মুম্বই
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের রাজধানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের রাজধানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মুম্বই (মারাঠি: मुंबई; ইংরেজি: /mʊmˈbaɪ/ ( ), টেমপ্লেট:IPA-mr) (পূর্বনাম বোম্বাই বা বম্বে অথবা বোম্বে) ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের রাজধানী। মুম্বই ভারতের সর্বাধিক জনবহুল শহর এবং বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল শহরগুলিরও অন্যতম। এই শহরের জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি চল্লিশ লক্ষ।[1] নবি মুম্বই ও থানে সহ মুম্বাই মহানগরীয় অঞ্চল বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল মহানগরীয় অঞ্চলগুলির অন্যতমও বটে।[2] ভারতের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত মুম্বই একটি স্বাভাবিক সমুদ্রবন্দর। ২০০৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, এই শহর আলফা বিশ্ব নগরী হিসেবে ঘোষিত।[3]
মুম্বই मुंबई বোম্বে | |
---|---|
মহানগরী | |
ব্যাক বে জুড়ে মুম্বইয়ের দিগন্ত রূপরেখা | |
স্থানাঙ্ক: ১৮°৫৮′৩০″ উত্তর ৭২°৪৯′৩৩″ পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | মহারাষ্ট্র |
জেলা | মুম্বই শহর জেলা মুম্বই উপনগরী জেলা |
স্থাপনকাল | ১৫০৭ |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসংস্থা |
• শাসক | বৃহত্তর মুম্বই মহানগর পালিকা (বিএমসি) |
• মহাপৌর | সুনীল প্রভু (শিবসেনা) |
• পৌরসংস্থার কমিশনার | অজয় মেহতা |
আয়তন মুম্বাই ভারতের সবচেয়ে বড় মহানগরী | |
• মহানগরী | ৬০৩ বর্গকিমি (২৩৩ বর্গমাইল) |
• মহানগর | ৪,৩৫৫ বর্গকিমি (১,৬৮১.৫ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ১৪ মিটার (৪৬ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মহানগরী | ১,৩৮,৩০,৮৮৪ |
• ক্রম | ১ম |
• জনঘনত্ব | ২২,৯৩৭/বর্গকিমি (৫৯,৪১০/বর্গমাইল) |
• মহানগর | ১,৮৪,১৪,২৮৮ ২,০৭,৪৮,৩৯৫(Extended UA) |
• মেট্রো র্যাংক | ১ম |
বিশেষণ | মুম্বাইকর |
সময় অঞ্চল | ভারত মান সময় (ইউটিসি+৫:৩০) |
ডাকঘর ক্রমাঙ্ক | ৪০০০০১-১০৭ |
যানবাহন নিবন্ধন | এমএইচ-০১,০২,০৩,৪৭ |
যে সাতটি দ্বীপকে কেন্দ্র করে আধুনিক মুম্বই মহানগরী গড়ে উঠেছে, সুদূর অতীতে সেই সাতটি দ্বীপ ছিল মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের বসতি। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে এই দ্বীপগুলি নানান দেশীয় রাজ্য ও সাম্রাজ্যের অধীনস্থ ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে মুম্বাই একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য নগরী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এই শহরের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদে বোম্বাই ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উল্লেখযোগ্য ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পর বোম্বাই শহর তদনীন্তন বোম্বাই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৬০ সালে সংযুক্ত মহারাষ্ট্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন রাজ্য মহারাষ্ট্র গঠিত হলে বোম্বাই উক্ত রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত হয়। ১৯৯৫ সালে শহরের নাম পরিবর্তিত করে মুম্বই রাখা হয়।[4]
মুম্বাই ভারতের বাণিজ্য ও বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র। দেশের ৫ শতাংশ জিডিপি এই শহর থেকেই উৎপাদিত হয়।[5] এছাড়া ভারতীয় অর্থনীতির ২৫ শতাংশ শিল্প উৎপাদন, ৪০ শতাংশ সমুদ্রবাণিজ্য ও ৭০ শতাংশ পুঁজি লেনদেন মুম্বাইতেই সাধিত হয়।[6] ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ, ভারতের জাতীয় স্টক এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সংস্থা এবং বিভিন্ন ভারতীয় কোম্পানি ও বহুজাতিক সংস্থার প্রধান কার্যালয় এই শহরেই অবস্থিত। বলিউড নামে পরিচিত ভারতের হিন্দি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন শিল্পকেন্দ্রটিও এই শহরে অবস্থিত। মুম্বইয়ের ব্যবসাগত সুযোগসুবিধা এবং এখানকার জীবনযাত্রার উচ্চ মান সমগ্র দেশের মানুষকে আকৃষ্ট করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে এই শহরে বসবাস শুরু করেন। ফলে মুম্বই বর্তমানে ভারতের নানা সম্প্রদায় ও ভারতীয় সংস্কৃতির মহামিলনভূমিতে পরিণত হয়েছে।
মুম্বই শব্দটির প্রচলন হয় স্থানীয় মারাঠিদের উচ্চারণবিকৃতি থেকে। তারা মারাঠি ভাষায় বোম্বাই শব্দটি উচ্চারণ করতে পারতেন না।[7] বোম্বাই কথাটির উদ্ভব হয় খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে এই অঞ্চলে পর্তুগিজদের আগমনের পর। তারা এই অঞ্চলকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করতেন। এই নামগুলির মধ্য থেকে বোম্বাইম (Bombaim) কথাটি লেখ্য আকারে প্রচলন লাভ করে। পর্তুগিজ ভাষায় শব্দটি আজও প্রচলিত।[8] সপ্তদশ শতাব্দীতে ব্রিটিশরা এই অঞ্চলের অধিকার অর্জন করে। মনে করা হয়, শহরের বোম্বাই নামটি পর্তুগিজ বোম্বাইম শব্দটির ইংরেজিকৃত রূপ।[9] এই শহর মারাঠি ও গুজরাতিভাষীদের নিকট মুম্বাই বা মম্বাই এবং হিন্দি, পারসি ও উর্দুভাষীদের নিকট বম্বই নামে পরিচিত। কখনও কখনও এই শহরকে আরও পুরনো ককমুচী বা গলজুঙ্কজা নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।[10][11] ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে শিবসেনা মারাঠি উচ্চারণ অনুসারে শহরের নাম পরিবর্তন করে রাখে মুম্বই।[12] হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল শিবসেনা এই নাম পরিবর্তন নিয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। এরপর মুম্বইয়ের দেখাদেখি দেশের অনেক শহরেরই ইংরেজি নাম পরিবর্তন করে স্থানীয় উচ্চারণ অনুযায়ী নামকরণ করা হয়। যদিও শহরে বসবাসকারী অনেকেই এখনও এই শহরকে বোম্বাই নামে অভিহিত করে থাকেন। তাছাড়া ভারতের অন্যান্য অনেক অঞ্চলেও বোম্বাই নামটির চল রয়েছে।[13]
শহরের প্রথাগত ইংরেজি নাম বম্বে শব্দটি যে আসলে পর্তুগিজ শব্দ থেকে আগত তার একটি বহুপ্রচলিত ব্যাখ্যা রয়েছে। এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, পর্তুগিজ ভাষায় কথাটির অর্থ ভালো উপসাগর। ভালো শব্দের পর্তুগিজ প্রতিশব্দ bom (পুংলিঙ্গ) ও ইংরেজি bay শব্দটির নিকটবর্তী পর্তুগিজ প্রতিশব্দ baía (স্ত্রীলিং, পুরনো বানানে bahia)। তবে সাধারণভাবে পর্তুগিজ ভাষায় ভালো উপসাগর কথাটির প্রতিশব্দ হিসেবে bom bahia কথাটি ব্যাকরণগতভাবে ভুল। সঠিক শব্দটি হল boa bahia। যদিও ষোড়শ শতাব্দীর পর্তুগিজ ভাষায় "ছোটো উপসাগর" অর্থে baim শব্দটি প্রচলন অসম্ভব ছিল না।[14] পর্তুগিজ পণ্ডিত জোসে পেদ্রো মাকাদো তার Dicionário Onomástico Etimológico da Língua Portuguesa (Portuguese Dictionary of Onomastics and Etymology) গ্রন্থে "Bom Bahia" নামতত্ত্বটি খারিজ করে দিয়েছেন। তার মতে, পর্তুগিজ নথিপত্রে এই অঞ্চলে একটি উপসাগরের উল্লেখ ছিল। সেই উল্লেখ থেকে ইংরেজরা ধরে নেয় যে bahia বা "bay" শব্দটি পর্তুগিজ নামের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এইভাবেই পর্তুগিজ নাম থেকে ইংরেজি Bombay কথাটি প্রচলন হয়।[15]
১৫০৭ সালে মিরাদ-ই-আহমেদি গ্রন্থে এই অঞ্চলটিকে মানবাই নামে উল্লেখ করা হয়েছে।[16] ১৫০৮ সালে গ্যাসপার কোরিয়া নামে এক পর্তুগিজ লেখক তার Lendas da Índia ("Legends of India") গ্রন্থে এই শহরকে Bombaim নামে উল্লেখ করেন। তিনিই প্রথম পর্তুগিজ লেখক যাঁর রচনায় এই শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়।[17][18] ১৫১৬ সালে পর্তুগিজ আবিষ্কারক দুয়ার্তে বারবোসা একটু জটিল আকারে এই অঞ্চলের নাম Tana-Maiambu বা Benamajambu বলে উল্লেখ করেন। Tana পার্শ্ববর্তী থানে শহরের নাম। Maiambu নামটি সম্ভবত [[মুম্বা দেবী|মুম্বা নামে এক হিন্দু দেবীর নাম থেকে আগত; তার নামেই মারাঠিরা এই অঞ্চলের নামকরণ করেছিলেন।[19] ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে এই শহরের অন্যান্য যে নামগুলি নথিভুক্ত হয়েছিল সেগুলি হল: Mombayn (১৫২৫), Bombay (১৫৩৮), Bombain (১৫৫২), Bombaym (১৫৫২), Monbaym (১৫৫৪), Mombaim (১৫৬৩), Mombaym (১৬৪৪), Bambaye (১৬৬৬), Bombaiim (১৬৬৬), Bombeye (১৬৭৬), ও Boon Bay (১৬৯০).[8][20]
