Loading AI tools
পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বাঁকুড়া জেলা হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মেদিনীপুর বিভাগের অন্তর্গত পাঁচটি জেলার অন্যতম একটি জেলা। এই জেলার উত্তরে ও পূর্বে পূর্ব বর্ধমান এবং পশ্চিম বর্ধমান, দক্ষিণে পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ-পূর্ব হুগলি এবং পশ্চিমে পুরুলিয়া জেলা। দামোদর নদ বাঁকুড়া ও বর্ধমান জেলাদুটিকে পৃথক করেছে। এই জেলাকে "পূর্বের বঙ্গীয় সমভূমি ও পশ্চিমের ছোটোনাগপুর মালভূমির মধ্যকার সংযোগসূত্র" বলে বর্ণনা করা হয়। জেলার পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভাগের জমি নিচু ও উর্বর পলিমাটিযুক্ত। পশ্চিম ভাগের জমি ধীরে ধীরে উঁচু হয়েছে। এই অঞ্চলে স্থানে স্থানে ছোটোখাটো টিলা দেখতে পাওয়া যায়।[4]
বাঁকুড়া জেলা | |
---|---|
পশ্চিমবঙ্গের জেলা | |
পশ্চিমবঙ্গে বাঁকুড়ার অবস্থান | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
প্রশাসনিক বিভাগ | বাঁকুড়া |
সদরদপ্তর | বাঁকুড়া |
সরকার | |
• জেলাধ্যক্ষ | শ্রীমতী আর. বিমলা, আইএএস[1] |
• আরক্ষাধ্যক্ষ | শ্রী বৈভব তিওয়ারি, আইপিএস[2] |
• লোকসভা কেন্দ্র | বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর (তফসিলি জাতি) - উভয় কেন্দ্রের মধ্যেই পার্শ্ববর্তী জেলাগুলির কিছু অংশ সংযোজিত |
• বিধানসভা আসন | শালতোড়া, ছাতনা, রানিবাঁধ, রাইপুর, তালডাংরা, বাঁকুড়া, বড়জোড়া, ওন্দা, বিষ্ণুপুর, কোতুলপুর, ইন্দাস, সোনামুখী |
আয়তন | |
• মোট | ৬,৮৮২ বর্গকিমি (২,৬৫৭ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ৩৫,৯৬,২৯২ |
• জনঘনত্ব | ৫২০/বর্গকিমি (১,৪০০/বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা | ২,৩৫,২৬৪ |
জনতাত্ত্বিক | |
• সাক্ষরতা | ৭০.৯৫%[3] |
• লিঙ্গানুপাত | ৯৫৪ |
প্রধান মহাসড়ক | ৬০ নং জাতীয় সড়ক |
গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত | ১,৪০০ মিমি |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
বাঁকুড়া জেলা ও এর আশেপাশের অঞ্চলগুলি ছিল মধ্যযুগীয় পশ্চিমবঙ্গের মল্ল রাজত্বের কেন্দ্রভূমি। মধ্যযুগের শেষভাগে এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে বৈষ্ণবধর্ম মল্লভূমের রাজধর্মের মর্যাদা অর্জন করে। এরপর এই ধর্মই এই অঞ্চলের সংস্কৃতির দিক-নির্ণায়ক হয়ে ওঠে। ১৭৬৫ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মল্লভূম রাজ্য অধিকার করে নেয় এবং ১৮৮১ সালে আধুনিক বাঁকুড়া জেলাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলার নামকরণ করা হয় এর সদর শহরের নামানুসারে।[5]
‘বাঁকুড়া’ শব্দটির বুৎপত্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। কোল-মুণ্ডাদের ভাষায় ওড়া বা ড়া শব্দের অর্থ বসতি। বাঁকু শব্দের অর্থ এবড়ো খেবড়ো।ছোটোনাগপুর মালভূমির অংশ বিশেষ। ‘বাঁকুড়া’ নামটি 'বাঁকা' শব্দ থেকেও উৎপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। জেলার সবচেয়ে প্রভাবশালী লৌকিক দেবতাদের একজন হলেন ধর্মঠাকুর। তাকে স্থানীয়রা 'বাঁকুড়া রায়' নামে ডাকেন।[6] স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে, জেলা সদর বাঁকুড়া শহরের নামকরণ হয়েছে এই শহরের প্রতিষ্ঠাতা তথা স্থানীয় গোষ্ঠীপতি নেতা বাঁকু রায়ের নামানুসারে। অন্য একটি কিংবদন্তি অনুসারে, বিষ্ণুপুরের রাজা বীর হাম্বিরের ২২ পুত্রের অন্যতম বীর বাঁকুড়ার নামে এই শহরের নামকরণ করা হয়েছে। বীর হাম্বির তার রাজ্যকে ২২টি তরফে ভাগ করে দেন। প্রতিটি তরফ তার এক এক পুত্রের অধীনে আসে। জয়বেলিয়া তরফটি বীর বাঁকুড়ার ভাগে পড়ে। তিনিই বাঁকুড়া শহরটি গড়ে তোলেন। অন্য একটি মতে, বাঁকুড়া নামটি বানকুন্ডা নামের অপভ্রংশ। 'বানকুন্ডা' শব্দের অর্থ পাঁচটি দিঘি। পুরনো সরকারি নথিপত্রে ইংরেজি Bacoonda নামটি পাওয়া যায়।[4]
বাঁকুড়া জেলার ডিহরে প্রাচীন জনবসতির নিদর্শন পাওয়া যায়। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দে দ্বারকেশ্বর নদের অংশে উত্তর তীরে তাম্র-প্রস্তর যুগীয় জনবসতি গড়ে উঠেছিল।[7]
বাঁকুড়া জেলার আদি বাসিন্দা ছিল একাধিক প্রোটো-অস্ট্রালয়েড ও প্রোটো-দ্রাবিড়ীয় জনগোষ্ঠীর মানুষ। পরবর্তী প্রাগৈতিহাসিক যুগে আর্য জাতি এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যায়। এই সময় উত্তর ভারতের প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় সংস্কৃতি এই অঞ্চলে বিস্তার লাভ করে। যদিও বঙ্গের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এই অঞ্চলের আর্যীকরণ অপেক্ষাকৃত পরবর্তীকালে সম্পন্ন হয়েছিল।
প্রাচীন যুগে বাঁকুড়া জেলা ছিল রাঢ় অঞ্চলের অধীনস্থ। ঐতরেয় আরণ্যক-এ (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দী) এই অঞ্চলের অধিবাসীদের অসুর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাচীন জৈন ধর্মগ্রন্থ আচারাঙ্গ সূত্র-এ (আনুমানিক খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দী) বলা হয়েছে, সূহ্ম ও লাড়া (রাঢ়) রাজ্যে সুসভ্য ও অসভ্য দুই প্রকার মানুষই বাস করে।[8][9]
সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষায় লেখা শুশুনিয়া শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে পুষ্করণার (আধুনিক পোখান্না অঞ্চল) রাজা ছিলেন সিংহবর্মণের পুত্র চন্দ্রবর্মণ।[10] এলাহাবাদ লেখ থেকে জানা যায়, সমুদ্রগুপ্ত চন্দ্রবর্মণকে পরাজিত করে তার রাজ্যকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।[11] বহু বছর বাঁকুড়া জেলা ভূখণ্ডটি দণ্ডভুক্তি ও বর্ধমানভুক্তি রাজ্যের অন্তর্গত ছিল।[12]
কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন, প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয়রা প্রথমে উত্তর ও পূর্ববঙ্গে বসতি স্থাপন করেন। পশ্চিমবঙ্গে তাদের বসতিস্থাপনের ঘটনা অপেক্ষাকৃত পরবর্তীকালের ঘটনা। বঙ্গে বৌদ্ধ ও জৈনধর্ম বিস্তারের ক্ষেত্রেও এই অঞ্চলের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। তবে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যেই যে আর্যদের ধর্ম ও সংস্কৃতি পশ্চিমবঙ্গে প্রাধান্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল, তার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।[8]
খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে ব্রিটিশ শাসনের সূচনাকাল পর্যন্ত বাঁকুড়া জেলার প্রায় এক হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে বিষ্ণুপুরের হিন্দু রাজাদের শাসনকাল ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।[13] বিষ্ণুপুর ও তৎসংলগ্ন এলাকা সেই সময় মল্লভূম নামে পরিচিত ছিল। মল্লভূম রাজ্যের বিস্তার ছিল পশ্চিমে সাঁওতাল পরগনার দামিন-ই-কোহ, দক্ষিণে পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্বে ও উত্তরে বর্ধমান জেলা পর্যন্ত। ছোটোনাগপুর মালভূমির কিছু অংশ এই রাজ্যের অধিভুক্ত ছিল। আদিবাসী রাজ্য ধলভূম, টুংভূম, সামন্তভূম, বরাহভূম বা বরাভূম ধীরে ধীরে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজবংশের অধীনস্থ হয়ে পড়ে।[13]
মল্ল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আদি মল্ল (জন্ম ৬৯৫ খ্রিষ্টাব্দ)। তিনি কোতুলপুর থেকে ৮.৪ কিলোমিটার (৫.২ মা) দূরে লাউগ্রাম থেকে ৩৩ বছর শাসনকাজ চালিয়েছিলেন। ১৫ বছর বয়সেই তিনি একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী মল্লযোদ্ধা হয়ে ওঠেন। এই কারণেই তিনি আদি মল্ল নামে পরিচিত হন। তিনি বাগদি রাজা নামে পরিচিত ছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র জয় মল্ল সিংহাসনে বসেন। তিনি রাজ্যের সীমানা প্রসারিত করেন এবং বিষ্ণুপুরের রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেন। তার পরের রাজারা রাজ্যের আয়তন আরও বৃদ্ধি করেছিলেন। এই বংশের রাজাদের মধ্যে কালু মল্ল, কাউ মল্ল, জৌ মল্ল ও সুর মল্লের নাম উল্লেখযোগ্য।
মল্ল রাজবংশের ৪৯তম শাসক বীর হাম্বির ১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে বসেন। তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সমসাময়িক ছিলেন। তিনি পাঠানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুঘলদের সাহায্য করেছিলেন। মুসলমান ঐতিহাসিকদের রচনায় তার উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি বাংলার শাসনকর্তাকে বার্ষিক কর পাঠিয়ে মুঘলদের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিয়েছিলেন। শ্রীনিবাস আচার্য তাকে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত করে বিষ্ণুপুরে মদনমোহনের পূজা প্রচলন করেন।[13]
বীর হাম্বিরের পুত্র রঘুনাথ সিংহ প্রথম ক্ষত্রিয় উপাধি ব্যবহারকারী মল্ল রাজা। তার সময় থেকে বিষ্ণুপুরে স্থাপত্যশিল্পের বিকাশ ঘটে। এই সময় বিষ্ণুপুরে অনেক বিশালাকৃতি মন্দির নির্মিত হয়। মল্ল রাজারা হিন্দু শিল্পকলা ও ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তবে এই সময় বিষ্ণুপুরের আর্থিক অবস্থারও অবনতি ঘটে। বীর সিংহ তার আঠারোো পুত্রকে জীবন্ত হত্যা করেছিলেন। কনিষ্ঠ পুত্র দুর্জনের প্রাণ রক্ষিত হয় পরিচারকদের তৎপরতায়। পরবর্তীকালে মল্ল রাজারা সামন্ত রাজায় পরিণত হয়েছিলেন। তবে মুর্শিদাবাদের দরবারে তাদের সশরীরে উপস্থিত থাকতে হত না। সেখানে তাদের প্রতিনিধি থাকত।[13]
সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে বিষ্ণুপুর রাজ্য একটি সমৃদ্ধ রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। এই সমৃদ্ধির যুগ চলেছিল অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত। এরপর প্রথমে বর্ধমানের জমিদারেরা ফতেপুর মহলটি দখল করে। তারপর মারাঠা বর্গিরা বিষ্ণুপুর আক্রমণ করে। ১৭৪২ সালে ভাস্কর রাওয়ের নেতৃত্বে বর্গিরা বিষ্ণুপুর আক্রমণ করলে রাজা গোপাল সিংহের নেতৃত্বে বিষ্ণুপুরের সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এই যুদ্ধ সম্পর্কে বিষ্ণুপুরের একটি জনপ্রিয় কিংবদন্তি হল, রাজ্যবাসীর প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে রাজবাড়ির কুলদেবতা মদনমোহন নিজে দলমাদল কামান দেগে মারাঠাদের বিতাড়িত করেছিলেন। সম্ভবত, মারাঠারা বিষ্ণুপুরের মূল দুর্গে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন এবং সেই জন্যই ফিরে যান। তবে দুর্গে প্রবেশ করতে না পারলেও মারাঠারা রাজ্যের অরক্ষিত অংশে লুটতরাজ চালিয়েছিল। এরপর বিষ্ণুপুর রাজ পরিবার একাধিক মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ১৮০৬ সালে রাজস্ব বাকি থাকার দায়ে বিষ্ণুপুর রাজ্য নিলাম হয়ে যায় এবং বর্ধমানের জমিদারেরা এই রাজ্য কিনে নেন।[13]
বাঁকুড়া জেলার বর্তমান ভূখণ্ডটি ১৭৬০ সালে মিরকাশিমের আদেশে বর্ধমান ও মেদিনীপুর জেলার সঙ্গে আংশিকভাবে এবং ১৭৬৫ সালে দেওয়ানি লাভের পর বীরভূম জেলার সঙ্গে আংশিকভাবে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক্তিয়ারভুক্ত হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পর্যন্ত এই অবস্থা বজায় থাকে। ১৮০৫ সালের ১৮ নং প্রবিধান অনুযায়ী, বাঁকুড়া ভূখণ্ড জঙ্গলমহল জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর ১৮৩৪ সালে বিষ্ণুপুর অঞ্চলটি যুক্ত হয় বর্ধমান জেলার সঙ্গে এবং অবশিষ্ট জঙ্গলমহলের নাম পাল্টে রাখা হয় দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি। ১৮৩৭ সালে বিষ্ণুপুর ও কোতুলপুর থানা নিয়ে গঠিত হয় পশ্চিম বর্ধমান জেলা। এরপর ১৮৪৭ সালে মানভূম জেলার ছাতনা থানা পশ্চিম বর্ধমানের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৪৮ সালে আউসগ্রাম, ইন্দাস ও পোখনা থানা যুক্ত হয় পূর্ব বর্ধমান জেলায়। ১৮৭২ সালে কোতুলপুর, সোনামুখী ও ইন্দাস বর্ধমান জেলার সঙ্গে যুক্ত হয়। ১৮৭৯ সালে এই অঞ্চলটি পুনরায় যুক্ত হয় পশ্চিম বর্ধমান জেলার সঙ্গে।[14] ১৮৮১ সালে পশ্চিম বর্ধমান জেলার নামকরণ করা হয় বাঁকুড়া জেলা।[13]
মুশনকলঙতোস্তূপময় বন্ধুর ভূমিভাগ। শুশুনিয়া ও বিহারীনাথ এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য পাহাড়। তার পূর্বে শিলাস্তূপ, নিম্নশৈলশিরা ও উপত্যকাযুক্ত মধ্যভাগের অসমতল ভূমিভাগ। জেলার পূর্বদিকে সদর মহকুমার অধিকাংশ থানা ও সমগ্র বিষ্ণুপুর মহকুমা নিয়ে বিরাট পলিগঠিত সমতলভূমি পশ্চিম থেকে ক্রমশ নিচু হয়ে নেমে এসেছে। বাঁকুড়া জেলার অধিকাংশ ল্যাটেরাইট ও পলি মৃত্তিকা দ্বারা গঠিত। তবে পশ্চিমাংশ সিস্টোস ও নিসোস শিলা দিয়ে ও দক্ষিণাংশ পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত। এই জেলা মূলত ল্যাটেরাইট কাঁকর ও বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে গঠিত হলেও উত্তরে দামোদর উপত্যকার কিছু অঞ্চল সাম্প্রতিক পলি দ্বারাই গঠিত। দামোদর, দ্বারকেশ্বর, কংসাবতী ও শিলাই এই জেলার প্রধান নদনদী। বাঁকুড়া জেলার উষ্ণ ও শুষ্ক, কিন্তু স্বাস্থ্যকর। গ্রীষ্মকালীন সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যথাক্রমে ৪৪ْ -৪৫ْْ সেন্টিগ্রেড ও ১৫ْ সেন্টিগ্রেড। শীতকালীন সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যথাক্রমে ৩৩ْ সেন্টিগ্রেড ও ৬ْ সেন্টিগ্রেড। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৪০০ মিলিমিটার। বাঁকুড়া জেলায় বনভূমির পরিমাণ ২৪৭.৭০ হাজার হেক্টর (জেলার মোট আয়তনের ২১.৪৭%)। মূলত শুষ্ক ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য বা শালবন বেশি দেখা যায়। এছাড়া পিয়াশাল, সেগুন, বহেড়া, পলাশ, কুসুম, মহুয়া, পিপুয়া, বাবলা, আম, কাঁঠাল, পারাষি প্রভৃতি গাছও দেখা যায়। [15]
বাঁকুড়া জেলা মোট তিনটি মহকুমায় বিভক্ত:[16]
এই মহকুমাগুলি মোট ২২টি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে বিভক্ত। এগুলি হল -
বাঁকুড়ায় মোট তিনটি পুরসভা আছে। এগুলি হল –
এই জেলায় একটি পৌরসংস্থা হল সোনামুখি।
২০১১ সালের জনগণনার হিসাব অনুসারে বাঁকুড়া জেলার মোট জনসংখ্যা ৩৫,৯৬,৬৭৪। তার মধ্যে পুরুষ ১৮,৩৮,০৯৫ ও মহিলা ১৭,৫৮,৫৭৯। পুরুষ ও মহিলার অনুপাত ১০০০:৯৫৪। জেলার গ্রামীণ জনসংখ্যা ৩২,৯৬,৬০১ (মোট জনসংখ্যার ৯১.৭০%) ও পৌর জনসংখ্যা ২,৯৯,৭৭৩ (মোট জনসংখ্যার ৮.৩০%)। গ্রামীণ জনসংখ্যার ১৫,১৫,৪৫০ জন পুরুষ ও ১৪,৪১,৯৯৭ জন মহিলা। আবার পৌর জনসংখ্যার ১,২০,৫৫২ জন পুরুষ ও ১,১৪,৬৯৬ জন মহিলা। বাঁকুড়া জেলার মোট সাক্ষর জনসংখ্যা ২২,৩২,৯৯২ (মোট জনসংখ্যার ৭০.৯৬%)। পুরুষ সাক্ষরতার হার ৭০.২৬% ও মহিলা সাক্ষরতা ৮০.০৫%। আবার এই জেলার গ্রামীণ সাক্ষরতার হার ৬২.০৯% ও পৌর সাক্ষরতার হার ৮৪.৪২%। বাঁকুড়া জেলায় তপশিলি জাতির মোট ১১,৭৪,৪৪৭ জন (মোট জনসংখ্যার ১৭.৭০%) ও তপশিলি উপজাতির ৩,৬৮,৬৯০ জন (মোট জনসংখ্যার ১১.৫০%) বাস করেন। ২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী বাঁকুড়ায় মোট শ্রমিকের সংখ্যা ১৪,২৭,২৭২ (মোট জনসংখ্যার ৪৪.৭%)। [17]
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাঁকুড়া জেলার সার্বিক সাক্ষরতার হার ৭০.২৬ শতাংশ; নির্দিষ্টভাবে বাঁকুড়া সদর মহকুমার সাক্ষরতার হার ৬৯.৫৬ শতাংশ, খাতড়া মহকুমার ৬৯.৭৯ শতাংশ এবং বিষ্ণুপুর মহকুমার সাক্ষরতার হার ৭১.৬০ শতাংশ।[20]
জেলায় পুরুষ সাক্ষরতার হার ৭৬.৭৬% ও মহিলা সাক্ষরতার হার ৪৯.৪৩%। গ্রামীণ সাক্ষরতার হার ৬২.০৯% ও পৌর সাক্ষরতার হার ৮০.২২%। ২০০৩-০৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, জেলার স্বীকৃত বিদ্যায়তনের সংখ্যা ৩৯৩০। এর মধ্যে স্বীকৃত বিদ্যালয় ৩৪৭২টি, জুনিয়র বিদ্যালয় ১১৯টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২১৭টি ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ১০৩টি। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ১৪টি স্নাতক কলেজ, ৫টি ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রাযুক্তিক কলেজ, ১টি পলিটেকনিক কলেজ রয়েছে এই জেলায়। ১টি বিশ্ববিদ্যালয় ও মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্র রয়েছে ৩টি। বাঁকুড়ায় শিশুশিক্ষা কেন্দ্র ৪৫১টি ও আইসিডিএস-এর অন্তর্গত অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ২৮১টি। এছাড়া সাধারণ পাঠাগার ১৩০টি ও ১৩২টি ফ্রি-পড়ার ঘর রয়েছে এই জেলায়।
