শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

দশাবতার

বিষ্ণু দশ প্রধান অবতার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

দশাবতার
Remove ads
Remove ads

দশাবতার বিষ্ণু দশ প্রধান অবতারবৈষ্ণব দর্শনে, কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে মর্ত্যে অবতীর্ণ পরম সত্ত্বাকে অবতার নামে অভিহিত করা হয়। বিষ্ণুর (বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কৃষ্ণের) দশ মুখ্য অবতারের সমষ্টিগত নামই দশাবতার। এই দশাবতারের কথা জানা যায় গরুড় পুরাণ থেকে।[] এই দশ অবতার মানব সমাজে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তির ভিত্তিতে সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হন।

Thumb
বিষ্ণুর দশাবতার (উপরের বাম কোণ থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে) মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, বামন, কৃষ্ণ, কল্কি, বুদ্ধ, পরশুরাম, রামনৃসিংহ; (মধ্যে) কৃষ্ণ

দশাবতারের অধিকাংশই অভিহিত হন লীলা-অবতার নামে। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, প্রথম চার অবতারের আবির্ভাবকাল সত্যযুগ। পরবর্তী তিন অবতার ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ হন। অষ্টম ও নবম অবতারের আবির্ভাবকাল যথাক্রমে দ্বকলিযুগ। দশম অবতার কল্কির আবির্ভাব ৪২৭,০০০ বছর পর কলিযুগের অন্তিম পর্বে ঘটবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।[] বিষ্ণু পুরাণ–এও বলা হয়েছে, কল্কি অবতারের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই কলিযুগের সমাপ্তি ঘটবে। কল্কি দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করে এক নতুন সত্যযুগের সূচনা ঘটাবেন।[]

Remove ads

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ

Thumb
বরোদা আর্ট গ্যালারি জাদুঘরে দশাবতার

অনুমিত হয়, ভাগবতধর্মের অধীনে বুদ্ধকে বিষ্ণুর অবতাররূপে গ্রহণ গুপ্তযুগে (৩৩০-৫৫০ খ্রিষ্টাব্দ) দুই ধর্মের সম্পর্কের নৈকট্যের ফলস্রুতি। এই কারণে মহাযান বৌদ্ধধর্মকে অনেক সময় বুদ্ধ-ভাগবতধর্ম বলা হয়ে থাকে।[] উল্লেখ্য, গবেষকরা মনে করেন যে এই যুগেই হিন্দুধর্মে অবতারতত্ত্ব পূর্ণ বিকাশ লাভ করে।[]

ঐতিহাসিক বিষ্ণুধর্মের বিবর্তনের ফলে বর্তমানকালের জটিল বৈষ্ণবধর্মের উদ্ভব। বিষ্ণু, নারায়ণ, বাসুদেবকৃষ্ণের আরাধনাকেন্দ্রিক এই ধর্মবিশ্বাস প্রতিষ্ঠালাভ করে ভগবদ্গীতার যুগে (খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী-খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দী)।[]

দ্বাদশ অলবর নামে পরিচিত সন্তেরা তাদের আধ্যাত্মিক সঙ্গীতের মাধ্যমে এই সম্প্রদায়কে সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন। পূর্বকালের অলবরগণ বিষ্ণুর অবতারদের পৃথকভাবে তালিকাভুক্ত করেননি। এমনকি তারা কৃষ্ণকেও অবতাররূপে পৃথক করেননি। তামিল ভাষায় তাদের বিষ্ণুকৃষ্ণ স্তুতিগান নালয়িরা (দিব্য প্রবন্ধ) নামে পরিচিত।[][]

Remove ads

তালিকা

বিষ্ণুর দশাবতার হলেন:
১. মৎস্য - মাছরূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ , উল্লেখযোগ্য চরিত্র বৈবস্বত মনু
২. কূর্ম - কচ্ছপের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ, উল্লেখযোগ্য চরিত্র মোহিনী
৩. বরাহ - শূকরের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ, উল্লেখযোগ্য চরিত্র জয় ও বিজয়, চতুষ্কুমার, হিরণ্যাক্ষ
৪. নৃসিংহ - অর্ধনরসিংহরূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ, উল্লেখযোগ্য চরিত্র প্রহ্লাদ, হিরণ্যকশিপু, নৃসিংহ
৫. বামন - খর্বকায় বামনের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ, উল্লেখযোগ্য চরিত্র মহাবলী (দৈত্য রাজা)
৬. পরশুরাম - পরশু অর্থাৎ কুঠারধারী রামের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ, উল্লেখযোগ্য চরিত্র পরশুরাম, কার্তবীর্যার্জুন, জমদগ্নি
৭. রাম - অযোধ্যার যুবরাজ ও রাজা রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৮. কৃষ্ণ - দ্বাপরযুগে জ্যেষ্ঠভ্রাতা বলরাম সাথে অবতীর্ণ। ভাগবত পুরাণ অনুসারে দ্বাপরযুগে অনন্ত নাগের অবতার বলরাম রূপে কৃষ্ণের সঙ্গে অবতীর্ণ হন। অধিকাংশ বৈষ্ণব শাখাসম্প্রদায় বলরামকে বিষ্ণুর অবতার বলে মনে করেন। যে সকল সূত্রে বুদ্ধের কোনো উল্লেখ নেই সেখানে বলরামকেই বিষ্ণুর নবম অবতার রূপে দশাবতারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৯. বুদ্ধ - কলিযুগে বিষ্ণুর নবম অবতার হিসেবে অবতীর্ণ।
১০. কল্কি - এই ভবিষ্যৎ অবতার কলিযুগের শেষ পর্বে অবতীর্ণ হবেন বলে হিন্দুরা মনে করেন।
Thumb
দশাবতার (পুথিচিত্র): (বামদিক থেকে) মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, বুদ্ধ, কল্কি।
Remove ads

বিকল্প তালিকা

Thumb
গোয়ার শ্রীবালাজি মন্দিরের দরজায় দশাবতার চিত্র; (উপরের বামকোণ থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে) মৎস্যম নৃসিংহ, পরশুরাম, রাম, কৃষ্ণ, কল্কি, বামন, বুদ্ধরূপী বিঠোবা, বরাহ ও কূর্ম।

দক্ষিণ ভারতে বলরামকে দশাবতারের তালিকাভুক্ত করা হয়। এই মত অনুসারে, বুদ্ধের অবতারত্ব স্বীকৃত নয়।[] [১০] কোনো কোনো গ্রন্থে আবার কৃষ্ণকে অবতার তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে।[১১][১২] একাধিক মধ্যযুগীয় ধর্মসম্প্রদায়ে কৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান নামে পরিচিত। গৌড়ীয় বৈষ্ণব,[১৩] বল্লভ সম্প্রদায়,[১৪]নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের মতে তিনি সকল অবতারের উৎস। নিম্বার্ক মতে, কৃষ্ণ আবার শুধু সকল অবতারের উৎসই নন, তিনি স্বয়ং বিষ্ণুরও উৎস। এই বিশ্বাসের মূলে রয়েছে "ভাগবতের একটি প্রসিদ্ধ উক্তি" (১।৩।২৮)।[১৫]

কোনো কোনো তালিকা অনুসারে, বলরাম কৃষ্ণের জ্যেষ্ঠভ্রাতা এবং গৌতম বুদ্ধের স্থলে বিষ্ণুর নবম অবতার। ভাগবত পুরাণ –এর মতে দ্বাপরযুগে শেষনাগের অবতার রূপে বলরামের আবির্ভাব। অধিকাংশ বৈষ্ণব সম্প্রদায়ে তিনি অবতাররূপে পূজিত হন। এই সকল তালিকায় গৌতম বুদ্ধের নাম দেখা যায় না।

মহারাষ্ট্রগোয়ার ঐতিহ্য অনুসারে পঞ্চাঙ্গ ও বিভিন্ন মন্দির স্থাপত্যে বিঠোবা বিষ্ণুর নবম অবতার বুদ্ধরূপে গণ্য হন। মহারাষ্ট্রের সন্তকবিরাও বিঠোবাকে বুদ্ধের রূপে বন্দনা করেছেন।[১৬]

জয়দেবের দশাবতার স্তোত্র

জয়দেব রচিত প্রলয়পয়োধিজলে (গীতগোবিন্দম্ কাব্যের প্রথম সর্গের প্রথম গীত, দশাবতার স্তোত্র নামে সমধিক পরিচিত) স্তোত্রে দশটি পৃথক স্তবকে দশ অবতারের বিবরণদানের পর নিম্নোক্ত শ্লোকে দশাবতারের কীর্তির একটি সুসংবদ্ধ তালিকা প্রদান করা হয়েছে:

বেদানুদ্ধরতে জগন্তি বহতে ভূগোলমুদ্বিভ্রতে
দৈত্যং দারয়তে বলিং ছলয়তে ক্ষত্রক্ষয়ং কুর্বতে।
পৌলস্ত্যং জয়তে হলং কলয়তে কারুণ্যমাতন্বতে
ম্লেচ্ছান মূর্চ্ছয়তে দশাকৃতিকৃতে কৃষ্ণায় তুভ্যং নমঃ।।
Remove ads

আরও দেখুন

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

Loading content...

বহিঃসংযোগ

Loading content...
Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads