পাথুরিয়াঘাটা
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পাথুরিয়াঘাটা হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা শহরের উত্তরাংশের একটি অঞ্চল। এটি প্রাচীন সুতানুটির একটি জনবসতি এলাকা ছিল। এক সময় ধনী বাঙালিরা এই অঞ্চলে বাস করতেন। বর্তমানে এটি মূলত মাড়োয়ারি অধ্যুষিত অঞ্চল। এই অঞ্চলে ব্রিটিশ আমলের অনেক বাড়ি দেখা যায়।
পাথুরিয়াঘাটা | |
---|---|
কলকাতার অঞ্চল | |
![]() পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট | |
স্থানাঙ্ক: ২৩.৮° উত্তর ৮৮.২৫° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
শহর | কলকাতা |
কলকাতা পৌরসংস্থার ওয়ার্ড | ২৪ |
স্টেশন | গিরিশ পার্ক |
উচ্চতা | ৩৬ ফুট (১১ মিটার) |
জনসংখ্যা (২০০১) | |
• মোট | ১৯,৫৬১ |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+৫:৩০) |
পিন কোড | ৭০০ ০০৬ |
এলাকা কোড | +৯১ ৩৩ |


ঠাকুর পরিবার
সারাংশ
প্রসঙ্গ
পাথুরিয়াঘাটা অঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন ও প্রভাবশালী বাসিন্দা ছিলেন ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা। ১৮শ শতাব্দীতে ইংরেজরা গোবিন্দপুর অঞ্চলে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণের কাজ শুরু করলে জয়রাম ঠাকুর সেখান থেকে পাথুরিয়াঘাটায় চলে আসেন। তিনি ব্যবসা ও চন্দনগরের ফরাসি সরকারের দেওয়ানের কাজ করে প্রভূত অর্থ উপার্জন করেছিলেন। তাঁর পুত্র দর্পনারায়ণ ঠাকুরকে (১৭৩১-১৭৯৩) অনেকে ঠাকুর পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা মনে করেন। কলকাতা পৌরসংস্থার ২১ নং ওয়ার্ডে মহর্ষি দেবেন্দ্র রোড ও যদুলাল মল্লিক রোডের মধ্যবর্তী এলাকায় তাঁর নামে একটি রাস্তা আছে। এটি জোড়াবাগান থানার অধীনে পড়ে।[১][২] ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা পাথুরিয়াঘাটা, জোড়াসাঁকো, কয়লাহাটা ও চোরবাগানে বাড়ি করেছিলেন। এই সবকটিই উত্তর কলকাতায় অবস্থিত।[৩]
পাথুরিয়াঘাটা ঠাকুর পরিবারের কয়েক জন বিশিষ্ট সদস্য হলেন হরকুমার ঠাকুর (১৭৯৮-১৮৫৮), প্রসন্নকুমার ঠাকুর (১৮০১-১৮৮৬), যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর (১৮৩১-১৯০৮) ও প্রদ্যোৎকুমার ঠাকুর (১৯৭৩-১৯৪২)। নাপেহাটায় প্রসন্নকুমার ঠাকুর একটি বিরাট বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। এই বাড়িটি লোকমুখে ‘টেগোল প্যালেস’ নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে এই বাড়িটির ঠিকানা ১৩, ১৩এ ও ১৩বি প্রসন্নকুমার ঠাকুর স্ট্রিট। ২৬ নং প্রসন্নকুমার স্ট্রিটের ‘টেগোর কাসল’ বাড়িটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। তিনি ভারতীয় শৈলীর পরিবর্তে ইংরেজ দুর্গের আকারে এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। বাড়িটিতে ইংল্যান্ডের উইন্ডসর কাসলের আদলে ১০০ ফুট (৩০ মিটার) উঁচু একটি কেন্দ্রীয় মিনার রয়েছে। ইংল্যান্ডের বিগ বেন টাওয়ারের ঘড়ির মতো একটি ঘড়িও তিনি আমদানি করেছিলেন। এমনকি এই দুর্গে ইউনিয়ন জ্যাক ওড়ানোর অনুমতিও তিনি আদায় করেছিলেন। ১৯৫৪ সালে এস. বি. হাউস অ্যান্ড ল্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেডের হরিদাস মুন্ধ্রা এই বাড়িটি অধিগ্রহণ করেন। তারপর থেকে এই বাড়িটিতে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে।[৪]
বঙ্গ নাট্যালয়
টেগোর কাসলে একটি নাট্যমঞ্চ ছিল। ঠাকুর পরিবার ১৮৫৯ থেকে ১৮৭২ সাল পর্যন্ত বঙ্গ নাট্যালয় পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর ও তাঁর ভাই সুরেন্দ্রমোহন ঠাকুর এই নাট্যালয় স্থাপন করেন। এঁরা দুজনেই নাট্যানুরাগী ছিলেন। ১৮৫৯ সালের জুলাই মাসে এই নাট্যমঞ্চে সংস্কৃতে কালিদাসেরমালবিকাগ্নিমিত্রম্ নাটকটি অভিনীত হয়। এটিই ছিল এই মঞ্চে অভিনীত প্রথম নাটক।[৫]
