টাঙ্গাইল
বাংলাদেশের একটি শহর উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বাংলাদেশের একটি শহর উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
টাঙ্গাইল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ৯৮ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমের একটি শহর। টাঙ্গাইল নগরী বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর এবং টাঙ্গাইল জেলার প্রধান শহর।
টাঙ্গাইল | |
---|---|
সাংস্কৃতিক নগরী | |
বাংলাদেশে টাঙ্গাইল শহরের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৪.২৬৪৪২৩° উত্তর ৮৯.৯১৮১৪০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ঢাকা বিভাগ |
জেলা | টাঙ্গাইল জেলা |
উপজেলা | টাঙ্গাইল সদর উপজেলা-একাংশ, দেলদুয়ার উপজেলা-একাংশ |
স্থাপিত | ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসভা |
• প্রথম মেয়র | শশী শেখর দত্ত |
• মেয়র | এস এম সিরাজুল হক আলমগীর (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) |
• শিক্ষার হার | ৭১.২১% |
আয়তন | |
• মোট | ২৯.০৪ বর্গকিমি (১১.২১ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ১৪ মিটার (৪৬ ফুট) |
জনসংখ্যা | |
• মোট | ৭,৫০,০০০ |
• জনঘনত্ব | ২৫,৫০০/বর্গকিমি (৬৬,০০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বাংলাদেশ মান সময় (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ১৯০০, ১৯০১, ১৯০২ |
টেলিফোন কোড | ০৯২১ |
ওয়েবসাইট | টাঙ্গাইল জেলা সরকারি ওয়েবসাইট |
[1] |
টাঙ্গাইলের নামকরণ বিষয়ে রয়েছে বহু জনশ্রুতি ও নানা মতামত। ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত রেনেল তাঁর মানচিত্রে এ সম্পূর্ণ অঞ্চলকেই আটিয়া বলে দেখিয়েছেন। ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দের আগে টাঙ্গাইল নামে কোনো স্বতন্ত্র স্থানের পরিচয় পাওয়া যায় না। টাঙ্গাইল নামটি পরিচিতি লাভ করে ১৫ নভেম্বর ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে মহকুমা সদর দপ্তর আটিয়া থেকে টাঙ্গাইলে স্থানান্তরের সময় থেকে। টাঙ্গাইলের ইতিহাস প্রণেতা খন্দকার আব্দুর রহিম সাহেবের মতে, ইংরেজ আমলে এদেশের লোকেরা উঁচু শব্দের পরিবর্তে ‘টান’ শব্দই ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিল বেশি। এখনো টাঙ্গাইল অঞ্চলে টান শব্দের প্রচলন আছে। এই টানের সাথে আইল শব্দটি যুক্ত হয়ে হয়েছিল টান আইল। আর সেই টান আইলটি রূপান্তরিত হয়েছে টাঙ্গাইলে। টাঙ্গাইলের নামকরণ নিয়ে আরও বিভিন্নজনে বিভিন্ন সময়ে নানা মত প্রকাশ করেছেন।