বর্তমান মুম্বই অঞ্চলটি অতীতে সাতটি দ্বীপবিশিষ্ট একটি দ্বীপপুঞ্জ ছিল। এই সাতটি দ্বীপের নাম বোম্বাই দ্বীপ, পারেল, মাজাগাঁও, মাহিম, কোলাবা, বরলি ও ওল্ড ওম্যান’স আইল্যান্ড (অপরনামে লিটল কোলাবা)।[21] ১৯৩৯ সালে পুরাতাত্ত্বিক টড উত্তর মুম্বইয়ের কান্ডিবলির উপকূলবর্তী অঞ্চলে খননকার্য চালিয়ে কিছু প্লেইস্টোসিন নিদর্শন আবিষ্কার করেন। তা থেকেই জানা যায় প্রস্তর যুগ থেকেই এই অঞ্চলে জনবসতির অস্তিত্ব ছিল।[22] তবে এই অঞ্চলে প্রথম কবে জনবসতি স্থাপিত হয়েছিল তা জানা যায় না। সম্ভবত দুই হাজার বছর বা তারও আগে মৎস্যজীবী কোলি সম্প্রদায় এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল।[23] খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে মৌর্য সাম্রাজ্যের দক্ষিণে প্রসারের সময় এই অঞ্চল উক্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। মগধের বৌদ্ধ মৌর্যসম্রাট মহামতি অশোক এই অঞ্চলেরও শাসনকর্তা ছিলেন।[24] খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর মধ্যভাগেই বোরিবলির কানহেরি গুহা খোদিত হয়েছিল।[25] এই গুহা ছিল প্রাচীনকালে পশ্চিম ভারতে বৌদ্ধধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।[26] ১৫০ খ্রিষ্টাব্দে গ্রিক ভূগোলবিদ টলেমির রচনায় এই অঞ্চলটি হেপটানেসিয়া (Heptanesia; প্রাচীন গ্রিক: সপ্তদ্বীপখণ্ড) নামে উল্লিখিত হয়েছে।[27]
খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীর মধ্যে এই দ্বীপগুলি যে সকল দেশীয় রাজ্য ও সাম্রাজ্যের অধিকারভুক্ত হয়েছিল, সেগুলি হল: সাতবাহন, পশ্চিম ক্ষত্রপ, আভীর, বাকাটক, কলচুরি, কোঙ্কণ মৌর্য, চালুক্য ও রাষ্ট্রকূট।[28] এরপর ৮১০ থেকে ১২৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই অঞ্চল শাসন করে সিলহর রাজবংশ।[29] এই যুগে নির্মিত শহরের কয়েকটি প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন হল যোগেশ্বরী গুহা (৫২০-২৫ খ্রিষ্টাব্দ),[30] এলিফান্টা গুহা (ষষ্ঠ-সপ্তম শতাব্দী),[31] বলকেশ্বর মন্দির (দশম শতাব্দী),[32] ও বনগঙ্গা দিঘি (দ্বাদশ শতাব্দী)।[33] দ্বাদশ অথবা ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রাজা ভীমদেব এই অঞ্চলে তার রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার রাজধানী ছিল মাহিকাবতী (অধুনা মাহিম)।[34] ভীমদেব গুজরাতের সৌরাষ্ট্র থেকে মাহিকাবতীতে যে পাথারে প্রভু সম্প্রদায়কে এই অঞ্চলে নিয়ে আসেন। এই সম্প্রদায় শহরের প্রাচীনতম অধিবাসীদের অন্যতম।[35] ১৩৪৮ সালে গুজরাতের মুসলমান শাসকগণ এই অঞ্চল অধিকার করে নেন।[36] পরে ১৩৯১ থেকে ১৫৩৪ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চল গুজরাত সুলতানির অধীনে থাকে। সুলতানের পৃষ্ঠপোষকতায় এই অঞ্চলে অনেক মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৪৩১ সালে মুসলিম সন্ত হাজি আলির সম্মানে নির্মিত মাহিমের হাজি আলি দরগা।[37] ১৪২৯ থেকে ১৪৩১ সাল পর্যন্ত এই দ্বীপপুঞ্জের অধিকার নিয়ে গুজরাত সুলতানি ও দাক্ষিণাত্যের বাহমনি সুলতানির মধ্যে বিবাদ বর্তমান ছিল।[38][39] ১৪৯৩ সালে বাহমনি শাসক বাহাদুর খান গিলানি এই দ্বীপগুলি জয় করার লক্ষ্যে অভিযান চালিয়েছিলেন। তবে তিনি পরাজিত হন।[40]
১৫২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মুঘল সাম্রাজ্য ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়।[41] মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতায় ভীত হয়ে গুজরাত সুলতানির সুলতান বাহাদুর শাহ ১৫৩৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর পর্তুগিজ অভিবাসীদের সঙ্গে বাসেইনের চুক্তি সাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই চুক্তি অনুযায়ী পরিকল্পিত ভাসাই শহর ও তার অধীনস্থ অঞ্চলগুলি পর্তুগিজদের প্রদান করার কথা বলা হয়। পরে ১৫৩৫ সালের ২৫ অক্টোবর এই অঞ্চলগুলি প্রত্যর্পণ করা হয়।[42] বোম্বাইতে রোমান ক্যাথলিক ধর্মমতের প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী পর্তুগিজরাই।[43] শহরের পর্তুগিজ আমলের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গির্জা হল মাহিমের সেন্ট মাইকেলস চার্চ (১৫৩৪),[44] আন্ধেরির সেন্ট জন দ্য ব্যাপটিস্ট চার্চ (১৫৭৯),[45] বান্দ্রার সেন্ট অ্যান্ড্রিউজ চার্চ (১৫৮০),[46] ও বাইকুল্লার গ্লোরিয়া চার্চ (১৬৩২)।[47] ১৬৬১ সালের ১১ মে, ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় চার্লস ও ক্যাথেরিন অফ ব্র্যাগাঞ্জার বিবাহ চুক্তি অনুসারে চার্লসকে ক্যাথেরিনের দেয় পণের অংশ হিসেবে এই দ্বীপগুলি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে প্রদান করা হয়।[48] যদিও স্যালস্যাট, ভাসাই, মাজাগাঁও, পারেল, বরলি, সিমন, ধারাবি ও বাদালা পর্তুগিজদের অধিকারেই রয়ে যায়। ১৬৬৫-৬৬ সালে ব্রিটিশরা মাহিম, সিয়ন, ধারাবি ও বাদালা নিজ অধিকারে আনতে সক্ষম হয়েছিল।[49]
১৬৬৮ সালের ২৭ মার্চের রাজকীয় সনদ অনুসারে, ১৬৬৮ সালে বার্ষিক ১০ পাউন্ডের বিনিময়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে এই দ্বীপগুলি লিজ দেওয়া হয়।[50] ১৬৬১ সালে এই অঞ্চলের জনসংখ্যা ছিল ১০,০০০; এই জনসংখ্যা ১৬৭৫ সালে বেড়ে হয় ৬০,০০০।[51] ১৬৭২ সালের অক্টোবরে মুঘল সাম্রাজ্যের সিদ্দি নৌপ্রধান ইয়াকুত খান,[52] ১৬৭৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর-জেনারেল রিকলফ ভন গিয়ন,[53] এবং ১৬৭৩ সালের ১০ অক্টোবর সিদ্দি নৌপ্রধান সম্বল[52] এই দ্বীপগুলি আক্রমণ করেন। ১৬৮৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সদর সুরাট থেকে বোম্বাইতে সরিয়ে আনা হয়। এরপরই এই শহর বোম্বাই প্রেসিডেন্সির সদরে পরিণত হয়।[54] এই স্থানান্তরণের পর ভারতে কোম্পানির সকল সংস্থার প্রধান কার্যালয়ই বোম্বাইতে সরিয়ে আনা হয়।[55] ১৬৮৯-৯০ সাল নাগাদ আর একবার ইয়াকুত খান এই দ্বীপগুলি আক্রমণ করেছিলেন।[56] পেশোয়া প্রথম বাজি রাওয়ের অধীনে মারাঠারা ১৭৩৭ সালে স্যালস্যাট ও ১৭৩৯ সালে ভাসাই দখল করে নিলে বোম্বাই অঞ্চলে পর্তুগিজ উপস্থিতির পরিসমাপ্তি ঘটে।[57] অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকেই বোম্বাই এক প্রধান বাণিজ্য নগরী রূপে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করে। এই সময় ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এই অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করতেও শুরু করেন।[58] পরে ১৭৭৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর ব্রিটিশরা স্যালস্যাট দখল করে নেয়। সুরাটের চুক্তির (১৭৭৫) পর স্যালস্যাট ও ভাসাইয়ের উপর ব্রিটিশরা আনুষ্ঠানিকভাবে অধিকার অর্জন করে। এর ফলে প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ সূচিত হয়।[59] ১৭৭৬ সালে পুরন্দরের চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশরা স্যালস্যাট রক্ষা করতে সক্ষম হয়।[60] পরে ১৭৮২ সালের সালবাইয়ের চুক্তি সাক্ষরের মাধ্যমে প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের মীমাংসা হয়।[61]
