সালমান খান
ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, টেলিভিশন উপস্থাপক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আব্দুর রশিদ সেলিম সালমান খান (হিন্দি: सलमान ख़ान; জন্ম: ২৭ ডিসেম্বর ১৯৬৫)[১] হলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক এবং টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব। যিনি প্রধানত হিন্দি চলচ্চিত্রে কাজ করেন। তিন দশকেরও বেশি সময়ব্যাপী কর্মজীবনে, তিনি প্রযোজক হিসেবে দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও অভিনেতা হিসেবে দুটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।[২] বলিউডের সবচেয়ে বড় তারকা সালমান খানকে বিশ্ব ও ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম ব্যবসাসফল অভিনয়শিল্পী বলে আখ্যায়িত করা হয়।[৩][৪] ফোর্বস সাময়িকীর ২০১৮ সালের বিশ্বের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক গ্রহীতা ১০০ তারকার মধ্যে ভারতীয়দের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় এবং সারা বিশ্বে ৮২তম স্থান অধিকার করেন।[৫][৬]
সালমান খান | |
---|---|
![]() ২০২৩ সালে সালমান খান | |
জন্ম | আব্দুর রশিদ সেলিম সালমান খান ২৭ ডিসেম্বর ১৯৬৫ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
অন্যান্য নাম | সাল্লু/ভাইজান/সুলতান |
পেশা |
|
কর্মজীবন | ১৯৮৮–বর্তমান |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | কাজের তালিকা |
আত্মীয় | দেখুন খান পরিবার |
পুরস্কার | সম্পূর্ণ তালিকা |
ওয়েবসাইট | সালমান খান |
স্বাক্ষর | |
![]() |
চিত্রনাট্যকার সেলিম খানের জ্যেষ্ঠ পুত্র সালমান খান ১৯৮৮ সালে বিবি হো তো অ্যায়সি চলচ্চিত্রে একটি গৌণ ভূমিকায় অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন। কেন্দ্রীয় চরিত্রে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ম্যায়নে পিয়ার কিয়া (১৯৮৯) ব্যবসাসফল হয়। এই ছবিতে কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। এরপর নব্বইয়ের দশকে তিনি বলিউডে বেশ কিছু ব্যবসাসফল হিন্দি চলচ্চিত্র উপহার দেন, তন্মধ্যে রয়েছে প্রণয়মূলক নাট্যধর্মী হাম আপকে হ্যাঁয় কৌন..! (১৯৯৪), মারপিটধর্মী রোমহর্ষক করন অর্জুন (১৯৯৫), হাস্যরসাত্মক জুড়ওয়া (১৯৯৭), প্রণয়ধর্মী প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া (১৯৯৮), হাস্যরসাত্মক বিবি নাম্বার ওয়ান (১৯৯৯) এবং পারিবারিক নাট্যধর্মী হাম সাথ-সাথ হ্যাঁয় (১৯৯৯)। ২০০০-এর দশকে কিছু সময় পিছিয়ে পড়ার পর তিনি ২০১০-এর দশকে আরও বেশি তারকা খ্যাতি অর্জন করেন। এই সময়ে তিনি ব্যবসাসফল দাবাং (২০১০), রেডি (২০১১), এক থা টাইগার (২০১২), কিক (২০১৪), সুলতান (২০১৬) ও টাইগার জিন্দা হ্যায় (২০১৭) চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া ২০১০ সাল থেকে তিনি বিগ বস প্রতিযোগিতার সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।[৭]
প্রারম্ভিক জীবন
সারাংশ
প্রসঙ্গ
জন্ম ও পরিবার

সালমান খান ১৯৬৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চিত্রনাট্যকার সেলিম খান এবং তার প্রথম স্ত্রী সুশীলা চরকের (পরে সালমা খান নাম গ্রহণ করেন) জ্যেষ্ঠ পুত্র। সালমানের বাবা সেলিম খান অভিনেতা ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে পরিচিত হলেও একটা সময়ে তিনি পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। সেলিম ১৯৬৪ সালে সুশীলাকে বিয়ে করেন। পরের বছর সালমানের জন্ম হয়। জন্মের সময় তার নাম রাখা হয় আব্দুর রশিদ সেলিম সালমান খান। পিতার দিক থেকে তার পূর্বপুরুষগণ ছিলেন বর্তমান পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার[৮] আলাকোজাই পশতুন,[৯][১০][১১][১২] যারা ১৮০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে অভিবাসিত হয়ে এসেছিলেন। তার পিতামহ আবদুল রশিদ খান ছিলেন ইন্দোর রাজ্যের ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল, যিনি হোলকার সময়ে দিলার জাং পুরস্কার অর্জন করেছিলেন।[১৩] সালমানের মাতা মহারাষ্ট্রীয়,[১৪] তার পিতা বলদেব সিং চরক[১৫] জম্মু-কাশ্মীরের[১৫][১৬] একজন দুগ্রা রাজপুত ছিলেন[১৭] এবং মাতা মহারাষ্ট্রীয় ছিলেন।[১৮][১৯] সেলিম-সুশীলা দম্পতির চার সন্তানের বাকিরা হলেন দুই পুত্র অভিনেতা ও প্রযোজক আরবাজ খান ও সোহেল খান এবং এক কন্যা প্রযোজক ও পোশাক নকশাবিদ আলবিরা খান অগ্নিহোত্রী যিনি অভিনেতা ও পরিচালক অতুল অগ্নিহোত্রীকে বিয়ে করেন। ১৯৮১ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন সেলিম খান। তার দ্বিতীয় স্ত্রী বলিউডের অভিনেত্রী হেলেন। বিয়ের পর কন্যা অর্পিতা খানকে দত্তক নেন সেলিম-হেলেন দম্পতি।[২০]
শিক্ষা জীবন
সালমান খান গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। সেখানে তিনি ও তার ছোট ভাই আরবাজ কয়েক বছর পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি মুম্বইয়ের বান্দ্রার সেন্ট স্ট্যানিসলস হাই স্কুল থেকে তার স্কুলজীবন সমাপ্ত করেন।[২১] পরে তিনি মুম্বইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু পড়াশোনা সমাপ্ত করতে পারেননি।[২২]
স্কুলে পড়ার সময় বহুবার সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি দেশের বাইরেও সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। সালমান খানের উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি। তবে কম উচ্চতা কখনোই তার সাফল্যে ভাটা পড়তে দেয়নি।[২৩]
অভিনয় জীবন
সারাংশ
প্রসঙ্গ

১৯৮৯-৯৩: অভিষেক ও প্রারম্ভিক সাফল্য
সালমান খান ১৯৮৮ সালে বিবি হো তো অ্যায়সি ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিনয় জীবন শুরু করেন, এতে তিনি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। তার দ্বিতীয় ও কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা প্রথম চলচ্চিত্র সুরজ বড়জাত্যার প্রণয়মূলক নাট্য চলচ্চিত্র ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া (১৯৮৯)। ছবিটি সেসময়ের সর্বোচ্চ আয়কারী ভারতীয় চলচ্চিত্র।[২৪][২৫] এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি ৩৫তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।[২৬] ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া ছবিটি ইংরেজি ভাষায় হোয়েন লাভ কলস (When Love Calls), স্পেনীয় ভাষায় তে আমো (Te Amo) ও তেলুগু ভাষায় প্রেমা পাভুরালু (ప్రేమ పావురాలు) নামে ডাবিং করা হয়।[২৭]
১৯৯০ সালে সালমান অভিনীত বাঘি: আ রেবেল ফর লাভ ছবিটি বক্স অফিসে সফলতা অর্জন করে।[২৮] পরের বছর তার অভিনীত তিনটি চলচ্চিত্র - পাত্থর কে ফুল, সনম বেওয়াফা ও কুরবান মাঝারি মানের ব্যবসা করে। একই বছর তিনি সঞ্জয় দত্ত ও মাধুরী দীক্ষিতের সাথে প্রণয়মূলক নাট্যধর্মী সাজন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[২৯]
১৯৯৪-৯৯: হাম আপকে হ্যাঁয় কৌন..! ও অন্যান্য
১৯৯৪ সালে সালমান রাজকুমার সন্তোষীর আন্দাজ আপনা আপনা ছবিতে আমির খানের সাথে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন। মুক্তির পর চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হলেও পরবর্তী কালে এটি কাল্ট তকমা লাভ করে।[৩০] পরের বছর তিনি পুনরায় সুরজ বড়জাত্যার পরিচালনায় প্রণয়ধর্মী হাম আপকে হ্যাঁয় কৌন..!-এ মাধুরী দীক্ষিতের বিপরীতে অভিনয় করেন। ছবিটি ১৯৯৫ সালের ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে তিনটি পুরস্কার অর্জন করে এবং সুস্থ্য বিনোদন প্রদানকারী শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।[৩১] বিশ্বব্যাপী ₹১.৩৫ বিলিয়ন আয়কারী চলচ্চিত্রটি সেই বছরের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র। এটি বক্স অফিস ইন্ডিয়ার "হিন্দি চলচ্চিত্রের সর্বকালের সেরা ব্লকবাস্টার" তালিকার অন্যতম চলচ্চিত্র।[৩২] বক্স অফিস ইন্ডিয়া অনুসারে, ২০০৬ সালেও এটি বলিউডের চতুর্থ সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র ছিল।[৩৩]
১৯৯৫ সালে তিনি রাকেশ রোশনের করন অর্জুন ছবিতে শাহরুখ খানের সাথে অভিনয় করেন। তারা দুজন পারিবারিক শত্রু কর্তৃক খুন হওয়া ও পুনর্জন্ম লাভ করা দুই ভাই চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতে করন চরিত্রে নাম ভূমিকায় তার অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[৩৪] পরের বছর তিনি সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর অভিষেক চলচ্চিত্র খামোশি: দ্যা মিউজিক্যাল ছবিতে অভিনয় করেন।[৩৫] এছাড়া এই বছর তাকে রাজ কানওয়ারের মারপিটধর্মী জিত ছবিতে দেখা যায়।[৩৬] ১৯৯৭ সালে তার অভিনীত দুটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়, সেগুলো হল জুড়ওয়া ও অউজার। ডেভিড ধবন পরিচালিত হাস্যরসাত্মক জুড়ওয়া ছবিটিতে তিনি যমজ দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন, যারা জন্মের পর আলাদা হয়ে গিয়েছিল।
১৯৯৮ সালে তিনি করণ জোহরের অভিষেক চলচ্চিত্র কুছ কুছ হোতা হ্যায়-এ নাতিদীর্ঘ ক্ষণিক চরিত্রে অভিনয় করেন, যার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন।[৩৭] ১৯৯৯ সালে তিনি তিনটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, সেগুলো হল হাম সাথ-সাথ হ্যাঁয়, বিবি নাম্বার ওয়ান,[৩৮] ও হাম দিল দে চুকে সনম। সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর হাম দিল দে চুকে সনম ছবিতে তিনি ঐশ্বর্যা রাই ও অজয় দেবগনের সাথে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে আরেকটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[৩৯] তার অভিনয় সম্পর্কে রেডিফ.কমের শর্মিলা তেলিকুলাম লিখেন, "সালমান নিজেকে প্রিয় করে নিয়েছে। নাটকীয় দৃশ্যে তিনি অতিরঞ্জিত অভিনয় করলেও হাস্যরসাত্মক ও প্রণয়মূলক দৃশ্যে তিনি খুবই সহজাত অভিনয় করেছেন।"[৪০]
পরবর্তী দশকগুলোতে তার উল্লেখযোগ্য হলো তেরে নাম, পার্টনার, বডিগার্ড, দাবাং, রেডি, বজরঙ্গি ভাইজান, সুলতান ইত্যাদি।
বিতর্ক
- ১৯৯৮ সালে জোধপুরে "হাম সাথ-সাথ হ্যাঁয়" ছবির শুটিংয়ের ফাকে নিজের রাইফেল থেকে গুলি করে দুটি কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা করেন। সেই মামলায় ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল তাকে ৫ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয় এবং তার ২ দিন পর তিনি ৭ এপ্রিল জামিন পান।
পুরস্কার ও সম্মাননা
সালমান খান দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং একটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কার জিতেছেন । ২০০৮ সালের ১৫ জানুয়ারি লন্ডনের মাদাম তুসোর জাদুঘরে চতুর্থ ভারতীয় তারকা হিসেবে সালমান খানের মোমের মূর্তি স্থাপিত হয়।
আরও দেখুন
- সালমান খানের চলচ্চিত্র তালিকা
- সালমান খান প্রাপ্ত পুরস্কার এবং মনোনয়নের তালিকা
- ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতাদের তালিকা
তথ্যসূত্র
আরও পড়ুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.