Loading AI tools
বাঙালি নাট্যকার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
দীনবন্ধু মিত্র (১০ এপ্রিল ১৮৩০ – ১ নভেম্বর ১৮৭৩) ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার। বাংলার আধুনিক নাট্যধারার প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্তের সমসাময়িক দীনবন্ধু মিত্র অবশ্য মাইকেল প্রবর্তিত পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক নাট্যরচনার পথে না গিয়ে বাস্তবধর্মী সামাজিক নাট্যরচনায় মনোনিবেশ করেন। এই ধারায় তিনিই হয়ে ওঠেন পরবর্তীকালের নাট্যকারদের আদর্শস্থানীয়।
দীনবন্ধু মিত্র | |
---|---|
জন্ম | গন্ধর্ব নারায়ণ ১০এপ্রিল ১৮৩০ চৌবেড়িয়া, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু | ১ নভেম্বর ১৮৭৩ ৪২–৪৩) ব্রিটিশ ভারত | (বয়স
পেশা | নাট্যকার, কবি |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত |
সময়কাল | বাংলার নবজাগরণ |
ধরন | নাটক, কাব্য |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | নীলদর্পণ, নবীন তপস্বিনী, সধবার একাদশী, বিয়ে পাগলা বুড়ো, জামাই বারিক, কমলে কামিনী, দ্বাদশ কবিতা, সুরধুনী কাব্য |
দীনবন্ধু মিত্রের প্রথম নাটক নীলদর্পণ প্রকাশিত হয় ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা থেকে। এর পরে ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় নাটক নবীন তপস্বিনী। এ নাটকটি তিনি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে উৎসর্গ করেন। দীনবন্ধু মিত্র-এর দুটি উৎকৃষ্ট প্রহসন হলো সধবার একাদশী ও বিয়ে পাগলা বুড়ো। ইংরেজি শিক্ষিত নব্য যুবকদের মদ্যপান ও বারবণিতাকে উপহাস করে রচিত প্রহসন ‘সধবার একাদশী’। ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর অপর এক প্রহসন জামাই বারিক প্রকাশিত হয়। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর সর্বশেষ নাটক কমলে কামিনী। নাটক ছাড়াও দুটি কাব্যগ্রন্থও দীনবন্ধু রচনা করেছিলেন – দ্বাদশ কবিতা (১৮৭২) ও সুরধুনী কাব্য (প্রথম ভাগ – ১৮৭১ ও দ্বিতীয় ভাগ – ১৮৭৬)।
দীনবন্ধু মিত্রের জন্ম উত্তর ২৪ পরগণা জেলার চৌবেরিয়ায়। যে সময় দীনবন্ধু মিত্র জন্মগ্রহণ করেন উত্তর ২৪ পরগণা জেলার চৌবেড়িয়া গ্রামে, সে সময় এই স্থানটি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অংশ ছিল না, এটি নদীয়া জেলার অংশ ছিল। এই চৌবেড়িয়া গ্রামের চারদিক নদী বেষ্টিত ছিল, তাই এই স্থানের নাম চৌবেড়িয়া। তার পিতামাতা তার নাম রেখেছিলেন গন্ধর্ব নারায়ন মিত্র। পিতামাতার মনে স্বপ্ন ছিল, এই ছেলে একদিন কিছু অসম্ভব কাজ করবে এই হতদরিদ্র গ্রামের মানুষের জন্য, এই বাংলার মানুষের জন্য। পিতা হলেন কালাচাঁদ মিত্র। দরিদ্র পরিবারে জাত দীনবন্ধুর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রাম্য পাঠশালায়। সেখানে কিছুদিন পাঠগ্রহণের পর তার পিতা তাকে জমিদারের সেরেস্তার কাজে নিযুক্ত করে দেন।
দীনবন্ধু মিত্র বিদ্যোৎসাহী ছিলেন। তাই তিনি কলকাতায় পালিয়ে আসেন এবং পিতৃব্যের গৃহে বাসন মেজে লেখাপড়া চালিয়ে যান। এই সময়েই দীনবন্ধু নাম গ্রহণ করে জেমস লঙের অবৈতনিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পরে কলুটোলা ব্রাঞ্চ স্কুল (বর্তমানে হেয়ার স্কুল) থেকে ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে স্কুলের শেষ পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তি লাভ করে হিন্দু কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে) ভর্তি হন। ১৮৫১ সালে আবার উচ্চতর পরীক্ষায় বৃত্তিলাভ করেন এবং ১৮৫২ সালে তৃতীয় শ্রেণি থেকে সিনিয়র বৃত্তিলাভ করেন। প্রত্যেক পরীক্ষায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনিই সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করেছিলেন। এরপর সম্ভবত কোথাও শিক্ষকতা করেছিলেন দীনবন্ধু, কারণ ১৮৫৩ সালে তিনি টিচারশিপ একজামিনেশনে কৃতকার্য হয়েছিলেন।[1] কলেজের সব পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে।
দীনবন্ধু মিত্র ১৮৫৫ সালে ১৫০ টাকা বেতনে পাটনায় পোস্টমাস্টার নিযুক্ত হন। ক্রমে তাঁর পদোন্নতি হয় এবং তিনি ওড়িশা, নদিয়া ও ঢাকা বিভাগে এবং পরে কলকাতায় সুপারিনটেন্ডেন্ট পোস্টমাস্টার নিযুক্ত হন।[2] লুসাই যুদ্ধের সময় ডাক বিভাগের কাজে তিনি কাছাড়ে প্রেরিত হন। এই সময় তাঁর তদারকি কর্মে সন্তুষ্ট হয়ে সরকার তাঁকে রায়বাহাদুর উপাধি দান করেন। যদিও ডাক বিভাগের উচ্চস্তরের কর্মচারী হয়েও উপযুক্ত বেতন তিনি পাননি।
ঈশ্বর গুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় কবিতা লেখার মধ্য দিয়েই তাঁর সাহিত্য জীবনের সূত্রপাত ঘটে। পরে ‘সংবাদ সাধুরঞ্জন’ পত্রিকাতেও লিখতে শুরু করেন তিনি।
দীনবন্ধু মিত্রের প্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ নাটক নীলদর্পণ বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ পরিচিত নাটক। স্বাদেশিকতা, নীল বিদ্রোহ ও সমসাময়িক বাংলার সমাজব্যবস্থার সঙ্গে এই নাটকের যোগাযোগ অত্যন্ত গভীর। এই নাটকটি তিনি রচনা করেছিলেন নীলকর-বিষধর-দংশন-কাতর-প্রজানিকর-ক্ষেমঙ্করেণ-কেনচিৎ-পথিক ছদ্মনামে। যদিও এই নাটকই তাঁকে খ্যাতি ও সম্মানের চূড়ান্ত শীর্ষে উন্নীত করে। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায়,
“ | ‘নীলদর্পণ’ নাটক প্রকাশিত হলে এবং এর ইংরেজি অনুবাদ প্রচারিত হলে একদিনেই এ নাটক বাঙালি মহলে যতটা প্রশংসিত হয়েছিল, শ্বেতাঙ্গ মহলে ঠিক ততটাই ঘৃণিত হয়েছিল। এই নাটক অবলম্বন করে বাঙালির স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের সূচনা, এই নাটক সম্বন্ধে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় ও রায়তদের মধ্যে মৈত্রী বন্ধন স্থাপিত হয়, এর মধ্যে দিয়েই শ্বেতাঙ্গ নীলকরদের বর্বর চরিত্র উদ্ঘাটিত হয়।[3] | ” |
মনে করা হয়ে থাকে, নীলদর্পণ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তবে আধুনিক গবেষকগণ এই বিষয়ে একমত নন।[4] এই অনুবাদ Nil Durpan, বা The Indigo Planting Mirror নামে প্রকাশ করেছিলেন রেভারেন্ড জেমস লঙ। এই অনুবাদ প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে দেশে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং জেমস লঙের জরিমানা ও কারাদণ্ড হয়। জরিমানার টাকা আদালতেই দিয়ে দেন কালীপ্রসন্ন সিংহ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এটিই প্রথম বাংলা নাটক যা ইংরেজিতে অনূদিত হয়।
নীলদর্পণ নাটকের মূল উপজীব্য বিষয় হল বাঙালি কৃষক ও ভদ্রলোক শ্রেণির প্রতি নীলকর সাহেবদের অকথ্য অত্যাচারের কাহিনী। কীভাবে সম্পন্ন কৃষক গোলোকমাধবের পরিবার নীলকর অত্যাচারে ধ্বংস হয়ে গেল এবং সাধুচরণের কন্যা ক্ষেত্রমণির মৃত্যু হল, তার এক মর্মস্পর্শী চিত্র অঙ্কিত হয়েছে এই নাটকে। তোরাপ চরিত্রটি এই নাটকের অত্যন্ত শক্তিশালী এক চরিত্র; বাংলা সাহিত্যে এর তুলনা খুব কমই আছে। এই নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য আঞ্চলিক ভাষার সাবলীল প্রয়োগ। কর্মসূত্রে পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় যে দক্ষতা দীনবন্ধু আয়ত্ত করেছিলেন, তারই এক ঝলক দেখা মেলে এই নাটকের জীবন্ত চরিত্র চিত্রণে।
নীলদর্পণ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে প্রেরিত হয়। স্বদেশে ও বিদেশে নীলকরদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। ফলে সরকার ইন্ডিগো কমিশন বা নীল কমিশন বসাতে বাধ্য হন। আইন করে নীলকরদের বর্বরতা বন্ধের ব্যবস্থা করা হয়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পরবর্তীকালে এই নাটকের সঙ্গে হ্যারিয়েট স্টো-এর আঙ্কল টমস্ কেবিন গ্রন্থের তুলনা করেছিলেন।[5] তা থেকেই বোঝা যায়, সেই সময়কার বাংলা সাহিত্য ও বাঙালির সমাজজীবনে এই নাটক কি গভীর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। সমাজের তৃণমূল স্তরের মানুষজনের জীবনকথা এমনই স্বার্থক ও গভীরভাবে নীলদর্পণ নাটকে প্রতিফলিত হয়েছে যে অনেকেই এই নাটককে বাংলার প্রথম গণনাটক হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। আবার বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা বলে এই নাটকই প্রথম জাতির জীবনে জাতীয়তাবোধের সঞ্চার ঘটিয়েছিল। এই নাটকের অভিনয় দেখতে এসে রোগ সাহেবের চরিত্রের অভিনেতা অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফীর উপর ক্রোধে বিদ্যাসাগর চটি ছুঁড়ে মেরেছিলেন বলে শোনা যায়।
যদিও সামগ্রিকভাবে এই নাটকের কিছু আঙ্গিকগত ত্রুটিও সমালোচকদের দৃষ্টি এড়ায়নি। যেমন এই নাটকে চরিত্রে অন্তর্দ্বন্দ্ব বড় একটা দৃষ্টিগোচর হয় না। বহির্সংঘাতের আধিপত্যে কোনও চরিত্রই বিকাশশীল হয়ে উঠতে পারেনি। নাট্যকাহিনিতেও যথোপযুক্ত জটিলতা না থাকার কারণে নাটকটি দর্শকমহলে তদনুরূপ আগ্রহ ধরে রাখতে পারেনি। সমাজের নিচু তলার বাসিন্দাদের ছবি এই নাটকে অত্যন্ত জীবন্ত হলেও ভদ্রলোক শ্রেণীর চরিত্রগুলির আচরণ ও সংলাপ এখানে বড় কৃত্রিম। এছাড়াও ট্রাজেডি রচনায় যে সংযম ও বিচক্ষণতা প্রত্যাশিত, দীনবন্ধু তার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে আতিশায্যের আশ্রয় নিয়ে ফেলেন। ফলে নাটকের অনেক অংশই মেলোড্রামাটিক বা অতিনাটকীয়তার দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে। যার কারণে যথার্থ ট্র্যাজেডি হিসাবে গণ্য হওয়ার যোগ্যতা হারায় নীলদর্পণ।
দীনবন্ধু মিত্রের দ্বিতীয় নাটক নবীন তপস্বিনী। এই নাটকে তার সমসাময়িক মধুসূদনের প্রভাব বহুলাংশে চোখে পড়ে। যদিও এই নাটকের নাট্যবস্তু নেহাতই মামুলি – কতকটা রূপকথার তুল্য। রাজা রমণীমোহন মাতা ও দ্বিতীয়া পত্নীর প্ররোচনায় জ্যেষ্ঠা মহিষীকে পরিত্যাগ করলে গর্ভবতী রানি গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাসিনীর জীবন অবলম্বন করেন। যথাকালে তার বিজয় নামে এক পুত্রসন্তান জন্মে। বয়ঃপ্রাপ্ত হলে বিজয় সভাপণ্ডিত বিদ্যাভূষণের কন্যা কামিনীর প্রেমে পড়ে। এদিকে কামিনীর সহিত রাজা রমণীমোহনের বিবাহের তোড়জোড় চলছিল। ঘটনাচক্রে বিজয়ের পিতৃপরিচয় উন্মোচিত হল। রাজা জ্যেষ্ঠা মহিষীর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তাকে