ইউক্রেন
ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইউক্রেন বা উক্রাইনা (ইউক্রেনীয়: Україна, প্রতিবর্ণীকৃত: Ukraïna উক্রায়িনা আ-ধ্ব-ব: /ukraˈjina/) পূর্ব ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। আয়তনের বিচারে রাশিয়ার পরে এটি ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র; এর আয়তন ৬,০৩,৬২৮ বর্গকিলোমিটার (২৭,০০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ক্রিমিয়া অঞ্চলসহ)। দেশটিতে প্রায় ৪ কোটি ৩৬ লক্ষ অধিবাসীর বাস, ফলে এটি ইউরোপ মহাদেশের ৮ম সর্বোচ্চ জনবহুল দেশ। ইউক্রেনের পশ্চিমে পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি, দক্ষিণ-পশ্চিমে রোমানিয়া ও মলদোভা[lower-alpha 1]), দক্ষিণে কৃষ্ণ সাগর ও আজভ সাগর, পূর্বে ও উত্তর-পূর্বে রাশিয়া এবং উত্তরে বেলারুস। দক্ষিণে ক্রিমিয়া উপদ্বীপে অবস্থিত স্বায়ত্বশাসিত ক্রিমিয়া প্রজাতন্ত্র ইউক্রেনের সীমান্তের মধ্যে পড়েছে।[lower-alpha 2] কিয়েভ ইউক্রেনের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।
ইউক্রেন | |
---|---|
জাতীয় সঙ্গীত: Державний Гімн України Derzhavnyi Himn Ukrainy "State Anthem of Ukraine" | |
| |
রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি | কিয়েভ ৪৯° উত্তর ৩২° পূর্ব |
সরকারি ভাষা | ইউক্রেনীয় |
স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা | |
নৃগোষ্ঠী (২০০১)[3] |
|
ধর্ম (২০১৮)[4] |
|
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | ইউক্রনিয়ান |
সরকার | Unitary semi-presidential republic |
ভলোদিমির জেলেনস্কি | |
• Prime Minister | Denys Shmyhal |
• Chairman of the Verkhovna Rada | Ruslan Stefanchuk |
আইন-সভা | Verkhovna Rada |
Formation | |
• Kievan Rus' | 882 |
• Kingdom of Ruthenia | 1199 |
• Cossack Hetmanate | 18 August 1649 |
• Ukrainian People's Republic | 10 June 1917 |
• Declaration of independence of the Ukrainian People's Republic | 22 January 1918 |
• West Ukrainian People's Republic | 1 November 1918 |
• Act of Unity | 22 January 1919 |
• Withdrawal from the Soviet Union | 24 August 1991 |
• Referendum | 1 December 1991 |
• Current constitution | 28 June 1996 |
১৮ই–২৩ই ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | |
আয়তন | |
• মোট | ৬,০৩,৬২৮ কিমি২ (২,৩৩,০৬২ মা২) (৪৫তম) |
• পানি (%) | ৭ |
জনসংখ্যা | |
• জানুয়ারি ২০২২ আনুমানিক | ৪,১১,৬৭,৩৩৬[6]
(ক্রিমিয়া ও সেভাস্তোপল ব্যতীত) (৩৬তম) |
• ২০০১ আদমশুমারি | ৪,৪৫,৫৭,১০২[3] |
• ঘনত্ব | ৭৩.৮/কিমি২ (১৯১.১/বর্গমাইল) (১১৫তম) |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০২২ আনুমানিক |
• মোট | ৬২,২০০ কোটি মার্কিন ডলার[7] (৪৮তম) |
• মাথাপিছু | ১৫,১২৪ মার্কিন ডলার[7] (108th) |
জিডিপি (মনোনীত) | ২০২২ আনুমানিক |
• মোট | ২০,৪০০ কোটি মার্কিন ডলার[7] (৫৬তম) |
• মাথাপিছু | ৪,৯৫৮ মার্কিন ডলার[7] (১১৯তম) |
জিনি (২০১৯) | 26.6[8] নিম্ন |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৯) | 0.779[9] উচ্চ · ৭৪তম |
মুদ্রা | হ্রিভনিয়া (₴) (UAH) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+২[10] (পূইস) |
ইউটিসি+৩ (পূইগ্রীস (EEST)) | |
গাড়ী চালনার দিক | ডানদিকে |
কলিং কোড | +৩৮০ |
ইন্টারনেট টিএলডি |
|
ইউক্রেনের অধিকাংশ এলাকা কৃষিকাজের উপযোগী উর্বর সমভূমি নিয়ে গঠিত। ইউক্রেন খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। দেশটির অর্থনীতি উন্নত এবং এর কৃষি ও শিল্পখাত যথেষ্ট বড়। ইউক্রেনে একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান যেখানে রাষ্ট্রপতি হলেন সরকারপ্রধান।
ইউক্রেন অঞ্চলটিতে খ্রিস্টপূর্ব ৩২শ শতক আগ পর্যন্ত মানব বসতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। মধ্যযুগে এলাকাটি পূর্ব স্লাভীয় সংস্কৃতির একটি প্রধান কেন্দ্র ছিল। খ্রিস্টীয় ৯ম শতক থেকে ইউক্রেনের উত্তর অংশ কিয়েভান রুশ নামক একটি মুক্ত সংঘের অংশ ছিল, যা পরবর্তীতে ইউক্রেনীয় আত্মপরিচয়ের ভিত্তি স্থাপন করে। কিয়েভান রুশ ছিল প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব স্লাভীয় রাষ্ট্র। ১৩শ শতকে এটি অনেকগুলি উপরাজ্যে ভাগ হয়ে যায় এবং এরপর মঙ্গোলদের আক্রমণে অঞ্চলটি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। এর পর বহু শতাব্দী ধরে ইউক্রেন বিভিন্ন বিদেশী শক্তির দখলে ছিল। এদের মধ্যে আছে পোল্যান্ড-লিথুয়ানিয়া রাষ্ট্রজোট, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্য, উসমানীয় সাম্রাজ্য ও রুশ জার সাম্রাজ্য। ১৭শ ও ১৮শ শতকে এখানে কসাক রাজ্যের উত্থান ঘটলেও পরবর্তীতে তা পোল্যান্ড ও রাশিয়ার মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। রুশ বিপ্লবের পরে ১৯১৮ সালে ইউক্রেনে একটি জাতীয়তাবাদী আত্মনিয়ন্ত্রণবাদী আন্দোলনের জের ধরে এখানে একটি বলশেভিক সাম্যবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় ও ইউক্রেন গণপ্রজাতন্ত্র রাষ্ট্রটি আত্মপ্রকাশ করে। ১৯২২ সালে ইউক্রেনীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের চারটি প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের একটি ছিল। ১৯৯১ সালের ইউক্রেন স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ১লা ডিসেম্বর এক গণভোটে এটির প্রতি ইউক্রেনের জনগণ সমর্থন দেয়। ইউক্রেনের এই ঘোষণা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে একটি বড় ভূমিকা রাখে। স্বাধীনতার পরে ইউক্রেন নিজেকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়।[11] দেশটি রাশিয়া ও অন্যান্য স্বাধীন রাষ্ট্রসংঘের (প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র) সাথে সীমিত সামরিক অংশীদারিত্বে যোগ দেয়। কিন্তু একই সাথে এটি ১৯৯৪ সালে উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোটেও (ন্যাটো) যোগদান করে। ২০১৩ সালে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে চুক্তি মুলতবি করে রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিলে দেশটিতে ইউরোময়দান নামক মিছিল-বিদ্রোহ শুরু হয়, এবং এর জের ধরে মর্যাদারক্ষার বিপ্লব নামক একটি বিপ্লবের মাধ্যমে ইয়ানুকোভিচকে ক্ষমতাচ্যুত করে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ঘটনাগুলির পটভূমিতে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে রাশিয়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপটিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এরপর ২০১৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেনের পূর্বভাগে দোনবাসের যুদ্ধ শুরু করে। ২০১৬ সালে ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের গভীর ও পূর্ণাঙ্গ মুক্ত বাণিজ্য এলাকার অর্থনৈতিক অংশটিতে যোগ দেবার আবেদন করে।[12] ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে।
ইউক্রেন একটি উন্নয়নশীল দেশ; মানব উন্নয়ন সূচকে এর অবস্থান বিশ্বে ৭৪তম। মাথাপিছু মোট জাতীয় উৎপাদনের হিসেবে এটি ইউরোপের দরিদ্রতম রাষ্ট্র; এখানে দারিদ্র্যের হার ও দুর্নীতির পরিমাণ অনেক উচ্চ।[13][14] তবে ব্যাপক উর্বর কৃষিভূমির কারণে ইউক্রেন বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম শস্য রপ্তানিকারক দেশ।[15][16] রাজনৈতিকভাবে ইউক্রেন একটি অর্ধ-রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থাধীন এককেন্দ্রিক প্রজাতন্ত্র যেটিতে বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও আইনপ্রণয়ন বিভাগ তিনটির মধ্যে ক্ষমতার পৃথকীকরণ বিদ্যমান। দেশটি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় পরিষদ, ইউরোপের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থা, গুয়াম সংস্থা, ত্রিপাক্ষিক সংস্থা (মলদোভা ও জর্জিয়ার সাথে) এবং লুবলিন ত্রিভুজ (পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার সাথে) জোটটির সদস্য।
ইউক্রেনের ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। ইউক্রেন প্রাচীনকালে স্কিথিয়ার অংশ ছিল এবং অভিবাসনের যুগে গেটাইরা এখানে বসতি স্থাপন করেছিল। কিয়েভান রাশরা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ইউক্রেন প্রকৃত ইতিহাসে প্রবেশ করে। কিয়েভান রাশরা মধ্যযুগে একটি শক্তিশালী অবস্থায় চলে যায়। কিন্তু ১৩শ শতাব্দীতে মোঙ্গল আক্রমণে এটি টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যায়। চতুর্দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বর্তমান ইউক্রেন তিনটি বিদেশি শক্তির অধীনে আসে, সেগুলো হলো: গোল্ডেন হোর্ড, লিথুয়ানিয়া এবং পোল্যান্ড। পঞ্চদশ শতাব্দীতে এই অঞ্চল ক্রিমিয়ান খানাত এর অধীনে আসে। ১৬৪৮ সালে পোলিশ ক্যাথলিক শাসনের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ হয়। এরপর ১৬৫৪ সালের জানুয়ারিতে স্থানীয় গণপরিষদ (রাদা) পেরেয়স্লাভ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। শীঘ্রই নিপার নদীর পূর্বদিকে অবস্থিত পোলিশ–লিথুয়ানীয় সাম্রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ রুশ শাসনের আধীনে আসে এবং কয়েক শতাব্দীব্যাপী এই অঞ্চলে রুশ শাসন চলতে থাকে। পোল্যান্ড বিভক্তিকরণ ও রাশিয়া কর্তৃক ক্রিমিয়ান খানাত অধিকারের ফলে ইউক্রেন রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে ইউক্রেনে একটি বলশেভিক সাম্যবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়ন এর চারটি প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের অন্যতম প্রজাতন্ত্র হিসাবে ইউক্রেন আত্মপ্রকাশ করে। ইউক্রেন ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ আগস্ট সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন হতে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ওই বছর ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখ এক গণভোটে স্বাধীনতার প্রতি জনগণ সমর্থন দেয়। ইউক্রেনের এই ঘোষণা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে একটি বড় ভূমিকা রাখে। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি ইউক্রেইনের বর্তমান জাতীয় পতাকা গ্রহণ করা হয়। স্বাধীনতা লাভের পর ইউক্রেন দীর্ঘ ৮ বছরব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিমজ্জিত হয়। এরপর থেকে ইউক্রেনের মোট দেশজ আয় অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ২০০৮ সালে ইউক্রেন আবার অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে এবং অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইউক্রেনের রাজনীতি একটি অর্ধ রাষ্ট্রপতি-শাসিত প্রতিনিধিত্বমূলক বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের কাঠামোয় পরিচালিত হয়। নির্বাহী ক্ষমতা মন্ত্রীসভার হাতে ন্যস্ত। আইন প্রণয়ন ক্ষমতা আইনসভার হাতে ন্যস্ত।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ৫ বছর মেয়াদের জন্য জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। পেত্র পোরাশেঙ্কা ২০১৪ সাল থেকে দেশটির রাষ্ট্রপতি ছিলেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি, তিনি ২০১৯ সালের ২০ মে রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৯১ সালে মস্কোর শাসন থেকে নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করেন সোভিয়েত ইউক্রেন প্রজাতন্ত্রের নেতা লিওনার্দ ক্রাভচাক। গণভোট ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইউক্রেনীয়রা স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয় এবং ক্রাভচাককে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। ১৯৯৪ সালে ক্রাভচাককে নির্বাচনে হারিয়ে ক্ষমতায় আসেন লিওনিদ কুচমা। ২০০৪ সালে নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষিত হন রুশপন্থী প্রার্থী ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ। কিন্তু কারচুপির অভিযোগে শুরু হয় বিক্ষোভ যা পরে পরিচিতি পায় অরেঞ্জ রেভলুশন নামে। পুনরায় ভোট গ্রহণে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সাবেক পশ্চিমপন্থী প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ইয়ুশচেনকো। ২০০৫ সালে ইউক্রেনের ক্ষমতা নেন ইয়ুশচেনকো। প্রতিশ্রুতি দেন দেশকে ক্রেমলিন বলয় থেকে বের করে ন্যাটো ও ইইউ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) এর দিকে নিয়ে যাবেন। ২০১৩ সালের নভেম্বরে ইয়ানুকোভিচ সরকার ইইউ-এর সঙ্গে বাণিজ্য ও সংযুক্তির আলোচনা স্থগিত করে এবং রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে। এর ফলে কিয়েভ এ শুরু হয় কয়েক মাসব্যাপী বিক্ষোভ। ২০১৪ সালে সহিংস রূপ নেয় বিক্ষোভ। প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী। ২০১৪ সালের এপ্রিলে পূর্ব অঞ্চল দনবাস এর বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পেত্র পোরাশেঙ্কাকে হারান সাবেক কৌতুক অভিনেতা ভলোদিমির জেলেনস্কি। ২০২১ সালের শেষ দিকে প্রশিক্ষণ অনুশীলনের কথা বলে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে সেনা জড়ো করা শুরু করে রাশিয়া।[17]
ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা
ইউক্রেন শাসিত
রাশিয়া ও রুশপন্থি সেনাদের দ্বারা দখলকৃত
রাশিয়া এবং ইউক্রনের মধ্যে চলমান সংকটটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধে রুপ নিয়েছে। নিচে এ যুদ্ধের কিছু ঘটনা উল্লেখ করা হলো:
