মেঘনাদ সাহা

বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

মেঘনাদ সাহা

মেঘনাদ সাহা এফআরএস (শুনুন) (৬ অক্টোবর ১৮৯৩ – ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬) ছিলেন একজন ব্রিটিশ ভারতীয় বাঙালি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীজ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি গণিত নিয়ে পড়াশোনা করলেও পদার্থবিজ্ঞানজ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়েও গবেষণা করেছেন। তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে তাপীয় আয়নীকরণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তার আবিষ্কৃত সাহা আয়নীভবন সমীকরণ নক্ষত্রের রাসায়নিক ও ভৌত ধর্মগুলো ব্যাখ্যা করতে অপরিহার্য।[][][] তিনি ভারতে নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানে আধুনিক গবেষণার জন্য ১৯৫০ সালে পশ্চিমবঙ্গে সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স প্রতিষ্ঠা করেন। পদার্থবিজ্ঞানে তার অবদানের জন্য ১৯২৭ সালে লণ্ডনের রয়াল সোসাইটি তাকে এফআরএস নির্বাচিত করে।[]

দ্রুত তথ্য মেঘনাদ সাহা এফআরএস, জন্ম ...
মেঘনাদ সাহা

Thumb
১৯৫০ সালের পূর্বেকার সংগৃহীত স্থিরচিত্রে মেঘনাদ সাহা
জন্ম(১৮৯৩-১০-০৬)৬ অক্টোবর ১৮৯৩
মৃত্যু১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬(1956-02-16) (বয়স ৬২)
সমাধিকলকাতা
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয় (১৮৯৩-১৯৪৭)‌‌
ভারতীয় (১৯৪৭-১৯৫৬)
নাগরিকত্বভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তনঢাকা কলেজ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
পরিচিতির কারণ
দাম্পত্য সঙ্গীরাধারাণী সাহা (বিবাহ ১৯১৮)
সন্তান
  • ৩ পুত্র : অজিত, রঞ্জিত, প্রসেনজিৎ;
  • ৪ কন্যা: ঊষা, কৃষ্ণা, চিত্রা, সঙ্ঘমিত্রা
পিতা-মাতাজগন্নাথ সাহা, ভুবনেশ্বরী সাহা
পুরস্কার
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রপদার্থবিদ্যা জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং গণিত
প্রতিষ্ঠানসমূহকলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
অভিসন্দর্ভের শিরোনাম (১৯১৯)
উচ্চশিক্ষায়তনিক উপদেষ্টাজগদীশ চন্দ্র বসু
প্রফুল্ল চন্দ্র রায়
ডক্টরেট শিক্ষার্থীদৌলত সিং কোঠারি
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী
  • আর সি মজুমদার
  • এন কে সুর
  • জি আর তস্নিওাল
  • পি. কে. কিচলু
সংসদ সদস্য, প্রথম লোকসভা
কাজের মেয়াদ
৩ এপ্রিল ১৯৫২  ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭
পূর্বসূরীপদ সৃষ্ট
উত্তরসূরীঅশোক কুমার সেন
নির্বাচনী এলাকাকলকাতা উত্তর-পশ্চিম লোকসভা কেন্দ্র (বর্তমান কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্র)
ব্যক্তিগত বিবরণ
রাজনৈতিক দলবিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দল
স্বাক্ষর
Thumb
বন্ধ

তিনি ও তার সহপাঠী এবং সহকর্মী সত্যেন্দ্রনাথ বসু সর্বপ্রথম আলবার্ট আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার সূত্রকে জার্মান থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন যা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়।[] স্বনামধন্য এই পদার্থবিজ্ঞানী পদার্থবিজ্ঞান ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বিজ্ঞানসম্মত ধারায় পঞ্জিকা সংশোধন করেন। এছাড়া ভারতের নদীনিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি ভারতে পদার্থবিজ্ঞানের বিকাশ ও প্রসারের জন্য ১৯৩১ সালে ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্স, ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠা করেন।[] এছাড়াও ১৯৩৪ সালে[] ভারতে পদার্থবিজ্ঞানীদের সংগঠন ইন্ডিয়ান ফিজিক্যাল সোসাইটিও প্রতিষ্ঠা করেন।[] তার উদ্যোগেই ভারতে ইন্ডিয়ান ইন্সটিউট অব সায়েন্সের সূচনা হয়, যা বর্তমানে ইন্ডিয়ান ইন্সটিউট অব টেকনোলজি (আই.আই.টি.) নামে পরিচিত।

১৯৫২ সালে ভারতীয় লোকসভার নির্বাচনে কলকাতা উত্তর-পশ্চিম লোকসভা কেন্দ্র (বর্তমানে কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্র) থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত সাংসদ হন।[][১০]

জন্ম, বাল্যকাল ও সমাজ জীবন

মেঘনাথ সাহা ৬ অক্টোবর, ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ববঙ্গের ঢাকা জেলার অন্তর্গত শেওড়াতলী গ্রামে (বর্তমানে বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার অন্তর্গত) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জগন্নাথ সাহা ও মাতার নাম ভুবনেশ্বরী সাহা। তিনি ছিলেন পঞ্চম সন্তান।[১১] তার পিতা ছিলেন পেশায় মুদি।[১২]

তৎকালীন সময়ের ধর্মগোড়া উচ্চ-অহংকারী ব্রাহ্মণদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মীয় মতাদর্শের কারণে এবং শৈশব-কিশোর এবং কর্মজীবনে জাতপাতের শিকার হওয়ায় তার হৃদয়ে বৈদিক হিন্দুধর্মের গোঁড়ামির প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মেছিল।[১৩][১৪][১৫]