কারো কারো মতে, ব্রিটিশ শাসনামলে মোগল প্রশাসন কেন্দ্র যখন আটিয়াতে স্থাপন করা হয় তখন এই অঞ্চল জম-জমাট হয়ে উঠে। সে সময়ে ঘোড়ার গাড়ি ছিল যাতায়াতের একমাত্র বাহন, যাকে বর্তমান টাঙ্গাইলের স্থানীয় লোকেরা বলত টাঙ্গা। বর্তমান শতকের মাঝামাঝি পর্যন্তও এ অঞ্চলের টাঙ্গা গাড়ির চলাচল স্থল পথে সর্বত্র। আল শব্দটির কথা এ প্রসঙ্গে চলে আসে। বর্তমান টাঙ্গাইল অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের নামের সাথে এই আল শব্দটির যোগ লক্ষ্য করা যায়। আল শব্দটির অর্থ সম্ভবত সীমা নির্দেশক যার স্থানীয় উচ্চারণ আইল। একটি স্থানকে যে সীমানা দিয়ে বাঁধা হয় তাকেই আইল বলা হয়। টাঙ্গাওয়ালাদের বাসস্থানের সীমানাকে টাঙ্গা+আইল এভাবে যোগ করে হয়েছে টাঙ্গাইল, এ মতটি অনেকে পোষণ করেন। আইল শব্দটি কৃষিজমির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই শব্দটি আঞ্চলিক ভাবে বহুল ব্যবহৃত শব্দ। টাঙ্গাইলের ভূ-প্রকৃতি অনুসারে স্বাভাবিক ভাবে এর ভূমি উঁচু এবং ঢালু। স্থানীয়ভাবে যার সমার্থক শব্দ হলো টান। তাই এই ভূমিরূপের কারণেই এ অঞ্চলকে হয়তো পূর্বে টান আইল বলা হতো। যা পরিবর্তীতে টাঙ্গাইল নাম ধারণ করেছে।[2]
১৮৮৭ সালের ১ জুলাই টাঙ্গাইল পৌরসভা স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় পৌরসভার ওয়ার্ড সংখ্যা ছিল ৫ টি।
ওয়ার্ড নং | পৌর এলাকা |
---|---|
১ | টাঙ্গাইল কান্দা পাড়া, পারদিঘুলিয়া, আকুর টাকুর |
২ | করের বেতকা, নন্দির বেতকা, মীরের বেতকা, সাবালিয়া, দরুন, আশেকপুর, নগরজলফৈ এবং বোয়ালী |
৩ | গাড়াই, বেড়াই, কাজিপুর, পটল, বাছরাকান্দি, বাজিতপুর, বেড়াবুচনা এবং ভাল্লুককান্দি |
৪ | কাগমারী, সন্তোষ, অলোয়া, বৈট্যা, পাতুলী এবং একরামপুর |
৫ | কালীপুর, দিঘুলিয়া, সাকরাইল, কাইয়ামারা, বেড়াডোমা, বাসা এবং খানপুর |
পরবর্তীতে ১নং সেন্টাল, ২নং বেতকা, ৩নং দিঘুলিয়া ও ৪নং সন্তোষ হিসাবে ৪টি ওয়ার্ড পুনর্গঠিত হয়। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট্রাল, বেতকা, দিঘুলিয়া, সন্তোষ ও জেলা সদর এই ৫টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে এবং তারপর ৬নং ওয়ার্ড হিসাবে কাজিপুরকে অন্তর্ভুক্ত করে ৬টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়। পুনরায় ৬টি থেকে ৫টি অতঃপর পুনরায় ৫টি থেকে ৬টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয় এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ১৮ টি ওয়ার্ড নিয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভা পুনঃগঠিত হয়।
পৌরসভা স্থাপিত হওয়ার পর ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে প্রথম নির্বাচন অনু্ষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ৪টি ওয়ার্ডে ৮জন জনগনের সরাসরি ভোটে কমিশনার নির্বাচিত হন। ৫নং ওয়ার্ডের জন্য ২ জন সহ মোট ৭ জনকে কমিশনার হিসাবে সরকার মনোনয়ন প্রদান করেন। একই সাথে বাংলার লেঃ গভর্নর কোলম্যাল ম্যাকুলে তৎকালীন টাঙ্গাইলের মহকুমা প্রশাসক শশী শেখর দত্তকে টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রশাসক নিয়োগ করেন। এই পৌরসভায় ছিল না কোন পাকা রাস্তা ঘাট, ছিল না রাস্তা আলোকিত করার ব্যবস্থা এবং বিশুদ্ধ পানি সরবারাহ ব্যবস্থা। স্থানীয় জমিদারগণের অর্থানুকূল্যে এবং জেলা বোর্ড কর্তৃক স্থাপিত পুকুর, অবস্থাপন্ন দানশীল ব্যক্তির প্রতিষ্ঠিত কুয়ার পানির ওপর নির্ভর করতে হতো পৌর নাগরিকদের। বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে কেরোসিন বাতি (হ্যারিকেন) দ্বারা প্রথম রাস্তা আলোকিত করার ব্যবস্থা করে পৌরসভা।
বিভিন্ন জনবহুল স্থানে স্থাপন করে হস্তচালিত নলকূপ। সে সময় শহরের যানবাহন বলতে ছিলো টমটম আর গোরুর গাড়ি। চাড়াবাড়ি থেকে জলপথে কলকাতা এবং ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকা যাতায়াত করতে হতো। ক্রমে বিকশিত হতে থাকে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। ত্রিশ দশকের গোড়ার দিকে বিদ্যুত সরবরাহ শুরু হয়। চল্লিশের দশকে শহরের যানবাহন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয় রিক্সা।
পঞ্চাশ এবং ষাট দশকের গোড়ার দিকে বেশ কিছু রাস্তা ঘাট পাকা করা সহ তৈরী হয় ব্রিজ, কালভার্ট। এসময় ঢাকার সাথে টাঙ্গাইলের সড়ক যোগাযোগ শুরু হয়। ষাট এর দশকেই পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ শুরু হয় পানীয় জলের।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে টাঙ্গাইল পৌরসভা ‘গ’ থেকে ‘খ’ এবং ১৯৮৯ খ্রীঃ ‘খ’ থেকে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নতি লাভ করে। ৯০ দশকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প এবং মাঝারি শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বেশ কিছু রাস্তা, ড্রেন, ব্রিজ/কালভার্ট, মার্কেট, বাসটার্মিনাল সহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও পানি সরবরাহ উন্নয়ন সাধিত হয়। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে পৌর পরিষদ কর্তৃক কিছু ব্যতিক্রমী কর্মকাণ্ড গৃহীত হয় যা শহরের যানজট নিরসন, মশক নিধন উত্যাদি ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সমর্থ হয়েছে।
টাঙ্গাইল শহর ১৮ টি ওয়ার্ড ও ৬৪ টি মহল্লা নিয়ে গঠিত। এটির মোট আয়তন ২৯.০৪ বর্গ কিলোমিটার। বাংলাদেশ সরকার পুরাতন জেলা শহর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই শহরকে আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পরিকল্পনা অনুসারে এই শহরের প্রস্তাবিত আয়তন ৮১.৭৫ বর্গ কিলোমিটার। টাঙ্গাইল সদর পৌরসভা কে সম্প্রসারণ করতে আরও যুক্ত হতে যাচ্ছে করটিয়া,পাথরাইল,পোড়াবাড়ি, দাইন্যা,বাঘিল,গালা ঘারিন্দা ইউনিয়নের কিছু কিছু ওয়ার্ড নিয়ে যুক্ত হতে যাচ্ছে টাঙ্গাইল সিটি কর্পোরেশন।।। আরও যুক্ত হতে যাচ্ছে ১৮ টি ওয়ার্ড, মোট ওয়ার্ড হবে ৩৬টি [3]
ওয়ার্ড নং | পৌর এলাকা | মোট ঘরসংখ্যা | জনসংখ্যা(২০১১) গণনাকৃত |
---|---|---|---|
১ | আকুর টাকুর পাড়া-উত্তর, দেওলা, জেলা সদর | ২০৭০ | ১০৩৮৮ |
২ | এনায়েতপুর | ২১৪২ | ৮৭৬০ |
৩ | পশ্চিম আকুর টাকুর পাড়া, উত্তর কাগমারা, দক্ষিণ কাগমারা | ৩২০৫ | ১৩৯০৩ |
৪ | বেপারী পাড়া-একাংশ, ফকির পাড়া, বেড়াডোমা, দিঘুলিয়া, চর দিঘুলিয়া | ২১১৯ | ৯২০৮ |
৫ | কালিপুর, লক্ষ্মীপুর, সরুটিয়া, শাকরাইল | ১৬১৪ | ৭২৩৫ |
৬ | কলেজ পাড়া, প্যারাডাইস পাড়া, পার দিঘুলিয়া-একাংশ | ১৫৬৯ | ৬৭১২ |
৭ | বালুককান্দি, বাগবাড়ী, পাতুলি ভবানী বাগবাড়ী, উত্তর সন্তোষ-একাংশ, সন্তোষ পালপাড়া | ১৬৭৪ | ৭৩২৫ |
৮ | আলোয়া ভবানী পাহিম, আলোয়া পাহিম, দক্ষিণ সন্তোষ-একাংশ | ১৭৯৭ | ৮০২৬ |
৯ | আলোয়া বরটিয়া, আলোয়া পাইকাস্তা, আলোয়া তাড়িনি, বালুককান্দি-একাংশ, চর পাতুলি, পূর্ব আলোয়া, আলোয়া ভবানী | ১৮৮৮ | ৮৫৭৫ |
১০ | বাজিতপুর, বেড়াই, বশরাকান্দি, কাজিপুর, পাতাল | ১৪৫৮ | ৬১৮৯ |
১১ | বেড়াবুচনা, কচুয়া পাড়া, কান্দা পাড়া | ১৯২৯ | ৭৫৩৬ |
১২ | আদি টাঙ্গাইল, বেপারী পাড়া-একাংশ, বিল বোয়ালী | ১৬২৮ | ৭১৬০ |
১৩ | টাঙ্গাইল- মূল মহল্লা, ছয় আনীর বাজার, পাঁচ আনীর বাজার, থানা পাড়া, উত্তর থানা পাড়া | ১৭৯২ | ৭৫৭২ |
১৪ | পূর্ব আদালত পাড়া, আদালত পাড়া, বিশ্বাস বেতকা-একাংশ এস.ডব্লিউ কর্ন, সাহা পাড়া | ২৭৯০ | ১১৭৮৬ |
১৫ | আশেকপুর, বিশ্বাস বেতকা-একাংশ | ২৭৪৫ | ১২১১৮ |
১৬ | আকুর টাকুর পাড়া-একাংশ, পার দিঘুলিয়া-একাংশ | ২৪৫৯ | ১০৬৭৬ |
১৭ | কুমুদিনী কলেজ পাড়া, মুন্সি পাড়া, রেজিস্ট্রি পাড়া, বিশ্বাস বেতকা-পশ্চিম | ২১২৮ | ১১০৮১ |
১৮ | কোদালিয়া, সাবালিয়া | ২৬০১ | ১৩১৬৮ |
১৯-৩৬ নং ওয়ার্ডের এলাকার নাম প্রস্তাবিত, সিটি কর্পোরেশন কার্যক্রম টি শুরু হওয়ার পরেই, এলাকার নাম দেওয়া হবে। [4]
করটিয়া হলো টাঙ্গাইল শহরের অদূরবর্তী একটি উপশহর। যার জমিদার ছিলেন দানবীর ওয়াজেদ আলী খান পন্নী চাঁদ মিয়া।
টাঙ্গাইলের কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো:
টাঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত বাংলা দৈনিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে দৈনিক মফস্বল, দেশ কথা, টেলিগ্রাম, নাগরিক কথা, মজলুমের কণ্ঠ, প্রগতির আলো এবং কালের স্রোত উল্লেখযোগ্য।
সাপ্তাহিক পত্রিকাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গণবিপ্লব, শোষিতের কণ্ঠ, মৌবাজার, পূর্বাকাশ, বিদ্রোহী কণ্ঠ, প্রযুক্তি এবং মূলস্রোত।[5]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.