Remove ads
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সংসদীয় ব্যবস্থা বা সংসদীয় গণতন্ত্র হল একটি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা যেখানে একজন সরকার প্রধান (যিনি রাষ্ট্রের প্রধানও হতে পারেন বা নাও হতে পারেন) আইনসভার সমর্থনে গণতান্ত্রিক বৈধতা অর্জন করেন। একটি আইনসভার (সাধারণত একটি সংসদ) কাছে সরকার দায়বদ্ধ থাকে।[১]
|
একটি সংসদীয় ব্যবস্থায়, রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধান সাধারণত দুটি পৃথক অবস্থানে থাকেন, যেখানে রাষ্ট্রপ্রধান একজন আনুষ্ঠানিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে কাজ করেন (যদি সাংবিধানিকভাবে কোনো ক্ষমতা তার কাছে থাকে), তবে প্রকৃত রাজনৈতিক ক্ষমতার পুরোটাই সরকার প্রধানের হাতে ন্যস্ত থাকে।[২] এটি একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থার বিপরীত। রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থায় একজন রাষ্ট্রপতি সাধারণত রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধান উভয়ই হন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, তিনি আইনসভা থেকে নিয়োগগ্রাপ্ত হন না।
সংসদীয় ব্যবস্থা অনুসরণকারী দেশগুলি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রও হতে পারে, যেখানে একজন রাজা রাষ্ট্রের প্রধান হন এবং সরকার প্রধান সংসদের সদস্য হন। অথবা এটি একটি সংসদীয় প্রজাতন্ত্রও হতে পারে, যেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান হন যখন সরকার প্রধান আইনসভা থেকে নির্বাচিত হন।[৩] কয়েকটি সংসদীয় প্রজাতন্ত্রে, সরকারপ্রধানরাও রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে থাকেন, তবে সংসদের দ্বারা নির্বাচিত হন এবং সংসদকে জবাবদিহি করেন। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদে, সাধারণত, উচ্চকক্ষের সদস্য হন।
সংসদীয়তা হল ইউরোপে সরকারের প্রভাবশালী রূপ, যেখানে ৫০টি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে ৩২টি সংসদীয় গণতন্ত্রের অনুসারী।[৪] ক্যারিবিয় দীপপুঞ্জে ১৩টি দ্বীপ রাষ্ট্রের মধ্যে ১০টির সংসদীয় ব্যবস্থায় পরিচালিত। বিশ্বের অন্যান্ন অঞ্চলে, সংসদীয় ব্যবস্থায় পরিচালিত সরকারের সংখ্যা কম। যদিও এই ব্যবস্থাটি বিশ্বের সমস্ত মহাদেশে বিস্তৃত, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রাক্তন উপনিবেশগুলিতে এ ব্যবস্থার উপস্থিতি রয়েছে, যেগুলি ওয়েস্টমিনিস্টার ব্যবস্থা নামে পরিচিত সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি বিশেষ ব্যবস্থার অনুসরণ করে।[৫]
প্রাচীনকাল থেকে, সমাজের যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কিছু দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি থাকত যাদের সিদ্ধান্তগুলি গ্রামের প্রবীণরা মূল্যায়ন করত। এই ধারাটি ধীরে ধীরে আধুনিক সংসদীয় ব্যবস্থায় বিকশিত হয়।
মধ্যযুগীয় সময় থেকে ইউরোপে সংসদের উপস্তিতি ছিল: বিশেষত ১১৮৮ সালে লিওনের রাজা চতুর্থ আলফনসো লিওনের কর্টেসে বর্তমানের সংসদের অধিবেশনের অনুরূপভাবে তিনটি রাজ্যের সমাবেশ করেছিলেন।[৬][৭] কাতালোনিয়ার কর্টস ছিল ইউরোপের প্রথম সংসদ যা আনুষ্ঠানিক প্রথা বাদ দিয়ে আইন পাস করার ক্ষমতা লাভ করে।[৮] ওলন্দাজ বিদ্রোহের (১৫৮১) সময় আজকের নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামে সংসদীয় সরকারের একটি প্রাথমিক রূপ বিকশিত হয়েছিল।[ ] ১৭০৭ এবং ১৮০০ সালের মধ্যে গ্রেট ব্রিটেন রাজ্যে সংসদীয় সরকারের আধুনিক ধারণা এবং তার সমসাময়িক, ১৭২১ থেকে ১৭৭২ সালের মধ্যে সুইডেনে সংসদীয় ব্যবস্থার আবির্ভাব ঘটে।
ইংল্যান্ডে, সাইমন ডি মন্টফোর্টকে দুটি বিখ্যাত সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী সরকারের জনক হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।[৯][১০][১১] প্রথমটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১২৫৮ সালে, রাজার সীমাহীন কর্তৃত্ব রহিত করে এবং দ্বিতীয়টি, ১২৬৫ সালে, শহরের সাধারণ নাগরিকদের শাসনব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করে। পরবর্তীতে, ১৭ শতকে, ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট উদার গণতন্ত্রের কিছু ধারণা ও ব্যবস্থার অনুসরণ করেছিল যা গৌরবময় বিপ্লবে পরিণত হয়েছিল এবং এ সম্পর্কিত বিল অফ রাইটস ১৬৮৯ পাস হয়েছিল।[১২][১৩]
গ্রেট ব্রিটেনের রাজ্যে, রাজা, তত্ত্বগতভাবে, মন্ত্রীসভার সভাপতিত্ব করতেন এবং মন্ত্রীদের বেছে নিতেন। বাস্তবে, রাজা প্রথম জর্জ ইংরেজিতে কথা বলতে না পারার কারণে মন্ত্রিসভার সভাপতিত্বের দায়িত্ব নেতৃস্থানীয় মন্ত্রী, আক্ষরিক অর্থে প্রধানমন্ত্রী বা প্রথম মন্ত্রী রবার্ট ওয়ালপোলের কাছে চলে যায়। ভোটাধিকারের ধারণা বিস্তৃত হওয়ার সাথে সাথে সংসদকে ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক সরকারকে নিয়ন্ত্রণে এবং রাজা কাকে সরকার গঠনের জন্য বলতে পারেন তা নির্ধারণে সংসদের ভূমিকা বৃদ্ধি পায়। ১৯ শতকের মধ্যে, ১৮৩২ সালের গ্রেট রিফর্ম অ্যাক্ট শাসনব্যবস্থাকে সংসদীয় আধিপত্যের দিকে নিয়ে যায়।[১৪][১৫]
অন্যান্য দেশগুলি ধীরে[১৬] এ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যাকে ওয়েস্টমিনস্টার সরকার ব্যবস্থা বলা হয়।[১৭] এই ধরনের ব্যবস্থা বিশেষভাবে প্রাচীন ব্রিটিশ উপনিবেশে প্রচলিত হয়ে ওঠে, যার মধ্যে অনেক অঞ্চলের সংবিধান ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দ্বারা প্রণীত হয়েছিল; যেমন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, আইরিশ ফ্রি স্টেট এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ইউনিয়ন।[১৮][১৯][২০] এই সংসদগুলির মধ্যে কিছু পরবর্তীতে সংস্কার করা হয়েছিল, বা প্রাথমিকভাবে তাদের মূল ব্রিটিশ মডেল থেকে স্বতন্ত্র হিসাবে বিকশিত হয়েছিল। এই দেশগুলির মধ্যে অনেকগুলি যেমন ত্রিনিদাদ এবং টোবাগো এবং বার্বাডোস তাদের নিজস্ব আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রজাতন্ত্র হয়ে গ্রেট ব্রিটেনের সাথে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, কিন্তু ওয়েস্টমিনস্টার সরকার ব্যবস্থা বজায় রেখেছে। সংসদীয় দায়বদ্ধতা এবং দায়িত্বশীল সরকারের ধারণা এই ব্যবস্থাগুলির সাথে ছড়িয়ে পড়ে।[২১]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরের বছরগুলিতে ইউরোপে গণতন্ত্র এবং সংসদীয়তা ক্রমবর্ধমানভাবে প্রচলিত হয়ে ওঠে। ঊনবিংশ শতাব্দীর নগরায়ন, শিল্প বিপ্লব এবং আধুনিকতাবাদের ফলে সংস্কারপন্থীদের সংসদীয় ব্যবস্থার দাবি এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের উদীয়মান আন্দোলনকে উপেক্ষা করা ক্রমশ অসম্ভব করে তুলে। যাইহোক, ১৯৩০-এর দশকে ফ্যাসিবাদের উত্থান ইতালি এবং জার্মানিতে সংসদীয় গণতন্ত্রের অবসান ঘটায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরাজিত ফ্যাসিবাদী অক্ষশক্তি বিজয়ী মিত্রদের দখলে চলে যায়। গণতন্ত্রপন্থি মিত্রশক্তির (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স) দ্বারা দখলকৃত দেশগুলিতে সংসদীয় সংবিধান কার্যকর করা হয়েছিল, যার ফলস্বরূপ ইতালি এবং পশ্চিম জার্মানির (বর্তমানে সম্পূর্ণ জার্মানি) সংসদীয় সংবিধান এবং জাপানে ১৯৪৭ সালে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল।
একটি সংসদীয় ব্যবস্থায় দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট বা এককক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় আসন থাকে। একটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদে, সাধারণত নির্বাহী ক্ষমতাধারী সরকার নির্ধারণের ক্ষমতা সরাসরি নির্বাচিত নিম্নকক্ষের হাতে থাকে এবং সাধারণত নিম্নকক্ষের সদস্যরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় উচ্চকক্ষ সদস্যদের নিয়োগ বা নির্বাচিত করে।
গণতন্ত্র বিশ্লেষকরা সংসদীয় গণতন্ত্রকে দুই ভাগে ভাগ করেন: প্রথমটি ওয়েস্টমিনস্টার ব্যবস্থা এবং দ্বিতীয়টি ঐক্যমত ব্যবস্থা।[২২]
সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে কীভাবে নিয়োগ করা হয় এবং সরকারের জন্য সংসদের সুস্পষ্ট অনুমোদনের প্রয়োজন কিনা, সে অনুযায়ী দেশভেদে ভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে। ভারতের মতো কিছু দেশেও প্রধানমন্ত্রীকে আইনসভার সদস্য হতে হবে, যদিও অনেক দেশে এটি বাধ্যতামূলক নয়।
তদুপরি, সংসদ ভেঙে দেওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রে সরকারের জন্য কী কী শর্ত বিদ্যমান (যদি থাকে) সে সম্পর্কে ভিন্নতা রয়েছে:
সংসদীয় ব্যবস্থা রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থার বিপরীত। এই ধরনের ব্যবস্থায়, সংসদ বা কংগ্রেস সরকার প্রধানদের নির্বাচন বা বরখাস্ত করতে পারে না এবং সরকার সংসদ দ্রুত বিলুপ্তির অনুরোধ করতে পারে না।
সংসদীয়তা আঞ্চলিক এবং স্থানীয় সরকারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।
ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মতো কয়েকটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশের আইনে নির্বাচনের পরে ফ্লোর ক্রসিং বা দল পরিবর্তন নিষিদ্ধ। এই আইনের অধীনে, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ভোটে তাদের দলের বিপক্ষে গেলে সংসদে তাদের আসন হারাবেন।[৩০][৩১][৩২]
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে একজন সদস্য ভিন্ন দলে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন। কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায়, বিধায়কদের পক্ষ পরিবর্তন করার উপর কোন বাধা নেই।[৩৩]
যুক্তরাজ্য ও নিউজিল্যান্ডের মতো কয়েকটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে তাদের সংসদের আইন প্রণয়ন ক্ষমতার একটি বিধান রয়েছে,[৩৪][৩৫] সেখানে নতুন অনুমোদিত আইন সমস্ত পূর্ববর্তী আইনের উপর অগ্রাধিকার পায়। সমস্ত আইন সমানভাবে অপ্রতিরোধ্য এবং বিচার বিভাগ সেটিকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল বা সংশোধন করতে পারে না, যেমনটি জার্মানির মতো অন্যান্য সংসদীয় ব্যবস্থা অনুসরণকারী দেশে প্রায়শই ঘটে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.