ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক

পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বাঁকুড়া সদর মহকুমার একটি ব্লক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকmap

ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার বাঁকুড়া সদর মহকুমার একটি প্রশাসনিক বিভাগ। এই ব্লক ওন্দা থানার অধীনস্থ। এই ব্লকের সদর ওন্দা।[][]

দ্রুত তথ্য ওন্দা, দেশ ...
ওন্দা
সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক
Thumb
ওন্দা
পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে ওন্দার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩.১৩° উত্তর ৮৭.২০° পূর্ব / 23.13; 87.20
দেশ ভারত
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
জেলাবাঁকুড়া
আয়তন
  মোট৫০২.৪৬ বর্গকিমি (১৯৪.০০ বর্গমাইল)
উচ্চতা৭৪ মিটার (২৪৩ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১১)
  মোট২,৫২,৯৮৪
  জনঘনত্ব৫০০/বর্গকিমি (১,৩০০/বর্গমাইল)
ভাষা
  সরকারিবাংলা, ইংরেজি
সময় অঞ্চলভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০)
পিনকোড৭২২১৪৪ (ওন্দা)
দূরভাষ/এসটিডি কোড০৩২৪৪
আইএসও ৩১৬৬ কোডআইএন-ডব্লিউবি
যানবাহন নিবন্ধনডব্লিউবি-৬৭, ডব্লিউবি-৬৮
সাক্ষরতা৬৫.৮২%
লোকসভা কেন্দ্রবিষ্ণুপুর
বিধানসভা কেন্দ্রওন্দা
ওয়েবসাইটbankura.gov.in
বন্ধ

ভূগোল

Thumb
বাঁকুড়া জেলার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক ও পুরসভাগুলির মানচিত্র

ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকটি বাঁকুড়া জেলার ঠিক কেন্দ্রভাগে অবস্থিত। এই অঞ্চলের ভূপৃষ্ঠ অসমতল ও পাথুরে। এখানকার লাল ল্যাটেরাইট মাটিতে ঝোপঝাড় ও শাল গাছ প্রচুর চোখে পড়ে। ব্লকের সদর ওন্দার স্থানাঙ্ক ২৩°০৮′ উত্তর ৮৭°১২′ পূর্ব[]

ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের উত্তর দিকে বাঁকুড়া ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, পূর্ব দিকে বিষ্ণুপুর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, দক্ষিণে তালড্যাংরা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক ও পশ্চিম দিকে ইন্দপুরবাঁকুড়া ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক অবস্থিত।[]

ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের আয়তন ৫০২.৪৬ বর্গ কিলোমিটার। ব্লকটি একটি পঞ্চায়েত সমিতি, ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ১৮৫টি গ্রাম সংসদ, ২৯১টি মৌজা ও ২৭১টি জনবসতিপূর্ণ গ্রাম নিগে গঠিত। ব্লকটি ওন্দা থানার এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার অধীনস্থ।[] এই সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের সদর ওন্দাতে অবস্থিত।[]

গ্রাম পঞ্চায়েত

ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক/পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি হল: চিঙ্গানি, চূড়ামণিপুর, কল্যাণী, কাঁটাবেড়িয়া, লোডোনা, মাজডিহা, মেদিনীপুর, নাকাইজুড়ি, নিকুঞ্জপুর, ওন্দা ১, ওন্দা ২, পুনিসোল, রামসাগর, রতনপুর ও সান্তোড়।[]

জনপরিসংখ্যান

সারাংশ
প্রসঙ্গ

জনসংখ্যা

২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট জনসংখ্যা ২৫২,৯৮৪; যার একশো শতাংশই গ্রামবাসী। ব্লকে মোট পুরুষের সংখ্যা ১২৯,২৪৮ (৫১ শতাংশ) ও মহিলার সংখ্যা ১২৩,৭৩৬ (৪৯ শতাংশ)। অনূর্ধ্ব ছয় বছর বয়সীদের মোট সংখ্যা ৩৩,২৭৪। ব্লকে তফসিলি জাতি-তালিকাভুক্তদের মোট সংখ্যা ৮৩,৯৩৩ (৩৩.১৮ শতাংশ) এবং তফসিলি উপজাতি-তালিকাভুক্তদের মোট সংখ্যা ১২,৪৪৩ (৪.৯২ শতাংশ)।[]

২০০১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট জনসংখ্যা ছিল ২১৯,৮৪৫; যার মধ্যে ১১২,৪২৯ জন ছিল পুরুষ এবং ১০৭,৪১৬ জন মহিলা। ১৯৯১-২০০১ দশকে এই ব্লকের দশকীয় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১৫.০৬ শতাংশ। উল্লেখ্য, একই দশকে বাঁকুড়া জেলার দশকীয় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১৫.১৫ শতাংশ[] এবং সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের দশকীয় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১৭.৮৪ শতাংশ।[১০]

ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের বড়ো গ্রামগুলি (৪০০০+ জনসংখ্যাবিশিষ্ট) হল (২০১১ সালের জনগণনার তথ্য বন্ধনীতে দেওয়া হল): ওন্দা (৫,৯৩৩), আগুরি বন্দ পুনিসোল (২২,১৯৩), নতুনগ্রাম (৪,০৭৭) ও চিঙ্গানি (৪,০০৪)।[]

ব্লকের অন্যান্য গ্রামগুলি হল (২০১১ সালের জনগণনার তথ্য বন্ধনীতে দেওয়া হল): মাজডিহা (১,১৭৩), চূড়ামণিপুর (৯৯২), মেদিনীপুর (২,৬৬২), লোডনা (৩,০৭২), কল্যাণী (১,৬৩২), রতনপুর (১,৮২২), সানতোড় (১,৭৩৯), নিকুঞ্জপুর (২,২৩৯), বহুলাড়া (১,১২৪) ও রামসাগর (৭১২)।[]

সাক্ষরতা

আরও তথ্য বাঁকুড়া জেলারসমষ্টি উন্নয়ন ব্লকগুলিতে সাক্ষরতার হার, বাঁকুড়া সদর মহকুমা ...
বাঁকুড়া জেলার
সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকগুলিতে
সাক্ষরতার হার
বাঁকুড়া সদর মহকুমা
শালতোড়া – ৬১.৪৫%
মেজিয়া – ৬৬.৮৩%
গঙ্গাজলঘাটী – ৬৮.১১%
ছাতনা – ৬৫.৭৩%
বাঁকুড়া ১ – ৬৮.৭৪%
বাঁকুড়া ২ – ৭৩.৫৯%
বড়জোড়া – ৭১.৬৭%
ওন্দা – ৬৫.৮২%
বিষ্ণুপুর মহকুমা
ইন্দাস – ৭১.৭০%
জয়পুর – ৭৪.৫৭%
পাত্রসায়র – ৬৪.৮%
কোতুলপুর – ৭৮.০১%
সোনামুখী – ৬৬.১৬%
বিষ্ণুপুর – ৬৬.৩০%
খাতড়া মহকুমা
ইঁদপুর – ৬৭.৪২%
রানিবাঁধ – ৬৮.৫৩%
খাতড়া – ৭২.১৮%
হীরবাঁধ – ৬৪.১৮%
রায়পুর – ৭১.৩৩%
সারেঙ্গা – ৭৪.২৫%
সিমলা – ৬৮.৪৪%
তালড্যাংরা – ৭০.৮৭%
সূত্র:
২০১১ সালের জনগণনা প্রতিবেদন:
সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক অনুযায়ী

প্রাথমিক জনগণনা সংক্ষিপ্ত তথ্য

বন্ধ

২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট সাক্ষর জনসংখ্যা ১৪৪,৬১৮ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী মোট জনসংখ্যার ৬৫.৮২ শতাংশ); এর মধ্যে সাক্ষর পুরুষের মোট সংখ্যা ৮৫,৫৪৬ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী মোট পুরুষ জনসংখ্যার ৭৫.৪৪ শতাংশ) এবং সাক্ষর মহিলার মোট সংখ্যা ৬০,০৭২ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী মোট মহিলা জনসংখ্যার ৫৫.৮১ শতাংশ)। ব্লকে নারী ও পুরুষের মধ্যে সাক্ষরতার হারের পার্থক্য ১৯.৫৩ শতাংশ।[]

উল্লেখ্য, উক্ত জনগণনার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাঁকুড়া জেলার সাক্ষরতার হার ১৯৯১ সালে ৫২.০০ শতাংশ ও ২০০১ সালে ৬৩.৪৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১১ সালে ৭০.২৬ শতাংশ হয়েছিল[১১] এবং এই জনগণনায় পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রিক সাক্ষরতার হার ছিল ৭৭.০৮ শতাংশ,[১২] যা ২০১১ সালে ভারতের সামগ্রিক সাক্ষরতার হার অর্থাৎ ৭৪.০৪ শতাংশের চেয়েও বেশি।[১২]

ভাষা ও ধর্ম

ডিস্ট্রিক্ট সেন্সাস হ্যান্ডবুক ২০১১, বাঁকুড়া অনুযায়ী, বাঁকুড়া জেলার মোট জনসংখ্যার ৮৯.৯ শতাংশের মাতৃভাষা বাংলা, ৮.১ শতাংশের মাতৃভাষা সাঁওতালি, ১.১ শতাংশের মাতৃভাষা কুর্মালি ঠার, ০.৫ শতাংশের মাতৃভাষা হিন্দি ও ০.১ শতাংশের মাতৃভাষা তেলুগু।[১৩]

আরও তথ্য ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ধর্মবিশ্বাস ...
ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ধর্মবিশ্বাস
হিন্দু
 
৮৩.৩০%
মুসলমান
 
১৩.৬৮%
খ্রিস্টান
 
০.০৩%
অন্যান্য
 
২.৯৮%
বন্ধ

২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট হিন্দু জনসংখ্যা ২০১,৭৪২, যা ব্লকের মোট জনসংখ্যার ৮৩.৩০ শতাংশ; মোট মুসলমান জনসংখ্যা ৩৪,৬২০, যা মোট জনসংখ্যার ১৩.৬৮ শতাংশ; এবং মোট খ্রিস্টান জনসংখ্যা ৮৬, যা মোট জনসংখ্যার ০.০৩ শতাংশ। মোট ৭,৫৩৬ জন অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ২.৯৮ শতাংশ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।[১৪] অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছে আদিবাসী, মারাংবুরু, সাঁওতাল, সরানাথ, সারি ধর্ম, সরনা, আলছি, বিদিন, সন্ত, সাহেবধর্ম, সারেন, সারান, সারিন, খেরিয়া,[১৫] ও অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠী।[১৪]

গ্রামীণ দারিদ্র্য

২০০৭ সালের হিসেব অনুযায়ী, ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ৪৪.৩৯ শতাংশ পরিবার দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করেন।[১৬] উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের গ্রামীণ পরিবার সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী বাঁকুড়া জেলার মোট ২৮.৮৭ শতাংশ পরিবার ছিল দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী।[১৭]

শিক্ষাব্যবস্থা

২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ২৪৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ২৪,১৪৬ জন ছাত্রছাত্রী, ৩২টি মধ্য বিদ্যালয়ে মোট ৩,৭১১ জন ছাত্রছাত্রী, ১৬টি উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট ১৪,৩৯০ এবং ১২টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোট ৮,৪৪২ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। এই ব্লকের একমাত্র সাধারণ কলেজে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১,১৮০। এছাড়াও ১৪,৮৮০ জন বিভিন্ন বিশেষ ও অ-চিরাচরিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে।[১৮]

