শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

সত্য যুগ

সনাতন ধর্মের চার যুগের প্রথম যুগ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

সত্য যুগ
Remove ads
Remove ads

সত্যযুগ (সংস্কৃত: सत्ययुग) বা কৃতযুগ হলো হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী চতুর্যুগের প্রথম যুগ। অন্য যুগগুলো হলো ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগকলিযুগ

Thumb
কেদারেশ্বর গুহা মন্দিরটি আহমেদনগর জেলার পাহাড়ি দুর্গ হরিশচন্দ্রগড়ে অবস্থিত। যদিও লিঙ্গকে ঘিরে চারটি স্তম্ভ ছিল তবে এখন কেবল একটি স্তম্ভ অক্ষত। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন স্তম্ভগুলো যুগ বা সময়ের প্রতীক, যথা সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি যুগ।

বৈশাখ মাসের শুক্ল পক্ষে তৃতীয়া তিথিতে রবিবারে সত্যযুগের উৎপত্তি। এ যুগের পরিমাণ ১৭,২৮,০০০ বছর।[] এ যুগের ছয় জন শাসক: বলি, বেণ, মান্ধাতা, পুরোরবা, ধুন্ধুমার, কার্তবীর্যার্জুন। পুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী এ যুগে কোনো প্রকার পাপ ছিল না।[] অর্থাৎ সকলে পাপকার্য হতে বিরত থাকতো। এ যুগে প্রাণ ছিল মজ্জায়, মৃত্যু ছিল ইচ্ছাধীন, আয়ু ছিল ১,০০,০০০ বছর,মানুষের উচ্চতা ছিল ২১ হাত বা ৩১ ফুট এবং সোনার পাত্র ব্যবহার করা হত। সত্যযুগে বেদ ছিল সামবেদ, এবং তীর্থ ছিল পুষ্কর তীর্থতারক ব্রহ্মনাম ছিল- নারায়ণ পরা বেদা, নারায়ণ পরা অক্ষরা, নারায়ণ পরা মুক্তি, নারায়ণ পরা গতি। অর্থাৎ নারায়ণ পরম বেদ, নারায়ণ পরম অক্ষর, নারায়ণ পরম মুক্তি, নারায়ণ পরম গতি।

Remove ads

বৈশিষ্ট্য

চারটি যুগের মধ্যে সত্যযুগ হল প্রথম এবং সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ যুগ । এই যুগে জ্ঞান, ধ্যান এবং তপস্যার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। []

মহাভারতে বর্ণনা রয়েছে,[]

মানুষকে বেচা-কেনা করতে হতো না; তখন কোন ধনী-দরিদ্র ছিল না; শ্রমের কোন প্রয়োজন ছিল না, কারণ মানুষের যা প্রয়োজন তার সবই ইচ্ছাশক্তির দ্বারা প্রাপ্ত হয়েছিল; মানুষের প্রধান গুণ ছিল সমস্ত জাগতিক কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করা। কৃতযুগ ছিল রোগমুক্ত; কোনো আয়ুক্ষয় ছিল না; ঘৃণা, জড়া, মন্দ চিন্তা কোনো কিছুই ছিল না। তখন মানুষের মনে দুঃখ বা ভয় নেই। সমস্ত মানবজাতি ঈশ্বরের নিকট হতে পরম আশীর্বাদ প্রাপ্ত হতো।

Remove ads

সত্যযুগের ব্যাপ্তিকাল

হিন্দুগ্রন্থে চারটি যুগের (বিশ্বযুগ) কথা বর্ণনা হয়েছে, যেখানে এই চার যুগ চক্রাকারে আবরর্তন করে। সত্যযুগ হতে শুরু করে পরবর্তী যুগের (ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি) দৈর্ঘ্য ক্রমে এক-চতুর্থাংশ (২৫%) করে হ্রাস পায়।[][] প্রতিটি যুগকে তার যুগ-সন্ধ্যা (ঊষা) এবং যুগ-সন্ধ্যাংশের (সন্ধ্যা) মধ্যবর্তী একটি প্রধান সময়কাল হিসাবে বর্ণনা করা হয়, যেখানে প্রতিটি গোধূলি (ভোর/সন্ধ্যা) প্রধান সময়কালের দশমাংশ অবধি থাকে। অর্থাৎ সত্যযুগ ৪,০০০ দৈব বছর হলে এবং ওই যুগের আগে ৪০০ দৈববছর সন্ধ্যা এবং শেষে ৪০০ দৈববছর সন্ধ্যাংশ হয়।[] পরবর্তী যুগগুলোতে সময়ের পরিমাণ ১,০০০(এক হাজার) দৈববছর করে এবং সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ ১০০(এক শত) দৈববছর করে কমে যায়। এর সময় দৈর্ঘ্যকে কখনো দৈব-বছর এককে হিসাব করা হয়। প্রতিটি দৈব-বছর ৩৬০টি সৌর (মানব) বছরের সমান।[][][১০]

সত্যযুগ হচ্ছে এই চার যুগের মাঝে প্রথম। ঊষা ও সন্ধ্যা সহ সত্যযুগের সময়কাল ৪,৮০০ দৈব বছর বা ১,৭২৮,০০০ সৌর বছর।

  • সত্যযুগ সন্ধ্যা (ঊষা): ১৪৪,০০০ (৪০০ দৈব) বছর।
  • সত্যযুগ (মধ্য): ১৪৪০,০০০ (৪০০০ দৈব) বছর।
  • সত্যযুগ সন্ধ্যা (সন্ধ্যা):১৪৪,০০০ (৪০০ দৈব) বছর।
Remove ads

সত্যযুগের অবতার সমূহ

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী সত্যযুগে বিষ্ণুর অবতার সংখ্যা চার।[১১] অর্থাৎ, এই সময়টিতে ধর্ম রক্ষার্থে স্বয়ং বিষ্ণু বিভিন্ন রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

পুরাণে বর্ণিত সত্যযুগের ঘটনাসমূহ

সারাংশ
প্রসঙ্গ

চাক্ষুষ মন্বন্তরের শেষের দিকে এক প্রলয়ংকারী বন্যায় পৃথিবী থেকে জীবনের সকল নিশানা মুছে যায়। শুধু মাত্র মৎস্য অবতারের মাধ্যমে বৈবস্বত মনুকে বিষ্ণু রক্ষা করে। মৎস্য অবতারের কৃপায় পরবর্তী মন্বন্তরে বৈবস্বত মনু পৃথিবীকে জনাকীর্ণ করে তোলে।[১২][১৩][১৪] ইতিহাসের সকল রাজবংশের আগমন ঘটে বৈবস্বত মনুর পুত্র ও তার একমাত্র কন্যা ইল থেকে। এই কন্যা এক যজ্ঞ থেকে জন্ম নেয় ও পরে পুরুষ হয়।[১৫] ইক্ষ্বাকু হলেন বৈবস্বত মনুর জ্যেষ্ঠ পুত্র যিনি কোশল রাজ্যের অযোধ্যায় সূর্যবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। উল্লেখ্য যে বৈবস্বত মনুর পিতা হল বিবস্বান তথা সূর্য দেব। ইক্ষ্বাকুর কনিষ্ঠ পুত্র নিমি একটু পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বিদেহ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। নিমি তার পুত্র মিথির নামানুসারে মিথিলাকে বিদেহ রাজ্যের রাজধানী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন।[১৬] রাজা মিথিকে জনক নামেও ডাকা হতো, পরবর্তীতে যে সমস্ত ব্যক্তি মিথিলার রাজা হতো তাদের সকলকেই জনক বলা হতো।

একই সময়ে মধ্যদেশের (দোয়াব) প্রতিস্থানে উত্থান ঘটে চন্দ্র বংশের। তারা হল বৃহস্পতির স্ত্রী। তারা ও চন্দ্রের (সোম) অবৈধ প্রণয়ে জন্ম হয় বুধের। বুধ ও ইলার ঔরসজাত সন্তান পুরূরবা।[১৭] পুরূরবার ও উর্বশীর প্রেম কাহিনী প্রথম বর্ণিত হয় ঋগ্বেদে।[১৮] কয়েক প্রজন্ম ধরে তাদের এই প্রেম কাহিনী ভারতের পৌরাণিক কাহিনীতে পরিবর্তিত হয়েছে। কবি কালিদাস এ কাহিনী অবলম্বনে তার বিক্রমোর্বশী নাটক রচনা করেছেন। পুরূরবার কনিষ্ঠ পুত্র অমাবসু কান্যকুজ্ব (কনৌজ) সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।[১৯]