১৭ জানুয়ারি: যৌথ মহড়ার লক্ষ্যে ইউক্রেনের উত্তরে বেলারুশে আসা শুরু করে রুশ সশস্ত্র বাহিনী।
২৪ জানুয়ারি: ন্যাটো তাদের সৈন্যদের প্রস্তুত থাকতে বলে এবং পূর্ব ইউরোপে আরও জাহাজ ও যুদ্ধবিমান পাঠায়।
২১ ফেব্রুয়ারি: রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলের স্বাধীনতায় স্বীকৃতি দেয়।
২৪ ফেব্রুয়ারি:ইউক্রেন আক্রমণ করে।[18] এই আক্রমণটিকে আন্তর্জাতিকভাবে আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ইউক্রেন যুদ্ধে এখনো পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ মারা গেছেন ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।[19][20][21] এছাড়া ইউক্রেনের তথ্যমতে,১০ হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছেন ও ৩০ হাজারের অধিক আহত হয়েছেন[22],বিবিসি ও মিডিয়াজোনার মতে,০৯ হাজারের বেশি রুশ সৈন্য নিহত হয়েছেন[23]। এ যুদ্ধটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটের সূত্রপাত করে, ৮.৮ মিলিয়নেরও বেশি ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়েছে,[24] এবং আরও ৭.৭ মিলিয়নের বেশি মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই যুদ্ধটি এখনো চলমান।[17]
ক্ল্যপ্ল্যাভিক ক্র্যাজ বা ক্রাজনা ভাষা হতে ইউক্রেইন শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ ভূমি বা দেশ। অধিকাংশ গবেষক ও ইতিহাসবেত্তা মনে করেন আধুনিক ইউক্রেইন নামটি ইউক্র্যাইনা (ukraina) শব্দ হতে সৃষ্ট। এর অর্থ সীমান্ত বা সীমান্ত ভূমি কিংবা অগ্রযাত্রা। শব্দটি মূলত প্রোটো-শ্যাভিক (Proto-Slavic) ভাষায় ব্যবহৃত ক্র্যাজব্ (krajb) হতে এসেছে। ক্র্যাজ শব্দের অর্থ প্রান্ত, সীমান্ত। রাশিয়ান ভাষায় উকরাইনা (okraina) শব্দের অর্থ শহরতলী এবং ক্র্যাজ (kraj) শব্দের অর্থ সীমান্ত জেলা। তাই অনেকে মনে করেন রাশিয়ান উকরাইনা শব্দ হতে ইউক্রাইন নামের উৎপত্তি হয়েছে। এটি রাশিয়ার সীমান্ত জেলা ছিল।
রুশ ফেডারেশন দ্বারা ক্রিমিয়ার অন্তর্ভুক্তিকরণ-এ ইউক্রেন বিমান সেনার ব্যাপক ক্ষতি হয়। সুখই-২৭ , মিগ্-২৯ বিমানসেনার প্রধান যুদ্ধবিমান।
রাশিয়ার পরে ইউক্রেন হল দ্বিতীয় বৃহত্তম ইউরোপীয় দেশ। অক্ষাংশ ৪৪° এবং ৫৩° উত্তর, এবং দ্রাঘিমাংশ ২২° এবং ৪১° পূর্ব এর মধ্যে অবস্থিত, এটি বেশিরভাগই পূর্ব ইউরোপীয় সমভূমিতে। ইউক্রেন ৬০৩,৬২৮ বর্গ কিলোমিটার (২৩৩,০৬২ বর্গ মাইল) এলাকা জুড়ে ২,৭৮২ কিলোমিটার (১,৭২৯ মাইল) এর উপকূলরেখা সহ।[25]
ইউক্রেনের ল্যান্ডস্কেপ বেশিরভাগই উর্বর সমভূমি (বা স্টেপস) এবং মালভূমি নিয়ে গঠিত, যা ডিনিপার (ডিনিপ্রো), সেভারস্কি ডোনেটস, ডিনিস্টার এবং দক্ষিণে বাগ-এর মতো নদীগুলি অতিক্রম করে, কারণ তারা দক্ষিণে কালো সাগর এবং আজভের ছোট সাগরে প্রবাহিত হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমে, ড্যানিউবের ব-দ্বীপ রোমানিয়ার সাথে সীমানা তৈরি করে। ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলের উচ্চভূমি থেকে নিম্নভূমি পর্যন্ত বিভিন্ন ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দেশের একমাত্র পর্বত হল পশ্চিমে কার্পাথিয়ান পর্বতমালা, যার মধ্যে সর্বোচ্চ হল হোভারলা ২,০৬১ মিটার (৬,৭৬২ ফু) এবং ক্রিমিয়ান পর্বতগুলি, উপকূল বরাবর চরম দক্ষিণে।[26]
ইউক্রেনেও বেশ কয়েকটি উচ্চভূমি অঞ্চল রয়েছে যেমন ভোলিন-পডিলিয়া আপল্যান্ড (পশ্চিমে) এবং নিয়ার-ডিনিপ্রো আপল্যান্ড (ডিনিপারের ডান তীরে)। পূর্বে মধ্য রাশিয়ান উচ্চভূমির দক্ষিণ-পশ্চিম স্পার রয়েছে যা রাশিয়ান ফেডারেশনের সাথে সীমান্ত দিয়ে চলে। আজভ সাগরের কাছে ডোনেট রিজ এবং আজভ উচ্চভূমির কাছাকাছি পাওয়া যায়। পাহাড় থেকে বরফ গলে নদী এবং তাদের জলপ্রপাতগুলিকে খাওয়ায়।[27]
ইউক্রেনের বেশিরভাগই নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু রয়েছে, ক্রিমিয়ার দক্ষিণ উপকূল ব্যতীত যেখানে একটি উপক্রান্তীয় জলবায়ু রয়েছে। জলবায়ু আটলান্টিক মহাসাগর থেকে মাঝারিভাবে উষ্ণ, আর্দ্র বায়ু দ্বারা প্রভাবিত হয়।[28]
ইউক্রেন কৃষিসম্পদে ভরপুর৷ একসময় ইউক্রেনকে সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘রুটির ঝুড়ি' বলা হতো৷ ইউক্রেনে রয়েছে চার কোটি ২০ লক্ষ হেক্টর কৃষিজমি, যেটা পুরো ইউরোপের ২২ ভাগ৷ বাজেটের শতকরা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অর্থ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পকেটে যায় বলে মন্তব্য করেছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ৷ এছাড়া জিডিপি'র ৬১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে মাত্র একশো জন ধনী ব্যক্তি৷
বাইরের বিশ্বের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ইউক্রেনীয় লেখক আন্দ্রেই কুরকোভ বলছেন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দুর্নীতিতে পরিণত হয়েছে৷
জনসংখ্যা সাড়ে চার কোটির একটু বেশি৷
ইউক্রেনে জনসংখ্যায় খারাপ অবস্থা রয়েছে। জাতিসংঘ ধারণা করছে ২১০০ সাল নাগাদ এদেশে যথাক্রমে ৩৬ শতাংশ জনসংখ্যা কমতে পারে। অভিবাসী না আসা ও অপর্যাপ্ত উপার্জন অঞ্চলটির জনসংখ্যা কমার প্রধান দুটি কারণ। [29]
ইউক্রেন যদিও প্রায়শই তার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সংগ্রাম করেছে কিন্তু দেশটির জনগণ তাদের সাংস্কৃতিক সম্পদ ধরে রেখেছে। দেশের সাহিত্য ইতিহাসে অসংখ্য লেখক অবদান রেখেছেন যেমন তারাস শেভচেঙ্কো এবং ইভান ফ্রাঙ্কো। ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউক্রেনীয় সংস্কৃতি একটি উল্লেখযোগ্য পুনরুত্থানের সম্মুখীন হয়েছে।
আধুনিক ইউক্রেনীয় সংস্কৃতি কিয়েভ কেন্দ্রিক প্রাচীন রাজ্য কিভান রুসের বংশধর হিসেবে গড়ে উঠেছে বলে মনে করা হয় এবং সেইসাথে গ্যালিসিয়া- ভোলহিনিয়া রাজ্যের বংশধর হিসেবে বিবেচিত হয়, উভয়ই ইউক্রেনীয়রা তাদের ঐতিহাসিক পূর্বপুরুষ বলে দাবি করে। তাই, বেলারুশিয়ান এবং রাশিয়ানদের মতো প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে এর একটি ভাগ করা সংস্কৃতি এবং ইতিহাস রয়েছে। ইউক্রেনীয় ইতিহাসবিদ, ইউক্রেনীয় গণপ্রজাতন্ত্রের শিক্ষাবিদ এবং রাজনীতিবিদ, মাইখাইলো হ্রুশেভস্কি ইউক্রেনকে ইউক্রেন- রাস হিসাবে উল্লেখ করেছেন,কিয়েভান রাসের প্রাচীন রাষ্ট্রের কাছে ইউক্রেনের ঐতিহাসিক দাবির উপর জোর দিয়েছেন।
ঐতিহ্যবাহী কৃষক লোকশিল্প, সূচিকর্ম এবং স্থানীয় স্থাপত্য ইউক্রেনীয় সংস্কৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির লোকশিল্প এবং সূচিকর্মের শক্তিশালী ঐতিহ্য আজও অব্যাহত রয়েছে, ইউক্রেনীয় সূচিকর্ম প্রায়শই একটি শিল্প ফর্ম হিসাবে বিবেচিত হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.