Loading AI tools
হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হিন্দু পুরাণ অনুসারে, শর্মিষ্ঠা (সংস্কৃত: शर्मिष्ठा), ছিলেন দৈত্যদের রাজা বৃষপর্বার কন্যা। তিনি দেবযানীর সঙ্গী ছিলেন কিন্তু তার জন্যই তাকে পরবর্তীকালে ভৃত্যের মতো জীবনযাপন করতে হয়েছিল।
শর্মিষ্ঠা ছিলেন দৈত্য রাজা বৃষপর্বার কন্যা, দৈত্যদের গুরু শুক্রাচার্য ছিলেন তার বৃষপর্বার রাজগুরু ও প্রধান উপদেষ্টা। দানবরাজ বৃষপর্বার কন্যা শর্মিষ্ঠা এবং দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের কন্যা দেবযানী দুজন সখী ছিলেন। একদিন দৈত্যের কন্যারা বনে বেড়াতে গেল। স্নানের পর মেয়েরা যে যার কাপড় সাজিয়ে রাখল। কিন্তু এর মধ্যে বাতাস এসে সমস্ত কাপড় ওলটপালট করে দিল,এবং এটি কেউ টের পেল না। তারপর যখন সবাই নিজনিজ কাপড় খুঁজতে লাগল,তখন বিরাট বিভ্রান্তি দেখা দিল। শর্মিষ্ঠা যে কাপড়খানি হাতে নিলেন,সেটি ছিল দেবযানীর। এতে দেবযানী অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে শর্মিষ্ঠাকে ভর্ৎসনা করলেন। এরপর শর্মিষ্ঠাও দেবযানীকে নানান কুকথা বললে তাদের মধ্যে শারীরিক কলহের সৃষ্টি হল ও শর্মিষ্ঠা,দেবযানীকে একটি কুয়ার মধ্যে ফেলে দিল। তারপর শর্মিষ্ঠা সেখান থেকে প্রস্থান করলে নহুষের পুত্র মহারাজ যযাতি ঘোড়ায় চড়ে সেই পথে যাচ্ছিলেন। মৃগয়া করতে করতে ক্লান্ত ও পিপাসু যযাতি একটি কুয়ার সন্ধান করছিলেন। তিনি সেই কুয়ার নিকটে এসে দেখেন যে একটি পরমাসুন্দরী কন্যা সেখানে কাঁদছে। দেবযানীর সাথে আলাপ-আলোচনার পর তিনি জানতে পারলেন যে দেবযানী দৈত্যরাজ বৃষপর্বার কন্যা। যযাতি তাকে মিষ্ট কথায় শান্ত করলেন ও সেখান থেকে প্রস্থান করলেন।[1][2]
যযাতি চলে যাওয়ার পর শর্মিষ্ঠার প্রতি ক্ষোভে দেবযানী, পিতা শুক্রাচার্য্যকে অভিযোগ জানালেন যে শর্মিষ্ঠা দেবযানীকে কুয়ায় ফেলে দিয়েছেন ও তার পিতার নামে কুকথা বলেছেন। দেবযানীর মুখে একথা শোনার পর শুক্রাচার্য্য অত্যন্ত দুঃখিত হলেন ও বৃষপর্বাকে গিয়ে বললেন যে শুক্র ও দেবযানী আর বৃষপর্বার দেশে থাকবেন না। কিন্তু দৈত্যদের গুরু হিসেবে বৃষপর্বা শুক্রকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। বৃষপর্বা শুক্রকে অনেক অনুনয়-বিনয় করলেন যেন তারা রাজ্য ছেড়ে না যান। তখন দেবযানী বললেন যে যদি শর্মিষ্ঠা সারাজীবন দেবযানীর দাসী হয়ে থাকেন,তবেই তারা এরাজ্যে থাকবেন। শর্মিষ্ঠা তখন অনুশোচনা করলেন যে তার জন্য শুক্রাচার্য্য ও দেবযানী দুজনেই রাজ্য ছেড়ে চলে যাবেন,এ হতে পারে না,তাই তিনি একহাজার সখী সমেত দেবযানীর দাসী হলেন।
