ভারতীয় লেখক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বুদ্ধদেব গুহ (জন্ম ২৯ জুন, ১৯৩৬ ―২৯ আগস্ট, ২০২১[২]) একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক। তিনি মূলত বন, অরণ্য এবং প্রকৃতি বিষয়ক লেখার জন্য পরিচিত। তার স্ত্রী প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়িকা ঋতু গুহ। বহু বিচিত্রতায় ভরপুর এবং অভিজ্ঞতাময় তার জীবন। ইংল্যান্ড, ইউরোপের প্রায় সমস্ত দেশ, কানাডা, আমেরিকা, হাওয়াই, জাপান, থাইল্যান্ড ও পূর্বআফ্রিকা তার দেখা। পূর্বভারতের বন-জঙ্গল, পশুপাখি ও বনের মানুষের সঙ্গেও তার সুদীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরংগ পরিচয়।
বুদ্ধদেব গুহ | |
---|---|
জন্ম | ২৯ জুন ১৯৩৬ কলকাতা,পশ্চিমবঙ্গ |
মৃত্যু | ২৯ আগস্ট ২০২১ ৮৫)[১] কলকাতা ভারত | (বয়স
জাতীয়তা | |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | আনন্দ পুরস্কার |
বুদ্ধদেব গুহর ১৯৩৬ সালে কলকাতায় জন্ম হলেও তার ছোটবেলা কেটেছিল বরিশাল ও রংপুরে। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সুপরিচিত সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা করেন।[৩][৪]
বুদ্ধদেব গুহর পেশাগত জীবন শুরু হয়েছিল চাটার্ড অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। তিনি ছিলেন একজন নামী চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। দিল্লির কেন্দ্রীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গের আয়কর বিভাগের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য নিযুক্ত করেছিল। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের অডিশন বোর্ডের সদস্য হয়েছিলেন তিনি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি। একদা বামফ্রন্ট তাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনবিভাগের বন্যপ্রাণী উপদেষ্টা বোর্ড পশ্চিমবঙ্গ বিভাগের উপদেষ্টা বোর্ড এবং নন্দন উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য করা হয়েছিল। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনে পরিচালন সমিতির সদস্যও নিযুক্ত হয়েছিলেন। বুদ্ধদেব গুহ খুব সুন্দর ছবি আঁকেন। নিজের লেখা একাধিক বইয়ের প্রচ্ছদ তিনি নিজেই এঁকেছেন। গায়ক হিসেবেও তিনি জনপ্রিয় ছিলেন।[৫]
বুদ্ধদেব গুহের প্রধান পরিচয় তিনি শিকার কাহিনি বা অরণ্যপ্রেমিক লেখক। কিন্তু অরণ্যানীর জীবন বা শিকার ছাপিয়ে তাঁর রচনা ধারণ করেছে এক প্রেমিকসত্তাকে। এই প্রেমিকসত্তা একইসঙ্গে প্রকৃতি ও নারীকে অবিচ্ছিন্নভাবে ধারণ করেছে তাঁর গল্প ও উপন্যাসে। তাঁর সৃষ্টি 'বাবলি', 'মাধুকরী', 'কোজাগর', 'হলুদ বসন্ত', 'একটু উষ্ণতার জন্য', 'কুমুদিনী', ‘খেলা যখ’ এবং ‘ঋজুদা’ বাংলা কথাসাহিত্যের জগতকে সমৃদ্ধ করেছে তুলনারহিত আঙ্গিকে। তাঁর রচিত 'বাবা হওয়া' এবং 'স্বামী হওয়া'- এ দুইয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে পুরস্কারজয়ী বাংলা চলচ্চিত্র 'ডিকশনারি'। শিশু সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। বাংলা জনপ্রিয় সাহিত্যে বুদ্ধদেব গুহের এক নিঃসঙ্গ নাম, কারণ যে ধারার সাহিত্য তিনি রচনা করেছেন তা বাংলা মূলধারার পরিপ্রেক্ষিতে অভিনব। অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘‘বাঙালি মধ্যবিত্ত জীবন থেকে তাঁর সাহিত্যের ভুবন খানিকটা দূরে। টাঁড়ে, বনে, অরণ্যে, বাঘের গায়ের ডোরায় সে সব কাহিনি ছায়াময়। তাঁর নায়কদের নাম ঋজুদা, রুরু, পৃথু। নায়িকাদের নাম টিটি, টুঁই, কুর্চি। তারা ছাপোষা বাঙালি জীবনের চৌহদ্দিতে নেই। কিন্তু পাড়ার লাইব্রেরি থেকে সেই বই বুকে নিয়েই বাঙালি গৃহবধূ তার নিঃসঙ্গ দুপুর কাটাতেন। লুকিয়ে ‘একটু উষ্ণতার জন্য’ পড়তে পড়তে বাঙালি কিশোর বুকের ভিতরে যৌবনের প্রথম আলোড়ন টের পেত। কিশোরী নিজের অজান্তেই কখন যেন যুবতী হয়ে উঠত।’’[৬]
'জঙ্গলমহল' তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। তারপর বহু উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি লেখক হিসেবে খুবই অল্প সময়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তাঁর বিতর্কিত উপন্যাস 'মাধুকরী' দীর্ঘদিন ধরে বেস্টসেলার। ছোটদের জন্য তার প্রথম বই- 'ঋজুদার সঙ্গে জঙ্গলে'। ঋজুদা তাঁর সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় অভিযাত্রিক গোয়েন্দা চরিত্র। আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৭৬ সালে। প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ঋতু গুহ তাঁর স্ত্রী। সুকণ্ঠ বুদ্ধদেব গুহ নিজেও একদা রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। পুরাতনী টপ্পা গানে তিনি অতি পারঙ্গম। টিভি এবং চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে তাঁর একাধিক গল্প উপন্যাস।[৭]
বুদ্ধদেব গুহ 'হলুদ বসন্ত' উপন্যাসের জন্য আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৭৬ সালে। তিনি শিরোমন পুরস্কার এবং শরৎ পুরস্কারেও সম্মানিত হয়েছেন
২৯ আগস্ট ২০২১ রাত ১১টা ২৫মিনিটে মৃত্যু হয় সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলেও কিছু দিন আগে কোভিড ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, একটানা ত্রিশ দিন হাসপাতালে থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেও গিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘকাল যাবৎ মূত্রথলিতে এবং বয়সজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। শ্বাসকষ্ট ও মুত্রনালীর সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে ৩১ জুলাই দক্ষিণ কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন। চারজন চিকিৎসকের একটি বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা হচ্ছিল। তবে চিকিৎসায় তেমন ফল না হওয়ায় তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই ২৯ আগস্ট রবিবার মধ্যরাতের কিছু আগে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই কন্যা রেখে গেছেন। তার স্ত্রী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ঋতু গুহ ২০১১ সালে প্রয়াত হয়েছেন।[১][৯][১০]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.