬) |
৩৯.৮ (১০৩.৬) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ২৫.৮ (৭৮.৪) |
২৯.২ (৮৪.৬) |
৩৩.৫ (৯২.৩) |
৩৫.৩ (৯৫.৫) |
৩৫.৩ (৯৫.৫) |
৩৩.৮ (৯২.৮) |
৩২.৪ (৯০.৩) |
৩২.২ (৯০.০) |
৩২.৪ (৯০.৩) |
৩২.২ (৯০.০) |
৩০.১ (৮৬.২) |
২৭.০ (৮০.৬) |
৩১.৬ (৮৮.৯) |
দৈনিক গড় °সে (°ফা) | ২০.০ (৬৮.০) |
২৩.৬ (৭৪.৫) |
২৮.০ (৮২.৪) |
৩০.৪ (৮৬.৭) |
৩০.৯ (৮৭.৬) |
৩০.৪ (৮৬.৭) |
২৯.৪ (৮৪.৯) |
২৯.৩ (৮৪.৭) |
২৯.২ (৮৪.৬) |
২৮.১ (৮২.৬) |
২৫.০ (৭৭.০) |
২১.২ (৭০.২) |
২৭.১ (৮০.৮) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ১৪.১ (৫৭.৪) |
১৭.৮ (৬৪.০) |
২২.৪ (৭২.৩) |
২৫.৩ (৭৭.৫) |
২৬.৪ (৭৯.৫) |
২৬.৮ (৮০.২) |
২৬.৫ (৭৯.৭) |
২৬.৪ (৭৯.৫) |
২৬.০ (৭৮.৮) |
২৪.১ (৭৫.৪) |
১৯.৭ (৬৭.৫) |
১৫.২ (৫৯.৪) |
২২.৬ (৭২.৭) |
মাসিক সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ১০.৭ (৫১.৩) |
১২.৯ (৫৫.২) |
১৭.৬ (৬৩.৭) |
২০.৪ (৬৮.৭) |
২১.৫ (৭০.৭) |
২৩.৭ (৭৪.৭) |
২৪.৩ (৭৫.৭) |
২৪.৪ (৭৫.৯) |
২৩.৮ (৭৪.৮) |
২০.৬ (৬৯.১) |
১৫.৪ (৫৯.৭) |
১১.৮ (৫৩.২) |
১০.৪ (৫০.৭) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | ৬.৭ (৪৪.১) |
৭.২ (৪৫.০) |
১০.০ (৫০.০) |
১৬.১ (৬১.০) |
১৭.৯ (৬৪.২) |
২০.৪ (৬৮.৭) |
২০.৬ (৬৯.১) |
২২.৬ (৭২.৭) |
২০.৬ (৬৯.১) |
১৭.২ (৬৩.০) |
১০.৬ (৫১.১) |
৭.২ (৪৫.০) |
৬.৭ (৪৪.১) |
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ১০.৪ (০.৪১) |
২০.৯ (০.৮২) |
৩৫.২ (১.৩৯) |
৫৮.৯ (২.৩২) |
১৩৩.১ (৫.২৪) |
৩০০.৬ (১১.৮৩) |
৩৯৬.০ (১৫.৫৯) |
৩৪৪.৫ (১৩.৫৬) |
৩১৮.১ (১২.৫২) |
১৮০.৫ (৭.১১) |
৩৫.১ (১.৩৮) |
৩.২ (০.১৩) |
১,৮৩৬.৫ (৭২.৩০) |
বৃষ্টিবহুল দিনগুলির গড় | ১.১ | ১.৭ | ২.২ | ৩.৪ | ৭.০ | ১২.৮ | ১৭.৭ | ১৬.৯ | ১৩.৯ | ৭.৪ | ১.৩ | ০.৫ | ৮৫.৯ |
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%) (১৭:৩০ আইএসটি) | ৬১ | ৫৪ | ৫১ | ৬২ | ৬৮ | ৭৭ | ৮২ | ৮৩ | ৮২ | ৭৫ | ৬৭ | ৬৫ | ৬৯ |
মাসিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড় | ২১৩.৯ | ২১১.৯ | ২২৯.৪ | ২৪০.০ | ২৩২.৫ | ১৩৫.০ | ১০৫.৪ | ১১৭.৮ | ১২৬.০ | ২০১.৫ | ২১৬.০ | ২০৪.৬ | ২,২৩৪ |
দৈনিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড় | ৬.৯ | ৭.৫ | ৭.৪ | ৮.০ | ৭.৫ | ৪.৫ | ৩.৪ | ৩.৮ | ৪.২ | ৬.৫ | ৭.২ | ৬.৬ | ৬.১ |
অতিবেগুনী সূচকের গড় | ৬ | ৭ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৩ | ১৩ | ১২ | ৯ | ৭ | ৫ | ১০ |
উৎস ১: ভারতীয় মৌসুম বিজ্ঞান বিভাগ (সূর্য ১৯৭১–২০০০)[77][78][79] অতিবেগুনী সূচক[80] | |||||||||||||
উৎস ২: টোকিও জলবায়ু কেন্দ্র (গড় তাপমাত্রা ১৯৮১–২০১০)[81] |
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ৩২.৫ (৯০.৫) |
৩৭.৩ (৯৯.১) |
৪০.৬ (১০৫.১) |
৪২.৮ (১০৯.০) |
৪৩.১ (১০৯.৬) |
৪৩.৭ (১১০.৭) |
৩৯.২ (১০২.৬) |
৩৭.৭ (৯৯.৯) |
৩৬.৮ (৯৮.২) |
৩৬.৮ (৯৮.২) |
৩৬.০ (৯৬.৮) |
৩৩.০ (৯১.৪) |
৪৩.৭ (১১০.৭) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ২৫.৬ (৭৮.১) |
২৯.০ (৮৪.২) |
৩৩.৩ (৯১.৯) |
৩৫.৫ (৯৫.৯) |
৩৫.৬ (৯৬.১) |
৩৪.৩ (৯৩.৭) |
৩২.৯ (৯১.২) |
৩২.৭ (৯০.৯) |
৩২.৮ (৯১.০) |
৩২.২ (৯০.০) |
২৯.৯ (৮৫.৮) |
২৬.৮ (৮০.২) |
৩১.৭ (৮৯.১) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ১২.৯ (৫৫.২) |
১৬.৬ (৬১.৯) |
২১.৩ (৭০.৩) |
২৪.৭ (৭৬.৫) |
২৫.৯ (৭৮.৬) |
২৬.৫ (৭৯.৭) |
২৬.৩ (৭৯.৩) |
২৬.৪ (৭৯.৫) |
২৫.৯ (৭৮.৬) |
২৩.৮ (৭৪.৮) |
১৯.০ (৬৬.২) |
১৪.০ (৫৭.২) |
২১.৯ (৭১.৪) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | ৫.০ (৪১.০) |
৬.১ (৪৩.০) |
১২.১ (৫৩.৮) |
১৬.৬ (৬১.৯) |
১৭.৬ (৬৩.৭) |
১৯.২ (৬৬.৬) |
২০.১ (৬৮.২) |
২১.১ (৭০.০) |
২১.৭ (৭১.১) |
১৫.৭ (৬০.৩) |
১১.৭ (৫৩.১) |
৬.১ (৪৩.০) |
৫.০ (৪১.০) |
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) | — | ২৩.৩ (০.৯২) |
৩১.৩ (১.২৩) |
৫৫.২ (২.১৭) |
১৫৬.৫ (৬.১৬) |
২৯৩.০ (১১.৫৪) |
৩৪৭.৪ (১৩.৬৮) |
৩৪৪.১ (১৩.৫৫) |
৩০৫.৫ (১২.০৩) |
১৬১.৯ (৬.৩৭) |
১৭.৫ (০.৬৯) |
৮.৮ (০.৩৫) |
১,৭৫৭ (৬৯.১৭) |
বৃষ্টিবহুল দিনগুলির গড় | ১.০ | ১.৭ | ২.২ | ৩.৫ | ৭.০ | ১২.৬ | ১৭.১ | ১৬.৯ | ১৩.২ | ৬.৮ | ১.৩ | ০.৫ | ৮৩.৯ |
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%) (০৮:৩০ আইএসটি) | ৭৫ | ৭১ | ৬৭ | ৭১ | ৭৩ | ৭৯ | ৮৩ | ৮৩ | ৮১ | ৭৫ | ৭০ | ৭২ | ৭৫ |
উৎস: ভারতীয় মৌসুম বিজ্ঞান বিভাগ[82][83] |
কলকাতা পূর্ব ভারত ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্যবসাবাণিজ্য ও অর্থনীতির প্রধান কেন্দ্র। কলকাতায় অবস্থিত কলকাতা শেয়ার বাজার ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শেয়ার বাজার।[84] বর্তমানে ভারতের আঞ্চলিক শেয়ার বাজারগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয় এটি তার মধ্যে একটি। কলকাতা একটি প্রধান বাণিজ্যিক ও সামরিক বন্দরও বটে। একদা ভারতের রাজধানী ও অগ্রণী শিল্পনগরী কলকাতা স্বাধীনোত্তর কালে অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জঙ্গি ট্রেড-ইউনিয়ন আন্দোলনের শিকার হয়ে দ্রুত আর্থিক অবনতির পথে এগিয়ে যায়।[85] ১৯৬০-এর দশক থেকে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত একদিকে যেমন মূলধন বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসে, তেমনি অন্যদিকে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে বৃহৎ কলকারখানাগুলি। অধিকাংশ কলকারখানাগুলির উৎপাদন কমে আসে। অনেকেই ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে নেন।[85] মূলধন ও সম্পদের এই হ্রাসের সঙ্গে যুক্ত হয় বিশ্ববাজারে এই অঞ্চলে উৎপাদিত ঐতিহ্যবাহী দ্রব্যগুলির (যেমন পাট ইত্যাদি) চাহিদা হ্রাস। ফলে শহরের আর্থিক অবস্থায় গুরুতর সংকট দেখা দেয়।[86] এটি তার মধ্যে একটি
১৯৯০-এর দশকে ভারতীয় অর্থনীতির উদারীকরণ কলকাতার ভাগ্যোন্নয়নে বিশেষ সহায়ক হয়। আজও নমনীয় উৎপাদন কলকাতার অর্থব্যবস্থার একটি বৈশিষ্ট্য। ঘরোয়া সেক্টরগুলি তাই এখানে মোট শ্রমশক্তির ৪০% অধিকার করে আছে।[87] উদাহরণস্বরূপ, ২০০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী ফুটপাথের হকারদের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৮,৭৭২ কোটি ভারতীয় টাকা (প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।[88] শহরের অন্যতম বৃহৎ কর্মশক্তি হল রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীগণ। এছাড়াও বিভিন্ন কায়িক ও বৌদ্ধিক শ্রমিকসহ শহরে একটি বৃহৎ সংখ্যক অদক্ষ ও অর্ধদক্ষ শ্রমিক জনসংখ্যাও পরিলক্ষিত হয়। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প কলকাতার অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করেছে। এই শহরে আইটি সেক্টরের বৃদ্ধির হার বছরে ৭০%, যা জাতীয় গড়ের দ্বিগুণ।[89] বিগত কয়েক বছরে আবাসন পরিকাঠামো সেক্টরে উল্লেখযোগ্য হারে বিনিয়োগ হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে গৃহীত হয়েছে বেশ কয়েকটি নতুন প্রকল্পও।[90]
বড় বড় ভারতীয় কর্পোরেশনগুলি দ্বারা পরিচালিত অনেকগুলি শিল্প ইউনিট কলকাতায় অবস্থিত। আইটিসি লিমিটেড, ভারত সরকার টাঁকশাল, এক্সাইড ইন্ডাস্ট্রিজ, হিন্দুস্তান মোটরস, ব্রিটানিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ, বাটা ইন্ডিয়া, বিড়লা কর্পোরেশন, কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড, দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন, ইউনাইটেড ব্যাংক অব ইণ্ডিয়া, ইউকো ব্যাংক ও এলাহাবাদ ব্যাংক ইত্যাদি বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য সংস্থার প্রধান কার্যালয় কলকাতায় অবস্থিত। সাম্প্রতিককালে, কেন্দ্রীয় সরকারের "পুবে তাকাও" ("লুক ইস্ট") নীতির মতো বিভিন্ন কর্মসূচি সিক্কিমের নাথুলা গিরিপথ খুলে দেওয়ায় চীনের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনার দিক খুলে দিয়েছে। তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলি ভারতীয় বাজারে প্রবেশে ইচ্ছুক হওয়ায় কলকাতার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন অনেকটাই সুবিধাজনক।[91][92]
কলকাতার বর্তমান নগর-প্রশাসক | |
মহানাগরিক | |
নগরপাল | সৌমেন মিত্র |
কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা, রাজ্য সচিবালয়, কলকাতা হাইকোর্ট সহ একাধিক রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার প্রধান কার্যালয় বা আঞ্চলিক কার্যালয় কলকাতায় অবস্থিত।
কলকাতার নগর প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও নাগরিক পরিষেবাগুলির দায়িত্ব একাধিক সরকারি সংস্থার হাতে ন্যস্ত। এই সকল সংস্থার এক্তিয়ারভুক্ত এলাকা অনেক ক্ষেত্রেই পরস্পরের সঙ্গে প্রাবৃত। কলকাতা এই জাতীয় অন্তত চারটি এক্তিয়ার এলাকার অন্তর্গত। এগুলি হল:
কলকাতার স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন কর্তৃপক্ষ হল কলকাতা পৌরসংস্থা। ১৯২৩ সালে আধুনিক স্বায়ত্বশাসনমূলক সংস্থা হিসেবে এই পৌরসংস্থা গঠিত হয়।[94] ১৯৮০ সালে কলকাতা পৌরসংস্থা আইন সংশোধনের মাধ্যমে এই পৌরসংস্থা তার বর্তমান চেহারাটি লাভ করে।[95] বর্তমানে কলকাতার সমগ্র এলাকাটি ১৬টি বরো[96] ও মোট ১৪৪টি ওয়ার্ডে[97] বিভক্ত। ১৯৮০ সালের পৌর আইনের ভিত্তিতে কলকাতা পৌরসংস্থায় প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। এই নির্বাচনে বামফ্রন্ট জয়লাভ করেছিল। এরপর ১৯৯০ ও ১৯৯৫ সালের নির্বাচনেও বামফ্রন্টই ক্ষমতা দখল করে। ২০০০ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০০৫ সালে পুনরায় বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসে। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিকতম নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পুনরায় জয়লাভ করেছে।[98] কলকাতা পৌরসংস্থায় বর্তমানে তিনটি কর্তৃপক্ষ রয়েছে: পৌরনিগম, মহানাগরিক (মেয়র) ও সপরিষদ-মহানাগরিক। পৌরসংস্থার ১৪৪ জন পৌরপিতা/পৌরমাতা (কাউন্সিলর) শহরের এক একটি ওয়ার্ড থেকে নাগরিকদের ভোটে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন।[95] নির্বাচিত পৌরপিতা/পৌরমাতাগণ নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে মহানাগরিক নির্বাচিত করেন। মহানাগরিক, উপমহানাগরিক ও ১০ জন পৌরপিতা/পৌরমাতাকে নিয়ে গঠিত হয় সপরিষদ-মহানাগরিক।[95] পৌরসংস্থার প্রধান কাজ হল জল সরবরাহ, শহরের রাস্তাঘাট ও প্রকাশ্য স্থানসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ, রাস্তার আলোকদান, বাড়িনির্মাণ নিবন্ধীকরণ ও নিয়ন্ত্রণ, পয়ঃপ্রণালী রক্ষণাবেক্ষণ ও কঠিন বর্জ্য পদার্থের অপসারণ ইত্যাদি।[99]
কলকাতা পৌরসংস্থা এলাকার অন্যান্য শাসনবিভাগীয় ও আরক্ষা-সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষগুলি হল: কলকাতা জেলার সমাহর্তা (কালেকটর) ও কলকাতা পুলিশ। কলকাতায় শেরিফ নামে একটি নামসর্বস্ব সাম্মানিক পদও রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের মামলা নিষ্পত্তির জন্য কলকাতায় একাধিক নিম্ন আদালত, দেওয়ানি মামলার জন্য ছোটো আদালত ও ফৌজদারি মামলার জন্য দায়রা আদালত অবস্থিত। নগরপালের (পুলিশ কমিশনার) নেতৃত্বাধীন কলকাতা পুলিশ সরাসরি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্র বিভাগের অন্তর্গত।
কলকাতা শহরের অধিকাংশ অঞ্চল ভারতীয় সংসদের কলকাতা উত্তর ও কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রদুটির অন্তর্গত। দক্ষিণ-পূর্ব কলকাতার কয়েকটি অঞ্চল যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের বর্তমান সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ মালা রায়[100] এবং যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ মিমি চক্রবর্তী সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে রয়েছে। কলকাতা মোট ১৭টি বিধানসভা কেন্দ্রে বিভক্ত। এই বিধানসভা কেন্দ্রগুলি কলকাতা পৌর এলাকার ১ থেকে ১৪৪ টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে বিভক্ত। এগুলি হল:
২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী, কলকাতা পৌরসংস্থার জনসংখ্যা ৪্৮৬,৬৭৯ এবং কলকাতা মহানগর অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ১,৪১,১২,৫৩৬। লিঙ্গানুপাত প্রতি ১০০০ জন পুরুষে ৯১৯ জন নারী।[103] এই হার জাতীয় লিঙ্গানুপাত হারের তুলনায় কম; তার কারণ, অনেক উপার্জনশীল পুরুষ তাদের পরিবারের মহিলা সদস্যদের গ্রামে রেখে শহরে কাজ করতে আসেন। কলকাতার সাক্ষরতার হার ৮৮.৩৩ শতাংশ[5]; যা জাতীয় সাক্ষরতার হার ৭৪.০৪ শতাংশের তুলনায় বেশি।[104] নথিভুক্ত হিসেব অনুযায়ী কলকাতা পৌরসংস্থা অধিভুক্ত এলাকার বৃদ্ধির হার ৪.১ শতাংশ; যা ভারতের দশ লক্ষাধিক জনসংখ্যাবিশিষ্ট মহানগরগুলির মধ্যে সর্বনিম্ন।[105]
বাঙালিরা কলকাতার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী; মারোয়াড়ি ও বিহারি সম্প্রদায় শহরের উল্লেখযোগ্য জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় (২০ শতাংশ)।[106] এছাড়াও কলকাতা প্রবাসী চীনা, তামিল, নেপালি, ওড়িয়া, তেলুগু, অসমীয়া, গুজরাটি, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান, আর্মেনিয়ান, তিব্বতি, মহারাষ্ট্রীয়, পাঞ্জাবি, পারসি প্রভৃতি জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাসভূমি। কলকাতার প্রধান ভাষা হল বাংলা ও ইংরেজি; এছাড়াও হিন্দি, উর্দু, ওড়িয়া ও ভোজপুরি ভাষাও শহরের একাংশের বাসিন্দাদের দ্বারা কথিত হয়ে থাকে।
কলকাতার ধর্মবিশ্বাস[107] | ||||
---|---|---|---|---|
ধর্ম | শতাংশ | |||
হিন্দু ধর্ম | ৭৭.৬৮% | |||
ইসলাম | ২০.২৭% | |||
খ্রিস্ট ধর্ম | ০.৮৮% | |||
জৈন ধর্ম | ০.৪৬% | |||
অন্যান্য | ০.৭১% |
জনগণনা অনুসারে, কলকাতার জনসংখ্যার ৭৭.৬৮ শতাংশ হিন্দু, ২০.২৭ শতাংশ মুসলিম, ০.৮৮ শতাংশ খ্রিস্টান এবং ০.৪৬ শতাংশ জৈন; অবশিষ্ট শিখ, বৌদ্ধ, ইহুদি ও জরথুস্ট্রীয় সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা অত্যন্ত অল্প।[108] শহরের প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ ২,০১১টি নথিভুক্ত এবং ৩,৫০০টি অনথিভুক্ত (মূলত দখলদার) বস্তিতে বাস করেন।[109]
২০০৪ সালে দেশের ৩৫টি মহানগরের মধ্যে কলকাতায় সংঘটিত বিশেষ ও স্থানীয় আইনের আওতাভুক্ত অপরাধের হার ৬৭.৬ শতাংশ।[110] ২০০৪ সালে কলকাতা পুলিশ ১০,৭৫৭টি ভারতীয় দণ্ডবিধির আওয়াভুক্ত মামলা নথিভুক্ত করে; যা সারা দেশে দশম স্থানের অধিকারী।[111] ২০০৬ সালে জাতীয় স্তরে যখন অপরাধ হার ছিল প্রতি এক লক্ষে ১৬৭.৭, তখন কলকাতায় এই হার ছিল ৭১; যা ভারতীয় মহানগরগুলির মধ্যে ছিল সর্বনিম্ন হার।[112] কলকাতার সোনাগাছি অঞ্চল এশিয়ার বৃহত্তম নিষিদ্ধ পল্লিগুলির অন্যতম; এখানে প্রায় ১০,০০০ যৌনকর্মী কাজ করেন।[113]
কলকাতা মহানগরী তার সাহিত্যিক, শৈল্পিক ও বৈপ্লবিক ঐতিহ্যগুলির জন্য বিশ্ববিদিত। এই শহর কেবলমাত্র ভারতের পূর্বতন রাজধানীই ছিল না, বরং আধুনিক ভারতের শিল্প ও সাহিত্য চেতনার জন্মস্থানও ছিল। শিল্প ও সাহিত্যের প্রতি কলকাতাবাসীদের বিশেষ আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে; নতুন প্রতিভাকে গ্রহণ করার ঐতিহ্য কলকাতাকে তাই পরিণত করেছে "প্রচণ্ড সৃজনীশক্তিধর এক শহরে"।[114] এই সকল কারণে কলকাতাকে অনেক সময় "ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী" বলে উল্লেখ করা হয়।