২০১১ সালের জনগণনার হিসেব অনুযায়ী, ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ২৭১টি জনবসতিপূর্ণ গ্রামের মধ্যে ৩৭টি গ্রামে একটিও বিদ্যালয় নেই, ৫২টি গ্রামে দুই বা ততোধিক বিদ্যালয় রয়েছে, ৬৫টি গ্রামে অন্তত একটি প্রাথমিক ও একটি মধ্য বিদ্যালয় রয়েছে এবং ২৯টি গ্রামে অন্তত একটি মধ্য ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।[১৯]

২০০৭ সালে মুরাকাটায় এই ব্লকের একমাত্র সাধারণ কলেজ ওন্দা থানা মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।[২০] বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন স্বীকৃত এই কলেজটিতে বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, দর্শন, সংস্কৃত, শিক্ষাবিজ্ঞান, ভূগোল, শারীরশিক্ষা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান শিক্ষাদানের ব্যবস্থা রয়েছে।[২১]

পরিবহণ ব্যবস্থা

সারাংশ
প্রসঙ্গ
আরও তথ্য খড়গপুর–বাঁকুড়া–আদ্রা রেলপথ ...
বন্ধ

২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ২টি ফেরি পরিষেবা ও ৭টি প্রান্তিক বাস রুট রয়েছে।[২৬]

দক্ষিণ পূর্ব রেলের খড়গপুর-বাঁকুড়া-আদ্রা লাইন ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের উপর দিয়ে গিয়েছে। কালিসেন, ওন্দাগ্রামরামসাগর রেল স্টেশন এই মহকুমায় অবস্থিত।[২৭]

মোরগ্রাম থেকে খড়গপুর পর্যন্ত প্রসারিত ১৪ নং জাতীয় সড়ক (পুরনো সংখ্যা অনুযায়ী ৬০ নং জাতীয় সড়ক)[২৮]পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর থেকে ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম পর্যন্ত প্রসারিত ৯ নং রাজ্য সড়ক ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের উপর দিয়ে গিয়েছে।[২৯]

সংস্কৃতি

সারাংশ
প্রসঙ্গ

ওন্দা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনস্থ বহুলাড়া গ্রামে সিদ্ধেশ্বর শিবের মন্দিরটি এই অঞ্চলের একটি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান। এটি একটি ইঁট-নির্মিত রেখ দেউল। মন্দিরটি পাল যুগে নির্মিত হয়েছিল।[৩০] এটি বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরের মাঝামাঝি অঞ্চলে অবস্থিত। ওন্দা রেল স্টেশন থেকে বহুলাড়ার দূরত্ব ৫ কিলোমিটার।[৩১]

নিকুঞ্জপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এল্যাটি মৌজায় অবস্থিত শ্যামচাঁদ মন্দির সহ আরও অনেক মধ্যযুগীয়- ঔপনিবেশিক কালের ঐতিহাসিক নিদর্শন ওন্দা ব্লকের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে আছে ।

দোলযাত্রা উপলক্ষে ওন্দায় ৯ দিন ধরে একটি দোল মেলা হয়। মেদিনীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দাতিনা গ্রামের উপরপাড়ায় বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে ৫ দিন ধরে মেলা হয়। কবি মীরা বরাট জানিয়েছেন,চক্রবর্তী পরিবারের কালিদাস চক্রবর্তীর আমলে,এখানকার কালি পূজা বিখ্যাত ছিল।তাছাড়া মাঝপাড়ায় মাঝের মাড়োর বুড়োশিব দুগ্ধেশ্বরের গাজন বিখ্যাত।

উৎসব ও মেলা

ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে যে সকল উৎসব ও মেলা আয়োজিত হয় তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেওয়া হল:

  1. হীরাপুর গ্রামে প্রতি বছর বৈশাখ মাসে হরিনাম সংকীর্তন মহোৎসব, শ্রাবণ মাসে মনসাপূজা, কার্তিক মাসে রাসযাত্রা ও চৈত্র মাসে শিবের গাজন উপলক্ষ্যে একদিনের একটি মেলা আয়োজিত হয়।[৩২]
  2. ভোলা গ্রামে বৈশাখ মাসের ১৩ বা ১৪ তারিখে দুই দিন ব্যাপী শিবের গাজন ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এটি এই অঞ্চলের একটি সর্বজনীন উৎসব। এই দুই দিন গ্রামবাসীরা ভক্তব্রত গ্রহণ করেন। প্রত্যেক দিন পূজার শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। মানত হিসেবে ষোড়শোপচারে ভোগ-পূজাও দেওয়া হয়। এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত মেলাটি বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে চালু হয়েছিল।[৩৩]
  3. কল্যাণী গ্রামের স্থানীয় কালী মন্দিরে প্রতি বছর কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে সাড়ম্বরে পূজা এবং তিন দিন ব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। এই উৎসব ও মেলা প্রায় দু’শো বছরের পুরনো। সকল গ্রামবাসীই এই উৎসবে যোগদান করেন এবং মানত হিসেবে ছাগ, আখ বা কুমড়ো বলি দেওয়া হয়।[৩৪]
  4. দলদলী গ্রামে দু’টি পৃথক মন্দিরে "রাধানাথ" ও "দামোদর" নামে দু’টি কৃষ্ণ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরের সঙ্গে পৃথক রাসমঞ্চ রয়েছে। প্রতি বছর কার্তিক পূর্ণিমা থেকে তিন দিন ব্যাপী রাসযাত্রা উৎসব মহাসমারোহে আয়োজিত হয়। স্থানীয় গোপ সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিরা এই উৎসবের সেবায়েত। উৎসব উপলক্ষ্যে পূজা, ভোগ-নিবেদন, ব্রাহ্মণভোজন, যাত্রাভিনয় ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। উৎসব ও মেলা দুইই প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো।[৩৫]
  5. লাউদা প্রতি বছর আষাঢ় মাসে অম্বুবাচী উপলক্ষ্যে পূণ্যস্নান, শ্রাবণ মাসে মনসার ঝাঁপান উৎসব ও আশ্বিন মাসে দুর্গাপূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবগুলি দু’শো বছরের পুরনো।[৩৬]
    1. শ্রাবণ মাসের সংক্রান্তির দিন গ্রামে মনসা দেবীর নির্দিষ্ট স্থানে দেবীর প্রতীক সাপ আঁকা মাটির কলসি ও মাটির হাতি ও ঘোড়া স্থাপন করে মহাসমারোহে মনসার ঝাঁপান উৎসব পালিত হয়। পূজার দিন মধ্যাহ্নে উপবাসী ভক্তেরা দেবীর "ভরম" অর্থাৎ ঝাঁপ ব্রত পালন করেন। এছাড়া "প্রণাম সেবা" দেওয়ার জন্য ভক্তেরা নিজ নিজ বাড়ি থেকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করতে করতে পূজাস্থানে উপস্থিত হন। অনেক ভক্ত এই উপলক্ষ্যে আগুন সন্ন্যাস ব্রতও পালন করেন। রাতে ভক্তেরা মনসার প্রতীক হাতি ও ঘোড়া কাঁধে করে মনসামঙ্গল গান গাইতে গাইতে ও ছড়া কাটতে কাটতে গ্রাম পরিক্রমায় বের হন।[৩৬]
    2. দুর্গাপূজাটি গ্রামের আদি বাসিন্দা চক্রবর্তী বংশের পারিবারিক উৎসব। দু’শো বছরের এই বংশের রামমোহন চক্রবর্তী লাউদা গ্রামে বসবাস শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই এই পূজা প্রবর্তন করেন। গ্রামে দেবী দুর্গার একটি আটচালা মন্দির রয়েছে। পূজা হয় বাংলায় প্রচলিত দুর্গোৎসবের রীতি অনুসারেই। তবে বিজয়াদশমীর দিন আশেপাশের গ্রামের অধিবাসীরা তাদের নিজ নিজ "কাঠিনাচের দল" নিয়ে বাজনা সহ গ্রাম পরিক্রমায় বের হয়। এই পরিক্রমাকালে দেবীর মাহাত্ম্যসূচক ও অন্যান্য হাস্যরসাত্মক গান গাওয়া হয়। উৎসব উপলক্ষ্যে ভোজ ও প্রসাদ বিতরণ ছাড়াও তিন দিন ব্যাপী একটি মেলারও আয়োজন করা হয়।[৩৬]
  6. বালগুমা গ্রামে প্রতি বছর মনসাপূজা, ধর্মরাজ ঠাকুরের পূজা, কালাচাঁদ ঠাকুরের পূজা, মহাদানা ঠাকুরের পূজা ও কুদরী ঠাকুরের পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এইসব উৎসব পরিচালনা করেন স্থানীয় সৌমন্ডলেরা।[৩৭]