শিক্ষাজীবন

সারাংশ
প্রসঙ্গ

প্রাথমিক শিক্ষা

Thumb
বার্লিনে তরুণ মেঘনাদ সাহা

গ্রামের টোলে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। সেই সময় তার গ্রামের বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার করার সুযোগ ছিল। তার পিতা ছোটবেলায় তার বিদ্যাশিক্ষা অপেক্ষা দোকানের কাজ শেখা আবশ্যক মনে করেন। কিন্তু তার দাদা জয়নাথ এবং তার মায়ের ঐকান্তিক চেষ্টায় এবং তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তার ইতিহাস এবং গণিতের মেধার কথা তার পিতার কাছে অবগত করলে তার পিতা তাকে হাই স্কুলে ভর্তি করতে সম্মত হন। এরপর তিনি শেওড়াতলী গ্রাম থেকে সাত মাইল দূরে শিমুলিয়ায় মধ্য ইংরাজি বিদ্যালয়ে (মিডল স্কুল - ব্রিটিশ আমলে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি পড়ার স্কুল) ভর্তি হন। এত দূরে প্রতিদিন যাওয়া আসা করে তার পক্ষে পড়াশোনা করা দুরূহ হওয়ার পাশাপাশি মেঘনাদের বাবার পক্ষেও আর্থিক সামর্থ্য ছিল না শিমুলিয়া গ্রামে মেঘনাদকে রেখে পড়ানোর। তখন মেঘনাদের বড় ভাই এবং পাটকল কর্মী জয়নাথ শিমুলিয়া গ্রামের চিকিৎসক অনন্ত কুমার দাসকে মেঘনাদের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করায় তিনি রাজি হন। সেখানে তিনি শিমুলিয়ার ডাক্তার অনন্ত নাগের বাড়িতে থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ লাভ করেন। এই স্কুল থেকে তিনি শেষ পরীক্ষায় ঢাকা জেলার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে বৃত্তি পান।[১১]

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা

এরপর ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। সেই সময় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে ঘিরে সারাবাংলা উত্তাল হয়েছিল। সেই সময় তাদের বিদ্যালয় পরিদর্শনের জন্য তৎকালীন গভর্নর ব্যামফিল্ড ফুলার আসলে মেঘনাথ সাহা ও তার সহপাঠীরা বয়কট আন্দোলন করেন।[১৬] ফলত আন্দোলনকারী সহপাঠীদের সাথে তিনিও বিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হন এবং তার বৃত্তি নামঞ্জুর হয়ে যায়।[১৭] পার্শ্ববর্তী কিশোরীলাল জুবিলি হাই স্কুলের একজন শিক্ষক স্বঃপ্রণোদিত হয়ে তাকে তাদের স্কুলে ভর্তি করে বিনা বেতনে অধ্যয়নের ব্যবস্থা করেন। সেখান থেকেই তিনি ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ববঙ্গের সমস্ত বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় মাসিক ৪ টাকার সরকারি বৃত্তি সহ উত্তীর্ণ হন। এই পরীক্ষায় গণিত এবং ভাষা বিষয়ে তিনি সর্বোচ্চ নম্বর অধিকার করে।

বিদ্যালয় শিক্ষার পর তিনি ঢাকা কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বৈশ্য সমিতির মাসিক দুই টাকা বৃত্তিও লাভ করেন। সেই সময় তিনি কলেজের রসায়নের শিক্ষক হিসেবে হরিদাস সাহা, পদার্থবিজ্ঞানে বি এন দাস এবং গণিতের নরেশ চন্দ্র ঘোষ এবং কে পি বসু সহ প্রমুখ স্বনামধন্য শিক্ষকদের সান্নিধ্যে এসেছিলেন। সেই সময় তিনি বিজ্ঞান ছাড়াও ডক্টর নগেন্দ্রনাথ সেনের কাছে জার্মান ভাষার প্রশিক্ষণ নেন। এই বিদ্যালয় থেকে তিনি আই এস সি পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর

১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে গণিতে অনার্স নিয়ে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। সেই সময় ১৯১১-১৯১৩ সাল পর্যন্ত দু'বছর ইডেন হিন্দু ছাত্রাবাস এবং পরে একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নিখিলরঞ্জন সেন, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, শৈলেন্দ্রনাথ গুহ, সুরেন্দ্র নাথ মুখার্জী প্রমুখ তার সহপাঠী ছিলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে সংখ্যাতত্ত্ব বিজ্ঞানী প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ এক বছরের এবং রসায়নবিদ নীলরতন ধর দুই বছরের সিনিয়র ছিলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে তিনি গণিতের অধ্যাপক হিসাবে বি এন মল্লিক এবং রসায়নে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় এবং পদার্থবিজ্ঞানে জগদীশচন্দ্র বসুকে পেয়েছিলেন। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৩ সালে গণিতে সম্মানসহ স্নাতক এবং ১৯১৫ সালে ফলিত গণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। উভয় পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রথম হন।

ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ

মেঘনাদ ১৯২৮ সালে তার সমস্ত গবেষণার ফলাফল একত্র করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রির জন্য আবেদন করেন। তার সব গবেষণা বিবেচনা করার জন্য উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তার থিসিস পেপার বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বিদেশে অধ্যাপক ডাবলু রিচার্ডসন, ডঃ পোর্টার এবং ডঃ ক্যাম্বেল তার থিসিস পেপার পর্যালোচনা করেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ১৯১৯ সালে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করে।[১৮] একই বছর মেঘনাদ প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন। যার ফলে তিনি ইংল্যাণ্ড ও জার্মানীতে গবেষণার সুযোগ পান।

কর্মজীবন

সারাংশ
প্রসঙ্গ

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯১৬-১৯১৯)

Thumb
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু সহ অন্যান্য বাঙালি বিজ্ঞানীদের সাথে মেঘনাদ সাহা

১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, কলকাতার বিখ্যাত আইনজীবী তারকনাথ পালিত রাজবিহারী ঘোষের অর্থানুকূল্যে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিত বিভাগে স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম পঠনের জন্য রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ উদ্বোধন করেন। সেসময় উপাচার্য মেঘনাথ সাহা ও সত্যেন্দ্রনাথ বসুর স্নাতকোত্তরের ফল ভাল থাকায় তাদের গণিত বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। তারা দুজনেই গণিতের প্রভাষক হিসেবে নিযুক্ত হন কিন্তু তাদের পদার্থবিজ্ঞান পছন্দসই বিষয় হওয়ায় উপাচার্যের অনুমতি নিয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে চলে আসেন।[১৯] গণিত বিভাগের প্রভাষক থাকাকালীন মেঘনাথ সাহা জ্যামিতিভূগোলের বিষয় অধ্যায়ন করেছিলেন এবং পাঠদান করেছিলেন। তার ভূ-তাত্বিক বিজ্ঞান সম্পর্কিত আগ্রহ থেকেই পরবর্তীকালে ভারতবর্ষে ভূতত্ত্ববিদ্যা পাঠক্রমের সূচনা হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি ভূতাত্ত্বিক সময় নিরূপণ বিষয়ের উপর গবেষণা করেছিলেন।

১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে দেবেন্দ্রমোহন বসু গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য অন্তরীণ হয়ে পরায় মেঘনাথ সাহা এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে তাত্বিক ও পরীক্ষামূলক গবেষণায় নিয়োজিত হতে হয়। সেই সময় প্রবীণ অধ্যাপক ছাড়াই মেঘনাথ সাহা পদার্থ বিজ্ঞানের গবেষণা শুরু করেন। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে এস কে মিত্র, পি এন ঘোষয়ের সহযোগিতায় তিনি পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পড়ানোর ব্যবস্থা করতে সক্ষম হন। সেই সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তিনি প্রভাষক হিসেবে তাপ গতিবিদ্যা পড়াতেন। আধুনিক পদার্থবিদ্যার বিষয়গুলি তিনি ও তার সহযোগীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেন। আপেক্ষিকতাবাদ সহ আধুনিক পদার্থবিদ্যার সদ্য আবিষ্কৃত বিষয়গুলি তারা পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে পদার্থবিজ্ঞানে বিষয়গুলির মূলত জার্মান ভাষায় প্রকাশিত হত, সেগুলিকে ইংরাজিতে অনুবাদ করতে হয়েছিল। তার ঢাকা কলেজে পড়াকালীন জার্মান ভাষা শিক্ষা এই কাজে তাকে সাহায্য করেছিল।

সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আবিষ্কারের তিন বছরের মধ্যেই তিনি ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু সেটা জার্মান থেকে অনুবাদ করেছিলেন যা ইংরেজি ভাষায় সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের সর্বপ্রথম অনুবাদ। প্রিন্সটনের আইনস্টাইন আর্কাইভে তাদের অনুবাদের একটি প্রত্যায়িত রাখা আছে।[২০]

১৯১৭ থেকে ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কোন প্রবীণ অধ্যাপকের তত্ত্বাবধান ছাড়াই তিনি লন্ডনের ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিন ও ফিজিক্যালি রিভিউ জার্নালে তার মৌলিক গবেষণা গুলি প্রকাশ করেন। বিকিরণ চাপ সম্পর্কিত গবেষণা জন্য ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।[২১] ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে অন হার্ভার্ড ক্লাসিফিকেশন অফ স্টেলার স্পেক্ট্রাম গবেষণার জন্য প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি পান এবং বিদেশে গবেষণার সুযোগ পেয়ে যান।[২২]

ইউরোপের বিভিন্ন গবেষণাগারে (১৯২০-১৯২১)

এরপর ১৯১৯ সালে তিনি প্রথম পাঁচ মাস লন্ডনে বিজ্ঞানী আলফ্রেড ফাউলারের পরীক্ষাগারে এবং পরবর্তীতে বার্লিনে ওয়াস্টার নার্নস্টের সাথে কাজ করেন।[২৩]

Thumb
১৯৯৯ সালে ফ্রান্স থেকে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের ক্রোমোস্ফিয়ার দৃশ্যমান

মেঘনাদ সাহা ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিনে তার গবেষণা লব্ধ তাপীয় আয়নায়ন তত্ত্ব বিষয়ে Ionisation of the solar chomosphere শীর্ষক গবেষণাপত্র[২৪] প্রকাশিত হলে তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করেন। তার গবেষণাটি মূলত উচ্চ তাপমাত্রায় আয়নায়ন তত্ত্ব ও নক্ষত্রের আবহমন্ডলে তার প্রয়োগ নিয়ে।[২৫]

তিনি ইউরোপ যাত্রার আগে Ionisation of the solar chromospher and on the Harvard classification of steller spectra গবেষণাপত্র দুটি প্রকাশের জন্য Philosophical Magazine এর কাছে পাঠান কিন্তু সেখানে ফাউলারের গবেষণাগারে থাকাকালীন হার্ভার্ড গ্রুপ ছাড়াও নক্ষত্রের শ্রেণিবিভাগে লাইকার ও ছাত্রদের অবদান সম্বন্ধে অবহিত হওয়ার পর তিনি আরো কিছু নতুন তথ্য দিয়ে তার দ্বিতীয় গবেষণাপত্রটি সম্প্রসারিত করেছেন। যা On the physical theory of steller sprectra শিরোনামে[২৬] লন্ডনের রয়েল সোসাইটি পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হয়।[২৭] জ্যোতির্বিজ্ঞানের তার এই কাজটি সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান বলে মনে করা হয়। এস রজল্যান্ড তার Theoretical Astrophysics গ্রন্থে তার গবেষণার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন।[২৮]

এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯২২-১৯৩৮)

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে নভেম্বর মাসে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে খয়রা অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। সেই সময় তৎকালীন আচার্য ও গভর্নরের সঙ্গে উপাচার্যের মতবিরোধ থাকায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে সহকারী পাননি। সেকারণে গবেষণার জন্য তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক নীলরতন ধরের আগ্রহে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ভালো পরিমণ্ডল না থাকা সত্ত্বেও তার চেষ্টায় তিনি একটি গবেষণা দল করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল স্ট্যাটিস্টিক্যাল মেকানিক্স, পরমাণু ও অণুর বর্ণালী, নেগেটিভ ইলেক্ট্রন অ্যাফিনিটি, অণুর উষ্ণতাজনিত বিভাজন, আয়নোস্ফিয়ারে রেডিও তরঙ্গের গতিবিধি, উচ্চতর আবহমণ্ডল ইত্যাদি। তিনি তাপীয় আয়নন তথ্য পরীক্ষার জন্য একটি যন্ত্র তৈরি করেছিলেন।[২৯]

১৯৩১ সালে ইংল্যান্ডের রয়্যাল সোসাইটি থেকে তিনি ১৫০০ পাউন্ড আর্থিক সাহায্য পান, তা দিয়ে তিনি আয়নতত্ত্বের পরীক্ষামূলক প্রমাণ করেন।