কলকাতার অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হল শহরের ছোটো ছোটো অঞ্চলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পাড়া সংস্কৃতি। সাধারণত প্রত্যেক পাড়ায় একটি করে ক্লাবঘর সহ নিজস্ব সংঘ বা ক্লাব থাকে। অনেক সময় ক্লাবগুলির নিজস্ব খেলার মাঠও থাকে। পাড়ার বাসিন্দারা অভ্যাসগতভাবে এখানে এই সব ক্লাবঘরে আড্ডা দিতে আসেন; মাঝেমধ্যে এই সব আড্ডা হয়ে ওঠে মুক্তছন্দের বৌদ্ধিক আলাপআলোচনা।[115] এই শহরে রাজনৈতিক দেওয়াললিখনেরও এক ঐতিহ্য লক্ষিত হয়; এই সব দেওয়াললিখনে কুরুচিপূর্ণ কেচ্ছাকেলেংকারির বর্ণনা থেকে শ্লেষাত্মক রঙ্গব্যঙ্গ, লিমেরিক, কার্টুন, ইস্তাহার – সবই বিধৃত হয়।
ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে কলকাতাকেন্দ্রিক সাহিত্যিকদের হাত ধরে বাংলা সাহিত্যের আধুনিকীকরণ সম্পন্ন হয়। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮–১৮৯৪), মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪–১৮৭৩), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১–১৯৪১), কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৮–১৯৭৬) ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৬–১৯৩৮) প্রমুখ। এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহন করে চলেন শহরের পরবর্তী প্রজন্মের খ্যাতিমান সাহিত্যিকেরা। এঁদের মধ্যে উল্লেখনীয় হলেন জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯–১৯৫৪), বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪–১৯৫০), তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৮–১৯৭১), মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৮–১৯৫৬), বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪), আশাপূর্ণা দেবী (১৯০৯–১৯৯৫) প্রমুখ। বর্তমান প্রজন্মের সাহিত্যিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (জন্ম ১৯৩৫), বুদ্ধদেব গুহ (জন্ম ১৯৩৬), মহাশ্বেতা দেবী (জন্ম ১৯২৬), সমরেশ মজুমদার (জন্ম ১৯৪৪), সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় (জন্ম ১৯৩৬), সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (জন্ম ১৯৩৪) এবং জয় গোস্বামী (জন্ম ১৯৫৪) প্রমুখ।
কলকাতা শহরের সঙ্গীত-গীতি-কাব্যের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধ থেকেই বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি বহির্বঙ্গ থেকেও বহু বিশিষ্ট সঙ্গীতস্রষ্টা ও গায়ক কলকাতায় এসে বসতি স্থাপন করেন। এর ফলে অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলা গানে একটি বিশেষ কলকাতা-কেন্দ্রিক ধারার সৃষ্টি হয়, যা অধুনা "পুরাতনী" নামে পরিচিত।[118] এই সময়কার সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় এবং উল্লেখযোগ্য সঙ্গীতস্রষ্টা-গায়ক হলেন বাংলা টপ্পা সঙ্গীতের জনক রামনিধি গুপ্ত (নিধুবাবু); তার রচিত টপ্পাগান আজও জনপ্রিয়। নিধুবাবুই বাংলায় প্রথম দেশাত্মবোধক গান "নানান দেশে নানান ভাষা, বিনে স্বদেশীয় ভাষা মিটে কি আশা"-র রচয়িতা।[119] সেযুগের অন্যান্য বিশিষ্ট সঙ্গীতস্রষ্টা-গায়কেরা হলেন রাম বসু, হরু ঠাকুর, গোপাল উড়ে, গোঁজলা গুই, রূপচাঁদ পক্ষী, শ্রীধর কথক প্রমুখ।[118] ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বাংলা গানে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি ও ব্রহ্মসঙ্গীতের অবদানও অনস্বীকার্য।[118] কলকাতার জনসমাজে কবিগান, তরজা, আখড়াই-হাফ আখড়াই, টপ্পা প্রভৃতি গানের বিশেষ জনপ্রিয়তা ছিল।[118]
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে কলকাতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন ও কাজী নজরুল ইসলাম রচিত গানের চর্চা শুরু হয়। রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে কলকাতা এক বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। এই শহরের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং "গীতবিতান", "রবিতীর্থ", "দক্ষিণী" প্রভৃতি রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষায়তন বিশেষ খ্যাতিসম্পন্ন। কলকাতা-কেন্দ্রিক উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীরা হলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক, কুন্দনলাল সায়গল, দেবব্রত বিশ্বাস, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুচিত্রা মিত্র, সাগর সেন, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, সুমিত্রা সেন প্রমুখ; এবং একালের বিশিষ্ট শিল্পীদের মধ্যে প্রমিতা মল্লিক, স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, শ্রাবণী সেন, ইন্দ্রাণী সেন, শ্রীকান্ত আচার্যের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নজরুলগীতির ক্ষেত্রে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, অঞ্জলি মুখোপাধ্যায়,ধীরেন বসু,অনুপ ঘোষাল প্রমুখ শিল্পীরা। দ্বিজেন্দ্রগীতি-অতুলপ্রসাদী-রজনীকান্তের গানে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়, মঞ্জু গুপ্ত, শর্বাণী সেন,নিশিথ সাধু প্রমুখ। বিংশ শতাব্দীর শেষ পর্বে কলকাতা-কেন্দ্রিক গীতিকার-সুরকার ও গায়ক-গায়িকারা বাংলা আধুনিক গানে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন।[120] এই সময়কার বিশিষ্ট গীতিকার-সুরকারেরা হলেন সলিল চৌধুরী, হিমাংশু দত্ত, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, নচিকেতা ঘোষ, সুধীন দাশগুপ্ত, মোহিনী চৌধুরী, প্রনব রায়,শ্যামল গুপ্ত, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, কমল দাশগুপ্ত প্রমুখ।[120] জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কৃষ্ণচন্দ্র দে,, শচীন দেববর্মণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, জগন্ময় মিত্র, ধঞ্জয় ভট্টাচার্য,মান্না দে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র,মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়,সতিনাথ মুখোপাধ্যায়, কিশোরকুমার, প্রমুখ।[120]
১৯৯০-এর দশকের প্রথম ভাগ থেকে বাংলা সঙ্গীতের জগৎে এক নতুন ধারার সূচনা ঘটে। এই ধারার বৈশিষ্ট্য লক্ষিত হয় বিভিন্ন বাংলা ব্যান্ডের গানে। কোনো কোনো ব্যান্ড আবার বাংলা লোকসঙ্গীতের সঙ্গে জ্যাজ ও অন্যান্য পাশ্চাত্য সঙ্গীতের ফিউশনও ঘটায়। তবে এই ধারায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কবীর সুমন, নচিকেতা, অঞ্জন দত্ত এবং বাংলা ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দু ও ক্যাকটাসের "জীবনমুখী গান"। এছাড়া কলকাতায় হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও বাউল-ভাটিয়ালি ইত্যাদি বাংলা লোকসঙ্গীতও বিশেষ জনপ্রিয়। কলকাতার দুটি প্রধান সঙ্গীত-উৎসব হল বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত "বাংলা সঙ্গীত মেলা"(২০১১ পর থেকে এটি এখন ডিসেম্বর জানুয়ারিতে হয়) ও ডোভার লেন সঙ্গীত সম্মেলন।
কলকাতার যাত্রাপালা, নাটক ও গ্রুপ থিয়েটারের ঐতিহ্য সুবিদিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ও বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪–১৮৭৩), দীনবন্ধু মিত্র (১৮৩০–১৮৭৩), গিরিশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪–১৯১২), দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩–১৯১৩), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১–১৯৪১), ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ (১৮৬৩–১৯২৭) প্রমুখ কলকাতাকেন্দ্রিক নট ও নাট্যকারগণের হাত ধরে বাংলা নাট্যসাহিত্যে আধুনিকতার সূত্রপাত হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পশ্চিমবঙ্গের বাংলা নাটকে যা বাস্তবমুখী গণনাট্য ও নবনাট্য ধারার সূচনা হয় তার পুরোধা ব্যক্তিত্বরা ছিলেন তুলসী লাহিড়ী (১৮৯৭–১৯৫৯), বিজন ভট্টাচার্য (১৯১৫–১৯৭৮), উৎপল দত্ত (১৯২৯–১৯৯৩), শম্ভু মিত্র (১৯১৫–১৯৯৭), তৃপ্তি মিত্র (১৯২৪–১৯৮৯) প্রমুখ নাট্যব্যক্তিত্বেরা। বাংলা নাটকের এই ঐতিহ্য বর্তমানে বহন করছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (জন্ম ১৯৩৫), মনোজ মিত্র (জন্ম ১৯৩৮), শাঁওলি মিত্র, ব্রাত্য বসু প্রমুখেরা। নাট্য গবেষণার উন্নতিকল্পে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি স্থাপন করেছে। কলকাতার উল্লেখযোগ্য নাট্যমঞ্চগুলি হল স্টার থিয়েটার, মিনার্ভা থিয়েটার, মহাজাতি সদন, রবীন্দ্রসদন, শিশির মঞ্চ, মধুসূদন মঞ্চ ও গিরিশ মঞ্চ।