পুরূরবারের জ্যেষ্ঠ পুত্র আয়ুর পরে সাম্রাজ্যটি দুটি ভাগে ভাগ হয়। আয়ুর জ্যৈষ্ঠ পুত্র নহুষ স্বর্গে ইন্দ্র হিসাবে অধিষ্ঠিত হলে সে ইন্দ্রানীর (ইন্দ্রের স্ত্রী শচী) প্রতি প্রণয়াসক্ত হয়ে পরে।[২০] তার এ লোলুপ দৃষ্টির জন্য তাকে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করা হয়। আয়ুর আরেক ছেলের নাম ক্ষত্রবর্ধ, তিনি কাশিতে (বারাণসী) রাজ্য স্থাপন করেন। তার বংশধররা কাশেয় নামে পরিচিত।[১৯]

নহুষের পুত্র ও উত্তরাধিকারী যযাতি একজন বিখ্যাত বীর ছিলেন, তিনি চক্রবর্তী রাজা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। তার দুই স্ত্রী, অসুরগুরু শুক্রাচার্যের (শুক্র) কন্যা দেবযানী ও দানবরাজ বৃষপর্বার কন্যা শর্মিষ্ঠা। তার ছিল পাঁচ পুত্র, দেবযানীর গর্ভে জন্ম হয় যদু ও তুর্বসুর, শর্মিষ্ঠার গর্ভে জন্ম নেয় দ্রুহ্য, অনু ও পুরু । এদের মধ্যে পুরু সর্ব কনিষ্ঠ হলেও, সে ছিল সবচেয়ে কর্তব্যপরায়ণ। তাই যযাতি তাকেই প্রতিস্থানের পুরুষানুক্রমিক সার্বভৌম ক্ষমতার উত্তরাধিকারী করে যান।[২১] যযাতির বড় পুত্রেরা প্রতিস্থানের আশপাশের রাজ্যগুলো প্রাপ্ত হয়েছিল। যযাতির পাঁচ পুত্র থেকেই পাঁচটি রাজ বংশের সূচনা হয় যথা- যাদব, তুর্বসু, দ্রুহ্য, আনব ও পৌরব।[২২]

যদুর পরপরই যাদব সাম্রাজ্য দু'ভাগে ভাগ হয়ে যায় যার প্রধান অংশের নাম ক্রোষ্টি, ও অপর স্বাধীন অংশের নাম হৈহয়। হৈহয় রাজ্যের রাজা ছিলেন সহস্রজিৎ। সহস্রজিৎ যদু বংশের রাজা শশবিন্দুর অধীনে এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন, তিনি চক্রবর্তীও হয়েছিলেন। অযোধ্যারাজ যুবনাশ্বের পুত্র রাজা মান্ধাতা[২৩] শশবিন্দু কন্যা বিন্দুমতিকে বিবাহ করেন ও নিজের খ্যাতি বৃদ্ধি করেন। মান্ধাতাও তার শ্বশুরের পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজ্য বিস্তার ঘটান ও চক্রবর্তী উপাধী ধারণ করেন।[২৪] চক্রবর্তী রাজা মান্ধাতার এক পুত্র পুরুকুৎস নদীর দেবী নর্মদাকে বিবাহ করেন। অপর এক ছেলে মুচকুন্দ মাহিষ্মতি নামে নর্মদা নদীর তীরে এক শহর গড়ে তোলেন ও তা সুরক্ষিত করেন।

তার অল্প পরেই দ্রুহ্যুরাজ গান্ধার উত্তর-পশ্চিমের দিকে অগ্রসর হন(বর্তমান খাইবার পাখতুনখোয়া) ও গান্ধার সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তার বংশধরগণ ভারতের বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ম্লেচ্ছ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।[২৫] অনু কর্তৃক সৃষ্ট বংশ আনব পরবর্তীকালে উশীনর ও তিতিক্ষুর অধীনে দুভাগে ভাগ হয়। উশীনরের পুত্রগণ পাঞ্জাবের পূর্ব দিকে বিভিন্ন বংশের প্রতিষ্ঠা করে যথা যোদ্ধা, অবষ্ঠী, নবরাষ্ট্র, ক্রিমিল ও শিবি। উশিনরের পুত্র শিবি তার নামে শিবপুরে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন, তিনি ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীতে তার বদান্যতার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তার পুত্ররা সম্পূর্ণ পাঞ্জাব অধিকার করে বৃষদ্রব, মদ্রক, কৈকেয় ও সৌবীর ইত্যাদি রাজ্য স্থাপন করে। অনু বংশের অপর অংশ পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে তিতিক্ষুর অধীনে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, সুহ্ম ও পুণ্ড্র রাজ্য স্থাপন করে।[২৫]

হৈহয় রাজা ছিলেন কৃতবীর্য্য। তিনি ভৃগুবংশীয় ঋষিদের পুরোহিত হিসাবে পেয়েছিলেন ও তাদের উন্নয়নে অনেক সম্পদ দান করেছিলেন। এ সম্পদদানকে কৃতবীর্য্যের আত্মীয়স্বজন ভালোভাবে গ্রহণ করে নি। ফলে তারা সে সকল সম্পদ ফেরত নেওয়ার চেষ্টা করলে, ভৃগুবংশীয়গণ প্রতিরোধ করে। তারা ভার্গবদের সাথে অন্যায় আচরণ করতে থাকে, তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভার্গবগণ অন্য প্রদেশে পলায়ন করে।[২৬] তৎকালীন কান্যকুজ্বের রাজা গাধির পুত্র ছিলেন রাজা বিশ্বামিত্র। বিশ্বামিত্র পরবর্তীকালে ব্রহ্মার উদ্দেশ্যে তপস্যা করে ব্রহ্মর্ষি পদ প্রাপ্ত হন। [১৯][২৭] গাধির কন্যা সত্যবতীর সাথে বিবাহ হয় ভৃগু ঋষির পুত্র ঋচিকের সাথে। সত্যবতী ঋচিকের ঔরসে জমদগ্নি নামে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন।

সূর্য বংশের ধারাবাহিকতায় গাধি ও কৃতবীর্য্যের সমসাময়িক ছিলেন ত্র্যর্যারুণ। তিনি অযোধ্যার শাসক ছিলেন। ত্র্যয়ারুণ তার গুরু বশিষ্ঠের পরামর্শে নিজের সন্তান সত্যব্রত কে বনবাস দেন। সত্যব্রতের অপর নাম ত্রিশঙ্কু। ত্র্যযারুণের মৃত্যুর পর ত্রিশঙ্কু সশরীরে স্বর্গারোহণের উদ্দেশ্যে যজ্ঞের আয়োজন করেন। ঋষি বশিষ্ঠ সে যজ্ঞে পৌরোহিত্য করতে অস্বীকার করেন।[২৮] প্রত্যাখ্যাত হয়ে ত্রিশঙ্কু বশিষ্ঠের পুত্রদের শরণাপন্ন হন। পিতার কাছে থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে আবার তার সন্তানদের কাছে আসায় তারা কুপিত হয়ে ত্রিশঙ্কুকে অভিশাপ দেন। এর অব্যবহিত পরে কান্যকুজ্বের রাজা বিশ্বামিত্র ঋষি বশিষ্ঠের কামধেনু নন্দিনী (আরেক নাম শবলা- দুগ্ধবতী গাভী) কে অধিকার করার চেষ্টা করেন। এতে বশিষ্ঠ ও বিশ্বামিত্রের মাঝে প্রচণ্ড এক যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে বিশ্বামিত্রের পরাজয় ঘটে। এতে তিনি ক্ষত্রিয়ের ক্ষাত্রশক্তি থেকে ব্রহ্মশক্তির শ্রেষ্ঠত্ব বুঝতে পারেন। তাই বিশ্বামিত্র ব্রহ্মর্ষি হওয়ার জন্য তার সিংহাসন ত্যাগ করে তপস্যা করতে থাকেন।[২৯] এই সময় বিশ্বামিত্রের সাথে ত্রিশঙ্কুর মিত্রতা হয়। বিশ্বামিত্র ত্রিশঙ্কুর স্বশরীরে স্বর্গারোহণ যজ্ঞ করতে রাজি হন।[৩০]

