Loading AI tools
ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কাজল (জন্ম কাজল মুখার্জী; ৫ আগস্ট ১৯৭৪), এছাড়াও বিবাহত্তোর কাজল দেবগন নামে পরিচিত, একজন ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, যিনি মূলত হিন্দি চলচ্চিত্রে কাজ করেন। ভারতের মুম্বইয়ে মুখার্জী-সমর্থ পরিবারে জন্ম নেওয়া কাজল অভিনেত্রী তনুজা সমর্থ এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা শমু মুখার্জী দম্পতির কন্যা। কাজল ভারতের অন্যতম সফল এবং সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেত্রী। কর্মজীবনে তিনি বারটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার মনোনয়নের মধ্যে ছয়টি পুরস্কার জিতেছেন। তার মাসী নূতনের সাথে যৌথভাবে তিনি সর্বোচ্চ পাঁচবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার বিজয়ের রেকর্ড ধরে রেখেছেন। ২০১১ সালে তিনি ভারত সরকার কর্তৃক দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ সম্মানিত পুরস্কার পদ্মশ্রীতে ভূষিত হয়েছেন।
কাজল | |
---|---|
জন্ম | কাজল মুখার্জী ৫ আগস্ট ১৯৭৪ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুল |
পেশা |
|
কর্মজীবন | ১৯৯২–২০০১, ২০০৬–বর্তমান |
দাম্পত্য সঙ্গী | অজয় দেবগন (বি. ১৯৯৯) |
সন্তান | ২ |
পিতা-মাতা |
|
পরিবার | মুখার্জী-সমর্থ পরিবার |
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
কাজলের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ১৯৯২ সালে তার মায়ের সাথে প্রণয়ধর্মী বেখুদি চলচ্চিত্রে। তার প্রথম বাণিজ্যিক সফল চলচ্চিত্র রহস্যধর্মী বাজীগর (১৯৯৩) এবং যুগান্তকারী প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্র ইয়ে দিল্লাগি (১৯৯৪)। নব্বইয়ের দশকে তিনি কয়েকটি শীর্ষ-উপার্জনকারী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আরো সাফল্য অর্জন করেছিলেন, যার মধ্যে অ্যাকশন-থ্রিলার করন অর্জুন (১৯৯৫), হাস্যরস ইশ্ক (১৯৯৭) এবং প্রণয়ধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া (১৯৯৯), প্যায়ার তো হোনা হি থা (১৯৯৯) এবং হাম আপকে দিল মেঁ রেহতে হ্যাঁয় (১৯৯৯) অন্তর্ভুক্ত। ১৯৯৭ সালে গুপ্ত: দ্য হিডেন ট্রুথ রহস্য চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ খল অভিনয়শিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন এবং ১৯৯৮ সালে মনস্তাত্ত্বিক রহস্য চলচ্চিত্র দুশমন তাকে সমালোচনামূলক স্বীকৃতি এনে দেয়। ১৯৯৫ সালে প্রণয়ধর্মী নাট্য দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে চলচ্চিত্রে এরআরআই পরিবারের কন্যা, ১৯৯৮ সালে প্রণয়মূলক-নাট্যধর্মী কুছ কুছ হোতা হ্যায় চলচ্চিত্রে প্রথমে বালকসুলভ ও পরে আদর্শ ভারতীয় নারী চরিত্রে, ২০০১ সালে পারিবারিক-নাট্যধর্মী কাভি খুশি কাভি গাম... চলচ্চিত্রে নিম্নমধ্যবিত্ত পাঞ্জাবি নারী, ২০০৬ সালে ফনা চলচ্চিত্রে অন্ধ কাশ্মিরি নারী, এবং ২০১০ সালে মাই নেম ইজ খান চলচ্চিত্রে বিচ্ছেদ হওয়া একক মা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য রেকর্ড সংখ্যক পাঁচবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। তার অভিনীত সর্বাধিক উপার্জনকারী চলচ্চিত্র হল অ্যাকশন-প্রণয়ধর্মী দিলওয়ালে (২০১৫) ও ঐতিহাসিক জীবনীমূলক তানহাজী (২০২০)।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি কাজল সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তিনি বিধবা নারী এবং শিশুদের নিয়ে কাজের জন্য সুপরিচিত। এই কাজের জন্য তিনি ২০০৮ সালে কর্মবীর পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি জি টিভির রক-এন-রোল ফ্যামিলি অনুষ্ঠানের বিচারক এবং দেবগন এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড সফটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছেন। কাজল ১৯৯৯ সালে অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা অজয় দেবগনকে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান রয়েছে।
কাজল ১৯৭৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতের বম্বের (বর্তমানে মুম্বই) বাঙালি-মারাঠি মুখার্জী-সমর্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা তনুজা সমর্থ অভিনেত্রী এবং বাবা শমু মুখার্জী ছিলেন পরিচালক ও প্রযোজক।[1] তার বাবা শমু ২০০৮ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।[2] কাজলের ছোট বোন তানিশা মুখার্জী একজন বলিউড অভিনেত্রী। তার মাসী ছিলেন অভিনেত্রী নূতন এবং তার নানী শোভনা সমর্থ ও প্রো-পিতামহী ছিলেন রতন বাই; তারা সকলেই ভারতীয় চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত ছিলেন। তার দুই চাচা জয় মুখার্জী ও দেব মুখার্জী চলচ্চিত্র প্রযোজক। তার দাদা শশধর মুখার্জী এবং নানা কুমারসেন সমর্থ চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন। কাজলের চাচাত বোন রানী মুখার্জী ও শ্রাবণী মুখার্জী বলিউডের অভিনেত্রী এবং চাচাতো ভাই মোহনিশ বেহল অভিনেতা, এবং অয়ন মুখার্জী চলচ্চিত্র পরিচালক।[3][4]
কাজল বলেন যে তিনি শৈশবে অত্যন্ত দুষ্ট এবং খুব অল্প বয়স থেকে ভীষণ একগুঁয়ে ও আবেগপ্রবণ ছিলেন।[5] তার যখন খুবই অল্প বয়স তখন তার বাবা-মা আলাদা হয়ে যান, কিন্তু তনুজার মতে এতে কাজলের ওপর কোনো প্রভাব পরেনি, কারণ তারা কখনো কাজলের সামনে তর্ক-বিতর্ক করতেন না।[6] তার মায়ের অনুপস্থিতিতে কাজল তার নানীর দেখাশোনা করতেন এবং কাজল তার সম্পর্কে বলেন, "তিনি কখনো আমাকে বুঝতে দেননি যে আমার মা বাইরে কাজ করছেন।" কাজলের ভাষ্যমতে তার মা তাকে খুব অল্প বয়সেই স্বাধীনচেতা মনোভাবের অধিকারী করে তুলেন। দুটি ভিন্ন সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা কাজল তার মায়ের দিক থেকে "মহারাষ্ট্রীয় দরকারবাদ" এবং বাবার দিক থেকে "বাঙালি মেজাজ" পেয়েছেন।[7]
কাজল পঞ্চগনির সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেন। পাশাপাশি তিনি নৃত্যসহ বিভিন্ন অতিরিক্ত কার্যক্রমে অংশ নিতেন।[8] বিদ্যালয়ে থাকাকালীন তার কথাসাহিত্য পাঠের আগ্রহ জন্মে। এই অভ্যাস তাকে তার জীবনের দুঃসময়ে সঙ্গ দেয়।[9]
ষোল বছর বয়সে তিনি রাহুল রাওয়াইলের বেখুদি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার বিদ্যালয়ের গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময়ে ধারণকৃত চলচ্চিত্রটিতে কাজ শেষে তার বিদ্যালয়ে ফিরে আসার পরিকল্পনা ছিল। তবে তিনি দ্বাদশ শ্রেণিতে অকৃতকার্য হবার পর পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে চলচ্চিত্রে পূর্ণকালীন কর্মজীবন শুরু করতে মনোনিবেশ করেন। পড়াশোনা শেষ না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "পড়াশোনা শেষ না করলেও আমি মনে করি না যে আমি কোন অংশে কম চৌকস।"[7]
কাজলের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে সতেরো বছর বয়সে ১৯৯২ সালে প্রণয়মূলক-নাট্যধর্মী বেখুদি চলচ্চিত্রে আরেক অভিষিক্ত কমল সাদানাহ ও তার মা তনুজার সাথে।[10] এই চলচ্চিত্রে তার মা তার চরিত্রের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। কাজল রাধিকা নামে এক তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেন যে সাদানাহের চরিত্রের প্রেমে পড়ে, কিন্তু তার পিতামাতার ইচ্ছা তার অন্য একজনের সাথে বিয়ে দেওয়ার। যদিও চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়, কিন্তু কাজলের অভিনয় সকলের দৃষ্টি কাড়ে এবং তাকে পরিচালক যুগল আব্বাস-মাস্তানের রোমহর্ষক বাজীগর (১৯৯৩) চলচ্চিত্রের জন্য চুক্তিবদ্ধ করা হয়। ₹১৮২.৫ মিলিয়ন (ইউএস$ ২.২৩ মিলিয়ন) রুপী আয়কারী চলচ্চিত্রটি সে বছরের অন্যতম ব্যবসাসফল এবং চতুর্থ সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র ছিল।[11] মার্কিন চলচ্চিত্র আ কিস বিফোর ডাইং থেকে অনুপ্রাণিত চলচ্চিত্রটিতে শাহরুখ খান, শিল্পা শেঠী ও সিদ্ধার্থ রায়ের সাথে তিনি প্রিয়া চোপড়া নামে এক তরুণীর ভূমিকায় অভিনয় করেন, যে তার বোনের খুনীর প্রেমে পড়ে। এটি খানের সাথে তার অভিনীত অসংখ্য কাজের মধ্যে প্রথম।[12]
১৯৯৪ সালে কাজল উধার কী জিন্দগি চলচ্চিত্রে জিতেন্দ্র ও মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় অভিনীত চরিত্রের দৌহিত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। তেলুগু সীতারমাইয়া গারি মানাভারালু চলচ্চিত্রের পুনর্নির্মিত চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। তবে কাজল তার অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার অর্জন করেন।[13] এরপর তিনি যশ রাজ ফিল্মসের প্রণয়মূলক নাট্যধর্মী ইয়ে দিল্লাগি চলচ্চিত্রে অক্ষয় কুমার ও সাইফ আলি খানের সাথে অভিনয় করে আরো খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এটি বিলি ওয়াইল্ডার পরিচালিত ১৯৫৪ সালের সাবরিনা মার্কিন চলচ্চিত্রের পুনর্নির্মাণ। চলচ্চিত্রে তাকে এক ভৃত্যের কন্যার চরিত্রে দেখা যায়, যে মডেল হবার পর দুই ভাইয়ের সাথে ত্রিভুজ প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায়।[14] ইয়ে দিল্লাগী চলচ্চিত্রের সাফল্য কাজলের প্রথম আলোচিত সাফল্য হিসাবে বিবেচিত এবং তিনি এই কাজের জন্য তার প্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
১৯৯৫ সালে কাজল দুটি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, সেগুলো হল রাকেশ রোশন পরিচালিত করন অর্জুন এবং আদিত্য চোপড়া পরিচালিত দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে। দুটি চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে ছিলেন শাহরুখ খান। প্রথমটি পুনর্জন্মের গল্পে একটি নাট্যধর্মী থ্রিলার, যেখানে তিনি সোনিয়া সাক্সেনা নামক একটি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন যে শাহরুখের চরিত্রের প্রেমে পড়ে। চলচ্চিত্রটি সে বছরে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র ছিল।[15] পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমি করন অর্জুন চলচ্চিত্রটি করেছি কারণ জানতে চেয়েছিলাম কেবল অলংকার হতে কেমন লাগে। এই চলচ্চিত্রে আমার সুন্দর মুখশ্রী ধরে রাখা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না।"[16] একই বছরে কাজলের পরবর্তী তিনটি কাজ—তাকত, হালচাল ও গুন্ডারাজ—বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হয়। শেষ দুটি চলচ্চিত্রে তিনি তার ভবিষ্যৎ স্বামী অজয় দেবগনের সাথে অভিনয় করেন।[17]
১৯৯৫ সালে কাজল অভিনীত ও মুক্তিপ্রাপ্ত পঞ্চম চলচ্চিত্র ছিল প্রণয়ধর্মী দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে। এটি শুধু ১৯৯৫ সালের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রই নয়, বরং ভারতের সর্বকালের সবচেয়ে সফল চলচ্চিত্র।[18][19] মুক্তির সময় চলচ্চিত্রটি বিশ্বব্যাপী ₹ ১.২৩ বিলিয়ন (ইউএস$ ১৫.০৩ মিলিয়ন) আয় করে,[20] এবং পরবর্তী কালেও নিয়মিত মুম্বইয়ে প্রদর্শিত হতে থাকে।[21] চলচ্চিত্রটি সমালোচনামূলক দিক থেকেও সফল হয় এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ দশটি বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করে এবং কাজল লন্ডন প্রবাসী ভারতীয় তরুণী সিমরান সিং চরিত্রে তার অভিনয়ের জন্য তার প্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।[22] ২০০৫ সালে ইন্ডিয়াটাইমস মুভিজ চলচ্চিত্রটিকে "২৫টি অবশ্য দর্শনীয় বলিউড চলচ্চিত্র" তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে এবং চলচ্চিত্রটিকে "এক ধরনের নতুন ধারা সৃষ্টিকারী" বলে মন্তব্য করে।[23] এই বছরের এক ফিরে দেখা চলচ্চিত্র পর্যালোচনায় রেডিফ.কম-এর রাজা সেন বলেন "কাজলকে সিমরান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য চাতুর্যের সাথে নির্বাচন করা হয়, শুরুতে সিমরান হিসেবে বিনয়াভিমানী ও অনিচ্ছুক হলেও পরে তিনি আবেগ-উত্তেজনা ও বিশ্বাসপ্রবণতা দেখিয়েছিলেন।[24] পর্দায় তার রসায়নকে আলাদাভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই, কারণ এটি ইতোমধ্যে কিংবদন্তিতুল্য হয়ে গেছে।" ১৯৯৬ সালে কাজল বিক্রম ভাট পরিচালিত মারপিট-নাট্যধর্মী বম্বাই কা বাবু চলচ্চিত্রে সাইফ আলি খান ও অতুল অগ্নিহোত্রীর সাথে অভিনয় করেন। মুক্তি পর ছবিটি সমালোচনামূলকভাবে এবং বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।[25]
১৯৯৭ সালে গুপ্ত: দ্য হিডেন ট্রুথ চলচ্চিত্রে মনোবিকৃত ধারাবাহিক খুনী ও মোহাবিষ্ট প্রেমিকা ইশা দিওয়ান চরিত্রে কাজলের অভিনয় সমাদৃত হয় এবং এটি তার কর্মজীবনের বাঁক বদলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[26] তিনি দিওয়ান চরিত্রে অভিনয় সম্পর্কে বলেন এটি তার কর্মজীবনের সবচেয়ে "কঠিন চরিত্র" কারণ এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করা খুবই কষ্টকর।[27] দ্য হিন্দু-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক রাজীব রাই বলেন, "[আমি] গুপ্ত চলচ্চিত্রে কাজলের বৈচিত্রপূর্ণ শিল্পীভাবকে ব্যবহার উপযোগী করেছিলাম। তার চরিত্রটি জটিল ছিল এবং তিনি চলচ্চিত্রটিতে এই চরিত্রায়নের বিরল কৌশলগত সূক্ষ্মতা নিয়ে এসেছেন।"[28] এই সাসপেন্স থ্রিলারটিতে তার সহশিল্পী ছিলেন ববি দেওল ও মনীষা কৈরালা। চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়,[29] এবং কাজল প্রথম অভিনেত্রী হিসাবে শ্রেষ্ঠ খল অভিনয়শিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন।[30]
তার পরবর্তী কাজ ছিল আদিত্য পঞ্চোলি ও সাইফ আলি খানের সাথে সঞ্জয় গুপ্তের পুনর্জন্ম বিষয়ক প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্র হামেশা (১৯৯৭)। চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। এরপর তিনি অরবিন্দ স্বামী ও প্রভু দেবার সাথে রাজীব মেননের তামিল ভাষার প্রণয়মূলক নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র মিনসারা কানাভু-এ একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী নান চরিত্রে অভিনয় করেন। তখন পর্যন্ত তিনি তামিল ভাষা জানতেন না, তাই তার স্থলে কণ্ঠ দেন তামিল অভিনেত্রী রেবতী। কাজল পরবর্তীকালে বলেন যে প্রভু দেবার সাথে নাচা কষ্টকর ছিল এবং ঠিক নাচের তালের জন্য তাকে ২০বার পুনঃদৃশ্যধারণ ও ৩০বার পুনরাবৃত্তি করতে হয়েছিল।[31] দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর পর্যালোচনায় তার কাজটি প্রশংসিত হয় এবং লেখা হয়, "কাজল তার চরিত্রের জন্য প্রশংসাসূচক স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে উপযুক্ত ছিলেন। এটি বর্তমান সময়ের অন্যতম অভিব্যক্তিপূর্ণ মুখভঙ্গী।
তার পরবর্তী মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল ইন্দ্র কুমার পরিচালিত প্রণয়ধর্মী হাস্যরসাত্মক ইশ্ক। এতে তিনি আমির খান, জুহি চাওলা ও অজয় দেবগনের সাথে অভিনয় করেন। তাকে এক ধনী যুবকের প্রেমে পড়া দরিদ্র তরুণীর চরিত্রে দেখা যায়। মুক্তির পর চলচ্চিত্রটি ব্যবসাসফল হয় এবং প্রধান চার অভিনয়শিল্পীর অভিনয় প্রশংসিত হয়।[29]
১৯৯৮ সালে কাজল সে বছরের তিনটি সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্রে কাজ করে সমকালীন হিন্দি চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধান অভিনেত্রী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সে বছরে তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল সোহেল খান পরিচালিত প্রণয়ধর্মী হাস্যরসাত্মক প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া। এতে তিনি মুসকান ঠাকুর নামে এক গ্রাম্য তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেন যে সালমান খান অভিনীত ধনী যুবকের প্রেমে পড়ে, কিন্তু তার বড় ভাই তাদের সম্পর্ক সহজে মেনে না নেওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। চলচ্চিত্রটি শুধু বক্স অফিসে সফলই হয়নি, এটি সমালোচকদের কাছ থেকেও ইতিবাচক পর্যালোচনা অর্জন করে। এরপর তিনি মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলারধর্মী দুশমন চলচ্চিত্রে সঞ্জয় দত্ত ও আশুতোষ রানার বিপরীতে যমজ বোন সোনিয়া ও নয়না সায়গল চরিত্রে দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় করেন। তনুজা চন্দ্র পরিচালিত ও মহেশ ভাট রচিত চলচ্চিত্রটিতে নয়নাকে তার বোনের ধর্ষণ ও খুনের প্রতিশোধ নিতে দেখা যায়। এই চলচ্চিত্রে তার কাজের জন্য কাজল সমাদৃত হন[32] এবং সমালোচক সুকন্যা বর্মা লিখেন, "কাজল তার সেরা ফর্মে ছিলেন, কর্মজীবন নিয়ে একগুঁয়ে ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী খুন হওয়া বোন ও তার প্রতিশোধ-পরায়ণ যমজ বোন উভয় চরিত্রে।"[33] বক্স অফিসে ব্যর্থ হলেও দুশমন বিপুল সমাদৃত হয় এবং কাজল তার প্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে স্ক্রিন পুরস্কার অর্জন করেন এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
তিনি এরপর অজয় দেবগনের বিপরীতে আনিস বাজমির প্রণয়ধর্মী হাস্যরসাত্মক প্যায়ার তো হোনা হি থা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এটি লরেন্স ক্যাসডান পরিচালিত ১৯৯৫ সালের ফ্রেঞ্চ কিস মার্কিন চলচ্চিত্রের পুনর্নির্মাণ। এই চলচ্চিত্রে তিনি সঞ্জনা চরিত্রে অভিনয় করেন, যে তার বাগদত্তার খুঁজে প্যারিস থেকে ভারত আসে, এবং অন্য একজনের (অজয় দেবগন) প্রেমে পড়েন। প্ল্যানেট বলিউড-এ এক পর্যালোচনায় লিখে, "কাজল, স্বভাবতই, সঞ্জনা চরিত্রে অসাধারণ। তিনি আড়াই ঘণ্টার এই চলচ্চিত্রে আপনাকে কাঁদাবে, উচ্চস্বরে হাসাবে, রাগান্বিত করবে এবং হাসাবে। তার অভিনয় ইংরেজি অভিনেত্রী মেগ রায়ানের মত।" চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িকভাবে "সুপার হিট' হয় এবং কাজলকে এই বছরে তার দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন পাইয়ে দেয়।[34]
এই বছরের তার সবচেয়ে সফল কাজ ছিল প্রণয়ধর্মী কুছ কুছ হোতা হ্যায়। এটি ছিল করণ জোহরের পরিচালনায় অভিষেক চলচ্চিত্র। শাহরুখ খান, তার চাচাতো বোন রানী মুখার্জী, এবং সালমান খানের সাথে অভিনীত চলচ্চিত্রটি ভারত ও বিশ্বব্যাপী ₹ ১ বিলিয়ন (ইউএস$ ১২.২২ মিলিয়ন) রুপী আয় করে সর্বকালের ব্লকবাস্টার খ্যাতি অর্জন করে।[35][36] কাজল অঞ্জলি শর্মা চরিত্রে আনন্দপ্রিয় টমবয় ও পরে পরিপূর্ণ নারী ও সুন্দরী হিসেবে রূপান্তরিত হন, যে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে (শাহরুখ খান) গোপনে ভালোবাসত। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার নিখত কাজমি তার পর্যালোচনায় লিখেন, "অঞ্জলি চরিত্রে কাজল সম্মোহনকারী... কাজল তার ঢলঢলে উপস্থিতি, বাউন্সি বব কাট, এবং তার ঠাট্টামূলক বাল্যসুলভ আচরণ দিয়ে এক ধরনের আস্তরণ তৈরি করে।"[37] বম্বে টকিজ-এর খালিদ মোহামেদও একই রকম মত প্রকাশ করেন এবং মনে করেন, "চলচ্চিত্রটি কাজলের"।[38] তিনি তার এই কাজের জন্য ৪৪তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার আয়োজনে তার দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে এবং ১ম জি সিনে পুরস্কার আয়োজনে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন।[22] ফিল্মফেয়ার কাজলের দুশমন ও কুছ কুছ হোতা হ্যায় চলচ্চিত্রের কাজকে তাদের ভারতীয় চলচ্চিত্রের "৮০টি সবচেয়ে প্রতীকী অভিনয়" তালিকায় স্থান দেয়।[39] এই বছরের শেষে দ্য ট্রিবিউন-এর মধুর মিত্তল লিখেন যে কাজল তার প্রতিটি চরিত্রে অসাধারণ আবেগী ও ভাবানুভূতিপূর্ণ পর্দা উপস্থিতির মধ্য দিয়ে একজন অতিমাত্রায় দক্ষ নায়িকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।[40]
১৯৯৯ সালে অজয় দেবগনকে বিয়ের পর কাজল প্রকাশ ঝার নাট্যধর্মী দিল ক্যায়া করে চলচ্চিত্রে অজয় ও মহিমা চৌধুরীর সাথে পার্শ্ব ভূমিকায় অভিনয় করেন। তিনি দেবগন অভিনীত অনন্ত কিশোরের জীবনে দ্বিতীয় নারী নন্দিতা রাই চরিত্রে অভিনয় করেন। ফিল্মফেয়ারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কাজল বলেন, "আমার এই চরিত্রের অভিনয় করতে রাজি হওয়ার একমাত্র কারণ হল এতে ধূসর ছায়া ছিল। আমি কিশোরের স্ত্রীর চরিত্রটি হয়তো প্রত্যাখ্যান করতাম। কারণ আমার মনে হয়েছে তাতে আমার করার কিছু ছিল না।"[41] চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর ব্যাপক নেতিবাচক পর্যালোচনা দেখা যায়। সমালোচক শর্মিলা টেলিকুলাম কাজল সম্পর্কে লিখেন যে "একমাত্র তিনিই বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন চরিত্রে কাজ করেছেন।"[42] ব্যবসায়িকভাবেও চলচ্চিত্রটি ব্যর্থ হয়। তার পরবর্তী মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল সতীষ কৌশিকের নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র হাম আপকে দিল মেঁ রেহতে হ্যাঁয়। চলচ্চিত্রটি সমালোচনামূলক ও ব্যবসায়িকভাবে সফলতা অর্জন করে।[43] অনিল কাপুরের বিপরীতে তার চরিত্রের প্রতারিত স্ত্রী মেঘা চরিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে আরেকটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। চলচ্চিত্রটি ভারতে নারী কেন্দ্রিক চলচ্চিত্র হিসাবে ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করে গণমাধ্যমে বিপুল প্রচার লাভ করে। ১৯৯৯ সালের কাজলের তৃতীয় ও শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল প্রণয়মূলক নাট্যধর্মী হোতে হোতে প্যায়ার হো গয়া। জ্যাকি শ্রফ, অতুল অগ্নিহোত্রী ও আয়েশা ঝুলকার সাথে অভিনীত এই চলচ্চিত্রটি সমালোচনামূলক ও ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়।[44]
পরের বছর তিনি তার স্বামী অজয়ের প্রযোজনা সংস্থার রাজু চাচা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ₹৩০০ মিলিয়ন (ইউএস$ ৩.৬৭ মিলিয়ন) রুপী ব্যয়ে নির্মিত শিশুতোষ চলচ্চিত্রটি সে সময়ে বলিউডের সবচেয়ে ব্যয়বহুল চলচ্চিত্র ছিল।[45] মুক্তির পর চলচ্চিত্রটি নেতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে এবং বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।[46] ২০০১ সালে কাজলের মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল রাহুল রাওয়াইলের হাস্যরসাত্মক কুছ খাট্টি কুছ মিঠি। এতে তিনি জন্মের সময়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া যমজ বোন টিনা ও সুইটি খান্না চরিত্রে দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রটিও ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয় এবং সমালোচকদের নিকট থেকে নেতিবাচক পর্যালোচনা দেখা যায়। রেডিফ.কম-এর সাভেরা আর সোমেশ্বর এই চলচ্চিত্রে কাজলের কাজ করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন এবং তার অভিনয়কে "নিষ্প্রাণ" বলে বর্ণনা করেন।[47]