১৯৮৪ সালে নান্দীকার জাতীয় নাট্যোৎসব শুরু হয়। এটি একটি বার্ষিক নাট্যোৎসব। নান্দীকার নাট্যদল অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের মঞ্চে এই উৎসব আয়োজন করে।
বাংলা চলচ্চিত্র ও মূলধারার হিন্দি চলচ্চিত্র কলকাতায় সমান জনপ্রিয়। শহরের ফিল্ম স্টুডিও টালিগঞ্জে অবস্থিত; এই কারণে বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পকে "টলিউড" নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। সত্যজিৎ রায় (১৯২১–১৯৯২) কলকাতার একজন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক। ১৯৯১ সালে তিনি তার সারা জীবনের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ অস্কার পুরস্কার পেয়েছিলেন। tতার জন্ম ও কর্মস্থল ছিল কলকাতা। সেই জন্য তার বহু ছবিতে কলকাতার জীবনযাত্রার ছবি ধরা পড়েছে। ১৯৭০-এর দশকে সত্যজিৎ রায় সমকালীন কলকাতাকে আর্থ-সামাজিক সমস্যাগুলিকে কেন্দ্র করে নির্মিত তিনটি ছবি পরিচালনা করেছিলেন। এগুলি হল প্রতিদ্বন্দ্বী (১৯৭০), সীমাবদ্ধ (১৯৭১) ও জন অরণ্য (১৯৭৫)। এই তিনটি ছবি "কলকাতা ট্রিলজি" নামে পরিচিত। সত্যজিৎ রায় ছাড়াও একাধিক কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালকের কর্মজীবন গড়ে উঠেছে এই শহরকে কেন্দ্র করেই। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মৃণাল সেন (জন্ম ১৯২৩), তপন সিংহ (১৯২৪-২০০৯), ঋত্বিক ঘটক (১৯২৫–১৯৭৬) এবং আধুনিক চিত্র পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত (জন্ম ১৯৪৪), অপর্ণা সেন (জন্ম ১৯৪৫), গৌতম ঘোষ (জন্ম ১৯৫০) ও ঋতুপর্ণ ঘোষ (৩১ শে আগস্ট, ১৯৬৩-৩০ শে মে, ২০১৩)। কলকাতার বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উত্তম কুমার (১৯২৬–১৯৮০), সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (জন্ম ১৯৩৫), সুচিত্রা সেন (১৯২৯-২০১৪), ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯২০–১৯৮৩), অপর্ণা সেন (জন্ম ১৯৪৫), প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (জন্ম ১৯৬২) প্রমুখ।
কলকাতা ফিল্ম সোসাইটি ভারতের দ্বিতীয় ফিল্ম সোসাইটি। ১৯৪৭ সালে সত্যজিৎ রায় ও চলচ্চিত্র জগৎের অন্যান্য ব্যক্তিত্বেরা এই সোসাইটি স্থাপন করেন।[121] ১৯৮৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নন্দনে "পশ্চিমবঙ্গ চলচ্চিত্র কেন্দ্র" স্থাপন করে। এরপর ১৯৯৫ সালে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়।
কলকাতার অনেক ভবন ও স্থাপনা গথিক, ব্যারোক, রোমান, প্রাচ্য, ও মুঘল স্থাপত্য সহ অন্যান্য ইন্দো-ইসলামীয় শৈলীর মোটিফ দ্বারা সজ্জিত। ঔপনিবেশিক যুগের অনেক উল্লেখযোগ্য ভবনই সুসংরক্ষিত এবং "ঐতিহ্যবাহী ভবন" হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। আবার অনেক ভবনই আজ কালের গহ্বরে বিলীয়মান।
গোর্খা যুদ্ধের (১৮১৪-১৬) স্মৃতিতে নির্মিত অক্টারলোনি মনুমেন্ট (১৮৪৮) মিশরীয়, সিরীয় ও তুর্কি স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণ দেখা যায়।[122] ১৯৬৯ সালে এই স্মৃতিস্তম্ভটি স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গিত হয়। তাই এখন এটি "শহীদ মিনার" নামে পরিচিত।[123] পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয় মহাকরণ গ্রিকো-রোমান স্থাপত্যের একটি নিদর্শন।[124] কলকাতায় অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের রাজভবন ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারের কেডলস্টন হলের আদলে নির্মিত।[125] কলকাতা হাইকোর্টের মূল ভবনটি বেলজিয়ামের ইপ্রেসের ক্লথ হলের আদলে নির্মিত।[126]
কলকাতার আলিপুরে অবস্থিত জাতীয় গ্রন্থাগার[127] হল ভারতের বৃহত্তম গ্রন্থাগার তথা দেশের সর্বজনীন নথিপত্রের অভিলেখাগার।[128][129] এই গ্রন্থাগারে বাইশ লক্ষেরও বেশি বই সংগৃহীত রয়েছে।[130] অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস ও অন্যান্য শিল্প প্রদর্শশালায় নিয়মিত শিল্প প্রদর্শনী আয়োজিত হয়ে থাকে।
কলকাতার ভারতীয় সংগ্রহালয় হল এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো জাদুঘর। ১৮১৪ সালে এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে ভারতের প্রাকৃতিক ইতিহাস ও ভারতীয় শিল্পকলার এক বিরাট সংগ্রহ সংরক্ষিত আছে।[131] কলকাতার আর একটি উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য স্থল হল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল। এটি ১৯২১ সালে যুক্তরাজ্যের সম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিসৌধ হিসেবে স্থাপিত হয়েছিল। সৌধটি বেলফাস্ট সিটি হলের আদলে নির্মিত। এর মধ্যে ইতালীয় রেনেসাঁ, ইন্দো-সারাসেনীয় ও মুঘল স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণ দেখা যায়। বর্তমানে এটি একটি জাদুঘর ও প্রদর্শশালা।[132] কলকাতার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জাদুঘরগুলি হল রাজ্য পুরাতত্ত্ব সংগ্রহালয় বেহালা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আশুতোষ সংগ্রহশালা, স্বামী বিবেকানন্দের পৈতৃক বাসভবন, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, নেতাজি ভবন ইত্যাদি।
কলকাতার কালীঘাটের পট চিত্রকলা ভারতীয় শিল্পের একটি স্বতন্ত্র ঘরানা। কালীঘাট মন্দিরের কাছে উনিশ শতকে এই চিত্রশিল্প বিকাশ লাভ করেছিল। সেই সময় তীর্থযাত্রীরা স্মারক হিসেবে এই ছবিগুলি কিনে নিয়ে যেত। হিন্দু দেবদেবী, পৌরাণিক ঘটনাবলি ও সমসাময়িক নানা ঘটনাকে এক বিশেষ ধরনের ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলাই ছিল এই ঘরানার বৈশিষ্ট্য।
বিশ শতকের গোড়ার দিকে কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে "বেঙ্গল স্কুল অফ আর্ট" চিত্রশিল্পের বিশেষ এক ঘরানার জন্ম হয়। এই শিল্পকলার পুরোধাপুরুষ ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ক্যালকাটা স্কুল অফ আর্টের প্রভাবে মুঘল চিত্রকলা ও পাশ্চাত্য শিল্পীরীতির মিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলা চিত্রকলার এই নিজস্ব ঘরানাটির জন্ম দেন।[133][134] পরবর্তীকালে গণেশ পাইন, বিকাশ ভট্টাচার্য প্রমুখ শিল্পীরা এই ঘরানার দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হন।
কলকাতার উৎসবগুলি প্রকৃতিগতভাবে দুই প্রকার। যথা: ধর্মীয় উৎসব ও ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব। কলকাতার জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় হিন্দু উৎসবগুলি এই শহরে সর্বাধিক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে থাকে। দুর্গাপূজা কলকাতার বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব।[135] প্রতিবছর বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে আশ্বিন-কার্তিক মাসে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কলকাতার দুর্গাপূজা[136] শহরের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণও বটে। হিন্দুদের অন্যান্য উৎসবগুলির মধ্যে লক্ষ্মীপূজা, কালীপূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা, পৌষ সংক্রান্তি, সরস্বতী পূজা, শিবরাত্রি, দোলযাত্রা, পয়লা বৈশাখ, রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী ও বিশ্বকর্মা পূজা;এবং অবাঙালি হিন্দুদের উৎসবগুলির মধ্যে দীপাবলি, ধনতেরস ও ছটপূজা সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামি উৎসবগুলির মধ্যে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, মহরম, শবেবরাত ইত্যাদি; খ্রিষ্টান উৎসবগুলির মধ্যে বড়দিন ও গুড ফ্রাইডে; বৌদ্ধ উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা; জৈন উৎসব মহাবীর জয়ন্তী এবং শিখ উৎসব গুরু নানক জয়ন্তীও মহাসমারোহে পালিত হয়।