ঘরে ফিরিয়ে আনলেন। বিজয় ও কামিনীর শুভ পরিণয় সম্পন্ন হল। নবীন তপস্বিনী অত্যন্ত অপরিণত এক নাট্যরচনা। কাহিনির উপযুক্ত পরিবেশ রচনা করতে না পারায় সমগ্র বিষয়টিই এখানে কৃত্রিমতায় পর্যবসিত। এমনকি যার নামে এই নাটকের নামকরণ ‘নবীন তপস্বিনী’, সেই কামিনীর চরিত্রটি পর্যন্ত নাটকে যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। দীর্ঘ ক্লান্তিকর বক্তৃতা ও মাঝে মাঝে পয়ার ও সংস্কৃত শ্লোকের ব্যবহার নাটকের গতি শ্লথ করেছে। একমাত্র জলধরের কৌতুকরস এই নাটকের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, যদিও এটি শেক্সপিয়রের হলফাস্টের অনুকরণের রচিত।
দীনবন্ধু মিত্রের দ্বিতীয় রোম্যান্টিক নাটক কমলে-কামিনী তার জীবনের শেষ নাট্যকীর্তিও বটে। এই নাটক রচনার অব্যবহিত পূর্বে কর্মসূত্রে দীনবন্ধু কাছাড়-মণিপুর অঞ্চলে কিছুদিন অতিবাহিত করেন। সেই অঞ্চলের পটভূমিকায় এক কাল্পনিক কাহিনির আধারে কমলে-কামিনী রচিত। কাছাড়ের রাজসিংহাসনে ব্রহ্মরাজের শ্যালক অধিষ্ঠিত হলে মণিপুররাজের সহিত ব্রহ্মরাজের যুদ্ধ আরম্ভ হয়। এই সময়ে মণিপুররাজ শিখণ্ডীবাহনের প্রেমে পড়েন ব্রহ্মরাজকুমারী রণকল্যাণী। এই প্রেমকাহিনিই মূল নাটকের উপজীব্য। এই নাটকে এমন কিছু নাট্যদৃশ্য আছে যা মঞ্চে অভিনয় করা দুরূহ। আবার হাস্যরস সৃষ্টিতেও দীনবন্ধুর ব্যর্থতা এই নাটকের নাট্যরস অনেকাংশে ক্ষুণ্ণ করেছে।
লীলাবতী একটি সামাজিক নাটক। এর কাহিনীজাল অত্যন্ত জটিল। কলকাতার সম্পন্ন গৃহস্থ হরিবিলাস চট্টোপাধ্যায় ও তার সন্তানদের দ্বন্দ্ব জটিল জীবনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে এই কাহিনী। ললিত ও লীলাবতীর প্রণয় কথাই নাটকের মূল উপজীব্য। তবে সাধারণ নাগরিক জীবনের এমন রোম্যান্টিক উপস্থাপনায় নাটকের বাস্তবতা আদৌ রক্ষিত হয়নি। যদিও এই নাটকে বিষয়বস্তুর রহস্যঘনতা আছে, সংঘাত ও আকস্মিকতা আছে, এমনকি শেষের দিকে যথেষ্ট গতিও সঞ্চারিত হয়েছে। কিন্তু আদিরসভিত্তিক কাহিনী ও রসসৃষ্টির ব্যর্থতাই শেষ পর্যন্ত কাহিনীকে স্বার্থকতাদান থেকে বঞ্চিত করেছে।
বিয়ে পাগলা বুড়ো (১৮৬৬) নাটকটি ১৮৭২ সালে প্রথম মঞ্চস্থ হয়। এটি সমাজের প্রাচীনপন্থীদের ব্যঙ্গ করে রচিত। এ প্রহসনে বিবাহবাতিকগ্রস্ত এক বৃদ্ধের নকল বিয়ের আয়োজন করে স্কুলের অপরিপক্ব ছেলেরা কীভাবে তাকে নাস্তানাবুদ করে, সে কাহিনিই এ প্রহসনের বিষয়। সধবার একাদশী ১৮৬৬ সালে প্রকাশিত একটি প্রহসন। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে সুরা পান ও বেশ্যা বৃত্তি যুবকদের জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। এই সামজিক বিপর্যয়ের কাহিনী অবলম্বনে প্রহসনটি রচিত। তার রচিত আরেকটি প্রহসন হল জামাই বারিক (১৮৭২)।
সুরধনী কাব্য (১ম ভাগ ১৮৭১ ও ২য় ভাগ ১৮৭৬)
দ্বাদশ কবিতা (১৮৭২)
দীনবন্ধু মিত্র সাতটি নাটক ও প্রহসন লিখেছিলেন। ‘নীলদর্পণ’(১৮৬০), ‘নবীন তপস্বিনী’(১৮৬৩), ‘কমলে কামিনী’(১৮৭৩)- এই তিনটি তাঁর গভীর রসের নাটক।
আর চারটি প্রহসন হল ‘বিয়ে পাগলা বুড়ো’(১৮৬৬), ‘সধবার একাদশী’(১৮৬৬) ‘লীলাবতী’(১৮৬৭), ‘জামাই বারিক’(১৮৭২) । এর মধ্যে ‘সধবার একাদশী’ তাঁর ও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটক।[6]
দীনবন্ধু মিত্র অতিরিক্ত পরিশ্রমে স্বাস্থ্যহানিজনিত কারণে ১৮৭৩ সালের ১ নভেম্বর মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.