শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
ত্রেতা যুগ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
Remove ads
ত্রেতাযুগ (সংস্কৃত: त्रेतायुग) হলো হিন্দুধর্ম অনুযায়ী, চতুর্যুগের দ্বিতীয় যুগ। সংস্কৃত ভাষায় ত্রেতা অর্থ দ্বিতীয়। প্রথম যুগ হলো সিদ্ধ নৈতিকতার সত্যযুগ এবং দ্বিতীয়টি ত্রেতাযুগ। কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের নবমী তিথিতে সোমবারে ত্রেতা যুগের উৎপত্তি। এর পরিমাণ ১২,৯৬,০০০ বছর। এই যুগের পালনকর্তা বিষ্ণুর তিন অবতার যথাক্রমে বামন, পরশুরাম এবং রাম। পুণ্য তিন ভাগ, পাপ এক ভাগ। সূর্য বংশের শাসক- ব্রহ্মা, মরীচি, কাশ্যপ, সাবর্ণি, মনু, ধনু, সুষেণ, হরিদাস, যৌবনাশ্ব, মুচুকুন্দ, শতবাহু, বেণ, পৃত্থু, ইক্ষ্বাকু, দ্যোতকর, কৎসর্প, শ্রেষ্ঠধর, ককুৎস্থ, শতঞ্জীব, দণ্ড, হরিষ, বিজয়, হরিশচন্দ্র, রোহিতাশ্ব, মৃত্যুঞ্জয়, মহাপদ্ম, ত্রিশঙ্কু, উচ্চাঙ্গদ, মরুৎ, অনরণ্য, বিকর্ণবাহু, সগর, অংশুমান, অসমঞ্জ, ভগীরথ, অশ্বঞ্জয়, মণি দীলিপ, রঘু, অজ, দশরথ, শ্রীরাম, লব, কুশ। মানুষের উচ্চতা ছিল ১৪ হাত বা ২১ ফুট। আয়ু ছিল ১০,০০০ বছর। প্রাণ ছিল অস্থিতে। বেদ ছিল ঋগ্বেদ। রূপার পাত্র ব্যবহার করা হত। তীর্থ ছিল নৈমিষারণ্য। তারক ব্রহ্মনাম- রাম নারায়ণানন্ত মুকুন্দ মধুসুদন। কৃষ্ণ কেশব কংসারে হরে বৈকুণ্ঠ বামন। অর্থাৎ রাম নারায়ণ অনন্ত মুকুন্দ মধুসুদন কৃষ্ণ কেশব কংসারি হরি বৈকুণ্ঠ বামন-ভগবানের এইসমস্ত নাম।
Remove ads
বৈশিষ্ট্য
হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, ত্রেতা যুগ হলো চার যুগের দ্বিতীয় যুগ। এই যুগে সত্য যুগে বিদ্যমান ধর্মের চার পাদ হতে এক পাদ হীন হয়ে তিন পাদ বিদ্যমান থাকে।[১] কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের নবমী তিথিতে সোমবারে ত্রেতা যুগের উৎপত্তি। এ যুগে পুণ্য তিন ভাগ, পাপ এক ভাগ। এ যুগে প্রাণ ছিল অস্থিতে,এবং রূপার পাত্র ব্যবহার করা হত। ত্রেতা যুগের বেদ-ঋগ্বেদ।
ত্রেতাযুগের ব্যাপ্তিকাল

হিন্দুগ্রন্থে চারটি যুগের (বিশ্বযুগ) কথা বর্ণনা হয়েছে, যেখানে এই চার যুগ চক্রাকারে আবরর্তন করে। সত্যযুগ হতে শুরু করে পরবর্তী যুগের (ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি) দৈর্ঘ্য ক্রমে এক-চতুর্থাংশ (২৫%) করে হ্রাস পায়।[২][৩] প্রতিটি যুগকে তার যুগ-সন্ধ্যা (ঊষা) এবং যুগ-সন্ধ্যাংশের (সন্ধ্যা) মধ্যবর্তী একটি প্রধান সময়কাল হিসাবে বর্ণনা করা হয়, যেখানে প্রতিটি গোধূলি (ভোর/সন্ধ্যা) প্রধান সময়কালের দশমাংশ অবধি থাকে। অর্থাৎ সত্যযুগ ৪,০০০ দৈব বছর হলে এবং ওই যুগের আগে ৪০০ দৈববছর সন্ধ্যা এবং শেষে ৪০০ দৈববছর সন্ধ্যাংশ হয়।[৪] পরবর্তী যুগগুলোতে সময়ের পরিমাণ ১,০০০(এক হাজার) দৈববছর করে এবং সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ ১০০(এক শত) দৈববছর করে কমে যায়। এর সময় দৈর্ঘ্যকে কখনো দৈব-বছর এককে হিসাব করা হয়। প্রতিটি দৈব-বছর ৩৬০টি সৌর (মানব) বছরের সমান।[৫][৬][৭]
ত্রেতা হচ্ছে চারযুগের মাঝে দ্বিতীয়। ঊষা ও সন্ধ্যা সহ ত্রেতা যুগের সময়কাল মোট ৩,৬০০ দৈব বছর বা ১,২৯৬,০০০ সৌর বছর।[৩][২]
- ত্রেতাযুগ সন্ধ্যা (ঊষা): ১০৮,০০০ (৩০০ দৈব) বছর
