রামকিঙ্কর বেইজ (২৫ মে[1], ১৯০৬ - ২ আগস্ট, ১৯৮০) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি ভাস্কর। তিনি আধুনিক ভারতীয় ভাস্কর্যকলার অন্যতম অগ্রপথিক ছিলেন। রামকিঙ্কর ছিলেন প্রথম ভারতীয় শিল্পী যিনি আধুনিক পাশ্চাত্য শিল্প অধ্যয়ন করে সেই শৈলী নিজের ভাস্কর্যে প্রয়োগ করেন। রামকিঙ্কর পোস্টার, থিয়েটারের সিন ,এমনকি পুতুল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।বিশিষ্ট সাংবাদিক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের নজরে পড়েন তিনি। তাকে নিয়ে আসা হয় শান্তিনিকেতনের কলাভবনে। ১৯ বছরের রামকিঙ্করের কাজ দেখে মুগ্ধ হন নন্দলাল বসু। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে নন্দলালের ছাত্র হয়ে রামকিঙ্কর ঢুকলেন শান্তি নিকেতনের কলাভবনে থাকলেন একটানা ৪৬ বছর। অবসর নেন ভাস্কর্য বিভাগের প্রধান হয়ে ।রামকিঙ্করের ভাস্কর্য গুলি আকৃতিতে বেশ বড়। তিনি চোখের সামনে যা দেখেন তাই হয় মডেল। তার উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য হল সাঁওতাল রমণী, সাঁওতাল পরিবার ,গান্ধীজি ইত্যাদি। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তি বানিয়েছিলেন। তাকে ভারতীয় শিল্পে আধুনিকতার জনক[2] ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী মনে করা হয়।

দ্রুত তথ্য রামকিঙ্কর বেইজ, জন্ম ...
রামকিঙ্কর বেইজ
Thumb
জন্ম২৫ মে[1], ১৯০৬
যুগীপাড়া, বাঁকুড়া, বাংলা, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু২ অগস্ট, ১৯৮০ (বয়স ৭৬)
জাতীয়তাভারতীয়
পরিচিতির কারণভাস্কর
পুরস্কার১৯৭০খ্রিষ্টাব্দে তিনি পদ্মভূষণ উপাধি লাভ করেন
বন্ধ

প্রথম জীবন

রামকিঙ্কর বেইজ ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির বাঁকুড়া শহরের যুগীপাড়ায় (অধুনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে) এক পরমানিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[3] তার পদবী বেইজ, সংস্কৃত বৈদ্য ও প্রাকৃত বেজ্জর পরিবর্তির রূপ। তার পিতা ছিলেন চণ্ডীচরণ বেইজ।

মধ্যকৈশোরে রামকিঙ্কর অসহযোগ আন্দোলনে বা নন্- কোঅপারেশন (ইংরেজিতে) অংশগ্রহণকারী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি আঁকতেন। মেট্রিক ক্লাস (বর্তমানে যা মাধ্যমিকের সমতুল্য) পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর ষোলো বছর বয়সে তিনি বাঁকুড়ার বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের নজরে পড়ে যান। চার বছর পরে তিনি শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতী বিদ্যালয়ে চারুকলার ছাত্র হিসেবে যোগ দেন।[4] আচার্য নন্দলাল বসু ছিলেন তার শিক্ষক। রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় প্রমুখকে সহপাঠী হিসাবে পেয়েছিলেন। চারুকলায় ডিপ্লোমা অর্জন করে তিনি বিশ্বভারতীর ভাস্কর্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের পদে বৃত হন। ১৯৭১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী জহর দাশগুপ্ত শঙ্খ চৌধুরী ছিলেন তার ছাত্র।

সাহিত্যে

তার জীবনকথা নিয়ে সাহিত্যিক সমরেশ বসু (কালকূট) 'দেখি নাই ফিরে' নামে বৃহদায়তন উপন্যাস রচনা করেন। যার চিত্রাংকন করেছিলেন শিল্পী বিকাশ ভট্টাচার্য।

ধরণ

রামকিঙ্কর বাইজ জীবনের প্রাকৃতিক উত্সকে সাড়া দিয়েছিল।মানব ব্যক্তিত্ব, দেহের ভাষা এবং সাধারণ মানব নাটকে খুব আগ্রহী ছিলেন। আধুনিক পশ্চিমা শিল্প এবং প্রাক ও উত্তর-শাস্ত্রীয় ভারতীয় শিল্প তার উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল। তিনি স্থানীয় উপাদানগুলি সুবিধার্থে ব্যবহার করেছিলেন এবং একজন মডেলার এবং কার্ভারের দক্ষতার সংমিশ্রণে কাজ করেছিলেন। তার চিত্রগুলিও তার ভাস্কর্যগুলির মতো প্রকাশবাদী মাত্রা গ্রহণ করে, যা শক্তি এবং প্রাণশক্তি দিয়ে পূর্ণ। বাইজ যখন ঠাকুরের প্রতিকৃতি তৈরি করছিলেন, তখন এক বৈঠকের সময়, প্রবীণ কবি তাকে বাঘ হিসাবে এই বিষয়টির কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রক্তে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এর পরে, বাইজের নিজস্ব কথায়, তিনি "পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি"।

তার কয়েকটি ভাস্কর্য কলাভবন, শান্তিনিকেতন, প্রয়াত রানী চন্দ সংগ্রহ ও চারুকলা একাডেমী, কলকাতা, এইচ.কে. সহ বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষিত এবং প্রদর্শিত রয়েছে কেজরিওয়াল কালেকশন এবং কর্ণাটকের চিত্রকলার পরশহাট, বেঙ্গালুরু, ললিত কালা আকাদেমি, নয়াদিল্লি, ন্যাশনাল গ্যালারী অফ মডার্ন আর্ট, নয়াদিল্লি, রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া, নয়াদিল্লি, জেন এবং কিতো ডি বোয়ার, দুবাই এবং নয়াদিল্লির দিল্লী আর্ট গ্যালারী।

মৃত্যু

১৯৮০ সালের ২৩ শে মার্চ, বৈজকে পি জি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তিনি প্রোস্টেট গ্রন্থির রোগে ভুগছিলেন এবং ক্ষুধা পাওয়ার সমস্ত ধারণা হারাতেন। চিকিত্সকরা শান্ট অপারেশন করেছেন। তার চিকিত্সার ব্যয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং বিশ্বভারতীর অধ্যক্ষ বহন করেছিলেন। ২ আগস্ট কলকাতায় তার মৃত্যু হয়। শান্তিনিকেতনে তার ভাগ্নে তার মরদেহ দাহ করা হয়েছিল। তিনি হাসপাতালে থাকার সময় তার শেষ ভাস্কর্য দুর্গামূর্তিটি গড়েছিলেন।

তথ্যসূত্র

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.