১৭৮২ সালের পর থেকে শহরের সাতটি দ্বীপকে সুসংবদ্ধ একক অঞ্চলে পরিণত করার জন্য একটি বৃহদাকার গণপুর্ত প্রকল্প গৃহীত হয়। হর্নবি ভেলার্ড নামে এই প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয় ১৭৮৪ সালে।[62] ১৮১৭ সালে মাউন্টস্টুয়ার্ট এলফিনস্টোনের নেতৃত্বে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কিরকীর যুদ্ধে শেষ মারাঠা পেশোয়া দ্বিতীয় বাজি রাওকে পরাজিত করেন।[63] এই পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র দাক্ষিণাত্যে ব্রিটিশদের আধিপত্য স্থাপিত হয়। সমগ্র দক্ষিণ ভারত এরপর বোম্বাই প্রেসিডেন্সির অধিভুক্ত হয়েছিল। অন্যদিকে দাক্ষিণাত্যে ব্রিটিশদের সাফল্য বোম্বাইকে সকল প্রকার দেশীয় শক্তির আক্রমণের হাত থেকে মুক্তি দেয়।[64] ১৮৪৫ সালের মধ্যে হর্নবি ভেলার্ড প্রকল্পের কল্যাণে বোম্বাইয়ের সাতটি দ্বীপ একক ভূখণ্ডে পরিণত হয়।[65] ১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল বোম্বাই ও পার্শ্ববর্তী শহর থানের মধ্যে ভারতের প্রথম যাত্রীবাহী রেল পরিষেবা চালু হয়।[66] আমেরিকার গৃহযুদ্ধের (১৮৬১-৬৫) সময় বোম্বাই বিশ্বের প্রধান কার্পাস বাণিজ্য বাজারে পরিণত হয়। এর ফলে শহরের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয় এবং তা শহরের গুরুত্বও বহুলাংশে বৃদ্ধি করে।[67] ১৮৬৯ সালে সুয়েজ খাল উদ্বোধনের পর বোম্বাই আরব সাগরের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দরে পরিণত হয়।[68] ১৮৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শহরে বিউবনিক প্লেগ মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটলে প্রতি সপ্তাহে ১,৯০০ লোকের মৃত্যু হতে শুরু করে।[69] এই সময় প্রায় ৮৫০,০০০ লোক বোম্বাই ছেড়ে পলায়ন করেন। এখানকার বস্ত্রবয়ন শিল্পও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[70] বোম্বাই প্রেসিডেন্সির রাজধানী হিসেবে এই শহর ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী। এগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলন এবং ১৯৪৬ সালের ভারতীয় নৌবিদ্রোহ।[71][72] ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বোম্বাই প্রেসিডেন্সির অঞ্চলগুলি বোম্বাই রাজ্য নামে ভারতের অন্তর্গত হয়। একাধিক দেশীয় রাজ্যের অন্তর্ভুক্তির ফলে বোম্বাই রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধি পায়।[73] ১৯৫০ সালের এপ্রিল মাসে বোম্বাই উপনগর জেলা ও বোম্বাই নগরীকে একত্রিত করে বৃহত্তর বোম্বাই পৌরসংস্থা গঠিত হয়।[74] বৃহত্তর বোম্বাই রাজস্ব জেলা ও বৃহত্তর বোম্বাই পৌরসংস্থার ভৌগোলিক সীমানা এই সময় একই ছিল। ১৯৯০ সালের ১ অক্টোবর বৃহত্তর বোম্বাই জেলা দ্বিধাখণ্ডিত করে মুম্বই জেলা ও মুম্বই উপনগর জেলা গঠিত হয়। যদিও এই দুই জেলা একই পৌরসংস্থার অধিভুক্ত।[75]
১৯৫৫ সালের একটি লোকসভা আলোচনায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মুম্বই শহরকে নিয়ে একটি স্বশাসিত নগররাজ্য স্থাপনের দাবি জানায়।[76] ১৯৫৬ সালে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন বোম্বাই শহরকে রাজধানী করে দ্বিভাষিক মহারাষ্ট্র-গুজরাত রাজ্য গঠনের সুপারিশ করে। বোম্বাই সিটিজেনস কমিটি নামে নেতৃস্থানীয় গুজরাতি শিল্পপতিদের একটি সংস্থা বোম্বাইয়ের স্বশাসনের পক্ষে মতপ্রকাশ করে।[77] ১৯৫৭ সালের নির্বাচনে সংযুক্ত মহারাষ্ট্র সমিতি এই সব প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। তারা বোম্বাইকে মহারাষ্ট্রের রাজধানী ঘোষণা করার দাবি জানায়।[78] এই নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। ফ্লোরা ফাউন্টেনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের গুলি চালনায় ১০৫ জনের মৃত্যু হয়। এরপর ১৯৬০ সালের ১ মে ভাষার ভিত্তিতে বোম্বাই রাজ্য দ্বিধাবিভক্ত হয়।[79] বোম্বাই রাজ্যের গুজরাতি-ভাষী অঞ্চলগুলি নিয়ে গঠিত হয় গুজরাত রাজ্য।[80] অবশিষ্ট বোম্বাই রাজ্যের মারাঠি-ভাষী অঞ্চল, মধ্য প্রদেশ ও বেরার রাজ্যের আটটি জেলা, হায়দরাবাদ রাজ্যের পাঁচটি জেলা এবং উভয় রাজ্যের মধ্যবর্তী অসংখ্য ছোটো ছোটো দেশীয় রাজ্য নিয়ে গঠিত হয় মহারাষ্ট্র রাজ্য। বোম্বাই এই রাজ্যের রাজধানী ঘোষিত হয়।[81] সংযুক্ত মহারাষ্ট্র আন্দোলনের স্মরণে ফ্লোরা ফাউন্টেনের নামকরণ করা হয় হুতাত্মা চক (শহিদের চক); নির্মিত হয় একটি শহিদস্তম্ভও।[82]
পরবর্তী দশকগুলিতে বোম্বাই শহরের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে সমুদ্রোত্থিত ভূভাগ নরিমন পয়েন্ট ও কফ প্যারেডের বিকাশ ঘটানো হয়।[83] ১৯৭৫ সালের ২৬ জানুয়ারি মহারাষ্ট্র সরকার বোম্বাই মহানগরীয় অঞ্চলের সুসংহত পরিকল্পনা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বোম্বাই মেট্রোপলিটান রিজিওন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিএমআরডিএ) নামে একটি সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।[84] ১৯৭৯ সালের অগস্ট মাসে সিটি অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (সিআইডিসিও) থানে ও রায়গডের সীমানায় বোম্বাই শহরের জনসংখ্যার চাপ কমাতে নিউ বোম্বাই নামে একটি উপনগরী স্থাপন করে।[85] বোম্বাই হারবারের চাপ কমাতে ১৯৮৯ সালের ২৬ মে নব সেবায় জওহরলাল নেহেরু বন্দর কমিশন করা হয়। মুম্বইয়ের কেন্দ্রীয় বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত এই বন্দর বর্তমানে ভারতের কন্টেনারাইজড কার্গোর ৫৫-৬০ শতাংশ বহন করে থাকে।[86]
অতীতের বোম্বাই একটি শান্তিপূর্ণ শহর হলেও বিগত দুই বছরে শহরে সন্ত্রাসের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯২-৯৩ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর শহরে হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা বাধে। এই দাঙ্গায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হন।[87] ১৯৯৩ সালের ১২ মার্চ ইসলামি সন্ত্রাসবাদী ও বোম্বাই অন্ধকার জগতের যোগসাজেশে শহরের প্রধান প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলিতে ১৩টি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই বিস্ফোরণে ২৫৭ জন মারা যান এবং ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন।[88] ২০০৬ সালে শহরের যাত্রীবাহী ট্রেনগুলিতে সাতটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হলে ২০৯ জন মারা যান এবং ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন।[89] ২০০৮ সালে সশস্ত্র জঙ্গিদের দশটি পরস্পর সংযুক্ত হামলায় ১৭৩ জনের মৃত্যু হয়, ৩০৮ জন আহত হন, একাধিক ঐতিহাসিক স্থান ও গুরুত্বপূর্ণ হোটেল ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[90]
বর্তমানে মুম্বই ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী এবং বিশ্ব অর্থনীতির একটি অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।[91] কয়েক দশক ধরে দেশের প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক সংস্থাগুলির প্রধান কার্যালয় এই শহরে অবস্থিত। এই কারণে এখানকার পরিকাঠামো উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও বিশেষ উন্নতি সাধিত হয়েছে।[92] এইভাবে প্রাচীন মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের বসতি ও ঔপনিবেশিক যুগের বাণিজ্য নগরী থেকে মুম্বই আজ পরিণত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম শহর এবং বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বর্ণময় চলচ্চিত্র কেন্দ্রের পাদপীঠে।[93]
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে ১৯.০° উত্তর ৭৩.০° পূর্ব অক্ষ-দ্রাঘিমাংশে মুম্বই শহরটি অবস্থিত।[94] এই শহর মুম্বই শহর জেলা ও মুম্বই উপনগরী জেলা নামে মহারাষ্ট্রের দুটি পৃথক রাজস্ব জেলা নিয়ে গঠিত।[95] মূল শহরাঞ্চলটিকে দ্বীপশহর বা আইল্যান্ড সিটি নামেও অভিহিত করা হয়।[96] মুম্বইয়ের মোট আয়তন ৬০৩.৪ বর্গকিলোমিটার।[97] এর ৪৩৭.৭১ বর্গকিলোমিটার অঞ্চলের মধ্যে দ্বীপশহরের আয়তন ৬৭.৭৯ বর্গকিলোমিটার এবং উপনগর জেলার আয়তন ৩৭০ বর্গকিলোমিটার। এই দুই অঞ্চল বৃহন্মুম্বই পৌরসংস্থার (বিএমসি) এক্তিয়ারভুক্ত। অবশিষ্ট অঞ্চল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, মুম্বই বন্দর কর্তৃপক্ষ, পরমাণু শক্তি কমিশন ও বোরবলি জাতীয় উদ্যানের এক্তিয়ারভুক্ত, যা বিএমসি-র এক্তিয়ারের বাইরে অবস্থিত।[98]
