বেহালা, কলকাতা

কলকাতার একটি অঞ্চল উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

বেহালা, কলকাতাmap

বেহালা হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ কলকাতার একটি অঞ্চল। ১৯৮৪ সালের আগে বেহালা ছিল দক্ষিণ শহরতলি পৌরসভার অংশ। সেই বছর জানুয়ারি মাসে উক্ত পৌরসভাটি কলকাতা পৌরসংস্থার অঙ্গীভূত হলে বেহালা কলকাতার অন্তর্ভুক্ত হয়।[] বর্তমানে উক্ত পৌরসংস্থার ১১৮, ১১৯, ১২০, ১২১, ১২২, ১২৩, ১২৪, ১২৫, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১২৯, ১৩০, ১৩১১৩২ নং ওয়ার্ডগুলি বেহালা অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। সমগ্র অঞ্চলটি বেহালা পশ্চিমবেহালা পূর্ব নামে দুটি বিধানসভা কেন্দ্রে বিভক্ত। দুটি বিধানসভা কেন্দ্রই কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত।[] সমগ্র এলাকাটি কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ পশ্চিম বিভাগের বেহালা, পর্ণশ্রী পল্লী, ঠাকুরপুকুর, হরিদেবপুর, সরশুনাতারাতলা থানার এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার অন্তর্গত।[] বেহালার উত্তর দিকে মাঝেরহাট ও নিউ আলিপুর, পূর্ব দিকে আদিগঙ্গা, পশ্চিম দিকে মহেশতলা পুরসভা এবং দক্ষিণে ঠাকুরপুকুর মহেশতলা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের গ্রামীণ এলাকা অবস্থিত।

দ্রুত তথ্য বেহালা, দেশ ...
বেহালা
কলকাতার অঞ্চল
Thumb
Thumb
বেহালা
কলকাতায় বেহালার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২.৪৯৮১° উত্তর ৮৮.৩১০৮° পূর্ব / 22.4981; 88.3108
দেশ ভারত
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
শহরকলকাতা
জেলাকলকাতা[][][]
নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশনসখেরবাজার (নির্মীয়মান), বেহালা চৌরাস্তা (নির্মীয়মান), বেহালা বাজার (নির্মীয়মান), তারাতলা (নির্মীয়মান)
পৌরসংস্থাকলকাতা পৌরসংস্থা
কলকাতা পৌরসংস্থার ওয়ার্ড১১৮, ১১৯, ১২০, ১২১, ১২২, ১২৩, ১২৪, ১২৫, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১২৯, ১৩০, ১৩১১৩২
উচ্চতা৩৬ ফুট (১১ মিটার)
সময় অঞ্চলভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০)
পিন কোড৭০০০৩৪ (বেহালা), ৭০০০৬০ (পর্ণশ্রী পল্লি), ৭০০০৬১ (সরশুনা), ৭০০০০৮ (বড়িশা), ৭০০০৬৩ (ঠাকুরপুকুর), ৭০০০৩৮ (সাহাপুর), ৭০০০৮২ (হরিদেবপুরের অংশবিশেষ)
এলাকা কোড+৯১ ৩৩
লোকসভা কেন্দ্রকলকাতা দক্ষিণ
বিধানসভা কেন্দ্রবেহালা পশ্চিমবেহালা পূর্ব
বন্ধ

বেহালা কলকাতার একটি প্রাচীন জনবসতি এলাকা। এই অঞ্চলের পূর্বতন জমিদার পরিবার সাবর্ণ রায়চৌধুরীরা ছিল কালীঘাট মন্দিরের প্রাক্তন অছি।[] ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বেহালার বাসিন্দা।[]

বেহালা কলকাতা শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকেন্দ্র। এখানে অনেকগুলি কেমিক্যাল, প্লাস্টিক, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং, স্প্রে পেন্টিং, মেটাল প্লেটিং ও ভ্যালভ্যানাইজিং কারখানা আছে। কলকাতার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসাকেন্দ্র ও ব্যাংক এখানে অবস্থিত।[]