কলকাতার ধর্মনিরপেক্ষ উৎসবগুলির মধ্যে সর্বপ্রধান হল আন্তর্জাতিক কলকাতা পুস্তকমেলা ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী পঁচিশে বৈশাখ। এছাড়া কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব, নান্দীকারের জাতীয় নাট্যমেলা, বিভিন্ন আঞ্চলিক ও ছোটো বইমেলা ইত্যাদিও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়। কলকাতার চায়নাটাউনে প্রবাসী চীনাদের চৈনিক নববর্ষ উৎসবও কলকাতার অন্যতম দ্রষ্টব্য উৎসব। প্রতি বছর জুন মাসে কলকাতায় সমকামীদের গৌরব পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়; কলকাতার এই পদযাত্রা ভারতের প্রথম গৌরব পদযাত্রা।[137]
কলকাতার বাঙালিদের প্রধান খাদ্য ভাত ও মাছ।[138] এর সঙ্গে রসগোল্লা ও সন্দেশ নামে দুই ধরনের মিষ্টি ও মিষ্টি দই বাঙালিরা বিশেষ পছন্দ করে। চিংড়ি ও সামুদ্রিক মাছ ইলিশ দিয়ে রান্না করা বিভিন্ন রকম পদও বাঙালিদের মধ্যে বিশেষ জনপ্রিয়। পথখাদ্যের মধ্যে বেগুনি, রোল (চিকেন, মাটন, এগ বা সবজি), ফুচকা বিশেষ জনপ্রিয়। চায়নাটাউনের চীনা খাবারও বেশ জনপ্রিয়।[139][140][141][142] কলকাতার অধিবাসীদের মধ্যে মিষ্টি খাবার চল বেশি। বিশেষত সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব-অনুষ্ঠানে মিষ্টির বিশেষ চাহিদা দেখা যায়।[143]
কলকাতার পুরুষদের মধ্যে পাশ্চাত্য পোশাক পরার চল থাকলেও মহিলাদের মধ্যে সাধারণত ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। পুরুষেরা শার্ট, টি-শার্ট, ট্রাউজার্স, জিনস প্রভৃতি পরতে অভ্যস্ত। তবে উৎসবে অনুষ্ঠানে ধুতি-পাঞ্জাবি অথবা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরার চলই বেশি। অন্যদিকে মহিলারা শাড়ি অথবা সালোয়ার-কামিজ পরেন। ধর্মপ্রাণ মুসলিম মহিলাদের বোরকা পরতেও দেখা যায়। অবশ্য তরুণীদের মধ্যে পাশ্চাত্য পোশাকও সমান জনপ্রিয়।
কলকাতার বিদ্যালয়গুলি রাজ্য সরকার অথবা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত। এই সংস্থাগুলির মধ্যে বেশ অনেকগুলিই ধর্মীয় সংগঠন। কলকাতায় শিক্ষাদানের প্রাথমিক ভাষা হল বাংলা ও ইংরেজি। তবে মধ্য কলকাতার কয়েকটি বিদ্যালয়ে হিন্দি ও উর্দুতেও শিক্ষাদান করা হয়।[144][145] কলকাতার বিদ্যালয়গুলি "১০+২" পরিকল্পনা অনুসরণ করে। মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করার পর ছাত্রছাত্রীরা প্রধানত পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ বা ইন্ডিয়ান সার্টিফিকেট অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (আইসিএসই) অথবা কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (সিবিএসই) কর্তৃক অনুমোদিত এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার উপযুক্ত পরিকাঠামোযুক্ত বিদ্যালয়গুলিতে ভর্তি হয়।[144] উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে তারা মূলত মানবীয় বিদ্যা, বাণিজ্য বা বিজ্ঞান বিভাগের মধ্যে যে কোনো একটি বেছে নেন। বৃত্তিমূলক কর্মসূচিগুলিও এখানে সুলভ।[144] কলকাতার কয়েকটি বিদ্যালয় সারা দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির অন্যতম। এগুলির মধ্যে লা মার্টিনিয়ার ক্যালকাটা, ক্যালকাটা বয়েজ’ স্কুল, সেন্ট জেমস’ স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার'স কলেজিয়েট স্কুল ও লোরেটো হাউজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[146]
২০১০ সালের হিসেব অনুযায়ী, কলকাতা মহানগর অঞ্চলে রাজ্য সরকার পরিচালিত মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ১৪টি।[147] কলকাতার প্রত্যেকটি কলেজ কলকাতায় অথবা ভারতের অন্যত্র অবস্থিত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনুমোদিত। ১৭৮০ সালে মোহামেডান কলেজ অফ ক্যালকাটা নামে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ছিল শহরের সবচেয়ে পুরনো উত্তর-মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এটি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত।[148] ১৮৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়।[149] ১৮১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হিন্দু কলেজ ভারতের সবচেয়ে পুরনো সুবিখ্যাত কলেজগুলির অন্যতম। ১৮৫৫ সালে এই কলেজটির নাম বদলে প্রেসিডেন্সি কলেজ রাখা হয়। ২০১০ সাল পর্যন্ত কলেজটি ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত। ওই বছরই কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে উন্নীত হয় এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় নামে চিহ্নিত হয়। হাওড়ার ভারতীয় প্রকৌশল বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।[150] এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ভারতের প্রথম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বা আইআইইএসটি স্তরে উন্নীত হয় এবং জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘোষিত হয়।[151] ১৯৬১ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম শহরতলির জোকায় প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট ক্যালকাটা দেশের ম্যানেজমেন্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সর্বাগ্রে স্থাপিত। ২০০৬ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় বৈদেশিক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।[152] কলকাতায় স্থাপিত পশ্চিমবঙ্গ জাতীয় আইনবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় হল ভারতের অন্যতম স্বশাসিত আইন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান[153][154] এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট হল একটি সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান তথা বিশ্ববিদ্যালয়। রাজ্য সরকারের মালিকানাধীন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পূর্বতন নাম পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) হল ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা এবং এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির সংখ্যার নিরিখে ভারতের বৃহত্তম প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
যে সকল স্বনামধন্য বিদ্বজ্জন কলকাতায় জন্মগ্রহণ, পড়াশোনা বা কাজ করেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদার্থবিদ সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা,[155] ও জগদীশচন্দ্র বসু;[156] রসায়নবিদ প্রফুল্লচন্দ্র রায়;[155] পরিসংখ্যানবিদ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ও অনিল কুমার গাঁই;[155] চিকিৎসক উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী;[155] শিক্ষাবিদ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়;[157] এবং নোবেল পুরস্কারজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,[158] চন্দ্রশেখর বেঙ্কট রমন,[156] ও অমর্ত্য সেন.[159]
ভারতের বিভিন্ন অগ্রণী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বৃহত্তর কলকাতায় অবস্থিত। এগুলির মধ্যে রয়েছে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স (আইএসিএস),[160][161][162] ভারতীয় রাসায়নিক জীববিজ্ঞান সংস্থা (আইআইসিবি),[163][164][165] ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থান, কলকাতা (আইআইএসইআর),[166] বসু বিজ্ঞান মন্দির, সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স (এসআইএনপি), অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ (এআইআইএইচপিএইচ), সেন্ট্রাল গ্লাস অ্যান্ড সেরামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিজিসিআরআই), সত্যেন্দ্রনাথ বসু জাতীয় মৌলিক বিজ্ঞান কেন্দ্র (এসএনবিএনসিবিএস), ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট (আইআইএসডব্লিউবিএম), ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ ফার্মাকিউটিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এনআইপিইআর), ভেরিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টার (ভিইসিসি) ও ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স (আইসিএসপি)। নোবেল পুরস্কারজয়ী পদার্থবিদ চন্দ্রশেখর বেঙ্কট রমন রমন এফেক্টের উপর তার প্রসিদ্ধ কাজটি করেছিলেন আইএসিএস-এ।
ভারতের প্রথম সংবাদপত্র বেঙ্গল গেজেট ১৭৮০ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।[167] কলকাতার জনপ্রিয় বাংলা সংবাদপত্রগুলি হল আনন্দবাজার পত্রিকা, বর্তমান, সংবাদ প্রতিদিন, আজকাল, দৈনিক স্টেটসম্যান ও গণশক্তি।[168] দ্য স্টেটসম্যান ও দ্য টেলিগ্রাফ হল দুটি ইংরেজি সংবাদপত্র যা কলকাতা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। এছাড়া দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য হিন্দু, দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও এশিয়ান এজ কলকাতার অপর কয়েকটি জনপ্রিয় ইংরেজি সংবাদপত্র।[168] পূর্ব ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যকেন্দ্র কলকাতা থেকে বেশ কয়েকটি ব্যবসা-বিষয়ক দৈনিকও প্রকাশিত হয়। এগুলির মধ্যে দি ইকোনমিক টাইমস, দ্য ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, বিজনেস লাইন ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।[168][169] হিন্দি, উর্দু, গুজরাতি, ওড়িয়া, পাঞ্জাবি ও চীনা প্রভৃতি ভাষাতেও সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।[168][170] সাময়িকপত্রগুলির মধ্যে দেশ, সানন্দা, সাপ্তাহিক বর্তমান, নবকল্লোল, আনন্দলোক ইত্যাদি বিনোদনের পত্রিকা এবং আনন্দমেলা, কিশোর ভারতী, শুকতারা,সন্দেশ ইত্যাদি কিশোর মাসিক-পাক্ষিক-ত্রৈমাসিক পত্রিকা জনপ্রিয়।[168] দীর্ঘকাল ধরে কলকাতা বাংলা লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের একটি কেন্দ্র।.[171][172]
কলকাতার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বেতার সম্প্রচার সংস্থাটি হল আকাশবাণী কলকাতা। শহরে আকাশবাণীর বেশ কয়েকটি এএম রেডিও স্টেশন আছে।[173] কলকাতায় ১২টি স্থানীয় রেডিও স্টেশন আছে, যেগুলি এফএম-এ বেতার সম্প্রচার করে থাকে। এগুলির মধ্যে দুটি আকাশবাণীর স্টেশন।[174] ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব টেলিভিশন সম্প্রচার সংস্থা হল দূরদর্শন। দূরদর্শন দুটি ফ্রি-টু-এয়ার টেরেস্ট্রিয়াল চ্যানেল চালায়।[175] এছাড়া কেবল টেলিভিশন, ডাইরেক্ট-ব্রডকাস্ট স্যাটেলাইট সার্ভিস বা ইন্টারনেট-ভিত্তিক টেলিভিশনের মাধ্যমে একাধিক বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি ও অন্যান্য আঞ্চলিক চ্যানেল দেখা যায়।[176][177][178] বাংলা ২৪ ঘণ্টার টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলগুলির মধ্যে এবিপি আনন্দ, তারা নিউজ, কলকাতা টিভি, ২৪ ঘণ্টা, এনই বাংলা, নিউজ টাইম ও চ্যানেল ১০ উল্লেখযোগ্য।[179]
কলকাতায় গণপরিবহন পরিষেবা দেয় কলকাতা শহরতলি রেল, কলকাতা মেট্রো, ট্রাম ও বাস। শহরতলি রেল কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলির শহরগুলিকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। হুগলি নদীর উপর অবস্থিত হাওড়া সেতু (রবীন্দ্র সেতু) ও বিদ্যাসাগর সেতু (দ্বিতীয় হুগলি সেতু) কলকাতার সঙ্গে হাওড়া শহরের যোগাযোগ রক্ষা করছে।
কলকাতায় বাস পরিষেবা সরকারি ও বেসরকারে উদ্যোগে পরিচালিত হয়ে থাকে। কলকাতার সরকারি বাস পরিবহন সংস্থাগুলি হল পশ্চিমবঙ্গ পরিবহন নিগম ও দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা। কলকাতার ট্রাম পরিষেবার দায়িত্ব পশ্চিমবঙ্গ পরিবহন নিগমের উপর ন্যস্ত রয়েছে। উল্লেখ্য, কলকাতা ভারতের একমাত্র শহর যেখানে ট্রাম পরিষেবা অদ্যাবধি বিদ্যমান।[180] তবে শহরের বেশীরভাগ অংশে 'শ্লথ গতির যান' -এই অভিযোগ করে ট্রামের পথকে রুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্ষাকালে অত্যধিক বৃষ্টিতে জল জমে মাঝে মাঝেই শহরের পরিবহন ব্যবস্থায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে থাকে।[181][182]
কলকাতার পরিবহন ব্যবস্থার অপর এক বিশিষ্ট মাধ্যম হল ট্যাক্সি। কলকাতার ট্যাক্সিগুলি হলুদ রঙের হয়ে থাকে। অন্যান্য শহরে যখন টাটা ইন্ডিকা বা ফিয়েট গাড়ি ট্যাক্সি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, সেখানে কলকাতার অধিকাংশ ট্যাক্সিই হিন্দুস্তান মোটর্সের তৈরি অ্যাম্বাস্যাডর মডেলের। কোনো কোনো নির্দিষ্ট রুটে অটোরিকশাও চলাচল করে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শহরের যানজটের অন্যতম কারণ। কলকাতার রাস্তা স্বল্পদুরত্বের যাত্রীরা অনেক সময় সাইকেল রিকশা ও হস্তচালিত রিকশাও ব্যবহার করে থাকেন। কলকাতায় বিভিন্ন রকমের গণ পরিবহন মাধ্যম সুলভ বলে ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা অন্যান্য শহরের তুলনায় অল্পই।[183] যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে শহরে নথিভুক্ত যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে; ২০০২ সালের একটি তথ্যের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী সাত বছরে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৪৪ শতাংশ।[184] জনঘনত্বের তুলনায় শহরে রাস্তার পরিমাণ মাত্র ৬ শতাংশ। এর ফলে তীব্র যানজট শহরে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। উল্লেখ্য, এই হার দিল্লিতে ২৩ শতাংশ ও মুম্বইতে ১৭ শতাংশ।[185]
কলকাতা শহরকে রেল পরিষেবা দেয় ভারতীয় রেলের চারটি টার্মিনাল স্টেশন হাওড়া জংশন, শিয়ালদহ, শালিমার ও কলকাতা।[186] এর মধ্যে শিয়ালদহ ও কলকাতা স্টেশন কলকাতা শহরে এবং হাওড়া ও শালিমার স্টেশন হাওড়া শহরে অবস্থিত। এগুলি ছাড়াও কলকাতায় আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রেলওয়ে স্টেশন আছে। এগুলি হল: বিধাননগর রোড, দমদম জংশন, গড়িয়া, ইডেন গার্ডেনস ইত্যাদি। ভারতীয় রেলের দুটি অঞ্চলের সদর কার্যালয় কলকাতায় অবস্থিত। এগুলি হল: পূর্ব রেল ও দক্ষিণ পূর্ব রেল।[187]
কলকাতা মেট্রো পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী উত্তর চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ও হাওড়া জেলার অংশবিশেষে পরিষেবা প্রদানকারী দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা। ২০২৪ সালের মার্চ মাসের তথ্য অনুসারে, কলকাতা মেট্রোর চারটি সক্রিয় রেলপথ রয়েছে, যেগুলি হল দক্ষিণেশ্বর থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত ৩২.৩৩ কিমি (২০.০৯ মা) দীর্ঘ নীল লাইন, সল্টলেক সেক্টর ৫ থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ৯.১ কিমি (৫.৭ মা) এবং এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত ৩ কিমির (১.৮৬৪ মা) দুটি পৃথকভাবে পরিচালনীয় শাখার সবুজ লাইন, জোকা থেকে মাঝেরহাট পর্যন্ত ৬.৫ কিমি (৪.০ মা) দীর্ঘ বেগুনি লাইন কবি সুভাষ থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় পর্যন্ত ৪.৮ কিমি (৩.০ মা) দীর্ঘ অরেঞ্জ লাইন। এই ব্যবস্থায় ৫৯.৩৮ কিমি (৩৬.৯০ মা) পথে ব্রডগেজ (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি) এবং আদর্শগেজ উভয় বিস্তারযুক্ত ৫০ টি মেট্রো স্টেশন বিদ্যমান, যার মধ্যে ১৭ টি স্টেশন ভূগর্ভস্থ, ২১ টি স্টেশন উত্তোলিত এবং ২ টি স্টেশন ভূমিগত। এছাড়া আরো তিনটি লাইন বিভিন্ন পর্যায়ে নির্মীয়মান হয়ে রয়েছে। ভারতীয় প্রমাণ সময় ০৫:৪৫ থেকে ২১:৫৫ পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা চালু থাকে এবং মেট্রোর ভাড়া ₹৫ থেকে ₹৫০ এরমধ্যে ঘোরাফেরা করে।
১৯৮৪ সালে চালু হওয়া কলকাতা মেট্রো ভারতের প্রথম মেট্রো রেল পরিষেবা (দ্বিতীয় মেট্রো পরিষেবা দিল্লি মেট্রো চালু হয় ২০০২ সালে)। প্রাথমিকভাবে ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে এর পরিকল্পনা করা হলেও সত্তরের দশকে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়৷ ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে চালু হওয়া কলকাতা মেট্রোর প্রথম ধাপটি ছিলো ভবানীপুর (বর্তমান নেতাজি ভবন) থেকে এসপ্ল্যানেড অবধি দীর্ঘায়িত ছিল। এটি দিল্লি মেট্রো, হায়দ্রাবাদ মেট্রো, চেন্নাই মেট্রো এবং নাম্মা মেট্রোর পর বর্তমানে ভারতের কর্মক্ষম পঞ্চম দীর্ঘতম মেট্রো যোগাযোগ ব্যবস্থা।
কলকাতা মেট্রোর উত্তর-দক্ষিণ লাইনটি উত্তরে দক্ষিণেশ্বর থেকে দক্ষিণে কবি সুভাষ (নিউ গড়িয়া) পর্যন্ত ৩১.৩৬৫ কিলোমিটার প্রসারিত ও মোট স্টেশনের সংখ্যা ২৬ টি। এবং নোয়াপাড়ার পর থেকে বরানগর হয়ে লাইনটি দক্ষিণেশ্বর অবধি সম্প্রসারিত হয় ২২শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১এ। এই লাইনে ভূগর্ভস্থ ও উড়াল, উভয় প্রকার ষ্টেশন রয়েছে। প্যারিস মেট্রোর মতো কলকাতা মেট্রোতেও দেশের বিভিন্ন মণীষী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে স্টেশনের নামকরণ করা হয়ে থাকে। পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলের মেট্রো ভবনে কলকাতা মেট্রোর সদর কার্যালয় অবস্থিত।
২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতা মেট্রোর দ্বিতীয় লাইন হিসাবে পূর্ব-পশ্চিম লাইনের সেক্টর ৫ থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত ৫.৮ কিলোমিটার পথ খোলা হয় যেখানে মোট ৬ টি স্টেশন ছিল এবং প্রতিটি স্টেশন রেলপথ সহ উত্তোলিত ভাবে নির্মিত। ২০২১ সালে এটি ফুলবাগান অব্দি সম্প্রসারিত হয় এবং ২০২২ সালে শিয়ালদহ অব্দি। এই ২টি স্টেশন ভূগর্ভস্থ।
মেট্রো রেলওয়ে, কলকাতা, এবং কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন এই রেল পরিষেবার কর্ণধার ও পরিচালক৷ ২০১০ সালের ২৯শে ডিসেম্বর কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে ভারতীয় রেলওয়ের ১৭তম ক্ষেত্র বলে চিহ্নিত হয়৷ এটি পুরোপুরিভাবে ভারতীয় রেল মন্ত্রকের অধিকৃত ও নিহিত৷ এটিই একমাত্র মেট্রো পরিষেবা যা ভারতীয় রেলের অধীনস্থ এবং ভারতীয় রেলের একটি ক্ষেত্রীয় রেলওয়ের মর্যাদা ভোগ করে। দৈনিক ৩০০ টি ট্রেন যাত্রায় ৭,০০,০০০-এর অধিক যাত্রী পরিষেবা ভোগ করেন৷
বর্তমানে কলকাতা মেট্রোর একাধিক সম্প্রসারণ প্রকল্প ও নতুন লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে।নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কলকাতার একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটি শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে ১৭ কিলোমিটার উত্তরে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার দমদমে অবস্থিত। এই বিমানবন্দর থেকে আভ্যন্তরিণ ও আন্তর্জাতিক দুই ধরনের উড়ানই চালু আছে। বেহালা বিমানবন্দর কলকাতার একটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর। এটি কলকাতার বেহালা অঞ্চলে অবস্থিত।
কলকাতা পূর্ব ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর। কলকাতা ও কলকাতার সহকারী হলদিয়া বন্দরের দায়িত্ব কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপর ন্যস্ত।[189] এই বন্দর থেকে শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ারে যাত্রী পরিষেবা এবং ভারতের অন্যান্য বন্দর ও বিদেশে পণ্য পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়া কলকাতা ও হাওড়া শহরের মধ্যে একটি ফেরি পরিষেবাও চালু আছে।
কলকাতা পৌরসংস্থা শহরের পানীয় জলের প্রধান সরবরাহকারী। হুগলি নদী থেকে সংগৃহীত জল উত্তর চব্বিশ পরগনার পলতার পাম্পিং স্টেশনে পরিশোধিত করে সমগ্র শহরে পানীয় জল হিসেবে সরবরাহ করে হয়। প্রতিদিন প্রায় ২৫০০ টন কঠিন বর্জ্য কলকাতার পূর্ব দিকে অবস্থিত ধাপায় ফেলা হয়ে থাকে। এই বর্জ্যভূমিতে বর্জ্য পদার্থ ও নোংরা জলের প্রাকৃতিক পুনর্নবীকরণের জন্য চাষাবাদও করা হয়ে থাকে।[190] শহরের অনেক অঞ্চলেই অনুন্নত পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার কারণে অস্বাস্থ্যকর উপায়ে বর্জ্য নিঃসরণ করা হয়ে থাকে।[73] শহরাঞ্চলে ও শহরতলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে যথাক্রমে ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ নামে দুই সরকারি সংস্থা। ১৯৯০-এর দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত কলকাতাবাসীদের উপর্যুপরি লোডশেডিং-এর যন্ত্রণা ভোগ করতে হত। যদিও বর্তমানে অবস্থার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে, তবে এখনও মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে থাকে। পশ্চিমবঙ্গ দমকল পরিষেবার অধীনে কলকাতায় ২০টি দমকল কেন্দ্র রয়েছে। এগুলি বছরে গড়ে ৭,৫০০টি অগ্নিসংযোগ ও উদ্ধারকার্যের জন্য ডাক পায়।[191]
কলকাতার প্রধান টেলিফোন ও মোবাইল ফোন পরিষেবা সরবরাহকারী হল সরকারি সংস্থা ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল) এবং ভোডাফোন আইডিয়া, ভারতী এয়ারটেল, রিলায়েন্স জিও, টাটা ইন্ডিকম, ইউনিনর, ভার্জিন মোবাইল ও এমটিএস ইন্ডিয়া সহ একাধিক বেসরকারি সংস্থা। শহরে জিএসএম ও সিডিএমএ সহ সুপ্রসারিত সেলুলার কভারেজ সুলভ। বিএসএনএল, ভোডাফোন আইডিয়া, এয়ারটেল, রিলায়েন্স জিও প্রভৃতি সংস্থা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করে থাকে।
২০১১ সালের হিসেব অনুসারে, কলকাতায় ৪৮টি সরকারি হাসপাতাল ও ৩৬৬টি বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র আছে।[192] এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালগুলি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীনস্থ। কলকাতার হাসপাতালগুলির মোট শয্যাসংখ্যা ২৭,৬৮৭।[192] প্রতি ১০,০০০ মানুষে কলকাতায় হাসপাতাল শয্যাসংখ্যার অনুপাত ৬১.৭।[193] জাতীয় স্তরে এই অনুপাত প্রতি ১০,০০০ নাগরিকে ৯ জন। সেই হিসেবে এটি জাতীয় গড়ের চেয়ে অনেক বেশি।[194] কলকাতায় দশটি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ আছে। এগুলি কলকাতা মহানগর অঞ্চলের মধ্যে রাজ্যের টার্টিয়ারি রেফারাল হাসপাতাল হিসেবে কাজ করে।[195][196] কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপিত হয়েছিল ১৮৩৫ সালে। এটিই এশিয়ার প্রথম আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।[197] তবে কলকাতার স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থাকে যথেষ্ট মনে করা হয় না।[198][199][200] কলকাতার অধিবাসীদের ৭৫% বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রগুলিকে বেশি পছন্দ করেন।[201]:১০৯জন্য সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবার নিম্নমান, অপ্রতুলতা ও দীর্ঘসূত্রতাকে দায়ী করা হয়।[201]:৬১
২০০৫ সালের জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা অনুসারে, কলকাতার অধিবাসীদের একটি ছোট অংশই কোনোরকম স্বাস্থ্য স্কিম বা স্বাস্থ্য বিমা পরিষেবার আওতাভুক্ত।[201]:৪১ কলকাতার শিশু জন্ম হার ১.৪। এই হার সমীক্ষার অন্তর্গত আটটি মহানগরের মধ্যে সর্বনিম্ন।[201]:৪৫ কলকাতার ৭৭% বিবাহিত মহিলা জন্মনিরোধক ব্যবহার করেন। এই হার সমীক্ষার অন্তর্গত শহরগুলির মধ্যে সর্বাধিক। তবে কলকাতায় আধুনিক জন্মনিরোধকের ব্যবহারের হার সর্বনিম্ন (৪৬%)।[201]:৪৭ কলকাতায় প্রসবকালীন শিশুমৃত্যুর হার প্রতি ১,০০০-এ ৪১। পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি ১,০০০-এ ৪৯।[201]:৪৮
২০০৫ সালের একটি সমীক্ষার অন্তর্গত শহরগুলির মধ্যে শিশুদের বিশ্বজনীন টীকাকরণ কর্মসূচির অধীনে টীকা না পাওয়া শিশুদের হারে কলকাতার স্থান দ্বিতীয় (৫%)।[201]:৪৮ সুসংহত শিশু উন্নয়ন পরিষেবা কর্মসূচিতে "অঙ্গনওয়াড়ি" কেন্দ্রে যোগাযোগের ব্যাপারে কলকাতার স্থান দ্বিতীয়। কলকাতা ০ থেকে ৭১ মাস বয়সী শিশুদের ৫৭% অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যুক্ত হয়।[201]:৫১ অপুষ্টি, অ্যানিমিয়া ও কম ওজনজনিত সমস্যায় ভোগা শিশুদের অনুপাত কলকাতায় সমীক্ষার অন্যান্য শহরের তুলনায় কম।[201]:৫৪–৫৫
কলকাতার প্রায় ৩০% নারী ও ১৮% পুরুষ অতিরিক্ত মেদজনিত সমস্যায় ভোগেন। এদের একটি বড় অংশ সমাজের সচ্ছল অংশের মানুষ।[201]:১০৫ ২০০৫ সালের হিসেব অনুসারে, সমীক্ষাকৃত শহরগুলির মধ্যে কলকাতায় অ্যানিমিয়াগ্রস্থ নারীর শতাংশ হার সর্বাধিক (৫৫%)। পুরুষদের মধ্যে এই হার ২০%।[201]:৫৬–৫৭ ডায়াবেটিস, হাঁপানি, বাত ও অন্যান্য থাইরয়েড-সংক্রান্ত অসুখে ভোগা মানুষও অনেক আছেন।[201]:৫৭–৫৯ কলকাতায় ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, চিকনগুনিয়া ইত্যাদি অসুখ বেশি দেখা যায়। তবে এই জাতীয় অসুখে অসুস্থ হয়ে পড়া মানুষের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে।[202][203] কলকাতা ভারতের সেই জেলাগুলির মধ্যে অন্যতম যেখানে এইডস-আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সর্বাধিক। কলকাতা জেলাকে এইডস রোগের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিপজ্জনক অঞ্চল মনে করা হয়।[204][205]
ফুটবল, ক্রিকেট ও ফিল্ড হকি কলকাতার জনপ্রিয় খেলা। কলকাতা ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম প্রধান কর্মকেন্দ্র।[206] ভারতের অন্যান্য শহরের তুলনায় এখানে মানুষদের মধ্যে ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা খুব বেশি বরাবরই।[207] এই শহর "ভারতীয় ফুটবলের মক্কা" নামেও পরিচিত। ১৮৯৮ সালে চালু হওয়া কলকাতা ফুটবল লিগ এশিয়ার প্রাচীনতম ফুটবল লিগ। ভারতের অন্যতম প্রধান তিন জাতীয় দল মোহনবাগান, মহমেডান ও ইস্টবেঙ্গল কলকাতারই তিন ঐতিহ্যবাহী ফুটবল ক্লাব। এছাড়াও ইউনাইটেড স্পোর্টিং ক্লাব এই শহরেরই আই-লিগে অংশগ্রহণকারী স্বনামধন্য ফুটবল ক্লাব। মোহনবাগান শুধুমাত্র এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন ফুটবল ক্লাবই নয়, এটি "ভারতের জাতীয় ক্লাব" আখ্যাপ্রাপ্ত একমাত্র ক্লাব।[208][209] মোহনবাগান ও ইষ্টবেঙ্গলের মধ্যে ফুটবল ম্যাচ কলকাতায় কলকাতা ডার্বি নামে পরিচিত। ম্যাচগুলোতে দর্শকদের উৎসাহ উত্তেজনা দেখবার মতন থাকে।[210]
শাহরুখ খানের মালিকানাধীন "ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ" (আইপিএল) ক্রিকেট দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের কেন্দ্রও কলকাতায় অবস্থিত।
ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মতো কলকাতাতে ক্রিকেট অত্যন্ত জনপ্রিয়। শহরের মাঠেঘাটে ও রাস্তায় ক্রিকেট খেলার রেওয়াজ রয়েছে।[211][212] ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন প্রভৃতি বহির্দ্বার এবং ক্যারাম প্রভৃতি অন্তর্দ্বার ক্রীড়া প্রতিযোগিতা কলকাতায় নিয়মিত আন্তঃঅঞ্চল ও আন্তঃক্লাব পর্যায়ে আয়োজিত হয়ে থাকে।[213] কলকাতা ময়দানে একাধিক ছোটোখাটো ফুটবল ও ক্রিকেট ক্লাব এবং প্রশিক্ষণ সংস্থা অবস্থিত।[214] কলকাতার উল্লেখযোগ্য ক্রীড়া ব্যক্তিত্বগণ হলেন প্রাক্তন ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও পঙ্কজ রায় এবং অলিম্পিক টেনিস ব্রোঞ্জ পদকজয়ী লিয়েন্ডার পেজ। কলকাতার ফুটবল তারকাদের মধ্যে উল্লেখনীয় হলেন প্রাক্তন অলিম্পিক পদকজয়ী শৈলেন মান্না, চুনী গোস্বামী, প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ এবং বর্তমান কালের ভারতীয় জাতীয় ফুটবল তারকা বাইচুং ভুটিয়া। শাহরুখ খানের মালিকানাধীন "ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ" (আইপিএল) ক্রিকেট দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের কেন্দ্রও কলকাতায় অবস্থিত।
কলকাতা একাধিক বৃহদাকার স্টেডিয়ামের জন্য সুবিখ্যাত। ইডেন গার্ডেন্স বহুকাল পর্যন্ত বিশ্বের দুটিমাত্র ১০০,০০০-আসনবিশিষ্ট ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একটি বলে গণ্য হত। ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য সংস্কারের পর বর্তমানে আসনসংখ্যা ১,০০,০০০ র থেকে কমে গেছে। বর্তমানে এটি ভারতের বৃহত্তম ও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্টেডিয়াম |[215] বিধাননগরের বহুমুখী-ব্যবহারোপযোগী বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন (বা সল্টলেক স্টেডিয়াম) বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ফুটবল স্টেডিয়াম।[216][217] ক্যালকাটা ক্রিকেট অ্যান্ড ফুটবল ক্লাব বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম ক্রিকেট ক্লাব।[218] রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাব, টালিগঞ্জ ক্লাব ও ফোর্ট উইলিয়ামে কলকাতার তিনটি ১৮-হোলবিশিষ্ট গলফ কোর্স অবস্থিত। রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাব ব্রিটেনের বাইরে বিশ্বের প্রথম গল্ফ ক্লাব।[219] রয়্যাল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাব শহরে নিয়মিত ঘোড়দৌড় ও পোলো ম্যাচ আয়োজন করে থাকে।[220] ক্যালকাটা পোলো ক্লাব বর্তমানে বিশ্বের প্রাচীনতম পোলো ক্লাব হিসেবে পরিগণিত হয়।[221][222][223] অন্যদিকে ক্যালকাটা সাউথ ক্লাব কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক টেনিস প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানস্থল। এখানে ১৯৪৬ সালে প্রথম গ্লাস-কোর্ট ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচ খেলা হয়েছিল।[224][225] ২০০৫-২০০৭ সাল নাগাদ উইমেনস টেনিস অ্যাসোসিয়েশন ট্যুরের টায়ার-থ্রি টুর্নামেন্ট সানফিস্ট ওপেন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত হয়েছিল। তার পর থেকে সেটি আর চালু হয়নি।[226][227]
ক্যালকাটা রোয়িং ক্লাব নিয়মিত নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে। রাগবি কলকাতার একটি অপ্রধান খেলা হলেও এই শহরকে ভারতের রাগবি ইউনিয়নের "রাজধানী" আখ্যা দেওয়া হয়, যা ক্যালকাটা কাপ নামে পরিচিত। রাগবি ইউনিয়নের প্রাচীনতম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ক্যালকাটা কাপের নাম এই শহরের নামানুসারেই উদ্ভূত।[228][229][230] কাপটি ভারতে নির্মিত হয়ে থাকে। কলকাতার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য স্টেডিয়ামগুলি হল রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম এবং বেহালার প্রস্তাবিত সত্যজিৎ রায় ইন্ডোর ও আউটডোর স্টেডিয়াম। পূর্ব ভারতের অটোমোবাইল অ্যাশোসিয়েশন, যে ১৯০৪ সালে তৈরি হয়েছিল,[231][232] এবং বেঙ্গল মোটর স্পোর্টস ক্লাব কলকাতায় মোটর স্পোর্টস এবং র্যালি করায় কলকাতায় তাদের প্রোমোশনের জন্য।[233][234] বেইটন কাপ, আরেকটি ইভেন্ট যা বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশনের দ্বারা পরিচালনা করা হয় এবং যা প্রথম খেলা হয়েছিল ১৮৯৫ সালে, হল ভারতের সবথেকে প্রাচীন ফিল্ড হকি প্রতিযোগিতা, যা প্রধানত ময়দানের মোহনবাগান মাঠ-এ পরিচালনা করা হয়।[235][236]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.