ভারতের পশ্চিম উপকূলের কোঙ্কণ অঞ্চলে উলহাস নদীর মোহনায় সাষ্টী দ্বীপে মুম্বই অবস্থিত। সাষ্টী দ্বীপের কিয়দংশ আবার থানে জেলার অন্তর্গত।[99] মুম্বইয়ের পশ্চিমে আরব সাগর দ্বারা বেষ্টিত।[100] শহরের অনেক অঞ্চলই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সামান্য উচ্চতায় অবস্থিত। শহরের উচ্চতা মোটামুটি ১০ থেকে ১৫ মিটারের মধ্যে;[101] গড় উচ্চতা ১৪ মিটার।[102] উত্তর মুম্বই (সাষ্টী) অঞ্চলটি[103] পর্বতময়। সাষ্টীতে পোবাই-কানহেরি পর্বতশ্রেণির ৪৫০ মিটার উচ্চতায় শহরের উচ্চতম স্থানটি অবস্থিত।[104] সঞ্জয় গান্ধী জাতীয় উদ্যান (বোরিবলি জাতীয় উদ্যান) কিছুটা মুম্বই উপনগর জেলায়, কিছুটা থানে জেলায় অবস্থিত। এই উদ্যানের আয়তন ১০৩.০৯ বর্গকিলোমিটার।[105]
ভাস্তা জলাধার ছাড়া আরও যে ছয়টি প্রধান হ্রদ থেকে শহরের জল সরবরাহ করা হয় সেগুলি হল বিহার, নিম্ন বৈতর্ণ, উচ্চ বৈতর্ণ, তুলসী, তানসা ও পবই হ্রদ।[106] তুলসী ও বিহার হ্রদ শহরের সীমানার মধ্যেই বোরিবলি জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত।[107] পোবাই হ্রদটিও শহরের সীমানার মধ্যেই অবস্থিত; তবে এই হ্রদের জল কেবলমাত্র কৃষি ও শিল্পকারখানাগুলির প্রয়োজনেই ব্যবহৃত হয়।[108] উদ্যানের মধ্যেই তিনটি ছোটো নদীর উৎস অবস্থিত। এগুলি হল দহিসর, পইসর বা পইনসর ও ওহিয়ারা বা ওশিয়ারা। বর্তমানে দুষিত মিঠি নদীর উৎস তুলসী হ্রদ; এই নদী বিহার ও পোবাই হ্রদের অতিরিক্ত জল ধারণ করে থাকে।[109] শহরের উপকূলভাগে অসংখ্য খাঁড়ি অবস্থিত। এগুলি পশ্চিমে থানে খাঁড়ি থেকে পূর্বে মধ মার্ভে পর্যন্ত প্রসারিত।[110] সাষ্টী দ্বীপের পূর্ব উপকূলভাগে একটি জৈববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ বৃহৎ ম্যানগ্রোভ জলাভূমি অবস্থিত। অন্যদিকে পশ্চিমের উপকূলভাগ বালুকাময় ও পাথুরে।[111]
সমুদ্রের নৈকট্যের কারণে মুম্বই শহর অঞ্চলের মাটি প্রধানত বেলে প্রকৃতির। উপনগর অঞ্চলের মাটি অবশ্য পলল ও দোঁয়াশ প্রকৃতির।[112] এই অঞ্চলের ভূগর্ভস্ত শিলাস্তরটি কালো দাক্ষিণাত্য ব্যাসাল্ট প্রকৃতির। এর অ্যাসিডিক ও মৌলিক উপাদানগুলি পরবর্তী ক্রিটোসিয়াস থেকে আদি ইয়োসিন যুগীয়।[113] মুম্বই একটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত; শহরের নিকটবর্তী এলাকায় ২৩টি চ্যুতিরেখার উপস্থিতি লক্ষিত হয়।[114] অঞ্চলটিকে ভূমিকম্পপ্রবণ ক্ষেত্র ৩ অঞ্চল বর্গভুক্ত করা হয়।[115] এর অর্থ রিখটার স্কেলে ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্প এখানে স্বাভাবিক।[116]
মুম্বইয়ের জলবায়ু ক্রান্তীয় প্রকৃতির। কোপেন জলবায়ু বর্গীকরণ অনুযায়ী এই জলবায়ু ক্রান্তীয় আর্দ্র ও শুষ্ক প্রকৃতির। এখানে সাত মাস শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে ও জুলাই মাসে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।[117] ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শীতকাল এবং মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল বিরাজ করে। জুন থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ ভাগ পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এখানে বিরাজ করে শরৎকাল।[118] মে মাসে এই অঞ্চলে প্রাকবর্ষা বৃষ্টিপাত দেখা যায়। আবার অক্টোবর-নভেম্বর মাসে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেও কিছু বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। ১৯৫৪ সালে মুম্বইতে সর্বোচ্চ বার্ষিক বৃষ্টিপাত নথিভুক্ত হয়েছিল ৩৪৫২ মিলিমিটার।[119] ২০০৫ সালের ২৬ জুলাই শহরে একদিনে বৃষ্টিপাত হয় ৯৪৪ মিলিমিটার। এটিই মুম্বইয়ের একদিনের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।[120] শহরের গড় মোট বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দ্বীপশহরে ২১৪৬.৬ মিলিমিটার ও উপনগর অঞ্চলে ২৪৫৭ মিলিমিটার।[119]
মুম্বইয়ের গড় বার্ষিক তাপমাত্রা ২৭.২° সেন্টিগ্রেড এবং গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২১৬.৭ সেন্টিমিটার।[121] দ্বীপশহরের বার্ষিক সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যথাক্রমে ৩১.২° সেন্টিগ্রেড ও ২৩.৭° সেন্টিগ্রেড। উপনগর অঞ্চলে দৈনিক সাধারণ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯.১° সেন্টিগ্রেড থেকে ৩৩.৩° সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকে; অন্যদিকে দৈনিক সাধারণ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে ১৬.৩° সেন্টিগ্রেড থেকে ২৬.২° সেন্টিগ্রেড।[119] ১৯৮২ সালের ২৮ মার্চ শহরের তাপমাত্রা ছিল ৪০.২° সেন্টিগ্রেড; এটিই শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।[122] অন্যদিকে ১৯৬২ সালের ২৭ জানুয়ারি শহরের তাপমাত্রা ছিল ৭.৪° সেন্টিগ্রেড; এটি শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড।[123]
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ৩৭.০ (৯৮.৬) |
৩৮.৩ (১০০.৯) |
৪০.৪ (১০৪.৭) |
৪০.৬ (১০৫.১) |
৩৯.৭ (১০৩.৫) |
৩৭.২ (৯৯.০) |
৩৫.৬ (৯৬.১) |
৩৩.৮ (৯২.৮) |
৩৫.৬ (৯৬.১) |
৩৯.৫ (১০৩.১) |
৩৮.৪ (১০১.১) |
৩৬.৭ (৯৮.১) |
৪০.৬ (১০৫.১) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ৩০.৬ (৮৭.১) |
৩১.৩ (৮৮.৩) |
৩২.৭ (৯০.৯) |
৩৩.১ (৯১.৬) |
৩৩.৩ (৯১.৯) |
৩১.৯ (৮৯.৪) |
২৯.৮ (৮৫.৬) |
২৯.৩ (৮৪.৭) |
৩০.১ (৮৬.২) |
৩২.৯ (৯১.২) |
৩৩.৪ (৯২.১) |
৩২.০ (৮৯.৬) |
৩১.৭ (৮৯.১) |
দৈনিক গড় °সে (°ফা) | ২৪.৫ (৭৬.১) |
২৪.৮ (৭৬.৬) |
২৬.৯ (৮০.৪) |
২৮.৭ (৮৩.৭) |
৩০.২ (৮৬.৪) |
২৯.২ (৮৪.৬) |
২৭.৭ (৮১.৯) |
২৭.৩ (৮১.১) |
২৭.৭ (৮১.৯) |
২৮.৭ (৮৩.৭) |
২৮.০ (৮২.৪) |
২৬.৩ (৭৯.৩) |
২৭.৫ (৮১.৫) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ১৬.৪ (৬১.৫) |
১৭.৩ (৬৩.১) |
২০.৬ (৬৯.১) |
২৩.৭ (৭৪.৭) |
২৬.১ (৭৯.০) |
২৫.৮ (৭৮.৪) |
২৪.৮ (৭৬.৬) |
২৪.৫ (৭৬.১) |
২৪.০ (৭৫.২) |
২৩.১ (৭৩.৬) |
২০.৫ (৬৮.৯) |
১৮.২ (৬৪.৮) |
২২.১ (৭১.৮) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | ১১.৭ (৫৩.১) |
১১.৭ (৫৩.১) |
১৬.৩ (৬১.৩) |
২০.০ (৬৮.০) |
২২.৮ (৭৩.০) |
২১.১ (৭০.০) |
২১.৭ (৭১.১) |
২১.৭ (৭১.১) |
২০.০ (৬৮.০) |
২০.৬ (৬৯.১) |
১৭.৮ (৬৪.০) |
১২.৮ (৫৫.০) |
১১.৭ (৫৩.১) |
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ০.৬ (০.০২) |
১.৫ (০.০৬) |
০.১ (০.০০) |
০.৬ (০.০২) |
১৩.২ (০.৫২) |
৫৭৪.১ (২২.৬০) |
৮৬৮.৩ (৩৪.১৯) |
৫৫৩.০ (২১.৭৭) |
৩০৬.৪ (১২.০৬) |
৬২.৯ (২.৪৮) |
১৪.৯ (০.৫৯) |
৫.৬ (০.২২) |
২,৪০১.২ (৯৪.৫৩) |
বৃষ্টিবহুল দিনগুলির গড় | ০.১ | ০.১ | ০.০ | ০.১ | ১.০ | ১৪.৯ | ২৪.০ | ২২.০ | ১৩.৭ | ৩.২ | ১.১ | ০.৪ | ৮০.৬ |
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%) | ৬৯ | ৬৭ | ৬৯ | ৭১ | ৭০ | ৮০ | ৮৬ | ৮৬ | ৮৩ | ৭৮ | ৭১ | ৬৯ | ৭৫ |
মাসিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড় | ২৬৯.৫ | ২৫৭.৬ | ২৭৪.৩ | ২৮৩.৭ | ২৯৬.২ | ১৪৮.৬ | ৭৩.৪ | ৭৫.৯ | ১৬৫.১ | ২৪০.২ | ২৪৫.৮ | ২৫৩.২ | ২,৫৮৩.৫ |
উৎস ১: ভারত আবহাওয়া অধিদপ্তর (সময়কাল: ১৯৫১–১৯৮০, উচ্চ ও নিম্ন রেকর্ড, ২০১০)[124][125] | |||||||||||||
উৎস ২: জাতীয় সমুদ্র ও আবহাওয়া সংস্থা (গড়, আদ্রতা, সূর্য ১৯৭১–১৯৯০) [126] |