একদিন দেবযানী শর্মিষ্ঠা ও অন্যান্য দাসীদের সঙ্গে নিয়ে অরণ্যে বনভোজনে গেলেন। সেখানে যযাতি মৃগয়া করতে এসেছিলেন ও আবার তাদের সাক্ষাৎ হল। দেবযানী যযাতিকে তার পিতার কাছে নিয়ে গেলেন ও বললেন যে তিনি যযাতিকে বিবাহ করতে চান। শুক্র নির্বিঘ্নে অনুমতি দেন ও যযাতিকে বলেন যে সে যেন শর্মিষ্ঠাকে সুযোগ্য সম্মান দেন ও যত্ন করেন কারণ শর্মিষ্ঠা একজন রাজকুমারী এবং বলেন যে তার সাথে তিনি বৈবাহিক সম্পর্ক করতে পারবেন না। যযাতি দেবযানীকে বিবাহ করেন ও তাকে যত্ন করতেন।[3]
কিছুসময় পর যযাতির সাথে শর্মিষ্ঠার সাক্ষাৎ হয় ও তিনি শর্মিষ্ঠার সৌন্দর্য ও বুদ্ধিমত্তা দেখে অভিভূত হন। ভাগ্যের ফেরে, শর্মিষ্ঠাও যযাতির প্রেমে পড়ে যান। তিনি যযাতিকে একদিন তার প্রাসাদে নিয়ে যান ও তার ভালোবাসার কথা তাকে জানান। যযাতিও তার সৌন্দর্যে অভিভূত ছিলেন ও শর্মিষ্ঠার প্রতি তাঁর স্নেহ ও ভালোবাসার কথা তাকে জানানোর জন্য উদগ্রীব ছিলেন। যাইহোক, শুক্রকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও এই ভালোবাসার মারাত্মক পরিণামের কথা ভেবে তিনি পিছু হটেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত যযাতি তার ধর্মের চাইতে তার আবেগকে বেশি গুরুত্ব দেন এবং শর্মিষ্ঠাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। ক্রমে শর্মিষ্ঠা যযাতির তিন পুত্রের জন্ম দেন,তারা হলেন দ্রুহ্যু,অনু ও পুরু।[4]
অবশেষে দেবযানী শর্মিষ্ঠার সাথে তার স্বামীর সম্পর্কের কথা জানতে পারেন ও এই কথা তার পিতা শুক্রকে জানান। শুক্র তৎক্ষণাৎ যযাতিকে অভিশম্পাত করেন যে শীঘ্রই যযাতি তার যৌবন হারিয়ে বৃদ্ধ হয়ে পড়বেন। কিন্তু এর সাথে শুক্র বলেন যযাতির কোনো এক পুত্র যদি তার বার্ধক্য গ্রহণ করে,তবে তিনি কিছুসময়ের জন্য এই ধাপ থেকে মুক্তি পাবেন। যযাতি তার সকল পুত্রকে তার বার্ধক্য গ্রহণ করার অনুরোধ করেন কিন্তু কেউ রাজি হলেন না, শুধুমাত্র শর্মিষ্ঠার কনিষ্ঠ পুত্র পুরু পিতার বার্ধক্য গ্রহণ করতে রাজি হন। যযাতি পুরুকে আশীর্বাদ করেন যে পুরুই যযাতির একমাত্র উত্তরসূরী। এই পুরুই ছিলেন বিখ্যাত কুরু রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। শর্মিষ্ঠা পরবর্তীকালে তার ত্যাগের জন্য আশীর্বাদধন্য হন ও মৃত্যুর পরে নক্ষত্রে পরিণত হন। এই শর্মিষ্ঠা নক্ষত্রটিকে পশ্চিমারা বলে থাকেন ক্যাসিওপিয়া[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.