এই বছরের শেষভাগে তিনি করণ জোহর পরচিালিত পারিবারিক নাট্যধর্মী কভি খুশি কভি গম... চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি ভারতে ব্লকবাস্টার এবং ২০০৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে সর্বোচ্চ আয়কারী ভারতীয় চলচ্চিত্র ছিল।[48] অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, শাহরুখ খান, হৃতিক রোশন, ও কারিনা কাপুরের সাথে অভিনীত চলচ্চিত্রটিতে তিনি দিল্লির চাঁদনী চক এলাকার এক তরুণী পাঞ্জাবি নারী অঞ্জলি শর্মা চরিত্রে অভিনয় করেন, যে শাহরুখ খান অভিনীত ধনী রাহুল রাইচন্দের প্রেমে পড়ে এবং এ নিয়ে রাহুলের সংসারে জটিলতার সৃষ্টি হয়। কাজল চিত্রধারণকালে পাঞ্জাবি ভাষায় স্বচ্ছন্দে কথা বলতে না পারায় শুরুতে কিছুটা সমস্যায় পড়েন। তবে তিনি প্রযোজক যশ জোহর ও তার কলাকুশলীদের সহায়তায় সঠিক উচ্চারণ রপ্ত করে নেন।[49] তার হাস্যরসাত্মক-নাট্যধর্মী অভিনয় বিপুল সমাদৃত হয় এবং তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে তার তৃতীয় ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ও দ্বিতীয় স্ক্রিন পুরস্কার-সহ একাধিক পুরস্কার অর্জন করেন।[22] তরণ আদর্শ তাকে "প্রথম-সারির" বলে আখ্যায়িত করেন এবং প্রত্যাশা করেন তার পাঞ্জাবি উচ্চারণ তাকে অনেক প্রশংসিত করবে।[50] দ্য হিন্দু এক পর্যালোচনায় লিখে, "কাজল তার যথাযথ সময়জ্ঞান ও সূক্ষ্ণ দীর্ঘস্থায়ী মুখাভঙ্গী দিয়ে সবর্দায় পুলকিত ছিলেন।"[51][52] কভি খুশি কভি গম... ছবির সফলতার পর কাজল পূর্ণ-সময় অভিনয় থেকে বিরতি নেন। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "আমি চলচ্চিত্র ছাড়ছি না, আমি কেবল বেছে বেছে কাজ নিচ্ছি। ভাগ্যবশত আমি এমন অবস্থানে আছি যেখান থেকে আমি বাছাই ও পছন্দ করতে পারি।"[53] তিনি আরও বলেন চলচ্চিত্র থেকে বিরতি নেওয়ার অন্যতম কারণ হল বৈবাহিক জীবনে মনোযোগ দেওয়া ও "সংসার শুরু করা"।[54]
কাজল ২০০৬ সালে আমির খানের বিপরীতে কুনাল কোহলির প্রণয়ধর্মী থ্রিলার চলচ্চিত্র ফনা দিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে প্রত্যাবর্তন করেন। তবে তিনি ফনাকে তার প্রত্যাবর্তন বলে অস্বীকার করে বলেন, "আমি কখনো অবসর নেইনি। আমি শুধু একটু বিরতি নিয়েছি।"[55] বিশ্বব্যাপী ₹ ১ বিলিয়ন (ইউএস$ ১২.২২ মিলিয়ন) আয়কারী চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ব্যাপক সফলতা অর্জন করে।[56] তিনি অন্ধ কাশ্মিরী তরুণী জুনি আলি বেগ চরিত্রে অভিনয় করেন, যে অনিচ্ছাকৃতভাবে আমির খান অভিনীত একজন সন্ত্রাসীর প্রেমে পড়ে। চলচ্চিত্রটি এবং কাজলের অভিনয় বিপুল প্রশংসিত হয়। পর্যালোচক সুদিশ কমত বলেন কাজল "এই চলচ্চিত্রটি দেখার একমাত্র কারণ" এবং আরও বলেন, "কাজল এমনভাবে অভিনয় করেছেন যে তিনি পর্দা থেকে কখনোই বিরতি নেননি এবং তার উপস্থিতি দিয়ে চলচ্চিত্রটিকে উজ্জীবিত করেছেন।"[57] ব্লুমবার্গ-এর এক পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয় যে, "কাজল এখনো সহজাতভাবে পর্দাকে আলোকিত করার ক্ষমতা রয়েছে, এবং তিনি আমির খানের পদ্ধতিগত দক্ষতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ গুটিকয়েক প্রধান অভিনেত্রীদের একজন।"[58] ফনা চলচ্চিত্রে তার কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে তার চতুর্থ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং দ্বিতীয় জি সিনে পুরস্কার অর্জন করেন।[22]
ফনার সাফল্যের পর কাজল এই দশকের বাকি সময় সবিরাম কাজ করে গেছেন। তিনি পরে তার স্বামী অজয় দেবগনের পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ইউ মি অউর হাম (২০০৮)-এ আলৎসহাইমারের রোগে আক্রান্ত নারী পিয়া চরিত্রে অভিনয় করেন। দেবগন কাজলের এই চলচ্চিত্রে অভিনয় সম্পর্কে বলেন, "সে সবসময় শুটিং শুরুর পূর্বে তার চরিত্রের সারকথা নিয়ে আপোসহীন থাকেন। যেহেতু বাড়িতেই চিত্রনাট্য রচনার কাজ হয়েছিল, কাজল সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং তার অভিনীত চরিত্রেও কিছু যোগ করতেন।"[59] চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর বক্স অফিসে মধ্যম মানের ব্যবসা করে এবং তার অভিনয়ের জন্য সমালোচকদের নিকট থেকে ইতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে। উদিতা ঝুনঝুনওয়ালা উল্লেখ করেন, "কাজল এখানে তার ভঙ্গুর ও নাজুক অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞ নারী চরিত্রে পুরোপুরিভাবে তার নিজস্বতা নিয়ে ফিরে এসেছেন। তিনি অসাধারণ।"[60] রাজা সেন বলেন, "[কাজল] শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার বন্ধ চোখ দিয়ে সুখী পরিবেশ তৈরি করতে পারেন এবং প্রথমার্ধ্বে তার জন্য কষ্টসাধ্য না হলেও আলৎসহাইমারের রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর যখন তিনি তার জীবনের সবকিছু ভুলতে শুরু করেন, কাজল এই দুইয়ের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য গড়ে তুলেন।"[61] এই কাজের জন্য কাজল শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে আরেকটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[22]
কাজল ২০১০ সালে শাহরুখ খানের বিপরীতে করণ জোহর পরিচালিত মাই নেম ইজ খান চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এটি ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলা পরবর্তী মার্কিন মুসলমানদের উপর জাতিগত বিদ্বেষ ও বৈষম্য নিয়ে নির্মিত সন্ত্রাস-বিরোধী নাট্য চলচ্চিত্র।[62] চলচ্চিত্রটি ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মুক্তি পায় এবং বিপুল ইতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে। এছাড়া চলচ্চিত্রটি বিশ্বব্যাপী ₹ ২ বিলিয়ন (ইউএস$ ২৪.৪৫ মিলিয়ন) আয় করে।[63] কাজল তালাকপ্রাপ্ত হিন্দু একক মা মন্দিরা চরিত্রে অভিনয় করেন, যে একজন মুসলমান স্নায়ুবিক প্রতিবন্ধী লোককে বিয়ে করে। সমালোচকগণ তার অভিনয়ের প্রশংসা করেন; রাজিব মসন্দ বলেন, "কাজল রিজওয়ানের গল্পে অনুভূতির গভীরতা নিয়ে আসেন, মন্দিরা চরিত্রে তিনি পছন্দ করার মত, তার অনুভূতি জ্ঞাপন করা চোখ দিয়ে শক্তিশালীয় অভিনয় দেখিয়েছন।"[64] এই কাজের জন্য কাজল শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে তার পঞ্চম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন, ফলে তিনি তার প্রয়াত মাসী নূতনের সাথে যৌথভাবে এই বিভাগে সর্বোচ্চ পুরস্কার বিজয়ী।[22]