মুম্বই ভারতের বৃহত্তম শহর ও অর্থনৈতিক রাজধানী। দেশের সামগ্রিক জিডিপির ৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় এই শহরে।[5][91] এছাড়া মুম্বই ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্রও বটে। দেশের সামগ্রিক কারখানা শ্রমিক নিয়োগের ১০ শতাংশ, শিল্পোৎপাদনের ২৫ শতাংশ, আয়কর সংগ্রহের ৩৩ শতাংশ, বহিঃশুল্কের ৬০ শতাংশ, কেন্দ্রীয় অন্তঃশুল্কের ২০ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্যের ৪০ শতাংশ এবং ৪ হাজার কোটি টাকা কর্পোরেট করের উৎস হল মুম্বই।[127] মুম্বইয়ের জিডিপি ২০০,৪৮৩ কোটি টাকা[128] এবং মাথাপিছু আয় ১২৮,০০০ টাকা।[129] মুম্বইয়ের মাথাপিছু আয় ভারতের জাতীয় গড় মাথাপিছু আয়ের তিন গুণ।[65] ভারতের অসংখ্য শিল্পগোষ্ঠী (লারসেন অ্যান্ড টব্রো, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক, ভারতীয় স্টেট ব্যাংক, ভারতীয় জীবন বিমা নিগম, টাটা গোষ্ঠী, গোদরেজ গোষ্ঠী, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ সহ)[91] এবং পাঁচটি ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ কোম্পানির প্রধান কার্যালয় মুম্বইতে অবস্থিত।[130] এই অঞ্চলে অনেক বিদেশি ব্যাংক ও বাণিজ্যিক সংস্থার শাখাও রয়েছে।[91] এগুলির মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[131] ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত মুম্বইয়ের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পশ্চাতে ছিল বস্ত্রবয়ন শিল্প ও বৈদেশিক বাণিজ্য। কিন্তু তার পর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং, হিরে-পালিশ, স্বাস্থ্য পরিষেবা ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের অভাবনীয় বিকাশের ফলে এখানকার স্থানীয় অর্থনীতিরও প্রভূত উন্নতি ঘটে।[132] ২০০৮ সালে, গ্লোবালাইজেশন অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড সিটিজ স্টাডি গ্রুপ (জিএডব্লিউসি) তাদের বিশ্ব নগরী বর্গীকরণের তৃতীয় বর্গের "আলফা বিশ্ব নগরী" রূপে মুম্বইকে ঘোষণা করেছে।[133]
কেন্দ্রীয় ও মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা শহরের মূল কর্মীশক্তি। অনিপূণ ও অর্ধনিপূণ স্বনিযুক্তদের সংখ্যাও মুম্বইয়ে প্রচুর। এরা মূলত হকার, ট্যাক্সি ড্রাইভার, মেকানিক ও অন্যান্য ব্লু কলার কাজে নিযুক্ত। শহরের বন্দর ও জাহাজনির্মাণ শিল্প সুবিখ্যাত। মুম্বই বন্দর ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বন্দর।[135] মধ্য মুম্বইয়ের ধারাবিতে একটি ক্রমবর্ধমান পুনর্নবীকরণ শিল্প বিদ্যমান। এখানে শহরের অন্যান্য অংশ থেকে সংগৃহীত বর্জ্য পদার্থ পুনর্নবীকরণ করা হয়। জেলায় প্রায় ১৫,০০০ সিঙ্গল-রুম কারখানা রয়েছে।[136]
ভারতের প্রধান টেলিভিশন ও স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক এবং দেশের প্রধান কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থার প্রধান কার্যালয়ও মুম্বইতে অবস্থিত। মুম্বইতে অবস্থিত বলিউড নামে হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পকেন্দ্রটি ভারতের বৃহত্তম ও বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ চলচ্চিত্র প্রস্তুতকারক।[137][138] ভারতের অন্যান্য অংশের মতো মুম্বইও ১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক উদারীকরণের সুফল ভোগ করেছে। ১৯৯০-এর দশকের মধ্যভাগ থেকে শহরের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। ২০০০-এর দশকে মুম্বই তথ্যপ্রযুক্তি, বৈদেশিক বাণিজ্য, পরিষেবা ও আউটসোর্সিং-এর ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি লাভ করে।[139] বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যকেন্দ্র সূচি ২০০৮-এ মুম্বই ৪৮তম স্থানটি অধিকার করে।[140] ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে ফোর্বস পত্রিকার "টপ টেন সিটিজ ফর বিলিয়নেয়ারস" তালিকায় সপ্তম[141] এবং ওই সকল বিলিয়নেয়ারদের গড় সম্পত্তির হিসেব অনুযায়ী প্রথম স্থানটি দখল করে।[142]
দক্ষিণে কোলাবা থেকে উত্তরে মুলুন্দ, মানখুর্দ ও দহিসর পর্যন্ত বিস্তৃত মুম্বইয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব বৃহন্মুম্বই পৌরসংস্থার (বিএমসি; পূর্বনাম বোম্বাই পৌরসংস্থা) হাতে ন্যস্ত।[100] শহরের নাগরিক পরিষেবা ও পরিকাঠামোগত পরিষেবার দায়িত্বও বিএমসি-র হাতে ন্যস্ত। পৌরসংস্থার কাউন্সিলরগণ আড়াই বছরের মেয়াদে একজন মেয়রকে নির্বাচিত করেন। মিউনিসিপ্যাল কমিশনার পৌরসংস্থার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক ও প্রশাসনিক শাখার প্রধান। যাবতীয় প্রশাসনিক ক্ষমতা তার হাতেই ন্যস্ত। ইনি মহারাষ্ট্র সরকার কর্তৃক নিয়োজিত একজন আইএএস স্তরীয় আধিকারিক। পৌরসংস্থা শহরের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন সংস্থা। এই সংস্থা শহরের প্রশাসনিক নীতিনির্ধারণের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও, এই নীতিগুলি কার্যকর করার যাবতীয় ক্ষমতা মিউনিসিপ্যাল কমিশনারের হাতে ন্যস্ত। রাজ্য আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট জন্য এই কমিশনার নিযুক্ত করা হয়ে থাকে। উক্ত আইন এবং পৌরসংস্থা অথবা স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রতিনিধিদের দ্বারা কমিশনারের ক্ষমতাও বিধিবদ্ধ করা রয়েছে।[143]
মুম্বইয়ের দুটি রাজস্ব জেলাই একজন করে জেলা কালেকটরের অধীনস্থ।[144] এই কালেকটরগণ সম্পত্তি নিবন্ধন, ভারত সরকারের হয়ে রাজস্ব আদায় এবং শহরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনগুলির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত।[145]
মুম্বই পুলিশের প্রধান পুলিশ কমিশনার একজন আইপিএস স্তরীয় আধিকারিক। মুম্বই পুলিশ রাজ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ।[146] মুম্বই সাতটি পুলিশ ক্ষেত্র ও সতেরোটি ট্র্যাফিক পুলিশ ক্ষেত্রে বিভক্ত।[98] প্রত্যেক ক্ষেত্রের দায়িত্বে থাকেন একজন করে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার।[147] মুম্বই ট্র্যাফিক পুলিশ মুম্বই পুলিশের অধীনস্থ একটি অর্ধ-স্বশাসিত সংস্থা। মুম্বই দমকল পরিষেবা একজন মুখ্য দমকল আধিকারিক, চারজন উপমুখ্য দমকল আধিকারিক এবং ছয়জন বিভাগীয় আধিকারিকের নেতৃত্বাধীন।[98]
বোম্বাই হাইকোর্ট মুম্বইতে অবস্থিত। মহারাষ্ট্র ও গোয়া রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ এই হাইকোর্টের এক্তিয়ারভুক্ত।[148] এছাড়া দেওয়ানি বিচারের জন্য একাধিক ছোটো আদালত এবং ফৌজদারি অপরাধের বিচারের জন্য একাধিক দায়রা আদালতও রয়েছে।[149] মুম্বইয়ে সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্র ও সংগঠনের বিচারের জন্য একটি বিশেষ টাডা (টেরোরিজম অ্যান্ড ডিসরাপটিভ অ্যাকটিভিটজ) আদালত রয়েছে।[150]
মুম্বই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জন্মস্থান এবং অতীতের এক শক্ত ঘাঁটি।[151] ১৮৮৫ সালের ২৮-৩১ ডিসেম্বর বোম্বাই শহরেই জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।[152] কংগ্রেসের প্রথম পঞ্চাশ বছরে মোট ছয়বার এখানেই কংগ্রেস অধিবেশন আয়োজিত হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীতে বোম্বাই তাই ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়।[153] ১৯৬০-এর দশকে বোম্বাইতে আঞ্চলিকতাবাদী রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটে। ১৯৬৬ সালের ১৯ জুন শিবসেনা দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দল মহারাষ্ট্রের স্থানীয় অধিবাসী মারাঠিদের অধিকারের স্বপক্ষে মতপ্রকাশ করে[154] এবং মুম্বই থেকে উত্তর ভারতীয় ও দক্ষিণ ভারতীয় অভিবাসীদের বলপূর্বক বিতাড়িত করার অভিযান শুরু করে।[155] স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৮০-এর দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত শহরের রাজনীতিতে কংগ্রেসের একাধিপত্য বজায় ছিল। ১৯৮৫ সালে বোম্বাই পৌরসংস্থা নির্বাচনে শিবসেনা জয়লাভ করলে এই একাধিপত্যে ছেদ পড়ে।[156] ১৯৮৯ সালে ভারতীয় জনতা দল ও শিবসেনা একজোটে নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়ে কংগ্রেসকে পরাজিত করে মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ক্ষমতা দখল করে। ১৯৯৯ সালে জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) কংগ্রেস ভেঙে বেরিয়ে আসে। পরে এই দল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠন করে।[157] বর্তমানে মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস), সমাজবাদী পার্টি (এসপি), বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) প্রভৃতি দল ও একাধিক নির্দল প্রার্থীও মুম্বইতে নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়ে থাকে।[158]