১৬১০ সালে লক্ষ্মীকান্ত মজুমদার বেহালার বড়িশা এলাকার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। এটি পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বনেদি পুজো।[১০] এছাড়া বেহালা থিম-ভিত্তিক সর্বজনীন দুর্গাপুজোর জন্যও বিখ্যাত। বেহালার অপর একটি বিখ্যাত উৎসব হল বড়িশার চণ্ডীমেলা। ১৭৯২ সাল থেকে প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ১০ দিন ধরে এই উৎসব পালিত হয়। বেহালার প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলি হল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহালয়, বেহালা বিমানবন্দর,আটচালা, সোনার দুর্গাবাড়ি, বড়িশা চণ্ডী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির ইত্যাদি।

নাম-ব্যুৎপত্তি

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
পশ্চিমবঙ্গের লৌকিক চিত্রকলায় বেহুলার (উপরে বাঁদিকে) যাত্রাপথ। "বেহালা" নামটি "বেহুলা" নামের অপভ্রংশ বলে মনে করা হয়।

"বেহালা" নামটির উৎপত্তি সম্পর্কে একাধিক মত প্রচলিত। প্রচলিত লোকবিশ্বাস অনুসারে, মনসামঙ্গলের বেহুলা চরিত্রটির নাম থেকে "বেহালা" শব্দটির উৎপত্তি।[১১] উল্লেখ্য, বেহালার চণ্ডীতলা অঞ্চলে মনসামঙ্গলের স্মৃতিবাহী নেতাধোপানির ঘাট ও কমলেকামিনী ঘাট আজও অবস্থিত। দীনেশচন্দ্র সেনও এই মতের সমর্থক ছিলেন।[১২] অন্য মতে, "বহুলা" শব্দটি থেকে "বেহালা" নামের উৎপত্তি। "বহুলা" শব্দের অর্থ "বহু নদীর হাত" বা "অন্ধকার নগরী"।[১১] অন্য মতে, "বহুলা" শব্দটি থেকে "বেহালা" নামের উৎপত্তি। "বহুলা" শব্দের অর্থ "বহু নদীর হাত" বা "অন্ধকার নগরী"।[১১] আবার হিন্দু দেবী চণ্ডীকালীর অপর নামও "বহুলা"।[১১] "বহু" শব্দের অর্থ "অনেক", "লা" শব্দের অর্থ "নৌকা"; সেই সূত্রে কেউ কেউ মনে করেন যে এই অঞ্চলের নদীপথে অনেক নৌকার যাতায়াত ছিল বলে এই অঞ্চলের নাম হয় "বহুলা"।[১২] প্রতাপচন্দ্র ঘোষের মতে, এই অঞ্চলে বর্ধমান মহারাজের বাইমহল অবস্থিত ছিল; সেই "বাইমহল" থেকেই "বেহালা" নামের উৎপত্তি।[১২] রেভারেন্ড জেমস লং বেহালা অঞ্চলে বসবাস করতেন। নিজের রচনায় তিনি বেহালাকে "Byala" নামে উল্লেখ করেছেন।[১১] নগরায়ণের আগে বেহালা অঞ্চলটি ছিল কয়েকটি গ্রামের সমষ্টি। প্রতিটি গ্রামের নামের সঙ্গে "-বেহালা" শব্দটি যুক্ত ছিল। যেমন - বাজারবেহালা, তামতেলবেহালা, বোঁড়শেবেহালা (বড়িশা), সরশুনোবেহালা (সরসুনা) ইত্যাদি।[১১] এমনকি দক্ষিণ শহরতলি পৌরসভার নথিপত্রেও রাজারবাগানবেহালা, সাহাপুরবেহালা, নস্করপুরবেহালা ও সন্তোষবাটিবেহালার নামের উল্লেখ পাওয়া যায়।[১১]

ইতিহাস

তারাতলা থেকে ঠাকুরপুকুর পর্যন্ত ডায়মন্ড হারবার রোডের দুই ধারে প্রসারিত জনবসতিটি বেশ পুরনো। এই রাস্তা বেহালা অঞ্চলটিকে তিন ভাগে বিভক্ত করে – পূর্ব বেহালা, পশ্চিম বেহালা ও দক্ষিণ বেহালা। পূর্ববঙ্গ (পরবর্তীকালের পূর্ব পাকিস্তান, বর্তমানে বাংলাদেশ) থেকে আগত ছিন্নমূল মানুষেরা এই অঞ্চলের জনসংখ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এই অঞ্চলের লোকবসতির সূত্রপাত ১৭৯৭ সাল নাগাদ। তবে বেহালার জনসংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটে স্বাধীনতার পর এবং এই অঞ্চলের নগরায়ণ ঘটে অতি সাম্প্রতিক কালে।

আজকের বেহালা

Thumb
বেহালা থানা, কলকাতা

বর্তমানে বেহালা কলকাতা মহানগরীর বৃহত্তম অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম। ১৯৮০-এর দশক থেকে ব্যাপক হারে এই অঞ্চলে জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে। এর ফলে সাধারণ দিনমজুর থেকে উচ্চশিক্ষিত – সকল শ্রেণির মানুষের বসতাঞ্চলে পরিণত হয় বেহালা। এই ব্যাপক ও অপরিকল্পিত জনবৃদ্ধির ফলে যাতায়াত-ব্যবস্থা পুরোপুরিই এই অঞ্চলের প্রধান রাস্তা ডায়মন্ড হারবার রোডের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। যদিও জেমস লঙ সরণি (সাধারণভাবে রেল লাইন নামে পরিচিত) এখানে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাইপাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

Thumb
বড়িশা ক্লাব

পরিবহন

সারাংশ
প্রসঙ্গ

কলকাতার অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে বেহালার যোগাযোগ রক্ষা করে বাস, রিক্সা ট্যাক্সি অস্ত্র। পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম ও বিভিন্ন বেসরকারি বাস রুট কলকাতা, হাওড়াবিধাননগরের সঙ্গে কলকাতাকে যুক্ত করেছে।

এছাড়া, বেহালার সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা রক্ষা করে অটোরিক্সা ও সাইকেল রিক্সা। ট্যাক্সি পরিষেবাও সুলভ।

পরিকল্পনা ও স্থানের অভাবের কারণে ব্যস্ত ডায়মন্ড হারবার রোডের দুই ধার হকারদের দখলে চলে যাওয়ার ফলে অনেক সময়েই পথচারীরা রাস্তায় নেমে পড়তে বাধ্য হন। বেহালা ট্রাম ডিপো, বেহালা চৌরাস্তা ও বেহালা সখের বাজার অঞ্চল বর্তমানে ‘কলকাতা সবুজ ক্ষেত্র’ বা ‘কলকাতা গ্রিন জোন’-এর অন্তর্গত। এই অঞ্চলে অফিস-টাইমে গাড়ি অত্যন্ত ধীরে চলে।

মেট্রো

জোকা থেকে তারাতলা পর্যন্ত কলকাতা মেট্রো লাইন ৩ বিস্তৃত। এই লাইনে জোকা, ঠাকুরপুকুর, সখেরবাজার, বেহালা চৌরাস্তা, বেহালা বাজার ও তারাতলা–এই ছয়টি স্টেশন বেহালা অঞ্চলের অন্তর্গত।

ট্রাম

জোকা থেকে বেহালা ট্রাম ডিপো পর্যন্ত ট্রামপথ বেহালার ঠিক মধ্যস্থলে অবস্থিত হওয়ার কারণে অনেকেই দ্রুত পরিবহনের জন্য ট্রামের সাহায্য নিয়ে থাকত। পূর্বে কলকাতার মূল অঞ্চলের সঙ্গে ট্রামপথেও বেহালা যুক্ত ছিল। পরে তারাতলা উড়ালপুল নির্মাণের সময় মোমিনপুর-বেহালা ট্রাম-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। কলকাতা মেট্রো লাইন ৩-এর নির্মাণের জন্য বেহালা ট্রাম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

রেল

Thumb
কালীঘাট–ফলতা রেলপথে একটি ট্রেন

মাঝেরহাটনিউ আলিপুর হল বেহালার নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন। পূর্বে বেহালা থেকে ফলতা পর্যন্ত ন্যারো-গেজ কালীঘাট–ফলতা রেলপথ বিস্তৃত ছিল।

কালীঘাট–ফলতা রেলপথ ২৮ মে ১৯১৭-এ বেহালার ঘোলেশাপুর থেকে ফলতা পর্যন্ত চালু হয়েছিল। ৭ মে ১৯২০-এ কালীঘাট (বর্তমানে মাঝেরহাট) পর্যন্ত আরও ০.৯২ মাইল (১.৪৮ কিলোমিটার) বিস্তার করা হয়েছিল। রেলপথটি  ফুট  ইঞ্চি (৭৬২ মিলিমিটার) গেজে নির্মিত এবং মোট দৈর্ঘ্য ২৭ মাইল (৪৩ কিলোমিটার)[১৩]

ক্রমবর্ধমান ক্ষতির জন্য ১৯৫৭ সালে কালীঘাট–ফলতা রেলপথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রেলপথের পরিবর্তে বেহালায় জেমস লং সরণি তৈরি করা হয়েছিল।[১৪][১৫]

বিমানবন্দর

Thumb
বেহালা বিমানবন্দর
Thumb
বেহালা বিমানবন্দর (আইসিএও: VEBA) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা শহরের একটি বিমানবন্দর। এটি দক্ষিণ কলকাতার বেহালায় অবস্থিত। বিমানবন্দরটিতে ১০৬৬ মিটার দীর্ঘ রানওয়ে রয়েছে।এটি ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দ্বারা পরিচালিত হয়।বর্তমানে পরিকল্পনা করা হচ্ছে যে কলকাতা বিমানবন্দর এর চাপ কমাতে বেহালা বিমানবন্দরের রানওয়ে বাড়িয়ে ৪৫,০০০ ফুট (১৪,০০০ মিটার) করা হবে এবং অভ্যন্তরীণ বিমান পরিচালনা করা হবে।

চিকিৎসা ব্যবস্থা

বেহালায় দুটি সাধারণ হাসপাতাল অবস্থিত – ব্রাহ্মসমাজ রোডের বিদ্যাসাগর হাসপাতাল ও পাঠকপাড়া অঞ্চলের বালানন্দ ব্রহ্মচারী হাসপাতাল। এছাড়াও বেহালায় একাধিক নার্সিংহোম, চক্ষু চিকিৎসালয় ও শিশু চিকিৎসালয় অবস্থিত।

উৎসব

Thumb
বেহালার সোনার দুর্গা বাড়ির পিতলের রথ, কলকাতা, ভারত

দুর্গাপূজা বেহালার প্রধান উৎসব। সারা কলকাতার মতো এখানেও এই উৎসব বিশেষ উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয়। বেহালা-বড়িশা অঞ্চলে দুর্গোৎসব দেখতে কলকাতা এমনকি কলকাতার বাইরে থেকেও দর্শনার্থীরা এসে ভিড় জমান। বেহালা ক্লাব, সৃষ্টি, বড়িশা ক্লাব, শ্রীসংঘ, বেহালা ইয়ংস ইত্যাদি ক্লাব দুর্গাপূজার সময় মণ্ডপ-পরিক্রমার জনপ্রিয় গন্তব্য এবং বিগত দশক থেকে এই ক্লাবগুলি নিয়মিত শারদ পুরস্কার পেয়ে আসছে।

দুর্গাপূজা ছাড়াও বেহালায় একাধিক হিন্দু, মুসলমান ও খ্রিস্টান উৎসব পালিত হয়। তবে অগ্রহায়ণ মাসে দশদিনব্যাপী বড়িশা অঞ্চলের চণ্ডীপূজা ও মেলা দুর্গাপূজার পরেই এই অঞ্চলের বৃহত্তম উৎসব। এছাড়া বেশ কিছু অসাম্প্রদায়িক উৎসবও বিশেষ উৎসাহের সঙ্গে বেহালায় অনুষ্ঠিত হয়। যেমন – বেহালা নাট্যোৎসব, বেহালা মিলনোৎসব, বেহালা উৎসব ও বেহালা বইমেলা।

সংস্কৃতি

Thumb
বেহালা টাউন লাইব্রেরি, কলকাতা

বেহালায় বেশ কয়েকটি অডিটোরিয়াম, সিনেমা হল তথা মেলাপ্রাঙ্গন অবস্থিত যেখানে নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসকল আয়োজিত হয়ে থাকে। এই অঞ্চলের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অডিটোরিয়াম হল কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত শরৎ-সদন। এটি ম্যান্টন শপিং মলের একাংশে অবস্থিত। বেহালার সিনেমা হলগুলি ডায়মন্ড হারবার রোডের উপরে বা নিকটে অবস্থিত। এগুলি হল অজন্তা (পাঠকপাড়া, পশ্চিম বেহালা), ইলোরা (বেহালা ট্রামডিপো, পূর্ব বেহালা), অশোকা (ম্যান্টন, পূর্ব বেহালা) ও পুষ্পশ্রী (সখের বাজার, দক্ষিণ বেহালা)।

বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব

Thumb
শোভন চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা পৌরসংস্থার প্রাক্তন মহানাগরিক

বেহালার বিশিষ্ট বাসিন্দারা হলেন:

বাজার

ডায়মন্ড হারবার রোডের দুই ধারে বেহালা-বড়িশা অঞ্চলে একাধিক বড় ও ছোটো বাজার ও অসংখ্য দোকান অবস্থিত। সকল প্রকার পণ্যই এখানে সুলভ। বেহালা বাজার এখানকার বিখ্যাত বাজার।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

  • বড়িশা হাই স্কুল (বেহালা চৌরাস্তা)
  • বেহালা অন্ধ বিদ্যালয় (বেহালা চৌরাস্তা)
  • ডিএভি ইনস্টিটিউশনস (পূর্বতন ডিএভি পাবলিক স্কুল)
  • বেহালা আর্য বিদ্যামন্দির
  • ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট ক্যালকাটা, জোকা
  • বিবেকানন্দ কলেজ (ঠাকুরপুকুর)
  • বিবেকানন্দ মহিলা মহাবিদ্যালয় (বেহালা চৌরাস্তা)
  • বেহালা কলেজ
  • ন্যাশানাল জেমস স্কুল
  • বিবেকানন্দ মিশন স্কুল
  • বিদ্যাভারতী
  • ওরিয়েন্ট ডে স্কুল
  • মেঘমালা রায় এডুকেশন সেন্টার
  • পর্ণশ্রী বিদ্যামন্দির
  • বেহালা ফ্লাইং ক্লাব
  • ব্রতচারী বিদ্যাশ্রম
  • বিবেকানন্দ স্কুল
  • পূর্ব বড়িশা উচ্চ বিদ্যালয়
  • শ্যামাসুন্দরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
  • পূর্বপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়
  • শ’ পাবলিক স্কুল
  • বেহালা হাই স্কুল
  • বিবেকানন্দ পল্লি কিশোর ভারতী হাই স্কুল
  • বেহালা গার্লস হাই স্কুল
  • বেহালা শিক্ষায়তন

এম. পি. বিড়লা ফাউন্ডেশন হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল

এম. পি. বিড়লা ফাউন্ডেশন হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল বেহালার জেমস লং সরণিতে অবস্থিত একটি বিখ্যাত বিদ্যালয়। এই স্কুলের ছাত্রসংখ্যা প্রায় ৩,৬০০। এটি সহশিক্ষামূলক এবং ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়।[১৬] ১৯৮৮ সালে এই স্কুলটি চালু হয়। এটি পরিচালনা করে বিড়লা পরিবারের জনকল্যাণমূলক শাখা এম. পি. বিড়লা গোষ্ঠী

দ্রষ্টব্য

Thumb
সোনার দুর্গাবাড়ির দুর্গাপ্রতিমা

বেহালার প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলি হল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা (পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনস্থ একটি জাদুঘর), সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের বাসভবন, বড়িশা আটচালা ও সাবর্ণ সংগ্রহশালা (বড়োবাড়ি, বড়িশা), বড়িশা চণ্ডী মন্দির ও সোনার দুর্গাবাড়ি।

রাজনীতি

বেহালা অঞ্চলটি দুটি বিধানসভা কেন্দ্রে বিভক্ত। যথা – বেহালা পূর্ব ও বেহালা পশ্চিম। পূর্বে এই কেন্দ্রদুটি যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল।[১৭] সীমানা পুনর্গঠন কমিশনের পশ্চিমবঙ্গের সংসদীয় ক্ষেত্রগুলির সীমানা পুনর্গঠন সংক্রান্ত সুপারিশ অনুযায়ী এই দুটি বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের (২৩ নং লোকসভা কেন্দ্র) অন্তর্ভুক্ত হয়।[১৮]

বেহালা পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক (পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার সদস্য) হলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) (সিপিআইএম)-র কুমকুম চক্রবর্তী। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস দলের পরশ দত্ত এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। সিপিআইএম-এর নিরঞ্জন মুখোপাধ্যায় ১৯৮৭, ১৯৮২ ও ১৯৭৭ সালে এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেছিলেন।[১৯]

বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি ২০০১ ও ২০০৬ সালে পরপর দুইবার এই কেন্দ্র থেকে বিধানসভায় নির্বাচিত হন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে সিপিআইএম-এর নির্মল মুখোপাধ্যায় এই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারও আগে ১৯৭৭, ১৯৮২ ও ১৯৮৭ সালে সিপিআইএম-এরই রবিন মুখোপাধ্যায় এই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন।[২০]

ভূগোল

বেহালার সীমানাঃ উত্তরে নিউ আলিপুর এবং তারাতলা, দক্ষিণে পইলান ও আসুতি, পূর্বে টালিগঞ্জ , পশ্চিমে মহেশতলা অবস্থিত।

মেনল্যান্ড বেহালা, পর্ণশ্রী পল্লী, সাহাপুর, বড়িশা (শিলপাড়া, সাকেরবাজার, চৌরাস্তা, ঠাকুরপুকুর আংশিক), হরিদেবপুর, ঠাকুরপুকুর, দক্ষিণ বেহালা, জোকা আংশিক এবং সরসুনা এর মতো অনেক এলাকা নিয়ে বেহালা এলাকা গঠিত।

পুলিশ জেলা

বেহালা থানা কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ-পশ্চিম বিভাগের অংশ।[২১]

বেহালা মহিলা পুলিশ স্টেশন, উপরের মতো একই ঠিকানায় অবস্থিত, দক্ষিণ পশ্চিম বিভাগের এখতিয়ারের অধীনে সমস্ত পুলিশ থানাকে কভার করে।সরসুনা, তারাতলা, বেহালা, পর্ণশ্রী, ঠাকুরপুকুর ও হরিদেবপুর।[২১]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.