Thumb
১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে এডিংটনের এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রদর্শন করতে আসেন।

১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতীয় সাইন্স কংগ্রেসের গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান শাখার সভাপতিত্ব করেন।[২১] ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। ইতালিতে সরকারের আমন্ত্রণে ভোল্টার শতবার্ষিকী উৎসবে আমন্ত্রিত হন এবং মৌলিক পদার্থের মৌলিক পদার্থের জটিল বর্ণালির ব্যাখ্যা সম্পর্কে গবেষণাপত্রটি পাঠ করেন। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে কারনেসি ট্রাস্টের ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন। ঐসময় তিনি জার্মানি, ইংল্যান্ডআমেরিকা পরিদর্শন করেন। সেই সময় হার্ভার্ড কলেজের ল্যাবরেটরীতে এইচ শেফ্লির সাথে গবেষণা করেন।

তিনি মিউনিখে থাকাকালীন জার্মান একাডেমি সংবর্ধনা পান। আমেরিকায় লরেন্সের সাইক্লোট্রন যন্ত্র পর্যবেক্ষণ করেন। যা পরবর্তীতে ভারতবর্ষে সাইক্লোট্রন তৈরিতে সাহায্য করেছে।[৩০]

কোপেনহেগেন নিউক্লিয়ার ফিজিক্স কনফারেন্সে পরমাণু বিভাজনের মূল তত্ত্ব সম্পর্কে অবহিত হন যা পরবর্তীকালে ভারতবর্ষে নিউক্লিয়ার ফিজিক্স গবেষণাগার তৈরিতে তাকে সাহায্য করেছে। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় সাইন্স কংগ্রেস জুবিলী অধিবেশনে এরিংটন কলকাতা আসেন। তিনি মেঘনাথ সাহার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছিলেন তার মতো জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জন্য একটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের পূর্ণ গবেষণাগার থাকা উচিত। তিনি আরো বলেন তার আবিষ্কার গ্যালিলিওর দূরবীন আবিষ্কারের পর সেরা ১০টি আবিষ্কারের মধ্যে একটি।[৩১] পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে ব্যাঙ্গালোরে ভারতে এই ধরনের গবেষণাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

পুনরায় কলকাতায়

Thumb
Thumb
বাম: নিউক্লিয়ার ফিজিক্স ইনস্টিটিউটে সাইক্লোট্রনের চৌম্বকের সামনে মেঘনাদ সাহা ও বাসন্তী দুলাল নাগচৌধুরী,
ডান: নীরজনাথ দাশগুপ্ত, ভারতে প্রথম ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ তৈরি করেন।

১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে জুলাই মাসে মেঘনাথ সাহা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের পালিত অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। এলাহাবাদে থাকাকালীন তিনি আয়নোস্ফিয়ার গবেষণা করেছিলেন। কলকাতায় এসেও তিনি তা পুনরায় শুরু করেন। কিন্তু তার সহকর্মী ও ছাত্র শিশির কুমার মিত্রের পরিচালনায় রেডিওফিজিক্স ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগ গঠিত হয় এবং সেখানে আয়নোস্ফিয়ার গবেষণার পূর্ণাঙ্গ সুযোগ থাকায় তিনি আর আয়োনোস্ফিয়ার নিয়ে গবেষণা করেন নি। কারণ তিনি মনে করতেন একটি বিশ্ববিদ্যালয় পাশাপাশি দুটি একই ধরনের গবেষণা কাজ করা নিরর্থক।[৩২]

কলকাতা ফিরে আসার পর তার গবেষণার মূল বিষয় ছিল নিউক্লিয়ার ফিজিক্স। তিনি বার্কলের লরেন্সের সাইক্লোট্রন ল্যাবরটরি পরিদর্শন করার পরেই ভারতেও অনুরূপ সাইক্লোট্রন তৈরীর পরিকল্পনা করেন। এলাহাবাদে সেই সুযোগ না থাকায় তিনি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে পারেননি। কলকাতায় তিনি পুনরায় পরিকল্পনা করেন। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তার ছাত্র ও সহকর্মী বাসন্তী দুলাল নাগচৌধুরীকে পিএইচডি ডিগ্রি করার জন্য লরেন্সের কাছে পাঠান। একই সাথে উদ্দেশ্য ছিল সাইক্লোট্রন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে তার সাহায্যে সাইক্লোট্রন ল্যাবরেটরি নির্মাণ করা। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে অটো হান ও মিনারের পরমাণু বিভাজন গবেষণা সফল হলে তিনি নিউক্লিয়ার ফিজিক্স আরো বেশি আগ্রহী হন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের পাঠ্যসূচিতে নিউক্লিয়ার ফিজিক্স অন্তর্ভুক্ত করেন। টাটা ট্রাস্টের অনুদান এবং বিধানচন্দ্র রায়শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির চেষ্টায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইক্লোট্রন তৈরীর পরিকল্পনা গৃহীত হয়। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে নাগ চৌধুরী ভারতে ফিরলে সাইক্লোট্রন তৈরি প্রাথমিক উপকরণ হিসাবে শক্তিশালী চৌম্বক তামার পাত পৌঁছে যায়। কিন্তু যন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকুয়াম পাম্প গুলি যে জাহাজে আসছিল তা জাপানি টর্পেডো আঘাতে ডুবে যায়।[৩৩] সেই সময় তিনি অন্য উপায় না দেখে সিএসআইআরের (CSIR) অনুদানে ভ্যাকুয়াম পাম্প তৈরীর পরিকল্পনা নেয়। মিমি পারদ চাপের ভ্যাকুয়াম পাম্প তৈরি করলেও সাইক্লোট্রন এর উপযোগী বড় পাম্প তৈরি করা সম্ভব হয়নি।[৩৪]

Thumb
মেঘনাদ সাহা (মধ্যখানে) হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মানমন্দিরে, ১৯৩৬