    1. বালগুমা মৌজার আমাদহ গ্রামে প্রতি বছর শ্রাবণ মাসে স্থানীয় মালপাড়ায় মনসাপূজা ও রানি ভবানী প্রবর্তিত কালীপূজা, গোয়ালাপাড়ায় অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে হিকিমসিনীর পূজা ও পৌষ মাসের শেষ সপ্তাহে ভেদুয়াসিনীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া গ্রামদেবতা ধর্মরাজ ঠাকুরের পূজাও এই গ্রামে আয়োজিত হয়।[৩৮]
    2. বালগুমা মৌজার অপর গ্রাম সাতধূল্যায় প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের সংক্রান্তির দিন মনসাপূজা উপলক্ষ্যে পায়রা ও ছাগ বলি দেওয়া হয়। এই গ্রামে মনসার একটি মন্দিরও রয়েছে।[৩৯]
  7. মাধবপুর গ্রামে আষাঢ় মাসে সর্বজনীন রথযাত্রা উৎসব মহাসমারোহে পালিত হয়। রথের দিন লক্ষ্মীনারায়ণের পূজা, ভোগারতি ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। বিকেলে লক্ষ্মীনারায়ণ বিগ্রহকেই রথে স্থাপন করে মাধবপুর থেকে ডুমুরিয়া গ্রাম পর্যন্ত শোভাযাত্রা সহকারে রথ টানা হয়। সাতদিন পর পুনরায় সাড়ম্বরে বিগ্রহের রথ মাধবপুরে ফিরিয়ে আনা হয়। রথযাত্রা ও পুনর্যাত্রার দিন মাধবপুরে মেলা বসে। এই উৎসব ও মেলা বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে শুরু হয়েছিল।[৪০]
  8. রতনপুর গ্রামে প্রতি বছর আশ্বিন পূর্ণিমায় কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, কার্তিক অমাবস্যায় কালীপূজা, অগ্রহায়ণ মাসে জগদ্ধাত্রী পূজা ও মাঘ মাসে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সরস্বতী পূজা উপলক্ষ্যে গ্রামে চারদিনব্যাপী একটি মেলারও আয়োজন করা হয়। এই মেলাটি দেড়শো বছরেরও বেশি পুরনো। গ্রামে লক্ষ্মী ও কালীপূজার জন্য মাটির ঘর, সরস্বতী ও জগদ্ধাত্রী পূজার জন্য দালানবাড়ি ছাড়াও দু’টি শিবমন্দির, দেবী অম্বিকার মন্দির, দেবী সর্বেশ্বরীর ষটকোণাকৃতি মন্দির, মনসা ও দু’টি পঞ্চানন্দের থান রয়েছে।[৪১]
  9. জামজুড়ি মাসে প্রতি বছর সরস্বতী পূজা উপলক্ষ্যে মাঘ মাসে এক দিনের মেলা আয়োজিত হয়। এই মেলাটি প্রায় শতবর্ষ প্রাচীন।[৪২]
  10. এল্যাটি গ্রামের অভিরাম শিব মন্দিরে চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে প্রাচীন গাজন উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ।
  11. আসনাসোল গ্রামের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজাআসনাসিনী দেবীর বার্ষিক সর্বজনীন উৎসব।[৪৩]
    1. প্রতি বছর আশ্বিন মাসে আসনাশোল গ্রামে দুর্গাপূজা ও তদুপলক্ষ্যে চারদিনব্যাপী মেলা আয়োজিত হয়। এই পূজা ও মেলা প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো।[৪৩]
    2. আসনাশোল গ্রামে আসনাসিনী নামে এক গ্রাম্যদেবী প্রতিষ্ঠিতা। এই দেবীর কোনও মূর্তি নেই; ধানক্ষেতের মাঝে একটি বড়ো পুকুরের পাড়ে কয়েকটি কুঁচিলা ফলের গাছের নিচে দেবীর প্রতীক হিসেবে মাটির কয়েকটি হাতি ও ঘোড়া রাখা আছে। গ্রামবাসীরা মনে করেন, আসনাসিনীর পূজা করলে ভালো বৃষ্টিপাত হয় এবং দেবীর ঘট উল্টিয়ে রাখলে অতিবৃষ্টি বন্ধ হয়। নিত্যপূজা ছাড়াও প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে গ্রামবাসীদের সুবিধে অনুযায়ী কোনও একটি দিন বেছে নিয়ে আসনাসিনী দেবীর জাঁতাল উৎসব পালিত হয়। উৎসব উপলক্ষ্যে যজ্ঞ, ব্রাহ্মণভোজন ও জনসাধারণের মধ্যে অন্নভোগ বিতরণ করা হয়। এছাড়াও অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টি হলেও দেবীর বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়। স্থানীয় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার এই দেবীর পুরোহিত।[৪৩]
    3. দুর্গাপূজা ও আসনাসিনীর উৎসব ছাড়াও আসনাশোল গ্রামে মনসা, সরস্বতীশ্মশানকালী পূজাও অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।[৪৩]

স্বাস্থ্য পরিষেবা

২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে একটি গ্রামীণ হাসপাতাল ও ৫টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। এগুলির মোট শয্যাসংখ্যা ৬৬ এবং চিকিৎসকের সংখ্যা ১২। ব্লকে ৩৫য় পরিবারকল্যাণ উপকেন্দ্র ও একটি পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রও রয়েছে। ব্লকের হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপকেন্দ্রগুলিতে ৩,৮০৭ জন অন্তর্বিভাগীয় ও ২৫২,২৩৯ জন বহির্বিভাগীয় রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।[৪৪]

৩০ শয্যাবিশিষ্ট ওন্দা গ্রামীণ হাসপাতালটি মেদিনীপুর ডাকঘর এলাকায় অবস্থিত। এটি ব্লকের একটি প্রধান সরকারি চিকিৎসালয়। ব্লকের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি রতনপুর (১০টি শয্যাবিশিষ্ট), নাকাইজুড়ি (ঘোড়োশোল, ১০টি শয্যাবিশিষ্ট), রামসাগর (১০টি শয্যাবিশিষ্ট), সানতোড় (গড়কোটালপুর, ১০টি শয্যাবিশিষ্ট) ও নিকুঞ্জপুরে (১০টি শয্যাবিশিষ্ট) অবস্থিত। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুন্নত অঞ্চল গ্রামীণ তহবিল পরিকল্পনায় গোগরায় একটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালও স্থাপিত হয়েছে।[৪৫][৪৬]

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.