Remove ads
বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের একটি জেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
নরসিংদী জেলা বাংলাদেশের মধ্যভাগের ঢাকা বিভাগের একটি একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যানুসারে নরসিংদী বাংলাদেশের একটি “বি” শ্রেণীভুক্ত জেলা।[৪] কিংবদন্তি এবং ঐতিহাসিক তথ্যাবলি থেকে অনুমান করা হয় যে, নরসিংদী জেলার অধিকাংশ অঞ্চল প্রাচীন সুবর্ণবীথি রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। রাজা নরসিংহের নামে নরসিংদীর নামকরণ করা হয়। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে নরসিংদীকে মহকুমায় এবং ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে জেলায় উন্নীত করা হয়।
নরসিংদী | |
---|---|
জেলা | |
বাংলাদেশে নরসিংদী জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°৫৫′১২″ উত্তর ৯০°৪৩′৪৮″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ঢাকা বিভাগ |
প্রতিষ্ঠা | ১৯৮৪ |
আয়তন | |
• মোট | ১,১১৪ বর্গকিমি (৪৩০ বর্গমাইল) |
[১] | |
জনসংখ্যা (২০২২)[২] | |
• মোট | ২৫,৮৪,৪৫২ |
• জনঘনত্ব | ২,৩০০/বর্গকিমি (৬,০০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার[৩] | |
• মোট | ৭৪.৬৯% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ১৬০০/১৬৩১ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৬৮ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
মেঘনা, শীতলক্ষ্যা, আড়িয়াল খাঁ ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ তীর বিধৌত জেলা নরসিংদী। এ জেলাটি বাংলাদেশের মধ্য-পূর্বাংশে অবস্থিত। এটি ২৩°৪৬’ হতে ২৪°১৪’ উত্তর অক্ষরেখা এবং ৯০°৩৫’ ও ৯০°৬০’ পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যে অবস্থিত।[৫] এ জেলার উত্তরে কিশোরগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, পশ্চিমে গাজীপুর জেলা।[৬]
পূর্বে এই অঞ্চলটি নরসিংহ নামক রাজার শাসনাধীন ছিল। ধারণা করা হয়, পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে নরসিংহপুর নামে একটি ছোট নগর রাজা নরসিংহ স্থাপন করেছিলেন।[৭] ইতিহাসবিদরা নরসিংদী নামটি রাজা নরসিংহের নামানুসারে উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করেন। এক সময়ে নরসিংদী অঞ্চলটি মহেশ্বরদী পরগনার অর্ন্তভূক্ত ছিল। এ পরগনার জমিদার ছিলেন দেওয়ান ঈশা খাঁ। তারপরে জমিদার ছিলেন তার উত্তরসূরি হয়বতনগর দেওয়ান সাহেব বাড়ির জমিদারগণ। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির প্রাক্বালে জমিদার ছিলেন দেওয়ান শরীফ খাঁ, আয়শা আক্তার খাতুন, ফরকুন্দা আক্তার খাতুন ও সৈয়দ আবদুল্লাহ। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর একসময় নরসিংদী ছিল প্রশাসনিকভাবে ঢাকা জেলাধীন নারায়ণগঞ্জ মহকুমার একটি থানা। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর নরসিংদী পাক হানাদার মুক্ত হয়। ১৯৭৭ সালে একে ঢাকা জেলার একটি মহকুমায় উন্নীত করা হয়। সরকার ১৯৮৪ সালে নরসিংদী সদর, পলাশ, শিবপুর, মনোহরদী, বেলাবো ও রায়পুরা-এই ৬টি উপজেলা এবং নরসিংদী পৌরসভা নিয়ে নরসিংদীকে জেলা ঘোষণা করে।[৭]
নরসিংদী জেলা ৬টি উপজেলা, ৭টি থানা,[৮] ৬টি পৌরসভা, ৭১টি ইউনিয়ন, ৬২৪টি মৌজা, ১০৯৫টি গ্রাম ও ৫টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।
নরসিংদী জেলায় মোট ৬টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল:
নরসিংদী জেলার মোট আয়তন ১,১১৪ বর্গ কি:মি:। প্রতি বর্গকিলোমিটারে লোকসংখ্যা ২২৪৭ জন।
