Loading AI tools
হিন্দু দেবতা তথা শ্রী বিষ্ণুর মর্যাদা পুরুষোত্তম অবতার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রাম (/ˈrɑːmə/;[৪] সংস্কৃত: राम, প্রতিবর্ণীকৃত: Rāma; সংস্কৃত: [ˈraːmɐ] () হলেন )হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর সপ্তম অবতার।[৫] হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিতে তাকে অযোধ্যার রাজা বলা হয়েছে। তিনি খ্রীষ্টপূর্ব সপ্তম বা অষ্টম শতাব্দীতে জন্মগ্রহণ করেন বলে অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন। রামায়ন শ্রুতিত শুরু হয় চতুর্থ শতাব্দীতে। আর লেখা শুরু হয় একাদশ শতাব্দীতে। রাম মূলত একজন গোষ্ঠী রাজা ছিলেন। অবতার রাম হিন্দুধর্মে তিনি একজন জনপ্রিয় দেবতা। ভারত এবং নেপাল ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশে রামপূজা প্রচলিত আছে। রাম সূর্যবংশে (ইক্ষ্বাকুবংশ বা পরবর্তীকালে উক্ত বংশের রাজা রঘুর নামানুসারে রঘু বংশ নামে পরিচিত) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রামের একটি বিশেষ মূর্তিতে তার পাশে তার ভাই লক্ষ্মণ, স্ত্রী সীতা ও ভক্ত হনুমানকে দেখা যায়। এই মূর্তিকে বলা হয় "রাম পরিবার"। হিন্দু মন্দিরে এই "রাম পরিবার" মূর্তির পূজাই বেশি হতে দেখা যায়। [৬][৭] রামনবমী তিথিতে ভগবান রামচন্দ্রের জন্ম-উৎসব পালন করা হয়।
রাম | |
---|---|
দশাবতার গোষ্ঠীর সদস্য | |
দেবনাগরী | राम |
সংস্কৃত লিপ্যন্তর | Rāma |
তামিল লিপি | ராமா |
অন্তর্ভুক্তি | |
পূর্বসূরি | দশরথ |
উত্তরসূরি | লব |
আবাস | |
মন্ত্র | জয় শ্রী রাম জয় সিয়া রাম হরে রাম |
অস্ত্র | তীর-ধনুক |
সেনা | বানর সেনা অযোধ্যা সেনা |
দিবস | বৃহস্পতিবার |
গ্রন্থসমূহ |
|
লিঙ্গ | পুরুষ |
উৎসব | |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | |
মৃত্যু | সরায়ু নদী, অযোধ্যা, কোশল (বর্তমান উত্তর প্রদেশ, ভারত) |
মাতাপিতা | |
সহোদর | |
দম্পত্য সঙ্গী | সীতা[৩] |
সন্তান | |
রাজবংশ | রঘুবংশ-সূর্যবংশ |
হিন্দুধর্মের বৈষ্ণব সম্প্রদায় ও বৈষ্ণব ধর্মগ্রন্থগুলিতে যেসব জনপ্রিয় দেবতার কথা পাওয়া যায়, তার অন্যতম হলেন রাম। সারা দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় রাম জনপ্রিয় দেবতা।[৮] লোকবিশ্বাসানুসারে, রামের জন্মস্থান হল ভারতের অযোধ্যা শহর। সেখানে "রামলীলা" বা শিশু রামের মূর্তিপূজা হয়। রাম-সংক্রান্ত উপাখ্যানের প্রধান উৎস হল বাল্মীকি রচিত ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ।[৯]
অযোধ্যার রাজা দশরথ ও তার প্রধান স্ত্রী কৌশল্যার জ্যেষ্ঠপুত্র হলেন রাম। হিন্দুরা রামকে বলেন "সর্বময়মর্যাদা পুরুষোত্তম" (অর্থাৎ, "সর্বশ্রেষ্ঠ সুপুরুষ" বা "আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিপতি" বা "গুণাধীশ")।[১০] তিনি সীতার ও সত্যবতী স্বামী। সীতাকে হিন্দুরা লক্ষ্মীর অবতার বলে মনে করেন। হিন্দুদের দৃষ্টিতে তিনি নারীর আদর্শ। বিভিন্ন মতে তাকে কাল্পনিক বলা হলেও তাঁর বাস্তবতার প্রমাণ আবিষ্কার করতে পেরেছেন বর্তমান গবেষকরা। তবে রাম দুটি বিবাহ করলেও তার উপপত্নীর সংখ্যা ৪১টি বলে বিষ্ণু পূরাণে উল্লেখ আছে। রামের মতো ধার্মিক ব্যক্তি বা তার সমসাময়িক ধার্মিক পৃথিবীতে বিরল। [১০][১১]
রামের জীবনকথাকে হিন্দুরা ধর্মনিষ্ঠার আদর্শ হিসেবে মান্য করেন। তাকে আদর্শ মানুষ মনে করা হয়। পিতার সম্মানরক্ষার্থে তিনি সিংহাসনের দাবি ত্যাগ করে চৌদ্দ বছরের জন্য বনে গিয়েছিলেন।[১২] তার স্ত্রী সীতা ও ভাই লক্ষ্মণও তার বিচ্ছেদ সহ্য করতে পারবেন না বলে তার সঙ্গে বনে গিয়েছিলেন। তারা একসঙ্গে চৌদ্দ বছর বনে কাটিয়েছিলেন। বনবাসকালে লঙ্কার রাজা রাবণ সীতাকে অপহরণ করে স্বর্ণলঙ্কায় নিয়ে গিয়েছিলেন। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর রাম হনুমানের মাধ্যমে জানতে পারেন যে সীতা স্বর্ণলঙ্কায় (বর্তমানে শ্রীলঙ্কা)। তখন বানর সেনা দিয়ে স্বর্ণলঙ্কায় যাওয়ার জন্য সেতু নির্মাণ করেন। আর রাবণের বিরাট রাক্ষস বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এই যুদ্ধে রাবণ পরাজিত হন। রাম সীতাকে উদ্ধার করে অযোধ্যায় ফিরে আসেন। সেখানে তার রাজ্যাভিষেক হয়। পরে তিনি একজন সম্রাটে পরিণত হন।[১২] তার রাজ্যে প্রজারা সুখে-শান্তিতে বাস করত এবং রাজ্যের সমৃদ্ধি ও ন্যায়বিচার অব্যাহত ছিল। এই জন্য রামের শাসনের অনুসরণে সুশাসিত রাজ্যকে "রামরাজ্য" বলার প্রবণতা চালু হয়।
রামায়ণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, রামের সীতা-অনুসন্ধান ও যুদ্ধজয়ের ক্ষেত্রে রামের প্রতি সীতার চরম প্রেম ও সতীত্বের প্রতি গুরুত্ব আরোপ। রাবণের বন্দিনী হওয়া সত্ত্বেও সীতার পবিত্রতা রক্ষিত হয়েছিল। অন্যদিকে, রামের ছোটো তিন ভাই লক্ষ্মণ, শত্রুঘ্ন ও ভরতও পবিত্রতা, ভ্রাতৃপ্রেম ও শক্তির আদর্শ।[১২] কোনো কোনো মতে, তারাও "মর্যাদা পুরুষোত্তম" ও সপ্তম অবতারের অংশ। রামের পবিত্রতা কিষ্কিন্ধ্যার বানর ও হনুমানকে আকৃষ্ট করেছিল। তারাই সীতাকে উদ্ধারে সাহায্য করেন।[১২] রামের গল্প ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় বিশেষ জনপ্রিয়। হিন্দুধর্মে রাম অন্তহীন প্রেম,[১৩] সাহস, শক্তি, ভক্তি, কর্তব্য ও মূল্যবোধের দেবতা।
ব্যক্তিনাম হিসেবে "রাম" শব্দটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদে (১০।৯৩।১৪):[১৪] দুঃসীম প্রথবনের স্তব গাই, বেণ ও রামের স্তব গাই, বিশিষ্ট অসুরদের স্তব গাই, রাজন্যবর্গের স্তব গাই। রাম শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ হল "রামী", রাত্রির একটি বিশেষণ। বেদে দুই জন রামের উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রথম জন হলেন "মার্গবেয়" বা "ঔপতশ্বিনী" রাম এবং দ্বিতীয় জন হলেন "জামদগ্ন্য" রাম। উত্তর-বৈদিক যুগে তিন জন রামের কথা জানা যায়,
বিষ্ণু সহস্রনাম স্তোত্রে বিষ্ণুর ৩৯৪তম নামটি হল রাম। আদি শঙ্করের টীকা অনুসারে (রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী তপস্যানন্দের অনুবাদ) "রাম" শব্দের দুটি অর্থ আছে: যোগীরা যাঁর সঙ্গে রমণ (ধ্যান) করে আনন্দ পান, সেই পরব্রহ্ম বা সেই বিষ্ণু যিনি দশরথের পুত্ররূপে অবতার গ্রহণ করেছিলেন।[১৫]
রামের অন্যান্য নামগুলি হল "রামবিজয়" (জাভানিজ ভাষা), ফ্রেয়াহ রাম (খমের ভাষা), ফ্রা রাম (লাও ভাষা ও থাই ভাষা), মেগাত সেরি রাম (মালয় ভাষা), রাকা বানতুগান (মারানাও ভাষা) ও রামার (তামিল ভাষা)।
রাম-সংক্রান্ত পৌরাণিক উপাখ্যানের প্রধান উৎস ঋষি বাল্মীকি রচিত রামায়ণ মহাকাব্য। এছাড়া বিষ্ণু পুরাণ-এ বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রামের উল্লেখ আছে। ভাগবত পুরাণ-এর নবম স্কন্ধের দশম ও একাদশ অধ্যায়ের রামের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া মহাভারত-এও রামের উপাখ্যান উল্লিখিত হয়েছে।
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে রামায়ণের নানা পাঠান্তর প্রচলিত আছে। যদিও সংস্কৃতে লেখা অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও রামায়ণের কাহিনির উল্লেখ পাওয়া যায়। মধ্বের অনুগামীরা মনে করেন, মূল-রামায়ণ নামে একটি রামায়ণ বাল্মীকি রামায়ণেরও আগে লেখা হয়েছিল। সেই রামায়ণকে তারা বাল্মীকি রামায়ণের চেয়েও বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করেন। সংস্কৃত ভাষায় অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ রামায়ণ হল অধ্যাত্ম রামায়ণ। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর গুজরাতি কবি ভট্টির লেখা সংস্কৃত কাব্য ভট্টিকাব্য রামায়ণের কাহিনির পুনর্কথনের পাশাপাশি পাণিনির ব্যাকরণ গ্রন্থ অষ্টাধ্যায়ী ও প্রাকৃত ভাষাশৈলী নিয়ে আলোচনা করেছে।[১৬] ভারতের অধিকাংশ প্রধান ভাষায় নিজস্ব রামায়ণ রয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য দ্বাদশ শতাব্দীর তামিল কবি কম্বরের লেখা রামাবতারম্, পঞ্চদশ শতাব্দীর বাঙালি কবি কৃত্তিবাস ওঝার লেখা শ্রীরাম পাঁচালি ও ষোড়শ শতাব্দীর হিন্দি কবি তুলসীদাসের লেখা রামচরিতমানস। আধুনিক রামায়ণ গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কুভেম্পুর কন্নড় রামায়ণ শ্রীরামদর্শনম্, বিশ্বনাথ সত্যনারায়ণের তেলুগু রামায়ণ রামায়ণ কল্পবৃক্ষম্। এই দুই গ্রন্থই জ্ঞানপীঠ পুরস্কার প্রাপ্ত। ভারতের স্থানীয় ভাষায় রচিত রামায়ণগুলির মধ্যে স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।[১৭]
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও রামায়ণের বিভিন্ন পাঠান্তর দেখা যায়। এই সব পাঠান্তরে স্থানীয় ইতিহাস, লোককথা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও স্থানীয় ভাষাগুলির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলি ফুটে উঠেছে। ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের কাকাউইন রামায়ণ, বালি দ্বীপের রামকবচ, মালয়েশিয়ার হিকায়ত সেরি রাম, ফিলিপিনসের মারাদিয়া লাওয়ানা ও থাইল্যান্ডের রামকিয়েন (বা ফ্রা রাম) এই জাতীয় গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ব্যাংককের ওয়াট ফ্রা কায়েউ মন্দিরে রামায়ণের ছবি দেখা যায়। মায়ানমারের জাতীয় মহাকাব্য হল ইয়ামা জাতদাও হল রামায়ণের ব্রহ্মদেশীয় সংস্করণ। এই গ্রন্থে রামকে ইয়ামা নামে অভিহিত করা হয়েছে। কম্বোডিয়ার রেয়ামকেরে রামের নাম ফ্রেয়াহ রাম। লাওসের ফ্রা লাক ফ্রা লাম গ্রন্থে গৌতম বুদ্ধকে রামের অবতার বলা হয়েছে।
ঐতিহাসিক এইচ. ডি. শঙ্কলিয়ার মতে, খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে রামায়ণ রচিত হয়।[১৮] এ. এল. ব্যাশামের মতে অবশ্য রাম খ্রিস্টীয় অষ্টম বা সপ্তম শতাব্দীর এক গোষ্ঠীর নেতা ছিলেন।[১৯]
বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে রামের পূজা অনেক আগে থেকে করা হয়।[২০][২১] পশ্চিমবঙ্গের কাটোয়া মহকুমায় প্রায় কুড়িটির মত রামের মূর্তি আছে। এছাড়া বাঁকুড়া জেলাতেও রাম মন্দির পাওয়া যায়। বাংলায় রঘুনাথশিলা রূপে ও তার পূজা করা হত।বাংলায় অনেক রাম মূর্তিতে রামের গোঁফ দেখা যায়।বাংলায় কৃত্তিবাসী রামায়ণ খুব জনপ্রিয়।বাংলায় অনেক জায়গায় রামায়ণ গান হয়।[২২] রাঢ়বাংলায় রামকে নিয়ে অনেক মুদ্রা পাওয়া গেছে। কাজী নজরুল ইসলাম তাকে নিয়ে গান লিখেছেন। রামকৃষ্ণ পরমহংস,রাণী রাসমণি,মুরারি গুপ্ত,চৈতন্যজীবনীলেখক দয়ানন্দ,অদ্বৈত আচার্য সহ অনেকে রামের পূজা করতেন।বাংলায় গৌড়ীয় বৈষ্ণবমত জনপ্রিয় হওয়ার আগে অনেকেই রাম মন্ত্রে দীক্ষা নিত। রাণী রাসমণি রঘুবীরের রথযাত্রা করতেন।[২৩]বীর হাম্বীর এর সময় বাঁকুড়া জেলায় অনেক রাম মন্দির তৈরি হয়।[২৪]বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়াতে দুর্গাপূজার শেষ হয় "রাবণকাটা নৃত্য" দিয়ে।[২৫] পশ্চিমবঙ্গের কিছু রাম মন্দির হল-
১. রামচন্দ্র মন্দির গুপ্তিপাড়া, হুগলি,
২. রঘুনাথ মন্দির চন্দ্রকোনা ,মেদিনীপুর ,
৩. রাম মন্দির রামরাজাতলা ,হাওড়া ,
৪. রামজীউ দেউল মন্দির, তমলুক,
৫. রামচন্দ্র মন্দির চিরুলিয়া ,মেদিনীপুর,
৬. রঘুনাথ মন্দির নাশিপুর আখড়া ,মুর্শিদাবাদ,
৭. রামজিউ দেউল,তমলুক,পূর্ব মেদিনীপুর,
৮. রামসীতা মন্দির, শ্রীরামপুর, হুগলি,
৯. মাতিয়ারি রাম সীতা মন্দির,নদীয়া,
১০. রামচন্দ্র মন্দির নারাজোল,পশ্চিম মেদিনীপুর,
১১. নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের রাম সীতা মন্দির,
১২.সীতা রাম মন্দির,ঘাটাল,পশ্চিম মেদিনীপুর,
১৩. চিরুলিয়ার রামচন্দ্র মন্দির ,মেদিনীপুর,
১৪. সীতা রামজী মন্দির,রাউতারা, মেদিনীপুর [২৬]
১৫. গড় পঞ্চকোট রাম মন্দির,পুরুলিয়া,[২১]
১৬.রঘুনাথবাড়ি,লালগোলা,মুর্শিদাবাদ,[২৭]
১৭.বিড়লা রাম মন্দির,কলকাতা,
১৮. দুর্গাপুরের রাম মন্দির।[২০]
১৯. রঘুনাথ মন্দির,পুরশুড়া,আরামবাগ,হুগলি।
২০.নবদ্বীপ রামসীতা পাড়ার চ্যাটার্জী বাড়ি, নদীয়া।
-বাংলাদেশে রাম মন্দির-
রামের কাহিনি দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে একটি বৃহৎ সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং অনুপ্রেরণামূলক প্রভাব বিস্তার করেছে। [২৮] [২৯]
যে কোন সময়ে যে কোন স্থানে সৃষ্ট সাহিত্যের খুব কম কাজই মহান এবং প্রাচীন সংস্কৃত মহাকাব্য বাল্মীকি রামায়ণের মতো জনপ্রিয়, প্রভাবশালী, অনুকরণীয় এবং সফল হয়েছে।
- - রবার্ট গোল্ডম্যান, সংস্কৃতের অধ্যাপক, বার্কলে, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় । [২৮]
অক্সফোর্ডের অধ্যাপক এবং সংস্কৃতের পণ্ডিত আর্থার অ্যান্টনি ম্যাকডোনেলের মতে, ভারতীয় গ্রন্থে বর্ণিত রামের ধারণাগুলি মূলত ধর্মনিরপেক্ষ। মানুষের জীবন ও চিন্তার উপর তাদের প্রভাব কমপক্ষে আড়াই হাজার বছর ধরে গভীরভাবে বিদ্যমান ছিল। [৩০][৩১] তাদের প্রভাব ব্যক্তিগত আত্মদর্শনের কাঠামো থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক উৎসব এবং সম্প্রদায়মূলক বিনোদনের মধ্যে রয়েছে। [২৮] গোল্ডম্যান বলেন, তাঁর জীবনের গল্পগুলি "চিত্রকলা, চলচ্চিত্র, ভাস্কর্য, পুতুলের অনুষ্ঠান, ছায়া নাটক, উপন্যাস, কবিতা, টিভি সিরিয়াল এবং নাটকগুলিকে অনুপ্রাণিত করেছে।" [৩০]
রাম এবং সীতা পরিবেশন শিল্পকলা এবং সাহিত্যকর্মের অনেক রূপকে অনুপ্রাণিত করেছেন। [৩২] মধুবনী চিত্রকলাগুলি, যা বিহারের অনন্য আকর্ষণীয় শিল্প, বেশিরভাগই ধর্ম এবং পৌরাণিক কাহিনীর উপর ভিত্তি করে সৃষ্ট। চিত্রকর্মগুলোতে, সীতা-রামের মতো হিন্দু দেবতাদের কেন্দ্রীভূত তাদের বিবাহ অনুষ্ঠানটি প্রাথমিক বিষয়ের মধ্যে একটি। [৩৩] রামের বনবাস, সীতার অপহরণ এবং লঙ্কার যুদ্ধও রাজপুত চিত্রগুলিতে চিত্রিত হয়েছে। [৩৪][৩৫]
রাম মিথিলা অঞ্চলের মৈথিলি সঙ্গীতের একজন প্রাথমিক ব্যক্তিত্ব। লোকসঙ্গীতের লগন ধারায় রাম এবং সীতা তাদের বিবাহের সময় যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। [৩৬][৩৭]
সংস্কৃত রামায়ণের লিখিত আকারে এবং মৌখিক ঐতিহ্যে রামের জীবন কাহিনি খ্রিস্টাব্দ ১ম সহস্রাব্দে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আসে। [৩৮] গৃহীত বহুধারণা এবং সাংস্কৃতিক বিষয়গুলির মধ্যে একজন ছিলেন রাম। অন্যরা বুদ্ধ, শিব এবং অন্যান্য ব্রাহ্মণ্য, বৌদ্ধ ধারণা এবং গল্পের চরিত্র। [৩৯] বিশেষ করে জাভা, বালি, মালয়, বার্মা, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং লাওসে রাম এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক ধারণার প্রভাব বৃদ্ধি পায়। [৩৯]
রামায়ণ ৮৬০ খ্রিস্টাব্দের দিকে সংস্কৃত থেকে পুরাতন জাভানিজ ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল, যখন পরিবেশন শিল্পকলা সংস্কৃতি সম্ভবত রাম-ভিত্তিক নৃত্য ও নাটকের তামিল এবং বাংলা সংস্করণ দ্বারা অনুপ্রাণিত মৌখিক ঐতিহ্য থেকে বিকশিত হয়েছিল। [৩৮] চীনা রেকর্ড অনুসারে এই পরিবেশন শিল্পকলার প্রথম প্রমাণ ২৪৩ খ্রিস্টাব্দের। নৃত্য ও সঙ্গীতের মাধ্যমে রামের জীবনকথার উদযাপন ছাড়াও, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নির্মিত হিন্দু মন্দির যেমন যোগকার্তার (জাভা) কাছে প্রম্বানান এবং ব্লিটারের (পূর্ব জাভা) কাছে পানতারানে, রামের জীবনকে চিত্রিতকারী ব্যাপক কারুশিল্প দেখা যায়। [৩৮][৪০] রামের জীবনের গল্প দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জনপ্রিয় হয়েছে। [৪১]
১৪ শতাব্দীতে আয়ুত্থায়া রাজ্য এবং এর রাজধানী আয়ুত্তায়ার নামকরণ করা হয়েছিল হিন্দু পবিত্র নগর অযোধ্যার নামে। রাজ্যের সরকারী ধর্ম থেরবাদ বৌদ্ধ ধর্ম। [৪২][৪৩] কনস্ট্যান্স জোনস এবং জেমস রায়ানের মতে, থাই রাজাদের সমসাময়িক যুগে অবিরত রামের কথা বলা হয়েছে। রামাকিয়েন রাম দ্বারা অনুপ্রাণিত একটি নাম - সংস্কৃত রামায়ণের স্থানীয় সংস্করণ। উদাহরণস্বরূপ, রাজা চুলালংকরণ (১৮৫৩-১৯১০) রাম পঞ্চম নামেও পরিচিত, অন্যদিকে রাজা ভাজিরালংকরম যিনি ২০১৬ সালে সিংহাসনে বসেছিলেন তাকে রাম দশম বলা হয় [৪৪]
উত্তর ভারতীয় অঞ্চলে, প্রধানত উত্তর প্রদেশ এবং বিহারে, লোকেরা জয় শ্রী রাম, জয় সিয়া রাম [৪৫] এবং সিয়াবর রামচন্দ্রজি কি জয়ের মতো নমস্কার ব্যবহার করে। [৪৬] রামানন্দী তপস্বীগণ ( বৈরাগী ) প্রায়ই "জয় সীতা রাম" এবং "সীতা রাম" মন্ত্র ব্যবহার করেন। [৪৭][৪৮] জয় সিয়া রামের মত সম্বোধনগুলি ধর্মীয় স্থান এবং সমাবেশগুলিতেও, উদাহরণস্বরূপ, কুম্ভ মেলায় প্রচলিত। [৪৯][৫০] এটি প্রায়শই রামায়ণ, রামচরিতমানস, বিশেষ করে সুন্দর কাণ্ড পাঠের সময় ব্যবহৃত হয়। [৫১]
আসামে বোরো লোকেরা নিজেদের রামসা বলে, যার অর্থ রামের সন্তান । [৫২] ছত্তিশগড়ে রামনামী লোকেরা তাদের সারা শরীরে রাম নামের ট্যাটু আঁকিয়েছে। [৫৩]
রামকে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে এবং মর্যাদা পুরুষোত্তম রাম ( অনু. আদর্শ মানব ) বলা হয়েছে। তার চরিত্র বহু চলচ্চিত্র, টিভি ধারাবাহিক, এবং নাটকে দেখানো হয়েছে। [৫৪]
নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গ রামায়ণের চলচ্চিত্র রূপান্তরে রামকে চিত্রিত করেছেন। [৫৫]
নিম্নলিখিত ব্যক্তিরা রামায়ণের টেলিভিশন অভিযোজনে রামকে চিত্রিত করেছেন।
বৌদ্ধধর্মানুসারে একবার বোধিসত্ত্ব শ্রীরামচন্দ্ররূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জাতকের কাহিনিতে তাই রামচন্দ্রের উল্লেখ আছে। বৌদ্ধধর্মে রামচন্দ্রকে পরম ধার্মিক এবং আদর্শ নৃপতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
শিখ ধর্মের ধর্মগ্রন্থ আদিগ্রন্থ বা শ্রী গুরু গ্রন্থ সাহিব-এ অযোধ্যা নৃপতি পরম ধার্মিক রাজা রামচন্দ্রের কাহিনী ও রামায়ণের যুদ্ধের কাহিনী বর্ণিত আছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.