- ত্রেতাযুগ (মধ্য): ১০৮০,০০০ (৩০০০ দৈব) বছর
- ত্রেতাযুগ সন্ধ্যা (সন্ধ্যা):১০৮,০০০ (৩০০ দৈব) বছর
Remove ads
ত্রেতাযুগের অবতার সমূহ
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ত্রেতাযুগে বিষ্ণুর অবতার সংখ্যা তিন। অর্থাৎ, এই সময়টিতে ধর্ম রক্ষার্থে স্বয়ং বিষ্ণু তিনটি রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
পুরাণে বর্ণিত ত্রেতাযুগের ঘটনাসমূহ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
অংশুমানের পৌত্র, রাজা সগরের প্রপৌত্র — ভগীরথ, গঙ্গা নদীকে মর্ত্যে এনেছিলেন যাতে তার পূর্বপুরুষগণ তথা সগরের পুত্রদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয় ও তারা স্বর্গে যেতে পারে।[৯] পরবর্তী খ্যাতিমান রাজা ছিলেন ঋতুপর্ণ, তিনি নিষদরাজ নলের সাথে মিত্রতা স্থাপন করে তার খ্যাতি আরও বৃদ্ধি করেছিলেন। বিদর্ভের যাদব রাজা ভীমের কন্যা দময়ন্তির সাথে নলের বিবাহ হয়। দময়ন্তি ও নলের বিবাহের মজার কাহিনী মহাভারতে রয়েছে। দ্যূত ক্রীড়ায় সর্বস্ব হারিয়ে পাণ্ডবরা যখন কাম্যক বনে ছিলেন তখন মহর্ষি বৃহদশ্ব যুধিষ্ঠিরকে নল-দময়ন্তীর এই উপাখ্যান বলেছিলেন।[১০]
ভগীরথের পাশাপাশি সময়ে দুষ্মন্ত পৌরব বংশের পুনরুত্থান ঘটান। দুষ্মন্ত বিশ্বামিত্রের কন্যা শকুন্তলা কে বিয়ে করেন। দুষ্মন্ত ও শকুন্তলা ভরত নামের এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন।[১১] ভরত চক্রবর্তী উপাধি ধারণ করেন ও তার নামেই বংশের নামকরন করেন। তার উত্তর পুরুষদের মধ্যে হস্তী হলেন পঞ্চম। তিনি উচ্চ দোয়াবে রাজধানী স্থানান্তর করে তার নামানুসারে হস্তীনাপুর রাখেন। কয়েক পুরুষ পরে ভরত বংশীয়রাই বিখ্যাত ভ্রাতৃহত্যার যুদ্ধ - কুরুক্ষেত্রে অবতীর্ণ হন। যেখানে কৌরব, পাণ্ডব ও ভরতবংশের মধ্যে যুদ্ধ হয়।[১২]
হস্তীর অব্যবহিত পরেই ভরত বংশ চারটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। কৌরব ও পাঞ্চাল দুটি উল্লেখযোগ্য বংশ। ঋগ্বেদে উল্লেখ আছে যে, পাঞ্চাল নরেশ দিবোদাস, দস্যু সম্বরের ৯৯ টি দুর্গ ধ্বংস করেন।[১৩] গৌতম মুনির স্ত্রী অহল্যা তার বোন। ইন্দ্র অহল্যাকে প্ররোচিত করেন ও নিজ কাম বাসনা চরিতার্থ করেন। এতে গৌতম ক্ষিপ্ত হয়ে অহল্যা কে শাপ দিয়ে পাথরে পরিণত করে বনে ফেলে যান।[১৪]
সুর্য বংশের আরেকবার উত্থান ঘটে রঘু, অজ ও দশরথের মত প্রজাবৎসল নৃপতিদের সময়ে।[১৫] বাল্মীকির রামায়ণে দশরথের জ্যেষ্ঠ পুত্র রাম ও তার স্ত্রী সীতার কাহিনী বর্ণীত হয়েছে। রামের সৎমাতা কৈকেয়ির ষড়যন্ত্রের কারণে রাম, সীতা ও অনুজ লক্ষ্মণের বনবাস হয়। বনের মধ্যে সীতাকে রাক্ষস রাজ রাবণ হরণ করেন, লঙ্কায় নিজের প্রাসাদে বন্দী করে রাখেন। রামচন্দ্র বনের বানর ও ভল্লুকদের সাথে মৈত্রী স্থাপন করে লঙ্কা অবরোধ করেন। লঙ্কার যুদ্ধে রাবণ রামের কাছে পরাজিত হলে রাম তাকে বধ করেন। সীতাকে উদ্ধার করে তিনি অযোধ্যায় ফিরে গিয়ে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
শ্রী রাম চন্দ্রের তিরোভাবের সাথে সাথে ত্রেতা যুগের অবসান হয় ও দ্বাপর যুগের শুরু হয়। রাম চন্দ্রের পর সূর্য বংশের স্থায়ী পতন ঘটে।
Remove ads
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads