২০শ শতাব্দী গ্রেগরীয় পঞ্জিকা অনুসারে ১৯০১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সময়কাল। এটি গত ২য় সহস্রাব্দের দশম ও শেষ শতাব্দী। ১ জানুয়ারি ১৯০১ সালে এটি শুরু হয় এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০০০ সালে শেষ হয়।[1] ২০শ শতাব্দী একটি ঘটনাবহুল শতাব্দী, যা আধুনিক যুগকে সংজ্ঞায়িত করেছিল। ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি, স্প্যানিশ ফ্লু মহামারী,১ম বিশ্বযুদ্ধ,২য় বিশ্বযুদ্ধ,পারমাণবিক অস্ত্র, পারমাণবিক শক্তি,মহাকাশ অনুসন্ধান,জাতীয়তাবাদ ও বিউপনিবেশায়ন, স্নায়ুযুদ্ধ, স্নায়ুযুদ্ধপরবর্তী সংঘাত এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি পৃথিবীর রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে পুনর্নির্মাণ করেছে।
সহস্রাব্দ: | ২য় সহস্রাব্দ |
---|---|
শতাব্দী: | |
সময়রেখা: | |
দশক: |
|
বিষয়শ্রেণীসমূহ: | জন্ম – মৃত্যু সংস্থাপনা – বিলুপ্তি সংস্থাপনা |
অন্যান্য বিষয়সমূহের মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সাংস্কৃতিক সমজাতীয়করণের মাধ্যমে উদীয়মান পরিবহন ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন; দারিদ্র্য বিমোচন ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি , বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি,পরিবেশগত অবনতি সম্পর্কে সচেতনতা, পরিবেশগত বিলুপ্তি এবং তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সূচনা। এসময় অটোমোবাইল,বিমান এবং গৃহস্থালী যন্ত্রপাতির ব্যবহার সাধারণ হয়ে ওঠে; একই সাথে ভিডিও এবং অডিও রেকর্ডিং। বিদ্যুৎ উৎপাদন, যোগাযোগ এবং স্বাস্থ্য প্রযুক্তিতে বিরাট অগ্রগতির ফলে বিশ্বব্যাপী তাৎক্ষণিক কম্পিউটার যোগাযোগ এবং জীবনের বংশানুগত পরিবর্তনসাধন সম্ভব হয়।
বিশ্বযুদ্ধ, স্নায়ুযুদ্ধ ও বিশ্বায়নের ফলে এমন একটি বিশ্ব তৈরি হয়েছিল যেখানে মানুষ মানব ইতিহাসের অন্য যেকোনা সময়ের তুলনায় অধিক ঐক্যবদ্ধ ছিল। উদাহরণস্বরূপ এসময় আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ চালু এবং জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এসময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপীয় দেশগুলোর বিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠন এবং এসব দেশে সোভিয়েত কমিউনিজমের বিস্তার রোধ করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোকে ১৩ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যা মার্শাল প্ল্যান নামে পরিচিত। ২০শ শতাব্দীর শেষার্ধ জুড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের সশস্ত্র প্রক্সি আঞ্চলিক সংঘাতের সৃষ্টি হয়; পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারের ফলে সর্বব্যাপী বিপদের উদ্ভব হয়। ১৯৯১ সালে ইউরোপীয় জোটের পতনের পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে পশ্চিমারা কমিউনিজমের সমাপ্তি হিসাবে ঘোষণা করেছিল। যদিও এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ পৃথিবীর প্রতি ছয়জন মানুষের মধ্যে একজন কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে বসবাস করত যাদের অধিকাংশই চীনের অধিবাসী । চীন অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক শক্তি হিসাবে দ্রুত ক্রমবর্ধমান ছিল।
১৮০৪ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ১০০ কোটিতে পৌঁছাতে আধুনিক মানব ইতিহাসের হিসেবে ২ লক্ষ বছর এবং মানব বিবর্তনের হিসেবে ৬০ লক্ষ বছর লেগেছিল। বিংশ শতাব্দীর ১৯২৭ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা আনুমানিক ২০০ কোটিতে পৌঁছায় । ২০০০ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা ৬০০ কোটিতে পৌঁছায়, যাদের অর্ধেকেরও বেশি ছিল পূর্ব, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অধিবাসী। বিশ্বব্যাপী সাক্ষরতার হার ৮০% এ পৌঁছায়।পেনিসিলিন ও অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির যুগান্তকারী অগ্রগতি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক টিকাদান কর্মসূচি যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানির চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী গুটিবসন্ত এবং অন্যান্য রোগ নির্মূল করতে সহায়তা করেছিল। গুটিবসন্ত এখন শুধুমাত্র গবেষণাগারে বিদ্যমান। উৎপাদনের সকল ক্ষেত্রে মেশিনের ব্যবহার শুরু হয় । বাণিজ্য উন্নয়নের ফলে কৃষি বিপ্লবের সময় থেকে প্রচলিত সীমিত আকারের খাদ্য-উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটে এবং খাদ্যের উৎপাদন ও বৈচিত্র্য বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ফলে মানুষের পুষ্টিমানের উন্নয়ন ঘটে। ১৯ শতকের শুরুর দিক পর্যন্ত মানুষের গড় আয়ু ছিল প্রায় ৩০ বছর। বিংশ শতাব্দীতে বৈশ্বিক গড় আয়ু ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৪০ বছর অতিক্রম করে । এসময় অর্ধেকের গড় আয়ু ছিল ৭০ বছর বা ততোধিক যা গত শতাব্দীর চেয়ে ৩০ বছর বেশি।
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
কালানুক্রমিক ইতিহাস
২০শ (বিংশ) শতাব্দীর সূচনা হয়েছিল ১ জানুয়ারী , ১৯০১ সালে ,[1] এবং শেষ হয়েছিল ৩১ ডিসেম্বর, ২০০০ সালে ৷[2] এটি দ্বিতীয় সহস্রাব্দের দশম এবং সর্বশেষ শতাব্দী ছিল। শতাব্দীর বছর হিসেবে ২০০০ সালটি একটি অধিবর্ষ ছিল। ১৬০০ সালের পরে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে এটি ছিল দ্বিতীয় শতাব্দীর অধিবর্ষ । এই শতাব্দীতেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে মহাদেশ ও মহাসাগর জুড়ে প্রথমবারের মতো সর্বাত্মক যুদ্ধ হয়েছিল।বিংশ শতাব্দীতে জাতীয়তাবাদ বিশ্বের একটি প্রধান রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়।
এই শতাব্দীতে রাজনীতি, ভাবাদর্শ, অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং ঔষধের পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক মানুষের জীবনযাত্রায় একটি বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় । বিংশ শতাব্দীতে সভ্যতার সূচনাকাল থেকে অন্য সকল শতাব্দীর সম্মিলিত অগ্রগতির চেয়ে অধিক প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি হয়েছিল। এসময় জাতীয়তাবাদ, বিশ্ববাদ, পরিবেশবাদ, ভাবাদর্শ,বিশ্বযুদ্ধ, গণহত্যা এবং পারমাণবিক যুদ্ধের মতো শব্দগুলো সাধারণভাবে ব্যবহার শুরু হয় । আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের মতো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ভৌত বিজ্ঞানের মূল মডেলগুলোকে গভীরভাবে পরিবর্তন করে। বিজ্ঞানীরা উপলব্ধি করতে বাধ্য হন যে মহাবিশ্ব আগের বিশ্বাসের চেয়ে আরও জটিল । ফলে উনিশ শতকের শেষের দিকে অবশিষ্ট বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের শেষ কয়েকটি বিবরণ পূরণ হতে চলেছে এমন আশা শেষ হয়ে যায়। এটি এমন একটি শতাব্দী ছিল যা ঘোড়া, সাধারণ অটোমোবাইল এবং মালবাহী জাহাজ দিয়ে শুরু হয়েছিল কিন্তু শেষ হয়েছিল উচ্চ-গতির রেল, প্রমোদতরী , বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক বিমান ভ্রমণ এবং স্পেস শাটল দিয়ে। হাজার হাজার বছর ধরে প্রতিটি সমাজের ব্যক্তিগত পরিবহনের মৌলিক মাধ্যম ঘোড়া এবং অন্যান্য মালবাহী পশু কয়েক দশকের মধ্যে গাড়ি এবং বাস দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি সম্পদ অনুসন্ধানের মাধ্যমে এই উন্নয়নগুলো সম্ভব হয় , যা সহজে বহনযোগ্য আকারে শক্তি সরবরাহ করে। কিন্তু এটি দূষণ এবং পরিবেশের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগের সৃষ্টি করে। এ শতাব্দীতেই মানুষ প্রথমবারের মতো মহাকাশ অনুসন্ধান করে এবং চাঁদে পা রাখে।
গণমাধ্যম, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি বিশেষ করে কম্পিউটার, পেপারব্যাক বই, সার্বজনীন শিক্ষা এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বজ্ঞানের আরও ব্যাপক প্রচলন সম্ভব হয় । জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের ফলে বিশ্বব্যাপী মানুষের গড় আয়ু ৩৫ বছর থেকে বেড়ে ৬৫ বছর হয়। তবে দ্রুত প্রযুক্তিগত অগ্রগতি যুদ্ধকে ধ্বংসের অভূতপূর্ব স্তরে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়। শুধুমাত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেই ৬ কোটির বেশি মানুষ নিহত হয়। এসময় পারমাণবিক অস্ত্র মানবজাতিকে অল্প সময়ের মধ্যেই নিজেকে ধ্বংস করার সুযোগ তৈরি করে । যদিও এই একই যুদ্ধসমূহের কারণে সাম্রাজ্য ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়। মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাম্রাজ্য ও তাদের সম্প্রসারণের যুদ্ধ এবং উপনিবেশবাদের অবসান আন্তর্জাতিক বিষয়ের একটি অন্যতম উপাদান হয়ে ওঠে। ফলে অনেক বেশি বিশ্বায়িত এবং সহযোগিতামূলক বিশ্বের সৃষ্টি হয়।প্রধান শক্তিগুলো ১৯৪৫ সালে শেষবার প্রকাশ্য সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল এবং তারপর থেকে সহিংসতা নজিরবিহীনভাবে হ্রাস পেয়েছে। [3] পরিবহন ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, জনপ্রিয় সঙ্গীত ও পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্যান্য প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে বিশ্ব সাংস্কৃতিকভাবে আগের চেয়ে আরও বেশি সমজাতীয় হয়ে ওঠে। বিংশ শতাব্দীর শেষ নাগাদ একটি সত্যিকারের বিশ্ব অর্থনীতির বিকাশ ঘটে।
সারসংক্ষেপ
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ছিল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী জতি, [4] যা আগের শতাব্দীতেও বিশ্বের রক্ষকের ভূমিকা পালন করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, যেমন: ট্যাঙ্ক, রাসায়নিক অস্ত্র এবং বিমানের মতো নতুন আবিষ্কার যুদ্ধকৌশলে পরিবর্তন এনেছিল । পশ্চিম ইউরোপে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান পরিখা যুদ্ধে ২ কোটি ২০ লক্ষাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পর ফ্রান্স প্রজাতন্ত্র, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং রাশিয়ান সাম্রাজ্যের সমন্বয়ে গঠিত ত্রিমৈত্রী জোট কেন্দ্রীয় শক্তির (জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, অটোমান সাম্রাজ্য এবং বুলগেরিয়া) বিরুদ্ধে জয়লাভ করে। ত্রিমৈত্রী জোট পরাজিত রাজ্যগুলির অনেক ঔপনিবেশিক সম্পত্তি দখল করার পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে শাস্তিমূলক ক্ষতিপূরণ আদায় করে যা বিশেষ করে জার্মানিকে অর্থনৈতিক মন্দায় নিমজ্জিত করেছিল। এই যুদ্ধের শেষেই অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় এবং অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙে যায়। রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় জার শাসনের অবসান হয়। শেষ সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাসের জারবাদী শাসনের পতন ঘটে এবং রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। বিজয়ী বলশেভিকরা বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করে।
যুদ্ধোত্তর ক্ষোভ থেকে ফ্যাসিবাদ নামক একটি আন্দোলনের উত্থান ঘটেছিল যা ১৯৩০ এর দশকের মহামন্দার সময় বৃদ্ধি পায়। ১৯৩০ এর দশকে ইতালি, জার্মানি এবং স্পেনে ফ্যাসিবাদ গতিলাভ করে। নাৎসি জার্মানির প্রতিবেশী দেশগুলো দখল করে নেয়ার প্রবণতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হয়। এদিকে,জাপান দ্রুত প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত শিল্পশক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং জার্মানি ও ইতালির সাথে অক্ষ শক্তি গঠন করে। পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরে জাপানের সামরিক সম্প্রসারণবাদের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। পার্ল হারবার নামক একটি অপ্রত্যাশিত আক্রমণের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
কয়েক বছরের নাটকীয় সামরিক সাফল্যের পর ১৯৪৫ সালে জার্মানি পরাজিত হয়। পূর্ব দিক থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পোল্যান্ড এবং পশ্চিম দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং ফ্রান্স জার্মানিকে আক্রমণ করে। ইউরোপে মিত্রশক্তির বিজয়ের পর মাঞ্চুরিয়ায় সোভিয়েত আক্রমণ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক জাপানের উপর দুটো পারমাণবিক বোমা বর্ষণের মধ্য দিয়ে এশিয়ায় যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা প্রথম দেশ এবং যুদ্ধে ব্যবহার করা একমাত্র দেশ। সবমিলিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৬ কোটি মানুষ মারা যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক ফোরাম হিসেবে লীগ অফ নেশন্সের উত্তরসূরী জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে বিশ্বের দেশগুলো বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কূটনৈতিকভাবে আলোচনা করতে পারে। এটি যুদ্ধ পরিচালনা, পরিবেশগত সুরক্ষা, আন্তর্জাতিক সার্বভৌমত্ব এবং মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো সমাধানের প্রস্তাব প্রদান করে। বিভিন্ন দেশ, বহুজাতিক সংস্থা এবং অন্যান্য সাহায্য সংস্থার সৈন্যদের সমন্বয়ে গঠিত শান্তিরক্ষী বাহিনী দুর্ভিক্ষ, রোগ ও দারিদ্র্য এবং কিছু স্থানীয় সশস্ত্র সংঘাত দমনে সহায়তা করে। ইউরোপ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে এবং কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে একত্রিত হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠন করে, যা ২০ শতকের শেষের দিকে ১৫টি ইউরোপীয় দেশ নিয়ে গঠিত হয়।
যুদ্ধের পর পশ্চিমা শক্তিসমূহ ও সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানি দখল ও ভাগ করে নেয়। পূর্ব জার্মানি এবং পূর্ব ইউরোপের বাকি অংশ কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে সোভিয়েত পুতুল রাষ্ট্রে পরিণত হয়। আমেরিকান মার্শাল প্ল্যানের সাহায্যে পশ্চিম ইউরোপ পুনর্নির্মিত হয়,যার ফলে যুদ্ধোত্তর অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ ঘটে এবং অনেক ক্ষতিগ্রস্ত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে ওঠে।
অক্ষশক্তির পরাজয় এবং ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পুনর্গঠনের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের একমাত্র অবশিষ্ট পরাশক্তি ছিল। যুদ্ধকালীন মিত্ররা দ্রুতই একে অপরের শত্রু হয়ে ওঠে। কমিউনিজম এবং গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদের মতো প্রতিযোগিতার মতাদর্শ ইউরোপে ছড়িয়ে যায়। ইউরোপ আয়রন কার্টেন ও বার্লিন প্রাচীর দিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এসময় তারা সামরিক জোট ( ন্যাটো এবং ওয়ারশ চুক্তি ) গঠন করে যা স্নায়ুযুদ্ধ নামক দশক-দীর্ঘ একটি স্থবিরতার সাথে জড়িয়ে পড়ে। সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বিতীয় দেশ হিসেবে পরমাণু অস্ত্র উৎপাদনকারী হয়ে ওঠার কারণে এসময় একটি নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার শুরু হয় । ফলে দুটি দেশই এই গ্রহের বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পরমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে। অনেক ইতিহাসবিদ এই ধরনের বিনিময় প্রতিরোধ করার জন্য পারস্পরিক নিশ্চিত ধ্বংসযজ্ঞকে দায়ী করেন। যেখানে কোনো পক্ষ সমান ধ্বংসাত্মক প্রতিশোধমূলক হামলার স্বীকার না হলে নিজে প্রথমে আঘাত করতে পারে না। একে অপরের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে ব্যর্থ হওয়ায় এই সংঘাত সারা বিশ্বে- বিশেষত চীন, কোরিয়া, কিউবা, ভিয়েতনাম এবং আফগানিস্তানে প্রক্সি যুদ্ধের একটি সিরিজে পরিণত হয়। কারণ সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বে কমিউনিজমের বিস্তার চাইলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটি দমনের চেষ্টা করে। দুই পক্ষের মধ্যে প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার কারণে উভয় পক্ষই গবেষণা এবং উন্নয়নে যথেষ্ট বিনিয়োগ করেছিল। ফলে যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরেও মহাকাশ অনুসন্ধান এবং ইন্টারনেট উদ্ভাবিত হয়।
এই শতাব্দীর শেষার্ধে আফ্রিকা ও এশিয়ার বেশিরভাগ ইউরোপীয় উপনিবেশ বিউপনিবেশায়ন প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা লাভ করে। ইতোমধ্যে বিশ্বায়ন বেশ কিছু দেশের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ে শক্তিশালী প্রভাব বিস্তারের পথ খুলে দেয়। বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি, হলিউড মোশন পিকচার শিল্প ও ব্রডওয়ে থিয়েটার, জ্যাজ, রক মিউজিক ও পপ মিউজিক, ফাস্ট ফুড ও হিপি, হিপ-হপ, হাউস মিউজিক, ডিস্কো এবং স্টিট স্টাইলের মাধ্যমে আমেরিকান সংস্কৃতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়। এদের সবগুলোই জনপ্রিয় সংস্কৃতি এবং যুব সংস্কৃতির ধারণার সাথে সম্পর্কিত। [6] [7] [8] ১৯৯১ সালে অভ্যন্তরীণ চাপে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর চীন, উত্তর কোরিয়া, কিউবা, ভিয়েতনাম এবং লাওসের মতো উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রমগুলো ছাড়া এটি সারা বিশ্বে যে কমিউনিস্ট সরকারগুলোকে সমর্থন করেছিল তার বেশিরভাগ ভেঙ্গে যায়। ফলে বাজার অর্থনীতির বিশ্রী রূপান্তর ঘটে।
উদ্ভাবন এবং পরিবর্তনের প্রকৃতি
ক্রমাগত শিল্পায়ন এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণের কারণে এই শতাব্দীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ছিল। ১৯ শতকের শেষের দিকে বৈদ্যুতিক বাতি, অটোমোবাইল এবং টেলিফোনের মতো উদ্ভাবন এবং এরই ধারাবাহিকতায় সুপারট্যাঙ্কার, বিমান, মোটরওয়ে, রেডিও, টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, অ্যান্টিবায়োটিক, পারমাণবিক শক্তি, হিমায়িত খাদ্য, কম্পিউটার ও মাইক্রোকম্পিউটার, ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন উন্নত বিশ্বের মানুষের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করে। জনপ্রতি গড়ে ভোগ্য পণ্যের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। স্নায়ুযুদ্ধের অস্ত্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রকৌশলের পেশাদারিকরণ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পরিবর্তন নিয়ে আসে।
সামাজিক পরিবর্তন
এ শতাব্দীর শুরুতে বেশিরভাগ সমাজেই বর্ণ এবং লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে প্রকট বৈষম্য প্রচলিত ছিল। আটলান্টিকের দাস বাণিজ্য ১৯ শতকে শেষ হয়ে গেলেও উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত সমাজে অ-শ্বেতাঙ্গদের জন্য সমতার আন্দোলন চলমান ছিল। ২০ শতকের শেষ নাগাদ বিশ্বের অনেক স্থানেই নারীদের পুরুষদের মতো একই আইনি অধিকার ছিল। বর্ণবাদকে অগ্রহণযোগ্য মনে করা হতো এবং এই অনুভূতি প্রায়শই আইনের সমর্থন পেয়েছিল। [9] ভারত প্রজাতন্ত্র গঠিত হওয়ার পর ভারতে বর্ণপ্রথার ফলে সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সরকারে ইতিবাচক পদক্ষেপের সুবিধা পায়।
১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে যৌন বিপ্লবের সময় অনেক সমাজে বিবাহপূর্ব যৌনতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি দ্রুত পরিবর্তিত হয়। এ শতাব্দীর শেষদিকে সমকামিতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাতে হতে শুরু করে। [10][11]
২০ শতকের শেষে পৃথিবী
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি দৈনন্দিন জীবনে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। ইউরোপ প্রথমবারের মতো একটি টেকসই শান্তিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছিল। ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণ, ২০ শতকের শেষের দিকে বিশ্বের জনসংখ্যার এক ষষ্ঠাংশ, এ শতাব্দীতে প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। চীন, বিশ্বের জনসংখ্যার পঞ্চমাংশ নিয়ে গঠিত একটি প্রাচীন জাতি, অবশেষে বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত হয়। পুরনো সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা প্রায় পুরোপুরি ধ্বংসের পরে চীন একটি নতুন রাষ্ট্র গঠন করে। ঔপনিবেশিকতা এবং স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের সাথে সাথে আফ্রিকার প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ নতুন জাতিরাষ্ট্রে থেকে যায়।
পৃথিবী বিশ্বায়নের দ্বিতীয় প্রধান সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল যার প্রথমটি ১৮ শতকে শুরু হয়েছিল এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। যেহেতু এসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রভাবশালী অবস্থানে ছিল ফলে এই প্রক্রিয়ার একটি বড় অংশই ছিল আমেরিকানাইজেশন । চীন ও ভারতের প্রভাবও ক্রমবর্ধমান ছিল, কারণ বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যা দ্রুত বিশ্ব অর্থনীতির সাথে একীভূত হচ্ছিল।
সন্ত্রাসবাদ, একনায়কতন্ত্র এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার বৈশ্বিক সমস্যাগুলোকে ধামাচাপা দিয়েছিল। পৃথিবী তখনও ছোট আকারের যুদ্ধ,সম্পদের প্রতিযোগিতা, জাতিগত সংঘাত এবং অন্যান্য সহিংস সংঘাতের কারণে বিধ্বস্ত ছিল।
রোগ বিশ্বের অনেক অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের মতো নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য রোগগুলো বিরাট জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে। এইচআইভি ভাইরাসের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষ এইডসে আক্রান্ত হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকায় ভাইরাসটি মহামারীতে পরিণত হয়।
জলবায়ু বিজ্ঞানীদের করা গবেষণার উপর ভিত্তি করে, বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের অধিকাংশই বিবেচনা করে যে পরিবেশগত সমস্যাগুলো দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর হুমকির কারণ হতে পারে। [12] একটি যুক্তি হলো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে মানবসৃষ্ট গ্রিনহাউজ গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঘটছে। [13] এটি অনেক দেশকে আলোচনার এবং কিয়োটো চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে উৎসাহিত করে। এই চুক্তি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের বাধ্যতামূলক সীমা নির্ধারণ করে দেয়।
বিশ্বের জনসংখ্যা ১৯০১ সালের প্রায় ১.৬ বিলিয়ন থেকে বেড়ে এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ প্রায় ৬.১ বিলিয়নে পৌঁছায় । [14] [15]
যুদ্ধ এবং রাজনীতি
এ শতাব্দীতে সরকারী কর্মকাণ্ডে নিহত মানুষের সংখ্যা ছিল কয়েক মিলিয়ন । এদের মধ্যে যুদ্ধ, গণহত্যা এবং রাজনৈতিক হত্যার ফলে মৃত্যু উল্লেখযোগ্য। শুধুমাত্র দুটি বিশ্বযুদ্ধেই যথাক্রমে প্রায় ৬০ ও ৮০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয় । রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রুডলফ রুমেল ধারণা করেন যুদ্ধে নিহত ব্যক্তি, অনিচ্ছাকৃতভাবে নিহত বেসামরিক ব্যক্তি এবং দাঙ্গায় হত্যাকাণ্ড বাদ দিয়ে শুধুমাত্র গণহত্যার কারণেই ২৬২,০০০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে । [16] চার্লস টিলির মতে, "এ শতাব্দীতে একটি সরকার বা অন্য সরকার সমর্থিত সংগঠিত সামরিক বাহিনীগুলোর কর্মকান্ডের ফলে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সম্ভবত সমসংখ্যক বেসামরিক লোক যুদ্ধজনিত রোগ এবং অন্যান্য পরোক্ষ প্রভাবের কারণে মারা যায়।" [17] ধারণা করা হয় যে ১৯১৪ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে প্রায় ৭০ মিলিয়ন ইউরোপীয় যুদ্ধ, সহিংসতা এবং দুর্ভিক্ষের কারণে মারা যায় [18]
- আর্মেনীয়, সিরিয়াক এবং গ্রীক গণহত্যা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোমান সাম্রাজ্যে আর্মেনীয়, আসিরিয়ান এবং গ্রীকদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে ধ্বংস, গণহত্যা এবং বিতাড়ন যার নেতৃত্বে ছিল ক্ষমতাসীন কমিটি অফ ইউনিয়ন অ্যান্ড প্রগ্রেস (সিইউপি)।[19][20]
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮) হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদ এবং জাতীয় সচেতনতা । জার্মানি,ফ্রান্স, ইতালি, জাপান, রাশিয়া/সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রধন বিশ্বশক্তিগুলো এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে অনেক নতুন দেশ সৃষ্টি হয়, বিশেষত পূর্ব ইউরোপে। সেসময় এটিকে " সকল যুদ্ধের যবনিকাপাতে যুদ্ধ " বলা হয়েছিল।
- এই শতাব্দীর প্রথম ভাগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বেশিরভাগ অংশে রাজনৈতিক অধিকার অর্জন এবং নতুন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আবির্ভাবের ফলে নারীরা পুরো শতাব্দী জুড়ে আরও স্বাধীন হয়ে ওঠে ।
- ২০ শতকের প্রথমার্ধে শিল্প যুদ্ধের মাত্রা এবং জটিলতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে রাসায়নিক যুদ্ধ, সামরিক বিমান চলাচলের প্রবর্তন এবং ডুবোজাহাজের ব্যাপক ব্যবহার। ২০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পারমাণবিক যুদ্ধের প্রবর্তনের ফলে স্পষ্টতই আধুনিক যুদ্ধেবিগ্রহের রূপান্তর ঘটে।
- অনেক দেশেই গৃহযুদ্ধ হয়েছিল। ১৯৩৬ সালে জেনারেল ফ্রান্সিস্কো ফ্রাঙ্কো দ্বিতীয় স্পেনীয় প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করার পর স্পেনে একটি সহিংস গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। অনেকেই [21] এই যুদ্ধটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য একটি পরীক্ষামূলক যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করে। কারণ ফ্যাসিবাদী সেনাবাহিনী কিছু স্প্যানিশ অঞ্চলে বোমাবর্ষণ করেছিল।
- ১৯৩০-এর দশকে মহামন্দার কারণে ইউরোপে ফ্যাসিবাদ এবং নাৎসিবাদের উত্থান ঘটে।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জাপানি আগ্রাসনের কারণে পূর্ব এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল যুদ্ধেক্ষেত্রে পরিণত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেসামরিক লোকজন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল উভয় পক্ষের শহরগুলোতে বিমান হামলা এবং জার্মান গণহত্যা, যা হলোকাস্ট নামে পরিচিত।
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, ১৯১৭ সালের রাশিয়ান বিপ্লবে রোমানভের ৩০০ বছরের রাজত্বের অবসান ঘটে এবং ভ্লাদিমির লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা বিশ্বের প্রথম কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশগ্রহণের পর, কমিউনিজম বিশ্ব রাজনীতির একটি প্রধান শক্তি হয়ে ওঠে। বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপ, চীন, ইন্দোচীন এবং কিউবায়, যেখানে কমিউনিস্ট দলগুলো প্রায় নিরঙ্কুশ ক্ষমতা লাভ করে।
- স্নায়ুযুদ্ধ (১৯৪৭-১৯৮৯) বিশ্বের দুটি প্রধান পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করে। এই প্রতিযোগিতায় পারমাণবিক অস্ত্রের উন্নয়ন ও উন্নয়ন এবং মহাকাশ প্রতিযোগিতাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটি পশ্চিমা ব্লকের সাথে কোরিয়া (১৯৫০-১৯৫৩) এবং ভিয়েতনামের যুদ্ধের (১৯৫৭-১৯৭৫) মতো প্রক্সি যুদ্ধের জন্ম দেয়।
- অভ্যন্তরীণ বিরোধিতা দূর করতে গিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে লাখ লাখ নাগরিকের মৃত্যু ঘটে। [22] ১৮ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে গুলাগে এবং আরও ৬ মিলিয়ন মানুষকে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্বাসিত করা হয়। [23]
- ভারতীয় উপমহাদেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ফলে জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বাধীন ভারত এবং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের স্বাধীনতা ও বিভাজন ঘটে।
- দীর্ঘ সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধ এবং পশ্চিমা শক্তির সাথে সংঘর্ষের পর, ১৯১২ সালে চীনের শেষ সাম্রাজ্য রাজবংশের পরিসমাপ্তি ঘটে । ১৯৪৯ সালে আরেকটি গৃহযুদ্ধের পর চীন প্রজাতন্ত্র প্রতিস্থাপিত হয় এবং সাম্যবাদী গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০ শতকের শেষে একটি কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত হলেও চীনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মূলত পুঁজিবাদে রূপান্তরিত হয়েছিল।
- ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধীর অহিংসা এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন বিশ্বজুড়ে অনেক রাজনৈতিক আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিল। এদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলন এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ এবং জাতিগত বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলন।
- উপনিবেশবাদের অবসান অনেক আফ্রিকান এবং এশীয় দেশকে স্বাধীনতার দিকে পরিচালিত করে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় এদের অনেকেই প্রতিরক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন বা চীনের সাথে জোটবদ্ধ হয়েছিল।
- চীনের মহাদুর্ভিক্ষ ১৯৫৯ থেকে ১৯৬২ সালের মধ্যে কয়েক মিলিয়ন চীনা কৃষকের মৃত্যুর একটি প্রত্যক্ষ কারণ ছিল । একে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ বলে মনে করা হয়। [24]
- ভিয়েতনাম যুদ্ধের ফলে প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। ফলে পূর্ব ও পশ্চিম ব্লকের মধ্যে গতিশীলতা এবং বৈশ্বিক উত্তর-দক্ষিণ সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটে। [25]
- আফগানিস্তানে সোভিয়েত যুদ্ধ এক মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটায় । সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি এবং আফগানিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য এই যুদ্ধকে দায়ী করা হয়[24]
- ১৯৮৯ সালের বিপ্লব পূর্ব ও মধ্য ইউরোপকে সোভিয়েত আধিপত্য থেকে মুক্তি দেয়। এর পরপরই সোভিয়েত ইউনিয়ন, চেকোস্লোভাকিয়া এবং যুগোস্লাভিয়া বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং পরের কয়েক বছর ধরে সহিংসভাবে উত্তরাধিকারী রাষ্ট্রে পরিণত হয় যাদের অনেকগুলোতেই জাতিগত জাতীয়তাবাদ ছিল প্রবল। ইতিমধ্যে, পূর্ব জার্মানি এবং পশ্চিম জার্মানি ১৯৯০ সালে পুনরায় একত্রিত হয় ।
- ১৯৮৯ তিয়েনআনমেন চত্বরে বিক্ষোভ, যা ছিল চীনের বেইজিং-এর তিয়ানানমেন চত্বরে এবং তার কাছাকাছি একটি ধারাবাহিক বিক্ষোভ, শত শত বেসামরিক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রধানত ছাত্র এবং বুদ্ধিজীবীদের নেতৃত্বে প্রতিবাদটি এমন এক বছরে ঘটেছিল যে বছর সারা বিশ্বে বেশ কয়েকটি কমিউনিস্ট সরকারের পতন হয়েছিল।
- ১৯৫০-এর দশকে আন্তরিকভাবে ইউরোপীয় একত্রীকরণ শুরু হয়েছিল । শেষ পর্যন্ত ১৫ টি দেশ নিয়ে ২০ শতকের শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠিত হয় যা একটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট।
সংস্কৃতি এবং বিনোদন
- এই শতাব্দীর শুরুতে প্যারিস ছিল বিশ্বের শৈল্পিক রাজধানী, যেখানে ফরাসি ও বিদেশী লেখক, সুরকার এবং শিল্পী সকলেই একত্রিত হয়েছিল। শতাব্দীর মাঝামাঝি নিউইয়র্ক শহর বিশ্বের শৈল্পিক রাজধানী হয়ে ওঠে।
- থিয়েটার, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত এবং মিডিয়া জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে ফ্যাশন এবং ট্রেন্ডের উপর একটি বড় প্রভাব ফেলেছিল। অনেক চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উদ্ভূত হওয়ায়, আমেরিকান সংস্কৃতি বিশ্বব্যাপী খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
- ১৯৫৩ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেক হয় , যিনি এ শতাব্দীর একজন আইকনিক ব্যক্তিত্ব।
- ভিজ্যুয়াল সংস্কৃতি শুধু চলচ্চিত্রেই নয় বরং কমিকস এবং টেলিভিশনেও আরও প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। এই শতাব্দীতে আখ্যানবাদী চিত্রের একটি নতুন দক্ষ বোধের জন্ম হয়।
- এই শতাব্দীর শেষ ২৫ বছরে কম্পিউটার গেমস এবং ইন্টারনেট সার্ফিং বিনোদনের নতুন এবং জনপ্রিয় রূপ হয়ে ওঠে।
- সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, ফ্যান্টাসি (সু-বিকশিত কাল্পনিক জগতের বিস্তারিত বিবরণ)এবং বিকল্প ইতিহাস কল্পকাহিনী জনপ্রিয়তা লাভ করে। আন্তঃযুদ্ধের সময় গোয়েন্দা কল্পকাহিনী জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৬১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রোভ প্রকাশনী হেনরি মিলারের একটি উপন্যাস ট্রপিক অফ ক্যান্সার প্রকাশ করে যা আমেরিকায় পর্নোগ্রাফি প্রকাশ এবং সেন্সরশিপকে পুনঃসংজ্ঞায়িত করে।
সঙ্গীত
ফোনোগ্রাফ রেকর্ডের মতো সঙ্গীত রেকর্ডিং প্রযুক্তি এবং বেতার সম্প্রচারের মতো প্রচার প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে গানের শ্রোতা সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পায় । ২০ শতকের আগে, সঙ্গীত সাধারণত শুধুমাত্র সরাসরি পরিবেশন করা হতো। বিংশ শতাব্দীতে সঙ্গীতের অনেক নতুন ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়।
- ইগর স্ট্রাভিনস্কি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত রচনায় বিপ্লব ঘটান।
- ১৯২০ এর দশকে,আর্নল্ড শোয়েনবার্গ বারো-টোন কৌশল উদ্ভাবন করেছিলেন, যা ২০ শতকের সুরকারদের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল।
- শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কম্পোজিশন সম্পূর্ণ নতুন অনেক রাজ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। এদের মধ্যে রয়েছে ডোডেক্যাফোনি, অ্যালেটোরিক সঙ্গীত এবং মিনিমালিজম ।
- ট্যাঙ্গো আর্জেন্টিনায় তৈরি হয়ে আমেরিকা ও ইউরোপের বাকি অংশে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
- ব্লুজ এবং জ্যাজ সঙ্গীত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১০, ১৯২০ এবং ১৯৩০ এর দশকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৪০ এর দশকে জ্যাজের একটি রূপ হিসাবে বেবপ বিকশিত হয়।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯২০ এবং ১৯৩০ এর দশকে কান্ট্রি মিউজিকের বিকাশ ঘটে।
- ব্লুজ এবং কান্ট্রি ১৯৫০-এর দশকে রক অ্যান্ড রোলকে প্রভাবিত করে। আমেরিকান লোকসংগীতের পাশাপাশি ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে ব্রিটিশ আক্রমণের সময় এদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
- রক গান দ্রুতই বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত হয়ে যায় যার মধ্যে রয়েছে ফোক রক, হেভি মেটাল, পাংক রক এবং অল্টারনেটিভ রক। এগুলো জনপ্রিয় সঙ্গীতের প্রভাবশালী ধারায় পরিণত হয়।
- ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকে হিপ হপের উত্থানের ফলে রক গানকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল।
- অন্যান্য ঘরানা যেমন হাউস, টেকনো, রেগে এবং সোল সবই শতাব্দীর শেষার্ধে বিকশিত হয়েছিল এবং জনপ্রিয়তার বিভিন্ন সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছিল।
- এসময় সঙ্গীতে ব্যাপকভাবে সিনথেসাইজারের ব্যবহার শুরু হয় এবং ১৯৮০ এর দশকে নতুন তরঙ্গ সঙ্গীতের মাধ্যমে এটি মূলধারায় প্রবেশ করে। ইলেকট্রনিক বাদ্যন্ত্রগুলো জনপ্রিয় সঙ্গীতের সমস্ত রীতিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা শুরু হয় এবং হাউস, সিন্থ-পপ, ইলেকট্রনিক ডান্স মিউজিক এবং শিল্প সঙ্গীতের মতো ঘরানার সঙ্গীতের বিকাশ ঘটায়।
চলচ্চিত্র, টেলিভিশন এবং থিয়েটার
শৈল্পিক মাধ্যম হিসাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ ২০ শতকে শুরু হয়েছিল। ১৯০৫ সালে পিটসবার্গে প্রথম আধুনিক সিনেমা থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয় [26] হলিউড আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাণের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। প্রথম দিকে সিনেমাগুলো সাদা-কালো হলেও, ১৯২০-এর দশকে রঙিন চলচ্চিত্রের জন্য টেকনিকালার তৈরি করা হয়েছিল। ১৯২৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দ্য জ্যাজ সিঙ্গার ছিল প্রথম শব্দযুক্ত ফিচার চলচ্চিত্র। ১৯২৯ সাল থেকে একাডেমি পুরস্কার প্রদান শুরু হয়। ১৯২০-এর দশকে অ্যানিমেশন বিকশিত হয়।প্রথম পূর্ণ-দৈর্ঘ্য প্রথাগত অ্যানিমেটেড ফিচার চলচ্চিত্র স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডোয়ার্ফস, ১৯৩৭ সালে মুক্তি পায়। ১৯৮০-র দশকে কম্পিউটার- উৎপাদিত চলচ্চিত্রের বিকাশ ঘটে। ১৯৯৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত টয় স্টোরি ছিলো প্রথম পূর্ণ-দৈর্ঘ্যের সিজিআই-অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র।
- বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় হলিউড তারকাদের মধ্যে জুলি অ্যান্ড্রুজ, হ্যারি বেলাফন্টে, হামফ্রে বোগার্ট, মারলন ব্র্যান্ডো, জেমস ক্যাগনি, চার্লি চ্যাপলিন, শন কনারি ,টম ক্রুজ,জেমস ডিন, রবার্ট ডি নিরো, হ্যারিসন ফোর্ড, ক্লার্ক, ক্যারি গ্রান্ট, অড্রে হেপবার্ন, মারিলিন ক্যাটবুর্ন, ব্রুস লি, মেরিলিন মনরো, পল নিউম্যান,জ্যাক নিকোলসন, আল পাচিনো, সিডনি পোইটিয়ার, মেরিল স্ট্রিপ, এলিজাবেথ টেলর, জেমস স্টুয়ার্ট, জেন ফন্ডা এবং জন ওয়েন অন্যতম।
- ২০ শতকের সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র তারকাদের মধ্যে মধুবালা, জিন-পল বেলমন্ডো, ক্যারেল রোডেন, শন কনারি, মার্সেলো মাস্ত্রোইয়ান্নি, সালাহ জুলফিকার, মারলেনে ডিট্রিশ, ব্রিজিট বার্ডো, ওমর শরিফ, কাত্রিন দ্যনোভ , অ্যালেন ডেলন, সোদ হোসনি, ফার্নান্দা সোনডেন মারচেন, ফার্নান্ডা মন্টেনিগ্রো, ফার্নান্দা মারসেলো, মারলেন ডিয়েট্রিচ, জঁ গাঁবা, তোশিরো মিফুনে, শকরি সারহিন, লার্স মিকেলসন, সোফিয়া লরেন, ইউসুফ ওয়াহবি, ক্লাউদিয়া কার্দিনালে, ক্লাউস কিন্স্কি, জেরার দ্যপার্দিও, ম্যাক্স ভন সিডো, ফাতেন হামামা, রাটগার হাউগার এবং টনি সার্ভিলো অন্যতম।
- বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে সের্গেই আইজেনস্টাইন, ডিডব্লিউ গ্রিফিথ, সিসিল বি. ডেমিল, ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রা, হাওয়ার্ড হকস, জন ফোর্ড, অরসন ওয়েলেস, মার্টিন স্কোরসেস, জন হুস্টন, আলফ্রেড হিচকক, আকিরা কুরোসাওয়া, স্পাইক লি, ইংমার বার্গম্যান, ফেদেরিকো ফেল্লিনি, ওয়াল্ট ডিজনি, স্ট্যানলি কুবরিক , স্টিভেন স্পিলবার্গ, রিডলি স্কট, উডি অ্যালেন, কুয়েন্টিন ট্যারান্টিনো, জেমস ক্যামেরন, উইলিয়াম ফ্রিডকিন, ইজ এল-ডাইন জুলফিকার এবং জর্জ লুকাস অন্যতম।
- থিয়েটারকে নিউ ইয়র্ক সিটিতে মাঝে মাঝে ব্রডওয়ে বলা হতো। ইউজিন ও'নিল, স্যামুয়েল বেকেট, এডওয়ার্ড আলবি, আর্থার মিলার এবং টেনেসি উইলিয়ামসের মতো নাট্যকাররা এই বাকপ্রণালীর উদ্ভাবনী ভাষা এবং ধারণাগুলো প্রবর্তন করেছিলেন। মিউজিক্যাল থিয়েটারে রজার্স ও হ্যামারস্টেইন, লার্নার ও লোই, মোহাম্মদ করিম এবং আরভিং বার্লিনের মতো ব্যক্তিত্বরা চলচ্চিত্র এবং সাধারণভাবে সংস্কৃতি উভয়ের উপর বিরাট প্রভাব রেখেছিলেন।
- আমেরিকায় শতাব্দী প্রাচীন ইউরোপীয় ব্যালের বিরুদ্ধে 'বিদ্রোহ' হিসেবে আধুনিক নৃত্যের জন্ম হয়। নৃত্যশিল্পী এবং কোরিওগ্রাফার অ্যালভিন আইলি, ইসাডোরা ডানকান, ভাসলাভ নিজিনস্কি, রুথ সেন্ট ডেনিস, মাহমুদ রেডা, মার্থা গ্রাহাম , জোসে লিমন, ডরিস হামফ্রে, মার্সে কানিংহাম এবং পল টেলর এই আন্দোলনকে পুনঃসংজ্ঞায়িত করেন। তারা একে মূলধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য সংগ্রাম করেন যা জ্যাজের পাশাপাশি একটি সম্পূর্ণ নতুন আমেরিকান শিল্প মাধ্যমের জন্ম দেয়। আধুনিক নৃত্যকে জনপ্রিয় করার এবং ২০ শতকের কনসার্ট নৃত্যে আফ্রিকান-আমেরিকান অংশগ্রহণে বিপ্লব ঘটানোর কৃতিত্ব অ্যালভিন আইলিকে দেওয়া হয়। ব্যাপক আন্তর্জাতিক ভ্রমণের কারণে তার কোম্পানি "বিশ্বের সাংস্কৃতিক দূত" ডাকনাম অর্জন করে। আলভিন আইলির কোরিওগ্রাফিক মাস্টারপিস রেভেলেশনস-কে সর্বাধিক পরিচিত এবং প্রায়শই দেখা আধুনিক নৃত্য পরিবেশন বলে মনে করা হয়।
ভিডিও গেমস
দ্বিতীয় যুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে কম্পিউটিংয়ে দুর্দান্ত প্রযুক্তিগত পদক্ষেপের কারণে ভিডিও গেমস, ২০ শতকে চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বিনোদনের একটি নতুন মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল।
- ১৯৪০-৫০ এর দশকের ধারণা হলেও, ভিডিও গেমস ১৯৭০-এর দশকে একটি শিল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়। এরপর সংঘটিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনার মধ্যে রয়েছে টাইটোরস্পেস ইনভেডারস, আটারির আস্ট্রোরয়েড, নিনটেন্ডোর ডংকি কং, নামকোর প্যাকম্যান ও গালাগা, কোনামির ফ্রগার, ক্যাপকমের ১৯৪২ এবং সেগার জ্যাক্সনের মতো উল্লেখযোগ্য গেম প্রকাশের মাধ্যমে আর্কেড ভিডিও গেমের স্বর্ণযুগের সূচনা। [27] নিন্টেন্ডোর সুপার মারিও ব্রস বিশ্বব্যাপী সাফল্য অর্জন করে। [28] সনি প্লেস্টেশন কনসোল ১৯৯০-এর দশকে মুক্তি পায়, যা ১০০ মিলিয়ন ইউনিট বিক্রির রেকর্ড ভেঙেছিল। সেসসময় প্লে স্টেশনের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ভিডিও গেম ছিল গ্রান তুরিসমো। [29]
- ভিডিও গেম ডিজাইন একটি মাধ্যম হয়ে ওঠে। এই শতাব্দীর কয়েকজন উল্লেখযোগ্য গেম ডিজাইনারদের মধ্যে শিগেরু মিয়ামোতো, হিদেও কোজিমা, সিড মেয়ার এবং উইল রাইট অন্যতম।
শিল্প এবং স্থাপত্য
- শিল্প জগতে অনেক নতুন শৈলী এবং অন্বেষণের বিকাশ ঘটে যেমন ফাউভিজম, বহির্মুদ্রাবাদ, ডাডা, কিউবিজম, ডি স্টিজল, পরাবাস্তববাদ, বিমূর্ত অভিব্যক্তিবাদ, রঙ ক্ষেত্র, পপ আর্ট , মিনিমাশ আর্ট, লিরিকাল বিমূর্ততা এবং ধারণাগত শিল্প ।
- আধুনিক শিল্প আন্দোলন শিল্প ও সংস্কৃতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে এবং আধুনিকতাবাদ ও এর সমকক্ষ উত্তর-আধুনিক শিল্পের পাশাপাশি অন্যান্য সমসাময়িক শিল্পচর্চার মঞ্চ তৈরি করে।
- স্থাপত্য এবং নকশার একটি ফর্ম হিসাবে আর্ট নুওয়াউ-এর প্রচলন হয়েছিল। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এটি ফ্যাশনের বাইরে চলে যায়। শৈলীটি গতিশীল এবং উদ্ভাবনী প্রকৃতির হলেও মহান যুদ্ধের হতাশার জন্য এটি অনুপযুক্ত ছিল।
- ইউরোপের আধুনিক স্থাপত্যে ভিক্টোরিয়ান যুগের সজ্জিত শৈলীর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। নির্মাণ সামগ্রী এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে মেশিনের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত স্ট্রীমলাইন ফর্মের ব্যবহার সাধারণ হয়ে ওঠে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে অনেক ইউরোপীয় স্থপতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান, যেখানে আধুনিক স্থাপত্যের বিকাশ অব্যাহত ছিল।
- গাড়ি ২০ শতকের প্রথম থেকে-মধ্যভাগে পশ্চিমা দেশগুলোতে এবং শেষের দিকে অন্যান্য অনেক জায়গায় মানুষের গতিশীলতা বৃদ্ধি করেছিলো । বেশিরভাগ পশ্চিমা শহরের নকশা গাড়ির মাধ্যমে পরিবহনের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছিল।
খেলা
- একটি কার্যকলাপ এবং বিনোদন হিসাবে( বিশেষত টেলিভিশনে) খেলাধুলার জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- ১৮৯৬ সালে শুরু হওয়া আধুনিক অলিম্পিক গেমস, কয়েক ডজন ক্রীড়ায় দশ হাজারের বেশি ক্রীড়াবিদকে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়।
- ১৯৩০ সালে প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে প্রতি চার বছর পর পর এটি আয়োজিত হয়ে আসছে।
বিজ্ঞান
গণিত
২০ শতকে গণিতের একাধিক নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিলো। ২০ শতকের প্রথম ভাগে পরিমাপ তত্ত্ব, কার্যকরী বিশ্লেষণ ও টপোলজি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো এবং বিমূর্ত বীজগণিত ও সম্ভাব্যতার মতো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়েছিল। সেট তত্ত্ব এবং আনুষ্ঠানিক যুক্তির বিকাশ গোডেলের অসম্পূর্ণতা তত্ত্বের দিকে পরিচালিত করে।
২০ শতকে কম্পিউটারের বিকাশের ফলে গণনার একটি তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। [30] গণনাগতভাবে-তীব্র ফলাফলের মধ্যে রয়েছে ফ্র্যাক্টালের অধ্যয়ন [31] এবং ১৯৭৬ সালে চার বর্ণ উপপাদ্যের প্রমাণ [32]
পদার্থবিজ্ঞান
- পদার্থবিজ্ঞানের নতুন ক্ষেত্র, যেমন: বিশেষ আপেক্ষিকতা, সাধারণ আপেক্ষিকতা এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স এই শতাব্দীর প্রথমার্ধে বিকশিত হয়েছিলো। এই প্রক্রিয়ায় পরমাণুর অভ্যন্তরীণ গঠন স্পষ্টভাবে বোঝা সম্ভব হয়। পরবর্তীতে মৌলিক কণাসমূহ আবিষ্কৃত হয়।
- পরিচিত সকল বল শুধুমাত্র চারটি বলের মৌলিক বল থেকে চিহ্নিত করা যায় এটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো। আরও আবিষ্কৃত হয়েছিল যে শুধুমাত্র তিনটি ভিন্ন মৌলিক বল বাদে তড়িৎচুম্বকত্ব এবং দুর্বল নিউক্লিয় বল, ইলেক্ট্রো-উইক বলে একত্রিত হতে পারে ।
- পারমাণবিক বিক্রিয়া আবিষ্কার, বিশেষত নিউক্লীয় ফিউশন অবশেষে সৌর শক্তির উৎস প্রকাশ করে।
- রেডিওকার্বন ডেটিং আবিষ্কারের পর এটি প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী এবং উদ্ভিদের পাশাপাশি ঐতিহাসিক বস্তুর বয়স নির্ধারণের একটি শক্তিশালী কৌশল হয়ে ওঠে।
জ্যোতির্বিজ্ঞান
- মহাবিশ্বের বিবর্তন সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা অর্জন করা সম্ভব হয়। মহাবিশ্বের বয়স (প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর) নির্ধারণ করা হয় এবং এর উৎস সম্পর্কে প্রস্তাবিত বিগ ব্যাং তত্ত্ব সাধারণভাবে গৃহীত হয়েছিলো।
- পৃথিবী সহ সৌরজগতের বয়স নির্ধারণ করা হয় যা আগের বিশ্বাসের চেয়ে অনেক বেশি পুরানো বলে প্রমাণিত হয়েছিলো। ১৮৬২ সালে লর্ড কেলভিনের প্রস্তাবিত ২ কোটি বছরের পরিবর্তে [33] সৌরজগতের বয়স ৪০০ কোটি বছরের বেশি বলে ধারণা করা হয়।
- সৌরজগতের গ্রহ এবং তাদের চাঁদগুলোকে অসংখ্য মনুষ্যবিহীন মহাকাশ অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিলো। ১৯৩০ সালে সৌরজগতের প্রান্তে প্লুটো আবিষ্কৃত হয়েছিলো। যদিও ২১ শতকের শুরুর দিকে, প্লুটোকে গ্রহের পরিবর্তে একটি বামন গ্রহ হিসেবে পুনরায় শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। ফলে বর্তমানে সৌরজগতে মোট আটটি পূর্ণাঙ্গ গ্রহ আছে।
- সূর্যকে (বা মহাবিশ্বের অন্য কোথাও) প্রদক্ষিণকারী অন্য কোনো গ্রহে জীবনের কোনো চিহ্ন আবিষ্কৃত হয়নি। যদিও সৌরজগতের কোথাও আদিম প্রাণের কিছু রূপ বা অস্তিত্ব থাকতে পারে কিনা তা অনির্ধারিত ছিলো।
কৃষি
- নরম্যান বোরলাগ সবুজ বিপ্লবের জনক বলা হয়। ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকের শেষে সংঘটিত সবুজ বিপ্লব ছিল গবেষণা প্রযুক্তি স্থানান্তরের এক সেট উদ্যোগ যা বিশ্বের বিভিন্ন অংশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করেছিল। এটি ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে শুরু হয়েছিল। সবুজ বিপ্লবকে প্রায়শই বিশ্বব্যাপী একশ কোটির বেশি মানুষের ক্ষুধা নিবারণের কৃতিত্ব দেওয়া হয়।
জীববিজ্ঞান
- জেনেটিক্স সর্বসম্মতভাবে গৃহীত এবং উল্লেখযোগ্যভাবে বিকশিত হয়েছিল। ১৯৫৩ সালে জেমস ওয়াটসন, [34] [35] ফ্রান্সিস ক্রিক, [34] [35] রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিন [35] এবং মরিস উইলকিনস[34] [35] ডিএনএর গঠন আবিস্কার করেছিলেন। এরপর ডিএনএ সিকোয়েন্স পাঠের কৌশল আবিষ্কার হয় এবং এর ধারাবাহিকতায় মানব জিনোম প্রকল্প শুরু হয় (২০ শতকে শেষ হয়নি)। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্লোনিং করা হয়েছিল।
- বিবর্তনে যৌন প্রজননের ভূমিকা বোঝা সম্ভব হয় এবং ব্যাকটেরিয়া সংযোজন আবিষ্কৃত হয়।
- বিভিন্ন বিজ্ঞানের একত্রীকরণে তৈরি (১৯৩৬ থেকে ১৯৪৭ সালের মধ্যে) আধুনিক বিবর্তনিক সংশ্লেষণ বিবর্তনের একটি ব্যাপকভাবে স্বীকৃত বিবরণ প্রদান করে ।
চিকিৎসা বিজ্ঞান
- ছলৌষধ - নিয়ন্ত্রিত, এলোমেলো, অজ্ঞাতকৃত পরীক্ষণ এবং রোগীভিত্তিক পরীক্ষণ নতুন ওষুধ পরীক্ষার শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে ওঠে।
- অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুহার মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেয়।
- পোলিওর জন্য একটি টিকা তৈরি করা হয়েছিল, যা বিশ্বব্যাপী মহামারীর অবসান ঘটায়। ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডিপথেরিয়া, পারটুসিস (হুপিং কাশি), টিটেনাস, হাম, মাম্পস, রুবেলা (জার্মান হাম), চিকেনপক্স, হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস বি সহ বেশ কয়েকটি গুরুতর সংক্রামক রোগের জন্যও কার্যকর টিকা তৈরি করা হয়েছিল।
- রোগবিস্তার বিজ্ঞান এবং টিকা মানুষের মধ্যে গুটিবসন্ত ভাইরাস নির্মূলে সহায়তা করেছিল।
- এক্স-রে হাড় ভাঙা থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত বিস্তৃত রোগ নির্ণয়ের জন্য একটি শক্তিশালী সরঞ্জাম হয়ে ওঠে। ১৯৬০ এর দশকে, সিটি স্ক্যান উদ্ভাবিত হয়েছিল। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রোগ শনাক্তকারী সরঞ্জামগুলোর মধ্যে সোনোগ্রাফি এবং ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং অন্যতম।
- ভিটামিনের বিকাশ শিল্পোন্নত সমাজ থেকে স্কার্ভি এবং অন্যান্য ভিটামিনের অভাবজনিত রোগকে কার্যত নির্মূল করেছে।
- নতুন মনোরোগ-সংক্রান্ত ওষুধ তৈরি করা হয়েছিল। এদের মধ্যে রয়েছে হ্যালুসিনেশন এবং বিভ্রান্তির চিকিৎসার জন্য তৈরি এন্টিসাইকোটিকস এবং বিষণ্নতার চিকিৎসার জন্য তৈরি এন্টিডিপ্রেসেন্টস ।
- ১৯৫০-এর দশকে ক্যান্সার এবং অন্যান্য রোগের জন্য তামাক ও ধূমপানের ভূমিকা প্রমাণিত হয়েছিল।
- কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি এবং ইমিউনোথেরাপি সহ ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য অনেক নতুন পদ্ধতির জন্ম হয়েছিল। ফলস্বরূপ, ক্যান্সার প্রায়ই নিরাময় বা লাঘব করা যায়।
- রক্তের গ্রুপ এবং ব্লাড ব্যাঙ্কিংয়ের বিকাশ রক্ত সঞ্চালনকে নিরাপদ এবং ব্যাপকভাবে সহজলভ্য করেছে।
- ইমিউনোসপ্রেসিভ ড্রাগ এবং টিস্যু টাইপিংয়ের উদ্ভাবন ও বিকাশ অঙ্গ ও টিস্যু প্রতিস্থাপনকে একটি ক্লিনিকাল বাস্তবতায় পরিণত করে।
- পেসমেকার এবং কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড সহ হার্ট সার্জারির অনেক নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছিল।
- কোকেন এবং হেরোইন আসক্তিকর ও ধ্বংসাত্মক বলে প্রমাণিত হওয়ার পর এগুলো ব্যাপকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। সাইকোঅ্যাকটিভ ড্রাগ যেমন এলএসডি এবং এমডিএমএ আবিষ্কৃত হয়েছিল , যেগুলো পরবর্তীকালে অনেক দেশে নিষিদ্ধ করা হয়। মাদকের উপর নিষেধাজ্ঞা কালোবাজারি ওষুধ শিল্পের বিকাশ ঘটায় । কড়াকড়ি আরোপ করার পর কিছু দেশে কারাবন্দীর সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। [36]
- গর্ভনিরোধক ওষুধ তৈরি করা হয়, যা শিল্পোন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়েছিল। পাশাপাশি তা অনেক পশ্চিমা দেশে বিবাহপূর্ব যৌনতার নিষিদ্ধতা হ্রাস করে ।
- ১৯২০-এর দশকে মেডিকেল ইনসুলিনের বিকাশ ডায়াবেটিস রোগীদের আয়ু আগের তুলনায় তিনগুণে উন্নীত করতে সহায়তা করেছিল।
- টিকা, স্বাস্থ্যবিধি এবং বিশুদ্ধ পানি স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং মৃত্যুহার হ্রাস করে , বিশেষত শিশু এবং তরুণদের মধ্যে।
উল্লেখযোগ্য রোগ
- স্প্যানিশ ফ্লু নামক একটি ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীতে ১৯১৮ থেকে ১৯১৯ সালের মধ্যে সর্বনিম্ন ১ কোটি সত্তর লক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ১০ কোটি মানুষ মারা যায়।
- আফ্রিকায় হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস বা এইচআইভি নামের একটি নতুন ভাইরাস জনিত রোগ দেখা দেয়। পরবর্তীকালে এই রোগে সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায়। এইচআইভিতে আক্রান্ত রোগীদের অ্যাকুয়ারড ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম বা এইডস নামক একটি লক্ষণ দেখা দেয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এইডস এবং এইচআইভিতে আক্রান্ত অনেক মানুষের কাছে এইচআইভির চিকিৎসা অপ্রতুল ছিল। এখনও পর্যন্ত এই রোগের কোনো প্রতিকার আবিষ্কৃত হয়নি।
- মানুষের আয়ু বৃদ্ধির কারণে ক্যান্সার, আলঝেইমার রোগ, পারকিনসন্স রোগ এবং বার্ধক্যজনিত অন্যান্য রোগের প্রকোপ কিছুটা বেড়েছে।
- শ্রম-সঞ্চয়কারী যন্ত্র এবং গৃহ বিনোদন বৃদ্ধির পাশাপাশি উপবিষ্ট জীবনচর্যা এবং খাদ্য উৎপাদনের পরিবর্তন, অতিস্থূলতার "মহামারী" তৈরি করে। প্রথমে ধনী দেশগুলোতে শুরু হলেও বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ছড়িয়ে পড়ে।
শক্তি এবং পরিবেশ
- জীবাশ্ম জ্বালানি এবং পারমাণবিক শক্তি উল্লেখযোগ্য শক্তির উৎস ছিল।
- শিল্পে খনিজ তেলের ব্যাপক ব্যবহার (প্লাস্টিকের রাসায়নিক অগ্রদূত এবং অটোমোবাইল ও বিমানের জ্বালানী হিসেবে) খনিজ তেল সম্পদের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি করে। বিশ্বের অনেক তেল ভান্ডারের আবাসস্থল মধ্যপ্রাচ্য, এই শতাব্দীর শেষার্ধে ভূ-রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিলো। (উদাহরণস্বরূপ, ১৯৪১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জাপানের যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্তে তেল একটি প্রভাবক ছিল । তেল কার্টেল ওপেক, ১৯৭০-এর দশকে ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে তেল নিষেধাজ্ঞা ব্যবহার করেছিল)।
- জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার বৃদ্ধি বায়ু দূষণ, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের উপর এর প্রভাব নিয়ে একটি বড় বৈজ্ঞানিক বিতর্ককেও উসকে দেয়।
- কীটনাশক, ভেষজনাশক এবং অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর দেহ সহ সামগ্রিকভাবে পরিবেশে জমা হয় ।
- জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী বন উজাড় পরিবেশের গুণমানকে হ্রাস করেছে।
- এই শতাব্দীর শেষ তৃতীয়াংশে, পৃথিবীর পরিবেশের উপর মানবজাতির প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ পরিবেশবাদকে জনপ্রিয় করে তোলে। অনেক দেশে, বিশেষ করে ইউরোপে, আন্দোলন সবুজ দলগুলোর মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবাহিত হয়েছিল। ১৯৮০-এর দশকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান সচেতনতা তৈরি হয়েছিল। পরবর্তী কয়েক দশক ধরে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছিল।
প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি
২০ শতকের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে প্রযুক্তির নাটকীয় বৃদ্ধি অন্যতম। সংগঠিত গবেষণা এবং বিজ্ঞান অনুশীলনের ফলে যোগাযোগ, ইলেকট্রনিক্স, প্রকৌশল, ভ্রমণ, চিকিৎসা এবং যুদ্ধের ক্ষেত্রে অগ্রগতির সাধিত হয়।
- ১৯২০ থেকে ১৯৫০ এর দশকে ওয়াশিং মেশিন, ক্লথ ড্রায়ার, চুল্লি, ব্যায়ামের মেশিন, ডিশওয়াশার, রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, বৈদ্যুতিক চুলা এবং ভ্যাকুয়াম ক্লিনার সহ বিভিন্ন মৌলিক গৃহস্থালী সরঞ্জাম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯২০-এর দশকে রেডিও এবং ১৯৫০-এর দশকে টেলিভিশন বিনোদন মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
- ইতিহাসের প্রথম বিমান রাইট ফ্লায়ার, ১৯০৪ সালে প্রথমবারের মতো উড়েছিল। ১৯৪০-এর দশকে দ্রুততর জেট ইঞ্জিনের প্রকৌশলের মাধ্যমে, বিমান ভ্রমণ বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর হয়ে ওঠে।
- অ্যাসেম্বলি লাইন অটোমোবাইলের ব্যাপক উৎপাদন সম্ভবপর করে তোলে। ২০ শতকের শেষের দিকে, কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিগত পরিবহনের জন্য গাড়ি ছিল। গাড়ি, মোটর বোট এবং বিমান ভ্রমণের সমন্বয়ে অভূতপূর্ব ব্যক্তিগত গতিশীলতার জন্ম হয়েছিল। পশ্চিমা দেশগুলোতে, মোটর গাড়ি দুর্ঘটনা তরুণদের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে ওঠে। তবে দ্বিবিভক্ত মহাসড়ক সম্প্রসারণের ফলে মৃত্যুর হার কমে যায়।
- ট্রায়োড টিউব আবিষ্কৃত হয়।
- শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভবন সাধারণ হয়ে ওঠে।
- নতুন উপকরণ, বিশেষত মরিচাবিহীন ইস্পাত, ভেলক্রো, সিলিকন, টেফলন, এবং প্লাস্টিক যেমন পলিস্টাইরিন, পিভিসি, পলিথিন এবং নাইলন বিভিন্ন কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হতো। এই উপকরণগুলো সাধারণত ২০ শতকের পূর্বে পরিচিত উপকরণের তুলনায় শক্তি, তাপমাত্রা, রাসায়নিক প্রতিরোধ বা যান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যে অসাধারণ কর্মক্ষমতা প্রদর্শন করে।
- অ্যালুমিনিয়াম একটি সুলভ এবং ব্যবহারের দিক দিয়ে লোহার পর দ্বিতীয় প্রধান ধাতু হয়ে ওঠে।
- শিল্প প্রক্রিয়াকরণ এবং বাড়িতে ব্যবহারের জন্য হাজার হাজার রাসায়নিক তৈরি করা হয়েছিল।
- ডিজিটাল কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হয়।
মহাকাশ অনুসন্ধান
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার মহাকাশ প্রতিযোগিতা, স্নায়ুযুদ্ধের রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনাকে খানিকটা প্রশমিত করেছিল। ১৯৬১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভস্টক ১ মিশনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মানব মহাকাশ যাত্রা সম্পন্ন হয়। ১৯৬৯ সালে আমেরিকার অ্যাপোলো ১১ মিশনের মাধ্যমে মানুষ প্রথমবারের মতো চাঁদে অবতরণ করেছিল। সোভিয়েত মহাকাশ প্রোগ্রাম প্রথমবারের মতো মহাকাশ স্টেশন চালু করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর স্পেস শাটল প্রোগ্রাম ছিল প্রথম পুনঃব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান সিস্টেম , যা ১৯৮১ সালে চালু হয়। এই শতাব্দীর শেষে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের নির্মাণ কাজের পাশাপাশি ক্রুদের স্থায়ীভাবে মহাকাশে রাখার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল।
- মানুষের মহাকাশ যাত্রা ছাড়াও, ক্রু-বিহীন মহাকাশ যান মহাকাশ অন্বেষণের একটি ব্যবহারিক এবং তুলনামূলকভাবে সস্তা মাধ্যম হয়ে উঠে। ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীকে প্রদক্ষিণকারী প্রথম মহাকাশযান, স্পুটনিক ১ চালু করেছিল। সময়ের সাথে সাথে, কৃত্রিম উপগ্রহের একটি বিশাল ব্যবস্থা পৃথিবীর চারপাশে কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। এই কৃত্রিম উপগ্রহগুলো নৌ-চালনা, যোগাযোগ, সামরিক বুদ্ধিমত্তা, ভূতত্ত্ব, জলবায়ু এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্র উন্নত করেছিল। এছাড়াও, ২০ শতকের শেষ নাগাদ মনুষ্যবিহীন মহাকাশযানের মাধ্যমে চাঁদ, বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি , শনি , ইউরেনাস, নেপচুন এবং বিভিন্ন গ্রহাণু ও ধূমকেতু পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। ভয়েজার ১ পৃথিবীতে উৎপাদিত বস্তুর মধ্যে সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত । ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এটি পৃথিবী থেকে ২৩.৫ বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে ছিল। ভয়েজার ২-এর সাথে ৫৫ টি ভাষার শব্দ, সঙ্গীত এবং শুভেচ্ছা সহ ১১৬ টি প্রাকৃতিক দৃশ্য, মানব অগ্রগতি, মহাকাশ এবং সামাজিক চিত্র সম্বলিত ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড রয়েছে।
- ১৯৯০ সালে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ চালু হয়েছিল । এটি মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়াকে ব্যাপকভাবে প্রসারিত করেছে এবং বিশ্বজুড়ে টিভি এবং কম্পিউটার স্ক্রিনে মহাজাগতিক বস্তুর উজ্জ্বল ছবি প্রদর্শনে সহায়তা করেছে।
- গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস তৈরি এবং স্থাপন করা হয়েছিল। এটি একদল কৃত্রিম উপগ্রহের একটি ব্যবস্থা যা ভূমি-ভিত্তিক গ্রাহককে তাদের সঠিক অবস্থান নির্ধারণ করতে সহায়তা করে।[37]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.