Loading AI tools
দুটি হাইড্রোজেন ও একটি অক্সিজেন পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত রাসায়নিক যৌগ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পানি বা জল হলো একটি অজৈব, স্বচ্ছ, স্বাদহীন, গন্ধহীন এবং প্রায় বর্ণহীন এক রাসায়নিক পদার্থ, যা পৃথিবীর বারিমণ্ডলের ও যে কোন জীব-কোষ বা উদ্ভিদ-কোষের একটি প্রধান উপাদান। যদিও পানি কোন প্রাণী বা উদ্ভিদকে কোন রকমের শক্তির বা জৈব পরিপোষকের যোগান দেয় না, তবু এখনও পর্যন্ত আমরা যা জানি, তাতে সমস্ত ধরনের প্রাণের বেঁচে থাকার জন্য পানি অপরিহার্য। এই জন্য মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বহির্বিশ্বে প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজার আগে প্রথমে সেখানে পানির অস্তিত্ব খোঁজেন। কারণ, এখনও মোটামুটিভাবে মনে করা হয় যে, পানি যদি না থাকে, তাহলে সেখানে প্রাণ থাকতে পারে না।
পানির রাসায়নিক সংকেত হল H2O। ইউপ্যাক (IUPAC) নিয়ম অনুযায়ী পানির রাসায়নিক নাম ডাইহাইড্রোজেন মনোঅক্সাইড। অর্থাৎ পানির একেকটি অণু একটি অক্সিজেন পরমাণু এবং দু'টি হাইড্রোজেন পরমাণুর সমযোজী বন্ধনে গঠিত। এই H2O যৌগটির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো - অপেক্ষাকৃত অল্প তাপমাত্রার পরিসরের মধ্যে এর তিনটি বিভিন্ন অবস্থা— কঠিন, তরল ও বায়বীয় পরিলক্ষিত হয়। হাইড্রোজেন পরমাণু 104.45° কোণে অক্সিজেন পরমাণুর সাথে সংযুক্ত থাকে।[1] এক বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ০°–১০০° সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে H2O তরল অবস্থায় থাকে। ০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি জমে কঠিন বরফে পরিণত হয় এবং ১০০° সেলসিয়াসে পানি বায়বীয় অবস্থা জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। এই জন্য ০° সেলসিয়াসকে বলা হয় পানির গলনাঙ্ক এবং ১০০° সেলসিয়াসকে বলা হয় পানির স্ফুটনাঙ্ক। গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্কের এই মান (যথাক্রমে, ০° ও ১০০° সেলসিয়াস) এক বায়ুমণ্ডলীয় চাপেই পরিলক্ষিত হয়। বলা বাহুল্য, বায়ু-চাপের পরিবর্তনের সংগে সমস্ত পদার্থের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্কের মানের পরিবর্তন হয়। জলীয় বাষ্প ঊর্ধ বায়ুমণ্ডলে ঠাণ্ডা হয়ে যখন সূক্ষ্ম পানি-কণা ও বরফ-কণায় রুপান্তরিত হয়, তখন তাকে আমরা বলি মেঘ। যখন পানি-কণাগুলো আকারে বৃদ্ধি পেয়ে পৃথিবীর ওপর নেমে আসে, তখন তাকে বলি বৃষ্টি। যখন বরফ-কণাগুলো আকারে বৃদ্ধি পেয়ে পৃথিবীর ওপর নেমে আসে, তখন তাকে বলি তুষারপাত। এখানে আরও বলা যেতে পারে, পৃথিবীতে তরল স্ফটিক রূপেও পানির অস্তিত্ব দেখা যায়।[2][3] রাসায়নিক যৌগের নামকরণ প্রক্রিয়া অনুসারে পানির বিজ্ঞানসম্মত নাম হলো ডাইহাইড্রোজেন মনোক্সাইড।[4]
ভূপৃষ্ঠের ৭০.৯% অংশ জুড়ে পানির অস্তিত্ব রয়েছে[5] এবং পৃথিবীর প্রায় সমস্ত জীবের জীবনধারণের জন্যই পানি একটি অত্যাবশ্যক পদার্থ।[6] পৃথিবীতে প্রাপ্ত পানির ৯৬.৫% পাওয়া যায় মহাসাগরে, ১.৭% ভূগর্ভে, ১.৭% হিমশৈল ও তুষার হিসেবে, একটি ক্ষুদ্র অংশ অন্যান্য বড় জলাশয়ে এবং ০.০০১% বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত মেঘ, জলীয় বাষ্প হিসেবে ও বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, ইত্যাদিরূপে।[7][8] পৃথিবীর পানির মাত্র ২.৫% হল বিশুদ্ধ পানি এবং বাকি ৯৮.৮% হল ভূগর্ভস্থ পানি ও বরফ। বিশুদ্ধ পানির ০.৩%-এরও কম অংশ পাওয়া যায় নদীতে, হ্রদে ও বায়ুমণ্ডলে এবং তার চেয়েও ন্যূনতর অংশ পাওয়া যায় বিভিন্ন জীবের শরীর ও উৎপাদিত পণ্যে।[7] পৃথিবীতে পানি বা জল প্রতিনিয়তই বাষ্পীভবন, ঘনীভবন, বাষ্পত্যাগ, ইত্যাদি বিশিষ্ট পানিচক্র মাধ্যমে ঘূর্ণমান। বাষ্পীভবন ও বাষ্পত্যাগের কারণেই পৃথিবীতে বৃষ্টিপাত, তুষারপাত ইত্যাদি ঘটে।
মানব জাতি সহ অন্যান্য প্রাণীর জীবনধারণের জন্য সুপেয় পানি অপরিহার্য। গত কয়েক দশকে পৃথিবীর প্রায় সকল প্রান্তেই সুপেয় পানির সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তবুও প্রায় একশ কোটি মানুষ নিরাপদ পানি ও প্রায় আড়াইশ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার থেকে বঞ্চিত।[9] নিরাপদ পানির ব্যবহারের সাথে মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনের সুস্পষ্ট পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে।[10] কয়েকজন পর্যবেক্ষক অনুমান করেছেন যে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকাংশেরও বেশি পানি সংক্রান্ত সঙ্কটের সম্মুখীন হবে।[11] নভেম্বর, ২০০৯-এ প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে কয়েকটি উন্নয়নশীল অঞ্চলে যোগানের তুলনায় পানির চাহিদা ৫০% ছাড়িয়ে যাবে।[12] বিশ্ব অর্থনীতিতে পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ পানি বহু রাসায়নিক পদার্থের দ্রাবক হিসেবে কাজ করে এবং বিভিন্ন শিল্পে শীতলীকরণ এবং পরিবহনের কাজে সহায়তা করে। মানুষের ব্যবহৃত বিশুদ্ধ পানির প্রায় ৭০% ব্যবহৃত হয় কৃষিকার্যে।[13]
পানির রাসায়নিক সংকেত হল H2O: পানির একটি অণুতে দু'টি হাইড্রোজেন পরমাণু একটি অক্সিজেন পরমাণুর সাথে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। পদার্থের তিনটি অবস্থাতেই পৃথিবীতে পানির অস্তিত্ব বিদ্যমান। পানীয় বাষ্প ও মেঘ হিসেবে আকাশে, সমুদ্রের পানি হিসেবে মহাসাগরে, হিমশৈল হিসেবে মেরু অঞ্চলের মহাসাগরে, হিমবাহ ও নদী হিসেবে পর্বতে এবং ভূগর্ভে পানির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
মনে করা হয় বৃহদাকার গ্রহগুলির অভ্যন্তরে উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রায়, পানি আয়নিত অবস্থায় থাকে। ওই অবস্থায় পানির অণুগুলি ভেঙ্গে গিয়ে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন আয়নের একটি মাধ্যম তৈরী করে। আরো বেশি চাপে অক্সিজেন কেলাসিত হয়ে গেলেও হাইড্রোজেন আয়নগুলি মুক্তভাবে অক্সিজেন আয়নের কেলাসের সজ্জার মধ্যে ভেসে বেড়ায়। এই বিশেষ অবস্থাকে পানির অতিআয়নিত অবস্থা বলে।[14]
পানির মুখ্য ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মগুলি হল:
বিভিন্ন ধরনের পদার্থ পানিতে দ্রবীভূত হয়ে তাতে বিভিন্ন স্বাদ ও গন্ধের সৃষ্টি করতে পারে। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী তাদের ইন্দ্রিয়ের দ্বারা অনুভব করতে সক্ষম যে কোন পানি পান করার উপযুক্ত। কোন প্রাণীই লবণাক্ত অথবা দূষিত পানি পান করে না। ঝরনার পানি এবং খনিজ মিশ্রিত পানিতে যে স্বাদ পাওয়া যায় তা সেই পানিতে মিশ্রিত খনিজ পদার্থ থেকে উদ্ভূত। কিন্তু বিশুদ্ধ পানি (H2O) সম্পূর্ণ স্বাদহীন ও গন্ধহীন। খনিজ মিশ্রিত পানির বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনে যে বিশুদ্ধতার দাবি করা হয় তা আসলে পানিতে কোন ধরনের জীবাণু, দূষিত পদার্থ অথবা বিষের অনুপস্থিতিকেই নির্দেশ করে। প্রকৃত অর্থে সেই পানি বিশুদ্ধ নয় কারণ তাতে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ মিশ্রিত থাকে।
জীবজগতে পানির প্রভাব অপরিসীম ৷ পানি ছাড়া পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতো না ৷ এছাড়াও মানুষের অপরিহার্য প্রয়োজনীয় পদার্থ হল পানি ৷ একজন মানুষ পানি ছাড়া গড়ে মাত্র তিন দিন বেচে থাকতে পারে অণুজীব, হল এককোষী জীব যাদের সাধারণত খালি চোখে দেখা যায় না এবং একক-কোষীয় আকারে অথবা কোষের কলেনি বা উপনিবেশ হিসাবে বিদ্যমান থাকে। এগুলিকে জীবাণু বা অণুবীক্ষণিক জীব হিসাবেও পরিচিত কারণ এগুলি কেবলমাত্র একটি মাইক্রোস্কোপের নীচেই দেখা সম্ভব। এটি অনুমান করা হয় যে অণুজীবগুলি পৃথিবীর জৈববস্তুর প্রায় ৬০% তৈরি করে।
জীবের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও গ্যাসীয় উপাদান জল-মাধ্যমেই কোষ থেকে কোষে যায়। কোষের অপ্রয়োজনীয় পদার্থ জল-মাধ্যমেই বাহিত হয়ে নির্দিষ্ট রেচন অঙ্গে যেতে পারে। উন্নত উদ্ভিদেরা মাটি থেকে মূলরোমের সাহায্যে জল শোষণ করে। প্রাণীরা খাদ্যদ্রব্য থেকে জল সংগ্রহ করে এবং আলাদাভাবে শুধু জল পানও করে। জীবদেহে জলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ নীচে বর্ণনা করা হল:
উল্লেখ্য, ৭০ কিলোগ্রাম ওজনের মানুষের দেহে প্রায় ৪৭ লিটার জল থাকে। মানুষের চামড়ায় ২০%, পেশীতে ৭৫%, রক্ত-কণিকায় ৬০%, রক্ত-রসে ৯২% জল থাকে। [17]
পানীয় [সংস্কৃত ধাতু √ পা + অনীয়] শব্দটির সামান্য পরিবর্তিত হয়ে "পানি" শব্দ তৈরি হয়েছে। এই শব্দটি বাংলায় মূলত মুসলিমরা ব্যবহার করে থাকে।[18][19] সমোচ্চারিত পাণি, যার অর্থ হাত, এটি সংস্কৃত ধাতু √ পণ্ + ই = পাণি থেকে এসেছে। অপরদিকে "পানি" শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ধাতু √ পানি্ + অ = পানি থেকে।[20] "জল" শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ধাতু √ জল্ + অ = জল থেকে। এই শব্দটি মূলত ভারতবর্ষের হিন্দু বাঙালিরা ব্যবহার করে থাকে। আর পানি শব্দটি বাংলাদেশের সকল ধর্মালম্বী ব্যবহার করে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে বেশির ভাগ মানুষ পানি শব্দ ব্যবহার করে থাকেন।
স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য বিশুদ্ধ পানি অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ। দূষিত পানি পান করার দ্বারা মানবদেহে বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হয়। দূষিত পানি পান করার ফলে বিশেষ করে কিডনি আক্রান্ত হয়। আমরা অনেকে বিশুদ্ধ পানি পান করার প্রতি মনোযোগী নয়। আমরা যারা শহরে বসবাস করি তারা অন্তত পানি ফুটিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করি। শহরের মানুষেরা সাধারণত সকলে ট্যাংকির পানি ব্যবহার করে থাকি। অনেক দিন যাবত ট্যাংকি পরিষ্কার না করার কারণে ট্যাংকিতে শেওলা ও ময়লাতে পরিপূর্ণ থাকে। আমরা অনেকে সে দিকে মনোযোগ দেই না। আমরা চেষ্টা করব পানির ট্যাংকি যাতে পরিষ্কার পরিছন্ন থাকে। তাহলে আমরা পানি বাহিত বিভিন্ন রোগ হতে মুক্তি পাব।
কৃষিতে পানির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হল সেচে। কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশে সেচে পানির প্রায় ৯০% ব্যবহৃত হয়[21] এবং অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত দেশগুলিতেও পানির সিংহভাগই ব্যবহৃত হয় সেচে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশুদ্ধ পানির প্রায় ৩০% সেচে ব্যবহৃত হয়)।[21]
মূল নিবন্ধ: পেয় পানি
মানবদেহের আকারের সাপেক্ষে তাতে ৫৫%-৭৮% পানি থাকে।[22] সক্রিয় থাকার জন্য এবং নিরুদন প্রতিরোধ করার জন্য মানবদেহের প্রতিদিন এক থেকে সাত লিটার পানির প্রয়োজন হয়। দেহের প্রয়োজনীয় পানির প্রকৃত পরিমাণ নির্ভর করে কাজকর্মের পরিমাণ, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, ইত্যাদি নানা পরিস্থিতির উপর। শরীরে গ্রহণ করা পানির মোট পরিমাণের অধিকাংশই সরাসরি পানি পান করার পরিবর্তে আসে বিভিন্ন খাদ্য এবং অন্যান্য পানীয় থেকে। একজন স্বাস্থ্যবান মানুষের ঠিক কত পরিমাণ পানির দরকার তা সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা না গেলেও অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই মত প্রকাশ করেছেন যে শরীর সুস্থ রাখতে মোটামুটি প্রতিদিন ২ লিটার (৬ থেকে ৭ গ্লাস) পানির প্রয়োজন।[23] ব্যায়াম অথবা গরম আবহাওয়া জনিত কারণে শরীর থেকে নির্গত হওয়া পানি বাদ দিয়ে চিকিৎসা শাস্ত্র সাধারণত একজন গড় পুরুষের জন্য ১ লিটার পানি অর্থাৎ অল্প পানি পান করার পক্ষে মত দেয়।[24] যে সব ব্যক্তি সুস্থ কিডনির অধিকারী তাদের পক্ষে অতিরিক্তি পানি পান করা অসুবিধাজনক কিন্তু মূলতঃ ব্যায়াম করলে অথবা আর্দ্র আবহাওয়া থাকলে অল্প পরিমাণ পানি পান করা শরীরের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। কোন ব্যক্তি ব্যায়াম করার সময় প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি পান করতে পারে কিন্তু তা পানির প্রতি অত্যধিক আসক্তি সৃষ্টি করতে পারে যা, শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক।[25][26] একজন ব্যক্তির দৈনিক আট গ্লাস পানি পান করার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে যে ধারণা বহুল প্রচলিত, বিজ্ঞানে সম্ভবত তার কোন বাস্তব ভিত্তি নেই।[27] একইভাবে দেহের ওজনহ্রাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে পানির উপকারিতা বিষয়ে যে ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে তাও বিজ্ঞানসম্মত ভাবে খারিজ হয়ে গেছে।[28]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.