নিচের সারণিতে ২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী বাঁকুড়ার জেলার একটি সামগ্রিক শিক্ষাচিত্র তুলে ধরা হল। উল্লেখ্য, নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়গুলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত; মাদ্রাসাগুলি মধ্য বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত; নিম্ন প্রযুক্তি বিদ্যালয়, নিম্ন সরকারি পলিটেকনিক, শিল্প প্রযুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, নার্সিং প্রশিক্ষণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রভৃতি প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত; ইঞ্জিনিয়ারিং জলেজ, মেডিক্যাল কলেজ, প্যারা-মেডিক্যাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও নার্সিং প্রশিক্ষণ কলেজ, আইন কলেজ, শিল্পকলা কলেজ, সংগীত কলেজ ইত্যাদি প্রযুক্তিগত ও পেশাগত কলেজের অন্তর্ভুক্ত; শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র, রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ের কেন্দ্রসকল, স্বীকৃত সংস্কৃত টোল, দৃষ্টিহীণ ও অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের উপযোগী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও সংশোধনাগার বিদ্যালয় ইত্যাদি বিশেষ ও অচিরাচরিত শিক্ষাকেন্দ্রের অন্তর্গত।[20]
মহকুমা | প্রাথমিক বিদ্যালয় |
মধ্য বিদ্যালয় |
উচ্চ বিদ্যালয় |
উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় |
সাধারণ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় |
প্রযুক্তিগত/ পেশাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান |
অচিরাচরিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
প্রতিষ্ঠান | শিক্ষার্থীসংখ্যা | প্রতিষ্ঠান | শিক্ষার্থীসংখ্যা | প্রতিষ্ঠান | শিক্ষার্থীসংখ্যা | প্রতিষ্ঠান | শিক্ষার্থীসংখ্যা | প্রতিষ্ঠান | শিক্ষার্থীসংখ্যা | প্রতিষ্ঠান | শিক্ষার্থীসংখ্যা | প্রতিষ্ঠান | শিক্ষার্থীসংখ্যা | |
বাঁকুড়া সদর | ১,৩৭১ | ১১৭,৮২০ | ১৪৪ | ১৭,৯৫১ | ৯০ | ৬৯,৩২৯ | ৯১ | ৭৮,৯০৯ | ৯ | ১৪,৭৮২ | ১৪ | ২,৮৬৫ | ২,২২৮ | ৬৯,৯১৯ |
খাতড়া | ১,২০০ | ৮৬,৭৮৬ | ১১৩ | ১৬,৮০৫ | ৫০ | ২৮,১৭৮ | ১১২ | ৯৩,৯১৯ | ৬ | ১৩,০৬৭ | ৬ | ৭০২ | ১,৯৯৩ | ৫১,৮৪৯ |
বিষ্ণুপুর | ৯৭৯ | ৮৬,৭৫০ | ১১২ | ১৫,০৯২ | ৫৭ | ২৮,৭৩৮ | ৮১ | ৭৮,৯১৫ | ৬ | ১০,৫৫২ | ১৪ | ৪,১৭০ | ১,৬৪৯ | ৫৭,৭৬৯ |
বাঁকুড়া জেলা | ৩,৫৫০ | ২৯১,৩৫৬ | ৩৬৯ | ৪৯,৮৪৮ | ১৯৭ | ১২৬,২৪৫ | ২৮৪ | ২৫১,৭৪৩ | ২১ | ৩৮,৪০১ | ৩৪ | ৭,৭৩৭ | ৫,৮৭০ | ১৭৯,৫৩৭ |
বাঁকুড়া জেলায় সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ১৫। এছাড়া ৮৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৫০৮টি ক্লিনিক, ৪২টি ডিসপেনসারি রয়েছে। বাঁকুড়া পুরসভায় ৩টি, বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী পুরসভায় ১টি করে হাসপাতাল বিদ্যমান।
বাঁকুড়া জেলায় চব্বিশটি সমষ্টি প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও চব্বিশটি অতিরিক্ত সমষ্টি প্রাণী স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছাড়াও তিনটি রাজ্য প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে।
নিচের সারণিতে ২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী বাঁকুড়া জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপকেন্দ্রগুলিতে রোগীর সংখ্যার একটি সামগ্রিক চিত্র দেওয়া হল:[21]
মহকুমা | স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার | অন্যান্য রাজ্য সরকারি বিভাগ |
স্থানীয় সংস্থা |
কেন্দ্রীয় সরকারি বিভাগ/ পিএসইউ |
এনজিও/ বেসরকারি নার্সিং হোম |
মোট | মোট শয্যাসংখ্যা |
মোট চিকিৎসকের সংখ্যা |
অন্তর্বিভাগীয় রোগী |
বহির্বিভাগীয় রোগী | |||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
হাসপাতাল |
গ্রামীণ হাসপাতাল |
ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র |
প্রাথমিক স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র | ||||||||||
বাঁকুড়া সদর | ২ | ৬ | ২ | ২৫ | ৩ | - | ২ | ৩১ | ৭১ | ২,৬২৮ | ৩২০ | ১৪৭,৮৯০ | ২,৬৩৪,২৪৮ |
খাতড়া | ১ | ৭ | ১ | ২১ | - | - | - | ৪ | ৩৪ | ৬৯৮ | ৭৭ | ৫৮,২৫৮ | ১,৪৪০,১৭২ |
বিষ্ণুপুর | ১ | ৫ | ১ | ২৩ | - | - | - | ১১ | ৪১ | ৬৯৮ | ৭৭ | ৬৮,০৬৮ | ১,৩৫১,৩৪৯ |
বাঁকুড়া জেলা | ৪ | ১৮ | ৪ | ৬৯ | ৩ | - | ২ | ৪৬ | ১৪৬ | ৪,১৫২ | ৪৫৯ | ২৭৪,২১৬ | ৫,৪২৫,৭৬৯ |
বাঁকুড়া জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। জেলায় শতকরা ৮২ জন কৃষিজীবী। আবার জেলার মোট শ্রমশক্তির ৩১% কৃষক ও ৩৫% কৃষিমজুর। এই জেলার প্রধান উৎপন্ন ফসলগুলি হল ধান, গম, ডাল, তৈলবীজ, পাট, মেস্তা, আলু, শুকনো লঙ্কা ও আদা। জেলার ৫০% জমিতেই কৃষিকাজ হয়। এছাড়া রেশমকীটের খাদ্য তুঁতগাছের চাষও হয়। তবে প্রতিকূল জলবায়ু ও ভূপ্রকৃতি এবং জলের অপর্যাপ্ত সরবরাহের জন্য চাষাবাদ অনেক ক্ষেত্রেই বিঘ্নিত হয়। তাই আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির সাহায্যে জেলার মোট কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে।
বাঁকুড়ায় বৃহদায়তন শিল্প গড়ে না উঠলেও ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে এই অঞ্চল ঐতিহ্যবাহী। এই শিল্পগুলির মধ্যে রেশম, সুতি ও তসরের বয়ন প্রধান। লাল ‘ধূপছায়া’ শাড়ি, রেশম ও সুতি মিশ্রিত ‘খুটনি’ কাপড়, ‘ফুলম’ শাড়ি ও বিশেষত বিষ্ণুপুরের ‘বালুচরি’ শাড়ি জগদ্বিখ্যাত। বাঁকুড়া সদর মহকুমার শুশুনিয়ায় পাথর কেটে দেবদেবীর মূর্তি ও থালাবাসন তৈরির শিল্প বাঁকুড়া ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া পিতলের ডোকরা শিল্প আজ দেশ-বিদেশে লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বাঁকুড়ার সাংস্কৃতিক আইকন হল ঘোড়া। হাতি, ঘোড়া ও মনসার ঝাঁপি তৈরির জন্য খাতড়া মহকুমার তালডাংরা ব্লকের পাঁচমুড়া বিখ্যাত। চামড়ার জুতো তৈরিতেও জেলার ঐতিহ্য রয়েছে।
বাঁকুড়া একটি খনিজ সমৃদ্ধ জেলা। শালতোড়া, মেজিয়া, বড়জোড়া ও গঙ্গাজলঘাটি অঞ্চলের কয়লা, থানাপাহাড়, চেরাডংরি অঞ্চলের টাংস্টেন, রানিবাঁধ থানার ঝিলিমিলি অঞ্চলের অভ্র ও রাইপুর অঞ্চলের চিনামাটি এই জেলার উল্লেখযোগ্য খনিজ।
বাঁকুড়া জেলা ব্রডগেজ ও ন্যারোগেজ/মিটারগেজ রেলপথে রাজধানী কলকাতা ও অন্যান্য জেলার সঙ্গে যুক্ত। দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথের ৭০ কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইন এই জেলাকে পুরুলিয়া-আদ্রা ও খড়গপুরের সঙ্গে যুক্ত রেখেছে। ন্যারোগেজ রেলপথে বর্ধমান জেলার সঙ্গে বাঁকুড়ার যোগাযোগ রক্ষিত হচ্ছে। তবে বর্তমানে জেলার সকল রেলপথই ব্রডগেজে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশনগুলি হল বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, ওন্দা, সোনামুখী ও পাত্রসায়ের।
