Remove ads
সৌরজগতের ষষ্ঠ গ্রহ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
শনি (ইংরেজি নাম: Saturn; স্যাটার্ন) হল সূর্য থেকে দূরত্বের নিরিখে ষষ্ঠ গ্রহ এবং বৃহস্পতির পরই সৌরজগতের দ্বিতীয়-বৃহত্তম গ্রহ। এটি একটি গ্যাসীয় দৈত্য, যার ব্যাসার্ধ পৃথিবীর ব্যাসার্ধের প্রায় নয় গুণ।[৫][৬] শনি গ্রহের গড় ঘনত্ব অবশ্য পৃথিবীর গড় ঘনত্বের এক-অষ্টমাংশ। কিন্তু এই গ্রহের বৃহত্তর আয়তনের জন্য এটি পৃথিবীর তুলনায় ৯৫ গুণ বেশি ভারী।[৭][৮][৯] শনি গ্রহের বাংলা নামটি এসেছে হিন্দু গ্রহদেবতা শনির নাম থেকে। অন্যদিকে ইংরেজি নাম স্যাটার্ন এসেছে রোমান ধনসম্পদ ও কৃষিদেবতা স্যাটার্নের নাম থেকে এবং শনির জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক চিহ্নটি (♄) উক্ত রোমান দেবতার কাস্তের প্রতীক।
আবিষ্কার | |
---|---|
আবিষ্কারক | গ্যালিলিও গ্যালিলি |
আবিষ্কারের তারিখ | ১৬১০ খ্রিস্টাব্দ |
বিবরণ | |
বিশেষণ | Saturnian |
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য | |
যুগ জে২০০০ | |
অপসূর | ১,৫০৩,৯৮৩,৪৪৯ km ১০.০৫৩ ৫০৮ ৪০ AU ৯৩৪,৫৩৪,২৩১ miles |
অনুসূর | ১,৩৪৯,৪৬৭,৩৭৫ km ৯.০২০ ৬৩২ ২৪ AU ৮৩৮,৫২২,১৬৩ miles |
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ | ১,৪২৬,৭২৫,৪১৩ km ৯.৫৩৭ ০৭০ ৩২ AU ৮৮৬,৫২৮,১৯৬ miles |
উৎকেন্দ্রিকতা | ০.০৫৪ ১৫০ ৬০ |
যুতিকাল | ৩৭৮.১০ day |
গড় কক্ষীয় দ্রুতি | ৯.৬৩৯ km/s |
নতি | ২.৪৮৪ ৪৬° (৫.৫১° to Sun's equator) |
উদ্বিন্দুর দ্রাঘিমা | ১১৩.৭১৫৩২৮১১ ০৪° |
উপগ্রহসমূহ | ১৪৬ টি বড় উপগ্রহ এবং অসংখ্য ছোট উপগ্রহ আছে [১] [২] |
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ | |
বিষুবীয় ব্যাসার্ধ | ৬০,২৬৮ km [৩] (৪.৭২৫ Earths) |
মেরু ব্যাসার্ধ | ৫৪,৩৬৪ km (৪.২৭৬ Earths) |
পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল | ৪.২৭×১০১০ km² (৮৩.৭০৩ Earths) |
আয়তন | ৮.২৭×১০১৪ km³ (৭৬৩.৫৯ Earths) |
ভর | ৫.৬৮৪৬×১০২৬ kg (৯৫.১৬২ Earths) |
গড় ঘনত্ব | ০.৬৮৭৩ g/cm³ (less than water) |
বিষুবীয় পৃষ্ঠের অভিকর্ষ | ৮.৯৬ m/s২ (০.৯১৪ g) |
মুক্তি বেগ | ৩৫.৪৯ km/s |
নাক্ষত্রিক ঘূর্ণনকাল | ০.৪৪৯ ৩৭৫ day (১০ h ৪৭ min ৬ s) [৪] |
বিষুবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণন বেগ | ৯.৮৭ km/s = ৩৫,৫০০ km/h (at the equator) |
অক্ষীয় ঢাল | ২৬.৭৩° |
উত্তর মেরুর বিষুবাংশ | ৪০.৫৯° (২ h ৪২ min ২১ s) |
উত্তর মেরুর বিষুবলম্ব | ৮৩.৫৪° |
প্রতিফলন অনুপাত | ০.৪৭ |
বায়ুমণ্ডল | |
পৃষ্ঠের চাপ | ১৪০ kPa |
গঠন | >৯৩% হাইড্রোজেন >৫% হিলিয়াম ০.২% মিথেন ০.১% পানি ০.০১% অ্যামোনিয়া ০.০০০৫% ইথেন ০.০০০১% ফসফিন |
শনির অভ্যন্তরীণ অংশটি সম্ভবত লোহা-নিকেলের একটি কেন্দ্রস্থল ও পাথর (সিলিকন ও অক্সিজেন যৌগ) দ্বারা গঠিত। এই কেন্দ্রস্থলটিকে ঘিরে রয়েছে ধাতব হাইড্রোজেনের একটি গভীর স্তর, তরল হাইড্রোজেন ও তরল হিলিয়ামের একটি মধ্যবর্তী স্তর এবং সর্বোপরি একটি গ্যাসীয় বহিঃস্তর। বায়ুমণ্ডলের উপরিতলে অ্যামোনিয়া কেলাসের উপস্থিতির জন্য শনি গ্রহের রং একটি ফিকে হলুদ। ধাতব হাইড্রোজেনের মধ্যে প্রবহমান তড়িৎ প্রবাহটিকে শনির গ্রহগত চৌম্বক ক্ষেত্রের উৎস মনে করা হয়। এই চৌম্বক ক্ষেত্রটি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের তুলনায় দুর্বল হলেও শনির বৃহত্তর আকারের জন্য এটির চৌম্বক মুহুর্ত পৃথিবীর তুলনায় ৫৮০ গুণ বেশি। শনির চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি বৃহস্পতির কুড়িভাগের প্রায় একভাগ।[১০] গ্রহের বহিঃস্থ বায়ুমণ্ডল সাধারণভাবে বৈশিষ্ট্যহীন ও বৈচিত্র্যহীন। যদিও কিছু দীর্ঘস্থায়ী বৈশিষ্ট্যেরও উদ্ভব ঘটে থাকে। শনি গ্রহে বায়ুপ্রবাহের গতি ১,৮০০ কিমি/ঘ (১,১০০ মা/ঘ; ৫০০ মি/সে) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা বৃহস্পতির বায়ুপ্রবাহের গতির থেকে বেশি হলেও নেপচুনের বায়ুপ্রভাবের গতির মতো অধিক মাত্রার নয়।[১১]
শনির সবচেয়ে বিখ্যাত বৈশিষ্ট্য হল এই গ্রহের সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান বলয় ব্যবস্থা। মূলত বরফ কণা দিয়ে গঠিত এই বলয়গুলিতে তুলনামূলকভাবে অল্প পরিমাণে পাথুরে ভগ্নাবশেষ ও ধূলিও রয়েছে। অন্তত ৮২ টি। এর মধ্যে ২৯ টির নামকরণ করা হয় নি। কিন্তু নামকরণ করার চেষ্টা চলছে। প্রাকৃতিক উপগ্রহের দিক থেকে শনি বৃহস্পতিকে পিছে ফেলে প্রথম স্থান দখল করে আছে। প্রাকৃতিক উপগ্রহ[১২] শনির চারপাশে আবর্তন করছে। এগুলির মধ্যে ৫৩টির আনুষ্ঠানিক নামকরণ হয়েছে। তবে শনির বলয়ের মধ্যে অবস্থিত শতাধিক অনু-উপগ্রহগুলিকে এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। শনির বৃহত্তম প্রাকৃতিক উপগ্রহ টাইটান হল সৌরজগতের দ্বিতীয়-বৃহত্তম প্রাকৃতিক উপগ্রহ। এটি আকারে বুধ গ্রহের চেয়েও বড়ো। যদিও টাইটানের ভর বুধের ভরের চেয়ে কম। টাইটানই সৌরজগতের একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ, যেখানে একটি উল্লেখযোগ্য বায়ুমণ্ডল রয়েছে।[১৩]
শনি গ্রহটি তার আকর্ষণীয় বলয়ের কারণেই সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের তুলনায় সৌন্দর্য্যের উৎকর্ষে রয়েছে, যা মহাজাগতিক ক্যানভাসে সৃষ্টি করেছে এক বিমূর্ত চিত্র। ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি সর্বপ্রথম টেলিস্কোপের মাধ্যমে শনি গ্রহকে পর্যবেক্ষণ করেন এবং এর দৃষ্টিনন্দন বলয় দেখতে পান।[১৪] নাসার বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের বিশাল গ্রহ শনির চারপাশে ঘূর্ণায়মান বিশাল আকারের নতুন একটি বলয় (রিং)-এর সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। অবশ্য দীর্ঘদিন চেষ্টার পর বিজ্ঞানীরা এটি আবিষ্কারে সফল হন। মজার ব্যাপার হলো সদ্য আবিষ্কৃত বলয়টি এতটাই বিশাল যে, এর ভেতর একশ কোটি বা এক বিলিয়ন পৃথিবী ভরে রাখার মত জায়গা আছে। বলয়টির মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বরফ, ধুলাবালি ইত্যাদি ধরা পড়ে।বলয় নিয়ে সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় হলো শনির আসলে একটি বলয় না কয়েক হাজার বলয় রয়েছে, যা এতকাল মানুষ জানতো না। কিছুদিন আগে তা আবিষ্কার করা হয়েছে। [১৫]
এই অনুচ্ছেদটি সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। |
শনি গ্রহের রয়েছে (নাসা:-ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইংরেজি: National Aeronautics and Space Administration (NASA)) মার্কিন সরকারের মহাকাশ-সম্পর্কিত বা জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক মনোনীত ৮৩ টি প্রাকৃতিক উপগ্রহ, কিন্তু এর মধ্যে নাম দেয়া হয়েছে মাত্র ৬৫টি প্রাকৃতিক উপগ্রহের এবং আকার বিবেচনায় ২৯ টি প্রাকৃতিক উপগ্রহ কে মূল উপগ্রহ ধরা হয়, নাসা কর্তৃক আবিষ্কারকৃত শনি গ্ৰহের প্রাকৃতিক উপগ্ৰহের সংখ্যা সর্বমোট একশো পঞ্চাশ (১৫৮টি) আর ৬৭টি নামহীন উপগ্ৰহ রয়েছে অর্থাৎ নাসা কর্তৃক প্রাকৃতিক উপগ্ৰহ নামকরণ হয়নি। এজন্য শনি গ্ৰহকে "প্রাকৃতিক উপগ্ৰহের সম্রাট বা The Emperor of Natural Satellite" বলা হয়।শনিগ্ৰহের ও সৌরজগতের দ্বিতীয়-বৃহত্তম প্রাকৃতিক উপগ্ৰহ টাইটান (Titan) সবচেয়ে বড় আর সবচেয়ে ছোট প্রাকৃতিক উপগ্ৰহ হল প্যান(Pan)। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের সাথে তুলনা করলে টাইটানের ব্যাসে প্রায় ১৪৮% বড়।এ প্রাকৃতিক উপগ্ৰহে পৃথিবীর ন্যায় সমুদ্র সৈকত রয়েছে কিন্তু সেটা পানির নয় মিথেন গ্যাসের এবং পৃথিবীর মতো বায়ুমণ্ডল, মহাদেশ, পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর,হ্রদ-উপহ্রদ রয়েছে। শনি গ্রহের প্রাকৃতিক উপগ্ৰহ গুলো নামকরণ করেন নাসার একটি শাখা (আইএইউ:-ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন, ইংরেজি:IAU:- International Astronomical Union) থেকে দেওয়া হয়।নিম্নে উপগ্রহগুলোর ১৫৮টি শনিগ্ৰহের প্রাকৃতিক উপগ্ৰহ সমূহ বিবরণ দেয়া হলোঃ-
হাইগেনস মহাকাশযানের অভিযানের পর বিজ্ঞানীরা বলছেন শনি গ্রহের উপগ্রহ টাইটানে জীবনের অস্তিত্ব থাকতে পারে। পৃথিবীর তুলনায় শনি গ্রহ সূর্যের চাইতে অনেক বেশি দূরে বলে এমনিতেই সূর্যরশ্মির তেজ সেখানে পৃথিবীর চাইতে অনেক কম। তারপর টাইটানের চতুর্দিকের ধোঁয়াশার জন্য শনির এই উপগ্রহটির উপরিভাগে সূর্যের আলো খুব একটা পৌছায় না। সুতরাং সেই অবস্থায় টাইটানে জীবনের কোনো অস্তিত্ব থাকার কোনো সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে। কিন্তু মহাকাশে জীবনের অস্তিত্ব নিয়ে যে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন, সেই অ্যাস্ট্রোবায়োলজিস্টিরা টাইটানে জীবনের সম্ভাব্য অন্য একটি চালিকা শক্তি খুঁজে পেয়েছেন। আর এই উপাদানটির নাম হচ্ছে অ্যাসেটিলিন। টাইটানে জীবনের অস্তিত্ব থাকলে সেই জীব আসেটিলিনের সাথে হাইড্রোজ্বেনের বিক্রিয়া ঘটাবে, যা তারা আবহাওয়ামন্ডল থেকে শুষে নেবে। টাইটানের চতুর্দিকে ধোয়াশার যে আবরণ রয়েছে, সেটা ছাড়িয়ে আবহাওয়া মন্ডলে বেশ ওপরের দিকে সুর্যরশ্মির প্রভাবে আসিটিলিন তৈরি হয়। ওপর থেকে মুশলধারার বৃষ্টির মতন যে এই অ্যাসেটিলিন টাইটানের উপরিভাগের ওপর পড়ে তা নয়। তবে জীবন টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ আসেটিলিন সেখানে রয়েছে বলে মনে করেন ডেভিড গ্রিনস্পুন। সুতরাং, বিজ্ঞানীরা এখন খাতা-কলমে বলতে পারছেন যে টাইটানে জীবন টিকে থাকার পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে তার অর্থ এই নয় যে বাস্তবে সেখানে জীবনের অস্তিত্ব আছে এবং এখন পর্যন্ত সেধরনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এই আবিষ্কারের গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এই যে ভবিষ্যতে টাইটানে যে অভিযান হবে, সেই অভিযানে ঠিক কোন কোন বিষয়ের ওপর বেশি নজর দিতে হবে, সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের এখন খুব ভাল ধারণা হয়েছে।[১৬]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.