তাকে এরপর কারিনা কাপুর ও অর্জুন রামপালের সাথে সিদ্ধার্থ মালহোত্রার পারিবারিক নাট্যধর্মী উই আর ফ্যামিলি চলচ্চিত্রে দেখা যায়, এটি ১৯৯৮ সালের স্টেপমম মার্কিন নাট্যধর্মী চলচ্চিত্রের দাপ্তরিক পুনর্নির্মাণ। কাজল এতে মায়া চরিত্রে অভিনয় করেন, মূল চলচ্চিত্রে এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুজান সার্যান্ডন।[65] হিন্দুস্তান টাইমস-এর সমালোচক ময়ঙ্ক শেখর বলেন, "সময় এতে করুণ রস সৃষ্টি করে না, বরং একক অভিনয়: বিশেষ করে বিমোহিতকারী কাজল। তিনি সুজান সার্যান্ডনের থেকেও ভালো করেছেন, আমার ধারণা।"[66] দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর রেচেল সালৎজ লিখেন, "সর্বদা আর্কষণীয় কাজল জানেন কীভাবে আবেগপ্রবণ না হয়েও আবেগপ্রবণ চরিত্রে অভিনয় করতে হয়, এবং তার স্বাভাবিকতা চলচ্চিত্রটিকে প্রকৃত আবেগপ্রবণতা এনে দেয়।"[67] এই বছরে তার অভিনীত শেষ চলচ্চিত্র ছিল অজয় দেবগনের বিপরীতে লাইভ-অ্যাকশন অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র টুনপুর কা সুপার হিরো। দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাজল বলেন যে এই চলচ্চিত্র কাজ করা কষ্টকর ছিল। তিনি আরও বলেন, "ডাবিং এবং শুটিং দুই'ই সমান হতাশাজনক ছিল। আপনাকে অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হবে এবং ফাঁকা সবুজ জায়গায় আমার অল্প কয়েকটি অ্যাকশন সিকুয়েন্স ছিল। তাই আমি হাসছিলাম, ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলাম, উচ্চস্বরে হাসছিলাম - সবই ভুল স্থানে!"[68] চলচ্চিত্রটি সমালোচনামূলক ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হয় এবং অভিনয়ের সুযোগ না থাকা এমন একটি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য কাজল নেতিবাচক সমালোচনার স্বীকার হন।[69]
পাঁচ বছর পর্দায় অনুপস্থিত থাকার পর কাজল সতেরতম বারের মত শাহরুখ খানের বিপরীতে প্রণয়ধর্মী হাস্যরসাত্মক দিলওয়ালে (২০১৫) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[70] রোহিত শেঠী পরিচালিত চলচ্চিত্রটিতে আরো অভিনয় করেন বরুণ ধবন ও কৃতি স্যানন। এই চলচ্চিত্রে কাজল মাফিয়া ডনের কন্যা মীরা দেব মালিক চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি তার বিরোধী পরিবারের একজন সদস্যের প্রেমে পড়েন। সামগ্রিকভাবে চলচ্চিত্রটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া লাভ করে, এবং কাজলের অভিনয় মিশ্র থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া লাভ করে। ইন্ডিয়া টুডে-র সুহানী সিং লিখেন, "পর্দায় কাজলের উজ্জ্বল উপস্থিতি এবং তার কাছ থেকে যা আশা করা হয়েছিল - তা যথেষ্ট নয়।"[71] নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও দিলওয়ালে চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে সফলতা অর্জন করে এবং বিশ্বব্যাপী ₹ ৩.৮ বিলিয়ন (ইউএস$ ৪৬.৪৫ মিলিয়ন) রুপি আয় করে বলিউডের সর্বকালের সর্বোচ্চ আয়কারী তালিকায় প্রবেশ করে।[72] কাজল তার অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার ও স্ক্রিন পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কার আয়োজনে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে মনোনীত হন।[73]
২০১৭ সালে কাজল ধনুষের সাথে বেলাই ইল্লা পট্টধারী (২০১৪)-এর অনুবর্তী পর্ব বেলাই ইল্লা পট্টধারী ২ (হিন্দি ভাষায় ভিআইপি ২ নামে পরিচিত) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি দীর্ঘদিন পর তামিল ভাষার চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন, এর পূর্বে তিনি তামিল ভাষার মিনসারা কানাভু চলচ্চিত্রে কাজ করেছিলেন। কাজল বলেন যেন তিনি চলচ্চিত্রটিতে কাজ করতে নিমরাজি ছিলেন, কিন্তু পরে ধনুষ ও পরিচালক সৌন্দর্য রজনীকান্তের জন্য এই কাজটি গ্রহণ করেন।[74] ভিআইপি ২ চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের নিকট থেকে নেতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে, কিন্তু বক্স অফিসে সফলতা লাভ করে।[75]
২০১৮ সালে কাজল প্রদীপ সরকারের হাস্যরসাত্মক নাট্যধর্মী হেলিকপ্টার এলা চলচ্চিত্রে একজন অশিক্ষিত উচ্চাকাঙ্ক্ষী বিবাহিত গায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন, যে তার পুত্রের সাথে বিদ্যালয়ের পাঠ গ্রহণ সম্পন্ন করেন। আনন্দ গান্ধীর গুজরাতি মঞ্চনাটক বেটা, কাগদো অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রটি দিয়ে দিলওয়ালে-এর পর তার বলিউডে পুনরায় প্রত্যাবর্তন ঘটে। মুক্তির পর হলিকপ্টার এলা চলচ্চিত্রটি মিশ্র ও নেতিবাচক সমালোচনামূলক প্রতিক্রিয়া লাভ করে এবং পরিশেষে সমালোচনামূলক ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হয়, কিন্তু কাজল তার অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হন।[76]
কাজল এরপর তার স্বামী অজয়ের সাথে মারাঠা সাম্রাজ্যের সেনাপতি তানাজি মালুসারের জীবনী অবলম্বনে ওম রাউতের পরিচালনায় মারপিটধর্মী রোমহর্ষক তানহাজী (২০২০) চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এতে তিনি তানাজির স্ত্রী সাবিত্রীবাঈ মালুসারের ভূমিকায় অভিনয় করবেন। এরপর তাকে নিরঞ্জন আয়েঙ্গার প্রযোজিত শ্রুতি হাসানের সাথে নারী-কেন্দ্রিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেবী-তে দেখা যায়।[77] এটি তার অভিনীত প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। প্রিয়াঙ্কা ব্যানার্জি পরিচালিত চলচ্চিত্রটিতে মূলত একটি রহস্য নাট্যধর্মী স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, যেখানে দেখা যায় যে নয়জন নারী একটি কক্ষে আটকা পড়ে গেছেন।[78][79] সমালোচকেদের কাছ থেকে এটি ইতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে,[80] এবং কাজল বিভিন্ন অভিনয়শিল্পীদের মধ্য থেকেও নিজেকে আলাদা প্রমাণ করেন।[81] দেবী ফিল্মফেয়ার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (দর্শকের পছন্দ) বিভাগে পুরস্কার লাভ করে।[82]
তার পরবর্তী কাজ হল রেনুকা শাহানের সামাজিক নাট্যধর্মী ত্রিভঙ্গ, এটি দিয়ে তার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে অভিষেক ঘটে।[83][84] মুম্বইয়ের পটভূমিতে নির্মিত চলচ্চিত্রটি ভিন্ন প্রজন্মের তিনজন নারীর (কাজল, মিথিলা পালকর, ও তানবী আজমী) ঘটনাবলির মধ্যে আবর্তিত হয়েছে, যেখানে কাজল ওডিসি নৃত্যশিল্পী অনুরাধা আপ্টে চরিত্রে অভিনয় করেন।[85] তিনি নিজের সাথে এই "ওভার-দ্য-টপ" চরিত্রের মিল খুঁজে পান।[86] চলচ্চিত্রটি ইতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে; এনডিটিভির সমালোচক শৈবাল চ্যাটার্জি "ত্রিভঙ্গ বুঝার জন্য রোমাঞ্চ প্রয়োজন তা প্রদানের জন্য" কাজলের প্রশংসা করেন।[87] দ্য কুইন্ট-এর স্তুতি ঘোষ আজমী ও কাজলকে "বলিষ্ঠ অভিনয়শিল্পী" বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন "তারা দুজন পর্দায় থাকাকালীন অন্যদের উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করা কষ্টকর।"[88] ২য় ফিল্মফেয়ার ওটিটি পুরস্কারে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে মনোনীত হন।
১৯৯৯ সালে অজয় দেবগনের চলচ্চিত্র প্রযোজনা কোম্পানি দেবগন ফিল্মস (বর্তমানে দেবগন এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড সফটওয়্যার লিমিটেড নামে পরিচিত) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, কাজল নবগঠিত প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইট তৈরিতে কাজ করেন।[89] ২০০০ সালে তিনি সিনেএক্সপ্লোর নামে একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করেন। তিনি বলেন, "এই পোর্টালটি চলচ্চিত্র নির্মাণের সকল বিষয় নিয়ে আলোকপাত করবে। আমি একজন তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে কাজ করব। আমি কার্যপন্থাগুলি তদারকি করব। আমরা টিভি ও মিউজিক ভিডিওর জন্য সফটওয়্যারও বানাচ্ছি।"[90]
অজয় দেবগন ২০০৯ সালে অজয় দেবগন ফিল্মস নামে আরেকটি প্রয়োজনা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জানান যে এর সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই, তবে তিনি তদারকি ও সবকিছু তত্ত্ববধানে অংশগ্রহণ করেছেন।[91] ২০১৬ সালে তিনি প্রসার ভারতীর খন্দকালীন সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।[92]
১৯৯৮ সালে কাজল শাহরুখ খান, জুহি চাওলা ও অক্ষয় কুমারের সাথে অসাম ফোরসাম কনসার্ট সফরে অংশ নেন।[93][94] যুক্তরাজ্য, কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে তিনি আর কোন বিশ্ব সফরে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান, কারণ তিনি এই চাপ মোকাবিলা করতে পারেননি।[95]
২০০৮ সালে কাজল তার স্বামী অজয় দেবগন ও মা তনুজার সাথে জি টিভির পারিবারিক আপাতবাস্তব টেলিভিশন অনুষ্ঠান রক-এন-রোল ফ্যামিলি অনুষ্ঠানের বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।[96] টেলিভিশনে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, "টেলিভিশন কাজ করা চলচ্চিত্রে কাজ করার চেয়ে অনেক কষ্টসাধ্য। কিন্তু টেলিভিশনের মাধ্যমে সরাসরি দর্শকদের সাথে সম্পৃক্ততা তৈরি করা যায় যা আমাদের মত অভিনয়শিল্পীদের জন্য চনমনে পরিবর্তন নিয়ে আসে।"[97]
কাজল নারী ও শিশু সম্পর্কিত কয়েকটি মানবহিতৈষী কর্মকাণ্ডের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তার মতে, "সকল শিশুই শিক্ষা লাভের অধিকার রাখে", যেহেতু "শিক্ষাই সমাজের মূলভিত্তি"।[98] ২০০৮ সালে তিনি সমাজসেবায় অবদানের জন্য কর্মবীর পুরস্কার লাভ করেন।[99]
কাজল শিশুশিক্ষায় নিযুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার সাথে জড়িত।[100] ২০০৯ সালে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সহায়তার লক্ষ্যে শিক্ষা ২০০৯ ক্যাম্পেইন চালু করেন।[101] ২০১১ সালে কাজল ক্যান্সার পেশন্ট এইড অ্যাসোসিয়েশন তহবিল সংগ্রহের জন্য এই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আয়োজিত একটি ফ্যাশন শোতে অংশগ্রহণ করেন।[102] তিনি বিশ্ব জুড়ে বিধবা ও তাদের শিশুদের সাহাযার্থে নিয়োজিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান লুম্বা ট্রাস্টের আন্তর্জাতিক শুভেচ্ছাদূত এবং পৃষ্ঠপোষক।[103] এই বিষয়ে তিনি বলেন, "এটা জেনে খুব দুঃখ হয় যে বিধবাদের এখনো আমাদের সমাজে অনিষ্টের রূপ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিছু বিধবা রয়েছেন যারা এখনো বিবাহের উপযোগী নন। আমি তাদের দুঃখ অনুভব করি এবং এই বিষয়টি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য একে সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করেছি।"[104]
২০১২ সালে কাজল শিশুদের জন্য নিয়োজিত দাতব্য সংগঠন প্রথম-এর দূত নিযুক্ত হন। এপ্রিল মাসে তিনি এই সংগঠনের জন্য মুম্বইয়ের হনুমান বস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের নিয়ে শিক্ষা ও স্বাক্ষরতা বিষয়ক একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেন।[105]
১৯৯৪ সালে গুন্ডারাজ চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণকালে কাজল ও তার সহশিল্পী অজয় দেবগনের প্রেমের সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটে।[7] গণমাধ্যমের সদস্যরা তাদের বিপরীত ব্যক্তিত্বের জন্য তাদেরকে "দুর্ভাগা যুগল" বলে অভিহিত করে।[106] দেবগন তাদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলেন, "আমরা কখনো "আমি তোমাকে ভালোবাসি" এই নিত্যনৈমিত্তিক কাজের আশ্রয় নেইনি। কখনো প্রেমের প্রস্তাবই দেওয়া হয়নি। আমরা একে অপরের জন্য গড়েছি। বিবাহ নিয়েও আলোচনা হয়নি, কিন্তু তা সবসময় সমুপস্থিত ছিল।"[107] তারা ১৯৯৯ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি দেবগনের বাড়িতে ঐতিহ্যবাহী মহারাষ্ট্রীয় পদ্ধতিতে এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[108] তাদের বিবাহও গণমাধ্যমের ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়েছিল, গণমাধ্যমের অনেক সদস্যই কাজলের কর্মজীবনের শীর্ষে অবস্থানকালীন তার বিবাহের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন।[109] কাজল আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন যে তিনি চলচ্চিত্র ছাড়বেন না, কিন্তু কাজের পরিমাণ কমিয়ে দিবেন।[53][110]
২০০১ সালে কাজল অন্তঃসত্ত্বা হন, কিন্তু গর্ভকালীন জটিলতার কারণে তার গর্ভপাত ঘটে।[111] ২০০৩ সালের ২০শে এপ্রিল কাজল এক কন্যার জন্ম দেন, তার নাম রাখা হয় নাইসা।[112] সাত বছর পর ২০১০ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর তার দ্বিতীয় সন্তান যুগের জন্ম হয়।[113] তিনি মাতৃত্বকে "চমৎকার" বলে বর্ণনা করেন এবং বলেন যে তার সন্তানেরা "তার সেরাটা" নিয়ে এসেছে।[114]
চলচ্চিত্র সমালোচক সুকন্যা বর্মা কাজলকে "বিপরীত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন" বলে বর্ণনা করেন। তিনি লিখেন, "কাজলের কথা ভাবুন, এবং অনুভূতি নিয়ে ভাবুন। তিনি হয় কলহ সৃষ্টিকারী অথবা অনুভূতিসম্পন্ন সংবেদনশীল ধরনের। এবং মাঝে মাঝে পুত-পবিত্র, আবার দুষ্ট।"[115] সাংবাদিকগণ শুরুতে তাকে "আবেগপ্রবণ ও উগ্র কন্যা" বলে উল্লেখ করে, কাজল বিভিন্ন ভাবে হিন্দি চলচ্চিত্র অভিনেত্রীদের ছাঁচগত ভাবমূর্তিকে অস্বীকৃতি জানান।[109] সাংবাদিক কাবেরি বামজাইয়ের ব্যাখ্যা অনুসারে, "তিনি আয়নাতে কদাচিৎ তাকান, সেটের মনিটরে তাকান না বললেই চলে, প্রত্যেক শঙ্কিত অভিনয়শিল্পীর নির্ভরযোগ্যতা, প্রচণ্ড রকমের বাধ্য করা হলে রূপসজ্জা করেন, এবং তার পুরনো চলচ্চিত্র কখনো দেখেন না।"[7]
কাজল "ক্ষীণকায়, ও পরিপাটি হওয়া, অলংকার পরিধান বা কেতাদুরস্ত হতে অনাগ্রহের" জন্য প্রায়ই গণমাধ্যমে সমালোচিত হন।[116][117] ফিল্মফেয়ার তাকে "প্রথাবিরোধী সৌন্দর্য" বলে অভিহিত করে, এবং লিখে, "প্রচলিত রীতি না মেনে কাজল বেশিরভাগ নায়িকার ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র না খাটা নব্বইয়ের দশকে তার নিজস্ব রীতি নির্ধারণ করেন।[118][119]
একাধিক পারিবারিক নাট্যধর্মী চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের পর কাজল গুপ্ত: দ্য হিডেন ট্রুথ চলচ্চিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে তার বৈচিত্রতা প্রদর্শন করেছেন এবং চলচ্চিত্র নির্বাচনে প্রথাবিরোধী এই পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য গণমাধ্যমে বিশেষভাবে উল্লেখিত হন।[120] তার অভিনয় ধরনকে "স্বভাবজাত" বলে বর্ণনা করা হয়। দ্য হিন্দু অনুসারে, "কাজলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যমান হল প্রতিভা ও অভিব্যক্তি প্রকাশের পরিতৃপ্তি। কাজল তার অভিনীত দৃশ্যে অভিনয় করেন না ও তার সংলাপ বলেন না; তিনি তার চরিত্রাবলিকে ধারণ করেন।"[11] অধিকন্তু, তার সমকালীন অধিকাংশ অভিনেত্রীর থেকে তিনি বিবাহ-পরবর্তী ও মাতৃত্বের পরও কর্মজীবনে সফলতা অর্জন করেছেন। গণমাধ্যমের কয়েকজন সদস্য করণ জোহর, আদিত্য চোপড়া ও শাহরুখ খানের সাথে সম্পর্ককে তার সফলতাকে পিছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, যারা এখনো তাদের চলচ্চিত্রে তাকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে নির্বাচন করে থাকেন।[121]
কাজল টানা পাঁচ বছর (১৯৯৫-১৯৯৯) বক্স অফিস ইন্ডিয়ার শীর্ষ অভিনেত্রী তালিকায় স্থান পান।[122] ২০০১ ও ২০০৬ সালে যথাক্রমে কভি খুশি কভি গম... ও ফনা চলচ্চিত্র বাণিজ্যিকভাবে সফলতা অর্জনের পর কাজল রেডিফ.কম-এর বার্ষিক শীর্ষ বলিউড অভিনেত্রী তালিকায় স্থান পান।[123] [124] ২০০৭ সালে তিনি রেডিফের সর্বকালের সেরা বলিউড অভিনেত্রী তালিকার নবম স্থান অধিকার করেন।[125] ভারতীয় চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য ২০১১ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করেন।[126]
২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যে "বলিউড কিংবদন্তি" শিরোনামের অধীনে শাহরুখ খান, হৃতিক রোশন ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সাথে কাজলের ক্ষুদ্র প্রতিকৃতির পুতুল চালু করা হয়।[127] ২০১০ সালে কাজল ও তার সে বছরের মাই নেম ইজ খান চলচ্চিত্রের সহশিল্পী শাহরুখ খান নাসড্যাক থেকে আমেরিকান স্টক একচেঞ্জের উদ্বোধনে আমন্ত্রিত হন।[128] ২০১২ সালে কাজল এনডিটিভির "সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী" তালিকায় চতুর্থ স্থান অধিকার করেন, তার উপরে ছিলেন মাধুরী দীক্ষিত, শ্রীদেবী ও মিনা কুমারী।[129] একই বছর ইয়াহু.কম তাকে হিন্দি চলচ্চিত্রের দশ প্রতীকী সুন্দরীদের একজন হিসেবে উল্লেখ করে।[130]
কাজল ছয়টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন, তন্মধ্যে দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে (১৯৯৫), কুছ কুছ হোতা হ্যায় (১৯৯৮), কভি খুশি কভি গম... (২০০১), ফনা (২০০৬) এবং মাই নেম ইজ খান (২০১০) চলচ্চিত্রের জন্য পাঁচটি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে এবং গুপ্ত: দ্য হিডেন ট্রুথ (১৯৯৭) চলচ্চিত্রের জন্য একটি শ্রেষ্ঠ খল অভিনয়শিল্পী বিভাগে। শিল্পকলায় অনন্য অবদানের জন্য তিনি ২০১১ সালে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত চতুর্থ সর্বোচ্চ ভারতীয় বেসামরিক সম্মননা পদ্মশ্রীতে ভূষিত হন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.