১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে মেঘনাথ সাহা ভারতে বায়োফিজিক্স গবেষণার সূত্রপাত করেন। এরপর ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে নীরজনাথ দাশগুপ্ত[৩৫] তার তত্ত্বাবধানে ভারতে প্রথম ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ তৈরি করেন।[৩৬] এরপর তিনি ভারতে নিউক্লিয়ার ফিজিক্স ইনস্টিটিউট তৈরীর কাজে ব্রতী হন। ইনস্টিটিউটের মূল লক্ষ্য ছিল ভারতে পদার্থবিজ্ঞানে ট্রেনিং দেওয়া ও মৌলিক গবেষণা করা। তিনি মারা যাবার আগে পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর বিজ্ঞান বিভাগের ডিন হিসেবে দ্বায়িত্বপালন করেছেন।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজে মেঘনাদ সাহার স্মৃতির উদ্দেশ্যে স্থাপিত আবক্ষ মূর্তি

মেঘনাথ সাহা ২৪ বছর বয়সে ফিলোসফিক্যাল মাগাজিনে “On Maxwell’s Stress” শিরোনামে তার প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন।[৩৭] তিনি কমবেশি ৮০ টি মৌলিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। তিনি তার সবকটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাই ভারতের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করেছেন। এরমধ্যে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের পালিত গবেষণাগার এবং ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স অন্যতম। এছাড়া তিনি বিদেশে ফাউলার এবং নার্নস্টের গবেষণাগারে কিছুদিন গবেষণা করলেও সেখানে কোন বিজ্ঞানী সহযোগিতায় একটাও গবেষণাপত্র প্রকাশ করেননি। তার গবেষণার কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান। এই বিষয়ে তিনি আয়নন তত্ত্ব এবং নক্ষত্রের শ্রেণিবিন্যাসে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। এছাড়াও বিকিরণ তাপ, পরমাণু বিজ্ঞান, তাপগতিতত্ত্ব, বর্ণালী বিজ্ঞান এবং আয়নোস্ফিয়ার সম্পর্কিত অনেক গবেষণা করেছেন। পরবর্তীকালে তিনি পরমাণু ও নিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কিত গবেষণা করেন এবং ভারতে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করায় উৎসাহী হন। এছাড়াও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় পরমাণু বিজ্ঞান, জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা, নিউক্লিয় পদার্থবিদ্যা, আয়ন মণ্ডল, বায়ুমণ্ডল ও মহাকাশবিজ্ঞান, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা সহ নানা বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত আলোচনামূলক নিবন্ধ লিখেছেন।

সাহা সমীকরণ

ডক্টর সাহা তার তাপীয় আয়ন-তত্ত্বে আয়নীভবন সংক্রান্ত একটি সমীকরণ উপস্থাপন করেন যা সাহা আয়নীভবন সমীকরণ নামে পরিচিত। ১৯২০ সালে Philosophical Magazine–এ প্রকাশিত প্রবন্ধে সাহা এই সমীকরণ দেন। একটি একক পরমাণু দ্বারা গঠিত গ্যাসের জন্য সাহা সমীকরণটি হল:

যেখানে,

  • হল পরমাণুর ঘনত্ব, যেখানে পরমাণু থেকে i সংখ্যক ইলেকট্রন অপসারিত হয়েছে।
  • হল i-স্তরের আয়নের জন্য হ্রাসপ্রাপ্ত শক্তিস্তর
  • হল সর্বনিম্ন শক্তিস্তর i সংখ্যক ইলেকট্রন অপসারিত করে i-শক্তিস্তরে যেতে প্রয়োজনীয় শক্তি
  • হল ইলেকট্রন ঘনত্ব
  • হল ইলেকট্রনের তাপীয় দ্য ব্রয় তরঙ্গদৈর্ঘ্য (de Broglie wavelength)

রাশিমালা হল ইলেকট্রনকে অপসারিত করতে প্রয়োজনীয় শক্তি। যেক্ষেত্রে একটি স্তরের আয়নীভবন গুরুত্বপূর্ণ সেখানে আমরা পাই , এবং মোট শক্তি n কে দ্বারা প্রকাশ করা হয়। সাহা সমীকরণের সরলীকৃত রূপটি হল:

যেখানে হল আয়নীভবন শক্তি।

প্লাসকেটের কাছে তিনি চিঠিতে তার আবিষ্কৃত আয়নন তত্ত্বের আবিষ্কারের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন[৩৮],

রাজনৈতিক জীবন

সারাংশ
প্রসঙ্গ
ভারতের সক্রিয় রাজনীতিতে মেঘনাদ সাহার পদার্পণ নিয়ে তার নিজস্ব অভিমত[৩৯]

বিজ্ঞানীদের প্রায়ই অভিযোগ করা হয় হয় যে তারা রূপকথার জগতে থাকেন, তারা বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে তাদের মনকে কষ্ট দিতে চান না। আমি নিজেও আমার জীবনে বাল্যকালে একটা ঘটনা ব্যতীত ১৯৩০ সাল পর্যন্ত গজদন্ত মিনারেরই কাটিয়েছি। কিন্তু বর্তমান সমাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আইন শৃঙ্খলার মতনই অপরিহার্য হয়ে পরেছে। ফলত আমিও ধীরেধীরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছি, অবশ্য তার প্রধান কারণ আমি আমার সুচারু কাজের মাধ্যমে নিজেকে দেশমাতৃকার উন্নতি কর্মের অংশ করে নিতে চেয়েছি।

[]

মেঘনাথ সাহা শুধুমাত্র একজন সফল বিজ্ঞানীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা চিন্তাশীল সক্রিয় রাজনীতিবিদ। তিনি বরাবরই তার বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীদের কাছে জাতীয় পরিকল্পনা এবং অর্থনৈতিক উন্নতির বিষয়ে উৎসাহ দিতেন। তার রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর মতাদর্শের বৈপরীত্য ছিল। তিনি দেখেছিলেন তৎকালীন সময়ে জাতীয় পরিকল্পনা কমিটি মহাত্মা গান্ধীর ইচ্ছা অনুযায়ী খাদি শিল্পের প্রতি আগ্রহ বেশি ছিল। তারা বৃহৎ আকারে শিল্প স্থাপন করার পক্ষপাতী ছিল না এবং সেই সময় কংগ্রেস নেতারা বৃহৎ শিল্প ক্ষেত্রে বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক অধ্যক্ষতা গ্রহণ করতেই বেশি আগ্রহী ছিল। তিনি বৃহত্তর ভাবে শিল্পায়নের গুরুত্ব বুঝেছেন সেই কারণেই তিনি মহাত্মা গান্ধী চিন্তাধারার অন্ধ ভক্ত ছিলেন না এবং সেই একই কারণে রাজনৈতিকভাবে তিনি ও নেহেরুর মধ্যে দূরত্ব ছিল।[৪০]

তিনি রাজনীতির পথে না এসেও দেশের জন্য কাজ করতে পারতেন এবং বরাবরই সেই মতনই বিভিন্ন কাজকর্ম করতেন। ভারতে নদী প্রকল্প বিষয়ে তিনি দেখেছিলেন যে পরিকল্পনা কমিশনে বিষয়টি ফুল ভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং গোড়াতেই পরিকল্পনা সম্বন্ধে অস্পষ্টতা রয়েছে। তাই শুধুমাত্র সাইন্স এন্ড কালচার ম্যাগাজিনে এডিটোরিয়ালের মধ্য দিয়ে সেই সমস্ত ভ্রান্তি গুলির প্রতিবাদ ফলপ্রসূ হয়ে উঠছিলো না। তাই তিনি সংসদযিও ক্ষেত্রে এর প্রতিবাদ আবশ্যক মনে করেছিলেন। একই সাথে এর মাধ্যমে জনগণ এবং সরকারকে তাদের ভুলগুলি সম্পর্কে অবগত করার প্রয়োজনীয়তা ছিল।

Thumb
১৯৫২ সালে সাংসদ হওয়ার পর তাকে অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে, পাশে তার ছোট মেয়ে সঙ্ঘমিত্রা সাহা

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বড়দা শরৎচন্দ্র বসু তাকে সংসদে অনুগ্রহ করেন। শরৎচন্দ্র বসু এবং তার সহকর্মীরা মনে করতেন মেঘনাথ সাহা জাতীয় পরিকল্পনা বিষয়ে বহুদিন ধরে চিন্তাভাবনা করছেন এবং তার সুচিন্তিত মত ভারতের ভবিষৎ পরিকল্পনায় অগ্রণী ভূমিকা নেওয়া উচিত, এবং ভারতীয় সংসদের তার উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।[৪১]

তিনি বরাবরই মহাত্মা গান্ধীর চরকা-খাদি-হ্যান্ডলুম ইন্ডাস্ট্রির বিরোধী ছিলেন। ফলে কংগ্রেসের নমিনেশন সংসদে যাওয়া সম্ভব ছিল না যদিও তার নাম কংগ্রেস নেতারাই প্রস্তাব করেছিলেন। তাকে তার মনোভাব ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করা হলেও তিনি তার সিদ্ধান্তে অবিচল ছিলেন। তার মতে ভারতের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্লোগান অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৫২ নির্বাচনের সময় শরৎচন্দ্র বসু জীবিত ছিলেন না, তার স্ত্রী বিভাবতী বসু তাকে নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন। একজন বিজ্ঞানীর কাছে সংসদীয় সদস্য হওয়ার জন্য নির্বাচনে দাঁড়ানোর খুব একটা সহজ নয়, নির্বাচনে অর্থনৈতিক সাহায্যের থেকেও সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনা ও জনবলের প্রয়োজন হয়। তিনি ১৯৫২ সালে ভারতীয় লোকসভার নির্বাচনে কলকাতা উত্তর-পশ্চিম লোকসভা কেন্দ্র (বর্তমানে কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্র) থেকে বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দলের (RSP) কোদাল-বেলচা চিহ্নে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং জয়লাভ করেন। [৪২]

পঞ্জিকা সংস্কার

সারাংশ
প্রসঙ্গ

ভারতীয় পঞ্জিকা সংস্কারে মেঘনাদ সাহার অবদান অনস্বীকার্য।[৪৩] শকাব্দের সাথে ভারতীয় সংস্কৃতির গভীর যোগাযোগ লক্ষ্য করে মেঘনাদ সাহা ভারতের বর্ষপঞ্জি শকাব্দ ধরে করার প্রস্তাব দেন। ১৯৫২ খিস্টাব্দে ভারত সরকার ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম অবৈজ্ঞানিক পঞ্জিকা প্রচলিত থাকায় সরকারি কাজে সমস্যার মধ্যে পরে পঞ্জিকা সংস্কারে ব্রতী হয়।[৪৪] মেঘনাদ সাহাকে পঞ্জিকা সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান পদে অভিষিক্ত করে সম্পূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হয়।[৪৫] কমিটির অন্যান্য প্রতিনিধিদের মধ্যে এ সি মুখার্জি, কে কে দাফতারি, জে এস কারাডিকার, গোরক্ষ প্রসাদ, আর ভি বৈদ্য এবং এন সি লাহিড়ী অন্যতম। সারাভারতে একটিমাত্র বৈজ্ঞানিক পঞ্জিকা প্রচলন করার উদ্যেশ্য সারা ভারতে প্রচলিত প্রায় ত্রিশটি পঞ্জিকা সংগ্রহ করে তাদের সংস্কার করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলের ভাবাবেগকেও মাথায় রেখে এটি সংস্কার করা হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহেরু কমিটির রিপোর্টের মুখবদ্ধ লিখেছেন,[৪৪]

কমিটির উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হলো,[৪৪]

  • শকাব্দ ভারতের জাতীয় বর্ষপঞ্জি হিসাবে ব্যবহার করা উচিত।
  • বছর বসন্তকালীন বিষুব বা মহাবিষুবের (Vernal equinox) দিন থেকে শুরু হওয়া উচিত, যা মোটামুটি ভাবে ২১শে মার্চ।
  • অধিবর্ষ ব্যতীত বাকি বছরগুলো ৩৬৫ দিনের ও অধিবর্ষ ৩৬৬ দিনের হওয়া উচিত। শকাব্দের সাথে ৭৮ যোগ করে যদি সেটি চার দ্বারা বিভাজ্য হয় তবে তাকে অধিবর্ষ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। একই সাথে যদি ১০০ এর গুণিতক হয় তবে তাকে একই সাথে ৪০০এর গুনিতকও হলে তবেই অধিবর্ষ করার প্রস্তাব দেন।
  • চৈত্র মাসকে বছরের প্রথম মাস করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।[৪৬]
  • চৈত্র থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতিটি মাস ৩১ দিনের ও আশ্বিন থেকে ফাল্গুন মাস ৩০ দিনের করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
আরও তথ্য #, মাস ...
#মাসদৈর্ঘ্যগ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে মাসের আরম্ভকাল যে ক্রান্তীয় রাশিতে (Tropical zodiac) সূর্য অবস্থিত
চৈত্র৩০ দিন (অধিবর্ষে ৩১ দিন)২২ মার্চ (অধিবর্ষে ২১ মার্চ)মেষ
বৈশাখ৩১ দিন২১ এপ্রিলবৃষ
জ্যৈষ্ঠ৩১ দিন২২ মেমিথুন
আষাঢ়৩১ দিন২২ জুনকর্কট
শ্রাবণ৩১ দিন২৩ জুলাইসিংহ
ভাদ্র৩১ দিন২৩ আগস্টকন্যা
আশ্বিন৩০ দিন২৩ সেপ্টেম্বরতুলা
কার্তিক৩০ দিন২৩ অক্টোবরবৃশ্চিক
অগ্রহায়ণ৩০ দিন২২ নভেম্বরধনু
১০পৌষ৩০ দিন২২ ডিসেম্বরমকর
১১মাঘ৩০ দিন২১ জানুয়ারিকুম্ভ
১২ফাল্গুন৩০ দিন২০ ফেব্রুয়ারিমীন
বন্ধ

তার মৃত্যুর পর ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২২ মার্চ (১ চৈত্র ১৮৭৯ শক) ভারত সরকার এই সংস্কারপ্রাপ্ত শকাব্দকে ভারতের জাতীয় অব্দ হিসেবে গ্রহণ করে এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সর্বস্তরে গ্রেগরীয় অব্দের সাথে “ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শকাব্দের” ব্যবহার প্রচলন করে।[৪৭][৪৮][৪৯] কিন্তু সমস্ত প্রশাসনিক বিভাগে, আকাশবাণী এবং দূরদর্শনের ঘোষণায় শকাব্দের প্রচলন হলেও[৪৯] এখনও ১ চৈত্র (২১/২২ মার্চ), শকাব্দের নববর্ষের দিন জাতীয় ছুটির দিন হিসাবে স্বীকৃত হয়নি। ধর্মীয় নিরয়ণ বর্ষপঞ্জীর বহুল প্রচলনের কারণেই সম্ভবত সংস্কারকৃত শকাব্দ উপেক্ষিত রয়ে গেছে।[৫০][৫১]

সংস্কারকৃত ভারতীয় বর্ষপঞ্জি ভারত ছাড়াও উপমহাদেশের নানা দেশে ব্যবহার হয়। বিশেষত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলি (জাভা, বালি, ইন্দোনেশিয়া) অনুসরণ করে। বালি তে শকাব্দের প্রথমদিনটিকে Neypi অর্থাৎ Day of Scilence হিসাবে পালিত হয়।[৫২]

মেঘনাদ সাহা তার সংস্কারকৃত বর্ষপঞ্জী সারা পৃথিবীর বর্ষপঞ্জি হিসাবে প্রচলন করতে আগ্রহী হন। পরিকল্পনা মতো UNO এর কাছে প্রস্তাবও দেওয়া হয়। ১৯৫৪সালে জেনেভায় জুন-জুলাইয়ের অধিবেশনে আলোচ্য বিষয় হিসাবে উপস্থাপিত হয় এবং তিনি সম্পূর্ণ বিষয়টি আলোচনা সভায় উপস্থাপন করেন। ৩ জুলাই ১৯৫৪ সালে The World Calender Associationএর পক্ষ থেকে আইনস্টাইনকে চিঠি লিখে জানান, তিনি বেশিরভাগ উপস্থিত সভ্যগণকে উক্ত বিষয়ে রাজি করিয়ে দিয়েছেন, কেবলমাত্র কিছু ইহুদি ব্যক্তিবর্গ তাদের ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে সহমত পোষণ করেছেন না।[৫৩]

তিনি আরো লেখেন যে ইজরায়েলের সদস্যরা তাকে জানিয়েছেন ইজরায়েলের বাইরের কিছু ইহুদি বেঁকে বসেছে। তাই তিনি ইহুদি সংগঠনের প্রতিরোধ কতটা যুক্তিপূর্ণ তাই নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন। বিশেষত যখন বর্ষপঞ্জি সংস্কার মানব সভ্যতার হিত্যের জন্যই করা হচ্ছে। তিনি ইহুদীগনের এই হেন আচরণকে গোঁড়ামি, অসামাজিক ও ক্ষতিকারক বলেই মনে করেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন। একই সাথে তিনি হিবুরু বুকলেটও আইনস্টাইনকে পাঠান। বুকলেটটি ইসরায়েলের ড্যানিয়েল শের লিখেছেন। তিনি চিঠিতে আরো লেখেন যে যদি আইনস্টাইন মনে করেন যে উক্ত সংস্কারটি মানব সমাজের হিতের জন্যই করা তাহলে যেন একটি ছোট নোট পাঠান এবং তা জাতিপুঞ্জে সাদরে গুরুত্বের সাথে গৃহীত হবে।[৫৪]

তিনি একই সাথে ৫ পাতার আরো একটি A Note on the Origin of the Continuous Sevenday Week শীর্ষক নথি পাঠান। সেখানে ইহুদি গোঁড়ামিকে আক্রমণ করে লেখেন[৫৩]

যদিও আইনস্টাইন তার ধর্মীয় কারণে তার সাথে সহমত পোষণ করেননি।[৫৩]

অনুবাদক

Thumb
আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের প্রথম ইংরেজি অনুবাদ, এর একটি সংস্করণ আমেরিকার MIT লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে।