সড়কব্যবস্থা বাঁকুড়ার সদর থেকে প্রতিটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রসারিত। জেলার মোট সড়কপথ ১১৮৬ কিলোমিটার। তারমধ্যে জাতীয় সড়ক ১২৬ কিলোমিটার, রাজ্য সড়ক ৩৫৫ কিলোমিটার, জেলা সড়ক ৩৮৫ কিলোমিটার ও গ্রামীণ সড়ক ৩২০ কিলোমিটার। ২০০০-০৪ সালে প্রাপ্ট তথ্যে দেখা যাচ্ছে, জেলার পথে মোটর সাইকেল, স্কুটার, ট্যাক্সি, ভাড়ার গাড়ি, ট্রাক্টর ও ট্রলারের সংখ্যা অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে অন্যান্য গাড়ির সংখ্যাও।
বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন নদীতে ফেরি সার্ভিসও চালু আছে। দ্বারকেশ্বর, কংসাবতী, দামোদর, শিলাই, ভৈরববাঁকী, তারাফেনী প্রভৃতি নদনদীতে প্রায় ৩২টি ফেরি সার্ভিস চালু আছে। এর মধ্যে শালতোড়া, মেজিয়া, কোতুলপুর, ওন্দা ও সোনামুখিতে ৪টি করে, ইন্দাস, সারেঙ্গা, বিষ্ণুপুর ও পাত্রসায়েরে ২টি করীবং রানিবাঁধ ও জয়পুরে একটি করে ফেরি সার্ভিস চালু আছে।
বাঁকুড়া জেলায় বিমান পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।
নাম | পরিচিতি |
---|---|
কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (১২ অক্টোবর, ১৯২৪ - ৫ এপ্রিল, ২০০০) | বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও শিক্ষিকা |
গডফ্রে ব্রাউন (২১ ফেব্রুয়ারি, ১ - ১৫ - ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫) | বিশিষ্ট ব্রিটিশ অ্যাথলেট। ১৯৩৬ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ৪ x ৪০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণপদক জয় করেন। বাঁকুড়া শহরে জন্ম। |
মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা (১ মে, ১৯৩৪ - ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯) | বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক। পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত। তাকেই বাংলাদেশের প্রথম শহিদ বুদ্ধিজীবী গণ্য করা হয়। বাঁকুড়ায় জন্ম। |
রামকিঙ্কর বেইজ (২৬ মে, ১৯০৬ - ২ অগস্ট, ১৯৮০) | বিশিষ্ট ভারতীয় ভাস্কর ও চিত্রকর। আধুনিক ভারতীয় ভাস্কর্যশৈলী ও বর্ণনাপ্রাসঙ্গিক আধুনিকতাবাদের অন্যতম পথপ্রদর্শক। শান্তিনিকেতনের বহু বিখ্যাত ভাস্কর্য তার সৃষ্টি। |
হেমন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় (১৯০৫ - ২ এপ্রিল, ১৯৮৪) | বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী। বাঁকুড়ায় জন্ম। |
অটলবিহারী ঘোষ (১৮৬৪ - ১২ জানুয়ারী, ১৯৩৬) | বিশিষ্ট তন্ত্র লেখক। বাঁকুড়ায় জন্ম। |
ধনঞ্জয় দাস কাঠিয়াবাবা (১৩০৮ বঙ্গাব্দ- ১৩৯০ বঙ্গাব্দ) | বিশিষ্ট সাধক ও নিম্বার্ক সম্প্রদায়ভুক্ত মঠের প্রধান। বাঁকুড়ায় জন্ম। |
ননীবালা গুহ (১৮৮৪- ১৯৯০) | বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ও রাজবন্দী। |
হরনাথ ঠাকুর (১ জুলাই - ২৫ মে, ১৯২৭) | বিশিষ্ট বৈষ্ণবধর্মসাধক, তিনি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় প্রদক্ষিণ করেন। সোনামুখি ও পুরীতে তার আশ্রম আছে। |
| শক্তিপদ রাজগুরু
|| বিখ্যাত উপন্যাসিক মেঘে ঢাকা তারা তাঁর লেখা।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.