মুম্বই ছয়টি লোকসভা (সংসদীয়) কেন্দ্র নিয়ে গঠিত। এগুলি হল: মুম্বই উত্তর, মুম্বই উত্তর পশ্চিম, মুম্বই উত্তর পূর্ব, মুম্বই উত্তর মধ্য, মুম্বই দক্ষিণ মধ্য ও মুম্বই দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র।[159] ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে এই কেন্দ্রগুলির মধ্যে পাঁচটিতে কংগ্রেস ও একটিতে এনসিপি জয়লাভ করে।[160] অন্যদিকে মুম্বইয়ে মহারাষ্ট্র বিধানসভার ৩৬টি কেন্দ্র অবস্থিত।[161] ২০০৯ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রগুলির মধ্যে ১৭টিতে কংগ্রেস, ৬টিতে এমএনএস, ৫টিতে বিজেপি, ৪টিতে শিবসেনা ও একটিতে এসপি জয়লাভ করে। [162] বৃহন্মুম্বই পৌরসংস্থার কর্পোরেটররা প্রতি পাঁচ বছর বাদে নির্বাচিত হন।[163] এই পৌরসংস্থা ২৪টি মিউনিসিপ্যাল ওয়ার্ডের ২২৭ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, পৌরপ্রশাসনের বিশেষ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাঁচ জন মনোনীত কাউন্সিলর এবং একজন মেয়রকে নিয়ে গঠিত। মুম্বইয়ের মেয়র পদটি প্রধানত নামসর্বস্ব।[164][165][166] ২০০৭ সালের পৌরনির্বাচনে ২২৭টি আসনের মধ্যে শিবসেনা-বিজেপি জোট ১১১টি আসন সহ ক্ষমতা দখল করে। অন্যদিকে কংগ্রেস-এনসিপি জোট পায় ৮৫টি আসন।[167] মুম্বইয়ের মেয়র, ডেপুটি মেয়র ও মিউনিসিপ্যাল কমিশনারের কার্যকালের মেয়াদ আড়াই বছর।[168]
মুম্বইয়ের গণ পরিবহন ব্যবস্থার অন্তর্গত পরিবহন মাধ্যমগুলি হল মুম্বই শহরতলি রেল, বৃহন্মুম্বই ইলেকট্রিক সাপ্লাই অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট (বিইএসটি) বাস, ট্যাক্সি, অটো রিকশা ও ফেরি। ২০০৮ সালের হিসেব অনুযায়ী, শহরতলি রেল ও বিইএসটি বাস পরিষেবার মাধ্যমে শহরের ৮৮ শতাংশ যাত্রী পরিবহন হয়ে থাকে।[169] কালো ও হলুদ মিটার ট্যাক্সি পরিষেবা সারা শহরেই পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, ট্যাক্সি মুম্বইয়ের সর্বত্র প্রবেশ করতে পারলেও, অটো রিকশা চলাচলের অনুমতি কেবলমাত্র শহরের উপনগর অঞ্চলেই রয়েছে।[170] আইনানুসারে, মুম্বইয়ের ট্যাক্সি ও অটো রিকশাকে ঘন প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে হয়।[171] এই দুই পরিষেবা শহরের সুলভ ও কম খরচের যাত্রী পরিষেবা।[170] ২০০৮ সালের হিসেব অনুযায়ী, মুম্বই শহরে মোট যানবাহনের সংখ্যা ১৫,৩০০,০০০।[172] আবার ২০০৫ সালের একটি হিসেব অনুযায়ী, শহরে কালো ও হলুদ ট্যাক্সির সংখ্যা ৫৬,৪৫৯ এবং অটো রিকশার সংখ্যা ১,০২,২২৪।[173] নবি মুম্বইয়ের এনএমএমটি মুম্বইতে ভলভো বাস চালিয়ে থাকে। এই বাসগুলি নবি মুম্বই থেকে বান্দ্রে, দিনদোশি ও বোরিবলি পর্যন্ত চলাচল করে।[174]
ভারতের জাতীয় সড়ক ব্যবস্থার ৩ নং জাতীয় সড়ক, ৪ নং জাতীয় সড়ক ও ৮ নং জাতীয় সড়ক মুম্বইকে দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যুক্ত করেছে।[175] মুম্বই-পুনে এক্সপ্রেসওয়ে ভারতে নির্মিত প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে।[176] এছাড়া মুম্বই-ভদোদরা এক্সপ্রেসওয়েটি বর্তমানে নির্মাণাধীন।[177] মাহিম কজওয়ে ও সদ্যনির্মিত রাজীব গান্ধী সমুদ্রসেতু দ্বীপশহরের সঙ্গে পশ্চিম উপনগরের সংযোগ রক্ষা করছে।[178] শহরের তিনটি প্রধান রাস্তা হল সিয়ন থেকে থানে পর্যন্ত প্রসারিত ইস্টার্ন এক্সপ্রেস হাইওয়ে, সিওন থেকে পানভেল পর্যন্ত প্রসারিত সিওন পানভেল এক্সপ্রেসওয়ে এবং বান্দ্রা থেকে বোরিবালি পর্যন্ত প্রসারিত ওয়েস্টার্ন এক্সপ্রেস হাইওয়ে।[179]
২০০৮ সালের হিসেব অনুযায়ী, মুম্বইয়ের বাস পরিষেবা প্রতিদিন পঞ্চান্ন লক্ষ যাত্রী বহন করে।[169] শহরের সকল অঞ্চলে এবং নবি মুম্বই, মীরা-ভায়ান্দর ও থানে অঞ্চলেও বিইএসটি-এর পাবলিক বাস পরিষেবা সুলভ।[180] স্বল্পপাল্লার ভ্রমণের জন্য যাত্রীরা বাস ব্যবহারই পছন্দ করেন। যদিও দুরপাল্লার ভ্রমণের ক্ষেত্রে ট্রেনই বেশি সস্তা।[181] বিইএসটি মোট ৪,০১৩টি বাস চালায়।[182] এগুলির মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো থাকে।[183] এই বাসগুলি ৩৯০টি রুটে[184] দৈনিক ৪৫ লক্ষ যাত্রী পরিবহন করে থাকে।[169] এই বাসগুলির মধ্যে রয়েছে সিঙ্গল-ডেকার, ডাবল-ডেকার, ভেস্টিবিউল, লো-ফ্লোর, প্রতিবন্ধী-সহায়ক, বাতানুকূল ও ইউরো থ্রি মানসম্মত ঘন প্রাকৃতিক গ্যাস চালিত বাস।[182] মহারাষ্ট্র রাজ্য সড়ক পরিবহন সংস্থা (এমএসআরটিসি) বাসগুলি আন্তঃনগরীয় পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়। এই বাসগুলি মহারাষ্ট্রের অন্যান্য শহরের সঙ্গে মুম্বইয়ের যোগাযোগ রক্ষা করে।[185][186] মুম্বই দর্শন নামে একটি পর্যটক বাস পরিষেবা পর্যটকদের মুম্বইয়ের দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে দেখতে সাহায্য করে।[187] মুম্বই বিআরটিএস (বাস র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম) লেনগুলি সারা মুম্বইয়ের সুবিধার্থে পরিকল্পিত হয়েছে। ২০০৯ সালের মার্চ মাস অবধি এই জাতীয় সাতটি রুটে বাস চলাচল শুরু করেছে।[188] শহরের ৮৮ শতাংশ যাত্রী গণ পরিবহন মাধ্যমগুলি ব্যবহার করলেও মুম্বইয়ে যানজট এখনও একটি অন্যতম জটিল সমস্যা।[189] মুম্বই আজও বিশ্বের সর্বাধিক যানজটবহুল শহরগুলির অন্যতম।[190]
মুম্বইয়ের যানজটের অন্যতম কারণ হল হকার কর্তৃক রাস্তা বেদখল ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং সমস্যা। এমএমআরডিএ পথচারীদের সহজ ও নিরাপদ ব্যবহারের জন্য মুম্বই স্কাইওয়ে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। মুম্বই উপনগরীয় রেল স্টেশনের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে যেসব স্থান মানুষের অহরহ গন্তব্য সেই সব স্থান পর্যন্ত এই স্কাইওয়ে তৈরি করা হচ্ছে।[191]
মুম্বাই ভারতীয় রেলের দুটি জোন বা অঞ্চলের সদর দপ্তর: মধ্য রেল ও পশ্চিম রেল। মধ্য রেলের সদর ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাস ও পশ্চিম রেলের সদর চার্চগেট।[192] শহরের পরিবহন ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হল মুম্বই উপনগরীয় রেল। মধ্য, পশ্চিম ও হারবার লাইন নামে তিনটি নেটওয়ার্ক নিয়ে গঠিত এছাড়াও নবগঠিত ট্রান্স হারবার লাইন এই রেল ব্যবস্থা শহরের উত্তর-দক্ষিণ বরাবর প্রসারিত।[193] ২০০৭ সালের একটি হিসেব অনুসারে, মুম্বই শহরতলি রেল নেটওয়ার্ক প্রতিদিন ৬৩ লক্ষ যাত্রী পরিবহন করে থাকে,[194] যা ভারতীয় রেলের দৈনিক যাত্রী পরিবহন ক্ষমতার অর্ধেকেরও বেশি। ব্যস্ত সময়ে এই ট্রেনগুলি জনাকীর্ণ হয়ে থাকে। একটি নয়-কামরা বিশিষ্ট ট্রেনের যাত্রীধারণ ক্ষমতা লিখিতভাবে ১,৭০০ হলেও, ট্রেনগুলিকে ব্যস্ত সময়ে ৪,৫০০ যাত্রী বহন করতে হয়।[195] এই যানজটকে মাথায় রেখে উপনগরীয় রেল ব্যবস্থায় নতুন ১৫টি বগি বিশিষ্ট ট্রেন চালু করা হয়েছে।
ভূগর্ভস্থ ও উড়ালপথে দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে মুম্বই মেট্রো বর্তমানে নির্মাণাধীন।[196] নির্মাণাধীণ অপর এক প্রকল্প মুম্বই মনোরেল জাকোব সার্কেল থেকে ওড়ালা পর্যন্ত চালু হওয়ার কথা আছে।[197]
ভারতীয় রেল মুম্বইয়ের সঙ্গে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সুসংযোগ রক্ষা করছে। দূরপাল্লার ট্রেনগুলি ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাস, দাদর স্টেশন, লোকমান্য তিলক টার্মিনাস, মুম্বই সেন্ট্রাল স্টেশন, ও বান্দ্রা টার্মিনাস থেকে ছাড়ে।[198]
ছত্রপতি শিবাজী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মুম্বইয়ের প্রধান তথা দেশের ব্যস্ততম বিমানবন্দর।[199] ২০০৭ সালের একটি হিসেব অনুযায়ী, এই বিমানবন্দরে ২ কোটি ৫০ লক্ষ যাত্রী চলাচল করে। ২০০৬ সালে এই বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণের একটি পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এর ফলে ২০১০ সাল নাগাদ এই কাজ শেষ হলে এই বিমানবন্দর ৪ কোটি যাত্রী ধারণে সক্ষম হবে।[200]
জুহু বিমানঘাঁটি ভারতের প্রথম বিমানবন্দর। বর্তমানে এটি একটি ফ্লাইং ক্লাব ও হেলিপোর্টের কাজ করে।[201]
কোপরা-পানভেল অঞ্চলে প্রস্তাবিত নবি মুম্বই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি ভারত সরকারের ছাড়পত্র পেয়েছে। এটি বর্তমান বিমানবন্দরের যাত্রী চাপ কমাতে সাহায্য করবে।[202]
মুম্বইয়ের দুটি প্রধান বন্দর হল: মুম্বই বন্দর ও জওহরলাল নেহেরু বন্দর।[203] মুম্বই বন্দর বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাকৃতিক বন্দর। এই বন্দরে অনেকগুলি ওয়েট ও ড্রাই ডকের সুবিধা বিদ্যমান।[204] ১৯৮৯ সালের ২৬ মে কমিশন কৃত জওহরলাল নেহেরু বন্দর ভারতের ব্যস্ততম বন্দর।[205] দেশের মোট পণ্যবাহী জাহাজের ৫৫-৬০ শতাংশ এই বন্দরে যাতায়াত করে।[206]
মুম্বই ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বেস ও পশ্চিম নৌ কম্যান্ডের সদর দপ্তর।[100]
মাজাগাঁওয়ের ফেরি হোয়ার্ফ থেকে শহরের নিকটবর্তী দ্বীপসমূহে ফেরি পরিষেবাও চালু রয়েছে।[207]
ঔপনিবেশিক শাসনকালে মুম্বইয়ের জলের একমাত্র উৎস ছিল জলাশয়গুলি। অনেক অঞ্চলের নামকরণও হয়েছে এই জলাশয়গুলির নামানুসারে। বৃহত্তর মুম্বই পৌর নিগম বর্তমানে ছয়টি হ্রদ থেকে মুম্বইতে পানীয় জল সরবরাহ করে থাকে।[208][209] এর বেশিরভাগ অংশই আসে তুলসী ও বিহার হ্রদ থেকে।[107] তানসা লেক পশ্চিম উপনগর, দ্বীপশহরের বন্দর অঞ্চল ও পশ্চিম রেলকে জল সরবরাহ করে থাকে।[210] ভান্ডুপে জল সংশোধনাগার রয়েছে।[210] এটি এশিয়ার বৃহত্তম জল সংশোধনাগার।[211] ভারতের প্রথম ভূগর্ভস্থ জল সুড়ঙ্গপথটি বর্তমানে মুম্বইতে নির্মীয়মান।[212] শহরে প্রতিদিন সরবরাহকৃত ৩৫০০ মিলিয়ন লিটার জলের মধ্যে ৭০০ মিলিয়ন লিটার জলই জলচুরি, অবৈধ সংযোগ অথবা ছিদ্রপথে বহির্গমনের কারণে নষ্ট হয়ে যায়।[213] মুম্বইয়ের দৈনিক কঠিন বর্জ্যের পরিমাণ ৭,৮০০ মেট্রিক টন; এর মধ্যে ৪০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য।[214] এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্য উত্তরপশ্চিমে গোরাই, উত্তরপূর্বে মুলুন্দ ও পূর্বে দেওনার বর্জ্যভূমিতে ফেলা হয়।[215] বান্দ্রে ও বরলীর পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা দুটি পৃথক সামুদ্রিক নালার মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়। বান্দ্রে ও বরলীর নালাদুটির দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ৩.৪ কিলোমিটার ও ৩.৭ কিলোমিটার।[216]
বৃহন্মুম্বই ইলেকট্রিক সাপ্লাই অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট (বিইএসটি) দ্বীপশহরে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে। অন্যদিকে উপনগর অঞ্চলে এই দায়িত্ব পালন করে রিলায়েন্স এনার্জি, টাটা পাওয়ার ও মহাবিতরণ (মহারাষ্ট্র রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি লিমিটেড)।[217] মুম্বইয়ে উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে শহরের বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।[218] মুম্বইয়ের বৃহত্তম টেলিফোন পরিষেবা প্রদাতা সরকারি সংস্থা এমটিএনএল। ২০০০ সাল অবধি এই সংস্থা ফিক্সড লাইন, সেলুলার ফোন ও মোবাইল ওয়ারলেস লোকাল লুপ লাইনে একচেটিয়া ক্ষমতা ভোগ করত।[219] সেলুলার ফোন এখানে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়। এই ক্ষেত্রে প্রধান পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি হল ভোডাফোন এসার, এয়ারটেল, এমটিএনএল, বিপিএল গোষ্ঠী, রিলায়েন্স কমিউনিকেশন, আইডিয়া সেলুলার ও টাটা ইন্ডিকম। শহরে জিএসএম ও সিডিএমএ উভয় পরিষেবাই সুলভ।[220] এমটিএনএল ও এয়ারটেল শহরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবাও প্রদান করে থাকে।[221][222]
২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে, মুম্বইয়ের জনসংখ্যা ১১,৯১৪,৩৯৮।[224] ২০০৮ সালের ওয়ার্ল্ড গেজেটিয়ার-এর প্রাককলন অনুসারে এই শহরের জনসংখ্যা ১৩,৬৬২,৮৮৫[225] এবং মুম্বমুম্বনগরীয় এলাকার জনসংখ্যা ২১,৩৪৭,৪১২।[226] এই শহরের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২২,০০০ জন। ২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, বৃহত্তর মুম্বই অর্থাৎ বৃহন্মুম্বই পৌরসংস্থার এক্তিয়ারভুক্ত এলাকায় সাক্ষরতার হার ৭৭.৪৫ শতাংশ[227] যা জাতীয় গড় অর্থাৎ ৬৪.৮ শতাংশের চেয়ে বেশি।[228] লিঙ্গানুপাত প্রতি ১০০০ পুরুষে দ্বীপশহরে ৭৭৪ জন, উপনগরে ৮২৬ এবং সামগ্রিকভাবে ৮১১ জন নারী।[227] জাতীয় লিঙ্গানুপাত প্রতি ১০০০ পুরুষের ৯৩৩ জন নারীর তুলনায় অবশ্য মুম্বইয়ের লিঙ্গানুপাত পরিসংখ্যান পশ্চাদবর্তী।[229] এই নিম্ন লিঙ্গানুপাতের কারণ এই যে, শহরে প্রচুর পুরুষ কাজের সন্ধানে এসে বসতি স্থাপন করেছেন।[230] ২০০৮ সালে মুম্বই শহরের অপরাধের হার ৫.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ওই বছরের হিসেব অনুযায়ী, দোষী সাব্যস্তকরণের হার সারা দেশের মধ্যে মুম্বইতেই সবচেয়ে কম। এই শহরের সাধারণ অপরাধগুলি হল হত্যা, হত্যার চেষ্টা, অপরাধমূলক গণহত্যা, পণপ্রথা জনিত কারণে মৃত্যু, অপহরণ, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও ডাকাতি।[231]
মুম্বই শহরের প্রধান ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠীগুলি হল হিন্দু (৬৭.৩৯%), মুসলমান (১৮.৫৬%), বৌদ্ধ (৫.২২%), জৈন (৩.৯৯%), খ্রিষ্টান (৩.২২%) ও শিখ (০.৫৮%); পারসি ও ইহুদিরা জনসংখ্যার অবশিষ্টাংশ।[232] মুম্বইয়ের ভাষাগত জনপরিসংখ্যান নিম্নরূপ: মারাঠি (৬০%), গুজরাতি (১৯%), এবং অবশিষ্টাংশ ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আগত।[233] মুম্বইয়ের সবচেয়ে পুরনো মুসলমান সম্প্রদায়গুলি হল দাউদি বোহরা, খোজা ও কোঙ্কণি মুসলমান।[234] স্থানীয় খ্রিষ্টানদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পূর্ব ভারতীয় ক্যাথলিকেরা; ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগিজেরা এদের ধর্মান্তরিত করেন।[235] শহরে একটি ছোটো বনি ইসরায়েলি ইহুদি সম্প্রদায়ও বাস করেন; তারা সম্ভবত ১৬০০ বছর আগে পারস্য উপসাগর বা ইয়েমেন অঞ্চল থেকে ভারতে এসে বসতি স্থাপন করেন।[236] পারসিরা এসেছিলেন পারস্য থেকে। মুম্বইতে বর্তমানে প্রায় ৮০,০০০ পারসির বাস।[237]
মুম্বইয়ের অধিবাসীরা নিজেদের মুম্বইকর বা মুম্বাইট বা বম্বেইট নামে অভিহিত করেন। মুম্ব্বাই ভারতের প্রধান বহুভাষিক শহর। ভারতের প্রধান ভাষাগুলির মধ্যে ১৬টি এই শহরে কথিত হয়ে থাকে। সরকারি ভাষা মারাঠি; অন্যান্য ভাষাগুলি হল হিন্দি, গুজরাতি ও ইংরেজি।[238]
উন্নয়নশীল দেশগুলির দ্রুত বর্ধমান শহরগুলিতে যে সমস্যাগুলি দেখা যায়, তার অনেকগুলিই মুম্বইতে বিদ্যমান। ব্যাপক দারিদ্র্য ও বেকারত্ব, অনুন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা, অনুন্নত জীবনযাত্রা ও শিক্ষার মান এই শহরের মূল সমস্যা। বসবাসের সুবন্দোবস্ত সত্ত্বেও মুম্বইবাসীরা অনেক সময়ই কর্মস্থল থেকে দূরে জনাকীর্ণ ও তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল আবাসনে বাস করেন। এই কারণে গণ পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমগুলি সর্বদা ভিড়ে আকীর্ণ থাকে এবং যানজট নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কেউ কেউ বাস অথবা ট্রেন স্টেশনের কাছে বসবাস করেন। যদিও উপনগরের বাসিন্দাদের দক্ষিণে প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্রে পৌঁছতে অনেক সময় লেগে যায়।[239] এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বস্তি ধারাবি[240] মধ্য মুম্বইতে অবস্থিত; এখানে বসবাস করেন প্রায় ৮০০,০০০ মানুষ।[241] ১৯৯১-২০০১ দশকে মহারাষ্ট্রের বাইরে থেকে মুম্বইতে অভিনিবেশকারীদের সংখ্যা ছিল ১,১২০,০০০ জন; যা মুম্বইয়ের জনসংখ্যার সঙ্গে আরও ৫৪.৮ শতাংশ যোগ করে।[242] ২০০৭ সালে মুম্বইয়ের অপরাধের হার (ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারায় নথিভুক্ত) ১০০,০০০ জনে ১৬২.৯৩[243] যা জাতীয় গড়ের (১৭৫.১) তুলনায় সামান্য কম হলেও ভারতের দশ লক্ষাধিক জনসংখ্যাযুক্ত শহরগুলির গড় হারের (৩১২.৩) তুলনায় অনেক কম।[244] শহরের প্রধান ও প্রাচীনতম সংশোধনাগারটি হল আর্থার রোড জেল।[245]
