Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ব্রহ্মপুরাণ (সংস্কৃত: ब्रह्म पुराण) হল সংস্কৃত ভাষায় লিখিত হিন্দু পুরাণ সাহিত্যের অন্তর্গত আঠারোটি মহাপুরাণের অন্যতম।[1] সকল সংকলনেই এই পুরাণটিকে প্রথম মহাপুরাণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে বলে এটির অপর নাম আদিপুরাণ।[1][2] আবার এই পুরাণের অনেকগুলি অধ্যায় সূর্য-কেন্দ্রিক বলে এটির আরেক নাম সৌরপুরাণ।[3] ব্রহ্মপুরাণ প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন ভৌগোলিক স্থানমাহাত্ম্যের একটি সংকলন।[4] সেই সঙ্গে এই পুরাণের কয়েকটি অংশে অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হয়েছে।[5][6]
বর্তমানে ব্রহ্মপুরাণ নামে যে গ্রন্থটি পাওয়া যায়, সেটি সম্ভবত প্রকৃত ব্রহ্মপুরাণের থেকে আলাদা। রাজেন্দ্রচন্দ্র হাজরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, এটি প্রকৃতপক্ষে একটি উপপুরাণ এবং খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত এটি উপপুরাণ হিসাবেই পরিচিত ছিল। এই পুরাণের অনেক শ্লোকই অন্যান্য পুরাণ থেকে গৃহীত। মরিস উইন্টারনিৎজের মতে, অধুনা প্রাপ্ত পুরাণটির সামান্য অংশই মূল পুরাণটি থেকে গৃহীত। এই পুরাণে ১২৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত কোণার্ক সূর্যমন্দিরের উল্লেখ থাকায় গবেষকেরা মনে করেন, ওডিশা অঞ্চলের তীর্থস্থানের বিবরণ-সংবলিত অধ্যায়গুলি খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর পূর্বে লিখিত হওয়া সম্ভব নয়।[7][8][9] বর্তমানে লভ্য পুথিগুলিতে ২৪৫টি অধ্যায় পাওয়া যায়।[2] সমগ্র গ্রন্থটি দু’টি ভাগে বিভক্ত: "পূর্বভাগ" ও "উত্তরভাগ"।[5] গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য-সহ অসংখ্য পাঠান্তর পাওয়া যায় এই গ্রন্থটির। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমান্বয়ে এটি সংশোধিতও হয়েছে।[5] এছাড়া ব্রহ্মপুরাণে মহাভারত, বিষ্ণুপুরাণ, বায়ুপুরাণ, সাম্বপুরাণ ও মার্কণ্ডেয় পুরাণ সহ অন্যান্য বিভিন্ন হিন্দু ধর্মগ্রন্থ থেকেও নানা উদ্ধৃতি গৃহীত হয়েছে বলে মনে করা হয়।[2][6]
ব্রহ্মপুরাণের ৬০ শতাংশ অধ্যায়ের উপজীব্য বিষয় হল গোদাবরী নদী অববাহিকা, অধুনা ওডিশা ভূখণ্ড এবং রাজস্থানের চম্বল নদের তীরবর্তী অঞ্চলের ভূগোল ও তীর্থস্থানগুলির বিবরণ।[1][10] ভ্রমণ সহায়িকা-শৈলীর এই অংশগুলি অসাম্প্রদায়িক। এই সকল অংশে বিষ্ণু, শিব, শক্তি ও সূর্যের মন্দির ও তীর্থগুলির মাহাত্ম্য কীর্তিত হয়েছে।[2] জগন্নাথ (বিষ্ণু বা কৃষ্ণ) মন্দির-সংক্রান্ত বিবরণ অবশ্য অপর তিনটির তুলনায় অধিকতর। এই কারণে গবেষকেরা মনে করেন, অধুনা লভ্য পুথিগুলির লেখকেরা বৈষ্ণব সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন।[2][11] এই গ্রন্থে কোণার্ক সূর্য মন্দিরের বিবরণটিও উল্লেখযোগ্য।[1]
ব্রহ্মপুরাণের ২৪৫টি অধ্যায়ের ১৮টি অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে বিশ্বতত্ত্ব, পৌরাণিক কাহিনি, রাজবংশের বৃত্তান্ত, মন্বন্তর (পৌরাণিক কালচক্র) এবং পুরাণ সাহিত্যের বৈশিষ্ট্যসূচক অন্যান্য বিষয়বস্তু। অন্যান্য অধ্যায়গুলির উপজীব্য বিষয় হল সংস্কার, ধর্মশাস্ত্রের সারসংক্ষেপ, পৃথিবীর ভূগোল সম্পর্কে ধর্মশাস্ত্রের তত্ত্বাবলি, হিন্দু দর্শনের সাংখ্য ও যোগ শাখা দু’টির সারসংক্ষেপ ও অন্যান্য বিষয়।[1][5] ব্রহ্মপুরাণের অনেকগুলি অধ্যায়ে মন্দির ও তীর্থমাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। ৩৮শ-৪০শ অধ্যায় গ্রন্থমধ্যে গ্রথিত সৌরপুরাণের একটি অংশ। এই অংশে খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর দ্বৈতবাদী দার্শনিক মধ্বের তত্ত্ব ও ভক্তিমূলক উপাসনাপদ্ধতির কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে।[12][13][14]
পদ্মপুরাণে ব্রহ্মপুরাণকে রাজসিক পুরাণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এটিকে ব্রহ্মার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।[15] যদিও লব্ধ পুথিগুলিতে ব্রহ্মার মাহাত্ম্য কীর্তিত হয়নি।[5] গবেষকদের মতে, পুরাণগুলির "সত্ত্ব-রজঃ-তমো" শ্রেণিবিভাগ "সম্পূর্ণ অলীক কল্পনা"। এই পুরাণের ক্ষেত্রেও এই জাতীয় শ্রেণিবিন্যাসের কোনও যথোপযুক্ত কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।[16]
গোদাবরী নদী অববাহিকার অন্তর্গত তীর্থ ও মন্দিরগুলির স্থানমাহাত্ম্য-সংক্রান্ত পুথিগুলিকে "গোদাবরী মাহাত্ম্য" বা "গৌতমী মাহাত্ম্য" নামে পৃথক গ্রন্থের আকারেও পাওয়া যায়। অন্যদিকে রাজস্থান অঞ্চলের স্থানমাহাত্ম্য-সংক্রান্ত অংশটিকে পাওয়া যায় "ব্রহ্মোত্তর পুরাণ" নামে আরেকটি পৃথক গ্রন্থের আকারেও।[1][10] প্রচলিত বিশ্বাস ও অন্যান্য পুরাণের উক্তি অনুযায়ী, ব্রহ্মপুরাণের শ্লোকসংখ্যা ১০,০০০। কিন্তু লভ্য পুথিগুলিতে ৭,০০০ থেকে ৮,০০০ শ্লোক পাওয়া যায়। এছাড়া একই গ্রন্থের ভিন্ন ভিন্ন পাঠ অনুযায়ী "খিল" (নির্ঘণ্ট) ব্রহ্মোত্তর পুরাণ অংশের শ্লোকসংখ্যা ২০০০ থেকে ৩০০০।[3]
১৯৮৯ সালে সোহ্নেন ও স্ক্রেইনার ব্রহ্মপুরাণের একটি সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেন।[17][18]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.