Loading AI tools
কলিযুগের মহামন্ত্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হরে কৃষ্ণ (সংস্কৃত: हरे कृष्ण, আইএএসটি: Hare Kṛṣṇa, তামিল: ஹரே கிருஷ்ணா, রুশ: Харе Кришна, তেলুগু: హరే కృష్ణ, কন্নড়: ಹರೇ ಕೃಷ್ಣ ಮಂತ್ರ, থাই: หเรกฤษณะ, গুজরাটি: હરે કૃષ્ણ મંત્ર, পাঞ্জাবি: ਹਰੇ ਕ੍ਰਿਸ਼ਨ ਮੰਤਰ) মহামন্ত্র হল ১৬ শব্দের একটি মন্ত্র যা চৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষণের মাধ্যমে ভক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মন্ত্রটি পরম সত্তার তিনটি সংস্কৃত নাম দ্বারা রচিত; "হরে," "কৃষ্ণ," এবং "রাম।"[১][২]
গৌড়ীয় বৈষ্ণব তত্ত্ববিদ্যা অনুসারে, একজনের মৌলিক চেতনা এবং জীবনের লক্ষ্য হল ভগবানের (শ্রীকৃষ্ণ) প্রতি বিশুদ্ধ প্রেম।[৩]
১৯৬০-এর দশক থেকে, মন্ত্রটি অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এবং তার আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ দ্বারা ভারতের বাইরেও সুপরিচিতি লাভ করে (সাধারণত "দ্য হরে কৃষ্ণাস্" নামে খ্যাত)।[৪]
'হরে কৃষ্ণ' মন্ত্রটি সম্বোধন পদ একবচনে "হরে", "কৃষ্ণ", এবং "রাম" সংস্কৃত শব্দত্রয় দ্বারা রচিত। এটি একটি অনুষ্টুপ ছন্দের (আট অক্ষর দ্বারা গঠিত চার পংক্তির (পদ) শ্লোক) কবিতার স্তবক।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে
বৈষ্ণব নাম-ব্যুৎপত্তি অনুসারে, "হরে" শব্দটিকে ভগবান বিষ্ণুর অপর নাম "হরি" সম্বোধনসূচক পদ হিসাবে ব্যক্ত করা যায়, যার অর্থ "যিনি জাগতিক মোহ মুক্ত করেন"। তাই এই হরে কৃষ্ণের মূল মন্ত্রের ‘হরে’ শব্দটি ‘হরা’ (অর্থাৎ, যা হরণ করে) শব্দটির দ্যোতক। এটির মূর্তিরূপ হলেন পরম সত্ত্বা শ্রীকৃষ্ণের শাশ্বত সঙ্গী বা তার দিব্যলীলার শক্তি (‘নাদশক্তি’) রাধা। কলি-সন্তরণ মন্ত্রে রাধার নাম আটবার উচ্চারিত হয়েছে। এটি দিব্যপ্রেমের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে ভগবানের অপর দুই রূপ "কৃষ্ণ" (যিনি সবাইকে আকর্ষণ করেন) ও "রাম"-এর (যিনি সকল আনন্দের কারণ) নাম চারবার করে উচ্চারিত হয়েছে।[৫][৬][৭][৮][৯]
"হরে রাম" শব্দদুটির "রাম" নামটিকে কখনো কখনো কৃষ্ণের আরেক নাম 'রাধারমণ' (যিনি রাধার প্রিয়তম) হিসাবেও ব্যক্ত করা হয়। তবে সাধারণভাবে এটিকে, কৃষ্ণের আগের অবতার, রামায়ণের রাম হিসাবে উল্লেখ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে, কৃষ্ণের অগ্রজ ভ্রাতা বলরাম-এর খণ্ডনাম হিসাবেও এর অনুবাদ করা হয়।[১০]
কলিসন্তরন উপনিষদের মতে, এই মন্ত্রটি জোরে জোরে উচ্চারণ করলে কলিযুগের সকল কুপ্রভাব দূরীভূত হয়। এছাড়া বিভিন্ন পুরাণে (ব্রহ্মান্ড পুরাণ, পদ্মপুরাণ) ও রাধাতন্ত্রে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রটি পাওয়া যায়।
হিন্দুধর্মের গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ে এই মন্ত্রটি বিশেষ জনপ্রিয়। খ্রিস্টীয় ১৬শ শতাব্দীতে ভক্তি আন্দোলনের নেতা চৈতন্য মহাপ্রভু সারা ভারতে বিশেষত বাংলা ও উড়িষ্যায় "প্রতি নগরে ও গ্রামে" ভ্রমণ করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে এই "মহামন্ত্র"টি জনপ্রিয় করে তোলেন।[১১] গৌড়ীয় বৈষ্ণব প্রথা অনুসারে, মন্ত্রটি উচ্চৈঃস্বরে বারংবার সংগীতবাদ্য সহযোগে ভজন, দলবদ্ধভাবে কীর্তন বা একান্তভাবে মনে মনে জপ করা হয়। কারণ, এই সম্প্রদায়ের অনুগামীরা মনে করেন, মন্ত্রের শব্দ উচ্চারণকারী ও শ্রোতাকে মুক্তি দান করবে।[১২]
১৯৬০-এর দশক থেকে, মন্ত্রটিকে শ্রীকৃষ্ণ ও চৈতন্য মহাপ্রভুর ঐকান্তিক ভক্ত অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ তার গুরুর (শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর) নির্দেশে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহর (১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে) থেকে শুরু করে জীবনের শেষ এগারো বছর ধরে মোট চৌদ্দবার বিশ্ব পরিক্রমা করে গোটা পশ্চিমী বিশ্বে একটি সুপরিচিত শব্দসমাহারে পরিণত করেন।[১৩]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.