ভারতীয় বৈমানিক ও রাজনীতিবিদ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বীরেন রায় (২৮ আগস্ট ১৯০৯ – ২২ জানুয়ারি ১৯৯৬) ছিলেন ভারতীয় বাঙালি বৈমানিক তথা বিমান চালক, লেখক [১] ও রাজনীতিবিদ। ঊনবিংশ শতকে বাংলার একজন দক্ষ প্রশাসক এবং কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিতি ছিল তার। [২] তিনি প্রথমদিকে (১৯৫৭-৬০) ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ তথা লোকসভায় এবং শেষের দিকে (১৯৬০-৭২) উচ্চকক্ষ তথা রাজ্যসভায় পশ্চিমবঙ্গ হতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। [৩] [৪] [৫] [৬]
বীরেন রায় | |
---|---|
সংসদ সদস্য, রাজ্যসভা | |
কাজের মেয়াদ ১৯৬০ – ১৯৭২ | |
নির্বাচনী এলাকা | পশ্চিমবঙ্গ |
সংসদ সদস্য, লোকসভা | |
কাজের মেয়াদ ১৯৫৭-১৯৬০ | |
পূর্বসূরী | অসীম কৃষ্ণ দত্ত |
উত্তরসূরী | ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত |
নির্বাচনী এলাকা | কলকাতা দক্ষিণ পশ্চিম |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ২৬ আগস্ট ১৯১০ |
মৃত্যু | ২২ জানুয়ারি ১৯৯৬ ৮৬) | (বয়স
রাজনৈতিক দল | ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস |
দাম্পত্য সঙ্গী | মেঘমালা দেবী (বি.১৯৩৯) |
বীরেন রায়ের জন্ম ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ২৭ আগস্ট ব্রিটিশ ভারতের কলকাতার বেহালার এক বিত্তশালী পরিবারে। পিতা সৌরেন্দ্র রায় এবং মাতা শ্যামাসুন্দরী দেবী। তার প্রপিতামহ রায়বাহাদুর অম্বিকাচরণ রায় ছিলেন আদালতের অনুবাদক। তিনি সেসময় সাতশো টাকা পেনশন পেতেন। ধনাঢ্য পরিবারে জন্ম হওয়ায় বীরেন রায়ের আচার-আচরণে তার প্রভাব পড়েছিল। [১] তিনি পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স সহ স্নাতক হন। [৭] প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় তিনি উপনয়নে যে দশ হাজার গিনি উপহার হিসাবে পেয়েছিলেন, তা খরচ করে কালাপানি পার হয়ে ইংল্যান্ডে যান। বীরেন রায় ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাতনি মিনি'র প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন – ফলে তাকে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে অবশ্য তিনি এম.এ., এম আর এ এস ডিগ্রি লাভ করেন। মিনি'রা ব্রাহ্মসমাজ ভুক্ত ছিলেন, মিনি'র প্রতি তার আকর্ষণ রোধ করতে এক লক্ষ টাকার পণ ও বিমান কিনে দেওয়ার টোপ দিয়ে জয়পুরের এক কন্যার সঙ্গে বিবাহ দেওয়া হয়। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে বিবাহ হয় মেঘমালা দেবীর সঙ্গে।[৭] কিন্ত তার পিতাই তার শ্বশুরের হয়ে বিমান কিনে দেন।[১] এদিকে এক লক্ষ টাকা আদায় করতে তিনি বিমানে জয়পুর যান শ্বশুরের কাছে। পরে তিনি পিতার কৌশল ইত্যাদি সবকিছুই অনুধাবন করতে পারেন। [২] বীরেন রায় পরে একজন দক্ষ বিমান চালক হয়ে ওঠেন।
ধনী পরিবারের সন্তান হয়ে বীরেন রায় বর্ণময় জীবনযাপন অতিবাহিত করেছেন। এক সময় দক্ষিণ কলকাতা পৌরাধ্যক্ষ হন। সেই সূত্রে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির বার্লিন শহরে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অফ মিউনিসিপ্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস -এ প্রতিনিধিত্ব করেন। এই সময়েই তিনি জার্মানির চান্সেলর হিটলারের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন এবং তার সঙ্গে যে সখ্যতা গড়ে ওঠে তা শেষদিন পর্যন্ত বজায় ছিল। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর গোপন জীবনেও অনেকবার তিনি বৈমানিক হিসাবে সঙ্গী হয়েছিলেন। কিন্তু নেতাজীর ক্রিয়াকলাপ নিয়ে কোন কথাই সমক্ষে আনেন নি। পরবর্তীতে তিনি কমিউনিস্ট আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন। মুজফ্ফর আহমেদসহ বহু কমিউনিস্ট কর্মীদের গোপন আস্তানা ছিল তার বালিগঞ্জের বাড়িটি। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র "স্বাধীনতা" জন্য প্রেসের প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।[১] পরে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হন। [৭]
বেহালার বিমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও হালকা বিমান উড়ান কেন্দ্র ছাড়াও বেহালার সিনেমা হল (অজন্তা, ইলোরা, নটরাজ), মাতা শ্যামাসুন্দরীর নামে বালিকা বিদ্যালয়, আর্য সমিতি, চ্যারিটেবল চিকিৎসা কেন্দ্র ইত্যাদি তারই প্রতিষ্ঠিত।[১]
বীরেন রায় বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখালেখিও করতেন। ব্রিটিশ ভারতে শ্রমিক আন্দোলন, বিমান চালনা, যোগা ও রেডিও ও অন্যান্য যন্ত্রাদি নির্মাণ নিয়ে বই লিখেছেন। বাংলা ছাড়াও ইংরাজী হিন্দি ও জার্মান, তিনটি ভাষায় তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা আটচল্লিশ। অনেক পত্র-পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন, সম্পাদনা করেছেন কয়েকটি পত্রিকা। উল্লেখযোগ্য রচিত গ্রন্থ গুলি হল–
তিনি পুরানো দিনের বেহালা সম্পর্কে নানান কথা তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন- আত্মশক্তির গল্পকথা শীর্ষক একটি গ্রন্থ। [১] ব্রিটিশ ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের উপর একটি নাটক রচনা করেন, কিন্তু ব্রিটিশ শাসক ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বাজেয়াপ্ত করে। [২]
বীরেন রায় ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ২২ জানুয়ারি ৮৬ বৎসর বয়সে কলকাতায় প্রয়াত হন। তার জীবদ্দশাতেই বেহালার একটি রাস্তার নামকরণ হয়- বীরেন রায় রোড। [১]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.