ইন্‌ছন

দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম বন্দরনগরী ও তৃতীয় বৃহত্তম নগরী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

ইন্‌ছনmap

ইন্‌ছন (কোরীয়: 인천; আ-ধ্ব-ব: [intɕʰʌn]) দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বন্দর নগরী। এর সরকারী নাম ইন্‌ছন মহানগরী (인천광역시)। এটি দেশটির উত্তর-পশ্চিমভাগে, পীত সাগরের উপকূলে, হান নদীর মোহনায়, দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল নগরী থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পশ্চিম/দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। ইন্‌ছন নগরকেন্দ্রটি উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তবর্তী বেসামরিকীকৃত অঞ্চলটির মাত্র ৩২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। "ইন্‌ছন" কথাটির আক্ষরিক অর্থ "দয়ালু নদী"। বর্তমানে ১০৬২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই নগরীতে প্রায় ৩০ লক্ষ লোক বাস করে, ফলে এটি জনসংখ্যার বিচারে সিউল ও বুসান নগরীর পরে দক্ষিণ কোরিয়ার ৩য় বৃহত্তম নগরী। ইন্‌ছন নগরীটির সমুদ্র বন্দরটি এর উৎকৃষ্ট বরফ-মুক্ত পোতাশ্রয়ের জন্য রাজধানী সিউল নগরীর প্রধান বন্দর ও নৌঘাঁটি হিসেবে কাজ করে; এটি সিউলের সাথে রেলপথ ও মহাসড়কের মাধ্যমে সংযুক্ত। প্রশাসনিকভাবে আগে এটি কিয়ংগি প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত হলেও বর্তমানে ইন্‌ছন সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার-শাসিত মহানগরী এবং একই সাথে এটিকে প্রদেশের সমমর্যাদা দান করা হয়েছে। এটি সিউল নগরী ও কিয়ংগি প্রদেশের সাথে একত্রে মিলে সিউল রাজধানী অঞ্চল গঠন করেছে, যা কিনা বিশ্বের ৪র্থ বা ৫ম বৃহত্তম মহানগর এলাকা। ইন্‌ছন মহানগরী দশটি প্রশাসনিক পৌরজেলা (আটটি ওয়ার্ড (গু) ও দুইটি কাউন্টিতে (গান)) নিয়ে গঠিত।

দ্রুত তথ্য ইন্‌ছন 인천시, ইন্‌ছন মহানগরী 인천광역시 ...
ইন্‌ছন
인천시
মহানগরী
ইন্‌ছন মহানগরী
인천광역시
কোরীয় নাম প্রতিলিপি
  হাংগুল
  হাঞ্জা
  সংশোধিত রোমানীকরণIncheon Gwang-yeoksi
  মিকিউন-রাইশাউয়ারInch'ŏn Kwang'yŏkshi
[[চিত্র:|ইন্‌ছন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর|134px]]
Thumb
Thumb
Thumb
ঘড়ির কাঁটার দিকে উপর থেকে: ইন্‌ছন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নাম পৌরজেলা, ইন্‌ছন ফুটবল স্টেডিয়াম, ইন্‌ছন সমুদ্রবন্দর
Thumb
পতাকা
Thumb
ইনছনের সীল
Thumb
ইন্‌ছন
Thumb
ইন্‌ছন
স্থানাঙ্ক: ৩৭°২৯′ উত্তর ১২৬°৩৮′ পূর্ব
দেশ প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া
প্রশাসনিক অঞ্চলসিউল জাতীয় রাজধানী অঞ্চল
প্রতিষ্ঠাকাল১৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিচুহোই হিসেবে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে ইন্‌ছন মহানগরী হিসেবে
উপবিভাগ
তালিকা
  • ৮টি পৌরজেলা ("গু")
  • Bupyeong-gu (부평구; 富平區)
  • Gyeyang-gu (계양구; 桂陽區)
  • Jung-gu (중구; 中區)
  • Michuhol-gu (미추홀구; 彌鄒忽區)
  • Namdong-gu (남동구; 南洞區)
  • Seo-gu (서구; 西區)
  • Yeonsu-gu (연수구; 延壽區)
  •  
  • দুইটি উপজেলা ("গুন")
  • গাং-গুন (강화군; 江華郡)
  • ওংজিন-গুন (옹진군; 甕津郡)
সরকার
  ধরননগরাধ্যক্ষ-পরিষদ
  নগরাধ্যক্ষপার্ক নাম-চুন (কোরিয়া গণতান্ত্রিক দল)
  কর্তৃপক্ষইন্‌ছন মহানগরী পরিষদ
আয়তন
  মোট১,০৬২.৬৩ বর্গকিমি (৪১০.২৮ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (ফেব্রুয়ারি, ২০২০)[]
  মোট২৯,৫৪,৯৫৫
  জনঘনত্ব২,৮০০/বর্গকিমি (৭,২০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলকোরীয় মান সময় (ইউটিসি+9)
উপভাষাকিয়ংগি
ফুলগোলাপ
বৃক্ষটিউলিপ বৃক্ষ
পাখিবক
ওয়েবসাইটenglish.incheon.go.kr
বন্ধ

ইন্‌ছন ঐতিহ্যগতভাবে একটি শিল্পনগরী। কোরীয় যুদ্ধের পরে নতুন একটি জাহাজ ঘাটের পাশাপাশি এখানে কাচের তৈজসপত্র, লোহা ও ইস্পাত ও খনিজ তেল পরিশোধন কারখানা নির্মাণ করা হয়। এছাড়া এখানে বস্ত্র, রাসায়নিক দ্রব্য, লবণ ও কাঠ উৎপাদন করা হয়। শহরের কাছে অবস্থিত ভাটা-পরবর্তী কর্দমাক্ত নিম্নভূমিগুলিতে অবস্থিত লবণক্ষেত্রগুলি থেকে লবণ নিষ্কাশন করা হয়। এখানে উচ্চ-প্রযুক্তির শিল্পকারখানাও অবস্থিত। ইন্‌ছন বন্দরটিতে বস্ত্র, রেশম, ধাতু, রেলসামগ্রী, খনিজ তেল আমদানি করা হয় এবং এখান থেকে চাল, শিম, জিনসেং, চামড়া, গম, ইলেকট্রনীয় সামগ্রী ও কাগজ রপ্তানি করা হয়। মৎস্য আহরণ বিগত ৫ শতাব্দী ধরে এখন পর্যন্ত স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য দক্ষিণ কোরীয় সরকার ইন্‌ছন ও তার আশেপাশের বেশ কিছু এলাকাকে নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বপ্রথম উন্মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে। তখন থেকে স্থানীয় বড় বড় কোম্পানি এবং বহুজাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি ইন্‌ছন উন্মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের উত্তরোত্তর বিনিয়োগ করে চলেছে। অঞ্চলটির অংশ হিসেবে অধিকৃত জমির উপরে পরিকল্পিতভাবে উচ্চ-প্রযুক্তিভিত্তিক শহর সোংদো নির্মাণ করা হয়, যেখানে সমস্ত আবাসিক, ব্যবসায়িক ও সরকারী তথ্যব্যবস্থাগুলি একটি অভিন্ন উপাত্ত-অংশীদারী ব্যবস্থার মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়। সামসুং (স্যামসাং) কোম্পানিটি সোংদো নগরীকে তার জৈবশিল্পের বিনিয়োগস্থল হিসেবে নির্বাচন করে।

গ্রীষ্মকালে বহু পর্যটক এখানকার সাঁতারের জন্য উন্মুক্ত সমুদ্রসৈকতগুলি এবং উৎকৃষ্টমানের সামুদ্রিক খাবারের আকর্ষণে বেড়াতে আসেন। সোংদো পর্যটনকেন্দ্র, সোরায়ে খাঁড়ি এবং উপকূলবর্তী কাংহোয়া দ্বীপ পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়। সোরায়ে খাঁড়িটি এর সামুদ্রিক রন্ধনশৈলীর জন্য সুপরিচিত, যার মধ্যে ফালি করে কাটা কাঁচা মাছ উল্লেখ্য। শহরের উত্তরে অবস্থিত কাংহোয়া দ্বীপটিতে বহু সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিকভাবে আগ্রহজনক স্থান রয়েছে। ইন্‌ছনের ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় পণ্যের মধ্যে জিনসেং ও হোয়ামুনসোক নামের এক ধরনের হোগলা-জাতীয় ঘাসের তৈরি হাতে বোনা ফুলের নকশা-কাটা ঝুড়ি ও পাটি উল্লেখযোগ্য।

ইন্‌ছনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যাদের মধ্যে ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কিয়ংগিন জাতীয় শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ইনহা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইন্‌ছন বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখ্য।

একটি আন্তর্জাতিক নগরী হিসেবে ইন্‌ছন বহুসংখ্যক বড় মাপের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে, যেমন ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত ইন্‌ছন বিশ্ব মেলা ও উৎসব। ২০১৪ সালে এখানে ১৭তম এশীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে পেশাদার ফুটবল ও বেসবল দল রয়েছে। ২০০২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের কিছু খেলা ইন্‌ছনের মুনহাক স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয়। অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রতক সুনগুই অ্যারেনা পার্কটিকে ২০১১ সালে বিশেষ করে ফুটবলের জন্য নির্মাণ করা হয় এবং এখানে পেশাদারী খেলার আয়োজন করা হয়।

ইন্‌ছন নগরীতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানতম সমুদ্রবন্দর ও বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি অবস্থিত হবার সুবাদে নগরীটি কেবল কোরিয়ার জাতীয় পর্যায়েই নয়, বরং সমগ্র উত্তর-পূর্ব এশিয়ার একটি প্রধান পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। ইন্‌ছন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সিউলের কিমপো বিমানবন্দরটিকে প্রতিস্থাপন করে বহির্বিশ্ব থেকে বিমানযোগে দেশটিতে প্রবেশের প্রধানতম বন্দরে পরিণত হয়। ইন্‌ছনে একটি উৎকৃষ্ট পাতালরেল ব্যবস্থা রয়েছে। এটি রেলপথে ও দ্রুতগামী মহাসড়ক ব্যবস্থার মাধ্যমে সিউলসহ অন্যান্য দক্ষিণ কোরীয় নগরীগুলির সাথে সংযুক্ত। ইন্‌ছন বন্দর থেকে চীনের বন্দরগুলিতে আন্তর্জাতিক সমুদ্র ফেরিতে করে গাড়ি পরিবহনের ব্যবস্থা আছে।

ইন্‌ছন এলাকাটিতে নব্য প্রস্তর যুগেও লোকালয় ছিল বলে প্রমাণ মিলেছে। ১৪শ শতকে চোসোন রাজবংশের শাসনের সময়ে এখানে একটি মৎস্যশিকারী বন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐতিহাসিকভাবে ইন্‌ছন নগরীটি বহির্বিশ্বের কাছে দক্ষিণ কোরিয়াকে উন্মুক্ত করে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বিরাট অবদান রেখেছে। এর ফলে কোরিয়ার আধুনিকায়ন ও শিল্পরাষ্ট্র হিসেবে উত্থান ঘটে। ১৮৮২ সালে পশ্চিমা কূটনীতিকরা প্রথম যে স্থানটি পরিদর্শন করেন, তা ছিল ইন্‌ছন। এর পরের বছরে ১৮৮৩ সালে কোরীয় শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ইন্‌ছন, বুসা ও ওনসান এই তিনটি বন্দর নগরীকে বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তখন এখানে মাত্র ৪৭০০ অধিবাসী বাস করত। এরপর এটি একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক বন্দর হিসেবে উন্নতি লাভ করে। ১৯০০ সালে ইন্‌ছন নগরীর সাথে সিউল নগরীর রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এটি জাপানি দখলে ছিল। এসময় এর নাম বদলে জিনসেন রাখা হয়। জাপানি শাসনের সময় জিনসেন তথা ইন্‌ছন একটি আধুনিক সমুদ্রবন্দরে রূপান্তরিত হয়। জাপানিরা বন্দরের বিভিন্ন সুব্যবস্থা ও সংশ্লিষ্ট শিল্পখাতগুলির উন্নতি সাধন করে। তারা জোয়ারের পানি ধরে রাখার জন্য জলাধার নির্মাণ করে বন্দরটিকে ১০ মিটার উঁচু জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা করার জন্য সুরক্ষামূলক সমাধান প্রদান করে। ১৯৫০-৫৩ সালে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সংঘটিত কোরীয় যুদ্ধের সময় এখানে ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি মার্কিন সমরনেতা জেনারেল ডগলাস ম্যাকার্থারের নেতৃত্বে জাতিসংঘের সেনারা সফলভাবে অবতরণ করে। এটি ছিল যুদ্ধের একটি মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া একটি ঘটনা, যার সুবাদে সিউল মুক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। এই অবতরণের ঘটনাটি স্মরণ করার জন্য ইন্‌ছনের চাইউ উদ্যানে বন্দরের দিকে মুখ করে ম্যাকার্থারের একটি বিশাল মূর্তি স্থাপন করা হয়। উপকূলীয় বন্দর নগরী ও দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল নগরীর খুব কাছে অবস্থিত হবার সুবিধাগুলির জন্য ২০শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এসে ইন্‌ছন নগরীটির প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.