সংবাদ প্রভাকর
পাথুরিয়াঘাটার যোগেন্দ্রমোহন ঠাকুর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তকে সংবাদ প্রভাকর চালু করতে সাহায্য করেছিলেন। ১৮৩১ সালের ২৮ জানুয়ারি এই সাপ্তাহিক সংবাদপত্রটি প্রথম প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে এটি দৈনিক সংবাদপত্রে পরিণত হয় এবং আধুনিক বাঙালি সমাজ গঠনে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।[৬]
মল্লিক পরিবার
প্রসন্নকুমার ঠাকুর স্ট্রিটে টেগোর কাসলের কাছেই ছিল মল্লিক পরিবারের বাড়ি। এই বাড়ির কাছেই ১৮৮৭ সালে স্থাপিত হয়েছিল মেট্রোপলিটান স্কুলের বড়বাজার শাখা।[৭] মল্লিক পরিবারের যদুলাল মল্লিক (১৮৪৪-১৮৯৪) সমাজ ও আইন ক্ষেত্রে বহু অবদান রেখেছিলেন। তিনি ওরিয়েন্টাল সেমিনারি থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। এই স্কুলের উন্নতিকল্পে তিনি প্রভূত অর্থ দান করেছিলেন।[৮] পাথুরিয়াঘাটায় যদুলাল মল্লিকের নামে একটি রাস্তাও আছে। তাঁর পুত্র মন্মথনাথ মল্লিক আলিপুর পশুশালা থেকে দুটি জেব্রা এনেছিলেন কলকাতার রাস্তায় তাঁর গাড়ি টানার জন্য। তাঁর নয়টি গাড়ি ও প্রচুর ঘোড়া ছিল। যদুলাল মল্লিকের পৌত্র প্রদ্যুম্নকুমার মল্লিকের ৩৫টি গাড়ি ছিল। এর মধ্যে ১০টি ছিল রোলস রয়েস। মল্লিক পরিবার দাতব্য ক্ষেত্রেও প্রচুর দানধ্যান করেছিল।[৯]
ঘোষ পরিবার
পাথুরিয়াঘাটায় ঘোষ পরিবারের বাস ওয়ারেন হেস্টিংসের সময় থেকে। কথিত আছে হেস্টিংস ও তাঁর পত্নী ঘোষ বাড়িতে এসেছিলেন।[১০] হেস্টিংসের করণিক রামলোচন ঘোষের নাতি খেলাতচন্দ্র ঘোষ (১৮২৯-১৮৭৮) ৪৬ পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট থেকে পরিবারের বাস উঠিয়ে নিয়ে যান ৪৭ পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের নতুন বাড়িতে। সংগীত ও দাতব্য ক্ষেত্রে এই পরিবারের বিশেষ অবদান আছে। ২৪ নং ওয়ার্ডে খেলাতচন্দ্র ঘোষের নামে একটি রাস্তাও আছে। ৪৭ পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের ঘোষ পরিবারের উত্তরসূরিরা হলেন খেলাতচন্দ্র ঘোষ, রমানাথ ঘোষ, সিদ্ধেশ্বর ঘোষ (যিনি লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে অর্থসাহায্য করেন) ও তাঁর ভাই অক্ষয় ঘোষ। বর্তমানে এই বাড়িতে প্রদীপ ঘোষের পৃষ্ঠপোষকতায় সারা বাংলা সংগীত সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। [১১]
ঘোষ পরিবারের ৪৬ পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বাড়িতেও ১৯৩৭ সালে সারা বাংলা সংগীত সম্মেলন শুরু হয়। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত সেই সময় বেশ জনপ্রিয় ছিল। শুধুমাত্র বাইজিরাই তখন প্রকাশ্যে গান গাইতেন। মন্মথনাথ ঘোষ (১৯০৮-১৯৮৩) প্রথম পৃষ্ঠপোষকতা করে হিরাবাই বারোদেকর নামে এক বিশিষ্ট সংগীতশিল্পীকে তাঁর বাড়িতে ডেকে আনেন। সেতার বাদক রবি শংকর ও তাঁর গুরু আলাউদ্দিন খানও এখানে সংগীত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই বাড়িতে এখনও মহাসমারোহে দুর্গাপূজা হয়ে থাকে।[১২]
জনপরিসংখ্যান
পাথুরিয়াঘাটা এলাকাটি কলকাতা পৌরসংস্থার ২৪ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত। ২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে, এই অঞ্চলের জনসংখ্যা ১৯,৫৬১। এর মধ্যে ১১,৭৬২ জন পুরুষ ও ৭,৭৯৯ জন মহিলা। ওয়ার্ডটি কলকাতা পুলিশের জোড়াবাগান থানার অন্তর্গত।[১৩][১৪]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.