মেঘনাদ এবং সত্যেন বোস যুগ্মভাবে সর্বপ্রথম আলবার্ট আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব সহ তার বিভিন্ন নিবন্ধ ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশ করেন। আইনস্টাইনের ১৯০৫ থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত মোট যতগুলি নিবন্ধ জার্মান ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল তার সবগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ শুরু করেন মেঘনাদ সাহা ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু। তাদের এই অনুবাদ ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রিন্সিপাল্‌স অব রিলেটিভিটি নামে প্রকাশিত হয়। প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ অনূদিত বইটির ভূমিকা লেখেন।[৫৫] ১৯৭৯ সালে আইনস্টাইনের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে আইনস্টাইনের নিবন্ধগুলির প্রথম অনুবাদ জাপানে প্রকাশিত হয়েছিল বলা হয়। নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখরের ঐকান্তিক চেষ্টায় এই ভ্রম সংশোধিত হয় এবং মেঘনাদ সাহা ও সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অনুবাদই আইনস্টাইনের রচনার প্রথম অনুবাদ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। বর্তমানে তাদের এই অনূদিত প্রিন্সিপাল্‌স অব রিলেটিভিটির একটি প্রতিলিপি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনস্টাইন আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত তাদের এই অনূদিত গ্রন্থটিই হলো সারাবিশ্বে আইনস্টাইনের রচনার প্রথম অনুবাদ।[৫৬]

মেঘনাদ সাহার নোবেল পুরস্কার বিতর্ক

১৯৩০ সালে ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞানী দেবেন্দ্র মোহন বসু এবং শিশির কুমার মিত্র মেঘনাদ সাহাকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেন। নোবেল কমিটি মেঘনাদ সাহার কাজকে পদার্থবিজ্ঞানের একটি উল্লেখযোগ্য প্রয়োগ হিসেবে বিবেচনা করলেও এটি "আবিষ্কার" নয় বলে তিনি নোবেল পুরস্কার পাননি।[৫৭] মেঘনাদ সাহাকে ১৯৩৭ সালে এবং ১৯৪০ সালে আর্থার কম্পটন এবং ১৯৩৯, ১৯৫১ ও ১৯৫৫ সালে শিশির কুমার মিত্র আবারো মনোনীত করলেও নোবেল কমিটি তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে।[৫৮]

প্রয়াণ

১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ সময় তিনি তার কর্মস্থল ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ভবনের পরিকল্পনা কমিশনের দিকে যাচ্ছিলেন; এমন সময় পড়ে যান। হাসপাতালে নেবার পর স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে মারা যান। রিপোর্টে বলা হয়: তিনি মারা যাবার ১০ মাস আগে থেকে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন।[৫৯] তাকে পরের দিন কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশান এ দাহ করা হয়।[৬০]

রচিত গ্রন্থাবলি

  • The Principles of Relativity (সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সাথে) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, ১৯২০. (It was a translation of Einstein’s papers on theory of relativity).[৬১]
  • Treatise on Heat (বি এন শ্রীবাস্তবের সাথে), ইন্ডিয়ান প্রেস, এলাহাবাদ, ১৯৩১.[৬২]
  • Junior Text-Book on Heat (বি এন শ্রীবাস্তবের সাথে), ইন্ডিয়ান প্রেস, এলাহাবাদ, ১৯৩২.
  • Treatise on Modern Physics, প্রথম খন্ড (এন কে সাহার সাথে) ইন্ডিয়ান প্রেস, এলাহাবাদ, ১৯৩৪.[৬৩]
  • My Experience in Soviet Russia, Bookman Inc, কলকাতা, ১৯৪৭.
  • Junior Textbook of Heat with Metereology

ঘটনাবলি

  • ১৯২৭: তিনি রয়্যাল সোসাইটি এর ফেলো হন।
  • ১৯৩১: এলাহাবাদে উত্তর প্রদেশ একাডেমী অব সায়েন্স প্রতিষ্ঠা করেন, পরের বছর থেকে এ সংগঠনের নামকরণ করা হয় ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্স, ইন্ডিয়া। তিনি হন এর প্রতিষ্ঠাতাকালীন সভাপতি।
  • ১৯৩৩: সূচনা করেন ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞানীদের সংগঠন ইন্ডিয়ান ফিজিক্যাল সোসাইটি। এখান থেকে প্রকাশিত হতে থাকে ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্স সাময়িকী।
  • ১৯৩৪: ২১তম অধিবেশনে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস সংস্থা এর সভাপতি হন।
  • তার উদ্যোগে যাত্রা শুরু করে ইন্ডিয়ান ইন্সটিউট অব সায়েন্স যা ইন্ডিয়ান ইন্সটিউট অব টেকনোলজি নামে বর্তমানে পরিচিত।
  • ১৯৩৫: সাইন্স এন্ড কালচার জার্নালের সূচনা করেন।
  • ১৯৩৬: ব্রিটিশ ভারত সরকারের কার্নেগি ফাউন্ডেশনের ফেলো হিসাবে ইউরোপ এবং আমেরিকা পরিদর্শনে যান এবং নিলস বোর ইনস্টিটিউটে নিউক্লিয়ার ফিজিক্স কনফারেন্সে আমন্ত্রিত হন।
  • ১৯৩৭: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এর সভাপতি নির্বাচিত হন।
  • ১৯৩৮: কলকাকতায় ফিরে পুনরায় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালিত প্রফেসর হিসাবে যোগদান করেন।
  • ১৯৪০: তার উদ্যোগে ভারতে সর্বপ্রথম স্নাতকোত্তর স্তরে নিউক্লিয়ার ফিজিক্স কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো শুরু হলো।
  • ১৯৫০: প্রতিষ্ঠা করেন ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স যা বর্তমানে সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স নামে পরিচিত।
  • ১৯৫২: ভারতীয় লোকসভার নির্বাচনে কলকাতা উত্তর পশ্চিম লোকসভা কেন্দ্র (বর্তমানে কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্র) থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত সাংসদ হন।[৬৪]
  • ১৯৫২: মেঘনাদ সাহাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুর কথামতো ভারতীয় বর্ষপঞ্জির সংস্কার করার জন্য বর্ষপঞ্জি সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান করেন এবং তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন যা পরে ১৯৫৭ সালে ভারতের জাতীয় বর্ষপঞ্জি হিসাবে গৃহীত হয়।

তথ্যসূত্র

আরো পড়ুন

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.