এভাবে বশিষ্ঠ ও বিশ্বামিত্রের মাঝে শত্রুতা চলতে থাকে। এমনকি ত্রিশঙ্কুর পুত্র রাজা হরিশচন্দ্রের রাজত্ব কালেও তা বিদ্যমান ছিল। হরিশচন্দ্রের এক ছেলের নাম রোহিতাশ্ব। হরিশচন্দ্র রোহিতকে বরুণের উদ্দেশ্যে বলি দেওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। বলি উৎসর্গে দেরি হচ্ছিল কেননা রাজা হরিশচন্দ্র শোথ রোগে (যে রোগে জলীয় পদার্থ জমে শরীরের কোনো অংশ ফুলে ওঠে) ভুগছিলেন। বশিষ্ঠের পরামর্শে রোহিত অজিগর্তের পুত্র শুনঃশেফকে ক্রয় করে নেয়, যাতে নিজের জায়গায় শুনঃশেফকে বলি দেওয়া যায়। উল্লেখ্য যে, শুনঃশেফ ছিলেন বিশ্বামিত্রের বোনের নাতি। শুনঃশেফকে বিশ্বামিত্র বরুণমন্ত্র শিখিয়ে দেন। তাই বলির পূর্বে শুনঃশেফ যখন মন্ত্র উচ্চারণ করেন তখন বরুণের আবির্ভাব ঘটে, তিনি শুনঃশেফের প্রতি খুশি হয়ে তাকে মুক্ত করে দেন ও রাজা হরিশচন্দ্রের রোগ মুক্তি ঘটান। বিশ্বামিত্র তখন শুনঃশেফকে নিজের জ্যেষ্ঠপুত্র হিসাবে গ্রহণ করেন ও তার নতুন নাম দেন দেবরথ।[৩১][৩২] কিন্তু এতে বিশ্বামিত্রের কিছু ছেলে বিদ্রোহ করে, বিশ্বামিত্রও রাগান্বিত হয়ে তাদেরকে সমাজচ্যুত হওয়ার অভিশাপ দেন। তারাই ছিল বিভিন্ন দস্যু বংশ যেমন অন্ধ্র, মুতিব, পুলিন্দ ইত্যাদি বংশের পূর্বপুরুষ।[৩৩][৩৪] তারপর বিশ্বামিত্র ব্রহ্মর্ষির মর্যাদা প্রাপ্ত হন।[৩৫]

অপর দিকে হৈহয় বংশের রাজা অর্জুন কার্তবীর্য্য তার পিতা কৃতবীর্য্যের স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি ছিলেন একজন পরাক্রমশালী রাজা। জমদগ্নির সাথে তিনি দীর্ঘ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরেন। ইক্ষ্বাকু বংশের এক ক্ষুদ্র রাজার কন্যা ছিলেন রেণুকা। জমদগ্নি ও রেণুকার ঔরসে জন্ম নেন বিষ্ণুর অবতার পরশুরাম। পরশুরাম অর্জুন কার্তবীর্য্যকে হত্যা করলে প্রতিশোধ হিসাবে কার্তবীর্য্যের সন্তান জমদগ্নিকে হত্যা করেন। পরশুরাম এর সমুচিত জবাব দিতে ক্ষত্রিয় বংশের বিনাশ সাধনে দৃঢ় সংকল্প হন। পাঁচজন ক্ষত্রিয় ব্যতিত তিনি সকল ক্ষত্রিয়কে হত্যা করেন।[৩৬]

এই পাঁচজন ক্ষত্রিয় পাঁচটি জাতির সৃষ্টি করেন যথা — তালজংঘ, বীতিহোত্র, অবন্তি, তুডিকের ও যত। এরা সম্মিলিত ভাবে অযোধ্যা আক্রমণ করে ও বাহু রাজাকে রাজ্যচ্যুত করে।[৩৭] তারা কাশিরাজ দিবোদাস কে পরাজিত করে রাজ্যচ্যুত করে। দিবোদাসের পুত্র প্রতর্দন বীতিহোত্রদের পরাজিত করে রাজ্য উদ্ধার করেন।[৩৮] ক্ষণকাল পরে বাহু সগর নামে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। সগর তাদের সকল শত্রুকে পরাজিত করে সম্পূর্ণ রাজ্য উদ্ধার করেন ও চিরকালের জন্য হৈহয় বংশকে ধ্বংস করেন।[৩৭]

সগরের ষাট হাজার পুত্র ছিল। কোন এক কারণে তার ছেলেরা কপিল ঋষিকে অপমান করলে, ঋষি তাদের অভিশাপ দিয়ে ভস্মে পরিণত করেন। অতঃপর সগর তার পৌত্র অংশুমানকে অযোধ্যার উত্তরাধিকারী করে যান।[৩৯] সগরের শাসনের অবসানের সাথে সাথে সত্যযুগের পরিসমাপ্তি ঘটে।

Remove ads

তথ্যসূত্র

Loading content...

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

Loading content...
Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads