Remove ads
বাংলাদেশের সর্ব প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের তথা পূর্ব বাংলার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালের ১লা জুলাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। পূর্ববঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল একটি মুসলমান মধ্যবিত্ত সমাজ সৃষ্টি করা। এই মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজই পরবর্তীকালে পূর্ববঙ্গের সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনে নেতৃত্ব দান করে। বঙ্গভঙ্গের সময় থেকে পূর্ববঙ্গে মুসলিম সমাজে যে নবজাগরণ শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তারই ফল।[১][২]
১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গে ঢাকাকে রাজধানী করে নতুন পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়।[৩] বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বাংলায় শিক্ষার সবচেয়ে উন্নতি ঘটে। কিন্তু ১৯১১ সালের ১ নভেম্বর দিল্লির দরবারে ঘোষণার মাধ্যমে ১২ই ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়।[৩] অবিভক্ত বাংলায় ১৯ টি ডিগ্রি কলেজ ছিল। তার মধ্যে পূর্ব বাংলায় ছিল নয়টি। তবে সেই সংখ্যা পর্যাপ্ত ছিল বলে মনে করেননি তখনকার পূর্ব বাংলার মানুষ।[৪] বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ববঙ্গে শিক্ষার যে জোয়ার এসেছিল, তাতে অচিরেই ঢাকাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা অবধারিত ছিল। বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে সে সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। ১৯১২ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা সফরে আসেন। এই সফরকালে ঢাকার কিছু নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি তার সাথে সাক্ষাৎ করে বঙ্গভঙ্গ রদের কারণে তাদের ক্ষতির কথা জানান। এই ক্ষতি পূরণের লক্ষ্যে ঘোষণা দেন যে তিনি সরকারের কাছে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করবেন।[৫] ১৯১২ সনের মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যারিস্টার রবার্ট নাথানের নেতৃত্বে নাথান কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিটির ২৫ টি সাব কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ভারত সরকার প্রস্তাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রূপরেখা স্থির করে। ভারত সচিব ১৯১৩ সালে নাথান কমিটির রিপোর্ট অনুমোদন দেন। কিন্তু, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পথে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ইমপেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পেশের আহ্ববান জানান। ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর লর্ড চেমস্ফোর্ড কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাসমূহ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। সেই কমিশনের উপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে পরামর্শ দেবার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এই কমিশনের প্রধান ছিলেন মাইকেল স্যাডলার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন (স্যাডলার কমিশন) ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। কিন্তু, এ কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারি বা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় করার নাথান কমিটির প্রস্তাব সমর্থন করেনি। কিন্তু, ঢাকা কলেজের আইন বিভাগের সহাধ্যক্ষ ড. নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল শক্তিরূপে অভিহিত করেন। একই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির অধ্যাপক টি সি উইলিয়ামস অর্থনৈতিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ঢাকা শহরের কলেজগুলোর পরিবর্তে বিভিন্ন আবাসিক হলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিটরূপে গণ্য করার সুপারিশ করে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল হাউসের পাঁচ মাইল ব্যাসার্ধ এলাকাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত এলাকায় গণ্য করার কথাও বলা হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তেরোটি সুপারিশ করেছিল, এবং কিছু রদবদল সহ তা ১৯২০ সালের ভারতীয় আইন সভায় গৃহীত হয়। ভারতের তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল ১৯২০ সালের ২৩শে মার্চ তাতে সম্মতি প্রদান করেন। স্যাডলার কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক রেজিস্টার পি. জে. হার্টগ। তিনি ১৯২০ সালের ১লা ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ১৯২১ সালের ১লা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক ভাবে কার্যক্রম শুরু করে।[৬]
ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ তার ঢাকা সফর শেষে কলকাতা প্রত্যাবর্তন করলে ১৯১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ড. রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল তার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতামূলক একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।[৩][৭] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বিরোধী ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী।[৩][৮] হার্ডিঞ্জ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা থেকে বিরত থাকার মূল্য জানতে চান। মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চারটি নতুন অধ্যাপক পদ সৃষ্টির বিনিময়ে তার বিরোধিতার অবসান করেছিলেন।[৩][৯] ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার তার আত্মস্মৃতিতে লিখেছিলেন ১৯১৯ সালের নতুন আইন অনুসারে বাংলার শিক্ষামন্ত্রী প্রভাসচন্দ্র মিত্র শিক্ষকদের বেতন কমানোর নির্দেশ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় রিজার্ভ ফান্ডে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা ছিল। বাংলা সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদত্ত সরকারি ভবন বাবদ সেগুলো কেটে নেয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রতিবছর মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। ফলে শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দিতে হয়।[৯]
কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক কুলদা রায় বলেন তিন ধরনের লোকজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন।[৫] প্রথম শ্রেণি হল পশ্চিমবঙ্গের একদল মুসলমান, যারা মনে করেছিল ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের কোন লাভ নেই, বরং এতে পূর্ববঙ্গের মুসলমানরাই সুবিধা ভোগ করবে। দ্বিতীয় শ্রেণি হল পশ্চিমবঙ্গের সেই সকল মুসলমান, যারা পূর্ববঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চেয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব আরোপ করেন। ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে মুসলমানদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি বাজেটের পরিমাণ কমে যাবে এবং অর্থের অভাবে পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে যাবে। তৃতীয় শ্রেণি ছিল পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু সম্প্রদায়, যারা মনে করেছিল ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত বাজেট কমে যাবে।[৩][৫]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরোধিতা সম্পর্কে সৈয়দ আবুল মকসুদ তাঁর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা বই[১০] এ লিখেছেন "শ্রেণিস্বার্থে রবীন্দ্রনাথও ছিলেন কার্জনের ওপর অতি ক্ষুব্ধ। কার্জনের উচ্চশিক্ষাসংক্রান্ত মন্তব্যের তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কলকাতার হিন্দু সমাজে। তাতে রবীন্দ্রনাথও অংশগ্রহণ করেন। তিনি যে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন,তাতে কিছু ছিল যুক্তি, বেশির ভাগই ছিল আবেগ এবং কিছু ছিল ক্ষোভ"। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ এক সাক্ষাৎকারে বলেন " কেউ কেউ কোনো প্রমাণ উপস্থিত না করেই লিখিতভাবে জানাচ্ছেন যে, ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ কলকাতায় গড়ের মাঠে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে এক বিরাট জনসভা হয়। ও রকম একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বটে, কিন্তু তাতে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি ছিল অসম্ভব, কেননা সেদিন তিনি কলকাতাতেই ছিলেন না।"[৩] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং গবেষক তৌহিদুল হক বলছিলেন " ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে তিন শ্রেণির মানুষ বিরোধিতা করেছিলেন তাদের মধ্যে আমরা রবীন্দ্রনাথকে তৃতীয় কাতারে রাখতে চাই। কারণ তারা ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের উচ্চবর্ণের কিছু হিন্দু সমাজ। তাঁদের সাথে বিশেষ করে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর সাথে রবীন্দ্রনাথের একাধিকবার বৈঠক,আলোচনা হয়েছে শিলাইদহ যাওয়ার আগেও।এ থেকে আমরা অনুধাবন করতে চাই সেখানে পূর্ববঙ্গের সার্বিক উন্নতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। তবে এরও কোন স্পষ্ট তথ্য প্রমাণ নেই"।[৩]
যাই হোক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় পূর্ব বঙ্গের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও শিক্ষাবিদ নানাপ্রকার প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ঢাকার নবাব নবাব স্যার সলিমুল্লাহ। কিন্তু, হঠাৎ করে ১৯১৫ সালে নবাব সলিমুল্লাহের মৃত্যু ঘটলে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী এই দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। অন্যান্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন আবুল কাশেম ফজলুল হক। পূর্ববঙ্গের হিন্দুরাও এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সমর্থন দেন, তন্মধ্যে অন্যতম ছিলেন ঢাকার বালিয়াটির জমিদার। তার পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে জগন্নাথ হলের নামকরণ করা হয়।[৩][৫]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য পি. জে. হার্টগ তার কার্যভার গ্রহণ করেন। প্রস্তাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে তাকে সাহায্য করেন মি. ডাব্লিউ হোরনেল, স্যার নীলরতন সরকার, স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, নবাব স্যার শামসুল হুদা ও নবাবজাদা খান বাহাদুর কে এম আফজাল। ১৯২১ সালে খান বাহাদুর নাজিরুদ্দীন আহমেদ প্রথম রেজিস্টার হিসেবে নিযুক্ত হন। বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে মোট দশটি সিলেকশন কমিটি গঠন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গ্রন্থাগারিক হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা কলেজে সাবেক অধ্যক্ষ মি এফ সি টার্নার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। ঢাকা সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শামসুল ওলামা আবু নসর ওহীদ অস্থায়ীভাবে ঐ বিভাগের প্রধান হন। তিনি একই সাথে ঢাকা মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদেও বহাল ছিলেন। পরে ঐ পদে ১৯২৪ সালের ১লা জুলাই ড. আবদুস সাত্তার সিদ্দিকী যোগদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্বতন্ত্র সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগ খোলা হয়। এর আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ছিলো ওরিয়েন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজেস বিভাগের অন্তর্গত। সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগের প্রথম অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ্যাবিশারদ, বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন ‘বৌদ্ধ গান ও দোহা’র আবিষ্কারক কলকাতা সংস্কৃত কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (সিআইই)। এ বিভাগের লেকচারার হিসেবে যোগ দেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম কমপারেটিভ ফিললজি বা তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব বিভাগের প্রথম ছাত্র ও এম এ গবেষণা সহকারী মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও বিশিষ্ট লিপি বিশারদ শ্রী রাধাগোবিন্দ বসাক। ইতিহাস বিভাগে যোগদান করেছিলেন ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার ও এ এফ রহমান। পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন বিভাগে উপমহাদেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে সত্যেন্দ্রনাথ বসু, সুরেন্দ্রনাথ ঘোষের নাম উল্লেখযোগ্য। রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম প্রধান ছিলেন জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ। অধ্যাপক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত প্রথম আইন বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯২১ সালের ১লা জুলাই ২৮ জন কলা, ১৭ জন বিজ্ঞান এবং ১৫ জন আইনের শিক্ষক নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। ইংরেজি, সংস্কৃত ও বাংলা, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ, ফার্সি ও উর্দু, ইতিহাস, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, অঙ্ক বা গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন আইন এবং শিক্ষা এই ১২টি বিভাগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু করে। বিভিন্ন বিভাগের বিএ, বিএসসি ও অনার্স এবং এমএ ক্লাসে মোট ৮৪৭ জন ছাত্র নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হয়।[১১] সকল ছাত্রকে কোন না কোন হলে আবাসিক ভাবে থাকতে হত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম তিন বছরের অনার্স চালু হয় যা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু ছিল দুই বছরের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের (বর্তমানে সিনেট) প্রথম বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালের ১৭ আগস্ট অপরাহ্ন ৩.৩০ মিনিটে কোর্ট হাউসে (পুরাতন গভর্নর হাউস বা হাইকোর্ট ভবন)। প্রথম বার্ষিক অধিবেশনের মুলতবি সভা বসে ১৮ আগস্ট ১৯২১ সালে। এ সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিবেচনা করা হয়। এই আইনের খসড়া বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হবার পূর্বেই রচনা করেছিলেন টার্নার, ল্যাংলি এবং জেনকিনস্ সাহেব। কোর্টের এক বিশেষ সভায় (১০ সেপ্টেম্বর; ১৯২১) সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য। এই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় “এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল” (বর্তমানে সিন্ডিকেট) গঠিত হবার কথা ঘোষিত হয়। এর দুই দিন পর ১২ সেপ্টেম্বর ফিনান্স কমিট গঠন করা হয়। ১৯২১ সালে সেপ্টেম্বরে একাডেমিক কাউন্সিলের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২২ সালের ৭ মার্চ একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে একজন সদস্য নির্বাচনের ব্যবস্থার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা হয়। ১৯২৩ সালের ২৩ মার্চ একাডেমিক কাউন্সিল তিন বছরের অনার্স কোর্সের প্রথম চূড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে। ১৯২৩ সালের ১৭ আগস্ট একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মটো বা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় Truth shall prevail অর্থাৎ সত্যের জয় সুনিশ্চিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শুরু থেকেই সুপরিকল্পিত ভাবে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা হয়। অধুনালিপ্ত পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশের রাজধানীর জন্য ঐতিহাসিক বাগ-এ-পাতশাহীতে গড়ে উঠেছিলো রমণীয় রমনা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মনোলোভা দৃশ্যাবলি একদিকে যেমন ছিলো প্রগতিশীলতার ধারক, তেমনি তারুণ্যের উন্মত্ততাকে যেন হাতছানি দিয়েছিলো এক উদাত্ত আহবানে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে কেন্দ্র করে তার পূর্ব পাশে অবস্থিত ঢাকা হল (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল), লিটন হল, কার্জন হল, বিজ্ঞান ভবন সমূহ, ঢাকা হল এর পূর্ব পাশে বিরাট দিঘি, অপর পাশে ফজলুল হক মুসলিম হল। বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে প্রধান প্রবেশ পথ ছিলো ঢাকা হল (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল)- এর দিক থেকে, মাঠে ঢুকতেই ডানে জিমনেসিয়াম আর বামে একটি পুকুর; বিশ্ববিদ্যালয় মাঠটি ত্রিকোণাকৃতি এবং তাতে দুটি ফুটবল গ্রাউন্ড ছিলো। মাঠের উত্তর দক্ষিণ পূর্ব তিনদিক দিয়েই বৃক্ষশোভিত রাজপথ প্রসারিত; বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের দক্ষিণদিকের রাস্তাটি ইউক্যালিপটাস শোভিত, যে রাস্তাটি মুসলিম হল পর্যন্ত সম্প্রসারিত এবং মুসলিম হলের সামনে শিরিষ বা রেইনট্রি জাতীয় বৃক্ষ শোভিত; পুরাতন রেললাইনের সঙ্গে সমান্তরাল সাবেক পূর্ববাংলা ও আসাম সরকারের সেক্রেটারিয়েট ভবন, সামনে ইউক্যালিপটাসশোভিত প্রশস্ত রাজপথ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ময়দান। ঐ সেক্রেটারিয়েট ভবনের দোতলায় প্রথমে মুসলিম হল এবং একতলায় বিজ্ঞান ছাড়া অন্যান্য বিভাগ বিশেষত কলা অনুষদের বিভাগ এবং ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় এ বিশাল ভবনটির পূর্বাংশ ব্যতীত সবটুকুই সামরিক হাসপাতালে এবং দেশবিভাগের পূর্বে মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের উত্তর দিকে প্রবাহিত রাজপথের পাশে ছিলো দুটি কি তিনটি বিরাট লাল ইটের দোতলা বাংলো, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরাই বাস করতেন। এ বাংলোগুলোর পেছনে রমনা রেসকোর্সের দিকে মুখ করে বর্ধমান হাউস ও তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক নিবাস। দেশবিভাগের পরে যা হয়েছিলো, পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী প্রথমে খাজা নাজিমউদ্দিন এবং পরে নূরুল আমীনের বাসভবন। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের জয়লাভের পর ১৯৫৭ সালে একুশ দফার এক দফা অনুযায়ী বর্ধমান হাউস বাংলা একডেমিতে রূপান্তরিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের ভেতরে সে কালে একটি পুকুর (উত্তর পূর্বকোণে) ছাড়াও একটি জঙ্গলাকীর্ণ পুরাতন কবরস্থান ছিলো, যা এখন নেই।[১২]
১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল ঢাকা হল (পরে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল), জগন্নাথ হল এবং মুসলিম হল (পরে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল) নিয়ে। হলগুলো শুধু ছাত্রাবাস রুপেই নয় সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদের শিক্ষা, সমাজ ও সাংস্কৃতিক জীবনে উপযুক্তভাবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা ও অনুশীলন কেন্দ্ররূপেও পরিকল্পিত হয়েছিল। পরিকল্পনায় ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক কোন না কোন হলের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, ছাত্রদের উপদেষ্টারূপে এবং অনুশীলনী ক্লাস নিবেন। প্রত্যেকটি হলকে চারটি হাউসে বিভক্ত করা হয়েছিল চারশত ছাত্রের জন্য আর প্রতি পঁচাত্তরজন ছাত্রের তত্ত্বাবধানের জন্য একজন করে আবাসিক শিক্ষক বা হাউস টিউটরের ব্যবস্থা ছিল। হিন্দু ছাত্রদের জন্য জগন্নাথ হল, মুসলমান ছাত্রদের জন্য সলিমুল্লাহ মুসলিম হল আর সবধর্মের ছাত্রদের জন্য ঢাকা হল স্থাপিত হয়েছিল।
ঢাকা হলের প্রথম প্রভোস্ট ছিলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এফ. সি. সি. টার্নার। শুরুতে একমাত্র ঢাকা হলেরই নিজস্ব ভবনে ছিল; কার্জন হল মিলনায়তনটি তার অধিকারভুক্ত ছিল সে কারণে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের শিক্ষাবহির্ভূত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ঢাকা হল ছাত্র সংসদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। দেশ বিভাগের পর ঢাকা হলই ছিল প্রগতিশীল বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের সূতিকাগার, ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন মহান গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছিল ঢাকা হলের প্রগতিশীল ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামানের শাহাদাতবরণের বিনিময়ে। [১৩]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু মুসলিম ছাত্রদের জন্য স্থাপিত প্রথম হল “সলিমুল্লাহ মুসলিম হল”। এ হলের প্রথম প্রভোস্ট নিযুক্ত হন ইতিহাস বিভাগের রিডার স্যার এ এফ রাহমান। ১৯২৯ সালের ২২ আগস্ট বাংলার গভর্নর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর স্যার স্ট্যানলি জ্যাকসন ঢাকার প্রয়াত নবাব বাহাদুর স্যার সলিমুল্লাহ্র নামানুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের’ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৩১-৩২ শিক্ষাবর্ষে এর ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়।
জগন্নাথ হলের নামকরণ হয় ঢাকার বলিয়াদির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর দানে তার পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে। জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামেই ঢাকার জগন্নাথ কলেজের নামকরণ করা হয়েছিল। জগন্নাথ হলের প্রথম প্রভোস্ট ছিলের আইন বিভাগের প্রথম অধ্যাপক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত। অধ্যাপক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তের উৎসাহে জগন্নাথ হলের প্রথম বার্ষিক সাহিত্যপত্র ‘বাসন্তিকা’ ১৯২৩ সালের প্রথম প্রকাশিত হয়। নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তের পর প্রভোস্ট হন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার।
প্রতিষ্ঠালগ্নে ঢাকা সমাজের রক্ষণশীলতার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রী ভর্তির ব্যাপারে খুব দ্বিধান্বিত ছিলেন। কিন্তু কলকাতা বেথুন কলেজের গ্র্যাজুয়েট লীলা নাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে ছিলেন নাছোড়বান্দা। ১৯২১ সালে লীলা নাগ ইংরেজিতে এমএ ক্লাসে ভর্তি হন এবং ১৯২৩ সালের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ ডিগ্রিধারী হিসেবে বের হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ছাত্রী সুষমা সেনগুপ্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী ছিলেন গণিত বিভাগের ফজিলতুন্নেসা। ধীরে ধীরে ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ছাত্রী হোস্টেলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই উদ্দেশে ১৯২৬ সালের ২৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ নং বাংলো চামেরি হাউস-এ (বর্তমানে সিরডাপ ভবন) প্রথম উইমেনস হাউস প্রতিষ্ঠা করা হয়। উইমেনস হাউস মাত্র তিন জন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। মিসেস পি. নাগ এই হাউসের হাউস টিউটর নিযুক্ত হন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উইমেনস হাউস চামেরি হাউসে ছিল পরে ১৯২৮ সালে তা ১০ নং বাংলোতে (বর্তমানে এস্থানে বিজ্ঞান গ্রন্থাগার অবস্থিত) স্থানান্তরিত হয়। ঐ সময় চামেরি বাংলোটিকে মুসলিম হলের এক্সটেনশন করা হয়। পরবর্তীকালে যে কোন বাংলোতেই হোক না কেন তাকে “চামেরি হাউস” বলে ডাকা হত। ১৯৩৮ সালে মেয়েদের হোস্টেল পুনরায় চামেরি হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৯৪০ সালের ১ জুলাই অবিভক্ত বাংলার তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী এ. কে. ফজলুক হকের নামানুসারে “ফজলুল হক মুসলিম হল” প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভবনের (বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ) যে অংশে সলিমুল্লাহ হলের বর্ধিতাংশ ছিল সেখানে ফজলুল হক হল যাত্রা শুরু করে। ১৯৪২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভবনে সামরিক হাসপাতাল স্থাপিত হলে ১৯৪৩ সালে ফজলুল হক হল বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়, পূর্বে যা ছিল ঢাকা ইন্টারমেডিয়েট কলেজ হোস্টেল। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ফজলুল হক হলের প্রথম প্রভোস্ট আর প্রথম দুইজন হাউস টিউটর কাজী মোতাহার হোসেন এবং আব্দুস সামাদ।
১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা আসেন এবং কার্জন হলে ১০ই ফেব্রুয়ারি দি মিনিং অব আর্ট (The Meaning of Art) এবং ১৩ই ফেব্রুয়ারি দি বিগ অ্যান্ড দি কমপ্লেক্স (The Big and the Complex) বিষয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন। তবে দ্বিতীয় বক্তৃতাটি প্রকাশের সময় এর নতুন নাম দেন "দ্য রুল অব দ্য জায়ান্ট" (The Rule of the Giant)।[১৪] তৎকালীন উপাচার্য জর্জ হ্যারি ল্যাংলি এ দুটি বক্তৃতার সভাপতিত্ব করেন।[১৪] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম তিনটি হল থেকে রবীন্দ্রনাথকে সংবর্ধনা জানানোর আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে রবীন্দ্রনাথ কেবল মুসলিম হলের সংবর্ধনা সভায় যোগদান করতে পেরেছিলেন।[১৪] বাঙালি মুসলমান সমাজে মুক্ত বুদ্ধির চর্চা তথা বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা মুসলিম হল থেকেই এবং তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই। মুসলিম হল ইউনিয়নের কক্ষে ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে এক সভায় ১৯২৬ সালের ১৯শে জ়ানুয়ারি মুসলিম সাহিত্য সমাজ গঠিত হয়।[১৫] এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা ছিলেন অধ্যাপক আবুল হোসেন, তার সঙ্গে ছিলেন আবদুল কাদির, কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী আনোয়ারুল কাদির, শামসুল হুদা, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল প্রমুখ শিক্ষক ও ছাত্র। এ প্রতিষ্ঠানের মূল মন্ত্র ছিল '"বুদ্ধির মুক্তি”। মুসলিম সাহিত্য সমাজের মুখপাত্র ছিল শিখা নামক বার্ষিকী।[১৬] ১৯২৭ সালের ২৭ ও ২৮শে ফেব্রুয়ারি কাজী নজরুল ইসলাম সাহিত্য সমাজের প্রথম বার্ষিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[১৫]
১৯৩৫-৩৬ সালে করুণাকণা গুপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শিক্ষিকা হিসেবে নিযুক্ত হন (প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর)।[১৭] তিনি ইতিহাস বিভাগের সহকারী প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৩২ সালে স্নাতক পর্যায়ে এবং ১৯৩৩ সালে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রথম শ্রেণি অর্জন করেছিলেন।[১৮] তিনি ঐ সময় ছাত্রী সংসদ গঠনের উদ্যোগ নেন এবং তা ছাত্রদের সংসদের সমমর্যাদা অর্জন করেছিল। অল্পকাল পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে তিনি কলকাতার বেথুন কলেজে চলে যান।[১৭] এ সময় ১৯৩৭ সালে চারুপমা বসু ইংরেজি বিভাগের সহকারী প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় মহিলা অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[১৭] ১৯৩৭ সালে প্রথম ছাত্রী সংসদ গঠিত হয় এবং চারুপমা বসু তার সভাপতি, সরমা দত্ত মজুমদার এবং অনুভা সেন যথাক্রমে সাধারণ সম্পাদক ও সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই ছাত্রী সংসদ "সুপর্ণা" নামে ম্যাগাজিন প্রকাশ করে।
ত্রিশের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছরই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এই দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন যথাক্রমে জর্জ হ্যারি ল্যাংলি, এ. এফ. রাহমান ও রমেশচন্দ্র মজুমদার। এই দশকে প্রায় প্রতি বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৩৬ সালে এক বিশেষ সমাবর্তনে স্যার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্যার আবদুর রহিম, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, স্যার প্রফুল্লচন্দ্র রায়, স্যার যদুনাথ সরকার, স্যার মোহাম্মদ ইকবাল এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শারীরিক অসুস্থতার জন্য এই সমাবর্তনে অংশ নিতে পারেননি।[১৪] ১৯৩৬ সালে কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মুসলিম সাহিত্য সমাজের দশম ও শেষ অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন। ১৯৩৮ সালে ‘সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগ’ ভেঙে দুইটি আলাদা ‘সংস্কৃত’ ও ‘বাংলা’ বিভাগ খোলা হয়। ১৯৪০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১,৫৬৯ আর ছাত্রীসংখ্যা ৯৬।[১৯]
১৯৪০ সালের ২৩শে মার্চ লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলমান ছাত্রসমাজের মধ্যে পাকিস্তান আন্দোলন সাড়া জাগায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলমান শিক্ষার্থীরা এই প্রথম দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে সক্রিয় ভাবে যুক্ত হয়।[২০]
১৯৪৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের এক অনুষ্ঠানে সাজসজ্জার প্রতিবাদের মুসলমান ছাত্ররা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ফলে হিন্দু ও মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত দেখা যায়। ১৯৪৩ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি এরকম এক দাঙ্গায় ছুরিকাঘাতে নিহত হন পাক্ষিক পাকিস্তান পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা মুসলিম লীগ ও সাহিত্য সংসদের কর্মী নজির আহমেদ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের দক্ষিণ গেটের কাছাকাছি এক স্থানে মারামারি চলছিল। নজির আহমেদ সেটা থামাতে গিয়ে নিজেই আঘাত পান। তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যার দিকে তিনি মারা যান। কবি জসীমউদ্দীন হাসপাতালে সর্বক্ষণ তার পাশে ছিলেন। এসময়ে আরও একজন মুসলমান ছাত্র মোতাহার হোসেন ক্যাম্পাসে ছুরিকাবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান।[২১]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্যাম্পাসের অধিকাংশ ভবন সেনাবাহিনীর দখলে চলে যায়। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংকুচিত হয়ে পড়ে ঢাকা হল (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল), ফজলুল হক হল এবং কার্জন হল এলাকার ভবনগুলোতে। তেতাল্লিশের মম্বন্তরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসংখ্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে প্রগতি লেখক সংঘের কর্মকাণ্ড বিকশিত হয়। এ সংঘের সক্রিয় কর্মীদের মধ্যে ছিলেন মুনীর চৌধুরী, শামসুর রহমান খান, সুলতানুজ্জামান খান, অরবিন্দ সেন, মদনমোহন বসাক, কল্যাণ দাশগুপ্ত, আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন প্রমুখ।[২২]
১৯৪৩ সালের শেষ দিকে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কাউন্সিলে আবুল হাশিম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৪ সালে আবুল হাশিম ঢাকায় আসেন এবং ১৫০ নং মোগলটুলীতে ৯ই এপ্রিল শামসুল হকের নেতৃত্বে মুসলিম লীগ কর্মী-শিবির স্থাপিত হয়। এই কর্মী শিবির থেকেই পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিরোধী দলের সূচনা হয়েছিল, জন্ম হয়েছিল ‘ছাত্রলীগ’ ও ‘আওয়ামী মুসলিম লীগের’। এই কর্মী শিবিরের অধিকাংশ কর্মী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। ১৯৪৬ নির্বাচনে মুসলিম লীগ শতকরা ৯৭ ভাগ আসন গ্রহণ করেছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্ম হয়। কিন্তু, ধীরে ধীরে মুসলিম লীগ খাজা নাজিমুদ্দিন, নুরুল আমিন ও ইউসুফ আলী চৌধুরীর পকেট প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। এর প্রতিবিধানের জন্য ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে ১৫০ নং মোগলটুলিতে শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমেদ এক কর্মী সম্মেলন আহ্ববান করেন। মূলত, এই সম্মেলনেই আওয়ামী মুসলিম লীগের সূচনা হয়। সূচনা পর্বে যারা নেতৃত্ব দেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।[২৩]
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বেই আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন। এর বিপক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে তমদ্দুন মজলিস বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার দাবিতে প্রচারাভিযান শুরু করে। পাকিস্তানের গণপরিষদে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা স্বীকৃতি না পাওয়ায় ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ প্রতিবাদসভা, সাধারণ ধর্মঘট ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ঐ দিন পুলিশ ছাত্রদের বাধা দেয় এবং কয়েকজন ছাত্রকে গ্রেফতার করে। বন্দি নেতাদের মধ্যে ছিলেন শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ, শওকত আলি, কাজী গোলাম মাহবুব প্রমুখ। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্রে করে সারাদেশে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। ফলশ্রুতিতে, প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ১৫ই মার্চ ছাত্রদের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর চারদিন পর পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা শহরে আসেন এবং ২১শে মার্চ ঢাকা ঘোড়দৌড় ময়দানে এক জনসভায় বক্তৃতা করেন এবং উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার স্পষ্ট ঘোষণা দেন। ২৪শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানেও জিন্নাহ তার ভাষণের পুনরাবৃত্তি করেন।[২০] এখানে তিনি বলেন,
... রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশের যোগাযোগের ভাষা হিসেবে একটি ভাষা থাকবে এবং সে ভাষা হবে উর্দু অন্য কোন ভাষা নয়। কাজেই স্বাভাবিকভাবে রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, যা এই উপমহাদেশের লক্ষ লক্ষ মুসলমানের দ্বারা পুষ্ট হয়েছে, যা পাকিস্তানের এক থেকে অন্য প্রান্ত সকলেই বোঝে এবং সর্বোপরি যার মধ্যে অন্য যে কোন প্রাদেশিক ভাষা থেকে অধিক ইসলামী সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য বাস্তব রূপ লাভ করেছে এবং যে ভাষা অন্যান্য ইসলামী দেশগুলিতে ব্যবহৃত ভাষার সর্বাপেক্ষা কাছাকাছি।[২৪]
ছাত্রসমাজ তাৎক্ষণিক এই ভাষণের প্রতিবাদ জানায়। ২৪শে মার্চ রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল জিন্নাহ্র সাথে সাক্ষাৎ করেন ও বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন শামসুল হক, কামরুদ্দিন আহমেদ, আবুল কাশেম, তাজউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, আজিজ আহমদ, অলি আহাদ, নঈমুদ্দিন আহমদ, শামসুল আলম এবং নজরুল ইসলাম।[২০]
১৯৪৮ সালের ৭ই নভেম্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে এক ছাত্রসভায় ভাষণ দেন। এই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের তরফ থেকে বাংলা ভাষার দাবি পুনরায় উত্থাপন করা হয়। কিন্তু লিয়াকত আলি খান কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।[২৪]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ-শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে ১৯৪৮ সালের ৩রা মার্চ থেকে ধর্মঘট শুরু হয়। ছাত্ররা তাদের সমর্থন করেন এবং ৫ই মার্চ পর্যন্ত ছাত্র ধর্মঘট চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত হয়। কর্তৃপক্ষের মৌখিক আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ই মার্চ থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২৭ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৫ টাকা জরিমানা। তিনি জরিমানা না দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হন।[২৫] এই সময়ই শেখ মুজিব গ্রেফতার হন এবং ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের আন্দোলনের সময় কারাগারে অনশন ধর্মঘট করেন।[২৬]
১৯৪৮ সালে করাচিতে অনুষ্ঠিত নিখিল পাকিস্তান শিক্ষক সম্মেলনে পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান ইসলামী আদর্শের খাতিরে বাংলা ভাষার জন্য ‘আরবি হরফ’ গ্রহণের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। বাংলায় আরবি হরফ প্রচলনের জন্য ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্কে নিয়োগ দেবার জন্য তাকে একটি পত্র প্রেরণ করা হয়। ড. শহীদুল্লাহ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৪৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবন ও ইকবাল হলে ছাত্রদের প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান সরকার এই চেষ্টা কিছুদিন যাবৎ করলেও পরে সফল হতে পারেননি।[২৭]
১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগের অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে ঘোষণা করেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, তখন ঢাকায় ছাত্রসমাজ এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে। প্রতিবাদস্বরুপ ৩০শে জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয় এবং আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আওয়ামী মুসলিম লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ, খিলাফতে রব্বানী পার্টির প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘সর্বদলীয় কর্মপরিষদ’ গঠিত হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি পুনরায় ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয় এবং স্থির হয় ২১শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবসরুপে পালিত হবে। ২০শে ফেব্রুয়ারি সন্ধায় নুরুল আমিন সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। নবাবপুরে আওয়ামী লীগ অফিসে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে ১৪৪ ধারা না ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করতে বদ্ধপরিকর ছিল। সংগ্রাম পরিষদের সভায় আবদুল মতিন, অলি আহাদ ও গোলাম মওলা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে ভোট দেন। ছাত্ররা ১০ জনের অসংখ্য দলে বিভক্ত হয়ে শৃঙ্খলার সঙ্গে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়। ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা ১১৪ ধারা ভাঙ্গা শুরু করলে ছাত্রদের সাথে পুলিশের খন্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ও দিকে বিকাল তিনটার দিকে আইন পরিষদে বাজেট অধিবেশন শুরু হবার কথা ছিল। ছাত্ররা ভাষার দাবিতে পরিষদ ভবনের দিকে যেতে শুরু করে, কিন্তু পুলিশ বাধা দেয় ও একপর্যায়ে গুলি বর্ষন শুরু করে। প্রথম দফা গুলিতে রফিকউদ্দিন ও জব্বার নিহত হয়। দ্বিতীয় দফা গুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবুল বরকত আহত হয় ও রাতে নিহত হন। ২২শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে গায়েবি জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং ছাত্ররা এক বিরাট শোক শোভাযাত্রা বের করে। হাইকোর্ট ও কার্জন হলের মাঝামাঝি রাস্তায় পুলিশ ছাত্রদের বাধা দেয় এবং গুলি চালায়। এ সময় শফিউর রহমান ও রিকশাচালক আউয়াল নিহত হন। ২৩শে ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে। ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে অনানুষ্ঠানিক ভাবে শহীদ শফিউর রহমানে পিতা এবং ২৬শে ফেব্রুয়ারি আবুল কালাম শামসুদ্দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেছিলেন। ইতিমধ্যে পুলিশ নিরাপত্তা আইনে আবুল হাশিম, আবদুল হামিদ খান ভাসানী, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক অজিতকুমার গুহ, পুলিন দে, অধ্যাপক পৃথ্বিশ চক্রবর্তী, অলি আহাদ প্রমুখকে গ্রেফতার করে। নুরুল আমিন সরকার ভাষা আন্দোলনকারীদের ‘ভারতের চর’, ‘হিন্দু’, ‘কমিউনিস্ট’ ইত্যাদি আখ্যা দেয়।[২৮]
১৯৫৩ সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (ডাসু) নাম পরিবর্তন করে ঢাকা ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (ডাকসু) করা হয়।[২৯] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল সংসদের বাৎসরিক নির্বাচনে গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। সেবারেই প্রথম মুসলিম লীগের অঙ্গ ছাত্র সংগঠন নিখিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের মনোনীত প্রার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল ইউনিয়ন ও ডাকসুর নির্বাচনে গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট প্রার্থীদের নিকট শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। সরকার ১৯৫৫ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস পালনে বাধা দেয়। সেদিন কেউ হতাহত না হলেও এত অধিক সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থান সংকুলান না হওয়ায় তাদের লালবাগ কেল্লায় অবস্থিত তদানীন্তন পুলিশ হেডকোয়ার্টারে তাঁবু খাটিয়ে আটক করে রাখা হয়েছিল। ১৯৫৭ সাল থেকে হামিদুর রহমান ও নভেরা আহমেদের চূড়ান্ত নকশা অনুসারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৬৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি এর উদ্বোধন করা হয়।[৩০] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হুসাইনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এর সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করেছিল।[৩১]
১৯৫০ সালের ২৩শে ডিসেম্বর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন উপাচার্য ড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন। এই দশকে ১৯৫০, ৫২, ৫৪, ৫৫, ৫৭, ৫৮, ৫৯ সালে মোট সাতটি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালের সমাবর্তনের তারিখ নির্দিষ্ট ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি, কিন্তু ২১শে ফেব্রুয়ারির ঘটনায় তা হতে পারেনি। সে বছর ১৭ই ডিসেম্বর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।[৩২]
ষাটের দশকের শুরুতে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ শুরু হয় উপাচার্য ড. মাহমুদ হোসেন ও আচার্য জেনারেল আযম খানের তত্ত্বাবধানে। ১৯২১ সালের পর এই প্রথম উন্নয়ন কার্য শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই সময়ই ১৯৫৮ সাল থেকে অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ শেষ হয়। গভর্নর জেনারেল আযম খান ড. মাহমুদ হোসেনকে সভাপতি এবং অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীকে সদস্য সম্পাদক করে যে কমিটি গঠন করে, সে কমিটির সুপারিশ ক্রমেই শহীদ মিনারের কাজ শেষ হয়।[৩৩] ১৯৬১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনে বাধা দেওয়া হয়। কিন্তু আইয়ুব সরকারের সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকদের উদ্যোগে বিচারপতি মাহবুব মোর্শেদ ও অধ্যাপক খান সারওয়ার মোর্শেদের নেতৃত্বে গঠিত ডু কেন্দ্রিক রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী কমিটি মহাসমারোহে রবীন্দ্র জন্ম-শতবার্ষিকী উদ্যাপন করে।[৩৪]
এই দশকেই পাকিস্তানের দুই অংশের জন্য পৃথক অর্থনীতি প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদরা প্রচার করতে থাকেন। ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের পূর্ব অংশে প্রচন্ড ছাত্র বিক্ষোভের সূচনা ঘটে। ১৯৬২-৬৩ সালে ছাত্র বিক্ষোভ এমন আকার ধারণ করে যে সে বছর সর্বমোট ২৭ দিনের বেশি ক্লাস হয়নি। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের মেনন ও মতিয়া গ্রুপের ছাত্রছাত্রীরা। ১৯৬২ সালের অক্টোবর মাসে আবদুল মোনায়েম খান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হয়ে আসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাহমুদ হোসেন মোনায়েম খানের কথা মত ছাত্র আন্দোলন বন্ধে উদ্যোগ না নিয়ে পদত্যাগ করেন। এরপর ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম ওসমান গনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়ে আসেন। ঐ সময় আইয়ুব বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করার জন্য মোনায়েম খান ‘জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন’ (এনএসএফ) নামে একটি সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী গঠন করে। এনএসএফ ১৯৬৩ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। ১৯৬৬ সালে এনএসএফ সন্ত্রাসীরা অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবু মাহমুদকে আহত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষক সমাজ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। [৩৫]
১৯৬০ সালের সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১১ জানুয়ারি। এই সমাবর্তনের উপাচার্য ছিলেন বিচারপতি হামুদুর রহমান ও প্রধান অতিথি ছিলেন পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান। ১৯৬১ সালে সমাবর্তনে আচার্য ছিলেন লেফটেনেন্ট জেনারেল আযম খান। ১৯৬৪ সালের ২২ মার্চ সমাবর্তনে উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. এম ওসমান গনি ও চ্যান্সেলর আবদুল মোনায়েম খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোন সমাবর্তনে আচার্য ও উপাচার্য উভয়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। কিন্তু, মোনায়েম খানের কাছ থেকে ডিগ্রি নিতে ছাত্র ছাত্রীরা অস্বীকার করলে এই সমাবর্তন পণ্ড হয়ে যায়। ১৯৭০ সালের ৮ই মার্চ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৯তম সমাবর্তন হয়েছিলো, এটিই ছিলো পাকিস্তান আমলের সর্বশেষ সমাবর্তন; এরপর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের কারণে কোনো সমাবর্তন হয়নি।[৩৩][৩৬]
১৯৬৭ সালে আইয়ুব সরকার পূর্ব পাকিস্তানের কয়েকজন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোয়াজ্জেম হোসেনকে আসামি করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে। কয়েকদিন পর শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করা হয়। এই মামলার প্রতিক্রিয়ায় সমগ্র পূর্ব বাংলা ফেটে পড়ে এবং এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ দফার ভিত্তিতে গঠিত সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ।[৩৭]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-সহ ছাত্র সংগ্রাম কমিটির পূর্ব বাংলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ঊনসত্তরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সে সময়ে ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ছিলেন তোফায়েল আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপ, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া গ্রুপ, ডাকসুর সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নাজিম কামরান চৌধুরী ১১ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেন। পরে জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের একটি অংশও এতে যোগ দান করে। ১৯৬৯ সালে ৪ঠা জানুয়ারি এই কর্মসূচি ঘোষিত হয়। এরপর ১০জন ছাত্র নেতার সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে আন্দোলন শুরু হয়।[৩৮]
১৯৬৯ সালের ১৭ই জানুয়ারি ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার ঘোষণা দেয়া হয়। এর প্রতিবাদে ১৮ই জানুয়ারি কর্মসূচি দেয়া হয়। ওই কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছিল। ২০শে জানুয়ারি এর প্রতিবাদে চানখাঁরপুল এলাকায় এক মিছিলে গুলিতে মারা যান আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আসাদ।[৩৯] আসাদের মৃত্যুর প্রতিবাদে ২১শে জানুয়ারি কলাভবনে কর্মসূচি পালন করা হয়।[৩৮]
১৯৬৯ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় ভাষা-ভিত্তিক জাতীয়তার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করা হয়। গণঅভ্যুত্থানের প্রবল চাপে আইয়ুব খান ঘোষণা করেন যে, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। ২২শে ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানসহ মামলার অভিযুক্তদের মুক্তি দেয়া হয়। ২৩শে ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শেখ মুজিবকে সংবর্ধনা দেয়া হয় এবং তোফায়েল আহমেদ তাকে "বঙ্গবন্ধু" উপাধিতে ভূষিত করেন।[৩৮]
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। একাত্তরে পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনী বাঙালি সৈনিক, বৈমানিক ও ছাত্রছাত্রীগণকে একই পর্যায়ভুক্ত করে আক্রমণ চালিয়েছিল। এই অপারেশনের নাম ছিল “অপারেশন সার্চলাইট”। এইচ আওয়ার নির্ধারিত হয়েছিল ২৬ মার্চ রাত ১ টা। ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনাবাহিনী প্রথম প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় ফার্মগেটে। রাস্তায় পড়ে থাকা একটি বিশাল গাছ বাহিনীর গতিরোধ করে, রাস্তার পাশের এলাকা পুরানো গাড়ি আর স্টিম রোলার দিয়ে বন্ধ ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম হলের ছাত্ররা হলের সামনে একটি বড় গাছের গুঁড়ি ফেলে রেখে সেনাবাহিনীকে বাধা দেয়। সকাল ৪টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভবনগুলো দখল করে নেয় তারা। ১৮ নং পাঞ্জাব, ২২ নং বেলুচ এবং ৩২ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্টের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন নিয়ে গঠিত বিশেষ মোবাইল বাহিনী লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজের নেতৃত্বে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, ট্যাংক বিধ্বংসী রিকয়েললেস রাইফেল, রকেট লঞ্চার, মর্টার, ভারি ও হালকা মেশিনগানে সজ্জিত হয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ সকাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘেরাও করে আক্রমণ, পাইকারি হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ঐ রাতে দৈবক্রমে পাকিস্তানি আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া অধ্যাপক ড. মফিজুল্লাহ্ কবির তার ১৯৭১-৭২ সালের বার্ষিক রিপোর্টে লেখেন, ঐ রাতে ছাত্র সহ প্রায় ৩০০ ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিহত হয়। সেই সাথে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক ও ২৬ জন অন্যান্য কর্মচারী। নিহত শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন, ড. ফজলুর রহমান (মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগ), অধ্যাপক এ. আর. খান খাদিম (গণিত বিভাগ), অধ্যাপক শরাফত আলী, ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব (প্রাক্তন প্রভোস্ট জগন্নাথ হল), অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা (প্রভোস্ট জগন্নাথ হল), অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, অধ্যাপক মুহম্মদ মুকতাদির (ভূতত্ত্ব) প্রমুখ। সবচেয়ে নারকীয় ঘটনা ঘটে জগন্নাথ হলে, সেই রাতে ৩৪ জন ছাত্র শুধু সেই হলেই নিহত হয়। ২৬ মার্চ রমনা কালীবাড়িও আক্রান্ত হয়। সেস্থলে নিহত হয় জগন্নাথ হলের ৫/৬ জন ছাত্র। হানাদার বাহিনী হত্যা করে মধুর ক্যান্টিন খ্যাত মধুসূদন দে’কেও (মধুদা)। মুক্তিযুদ্ধ কালীন পাকিস্তানি সৈন্যরা মধুর ক্যান্টিন ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিতে শুরু করলে উর্দু বিভাগের শিক্ষক আফতাব আহমদ সিদ্দিকী খবর পেয়ে তাদের বাধা দেন এবং জানান যে এই ভবনেই ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১০ নভেম্বর সশস্ত্র সৈন্যরা রোকেয়া হলে প্রবেশ করে এবং ত্রিশজন ছাত্রীর উপর নির্যাতন করে। তারা প্রভোস্টের বাংলোও অবরোধ করে রাখে।
একাত্তরের মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অধিবেশনে যোগদানের জন্য জেনেভা যান। সেখানে জেনেভার একটি পত্রিকায় দু’জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মৃত্যুসংবাদ দেখে বিচলিত হয়ে ২৫ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক শিক্ষাসচিবকে পাকিস্তান দূতাবাসের মাধ্যমে প্রেরিত এক পত্রে লেখেন, “আমার নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর গুলি চালানোর পর আমার ভাইস চ্যান্সেলর থাকার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। তাই আমি পদত্যাগ করলাম”। ফলে মার্চের সেই কালরাত্রিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল উপাচার্য বিহীন। পরে মুজিবনগর সরকার বিচারপতি সাঈদকে “প্রবাসী সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি” হিসেবে নিয়োগ দেয়। পাকিস্তান বাহিনী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েনকে তাদের কনভয়ে করে ঢাকায় নিয়ে এসে ১৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে বসান। তাকে সহায়তা করেন ড. হাসান জামান, ড. মেহের আলি। স্বাধীনতার পর তিনজনই গ্রেফতার হন এবং মুক্তির পর দেশ ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। এদের অনেকেই পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর যান এবং প্রবাসী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাবার পরে টিক্কা খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগীয় প্রধানদের ২১ এপ্রিল ও সকল শিক্ষকদের ১ জুন কাজে যোগ দিতে বলেন। টিক্কা খান ২ আগস্ট থেকে সকল ক্লাস চালু করারও আদেশ জারি করেন। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে কয়েকজন শিক্ষককে গ্রেফতার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করা হয় এবং ইন্টারোগেশনের মাধ্যমে নির্যাতন করা হয়। এদের মধ্যে ছিলেন ড. আবুল খায়ের, ড. রফিকুল ইসলাম, কে এ এম সাদউদ্দিন, আহসানুল হক এবং এম শহীদুল্লাহ। টিক্কা খান অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ড. নীলিমা ইব্রাহিম, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ড. এনামুল হককে লিখিত ভাবে সতর্ক করে দেন। ড. আবু মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহকে পদচ্যুত করা হয়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যাত্রা শুরু হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অবদান অপর কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের একক অবদান তার সমকক্ষ নয়। দেশ স্বাধীন হবার পর ১৭ ডিসেম্বর থেকে আল-বদর বাহিনী কর্তৃক অপহৃত শিক্ষকদের অনুসন্ধান শুরু হয়। মিরপুর, রায়ের বাজার, মোহাম্মদপুরের বধ্যভূমি থেকে যে সব শিক্ষকের লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল তাদের দাফন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গনে। মসজিদ প্রাঙ্গনেই শহীদ শিক্ষকদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এতে যোগ দেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম উপাচার্য হন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মোজাফফর আহমদ চৌধুরী। পদাধিকার বলে তিনি ছিলেন স্বাধীনতার পর ডাকসুর প্রথম সভাপতি। আ স ম আবদুর রব ও আবদুল কুদ্দুস মাখন ছিলেন যথাক্রমে ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি ও জিএস। স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্র সমস্যা দেখা দেয় মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে অটো প্রমোশনের দাবিতে একাডেমির কাউন্সেলের সদস্যদের ঘেরাও করার ঘটনায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করেন। শেখ মুজিব তাদের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়তে আসেন এবং শিক্ষকদের মুক্ত করে ছাত্রদের তিরস্কার করেন। ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে কলকাতা রবীন্দ্রসদন সম্মুখস্ত মাঠে আয়োজিত হয় প্রথম ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী মেলা’। ডাকসুকে আমন্ত্রণ জানানো হয় ছাত্রছাত্রীদের অভিনীত একটি নাটক মৈত্রী মেলায় মঞ্চস্থ করার জন্য। সেখানে মুনীর চৌধুরীর বাণার্ড শ’য়ের ‘নেভার ক্যান টেল’ এর বাংলা রুপান্তর ‘কেউ কিছু বলতে পারে না’ নাটকটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীরা মঞ্চস্থ করে। ১৯৭২ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সফরে আসেন। ডাকসু থেকে তাকে আজীবন সদস্য পদ দেওয়া হয়, সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯৪৯ সালের নিম্ন কর্মচারীদের ধর্মঘটের সময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত শেখ মুজিবুর রহমানের বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করে।
১৯৭৩ সালের ২০ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের সময় ইউরোপে বাংলাদেশের বড় শুভাকাঙ্খি ফরাসি দার্শনিক আঁদ্রে মালরো বাংলাদেশে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে তাকে উষ্ণ সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিশেষ সমাবর্তনে অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু (মরণোত্তর), ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (মরণোত্তর), কাজী নজরুল ইসলাম, ওস্তাব আলী আকবর খান, ড. হিরেন্দ্রলাল দে, ড. মুহম্মদ কুদরত-ই-খুদা, অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন ও অধ্যাপক আবুল ফজলকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দান করা হয়।
গনপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৫ সালে জাতীয় অধ্যাপক পদ প্রচলন করে এবং ঐ বছর ১৮ মার্চ তিনজনকে ঐ পদে নিযুক্ত করা হয়। এরা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক আর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট সকাল ১০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের আনুষ্ঠানিক ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন এবং টিএসসিতে শিক্ষকদের উদ্দেশে ভাষণ প্রদানের কথা ছিল। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা পূর্বে শেখ মুজিবুর রহমান তার ৩২ নং ধানমন্ডি রোডের বাড়িতে সপরিবারে নিহত হন। খন্দকার মোশতাক আহমদের সরকার ১৯৭৫ এর ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মতিন চৌধুরীকে অব্যহতি প্রদান ও পরে গ্রেফতার করে। ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বর প্রথম প্রধান ও পরে উপ প্রধান সামরিক প্রশাসক রুপে জেনারেল জিয়াউর রহমান দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে ১৯৭৬ এর ২৯ আগস্ট বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ঢাকার পিজি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গনে তাকে দাফন করা হয়। সেদিন অপরাহ্নে জানাজা নামাজ আদায়ের পর রাষ্ট্রপতি সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, রিয়াল এডমিরাল এম এইচ খান, এয়ার ভাইস মার্শাল এ জি মাহমুদ, মেজর জেনারেল দস্তগীর জাতীয় পতাকা মণ্ডিত নজরুলের মরদেহ সোহরাওয়ার্দী ময়দান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গনে নিয়ে যান। বিকেল পাঁচটায় কবির লাশ দাফন করা হয়। জেনারেল জিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. মুজাফফর আহমদকে বাংলাদেশ সরকারের বস্ত্র উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। জিয়ার শাসনামলে ১৯৭৬ সালে ছাত্র ইউনিয়ন তার সাথে পুরাতন ব্রম্মপুত্র নদ খনন কার্যে অংশ গ্রহণ করেন। জেনারেল জিয়া বাংলাদেশে একুশে পদক প্রবর্তন করেন ও কাজী নজরুল ইসলামকে (মরণোত্তর) সেই পুরস্কার প্রথম প্রদান করেন। ১৯৭৮ সালের ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন করেন। জেনারেল জিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে তার মন্ত্রী সভায় স্থান দেন।
১৯৮১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট পালিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ধর্মঘট শুরু হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি; শেষ পর্যন্ত ১৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স সংশোধনী গৃহীত হলে শিক্ষক ধর্মঘটের অবসান ঘটে।[৪০] এ দিকে ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সেনাবাহিনীর কতিপয় বিদ্রোহী অফিসারের এক অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করে। সামরিক সরকার ছাত্র আন্দোলন বাধা দিতে চেষ্টা করে ও অনেক ছাত্রকে গ্রেফতার করে। ১৯৮২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ‘শিক্ষা দিবসে’ সামরিক সরকার ছাত্রদের শহীদ মিনারে ফুল দিতে বাধা দেয় এবং একজন ছাত্রকে গ্রেফতার করে। ৮ নভেম্বর ‘সিপাহী বিপ্লব দিবস’ পালন উপলক্ষে কলা ভবন প্রাঙ্গণে জাসদ ছাত্রলীগের শোভাযাত্রার ওপর পুলিশ হামলা চালায় ফলে ছাত্র পুলিশ সংঘর্ষ বেধে যায়। ১৯৮২ সালের ১৪ নভেম্বর অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছাত্র সমাবেশে ২৯ নভেম্বর দেশব্যাপি দাবি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। ঐ দিবসে ছাত্রনেতারা সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্ববান জানায়। ১৯৮৩ সালের ১৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফজলুল হালিম চৌধুরীকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।[৪১] ঐ বছর ৮ ডিসেম্বর সকাল সন্ধ্যা দেশব্যাপি সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। ছাত্রনেতা রাউফুন বসুনীয়া অজ্ঞাত আততায়ীর গুলিতে স্যার এ এফ রাহমান হলের নিকটে নিহত হন।[৪২][৪৩] ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর জগন্নাথ হল মিলনায়তনে (পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাংলা এসেম্বলির জন্য সংস্কারকৃত) টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে ছাঁদ ভেঙ্গে পড়লে ৩৪ জন ছাত্রের তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয়। পরে এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পায়।[৪৪] ১৯৮৬ এর ৩০ নভেম্বর বাকশালের ছাত্র সংঘঠন জাতীয় ছাত্রলীগ নেতা রাউফুল বাসুনিয়া হত্যা মামলা সরকার তুলে নেয়, প্রতিবাদে ঐ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হরতাল পালিত হয়। ঐ বছর ১ ডিসেম্বর এরশাদ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিষিদ্ধ করে। [৪৫]
মূলতঃ, সম্পূর্ণ আশির দশক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল ছিল। এই দশকে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণের[৪৬] পর থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অবাঞ্ছিত কারণে মোট ৩৪৮ দিন বন্ধ ছিল। [৪৭]
এসময়ে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে সাধারণ জনসাধারণের সাথে সোচ্চার হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১০ অক্টোবর গণতন্ত্রের মুক্তির দাবিতে মিছিলে যোগদান করে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। পুলিশের গুলিতে শহিদ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেহাদ নামের একজন ছাত্র। পুলিশ এসে তার লাশ সরিয়ে ফেলার আগেই কয়েকজন ছাত্র জেহাদের লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। সেই লাশ এনে রাখা হয় অপরাজেয় বাংলার সামনে। শত শত ছাত্র-ছাত্রী জড়ো হয় লাশ দেখার জন্য। এবং সেই মুহূর্তে উপস্থিত সকল ছাত্র গণতন্ত্রের মুক্তির পক্ষে একাত্মতা ঘোষণা করে। ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ একত্রিত হয়ে সৃষ্টি করে সর্বদলীয় ছাত্র জোট। সর্বদলীয় ছাত্র জোটের প্রধান ছিলেন ১১ জন ছাত্র। ২৬ নভেম্বর শহীদ মিনারে আয়োজিত একটি সভায় এই ১১ জন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্র একত্রিত হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। পরবর্তী বিজয়দিবস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।
এই দশকের শুরুতে উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী। তার দায়িত্ব পালনকালে ২০০২ সালের ২৩শে জুলাই রাতে শামসুন্নাহার হলের পুলিশী হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগ দাবী করে। এতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপে তিনি পদত্যাগ করেন।[৪৮] তার পদত্যাগের পর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আ ফ ম ইউসুফ হায়দার।
এই দশকের প্রায় পুরো সময় উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।[৪৯] তিনি ২০০৯ সাল থকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন। তার সময়ে অন্যতম আলোচিত ঘটনা আবু বকর হত্যাকাণ্ড। ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে স্যার এ এফ রহমান হলে সিট দখল নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় গুরুতর আহত হন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবু বকর এবং এর পরের দিন তিনি মারা যান।[৫০] ২০১০ সালের ১৪ আগস্ট উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৪৯ সালের ছাত্রত্ব বাতিলের আদেশ প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন। অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক এই ঘোষণাকে ঐতিহাসিক বলে বর্ণনা করেন।[৫১] উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিকের মেয়াদ শেষে ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।[৫২] পরবর্তীতে, ২০১৯ সালের নভেম্বরে থেকে তিনি আরও ৪ বছরের পূর্ণ মেয়াদের জন্য উপাচার্যের দায়িত্ব পান।[৫৩] ২০১৮ সালের প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কোটা সংস্কার নামক একটি আন্দোলন শুরু হতে থাকে, যার উদ্দেশ্য ছিল সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির সংস্কার করা। এই আন্দোলন পরে কোটা সংস্কার আন্দোলন নামে পরিচিতি পায়। উক্ত আন্দোলন চলাকালে, ৯ এপ্রিল দিবাগত রাতে, উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় একদল দুর্বৃত্ত। এই হামলায় উপাচার্যের বাসভবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়।[৫৪] তখন কেউ কেউ বলছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এই হামলা চালিয়েছে যদিও আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই হামলা চালিয়েছে ‘বহিরাগত সন্ত্রাসীরা’। পরবর্তীতে উপাচার্য বলেছেন যে এই হামলা ও ভাঙচুরের সাথে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই বরং তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়েছিল।[৫৫] এই হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে যেগুলো এখন বিচারাধীন।[৫৬] ২০১৯ সালের ১১ মার্চ দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে কোটা আন্দোলনের নেতা হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী নুরুল হক নুর ভিপি পদে বিজয়ী হন। অন্যদিকে, জিএস পদে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত সম্মিলিত শিক্ষার্থী প্যানেলের গোলাম রাব্বানি এবং এজিএস পদে একই প্যানেলের সাদ্দাম হোসেন বিজয়ী হন। যদিও, নির্বাচনে ভোট কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত সম্মিলিত শিক্ষার্থী প্যানেল ছাড়া বাকি সব প্যানেল ভোট বর্জন করে পুনঃতফসিলের দাবি জানিয়েছিল।[৫৭] ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান ঘোষণা দেন যে, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘ডক্টর অব লজ ডিগ্রি (মরণোত্তর) প্রদান করা হবে।[৫৮]
২০১০-এর দশকে সমাবর্তন
প্রতিষ্ঠার ৯৯তম বছর শেষ করে ২০২০ সালের ১লা জুলাই শতবর্ষে পা দিয়েছে দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠ।[৬৯] ১৯২১ সালের ১লা জুলাই প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষা ও গবেষণা, মুক্তচিন্তার উন্মেষ ও বিকাশ এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১লা জুলাই ২০২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আয়োজনের প্রস্তুতি থাকলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে লোকসমাবেশ এড়িয়ে স্বল্প পরিসরে প্রতিষ্ঠা বার্ষিক আয়োজনের কথা বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।[৭০] শততম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এক শুভেচ্ছা বাণীতে বলেন "অকৃত্রিম শ্রদ্ধা জানাই তাদের প্রতি যাদের অনবদ্য অবদানে বিশ্ববিদ্যালয়টি চলতে চলতে আজ মহীরুহে। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের প্রতি - শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শুভানুধ্যায়ীদের"।[৭১][৭২]
করোনার কারণে শতবর্ষের মূল অনুষ্ঠান পিছিয়ে ১ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে আয়োজন করা হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত শতবর্ষপূর্তি ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব করা হয়। এ উপলক্ষে বর্ণিল আলোয় সাজানো হয় পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে টিএসসি, কার্জন হল, কলাভবন, মল চত্বর, বটতলা এবং আবাসিক হলগুলোসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রবেশদ্বার ও সড়কে আলোক-সজ্জার ব্যবস্থা করা হয়। ‘শতবর্ষের আলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে আলোক বাক্স ও রঙিন প্ল্যাকার্ডে উৎসবের আমেজে পুরো ক্যাম্পাস সাজানো হয়। এ উপলক্ষে স্মরণিকা, বিশেষ প্রকাশনা, স্মারকস্তম্ভ নির্মাণসহ নানা ধরনের কর্মসূচির মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানা ধরনের প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়। গান, নৃত্য, নাটক এবং বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।[৭৩][৭৪]
১৯২১ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যক্ট ১৯২০” দ্বারা পরিচালিত হয়েছে।[৭৫] ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক চরিত্র বদলে যায় এবং পূর্ব বাংলার কলেজগুলি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় এখন মঞ্জুরি প্রদানের ক্ষমতা লাভ করে আগে যা ঢাকা শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। “The east Bengal education ordinance” এর বলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত ৫৫টি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী কলেজের মঞ্জুরি প্রদান ও তত্ত্বাবধানের কর্তৃত্ব লাভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।[৭৬] যার ফলে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল, একাডেমিক কাউন্সিল, ফ্যাকাল্টি ও কোর্ট পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ করতে হয়, প্রথম শ্রেণীর কলেজ প্রিন্সিপালদের অর্ন্তভুক্ত করার জন্য। ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের সামরিক সরকারের আজ্ঞাবহ পূর্ব পাকিস্তান সরকার “ঢাকা ইউনিভার্সিটি অর্ডিন্যান্স ১৯৬১” দ্বারা “ঢাকা ইউনিভার্সিটি এ্যক্ট ১৯২০” বাতিল করে।[৭৭] নতুন অর্ডিন্যান্সে বিশ্ববিদ্যালয়ের গনতান্ত্রিক ও স্বায়ত্তশাসিত চরিত্রের পরিবর্তন করা হয়, কোর্ট বাতিল করা হয়, একাডেমিক কাউন্সিলকে মনোনীত সংস্থায় রুপান্তর করা হয়, নির্বাচিত ডিন এবং উপাচার্যের নিযুক্তি প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়। এ সময় এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের নাম সিন্ডিকেট এবং তা পদাধিকার বলে ও চ্যান্সেলর মনোনীত সদস্যদের নিয়ে গঠিত সর্বোচ্চ নির্বাহী পরিষদ হয়ে যায়। এই সময় থেকেই উপাচার্যের নিয়োগ কোর্টের পরিবর্তে সরকার দ্বারা করবার ব্যবস্থা করা হয়। ““ঢাকা ইউনিভার্সিটি অর্ডিন্যান্স ১৯৬১” এর সম্পর্কে শিক্ষকদের ক্ষোভ ছিল। ষাটের দশকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসনের জন্য আন্দোলন হয়েছে।[৭৮] স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ, অধ্যাপক খান সরওয়ার মোর্শেদ শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়া উপস্থাপন করেন। খসড়াটি প্রায় অপরিবর্তীত অবস্থায় ‘The Dacca University order 1973’ নামে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের পরামর্শ ক্রমে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অধ্যাদেশ জারি করেন।[৭৯][৮০] সেই থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এই আইন দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৯৭৩ এর অর্ডিন্যান্স চালু হওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ নীল, সাদা ও গোলাপী এই তিন রঙের প্যানেলে বিভক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বীকৃত পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান, এই সমিতির কর্মকর্তারাও প্রতি বছর নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের সাথে সঙ্গতি রেখে ১৯৭৩-এর ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন গঠন করা হয় এবং প্রবীণ শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ এনামুল হককে তার চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.