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুসারে, নরসিংদী জেলার মোট জনসংখ্যা ২৫,৮৪,৪৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২,৬৫,৫৭৮ জন, নারী ১৩,১৭,৮৭৩ জন ও হিজড়া ১৭৮ জন। পুরুষ ও নারীর লিঙ্গানুপাত ৯৬.০৩ শতাংশ। এখানে পল্লী অঞ্চলে বাস করেন ১৯,৩৯,৮২০ জন ও শহর অঞ্চলে বাস করেন ৬,৪৩,৮০৯ জন। এখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য আছেন ৫০৮ জন, যা মোট জনসংখ্যার ০.০৩ শতাংশ; তবে নরসিংদীতে কোনো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্থায়ী বসবাস নেই।[১১]
নরসিংদী জেলার সাক্ষরতার হার ৭৪.৬৯%। জেলার ৭৫.৯৮% পুরুষ, ৭৩.৪৭% নারী ও ৫৪.৯৭% হিজড়া সাক্ষর।[১২]
এই জেলার উল্লেখযোগ্য কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো নরসিংদী সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ আসাদ কলেজ, ব্রাহ্মন্দী কামিনী কিশোর মৌলিক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সাটিরপাড়া কালী কুমার ইন্সটিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পাঁচদোনা স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্ত উচ্চ বিদ্যালয়, জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসা, আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ, স্কলাস্টিকা মডেল কলেজ, ইউরিয়া সার কারখানা স্কুল এন্ড কলেজ, গয়েশপুর পদ্মলোচন উচ্চ বিদ্যালয়, মনোহরদী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, বাংলাদেশ তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, নরসিংদী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, পলাশ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা, নারায়ণপুর রাবেয়া মহাবিদ্যালয়, হাজীপুর নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় ইত্যাদি।[১৩]
ধর্ম | জনসংখ্যা (১৯৪১)[১৪]:৯৬-৯৭ | শতাংশ (১৯৪১) | জনসংখ্যা (২০১১)[১০] | শতাংশ (২০১১) |
---|---|---|---|---|
ইসলাম | ৫,৫৫,৯৭৫ | ৮৪.৮৪% | ২০,৯৮,৮২৯ | ৯৪.৩৩% |
হিন্দুধর্ম | ৯৯,১৯৭ | ১৫.১৪% | ১,২৫,৭৬৯ | ৫.৬৫% |
অন্যান্য | ১২৮ | ০.০২% | ৩৪৬ | ০.০২% |
মোট জনসংখ্যা | ৬,৫৫,৩০০ | ১০০% | ২২,২৪,৯৪৪ | ১০০% |
২০২২ সালে, নরসিংদীর মোট জনসংখ্যার ৯৪.৫০% মুসলমান, ৫.৪০% হিন্দু, ০.০১% বৌদ্ধ, ০.০৩% খ্রিষ্টান ও ০.০৬% অন্যান্য মতাবলম্বী ছিলেন।[১২]
এই জেলায় বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় স্থাপনা আছে। যেমন: পারুলিয়া শাহী মসজিদ, কুমারদি মসজিদ, আশ্রাফপুর মসজিদ, ব্রাহ্মন্দী কালী মন্দির, চিনিশপুর কালী মন্দির, ঘোড়াশাল ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ইত্যাদি।
নরসিংদী জেলা হতে সারাদেশের সাথেই সড়ক ও নৌ পথে যোগাযোগ করা যায়।
নরসিংদী জেলায় রেল স্টেশন মোট ১০টি। যথা: ঘোড়াশাল, ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ, জিনারদী, নরসিংদী, আমিরগঞ্জ, খানাবাড়ি, হাঁটুভাঙ্গা, মেথিকান্দা, শ্রীনিধি ও দৌলতকান্দি। এছাড়া মাধবদীতে একটি রেলওয়ে স্টেশন ছিল, যা বর্তমানে বিলুপ্ত। নরসিংদী জেলা নরসিংদী লঞ্চ টার্মিনাল, পান্থশালা ফেরী ঘাট, রায়পুরা ফেরী ঘাট, সায়েদাবাদ ফেরী ঘাট ইত্যাদির মাধ্যমে নৌপথে দেশের সাথে যুক্ত। পাঁচদোনা, ভেলানগর, ইটাখোলা, বারৈচা, নারায়ণপুর বাসস্ট্যান্ড হতে দেশের সকল জেলার সাথে সড়ক পথে যাতায়াতের সুবিধা রয়েছে।
প্রাচীনকাল থেকেই নরসিংদী অর্থনীতিতে সমৃদ্ধশালী ছিল। তাঁতশিল্প এর প্রধান হাতিয়ার। নরসিংদীর মাধবদী হলো কাপড় উৎপাদন করার মূল কেন্দ্র। মাধবদী এলাকার মানুষদের প্রথম ব্যবসা হলো কাপড় উৎপাদন করা। যেকোনো ধরনের কাপড় এখানে উৎপাদন করা হয়। এই এলাকায় প্রচুর পরিমাণে টেক্সটাইল মিল রয়েছে। বাবুরহাট বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি কাপড়ের বাজার। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ এখান থেকে পাইকারি কাপড় কিনে নিয়ে যায় এবং অন্যান্য দেশে রপ্তানি করে থাকে।
বাংলাদেশের সামগ্রিক কৃষি ব্যবস্থায় নরসিংদী জেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জেলার উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। নরসিংদী জেলার সবচেয়ে বিখ্যাত কৃষিপণ্য বা ফল হল কলা। এছাড়াও বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লটকন উৎপাদিত হয় নরসিংদী জেলায়। এখানকার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কৃষক।
নরসিংদীর শিবপুরে ১৯৯০ সালে একটি প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এটি বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানী লিমিটেডের অধীন।[১৫]
নরসিংদীতে বৃহৎ আকারের বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে, যা রাষ্ট্রীয় চাহিদা পূরণে ভূমিকা পালন করে। নরসিংদীর পলাশের ঘোড়াশালে এরকম বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে। ঘোড়াশালের ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এছাড়া এখানকার ঘোড়াশাল সার কারখানা দেশের ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরণ করে। একই অঞ্চলে বাংলাদেশ জুট মিলস লিমিটেড এবং জনতা জুট মিলস লিমিটেডও অবস্থিত। পলাশের চরসিন্দুরে ১৯৩২ সালে দেশবন্ধু চিনি কল লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়। নরসিংদী সদরের নাগরিয়াকান্দী এলাকায় ইউ.এম.সি. জুট মিলস লিমিটেড অবস্থিত, যা বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম পাটকল।
নরসিংদীতে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন উন্নতমানের কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রধান কারখানা, যা ঘোড়াশালে অবস্থিত। এছাড়া শিবপুরে রয়েছে স্যামসাং কোম্পানির টেলিভিশন তৈরির কারখানা।[১৬]
নরসিংদীর প্রচলিত পুঁথিসমূহে রাজা রাহুতের নাম পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, তিনি হিন্দু হলেও তার মেয়ে একজন মুসলমান দরবেশকে বিয়ে করে।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান নরসিংদীর সন্তান। এছাড়া বাঙালী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সশস্ত্র বিপ্লবী সতীশচন্দ্র পাকড়াশী এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের নায়ক শহীদ আসাদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ৩ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ. এন. এম. নূরুজ্জামান, বীর উত্তম নরসিংদীর রায়পুরায় জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত খন্দকার মতিউর রহমান, আবদুর রউফ ও মোহাম্মদ সাহাব উদ্দীন নরসিংদীর সন্তান। মুক্তিযুদ্ধে বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে রয়েছেন লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সিরাজউদ্দীন আহমেদ, কাজী আকমল আলী, মালু মিয়া ও মোবারক হোসেন। শহিদ বুদ্ধিজীবী মোহাম্মদ সাদত আলী এবং সরোজ কুমার নাথ অধিকারী নরসিংদীতে জন্মগ্রহণ করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম অভিযুক্ত ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফ্লাইট সার্জেন্ট আবদুল জলিল বেলাবোতে জন্মগ্রহণ করেন। এছাড়া আছেন বামপন্থী নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ফজলুল হক খোন্দকার।
১ম জাতীয় সংসদে বর্তমান নরসিংদী জেলার সংসদ সদস্য ছিলেন গাজী ফজলুর রহমান (ঢাকা-২২), রবিউল আলম কিরণ খাঁ (ঢাকা-২৩), আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়া (ঢাকা-২৪), মোসলেহ্ উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-২৫) ও কাজী সাহাবুদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-২৬)। ২য় সংসদে বর্তমান নরসিংদী জেলার সংসদ সদস্য ছিলেন মোখলেসুর রহমান (ঢাকা-২৩), মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ (ঢাকা-২৪), আহমেদুল কবির (ঢাকা-২৫), মাঈন উদ্দিন ভূঁইয়া (ঢাকা-২৬) ও আবদুল মোমেন খান (ঢাকা-২৭)। আবদুল মোমেন খান সাবেক খাদ্য মন্ত্রী ও সাবেক সচিব। মাঈন উদ্দিন ভূঁইয়া সাবেক হুইপ ও সাবেক কৃষি উপমন্ত্রী।
৩য় জাতীয় সংসদ গঠনের পূর্বেই নরসিংদী জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তখন সংসদ সদস্য হন সামসুল হুদা বাচ্চু (নরসিংদী-১), আহমেদুল কবির (নরসিংদী-২), কামাল হায়দার (নরসিংদী-৩), নুরুল মজিদ হুমায়ুন (নরসিংদী-৪), ও আসাদুল হক খসরু (নরসিংদী-৫)।
৪র্থ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন মোস্তফা জামান বেবী, দেলোয়ার হোসেন খান, শাহজাহান সাজু, মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া, এ এইচ এম আব্দুল হালিম ও মাঈন উদ্দিন ভূঁইয়া।
৫ম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন শামসুদ্দিন আহমেদ এছাক, আব্দুল মঈন খান, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, সরদার শাখাওয়াত হোসেন বকুল ও আবদুল আলী মৃধা। ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদেও এরা পুনর্নির্বাচিত হন। ৭ম জাতীয় সংসদে নরসিংদী-৪ আসনে নুরউদ্দীন খান ও নরসিংদী-৫ আসনে রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু নির্বাচিত হন। ৮ম জাতীয় সংসদে উপনির্বাচনে নরসিংদী-১ আসনে খায়রুল কবির খোকন নির্বাচিত হন ও সরদার শাখাওয়াত হোসেন বকুল পুনরায় আসন ফিরে পান। আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এর মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। লে. জেনারেল নুরউদ্দীন খান সাবেক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ও সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী। আব্দুল মঈন খান সাবেক তথ্য মন্ত্রী।
৯ম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন লে. কর্নেল নজরুল ইসলাম হিরু, আনোয়ারুল আশরাফ খান, জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। ১০ম সংসদে নরসিংদী-২ আসনে কামরুল আশরাফ খান ও নরসিংদী-৩ আসনে মো: সিরাজুল ইসলাম মোল্লা নির্বাচিত হন। ১১শ জাতীয় সংসদে ৯ম সংসদের সদস্যরাই ছিলেন। তবে ১২শ জাতীয় সংসদে নরসিংদী-৩ আসনে মো: সিরাজুল ইসলাম মোল্লা নির্বাচিত হন। নজরুল ইসলাম হিরু মুক্তিযুদ্ধে বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বর্তমান শিল্প মন্ত্রী।
সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে ৮ম সংসদে রোকেয়া আহমেদ লাকী, ১০ম সংসদে রহিমা আখতার ও ১১শ সংসদে তামান্না নুসরাত (বুবলী) নির্বাচিত হন।
নরসিংদী থেকে আগত শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা বাংলাদেশের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম প্রথম শ্রেণী প্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল হামিদ নরসিংদীতে জন্মগ্রহণ করেন। এছাড়া নরসিংদীর শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আব্দুল মান্নান এবং আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম এ মান্নান, ভাষাবিজ্ঞানী সফিউদ্দিন আহমদ ও মনিরুজ্জামান (নরসিংদীতে অবস্থানরত), বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, বিজ্ঞানী এ এম এ এম জোনায়েদ সিদ্দিকী, ইসলামি পণ্ডিত ইসমাঈল নূরপুরী, প্রত্নতত্ত্ববিদ হানিফ পাঠান ও মুহাম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত গবেষক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও সুরমা জাহিদ, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া, সাংবাদিক ফরিদা ইয়াসমিন, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক মাশির হোসেন ও রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, কৃষিবিদ গিয়াসউদ্দীন মিয়া এবং শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
নরসিংদী জেলায় বহু গুণী কবি ও সাহিত্যিক জন্মগ্রহণ করেছেন। পবিত্র কুরআন এর প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদক ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন নরসিংদীর সন্তান। এছাড়া 'নাগরিক কবি' হিসেবে পরিচিত কবি শামসুর রাহমানের পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরায়। ভাষাবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ড. আলাউদ্দিন আল আজাদ, ঔপন্যাসিক হরিপদ দত্ত, মার্ক্সবাদী সাহিত্যিক ও বিপ্লবী সোমেন চন্দ, কবিয়াল হরিচরণ আচার্য, সাহিত্যিক ইকবাল খন্দকার প্রমুখ ব্যক্তির নিবাস নরসিংদীতে।
শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন কণ্ঠশিল্পী আপেল মাহমুদ, নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী, বদরুন্নেসা ডালিয়া, অভিনেত্রী খালেদা আক্তার কল্পনা, নাজিরা আহমেদ মৌ, চলচ্চিত্রকার বদিউল আলম খোকন, মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ, জাকির খান, মাসুদ পথিক এবং চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। এছাড়া জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত সুরকার ইমন চৌধুরী নরসিংদী জেলার সন্তান।
ড. রশিদ উদ্দিন আহমদ উপমহাদেশের অন্যতম এবং বাংলাদেশের প্রথম নিউরোসার্জন। তার আদিনিবাস ও সমাধিস্থল নরসিংদীর বেলাবোতে।[১৮]
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক শামীম কবির নরসিংদীর সন্তান। এছাড়া রয়েছেন ফুটবলার আব্দুল গফুর ভূঁইয়া (স্কুটার গফুর), মোবারক হোসেন ভূঁইয়া, ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব, জাবেদ খান, ক্রিকেটার রিফাত প্রধান ও হোসেন আলী।
নরসিংদী জেলার অনেক ব্যক্তিই স্বাধীনতাপূর্ব ও স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন স্যার কৃষ্ণ গোবিন্দ গুপ্ত, যিনি পূর্ববঙ্গের প্রথম আইসিএস অফিসার এবং প্রথম নাইট উপাধিপ্রাপ্ত ভারতীয় ছিলেন। [১৯] এছাড়া রয়েছেন বাংলাদেশের ২০তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা। এই জেলায় জন্মগ্রহণকারী অন্যান্য সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা হলেন মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, মামুন আল রশীদ, বদরুন নেছা, ফরিদ আহাম্মদ, এবং মোসাম্মৎ হামিদা বেগম প্রমুখ। এছাড়া অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পঞ্চম গভর্নর মো: খোরশেদ আলম, বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা উল্লেখযোগ্য।
নরসিংদী জেলার সংসদীয় আসন সংখ্যা ৫টি। বর্তমানে এগুলো শূন্য। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নরসিংদী জেলার সংসদ সদস্যদের তালিকা নিম্নরূপ:
সংসদীয় আসন | নির্বাচনী এলাকা | সাংসদের নাম | রাজনৈতিক দল |
নরসিংদী-১ | নরসিংদী সদর | মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
নরসিংদী-২ | পলাশ | ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
নরসিংদী-৩ | শিবপুর | মো: সিরাজুল ইসলাম মোল্লা | স্বতন্ত্র |
নরসিংদী-৪ | বেলাব-মনোহরদী | নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
নরসিংদী-৫ | রায়পুরা | রাজি উদ্দিন আহমেদ | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
নরসিংদী জেলা প্রশাসন ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। নরসিংদীর বর্তমান জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী। [২০]
নরসিংদীর জেলা পরিষদ ১৯৮৮ সালের ১২ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়। [২১]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.