ভারত
দক্ষিণ এশিয়ার সার্বভৌম দেশ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভারত (সরকারি নাম ভারতীয় প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র।[১৬] ভৌগোলিক আয়তনের বিচারে এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। অন্যদিকে, জনসংখ্যার বিচারে এটি বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল রাষ্ট্র এবং পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ভারতের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তান[১৭] উত্তর-পূর্বে চীন, নেপাল ও ভুটান এবং পূর্বে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার অবস্থিত। এছাড়া, ভারত মহাসাগরে অবস্থিত শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়া হল ভারতের নিকটবর্তী কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্র। দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর ও পূর্বে বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত ভারতের উপকূলরেখার সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ৭,৫১৭ কিলোমিটার (৪,৬৭১ মাইল)।[১৮]
), যারভারতীয় প্রজাতন্ত্র | |
---|---|
![]() ভারতের অবস্থান | |
রাজধানী | নয়াদিল্লি ২২°৪৮′ উত্তর ৮৩°০′ পূর্ব |
বৃহত্তম নগরী | মুম্বই (পৌরসভা) দিল্লি (মহানগর এলাকা) |
সরকারি ভাষা | কেন্দ্রীয় স্তরে: |
স্বীকৃত জাতীয় ভাষা | নেই |
স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা | |
ধর্ম (২০১১) | |
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | ভারতীয় |
সরকার | যুক্তরাষ্ট্রীয় সংসদীয় সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র |
দ্রৌপদী মুর্মু | |
জগদীপ ধনখড় | |
নরেন্দ্র মোদী | |
সঞ্জীব খান্না | |
• লোকসভা অধ্যক্ষ | ওম বিড়লা |
আইন-সভা | সংসদ |
• উচ্চকক্ষ | রাজ্যসভা |
লোকসভা | |
স্বাধীনতা যুক্তরাজ্য থেকে | |
• ঘোষিত | ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ |
২৬ জানুয়ারী ১৯৫০ | |
আয়তন | |
• মোট | ১২,৬৯,৩৪৬ মা২ (৩২,৮৭,৫৯০ কিমি২) (৭ম) |
• পানি (%) | ৯ |
জনসংখ্যা | |
• ২০২২ আনুমানিক | ১৩৭,৫৫,৮৬,০০০ [৮] (১ম) |
১২১,০৮,৫৪,৯৭৭ [৯][১০] (২য়) | |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০২২ আনুমানিক |
• মোট | $১১.৭৪৫ ট্রিলিয়ন[১১] (৩য়) |
• মাথাপিছু | $৮,৩৫৮[১২] (১২৮তম) |
জিডিপি (মনোনীত) | ২০২২ আনুমানিক |
• মোট | $৩.৫৩৫ ট্রিলিয়ন[১১] (৫ম) |
• মাথাপিছু | $২,৫১৫[১২] (১৪২তম) |
জিনি (২০১০) | ৩৩.৯[১৩] মাধ্যম |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০২১) | ০.৬৩৩[১৪] মধ্যম · ১৩২তম |
মুদ্রা | ভারতীয় টাকা প্রতীক: (INR) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+৫:৩০ (ভারতীয় প্রমাণ সময়) |
প্রচলিত নয় | |
তারিখ বিন্যাস |
|
গাড়ী চালনার দিক | বাম [১৫] |
কলিং কোড | +৯১ |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | IN |
ইন্টারনেট টিএলডি | .in |
সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। ঐতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতা এই অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে এখানেই স্থাপিত হয়েছিল বিশালাকার একাধিক সাম্রাজ্য। নানা ইতিহাস-প্রসিদ্ধ বাণিজ্যপথ এই অঞ্চলের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রক্ষা করত। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ—বিশ্বের এই চার ধর্মের উৎসভূমি ভারত। খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে জরথুস্ত্রীয় ধর্ম (পারসি ধর্ম), ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম এ দেশে প্রবেশ করে এবং ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চল নিজেদের শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হয়। উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই দেশ পুরোদস্তুর একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়ে ওঠে। অতঃপর, এক সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালে ভারত একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে ভারত একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।
বর্তমানে ভারত ২৮টি রাজ্য ও আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বিশিষ্ট একটি সংসদীয় সাধারণতন্ত্র। ভারতীয় অর্থব্যবস্থা বাজারি বিনিময় হারের বিচারে বিশ্বে দ্বাদশ ও ক্রয়ক্ষমতা সমতার বিচারে বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম। ১৯৯১ সালে ভারত সরকার কর্তৃক গৃহীত আর্থিক সংস্কার নীতির ফলশ্রুতিতে আজ আর্থিক বৃদ্ধিহারের বিচারে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলির মধ্যে দ্বিতীয়।[১৯]
ভারত ১৯৫০ সাল থেকে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র, এবং গণতান্ত্রিক সংসদীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে শাসিত একটি রাষ্ট্র। এটি একটি বহুত্ববাদী, বহুভাষিক এবং বহু-জাতিগত সমাজ। ভারতের জনসংখ্যা ১৯৫১ সালে ৩৬১ মিলিয়ন থেকে ২০২২ সালে প্রায় ১.৪ বিলিয়নে বেড়েছে।[২০] একই সময়ে, এর নামমাত্র মাথাপিছু আয় বার্ষিক US$৬৪ থেকে US$২,৬০১ বেড়েছে এবং এর সাক্ষরতার হার ১৬.৬% থেকে ৭৪% হয়েছে।[২১] ভারত একটি দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে এবং একটি বিস্তৃত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সাথে তথ্য প্রযুক্তি পরিষেবার একটি কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে।[২২] ভারতের বেশ কয়েকটি পরিকল্পিত বা সম্পূর্ণ বহির্জাগতিক মিশন সহ একটি মহাকাশ কর্মসূচি রয়েছে। এটি চতুর্থ দেশ যেটি চাঁদে একটি নৈপুণ্য অবতরণ করেছে এবং চন্দ্রের দক্ষিণ মেরুর লুনার পয়েন্টে ৬০০ কিলোমিটার (৩৭০ মা.) যার মধ্যে এটি করা প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।[২৩] ভারতীয় চলচ্চিত্র, সঙ্গীত এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষা বিশ্ব সংস্কৃতিতে ক্রমবর্ধমান ভূমিকা পালন করে।[২৪] ভারত তার দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে, যদিও অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধির মূল্যে।[২৫] ভারত একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র, যেটি সামরিক ব্যয়ের দিক থেকে শীর্ষস্থানীয় দেশ গুলোর মধ্যে একটি। কাশ্মীর নিয়ে তার প্রতিবেশী পাকিস্তান ও চীনের সাথে বিরোধ রয়েছে, যা বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে এখনো অমীমাংসিত।[২৬] আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে লিঙ্গ বৈষম্য, শিশুর অপুষ্টি, এবং ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণ।[২৭][২৮] চারটি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট সহ ভারতের ভূমি মেগাবৈচিত্র্যময়।[২৯] এর মোট আয়তনের ২১.৭% বনভূমি।[৩০] ভারতের বন্যপ্রাণী, যা ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের সংস্কৃতিতে সহনশীলতার সাথে দেখা হয়, এই বনের মধ্যে এবং অন্যত্র সুরক্ষিত আবাসস্থলে সমর্থিত।[৩১]
উৎপত্তি
সারাংশ
প্রসঙ্গ

ভারত (হিন্দি: भारत, প্রতিবর্ণীকৃত: ভারৎ উচ্চারিত [ˈbʱaːɾət] () নামটির উৎপত্তি চন্দ্রবংশীয় )পৌরাণিক রাজা ভরতের নামানুসারে হয়েছিল। কথিত আছে এই বর্ষ বা অঞ্চলটি রাজা ভরতকে দান করা হয়েছিল বলে এর নাম ভারতবর্ষ। ভারত শব্দটি, ভারতীয় মহাকাব্য ও ভারতের সংবিধান উভয়েই উল্লিখিত,[৩২][৩৩] অনেক ভারতীয় ভাষায় শব্দটি ভিন্নতর উচ্চারণে ব্যবহৃত হয়। এটি ঐতিহাসিক নাম ভারতবর্ষ-এর একটি আধুনিক উপস্থাপনা, যা মূলত উত্তর ভারতে প্রযোজ্য,[৩৪][৩৫] ভারত ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে ভারতের একটি স্থানীয় নাম হিসেবে বর্ধিত প্রচলন অর্জন করে।[৩২][৩৬]
অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধান (তৃতীয় সংস্করণ, ২০০৯) অনুসারে ইংরেজি "ইন্ডিয়া" (India ইন্ডিঅ্য) নামটি ধ্রুপদী লাতিন শব্দ ইন্দিআ (India) থেকে নেওয়া হয়েছে, এটি দক্ষিণ এশিয়া এবং এর পূর্ব দিকের একটি অনিশ্চিত অঞ্চলকে উল্লেখ করে। শব্দটি ধারাবাহিকভাবে হেলেনিস্টিক গ্রিক ভাষায় ইন্দিআ (Ἰνδία), প্রাচীন গ্রিক ভাষায় ইন্দোস্ (Ἰνδός), ফার্সি ভাষা ভাষায় আকিমিনীয় সাম্রাজ্যের একটি পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ হিসাবে হিন্দুশ এবং শেষ পর্যন্ত সগোত্রীয় সংস্কৃত শব্দ সিন্ধু থেকে উদ্ভূত হয়, সিন্ধু শব্দটি দ্বারা বিশেষত সিন্ধু নদ ও এর জনবসতি যুক্ত দক্ষিণ অববাহিকাকে উল্লেখ করা হয়।[৩৭][৩৮] প্রাচীন গ্রিকরা ভারতীয়দের ইন্দোই (Ἰνδοί) হিসাবে উল্লেখ করেছিল, যার বঙ্গানুবাদ হল "সিন্ধু অঞ্চলের মানুষ"।[৩৯]
"হিন্দুস্তান" (হিন্দি: हिन्दुस्तान, প্রতিবর্ণীকৃত: হিন্দুস্তান্) মুঘল সাম্রাজ্যের সময় প্রবর্তিত ভারতের একটি মধ্য ফার্সি নাম, এবং তখন থেকে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। শব্দটির অর্থ বৈচিত্র্যময়, বর্তমানের উত্তর ভারত এবং পাকিস্তান বা তার নিকটবর্তী ভারতের সমগ্র অঞ্চলকে বোঝায়।[৩২][৩৬][৪০]
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
প্রাচীন ভারত
মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভীমবেটকা প্রস্তর ক্ষেত্র ভারতে মানববসতির প্রাচীনতম নিদর্শন। এক লক্ষ বছর আগেও এখানে মানুষের বসবাস ছিল।[৪১][৪২] প্রায় ৯০০০ বছর আগে এদেশে স্থায়ী মানববসতি গড়ে উঠে; যা কালক্রমে পশ্চিম ভারতের ইতিহাস-প্রসিদ্ধ সিন্ধু সভ্যতার রূপ ধারণ করে।[৪৩] এই সভ্যতার আনুমানিক সময়কাল ৩৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এরপর ভারতে বৈদিক যুগের সূত্রপাত হয়। এই যুগেই হিন্দুধর্ম তথা প্রাচীন ভারতীয় সমাজের অন্যান্য সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলির আবির্ভাব ঘটে। বৈদিক যুগের সমাপ্তিকাল আনুমানিক ৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। আনুমানিক ৫৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয় মহাজনপদ নামে অনেকগুলি স্বাধীন রাজতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজ্য।[৪৪]

খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য প্রতিষ্ঠিত ও মহামতি অশোকের শাসিত মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীনে দক্ষিণ এশিয়ার সিংহভাগ অঞ্চল একত্রিত হয়।[৪৫]
মধ্যযুগীয় ভারত
খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকে গুপ্ত সম্রাটদের শাসনকাল প্রাচীন ভারতের সুবর্ণ যুগ নামে আখ্যাত হয়।[৪৬] এছাড়া পূর্ব ভারতে পাল এবং দাক্ষিণাত্যে চালুক্য, চোল ও বিজয়নগর প্রভৃতি সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। এই সকল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্পকলা, সাহিত্য, জ্যোতির্বিদ্যা ও দর্শন সমৃদ্ধি লাভ করে।
খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে মধ্য এশিয়া থেকে ভারতে ইসলামের অনুপ্রবেশ ঘটে। এর ফলে সমগ্র উত্তর ভারত প্রথমে সুলতানি ও পরে মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। মহামতি আকবরের রাজত্বকালে দেশে একাধারে যেমন সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচনা হয়, তেমনই প্রতিষ্ঠিত হয় হিন্দু-মুসলমানের ধর্মীয় সম্প্রীতি।[৪৭][৪৮] ক্রমে ক্রমে মুঘল সম্রাটগণ উপমহাদেশের এক বৃহৎ অংশে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপনে সক্ষম হন। যদিও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রাধান্যকারী অসমের অহোম রাজশক্তি এবং আরও কয়েকটি রাজ্য মুঘল আগ্রাসন সফলভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছিল।
প্রারম্ভিক আধুনিক ভারত
ষোড়শ শতক থেকে পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ও ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের মতো ইউরোপীয় শক্তিগুলি ভারতে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করতে শুরু করে। পরবর্তীকালে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোলযোগের সুযোগ নিয়ে তারা ভারতে উপনিবেশ স্থাপন করতেও সক্ষম হয়।
আধুনিক ভারত
১৮৫৬ সালের মধ্যেই ভারতের অধিকাংশ অঞ্চল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হস্তগত হয়েছিল।[৪৯] এর এক বছর পরেই ঘটে ভারতীয় সিপাহি ও দেশীয় রাজ্যগুলির সম্মিলিত এক জাতীয় গণ-অভ্যুত্থান। ভারতের ইতিহাসে এই ঘটনা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বা সিপাহি বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও তা দেশে কোম্পানির শাসনের দুর্বলতার দিকগুলি উন্মোচিত করে দেয়। তাই ভারতকে আনা হয় ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে।

বিংশ শতকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলি দেশজুড়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। ভারতীয় নেতা মহাত্মা গান্ধী লক্ষাধিক মানুষকে সঙ্গে নিয়ে অহিংস গণ-আইন অমান্য জাতীয় আন্দোলন শুরু করেন।[৫০] স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষলগ্নে সুভাষচন্দ্র বসু ও তার আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগ্রাম ভারতের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারত ব্রিটিশ শাসনজাল থেকে মুক্তিলাভ করে। একই সঙ্গে দেশের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের মুসলমান-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলি বিভক্ত হয়ে গঠন করে পাকিস্তান রাষ্ট্র।[৫১] ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি নতুন সংবিধান প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে ভারতে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হয়।[৫২]
স্বাধীনতার পরে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, জাতপাত, নকশাল আন্দোলন, সন্ত্রাসবাদ এবং জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভুত্থান দেশে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ১৯৯০-এর দশক থেকে ভারতের শহরাঞ্চলগুলি এই হানাহানির শিকার হতে থাকে। ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের ফলে চীনের সঙ্গে এবং ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৭১ ও ১৯৯৯ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত নিয়ে বিরোধ তীব্র হয়। ভারত রাষ্ট্রসংঘ (ব্রিটিশ ভারত হিসাবে) ও জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৭৪ সালে একটি ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক পরীক্ষণ[৫৩] ও ১৯৯৮ সালে আরও পাঁচটি পরমাণু পরীক্ষা চালিয়ে ভারত নিজেদের একটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশ করে।[৫৩] ১৯৯১ সালে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক সংস্কারের ফলে[৫৪] বর্তমানে পৃথিবীর অতিদ্রুত-বর্ধনশীল এক অর্থব্যবস্থা হিসাবে ভারত সারা বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতেও সক্ষম হয়েছে।[১৯]
ভূগোল
সারাংশ
প্রসঙ্গ

ভারতীয় উপমহাদেশের সিংহভাগ নিয়ে গঠিত ভারতীয় ভূখণ্ডটি ভারতীয় টেকটোনিক পাত ও ইন্দো-অস্ট্রেলীয় পাতের মধ্যস্থিত একটি গৌণ পাতের উপর অবস্থিত।[৫৫] এই ভূখণ্ড গঠনের প্রধান ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়াটি শুরু হয় আজ থেকে ৭৫ কোটি বছর পূর্বে, যখন দক্ষিণের অতিমহাদেশ গন্ডোয়ানার অংশ হিসাবে ভারতীয় উপমহাদেশ উত্তর-পূর্ব দিকে সরতে শুরু করে। তৎকালীন অসংগঠিত ভারত মহাসাগরব্যাপী এই সরণ স্থায়ী হয় ৫০ কোটি বছর।[৫৫] এর পরে উপমহাদেশটির সঙ্গে ইউরেশীয় পাতের সংঘর্ষ ঘটে এবং উপমহাদেশের পাতটি ইউরেশীয় পাতের তলায় অবনমিত হয়ে পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতমালা হিমালয়ের উত্থান ঘটায়। এই পর্বতমালা বর্তমানে ভারতের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক বেষ্টন করে আছে।[৫৫] উত্থানশীল হিমালয়ের দক্ষিণ পাদদেশে অবস্থিত সমুদ্রে পাতসঞ্চরণের ফলে একটি বৃহৎ খাত সৃষ্টি হয়, এবং কালক্রমে নদীর পলি জমে[৫৬] এই খাতটি গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে পরিণত হয়।[৫৭] এই সমভূমির পশ্চিমে আরাবল্লী পর্বতশ্রেণী কর্তৃক বিচ্ছিন্ন হয়ে অবস্থান করছে থর মরুভূমি।[৫৮] মূল ভারতীয় পাতটি আজ ভারতীয় উপদ্বীপ রূপে অবস্থান করছে। এটিই ভারতের প্রাচীনতম ও ভৌগোলিকভাবে সর্বাপেক্ষা দৃঢ় অংশ। উত্তরদিকে মধ্য ভারতে অবস্থিত সাতপুরা ও বিন্ধ্য পর্বতমালা পর্যন্ত এই উপদ্বীপ বিস্তৃত। এই সমান্তরাল পর্বতমালাদুটি পশ্চিমে গুজরাটের আরব সাগর উপকূল থেকে পূর্বে ঝাড়খণ্ডের কয়লা-সমৃদ্ধ ছোটনাগপুর মালভূমি পর্যন্ত ব্যাপ্ত।[৫৯] দক্ষিণে উপদ্বীপীয় ভূখণ্ডে দাক্ষিণাত্য মালভূমি বামে ও ডানে যথাক্রমে পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতমালাদ্বয় দ্বারা উপকূলীয় সমভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন।[৬০] এই মালভূমিতেই ভারতের প্রাচীনতম প্রস্তরগঠনটি পরিলক্ষিত হয়; যার কিয়দংশের বয়স ১০০ কোটি বছরেরও বেশি। এইভাবে ভারত বিষুবরেখার উত্তরে ৬°৪৪' ও ৩৫°৩০' উত্তর অক্ষাংশ[৬১] ও ৬৮°৭' ও ৯৭°২৫' পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।[৬২]

ভারতীয় উপকূলরেখার দৈর্ঘ্য ৭,৫১৭ কিলোমিটার (৪,৬৭১ মাইল)। এর মধ্যে ৫,৪২৩ কিলোমিটার (৩,৩৭০ মাইল) ভারতীয় উপদ্বীপের এবং ২,০৯৪ কিলোমিটার (১,৩০১ মাইল) আন্দামান, নিকোবর ও লাক্ষাদ্বীপের অন্তর্গত।[১৮] ভারতীয় নৌবাহিনীর হাইড্রোগ্রাফিক চার্ট অনুসারে মূল অঞ্চলের উপকূলভূমি ৪৩% বালুকাময় সৈকত, ১১% পাথুরে উপকূল ও ভৃগু (উঁচু খাড়া পাড় বা ক্লিফ), ৪৬% জলাজমিপূর্ণ উপকূল দ্বারা গঠিত।[১৮]

হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদনদীগুলির মধ্যে প্রধান গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র। উভয়েই বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।[৬৩] গঙ্গার প্রধান উপনদীগুলি হল যমুনা ও কোশী নদী। কোশী নদীতে নাব্যতা অত্যন্ত কম থাকায় প্রতি বছর ভয়াল বন্যা দেখা দেয়। উপদ্বীপের প্রধান নদীগুলি হল গোদাবরী, মহানদী, কৃষ্ণা, ও কাবেরী। এই নদীগুলির খাত অত্যন্ত নাব্য হওয়ায় বন্যা কম হয়ে থাকে। এই নদীগুলিও বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।[৬৪] অন্যদিকে নর্মদা ও তাপ্তি পতিত হয়েছে আরব সাগরে।[৬৫] ভারতীয় উপকূলভূমির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল পশ্চিম ভারতে কচ্ছের রাণ ও পূর্বভারতে সুন্দরবনের পলিগঠিত বদ্বীপ অঞ্চল, যা ভারত ও বাংলাদেশে বিস্তৃত।[৬৬] ভারতে দুটি দ্বীপপুঞ্জ দেখা যায়: ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলভাগের নিকটে প্রবালদ্বীপ লাক্ষাদ্বীপ এবং আন্দামান সাগরের আগ্নেয় দ্বীপমালা আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।[৬৭]
জলবায়ু
ভারতের বৈচিত্র্যময় ভৌগোলিক ও ভূতাত্ত্বিক উপাদানগুলি দেশের জলবায়ুকে অনেকাংশেই প্রভাবিত করে। কর্কটক্রান্তি রেখা ভারতের মাঝবরাবর প্রসারিত। কিন্তু দেশের উত্তর সীমান্ত বরাবর অবস্থিত হিমালয় পর্বতমালা মধ্য এশিয়া থেকে আগত ক্যাটাবেটিক বায়ুপ্রবাহকে প্রতিরোধ করে দেশে ক্রান্তীয় জলবায়ু বজায় রাখতে সহায়তা করে।[৬৮][৬৯] হিমালয় পর্বতমালা ও থর মরুভূমি দেশে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহকেও নিয়ন্ত্রণ করে।[৭০] থর মরুভূমি গ্রীষ্মকালীন আর্দ্র দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ুকে আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যবর্তী সময়ে আগত এই বায়ুপ্রবাহই ভারতে বর্ষার মূল কারণ।[৭০] ভারতে চারটি প্রধান ঋতু দেখা যায়: শীত (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি), গ্রীষ্ম (মার্চ থেকে মে), বর্ষা (জুন থেকে সেপ্টেম্বর), এবং শরৎ ও হেমন্ত (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর)।
ক্রান্তীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য অনুসারে বর্ষা ও অন্যান্য আবহাওয়াগত পরিস্থিতি দেশে খরা, বন্যা, সাইক্লোন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। এর ফলে প্রতি বছর দেশটির লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ও সম্পত্তি হানি হয়। বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণায়ণের ফলে ভারতের জলবায়ুতে নানাপ্রকার অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে।
জীববৈচিত্র্য
সারাংশ
প্রসঙ্গ

ইন্দোমালয় পরিবেশক্ষেত্রে অবস্থিত ভারত জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। ১৮টি মহাবৈচিত্র্যপূর্ণ রাষ্ট্রের একটি এই দেশ পৃথিবীর ৭.৬% স্তন্যপায়ী, ১২.৬% পাখি, ৬.২% সরীসৃপ, ৪.৪% উভচর, ১১.৭% মাছ ও ৬.০% সপুষ্পক উদ্ভিদের বাসস্থান।[৭১] পশ্চিমঘাট পর্বতমালার শোলা বর্ষণারণ্যের মতো ভারতের অনেক অঞ্চলেই স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রাচুর্য দেখা যায়। ৩৩% ভারতীয় বৃক্ষপ্রজাতি স্বাভাবিক উদ্ভিদশ্রেণীর অন্তর্গত।[৭২][৭৩] ভারতের প্রধান অরণ্যক্ষেত্রগুলি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ, পশ্চিমঘাট পর্বতমালা ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিষুবীয় বর্ষণারণ্য থেকে হিমালয়ের চিরহরিৎ অরণ্যক্ষেত্র পর্যন্ত বিস্তৃত। এছাড়া পূর্ব ভারতের শাল-অধ্যুষিত, মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের টিক-অধ্যুষিত ও মধ্য দাক্ষিণাত্য ও গাঙ্গেয় সমভূমির বাবুল অধ্যুষিত বনাঞ্চলও উল্লেখযোগ্য।[৭৪] গ্রামীণ ভারতে নিম গাছ ওষধি রূপে ব্যবহৃত হয়। পিপল গাছ মহেঞ্জোদাড়োর প্রতীকচিহ্নে দেখা গেছে। এই গাছের তলাতেই গৌতম বুদ্ধ সিদ্ধি বা বোধিলাভ করেছিলেন ও তার নাম হয়েছিল 'গৌতম বুদ্ধ'। তাই বু্দ্ধগয়ায় অবস্থিত ওই বৃক্ষটিকে বলা হয় 'বোধিবৃক্ষ'।

বহু ভারতীয় প্রজাতি গন্ডোয়ানায় জাত টেক্সা থেকে উদ্ভূত। উপদ্বীপীয় ভারতের ক্রমসরণ ও ইউরেশীয় ভূমিভাগের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে প্রজাতিগুলির মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেয়। যদিও অগ্ন্যুৎপাত ও অন্যান্য জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে বিগত ২ কোটি বছরে বহু দেশজ প্রজাতিই অবলুপ্ত হয়ে যায়।[৭৫] এর ঠিক পরেই দুটি প্রাণীভৌগোলিক পথে উত্থানশীল হিমালয়ের দুই পাশ দিয়ে ভারতে স্তন্যপায়ী প্রাণীরা প্রবেশ করে।[৭৪] প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারতের মোট স্তন্যপায়ী ও পাখিদের যথাক্রমে মাত্র ১২.৬% ও ৪.৫% দেশজ; যেখানে দেশের সরীসৃপ ও উভচরদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৪৫.৮% ও ৫৫.৮%।[৭১] উল্লেখযোগ্য দেশীয় প্রাণী হল নীলগিরি লেঙ্গুর, পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বাদামি ও গাঢ় লাল রঙের বেডোমি ব্যাঙ। ভারত ১৭২টি (২.৯%) প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন-গণিত লুপ্তপ্রায় প্রাণীর আবাসস্থল।[৭৬] এর মধ্যে রয়েছে এশীয় সিংহ, বাংলা বাঘ, ভারতীয় শ্বেতপৃষ্ঠ শকুন (বর্তমানে প্রায় বিলুপ্ত)।
বিগত দশকগুলিতে মানুষের অরণ্য আগ্রাসন বন্যপ্রাণী অবলুপ্তির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ১৯৩৫ সালে চালু হওয়া জাতীয় উদ্যান ও সংরক্ষিত স্থানের ব্যবস্থাটিকে ব্যাপ্ত করা হয়। ১৯৭২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন[৭৭] ও বাঘ সংরক্ষণের জন্য ব্যাঘ্র প্রকল্প চালু হয়। এর সঙ্গে ১৯৮০ সালে প্রবর্তিত হয় অরণ্য সংরক্ষণ আইন[৭৮] ভারতে অভয়ারণ্যের সংখ্যা পাঁচশোর অধিক। সঙ্গে দেশে ১৩টি জৈবক্ষেত্র সংরক্ষণও করা হয়।[৭৯] এর মধ্যে চারটি বিশ্ব জৈবক্ষেত্র সংরক্ষণ নেটওয়ার্কের অন্তর্গত। রামসর কনভেনশন অনুসারে ভারতে পঁচিশটি জলাভূমি আছে; যার একটি কলকাতা মহানগরীর পূর্বভাগে অবস্থিত।[৮০]
রাজনীতি ও সরকার
সারাংশ
প্রসঙ্গ
রাজনীতি


ভারতীয় প্রজাতন্ত্র বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।[৮১][৮২] স্বাধীনোত্তর কালে অধিকাংশ সময় জুড়েই এদেশের শাসনকর্তৃত্ব ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের আওতাধীন।[৮৩] অন্যদিকে ভারতের রাজ্য-রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করেছে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (সংক্ষেপে "কংগ্রেস"), ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) (সিপিআই(এম)) প্রভৃতি জাতীয় দল ও একাধিক আঞ্চলিক পার্টি। দুটি সংক্ষিপ্ত পর্যায় বাদে ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল অবধি জাতীয় কংগ্রেস সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মর্যাদা ভোগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ঘোষিত জরুরি অবস্থা-জনিত গণঅসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করে জনতা পার্টি সরকার গঠন করে। ১৯৮৯ সালে জনতা দলের নেতৃত্বে জাতীয় ফ্রন্ট বামফ্রন্টের সহযোগিতায় নির্বাচনে জয়লাভ করে দু-বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে।[৮৪] ১৯৯১ সালে কোনও পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ না করতে পারায় কংগ্রেস পি ভি নরসিমা রাওয়ের প্রধানমন্ত্রিত্বে একটি সংখ্যালঘু সরকার গঠন করে। এই সরকার অবশ্য পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সক্ষম হয়।[৮৫]
১৯৯৬-১৯৯৮ সালটি কেন্দ্রীয় সরকারের অস্থিরতার যুগ। এই সময় একাধিক স্বল্পকালীন জোট কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সালে সংক্ষিপ্ত সময়কালের জন্য বিজেপি সরকার গঠন করে। তারপর কংগ্রেস ও বিজেপি-বিরোধী যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৮ সালে বিজেপির নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) ক্ষমতা দখল করে। এই সরকারই ভারতের প্রথম পূর্ণ সময়কালের অকংগ্রেসি সরকার।[৮৬] ২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট (ইউপিএ) লোকসভায় বিপুল সংখ্যক আসনে জয়লাভ করেছিল এবং বিজেপি-বিরোধী বাম সাংসদদের সহায়তায় সরকার গঠন করেছিল। ইউপিএ ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় এসেছিল। তবে বামদলগুলি আর এই জোটের সমর্থক নয়।[৮৭]
২০১৪-এ বিজেপি-র নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) পুনরায় কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় এসেছে এবং এর ফলে নরেন্দ্র মোদী ভারতের চতুর্দশ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন।[৮৮] ২০১৯ সালে মোদী দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন।[৮৯]
সরকার

১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রবর্তিত ভারতীয় সংবিধান বিশ্বের বৃহত্তম ও সর্বাধিক বিস্তারিত ব্যাখ্যাসমৃদ্ধ সংবিধান।[৯০] সংবিধানের প্রস্তাবনা অংশে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র রূপে বর্ণিত হয়েছে।[৯১] ভারতে প্রচলিত দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ওয়েস্টমিনিস্টার-ধাঁচের একটি সংসদ ব্যবস্থা। এদেশের সরকার প্রথাগতভাবে ‘আধা-যুক্তরাষ্ট্রীয়’ সরকার ব্যবস্থা হিসাবে বর্ণিত হয়; যার বৈশিষ্ট্য হল একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল একাধিক রাজ্য সরকারের সহাবস্থান।[৯২] যদিও ১৯৯০-এর দশকের শেষভাগ থেকে রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক সংস্কার ও পরিবর্তনের ফলে রাজ্য সরকারগুলির ক্ষমতার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি দেশকে চালিত করছে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার দিকে।[৯৩]
রাষ্ট্রপতি হলেন ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান।[৯৪] তিনি পরোক্ষভাবে একটি নির্বাচক মণ্ডলী কর্তৃক পাঁচ বছরের সময়কালের ব্যবধানে[৯৫][৯৬] নির্বাচিত হন।[৯৭] অন্যদিকে ভারতের সরকার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। অধিকাংশ শাসনক্ষমতা ন্যস্ত থাকে তার হাতেই।[৯৪] রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত[৯৮] প্রধানমন্ত্রীকে প্রথাগতভাবে সংসদের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ট আসনপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দল বা জোটের সমর্থন লাভ করতে হয়[৯৪]। রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রী পরিষদ (যার কার্যনির্বাহী সমিতি হল ক্যাবিনেট)—এই নিয়ে গঠিত ভারতের শাসনবিভাগ। দপ্তরযুক্ত মন্ত্রীদের সকলকেই সংসদের কোনও না কোনও কক্ষের সদস্য হতে হয়। ভারতীয় সংসদীয় ব্যবস্থায় শাসনবিভাগ আইনবিভাগের অধস্তন। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রী পরিষদকে সংসদের নিম্নকক্ষের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয়।[৯৯]

ভারতের আইনবিভাগ হল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ। এটি গঠিত হয়েছে রাজ্যসভা নামক একটি উচ্চকক্ষ ও লোকসভা নামক একটি নিম্নকক্ষ নিয়ে।[১০০] রাজ্যসভার সদস্যসংখ্যা ২৪৫; এঁদের দপ্তরকাল ছয় বছর।[১০১] এঁদের অধিকাংশই রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির বিধানসভা থেকে রাজ্যের জনসংখ্যার ভিত্তিতে পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হয়ে আসেন।[১০১] অন্যদিকে লোকসভার ৫৪৫ জন সদস্যের মধ্যে ৫৪৩ জন পাঁচ বছরের মেয়াদে নিজ নিজ নির্বাচন কেন্দ্র থেকে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন।[১০১] এছাড়া রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে সংসদে ইঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায় এর যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি নেই, তবে তিনি দুই জন সদস্যকে উক্ত সম্প্রদায় থেকে সাংসদ মনোনীত করতে পারেন।[১০১]
ভারতে এককেন্দ্রিক ত্রি-স্তর বিচারব্যবস্থা প্রচলিত। এই বিচারব্যবস্থা প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সর্বোচ্চ আদালত, ২১টি উচ্চ আদালত ও অসংখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতের সমন্বয়ে গঠিত।[১০২] মৌলিক অধিকার, কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বিবাদ ও উচ্চ আদালতের আপিল বিচার এক্তিয়ার সংক্রান্ত মামলাগুলির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের মূল বিচার এক্তিয়ারের অন্তর্গত।[১০৩] এই বিচারব্যবস্থা স্বতন্ত্র[১০২] এবং আইন ঘোষণা এবং সংবিধান-বিরোধী কেন্দ্রীয় বা রাজ্য আইন প্রতিহত করার ক্ষমতাযুক্ত।[১০৪] সংবিধানের অভিভাবকত্ব ও ব্যাখ্যাদান সুপ্রিম কোর্টের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার অন্তর্গত।[১০৫]
রাজনৈতিক বিভাগ
ভারত ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলবিশিষ্ট একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সাধারণতন্ত্র। ভারতে প্রত্যেক রাজ্যে নির্বাচিত রাজ্য সরকার অধিষ্ঠিত রয়েছে; পুদুচেরি ও দিল্লি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেও নির্বাচিত সরকার রয়েছে। অপর পাঁচটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রাষ্ট্রপতির প্রত্যক্ষ শাসনাধীন; এই অঞ্চলগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার উপরাজ্যপাল বা প্রশাসক নিয়োগ করে থাকেন। ১৯৫৬ সালে রাজ্য পুনর্গঠন আইন বলে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্যগুলি স্থাপিত হয়।[১০৬] তারপর থেকে এই কাঠামোটি মোটামুটি অপরিবর্তিত রয়েছে। গ্রাসরুট স্তরে শাসন ও প্রশাসন পরিচালনার লক্ষ্যে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি মোট ৭৩৯টি জেলায় বিভক্ত।[১০৭] জেলাগুলি আবার তহশিল, তালুক বা মহকুমায় বিভক্ত, যা আবার পৌরসভা ও পঞ্চায়েতে বিভক্ত।

১. অন্ধ্রপ্রদেশ | ১৯. বিহার |
২. অরুণাচল প্রদেশ | ২০. মণিপুর |
৩. আসাম | ২১. মধ্যপ্রদেশ |
৪. উত্তরপ্রদেশ | ২২. মহারাষ্ট্র |
৫. উত্তরাখণ্ড | ২৩. মিজোরাম |
৬. ওড়িশা | ২৪. মেঘালয় |
৭. কর্ণাটক | ২৫. রাজস্থান |
৮. কেরল | ২৬. সিকিম |
৯. গোয়া | ২৭. হরিয়ানা |
১০. গুজরাত | ২৮. হিমাচল প্রদেশ |
১১. ছত্তিশগড় | ক. আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ |
১২. ঝাড়খণ্ড | খ. চণ্ডীগড় |
১৩. তামিলনাড়ু | গ. জম্মু ও কাশ্মীর |
১৪. তেলেঙ্গানা | ঘ. দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ |
১৫. ত্রিপুরা | ঙ. দিল্লি জাতীয় রাজধানী রাজ্যক্ষেত্র |
১৬. নাগাল্যান্ড | চ. পুদুচেরি |
১৭. পশ্চিমবঙ্গ | ছ. লাক্ষাদ্বীপ |
১৮. পাঞ্জাব | জ. লাদাখ |
বৈদেশিক সম্পর্ক ও সামরিক বাহিনী
সারাংশ
প্রসঙ্গ
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আন্তরিক। ১৯৫০-এর দশকে ভারত আফ্রিকা ও এশিয়ার ইউরোপীয় উপনিবেশগুলির স্বাধীনতার স্বপক্ষে সওয়াল করে।[১০৮] শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণ ও মালদ্বীপে অপারেশন ক্যাকটাস—এই দুই ক্ষেত্রে ভারত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সামরিক মধ্যস্থতায় অংশ নেয়। কমনওয়েলথের এক সদস্য ভারত, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।[১০৯] ভারত-চীন যুদ্ধ ও ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আন্তরিক হয়ে ওঠে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়। ঠান্ডা যুদ্ধের সমাপ্তি পর্যন্ত সেই সম্পর্ক একই রকম থাকে। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের তিনটি যুদ্ধ হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় মিত্র বাহিনী বাংলাদেশকে সহায়তা করে।[১১০] এছাড়াও ১৯৮৪ সালে সিয়াচেন হিমবাহ ও ১৯৯৯ সালে কার্গিলকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

বর্তমানকালে, ভারত যে সকল প্রতিষ্ঠানে নিজ প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছে সেগুলি হল অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান),[১১১] সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওন্যাল কো-অপারেশন (সার্ক) ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)।[১১২] ভারত চারটি মহাদেশে রাষ্ট্রসংঘের ৩৫টি শান্তিরক্ষা অভিযানে প্রায় ৫৫,০০০ সেনা ও পুলিশ প্রেরণ করেছে।[১১৩] ব্যাপক সমালোচনা ও সামরিক অনুমোদন সত্ত্বেও পরমাণু কর্মসূচির উপর সার্বভৌমত্ব রক্ষার খাতিরে ভারত সর্বব্যাপী পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি (সিটিবিটি) ও পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ চুক্তি (এনপিটি)-তে সই করতে উপর্যুপরি অস্বীকার করছে। ভারত সরকারের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলির সঙ্গেও ভারত সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে।

স্থলসেনা, বায়ুসেনা ও নৌসেনা নিয়ে গঠিত ভারতের সামরিক বাহিনী বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক বাহিনী।[৫২] এই সামরিক বাহিনীর সমান্তরালে কাজ করে থাকে একাধিক সহকারী বাহিনী; যথা: আধাসামরিক বাহিনী, উপকূলরক্ষী বাহিনী ও স্ট্রাটেজিক ফোর্সেস কম্যান্ড। রাষ্ট্রপতি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক। রাশিয়া, ফ্রান্স ও ইসরায়েল ভারতের প্রধান অস্ত্রসরবরাহকারী রাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা সহকারী দেশ। প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গ্যানাইজেশন বা ডিআরডিও) ব্যালিস্টিক মিসাইল, যুদ্ধবিমান, যুদ্ধট্যাঙ্ক সহ দেশজ অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনের কাজ তত্ত্ববধান করে, যাতে সামরিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে ভারতকে অধিক মাত্রায় বিদেশি আমদানির উপর নির্ভর করতে না হয়। ১৯৭৪ সালে স্মাইলিং বুদ্ধ ও ১৯৯৮ সালে পোখরান-২ নামে মোট ছয়টি প্রাথমিক পরমাণু পরীক্ষণের মাধ্যমে ভারত পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। যদিও ভারতের ঘোষিত পরমাণু নীতি হল “প্রথম প্রয়োগ নয়”।[১১৫] ১০ অক্টোবর, ২০০৮ তারিখে ভারত-মার্কিন বেসামরিক পরমাণু চুক্তি সাক্ষরিত হয়। তার পূর্বেই আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা ও পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী ভারতের উপর থেকে পরমাণু প্রযুক্তি ক্রয়বিক্রয়ের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ফলে ভারত কার্যত পরিণত হয় বিশ্বের ষষ্ঠ পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে।[১১৬]
অর্থনীতি
সারাংশ
প্রসঙ্গ

১৯৫০-এর দশক থেকে ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত ভারত সমাজতান্ত্রিক-ধাঁচের অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করে চলে। স্বাধীনতা-উত্তর যুগের অধিকাংশ সময় জুড়ে ভারতে যে আধা-যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল, তাতে বেসরকারি উদ্যোগ, বৈদেশিক বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ওপর কঠোর সরকারি বিধিনিষেধ আরোপিত থাকত। ১৯৯১ সালে অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে ভারত তার বাজার উন্মুক্ত করে দেয়। বিদেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উপর সরকারি কর্তৃত্ব শিথিল করা হয়।[৫৪] এর ধনাত্মক প্রভাবে মার্চ ১৯৯১ সালে ৫.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় ৪ জুলাই, ২০০৮ তারিখে বেড়ে দাঁড়ায় ৩০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।[১১৭] ঘাটতি কমে আসে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য বাজেটগুলিতে।[১১৮] যদিও সরকারি মালিকানাধীন সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণ এবং কোনও কোনও সরকারি খাত বেসরকারি ও বৈদেশিক অংশীদারদের নিকট মুক্ত করে দেওয়ায় রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়।[১১৯][১২০]
ভারতের মোট স্থুল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি $১.২৪৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার[১২] যা ক্রয়ক্ষমতা সমতার (পিপিপি) পরিমাপে $৪.৭২৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতূল্য। জিডিপি'র মানদণ্ডে ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। চলতি মূল্যে ভারতের মাথাপিছু আয় $৯৭৭ মার্কিন ডলার (বিশ্বে ১২৮তম) যা ক্রয়ক্ষমতা সমতা (পিপিপি) ভিত্তিক পরিমাপে $২,৭০০ মার্কিন ডলারের সমতূল্য (বিশ্বে ১১৮তম)। বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে কৃষি প্রধান দেশ হিসাবে পরিচিত ভারতের বর্তমান জিডিপিতে পরিষেবা খাতের অবদান ৫৪ শতাংশ; ইতোমধ্যে কৃষিখাতের অবদান হ্রাস পেয়ে ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে এবং শিল্পখাতের অবদান মাত্র ১৮ শতাংশ। বিগত দুই দশকে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি ভারতের গড় বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৫.৭ শতাংশ।[১২১]

৫১ কোটি ৬৩ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমশক্তির দেশ। এই শক্তির ৬০ শতাংশ নিয়োজিত কৃষিখাতে ও কৃষিসংক্রান্ত শিল্পগুলিতে, ২৮ শতাংশ পরিষেবা ও পরিষেবা-সংক্রান্ত শিল্পে এবং ১২ শতাংশ নিযুক্ত শিল্পখাতে।[৫২] প্রধান কৃষিজ ফসলগুলি হল ধান, গম, তৈলবীজ, তুলা, পাট, চা, আখ ও আলু। প্রধান শিল্পগুলি হল অটোমোবাইল, সিমেন্ট, রাসায়নিক, বৈদ্যুতিন ভোগ্যপণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, যন্ত্রশিল্প, খনি, পেট্রোলিয়াম, ভেষজ, ইস্পাত, পরিবহন উপকরণ ও বস্ত্রশিল্প। ভারতের প্রাকৃতিক সম্পদগুলি হল আবাদি জমি, বক্সাইট, ক্রোমাইট, কয়লা, হীরক, আকরিক লোহা, চুনাপাথর, ম্যাঙ্গানিজ, অভ্র, প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল ও টাইটানিয়াম আকরিক।[৮৩] ভারতের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শক্তির চাহিদাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতে, ভারত খনিজ তেলজাত পণ্যের ষষ্ঠ বৃহত্তম ও কয়লার তৃতীয় বৃহত্তম ভোক্তা।[১২২]
বিগত দুই দশকের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ভারত বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দারিদ্র্যপীড়িত রাষ্ট্র। শিশু-অপুষ্টির হারও বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় ভারতে সর্বাধিক: ২০০৭ সালের হিসেব অনুযায়ী ৪৬ শতাংশ)।[১২৩][১২৪][হালনাগাদ প্রয়োজন] তবে বিশ্বব্যাঙ্ক নির্ধারিত দৈনিক ১.২৫ মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখার (২০০৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, ক্রয়ক্ষমতা সমতা নামমাত্র হিসেবে নগরাঞ্চলে দৈনিক ২১.৬ টাকা ও গ্রামাঞ্চলে দৈনিক ১৪.৩ টাকা) নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ১৯৮১ সালে ৬০ শতাংশ থেকে ২০০৫ সালে ৪২ শতাংশে নেমে এসেছে।[১২৫] সাম্প্রতিক দশকগুলিতে ভারত মন্বন্তর প্রতিরোধ করতে পারলেও, দেশের অর্ধেক শিশু ওজন ঘাটতিতে ভুগছে। এই হার সারা বিশ্বের নিরিখে কেবল উচ্চই নয়, এমনকী সাব-সাহারান আফ্রিকার হারের প্রায় দ্বিগুণ।[১২৬][হালনাগাদ প্রয়োজন]
সাম্প্রতিককালে, ভারতের বহুসংখ্যক শিক্ষিত ইংরেজি-পটু প্রশিক্ষিত পেশাদারগণ বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা, মেডিক্যাল পর্যটন ও বিজ্ঞাপনের কাজে নিযুক্ত হয়েছেন।[১২৭] বর্তমানে ভারত সফটওয়্যার ও অর্থসংক্রান্ত, গবেষণাসংক্রান্ত ও প্রকৌশলগত পরিষেবার এক বৃহৎ রপ্তানিকারক।
২০০৭ সালে রফতানি ও আমদানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে $১৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ও $২১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।[১২৮] বস্ত্র, রত্ন, ইঞ্জিনিয়ারিং দ্রব্যাদি ও সফটওয়্যার ভারতের প্রধান রপ্তানি পণ্য। প্রধান প্রধান আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত তেল, যন্ত্রপাতি, সার ও রাসায়নিক দ্রব্য। ভারতের প্রধানতম বাণিজ্য সহযোগী হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সদরদপ্তর দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী নামে খ্যাত মুম্বই মহানগরীতে অবস্থিত।
জনপরিসংখ্যান
সারাংশ
প্রসঙ্গ
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল রাষ্ট্র। ২০১৮ সালে দেশটির আনুমানিক জনসংখ্যা প্রায় ১৩৫ কোটি। ভারতের জনসংখ্যা পৃথিবীর মোট জন সংখ্যার প্রায় ১৭.৭৪ শতাংশ। সাম্প্রতিক কালে বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রতি হাজার জনে ১১.১০ জন বা ১.১১ শতাংশ। গড়ে প্রতি দুই সেকেন্ডে জনসংখ্যা একজন করে বাড়ে। যদিও সাম্প্রতিক দশকগুলিতে গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসনের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতে শহরাঞ্চলীয় জনসংখ্যা বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে, তথাপি প্রায় ৬৬.৮০ শতাংশ ভারতবাসী গ্রামাঞ্চলে বাস করেন। জনসংখ্যার ৩৩.২০ শতাংশ শহরে বসবাস করে। এ দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনবসতি ৪৫৫ জন।[১২৯] ভারতের বৃহত্তম মহানগরগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মুম্বই (পূর্বনাম বম্বে বা বোম্বাই), নয়াদিল্লি, বেঙ্গালুরু (পূর্বনাম ব্যাঙ্গালোর), কলকাতা, হায়দ্রাবাদ ও আহমেদাবাদ।[৮৩]
২০১৩-১৫ কালপর্বে জাতীয় পর্যায়ে লিঙ্গানুপাত প্রতি হাজার পুরুষের বিপরীতে ৯০০ জন নারী।[১৩০] ২০১১-এর জনমিতি অনুযায়ী ভারতে সাক্ষরতার হার ৭৪.০৪ শতাংশ, যা পুরুষদের মধ্যে ৮২.১৪ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ৬৫.৪৬ শতাংশ। সাক্ষরতার সর্বনিম্ন হার বিহার রাজ্যে: ৬৩.৮২ শতাংশ।[১৩১] শহর-গ্রাম স্বাক্ষরতার পার্থক্য ২০০১ সালে ছিল ২১.২ শতাংশ, যা ২০১১ সালে নেমে আসে ১৬.১ শতাংশে। গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে স্বাক্ষরতা বৃদ্ধির হার শহর এলাকার তুলনায় দ্বিগুণ।[১৩২] সাক্ষরতার হার সর্বাধিক কেরল রাজ্যে (৯১%)।[১৩৩]
ভাষা
ভারতের দুটি প্রধান ভাষাগোষ্ঠী হল ইন্দো-আর্য (মোট জনসংখ্যার ৭৪%) ও দ্রাবিড় (মোট জনসংখ্যার ২৪%)। অপরাপর ভাষাগোষ্ঠীগুলি হল অস্ট্রো-এশিয়াটিক ও তিব্বতি-বর্মী ভাষাগোষ্ঠী। ভারতের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীয় ভাষা হিন্দি[১৩৪] যা কি-না কেন্দ্রীয় সরকারের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে নির্ধারিত।[১৩৫] "সহকারী সরকারি ভাষা" ইংরেজি প্রশাসন ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত।[১৩৬] উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও ইংরেজির প্রাধান্য প্রশ্নাতীত। ভারতের সংবিধান বাংলা-সহ ২২টি ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। এগুলি হয় প্রচলিত, নয় ধ্রুপদি ভাষা। প্রাচীনকাল থেকেই ভারতে ধ্রুপদি ভাষার মর্যাদা পেয়ে আসা তামিল ও সংস্কৃত[১৩৭] এবং কন্নড় ও তেলুগু ভাষাকে ভারত সরকার নিজস্ব একটি যোগ্যতাসূচকবলে ধ্রুপদি ভাষার মর্যাদা দান করেছে।[১৩৮] ভারতে উপ-ভাষার সংখ্যা ১,৬৫২টি।[১৩৯]
ধর্ম
ভারতের ধর্মীয় বিশ্বাস
- হিন্দু 79.8 (৭৯.৮%)
- ইসলাম 14.2 (১৪.২%)
- খ্রিস্টান 2.3 (২.৩০%)
- জৈন 0.4 (০.৪০%)
- বৌদ্ধ 0.7 (০.৭০%)
- শিখ 1.7 (১.৭০%)
- অন্যান্য 0.9 (০.৯০%)
১১০ কোটিরও বেশি (৭৯.৮%) ভারতবাসী হিন্দু, যদিও হিন্দু বলতে সিন্ধু নদের অববাহিকায় বসবাসরত সকলকেই বোঝায়। অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়গুলোর মধ্যে রয়েছে মুসলমান (১৪.২%), খ্রিস্টান (২.৩%), শিখ (১.৭%), বৌদ্ধ (০.৭%), জৈন (০.৪%), বাকি (০.৯%) ইহুদি, পারসি ও বাহাই, আদিবাসী ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষ। [১৪০][১৪১] উল্লেখ্য, ভারতে বিশ্বের বৃহত্তম হিন্দু, শিখ, জৈন, জরাথ্রুষ্টবাদী ও বাহাই ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা রয়েছে এবং ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা সমগ্র বিশ্বের নিরিখে তৃতীয়-বৃহত্তম এবং অ-মুসলমান প্রধান দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তম। দেশে আদিবাসী জনসংখ্যা ৮.১%, যার মধ্যে ৯৮% আদিবাসীরা হিন্দুধর্ম পালন করে থাকে।[১৪২][১৪৩][১৪৪]
সংস্কৃতি
সারাংশ
প্রসঙ্গ

আফ্রিকা মহাদেশের পরেই ভারত সংস্কৃতি, ভাষা ও জাতিগতভাবে বিশ্বে সর্বাধিক বৈচিত্র্যপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল।[৮৩] "সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের[১৪৬] মধ্যে ঐক্য"[১৪৭] ভারতীয় সংস্কৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই সংস্কৃতি স্বকীয় ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি বৈদেশিক আক্রমণকারী ও বহিরাগত জাতিগুলির থেকে গ্রহণ করা রীতিনীতির সমন্বয়, সংস্কৃতি ,ঐতিহ্য ও ধারণা অঙ্গীভূত হয়ে এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের সংস্কৃতির ওপর নিজের প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে।
স্থাপত্য
ভারতীয় স্থাপত্য এমন একটি বিষয় যার মধ্যে ভারতীয় সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্যময় রূপটি ধরা পড়ে। তাজমহল ও অন্যান্য মুঘল স্থাপত্য নিদর্শন তথা দ্রাবিড় স্থাপত্য নিদর্শনগুলির মধ্যে ভারত ও বহির্ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাচীন ও স্থানীয় ঐতিহ্যের সম্মিলন লক্ষ করা যায়। ভারতের স্থানীয় স্থাপত্যশৈলিগুলিও দেশের এক-একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক স্থাপত্য-বৈচিত্র্যের সাক্ষী।
পরিবেশন শিল্পকলা
ভারতীয় সঙ্গীতের জগৎটি গঠিত হয়েছে ধ্রুপদি ও আঞ্চলিক সঙ্গীত ধারার সংমিশ্রণে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত দুটি ধারায় বিভক্ত – উত্তর ভারতের হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকী সঙ্গীত। এই দুই প্রধান সঙ্গীত ধারা থেকে আবার উৎসারিত হয়েছে অনেক উপধারা। আঞ্চলিক জনপ্রিয় সঙ্গীতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্রসঙ্গীত, হিন্দি ফিল্মি গান ও ইন্ডি-পপ এবং বাউল ও অন্যান্য বিভিন্ন প্রকার লোকসঙ্গীত।
ভারতীয় নৃত্যকলাও "লোক" ও "ধ্রুপদী" — এই দুই প্রধান ভাগে বিভক্ত। ভারতের বিখ্যাত লোকনৃত্যগুলি হল পাঞ্জাবের ভাংড়া, আসাম বিহু নৃত্য, পশ্চিমবঙ্গের ছৌ নাচ এবং রাজস্থানের ঘুমার। ভারতের সঙ্গীত নাটক অকাদেমি দেশের আটটি নৃত্যকলাকে ধ্রুপদি ভারতীয় নৃত্য আখ্যা দিয়েছে। এগুলি হল তামিলনাড়ুর ভরতনাট্যম, উত্তর প্রদেশের কত্থক, কেরলের কথাকলি ও মোহিনীআট্টম, অন্ধ্রপ্রদেশের কুচিপুড়ি, মণিপুরের মণিপুরি, ওড়িশার ওড়িশি এবং আসামের সত্রিয় নাচ।[১৪৮] এই নৃত্যশৈলিগুলি বর্ণনাত্মক ও পৌরাণিক ঘটনাকেন্দ্রিক।
সাহিত্য
ভারতের জাতীয় প্রতীকসমূহ[১৪৯] | |
---|---|
পতাকা | তিরঙ্গা |
প্রতীক | অশোক স্তম্ভ |
সংগীত | জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে |
স্তোত্র | বন্দে মাতরম্ |
পশু | বাংলার বাঘ |
ঐতিহ্যবাহী পশু | ভারতীয় হাতি |
পাখি | ভারতীয় ময়ূর |
জলচর প্রাণী | গাঙ্গেয় ডলফিন |
ফুল | পদ্ম |
গাছ | বট |
ফল | আম |
খেলা | অঘোষিত[১৫০] |
সন | শকাব্দ |
নদী | গঙ্গা[১৫১] |

ভারতীয় নাটকের বৈশিষ্ট্য হল সঙ্গীত, নৃত্য ও তাৎক্ষণিক বা লিখিত সংলাপের যুগলবন্দি।[১৫৫] এর বিষয়বস্তু কখনও পুরাণ থেকে, কখনো মধ্যযুগীয় প্রেমকাহিনিগুলি থেকে, কখনো আবার একালের সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাবলি থেকে গৃহীত। ভারতের লোকনাট্যের মধ্যে গুজরাটের ভাবাই, পশ্চিমবঙ্গের যাত্রা, উত্তর ভারতের নৌটঙ্কি ও রামলীলা, মহারাষ্ট্রের তামাশা, অন্ধ্রপ্রদেশের বুরাকথা, তামিলনাড়ুর তেরুককুত্তু ও কর্ণাটকের যক্ষগান উল্লেখযোগ্য।[১৫৬]
ভারতের প্রাচীনতম সাহিত্য প্রথমে মৌখিকভাবে ও পরে লিখিত আকারে প্রচলিত হয়।[১৫৭] এই রচনাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেদ, ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারত, নাটক অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ ইত্যাদি সংস্কৃত সাহিত্যের ধ্রুপদী কীর্তিসমূহ[১৫৮] এবং তামিলে রচিত সঙ্গম সাহিত্য।[১৫৯] আধুনিক কালের ভারতীয় সাহিত্যিকদের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য হলেন ১৯১৩ সালে দেশের প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এছাড়াও ইংরেজি ভাষায় সাহিত্যরচনার জন্য ভারতীয় অথবা ভারতীয় বংশোদ্ভুত যেসকল লেখকগণ সারা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছেন তারা হলেন অমিতাভ ঘোষ, সালমান রুসদি, মার্কিন-প্রবাসী বাঙালি সাহিত্যিক ঝুম্পা লাহিড়ী, নোবেলজয়ী ব্রিটিশ-ভারতীয় সাহিত্যিক ভি এস নাইপল প্রমুখ।
চলচ্চিত্র
ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প সমগ্র বিশ্বের বৃহত্তম চলচ্চিত্র শিল্প।[১৬০] বাণিজ্যিক হিন্দি সিনেমা প্রস্তুতকারক বলিউড বিশ্বের সর্বাপেক্ষা সৃষ্টিশীল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি।[১৬১] এছাড়াও বাংলা, কন্নড়, মালয়ালম, মারাঠি, তামিল ও তেলুগু ভাষায় ঐতিহ্যবাহী চলচ্চিত্র শিল্পের আছে।[১৬২] ভারতের প্রথম সারির চলচ্চিত্র শিল্প কেন্দ্রগুলি হল বলিউড (হিন্দি),[১৬৩] টলিউড (বাংলা[১৬৪] ও তেলুগু[১৬৫]), কলিউড (তামিল),[১৬৬][১৬৭][১৬৮] মলিউড (মালয়ালম),[১৬৯] স্যান্ডেলউড বা চন্দনবন (কন্নড়),[১৭০] ও ভোজিউড (ভোজপুরি)।[১৭১]
রন্ধনশৈলী
ভারতীয় রন্ধনশৈলীর বিশেষত্ব হল বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ আঞ্চলিক রন্ধনপ্রণালী এবং ভেষজ ও মশলার অভিজাত প্রয়োগ। দেশের প্রধান খাদ্য ভাত (পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে) ও রুটি (মূলত উত্তর ভারতে)।[১৭২]
পোশাক
ভারতে পোশাকের ঐতিহ্য রং, ধরন ও জলবায়ুর মতো বিভিন্ন কারণে অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন। থানকাপড়ের পোশাক হিসাবে মহিলাদের ক্ষেত্রে শাড়ি ও পুরুষদের ক্ষেত্রে ধুতি বা লুঙ্গি বিশেষ জনপ্রিয়। এছাড়া সেলাই-করা পোশাকের মধ্যে মহিলাদের সালোয়ার-কামিজ ও পুরুষদের কুর্তা-পাজামা বা ইউরোপীয়-ধাঁচে ট্রাউজার্স ও শার্ট বিশেষভাবে প্রচলিত।
উৎসব
ভারতে উৎসব প্রকৃতিগতভাবে ধর্মীয়। যদিও অনেক ধর্ম ও জাতি নিরপেক্ষ উৎসবও পালিত হয়ে থাকে। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব এবং পূজা-পার্বণ গুলোর মধ্যে দীপাবলি, গণেশ চতুর্থী, হোলি, ওণম্, দুর্গাপূজা, রথযাত্রা, কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, মকরসংক্রান্তি, শিবরাত্রি, রামনবমী; মুসলমান সম্প্রদায়ের ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা; খ্রিষ্টানদের বড়দিন, বুদ্ধজয়ন্তী, বৈশাখী প্রভৃতি কয়েকটি জনপ্রিয় উৎসব।[১৭৩] ভারতে তিনটি জাতীয় উৎসব পালিত হয়; এগুলি হল স্বাধীনতা দিবস, সাধারণতন্ত্র দিবস ও গান্ধী জয়ন্তী। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক উৎসবও যথেষ্ট উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়। ধর্মাচরণও দৈনন্দিন ও গণজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে গণ্য হয়।
সমাজ-ব্যবস্থা
ভারতে সনাতন পারিবারিক মূল্য বিশেষ সম্মানের অধিকারী। একাধিক প্রজন্মের মিলনক্ষেত্র পিতৃতান্ত্রিক যৌথ পরিবারগুলিই ভারতীয় পরিবারতন্ত্রের আদর্শ বলে বিবেচিত হয়। যদিও আজকাল নগরাঞ্চলগুলিতে ছোটো ছোটো নিউক্লিয়ার পরিবারের উদ্ভব ঘটতে দেখা যায়।[১৭৪] ভারতে বিবাহ আয়োজিত হয় পাত্র ও পাত্রীর পিতামাতা ও অন্যান্য গুরুজনস্থানীয় আত্মীয়বর্গের সম্মতিক্রমে। আয়োজিত বিবাহ ভারতে এক অতিমাত্রায় লক্ষিত বিবাহরীতি।[১৭৫] বিবাহবন্ধন সারাজীবনের বন্ধন বলে বিবেচিত হয়।[১৭৫] তাই এদেশে বিবাহবিচ্ছেদের হারও অত্যন্ত কম।[১৭৬] ভারতে বাল্যবিবাহ প্রথা আজও প্রচলিত যদিও বাল্যবিবাহের হার ক্রমহাসমান। ইউনিসেফের স্যাম্পেল সার্ভে এবং ভারতের জনগণনা অনুযায়ী ২০০৬-এ যেখানে ৪৭% নারীর বিবাহ হত ১৮ বছর বয়সের আগে, ২০১৬ সালে সেই স্ংখ্যা ২৭%।[১৭৭][১৭৮]
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে অতি প্রাচীন কাল থেকেই ভারত তার নিজস্ব স্বাক্ষর রেখে এসেছে। খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকে ভারতীয় ধাতুবিদগণ দিল্লির লৌহস্তম্ভটি নির্মাণ করেন। বেদাঙ্গ জ্যোতিষ গ্রন্থে সেযুগের মহাকাশ পর্যবেক্ষণের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিকতাবাদ প্রস্তাবনার ১০০০ বছর আগেই ভারতীয় গণিতবিদ তথা জ্যোতির্বিদ আর্যভট্ট প্রাচীন বিশ্বধারণার ভ্রান্ততা প্রমাণ করেছিলেন। প্রাচীন বিশ্বে একমাত্র ভারতেই গড়ে উঠেছিল হীরের খনি। ভারতীয় গণিতজ্ঞ শ্রীনিবাস রামানুজন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতবিদদের অন্যতম বলে বিবেচিত হন। ১৯২৮ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন ভারতীয় পদার্থবিদ চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন।

স্বাধীনোত্তর ভারতকে একটি দরিদ্র রাষ্ট্র বলে বিবেচনা করা হলেও, স্বাধীনতা অর্জনের পাঁচ দশকের মধ্যেই এই দেশ প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষিণ এশিয়ার এক মহাশক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সাক্ষরতার হার ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নগরকেন্দ্রের উদ্ভব ভারতের এই প্রযুক্তিগত উত্থানের কারণ। ১৯৭৫ সালে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ আর্যভট্টের উৎক্ষেপণ, তার পূর্ববর্তী বছরে স্মাইলিং বুদ্ধ নামে এক ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক পরীক্ষণ, দূরসংযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পারমাণবিক চুল্লি ও হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা পরিচালিত ভাভা পরমাণু অনুসন্ধান কেন্দ্রের মতো গবেষণা কেন্দ্রের বিকাশ ভারতের উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক সাফল্য বলে বিবেচিত হয়।[১৭৯] লো-আর্থ, মেরু ও জিওস্টেশনারি কক্ষপথে উপগ্রহ উৎক্ষেপণের এক দেশীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে ভারত। এএসএলভি, পিএসএলভি, জিএসএলভি ও সর্বোপরি ভারতীয় জাতীয় উপগ্রহ ব্যবস্থা কৃত্রিম উপগ্রহ সিরিজগুলি ভারতের সফল মহাকাশ-কর্মসূচির স্বাক্ষর। ২০০৮ সালে চাঁদের মাটিতে অবতীর্ণ হয় প্রথম ভারতীয় মহাকাশযান চন্দ্রযান-১। চন্দ্রযান-১-এর পাঠানো তথ্য থেকে নাসার তত্ত্বাবধানে ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে মুন মিনারেলজি ম্যাপার যন্ত্রে বিস্ময়করভাবে প্রভূত পরিমাণ হাইড্রক্সিল আয়ন এবং বরফের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে।[১৮০] দেশীয় বিমানশক্তির ক্ষেত্রে বৈকল্পিক শক্তি হিসেবে অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার ও এলসিএ তেজস-এর নাম করা যায়। লারসেন অ্যান্ড টাব্রো, ডিএফএল-এর মতো কোম্পানিগুলির সাহায্যে আবাসন ও পরিকাঠামো শিল্পেও ভারত আজ উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রসর।
২০০৩ সালে সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অফ অ্যাডভান্সড কম্পিউটিং তৈরি করে ভারতের প্রথম সুপারকম্পিউটার পরম পদ্ম। এটি পৃথিবীর দ্রুততম সুপারকম্পিউটারগুলির অন্যতম।[১৮১] ১৯৯০-এর দশকে অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং তথ্য প্রযুক্তি বিপ্লব তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় এক অগ্রণী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে বিশ্বের মঞ্চে উপস্থাপিত করে। বর্তমানে আইবিএম, মাইক্রোসফট, সিসকো সিস্টেমস, ইনফোসিস, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস, উইপ্রো ও অন্যান্য নেতৃস্থানীয় ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলি ভারতের বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, চেন্নাই প্রভৃতি শহরে তাদের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেছে।
খেলাধুলা