ডিডি সহ্যাদ্রি, কালার্স মারাঠি, স্টার প্রবাহ, জি মারাঠি, জি টকিজ, নিউজ১৮ লোকমত, জয় মহারাষ্ট্র, এবিপি মাঝা, জি ২৪ তাস, সাম টিভি, টিভি৯ মহারাষ্ট্র, সিএনবিসি আওয়াজ, কালার্স টিভি, সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশন, জি টিভি, স্টার প্লাস, স্টার স্পোর্টস এবং সিএনবিসি আওয়াজ প্রভৃতি টিভি চ্যানেলের অফিস অবস্থিত এই শহরে।
মুম্বাই থেকে একাধিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়; এখানে একাধিক টেলিভিশন ও রেডিও স্টেশনও অবস্থিত। মুম্বাইয়ের জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক পত্রিকাগুলি হল টাইমস অফ ইন্ডিয়া, মিড ডে, হিন্দুস্তান টাইমস, ডি এন এ ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। জনপ্রিয় মারাঠি সংবাদপত্রগুলি হল নবকাল, মহারাষ্ট্র টাইমস, লোকসত্তা, লোকমত ও সকাল। এছাড়া অন্যান্য ভারতীয় ভাষাতেও সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়ে থাকে।[246] এশিয়ার প্রাচীনতম সংবাদপত্র বোম্বাই সমাচার ১৮২২ সাল থেকে মুম্বই শহরে একটানা প্রকাশিত হয়ে আসছে।[247] ১৮৩২ সালে বালশাস্ত্রী জাম্ভেকর মুম্বইতেই প্রথম বোম্বাই দর্পণ নামে একটি মারাঠি সংবাদপত্র চালু করেন।[248]
মুম্বইয়ের বিদ্যালয়গুলি হয় "মিউনিসিপ্যাল স্কুল" (বৃহন্মুম্বই পৌরসংস্থা পরিচালিত) অথবা প্রাইভেট স্কুল (অছি অথবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত)। প্রাইভেট স্কুলগুলি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য পেয়ে থাকে।[249] বিদ্যালয়গুলির অনুমোদন করেন মহারাষ্ট্র রাজ্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ (এমএসবিএসএইচএসই) অথবা সর্বভারতীয় কাউন্সিল ফর ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট একজামিনেশন (সিআইএসসিই), কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ (সিবিএসই) বা জাতীয় মুক্ত বিদ্যালয় সংস্থা (এনআইওএস)।[250] সাধারণত মারাঠি ও ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা দান করা হয়ে থাকে।[251] সরকারি স্কুলগুলিতে সুযোগ সুবিধা কম পাওয়া গেলেও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কাছে এই স্কুলগুলিই একমাত্র ভরসা।[252]
১০+২+৩/৪ পরিকল্পনার অধীনে ছাত্রছাত্রীরা দশ বছরের বিদ্যালয় শিক্ষা পরিসমাপ্ত করে দুই বছরের জন্য জুনিয়র কলেজে ভরতি হয়। সেখানে তারা কলা, বাণিজ্য অথবা বিজ্ঞান বিভাগের মধ্য থেকে যে কোনো একটিকে নির্বাচন করে নেয়।[253] এরপর তারা কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সাধারণ ডিগ্রি পাঠক্রমে ভরতি হয়, অথবা আইন, ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিসিনের যে কোনো একটিতে পেশাদার ডিগ্রি পাঠক্রমে ভরতি হয়।[254] শহরের অধিকাংশ কলেজই মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত। এই বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক ছাত্রদের সংখ্যার বিচারে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়।[255] মুম্বইতে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (বোম্বাই),[256] বীরমাতা জিজাবাই টেকনোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট (ভিজেআইটি),[257] ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল টেকনোলজি (ইউআইসিটি),[258] ভারতের অগ্রণী ইঞ্জিনিয়ারিং ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসএনডিটি ইউমেনস ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি মুম্বইয়ের অন্যান্য স্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়।[259] এছাড়া ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং (এনআইটিআইই), যমনালাল বাজাজ ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ (জেবিআইএমএস), এস পি জৈন ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ এবং একাধিক ম্যানেজমেন্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুম্বইতে অবস্থিত।[260] দেশের প্রাচীনতম আইন ও কমার্স কলেজ যথাক্রমে গভর্নমেন্ট ল কলেজ ও সিডেনহ্যাম কলেজ মুম্বইতেই অবস্থিত।[261][262] মুম্বইয়ের প্রাচীনতম শিল্পকলা প্রতিষ্ঠানটি হল স্যার জে. জে. স্কুল অফ আর্ট।[263]
মুম্বইয়ের দুটি বিশিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান হল টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর) ও ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র (বিএআরসি)।[264] বিএআরসি ট্রম্বেতে সাইরাস নামে একটি ৪০ মেগাওয়াটের নিউক্লিয়ার রিসার্চ রিঅ্যাক্টর চালায়।[265]
ক্রিকেট এই শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। খেলার মাঠের অভাবে সর্বত্র এই খেলাটিকে সংক্ষেপিত রূপে খেলা হয়ে থাকে; যা সাধারণত গলি ক্রিকেট নামে পরিচিত। বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)[266] ও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)[267] মুম্বইতেই অবস্থিত। রনজি ট্রফিতে শহরের প্রতিনিধিদল মুম্বই ক্রিকেট দল ৩৯টি পুরস্কার জিতেছে, যা কোনো একক দলের ক্ষেত্রে সর্বাধিক সংখ্যক।[268] ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ- এ এই শহরের প্রতিনিধিদল যথাক্রমে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। শহরের দুটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম হল ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম ও ব্রাবোর্ন স্টেডিয়াম।[269] শহরে অদ্যাবধি সংঘটিত বৃহত্তম ক্রিকেট অনুষ্ঠানটি হল ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনাল; যেটি ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম-এ অনুষ্ঠিত হয়। শহরের বিশিষ্ট ক্রিকেটারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সচিন তেন্ডুলকর[270] ও সুনীল গাভাস্কার।[271]
ফুটবল এই শহরের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। শহরের বহু মানুষ ফিফা বিশ্বকাপ ও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দর্শক।[272] আই-লিগে মুম্বইয়ের প্রতিনিধিত্ব করে তিনটি দল: মুম্বই ফুটবল ক্লাব,[273] মহিন্দ্র ইউনাইটেড,[274] ও এয়ার ইন্ডিয়া।[275] ইন্ডিয়ান সুপার লিগ- এ মুম্বাই সিটি এফসি নামের একটি দল শহরটিকে প্রতিনিধিত্ব করে। ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফিল্ড হকির জনপ্রিয়তা অবশ্য কমে গেছে। প্রিমিয়ার হকি লিগে (পিএইচএল) অংশগ্রহণকারী মহারাষ্ট্রের একমাত্র দলটি হল মুম্বইয়ের মারাঠা ওয়ারিওরস।[276] প্রতি ফেব্রুয়ারি মাসে মহালক্ষ্মী রেসকোর্সে ডারবি রেসের আয়োজন করা হয়। মুম্বইয়ের টার্ফ ক্লাবে ফেব্রুয়ারিতে ম্যাকডাওয়েলের ডারবিও অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।[277] সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ফরমুলা ওয়ান রেসিং-এর ব্যাপারেও জনগণের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।[278] ২০০৮ সালে ফোর্স ইন্ডিয়া এফ ওয়ান টিম কারের উদ্বোধন হয় মুম্বইতে।[279] ২০০৪ সালের মার্চে মুম্বই গ্র্যান্ড প্রিক্স এফ ওয়ান পাওয়ারবোট ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করে।[280] ২০০৪ সালে ভারতীয় জনগণের মধ্যে খেলাধূলার আগ্রহ বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে বার্ষিক মুম্বই ম্যারাথনের সূচনা ঘটানো হয়।[281] ২০০৬ ও ২০০৭ সালে কিংফিশাস এয়ারলাইনস টেনিস ওপেন নামে এটিপি ওয়ার্ল্ড ট্যুরের একটি ইন্টারন্যাশানাল সিরিজ টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয় মুম্বইতে।[282]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.