ভারতের সুনির্দিষ্ট জাতীয় খেলা নেই। আনেকে একে কাবাডি কিংবা ফিল্ড হকি মনে করেন। কিন্তু বিষয়টি সুস্পষ্ট নয়।
কাবাডি বিশ্বকাপে ভারত জয়ের হ্যাটট্রিকও করেছে।
ইন্ডিয়ান হকি ফেডারেশনের উপর এদেশের হকি পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত। ভারতীয় হকি দল ১৯৭৫ সালের পুরুষদের হকি বিশ্বকাপ এবং পুরুষদের অলিম্পিক গেমসে পাঁচবার স্বর্ণপদক বিজয়ী। ফুটবল খেলা ভারতে জনপ্রিয়। ২০১৮-তে কলকাতার বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রথম অনূর্ধ্ব ১৭ যুব বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলায় ইংল্যান্ড বিজয়ী হয়। আয়োজক দেশ হিসেবে ভারত খেলতে পেয়েও উল্লেখযোগ্য ফল পায়নি। ভারতের ফুটবল প্রতিযোগিতাগুলো হল: জাতীয় ফুটবল সন্তোষ ট্রফি, নেহেরু কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা, ফেডারেশন কাপ, নেহেরু কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা, ডুরান্ড কাপ এবং ইন্ডিয়ান সুপার লিগ। ভারতে ফুটবল খেলা পরিচালনা করে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)। যদিও ভারতে সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলা হল ক্রিকেট। ভারত জাতীয় ক্রিকেট দল ১৯৮৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ, ২০০৭ সালের আইসিসি বিশ্ব টোয়েন্টি-২০ এবং ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ বিজয়ী। এছাড়াও ২০০৩ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ও ২০১৪ সালে আইসিসি বিশ্ব টোয়েন্টি-২০ তে ফাইনালে পরাজিত হয়। ভারতে ক্রিকেট পরিচালিত হয় ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (বিসিসিআই) কর্তৃক। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রঞ্জি ট্রফি, দিলীপ ট্রফি, দেওধর ট্রফি, ইরানি কাপ ও চ্যালেঞ্জার সিরিজ। ভারতের জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা দেশে প্রভূত জনপ্রিয়তা ও নানাবিধ বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী।
ভারতীয় দলের ডেভিস কাপ বিজয়ের পর থেকে ভারতে টেনিসের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে ফুটবল পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর-পূর্ব ভারত, গোয়া ও কেরলে বেশ জনপ্রিয়।[১৮২] ভারত জাতীয় ফুটবল দল বহুবার সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন কাপ জিতেছে। ভারত ১৯৫১ ও ১৯৮২ সালে এশিয়ান গেমস আয়োজন করেছিল। এছাড়াও ভারত ছিল ১৯৮৭ ও ১৯৯৬ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক দেশ ছিল; ভারত ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক দেশ। দাবা খেলার উদ্ভবও হয়েছিল ভারতে। দেশে গ্রান্ডমাস্টার দাবাড়ুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আজ দাবা ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় একটি খেলা।[১৮৩] এছাড়াও দেশের অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় খেলা হল কাবাডি, খো খো, ও গুলি ডান্ডা ইত্যাদি। ভারতে প্রাচীন যোগব্যয়াম এবং বিভিন্ন ভারতীয় মার্শাল আর্ট, কালারিপ্পায়াত্তু, বার্মা কলাই ইত্যাদি আজও জনপ্রিয়। ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক ক্রীড়া পুরস্কার হল রাজীব গান্ধী খেলরত্ন ও অর্জুন পুরস্কার (খেলোয়াড়দের জন্য) এব দ্রোণাচার্য পুরস্কার (কোচিং-এর জন্য)।
আরও দেখুন
টীকা
- দেবনাগরী লিপিতে লিখিত হিন্দি কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষা এবং ইংরেজি ভাষা হল "সহকারী সরকারি ভাষা"'"`UNIQ--ref-00000008-QINU`"''"`UNIQ--ref-00000009-QINU`"''"`UNIQ--ref-0000000A-QINU`"' রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সরকারি ভাসা হিসাবে হিন্দি বা ইংরেজি ব্যতীত অন্য কোনো ভাষা গ্রহণ করতে পারে।
গ্রন্থপঞ্জি
- ইতিহাস
- Brown, Judith M. (১৯৯৪)। Modern India: The Origins of an Asian Democracy। অক্সফোর্ড and New York: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। xiii, 474। আইএসবিএন 0198731132। ৩ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০০৮।
- Kulke, Hermann (২০০৪)। A History of India। 4th edition। Routledge। xii, 448। আইএসবিএন 0415329205। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - Metcalf, Barbara (২০০৬)। A Concise History of Modern India (Cambridge Concise Histories)। কেমব্রিজ and New York: কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। xxxiii, 372। আইএসবিএন 0521682258। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - Spear, Percival (১৯৯০)। A History of India। 2। New Delhi and London: Penguin Books। পৃষ্ঠা 298। আইএসবিএন 0140138366।
- Stein, Burton (২০০১)। A History of India। New Delhi and অক্সফোর্ড: Oxford University Press। xiv, 432। আইএসবিএন 0195654463।
- Thapar, Romila (১৯৯০)। A History of India। 1। New Delhi and London: Penguin Books। পৃষ্ঠা 384। আইএসবিএন 0140138358।
- Wolpert, Stanley (২০০৩)। A New History of India। Oxford and New York: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 544। আইএসবিএন 0195166787।
- রাজনীতি ও সমাজ
- Amrita Basu, Atul Kohli: Community Conflicts and the State in India. Oxford University Press, 2000, আইএসবিএন ০-১৯-৫৬৫২১৪-২
- Paul R. Brass: The Politics of India Since Independence. Cambridge University Press, 1994, আইএসবিএন ০-৫২১-৪৫৯৭০-২
- Paul R. Brass: The Production of Hindu-Muslim Violence in Contemporary India. University of Washington Press, 2003, আইএসবিএন ০-২৯৫-৯৮৫০৬-২
- John Keay: India: A History. HarperCollins, London 2000, আইএসবিএন ০-০০৬-৩৮৭৮৪-৫
- Subrata K. Mitra, V. B. Singh: Democracy and Social Change in India. Sage, 1999, আইএসবিএন ০-৭৬১৯-৯৩৪৪-৪
- Peter Seele: Brains and Gold. Global Transformation Processes and Institutional Change in South Asia. Academia Verlag, 2007, আইএসবিএন ৯৭৮-৩-৮৯৬৬৫-৩৯৩-২
- Ramesh Chandra Thakur: The Government and Politics of India. MacMillan, 1995, আইএসবিএন ০-৩১২-১২৭১৯-৭
- Voll, Klaus; Beierlein, Dooren: Rising India – Europe´s partner? Berlin, 2006, Weißensee Verlag, আইএসবিএন ৯৭৮-৩-৮৯৯৯৮-০৯৮-১
- ভূগোল
- Dikshit, K.R. (২০০৭)। "India: The Land"। Encyclopædia Britannica। পৃষ্ঠা 1–29। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৯-২৯। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - Government of India (২০০৭)। India Yearbook 2007। Publications Division, Ministry of Information & Broadcasting। আইএসবিএন 81-230-1423-6।
- Heitzman, J. (১৯৯৬)। India: A Country Study। Library of Congress (Area Handbook Series)। আইএসবিএন 0-8444-0833-6। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - Posey, C.A (১৯৯৪)। The Living Earth Book of Wind and Weather। Reader's Digest Association। আইএসবিএন 0-8957-7625-1।
- উদ্ভিদ ও প্রাণী
- Ali, Salim; Ripley, S. Dillon (১৯৯৫), A Pictorial Guide to the Birds of the Indian Subcontinent, Mumbai: Bombay Natural History Society and Oxford University Press. Pp. 183, 106 colour plates by John Henry Dick, আইএসবিএন 0-19-563732-1
- Blatter, E.; Millard, Walter S. (১৯৯৭), Some Beautiful Indian Trees, Mumbai: Bombay Natural History Society and Oxford University Press. Pp. xvii, 165, 30 colour plates, আইএসবিএন 0-19-562162-X
- Israel, Samuel; Sinclair (editors), Toby (২০০১), Indian Wildlife, Discovery Channel and APA Publications., আইএসবিএন 9812345558
- Prater, S. H. (১৯৭১), The book of Indian Animals, Mumbai: Bombay Natural History Society and Oxford University Press. Pp. xxiii, 324, 28 colour plates by Paul Barruel., আইএসবিএন 0-19-562169-7.
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) - Rangarajan, Mahesh (editor) (১৯৯৯), Oxford Anthology of Indian Wildlife: Volume 1, Hunting and Shooting, New Delhi: Oxford University Press. Pp. xi, 439, আইএসবিএন 0-19-564592-8
- Rangarajan, Mahesh (editor) (১৯৯৯), Oxford Anthology of Indian Wildlife: Volume 2, Watching and Conserving, New Delhi: Oxford University Press. Pp. xi, 303, আইএসবিএন 0-19-564593-6
- Tritsch, Mark F. (২০০১), Wildlife of India, London: Harper Collins Publishers. Pp. 192, আইএসবিএন 0-00-711062-6
- সংস্কৃতি
- Dissanayake, Wimal K.; Gokulsing, Moti (২০০৪), Indian Popular Cinema: A Narrative of Cultural Change, Trentham Books, Pp. 161, আইএসবিএন 1-85856-329-1 .
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) - Johnson, W. J. (translator and editor) (১৯৯৮), The Sauptikaparvan of the Mahabharata: The Massacre at Night, Oxford and New York: Oxford University Press (Oxford World's Classics). Pp. 192, আইএসবিএন 0-19-282361-8.
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য), ৫ নভেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০০৮ - Kalidasa; Johnson (editor), W. J. (২০০১), The Recognition of Śakuntalā: A Play in Seven Acts, Oxford and New York: Oxford University Press (Oxford World's Classics). Pp. 192, আইএসবিএন 0-19-283911-4.
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য), ১ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০০৮ - Karanth, K. Shivarama (১৯৯৭), Yakṣagāna, (Forward by H. Y. Sharada Prasad). Abhinav Publications. Pp. 252, আইএসবিএন 8170173574.
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) - Kiple, Kenneth F.; Ornelas, Kriemhild Coneè, সম্পাদকগণ (২০০০), The Cambridge World History of Food, Cambridge: Cambridge University Press, আইএসবিএন 0-521-40216-6
- Lal, Ananda (১৯৯৮), Oxford Companion to Indian Theatre, Oxford and New York: Oxford University Press. Pp. 600, আইএসবিএন 0-19-564446-8
- MacDonell, Arthur Anthony (২০০৪), A History of Sanskrit Literature, Kessinger Publishing, আইএসবিএন 1-4179-0619-7 .
- Majumdar, Boria; Bandyopadhyay, Kausik (২০০৬), A Social History Of Indian Football: Striving To Score, Routledge, আইএসবিএন 0-415-34835-8
- Massey, Reginald (২০০৬), India's Dances, Abhinav Publications, আইএসবিএন 8170174341
- Ramanujan, A. K. (১৯৮৫), Poems of Love and War: From the Eight Anthologies and the Ten Long Poems of Classical Tamil, New York: Columbia University Press. Pp. 329, আইএসবিএন 0-231-05107-7
- Rajadhyaksha, Ashish; Willemen (editors), Paul (১৯৯৯), Encyclopedia of Indian Cinema, 2nd revised edition, University of California Press and British Film Institute, Pp. 652, আইএসবিএন 0-85170-669-6 .
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য), ২০০৭-০৮-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-০২ - Vilanilam, John V. (২০০৫), Mass Communication in India: A Sociological Perspective, Sage Publications, আইএসবিএন 0-7619-3372-7
- Yves Thoraval: The Cinemas of India (1896–2000). MacMillan, 2000, আইএসবিএন ০-৩৩৩-৯৩৪১০-৫
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.