Loading AI tools
ইউরোপীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ (ইউরোপীয় কাপ অথবা সংক্ষেপে ইউসিএল নামে পরিচিত) হচ্ছে ইউরোপীয় ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যে ১৯৫৫ সাল থেকে ইউনিয়ন অব ইউরোপিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (উয়েফা) কর্তৃক আয়োজিত একটি বার্ষিক ফুটবল ক্লাব প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় ইউরোপের শীর্ষ স্তরের ক্লাবগুলো অংশগ্রহণ করে থাকে। এটি বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ইউরোপীয় ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ক্লাব প্রতিযোগিতা, যেখানে ইউরোপীয় জাতীয় অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা আয়োজিত জাতীয় লিগের বিজয়ী দল (কিছু ক্ষেত্রে রানারআপ বা তৃতীয় স্থান অধিকারী দল) অংশগ্রহণ করে থাকে। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ উয়েফা কাপ এবং উয়েফা কাপ উইনার্স কাপ হতে একটি আলাদা প্রতিযোগিতা।
প্রতিষ্ঠিত | ১৯৫৫ (১৯৯২ সালে পুনঃনামকরণ) |
---|---|
অঞ্চল | ইউরোপ (উয়েফা) |
দলের সংখ্যা | ৩২ (গ্রুপ পর্ব) ৭৯ (সর্বমোট) |
উন্নীত | উয়েফা সুপার কাপ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ |
সম্পর্কিত প্রতিযোগিতা | উয়েফা ইউরোপা লিগ (দ্বিতীয় স্তর) উয়েফা ইউরোপা কনফারেন্স লিগ (তৃতীয় স্তর) |
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন | রিয়াল মাদ্রিদ (১৫তম শিরোপা) |
সবচেয়ে সফল দল | রিয়াল মাদ্রিদ (১৫টি শিরোপা) |
টেলিভিশন সম্প্রচারক | সম্প্রচারকের তালিকা |
ওয়েবসাইট | uefa.com |
২০২৪–২৫ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ |
১৯৫৫ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ক্লাবস' কাপ নামে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় প্রাথমিকভাবে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের শুধুমাত্র বিজয়ী দল অংশগ্রহণ করতে পারতো। ১৯৯২ সালে এই প্রতিযোগিতার নাম বর্তমান নামে নামাঙ্কিত করা হয়েছে, একই সাথে এই প্রতিযোগিতাটি একটি রাউন্ড-রবিন গ্রুপ পর্বে রূপান্তরিত করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের একাধিক ক্লাব অংশগ্রহণ করার সুযোগ লাভ করে।[1] পরবর্তীতে এই প্রতিযোগিতার বিন্যাসে আরও পরিবর্তন আনা হয়েছে; বর্তমানে এই প্রতিযোগিতায় ইউরোপের জাতীয় লিগের বিজয়ী দলের পাশাপাশি শীর্ষস্থানীয় অ্যাসোসিয়েশন থেকে চারটি পর্যন্ত দল অংশগ্রহণ করতে পারে।[2][3] পয়েন্ট তালিকা ঠিক পরের কয়েকটি ক্লাব যারা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়নি, তারা ইউরোপীয় ক্লাব প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় স্তরের লিগ, উয়েফা ইউরোপা লিগে অংশগ্রহণ করে থাকে। ২০২১ সাল থেকে উয়েফা ইউরোপা লিগে উত্তীর্ণ দলের পর অবস্থান করা দলগুলো (যারা উয়েফা ইউরোপা লিগে উত্তীর্ণ হতে পারেনি) ইউরোপীয় ক্লাব প্রতিযোগিতার তৃতীয় স্তরের লিগ উয়েফা ইউরোপা কনফারেন্স লিগে অংশগ্রহণ করবে।[4]
বর্তমান বিন্যাসে, জুন মাসের শেষের দিকে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রাথমিক পর্ব, তিনটি বাছাইপর্ব এবং একটি প্লে-অফ পর্বের মধ্য দিয়ে প্রতিটি আসর শুরু হয়, এসময়ের সকল খেলা দুই লেগে আয়োজন করা হয়। বাছাইপর্ব হতে উত্তীর্ণ ছয়টি দল এবং পূর্ব হতে উত্তীর্ণ ২৬টি দল নিয়ে প্রতি মৌসুমের গ্রুপ পর্ব শুরু হয়। ৩২টি দল চারটি দলের আটটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে একই গ্রুপের দলের সাথে দ্বৈত রাউন্ড-রবিন পদ্ধতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। আট গ্রুপের বিজয়ী এবং রানার-আপ দল নকআউট পর্বে অগ্রসর হয়, যা মে মাসের শেষের দিকে অথবা জুন মাসের শুরুর দিকে ফাইনাল খেলার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।[5] চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বিজয়ী দল পরবর্তী মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপ এবং ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে উত্তীর্ণ হয়।[6][7] ২০২০ সালে, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে উয়েফার ঐতিহ্যগতভাবে অনুসৃত সকল লিগের ম্যাচের সময়সূচী ব্যাহত হয়েছিল, ২০২০ সালের মে মাসের জন্য পূর্বনির্ধারিত সকল খেলা স্থগিত করা হয়েছিল এবং উক্ত খেলাগুলো পরবর্তীতে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল।[8]
এপর্যন্ত এই প্রতিযোগিতাটি ২২টি ক্লাব জয়লাভ করেছে, যার মধ্যে ১৩টি ক্লাব একাধিকবার জয়লাভ করেছে।[9] স্পেনীয় ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ক্লাব, যারা প্রথম পাঁচ মৌসুমে টানা ৫টি শিরোপাসহ সর্বমোট ১৫টি শিরোপা জয়ালাভ করেছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইতালীয় ক্লাব এসি মিলান, যারা এপর্যন্ত ৭ বার এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ, যারা এপর্যন্ত ৬ বার শিরোপা জয়লাভ করেছে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ ২০২৪ সালের ফাইনালে জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে ২–০ গোলে পরাজিত করে ক্লাবের ইতিহাসে পঞ্চদশবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছিল।[10][11][12] এই প্রতিযোগিতায় স্পেনীয় ক্লাবগুলো সর্বাধিক ১৯ বার শিরোপা জয়লাভ করেছে, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলো (যারা এপর্যন্ত ১৫ বার শিরোপা জয়লাভ করেছে) এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইতালির ক্লাবগুলো (যারা এপর্যন্ত ১২ বার শিরোপা জয়লাভ করেছে)। ইংল্যান্ড হতে সর্বাধিক ৬ বার ভিন্ন ভিন্ন ক্লাব এই প্রতিযোগিতার শিরোপা জয়লাভ করেছে।
ইউরোপের ক্লাব নিয়ে আয়োজিত সর্বপ্রথম প্রতিযোগিতা ছিল চ্যালেঞ্জ কাপ, যা অস্ট্রিয়া এবং হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের অধীনস্থ ক্লাবগুলোর মধ্যে আয়োজিত হয়েছিল।[13] ১৯২৭ সালে মিত্রোপা কাপ নামে একটি নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল, এই প্রতিযোগিতাটি চ্যালেঞ্জ কাপের আদলে অস্ট্রীয় সাংবাদিক উগো মিসেলের ধারণায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। এই প্রতিযোগিতায় কেন্দ্রীয় ইউরোপীয় ক্লাবগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতো।[14] ১৯৩০ সালে সুইস ফুটবল ক্লাব সারভেত দ্বারা কুপ দে নেশনস (ফরাসি: Nations Cup; অনু. জাতীয় কাপ) নামক একটি প্রতিযোগিতা সংগঠিত হয়েছিল; এটি ইউরোপের জাতীয় লিগের বিজয়ী ক্লাবগুলোর মধ্যে একটি কাপ প্রতিযোগিতা আয়োজনের প্রথম প্রয়াস ছিল।[15] জেনেভায় আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় পুরো মহাদেশ জুড়ে প্রায় দশটি বিজয়ী দল অংশগ্রহণ করেছিল। এই প্রতিযোগিতাটি হাঙ্গেরীয় ক্লাব উয়পেস্ট জয়লাভ করেছিল।[15] ১৯৪৯ সালে লাতিন ইউরোপীয় দেশগুলো একত্রিত হয়ে লাতিন কাপ নামে একটি নতুন প্রতিযোগিতা প্রতিষ্ঠা করেছিল।[16]
১৯৪৮ সালে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে আয়োজিত জনপ্রিয় প্রতিযোগিতার সম্পর্কে তার সাংবাদিকদের কাছ থেকে প্রতিবেদন সংগ্রহ করার পর লেকিপের সম্পাদক গাব্রিয়েল হানোত একটি মহাদেশ ভিত্তিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের ধারণা প্রদান করেন।[17] ১৯৫০-এর দশকে বিশেষত প্রীতি ম্যাচগুলো সফলভাবে জয়লাভ করার পর (বিশেষত বুদাপেস্ট হোনভেদের বিরুদ্ধে ৩–২ গোলের ব্যবধানে জয়ের পর) স্ট্যান কুলিস কর্তৃক উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্স বিশ্বের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পর হানোত অবশেষে উয়েফাকে এমন একটি প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য রাজি করাতে পেরেছিলেন।[1] অতঃপর ১৯৫৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত এক সভায় ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ক্লাবস' কাপ হিসেবে এই প্রতিযোগিতাটি প্রতিষ্ঠালাভ করে।[1]
১৯৫৫–৫৬ মৌসুমের ইউরোপীয় কাপের প্রথম আসর আয়োজিত হয়েছিল।[18][19] উক্ত আসরে ১৬ টি দল অংশগ্রহণ করেছিল (যার মধ্যে বেশ কিছু দল আমন্ত্রণের ভিত্তিতে অংশগ্রহণ করেছিল) তারা হলো: এসি মিলান (ইতালি), এজিএফ অরহুস (ডেনমার্ক), আন্ডারলেখট (বেলজিয়াম), জিউরগোর্ডেন (সুইডেন), গভার্দিয়া ওয়ারশ (পোল্যান্ড), হিবের্নিয়ান (স্কটল্যান্ড), পার্তিজান (যুগোস্লাভিয়া), পিএসভি এইন্থোভেন (নেদারল্যান্ডস), রাপিড ভিয়েনা (অস্ট্রিয়া), রিয়াল মাদ্রিদ (স্পেন), রট-ভিস এসেন (পশ্চিম জার্মানি), সারব্রুকেন (সার), সারভেত (সুইজারল্যান্ড), স্পোর্টিং সিপি (পর্তুগাল), স্তাদ দে রেঁস (ফ্রান্স) এবং ভরস লবোগো (হাঙ্গেরি)।[18][19] ১৯৫৫ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর তারিখে পর্তুগালের লিসবনের এস্তাদিও নাসিওনালে ইউরোপীয় কাপের প্রথম ম্যাচ আয়োজিত হয়েছিল; উক্ত ম্যাচটি স্পোর্টিং সিপি এবং পার্তিজানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা ৩–৩ গোলে ড্র হয়েছিল।[18][19] ইউরোপীয় কাপের ইতিহাসে প্রথম গোলটি করেন স্পোর্টিং সিপির হয়ে খেলা পর্তুগিজ ফুটবলার জোয়াও বাপ্তিস্তা মার্তিন্স।[18][19] প্রথম আসরের ফাইনাল ম্যাচটি ১৯৫৬ সালের ১৩ই জুন তারিখে ফ্রান্সের প্যারিসের পার্ক দে প্রাঁসে রিয়াল মাদ্রিদ এবং স্তাদ দে রেঁসের মধ্যে আয়োজিত হয়েছিল।[18][19][20] ম্যাচের শুরুর ১৫ মিনিটে ২–১ গোলে পিছিয়ে গিয়েও এক্তোর রিয়ালের জোড়া গোল এবং আলফ্রেদো দি স্তেফানো ও মার্কোস আলোনসোর একক গোলের বিনিময়ে রিয়াল মাদ্রিদ ৪–৩ গোলে ম্যাচ এবং শিরোপা জয়লাভ করে।[18][19][20]
১৯৫৭ সালের ৩০শে মে তারিখে নিজেদের মাঠ এস্তাদিও সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আয়োজিত ফাইনালে ইতালীয় ক্লাব এসিএফ ফিওরেন্তিনাকে হারিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ টানা দ্বিতীয়বারের মত শিরোপা ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছিল।[21][22] প্রথমার্ধ গোল শূন্য হওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধের ৫৬ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে রিয়াল মাদ্রিদ ইতালীয় ক্লাবটিকে পরাজিত করেছিল।[20][21][22] ১৯৫৮ সালের ২৮শে মে তারিখে ফাইনালে হেয়সেন স্টেডিয়ামে আয়োজিত ফাইনালে মিলান দুইবার এগিয়ে গিয়েও রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচে সমতায় ফিরে আসে,[23][24] এর ফলে ম্যাচটি অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়। অতিরিক্ত সময়ের ১০৭তম মিনিটে ফ্রান্সিস্কো হেন্তো জয়সূচক গোলটি করে রিয়াল মাদ্রিদকে টানা তৃতীয়বারের মতো শিরোপা ঘরে তুলে সহায়তা করেন।[20][23][24] প্রথম আসরের ফাইনাল ম্যাচের পুনরাবৃত্তি ম্যাচে, ১৯৫৯ সালের ৩রা জুন তারিখে নেকারস্টাডিওনে আয়োজিত ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ ফাইনালে রেঁসের মুখোমুখি হয়েছিল, যেখানে তারা ২–০ গোলে জয়লাভ করে।[20][25][26] ১৯৬০ সালে প্রথম লাতিন বহির্ভূত ক্লাব হিসেবে পশ্চিম জার্মানির ক্লাব আইন্ট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট ইউরোপীয় কাপের ফাইনালে পৌঁছেছিল।[27][28] ১৯৬০ সালের ১৮ই মে তারিখে আয়োজিত এই ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ ফ্রাঙ্কফুর্টকে ৭–৩ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে। এই ম্যাচে এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে সর্বাধিক (১,২৭,৬৬১ জন) দর্শক স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়েছিল,[29] যা আজ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এই ম্যাচে এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে ফাইনালে সর্বাধিক (১০টি) গোল হয়েছিল, এই রেকর্ডটি আজ পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে। উক্ত ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ফেরেন্তস পুশকাস ৪টি এবং আলফ্রেদো দি স্তেফানো ৩টি গোল করেছিলেন।[20][27][28] এই ম্যাচ এবং আসর জয়লাভের মাধ্যমে রিয়াল মাদ্রিদ টানা পঞ্চম বারের মত শিরোপা ঘরে তুলেছিল, এই রেকর্ডটি আজ পর্যন্ত অটুট রয়েছে।[9]
১৯৬০–৬১ মৌসুমের প্রথম পর্বে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার কাছে দুই লেগে সামগ্রিকভাবে ৪–৩ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়ে বিদায় নেওয়ার মাধ্যমে ইউরোপীয় কাপে রিয়াল মাদ্রিদের একচ্ছত্র আধিপত্যের অবসান ঘটে।[30][31] অতঃপর ১৯৬১ সালের ৩১শে মে তারিখে বের্নের ওয়াঙ্কডর্ফ স্টেডিয়ামে আয়োজিত ফাইনালে বার্সেলোনা পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকার মুখোমুখি হয়, যেখানে বেনফিকা ৩–২ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করে প্রথমবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছিল।[30][31][32] পরবর্তী মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ পুনরায় ফাইলানে পৌঁছেছিল, কিন্তু ১৯৬২ সালের আমস্টারডামের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আয়োজিত ফাইনালে ফেরেন্তস পুশকাস হ্যাট্রিক বৃথা করে দিয়ে বেনফিকা রিয়াল মাদ্রিদকে ৫–৩ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয়লাভ করে।[32][33][34] বেনফিকা ১৯৫০-এর দশকে রিয়াল মাদ্রিদ সফলতার পুনরাবৃত্তি করতে চেয়েছিল, কিন্তু ব্রাজিলীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় জোসে আলতাফিনির জোড়া গোলের বিনিময় ইতালীয় ক্লাব এসি মিলান তাদের স্বপ্নভঙ্গ করে দিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে; এর ফলে প্রথমবারের মতো ইবেরিয়ান পেনিনসুলার বাইরের কোন দল শিরোপা জয়লাভ করেছিল।[35][36][37] পরবর্তী মৌসুমের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে ৩–১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে ঘরোয়া ফুটবলের নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী মিলানের সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করে ইন্টার মিলান।[38][39][40] পরবর্তী মৌসুমে নিজেদের মাঠ সান সিরোতে আয়োজিত ফাইনালে ব্রাজিলীয় ফুটবলার জাইর দা কোস্তার একমাত্র গোলের বিনিময়ে বেনফিকাকে ১–০ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয়লাভ করে ইন্টার মিলান;[41][42][43] এর ফলে টানা তিন মৌসুম মিলনের ক্লাব এই প্রতিযোগিতার শিরোপা ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। ১৯৬৭ সালের ফাইনালে জোক স্টেইনের অধীনে স্কটিশ ক্লাব সেল্টিক ইন্টার মিলানকে ২–১ গোলে হারিয়ে প্রথম ব্রিটিশ ক্লাব হিসেবে ইউরোপীয় কাপ জয়লাভ করেছিল।[44][45] উক্ত দিনের খেলায় অংশগ্রহণকারী সেল্টিকের খেলোয়াড়গণ "লিসবন লায়ন"হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন; কেননা তারা প্রত্যেকে গ্লাসগোর ৩২ মাইলের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[46]
১৯৬৭–৬৮ মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড প্রথম ইংরেজ ক্লাব হিসেবে ইউরোপীয় কাপের শিরোপা ঘরে তুলেছিল; ফাইনালে তারা ববি চার্লটনের জোড়া গোলের বিনিময়ে অতিরিক্ত সময়ে বেনফিকাকে ৪–১ গোলে হারিয়েছিল।[47] এই ফাইনালটি মিউনিখ এয়ার দুর্ঘটনার দশ বছর পরে আয়োজিত হয়েছিল; যেখানে ইউনাইটেডের ৮ জন খেলোয়াড় জীবন হারিয়েছিল এবং কাপ বিজয়ী ম্যানেজার ম্যাম্যাট বাসবি আহত হয়েছিলেন।[48] পরবর্তী মৌসুমে আয়াক্স প্রথম ওলন্দাজ ক্লাব হিসেবে ইউরোপীয় কাপের ফাইনালে উঠেছিল; কিন্তু তারা ইতালীয় ক্লাব এসি মিলানের কাছে ৪-১ গোলে হেরে গিয়েছিল। ইতালীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় পিয়েরিনো প্রাতির হ্যাট্রিকের মাধ্যমে এসি মিলান তৃতীয়বারের মতো ইউরোপীয় কাপ জয়লাভ করেছিল।[49]
"যাদু ... এটি সর্বোপরি যাদু। আপনি যখন এই সংগীতটি শোনেন, তখন এটি আপনাকে সরাসরি মুগ্ধ করে।"
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সংগীত (যার প্রতিষ্ঠান শিরোনাম চ্যাম্পিয়নস লিগ) লিখেছেন টনি ব্রিটেন। এই সঙ্গীতটি জর্জ ফ্রিডেরিক হান্ডেলের ১৭২৭ সালের সঙ্গীত জাডোক দ্য প্রিস্ট (যা তার অন্যতম জনপ্রিয় একটি রাজ্যাভিষেক সংগীত) থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।[51][52] ১৯৯২ সালে উয়েফা ব্রিটেনকে একটি সংগীত নির্মাণ নির্দেশ দিয়েছিল। এই সঙ্গীতটির সুর বাজিয়ে লন্ডনের রয়্যাল ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রা এবং গানে কণ্ঠ দিয়েছে একডেমি অব সেন্ট মার্টিন ইন দ্য ফিল্ডসের সদস্যরা।[51] উয়েফার প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, “বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ফুটবলারদের হৃদয়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এটি পরিচিত"।[51]
এই গানে উয়েফার তিনটি প্রাতিষ্ঠানিক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে; যা হচ্ছে ইংরেজি, জার্মান এবং ফরাসি।[53] চরম পরিণতিমূলক মুহূর্তটি বিস্মৃতিতে "ডি মাইস্টার! ডি বেস্টেন! লেস গ্রান্দে এপিকেস! দ্য চ্যাম্পিয়নস!"।[54] এই সংগীতের কোরাস অংশটুকু উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রতি ম্যাচের শুরুতে বাজানো হয়ে থাকে। উক্ত সময়ে খেলোয়াড় এবং রেফারি গান এক লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। একই সাথে ম্যাচের টেলিভিশন সম্প্রচারের শুরু এবং শেষে এই গানটি বাজানো হয়। অন্যদিকে এই গানের একটি প্রবেশক সংগীত রয়েছে, যা এই গানের কিছু অংশ ধারণ করে থাকে। উক্ত অংশটি দলের খেলোয়াড়গণ মাঠে প্রবেশের সময় বাজানো হয়।[55] সম্পূর্ণ গানটি প্রায় ৩ মিনিট দীর্ঘ এবং এতে একটি দুটি ছোট খন্ড ও কোরাস অংশ রয়েছে।[53]
মাঝেমধ্যে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে এই গানের কিছু বিশেষ সংস্করণ সরাসরি অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। আয়োজক শহরের ভাষা অনুযায়ী কোরাসের অংশের গীতিগুলো পরিবর্তন করা হয়। এই বিশেষ সংস্করণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: আন্দ্রেয়া বোচেল্লি (ইতালীয়) (রোম ২০০৯, মিলান ২০১৬ এবং কার্ডিফ ২০১৭), হুয়ান দিয়েগো ফ্লোরেস (স্পেনীয়) (মাদ্রিদ ২০১০), অল অ্যাঞ্জেলস (ওয়েম্বলি ২০১১), জোয়ান কাউফমান এবং ডেভিড গ্যারেট (মিউনিখ ২০১২) এবং মারিজা (লিসবন ২০১৪)। ২০১৩ সালের ফাইনালে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে কোরাস অংশটুকু দুইবার বাজানো হয়েছিল। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের ফাইনালে (যা যথাক্রমে কিয়েভ এবং মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত হয়েছিল) বাদ্যযন্ত্রগত সংস্করণটি বাজানো ছিল; যা যথাক্রমে টুসেলোস এবং আস্তুরিয়া গার্লস পরিবেশন করেছিলেন।[56][57] চ্যাম্পিয়নস লিগ থিম শিরোনামে আইটিউনস এবং স্পোটিফাইয়ে এই সংগীতের মূল সংস্করণটি প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে সুরকার হান্স জিমার র্যাপার ভিন্স স্ট্যাপলসের সাথে মিলে ইএ স্পোর্টসের ভিডিও গেম ফিফা ১৯-এর জন্য এই সংগীতের একটি রিমিক্স সংস্করণ প্রকাশ করেছিলেন; এই গেমের ট্রেইলারেও এই গানটি ব্যবহার করা হয়েছিল।[58]
১৯৯১ সালে উয়েফা তাদের বাণিজ্যিক অংশীদার টেলিভিশন ইভেন্ট অ্যান্ড মিডিয়া মার্কেটিং-কে (টিইএএম অথবা টিম) চ্যাম্পিয়ন লিগের সহযোগী হতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। অতঃপর সংগীত রচনা, কালো-সাদা অথবা রুপার "হাউস কালার" এবং লোগোতে "স্টারবল" সংযুক্ত করা হয়, এতে টেলিভিশন ইভেন্ট অ্যান্ড মিডিয়া মার্কেটিংয়ের অবদান রয়েছে। স্টারবলটি ডিজাইন ব্রিজ নামক একটি লন্ডনভিত্তিক দল তৈরি করেছিল, যারা একটি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে টিম দ্বারা নির্বাচিত হয়েছিল।[59] টিম ম্যাচ চলাকালে কীভাবে রঙ এবং স্টারবলকে ফুটিয়ে তোলা যায় তার ওপর বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছিল।
টিমের মতে, "আপনি মস্কো বা মিলানের দর্শক হয়ে থাকুক না কেন, আপনি সর্বদা একই স্টেডিয়ামের ড্রেসিং উপকরণ দেখতে পাবেন, একই ধরনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যেখানে মাঠের কেন্দ্রস্থলে "স্টারবল"টি প্রদর্শিত থাকে এবং একই উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সংগীত শুনবেন"। একটি গবেষণার উপর ভিত্তি করে টিম এই তথ্য প্রকাশ করেছিল যে, ১৯৯৯ সালের মধ্যে "স্টারবল লোগো ভক্তদের মধ্যে ৯৪ শতাংশের মতো স্বীকৃতি হার অর্জন করেছিল"।[60]
৩২ দলের সমন্বয়ে দ্বৈত রাউন্ড-রবিন পদ্ধতির মাধ্যমে গ্রুপ পর্বের খেলা দিয়ে প্রতি আসরের উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ শুরু হয়। গ্রুপ পর্বের পূর্বে এই প্রতিযোগিতায় ঘরোয়া লিগের পয়েন্ট তালিকায় নিজেদের অবস্থানের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে না পারার দলগুলোর মধ্যে দুইটি ধারায় বাছাইপর্বের খেলা আয়োজন করা হয়। এই নিয়মটি ২০০৯–১০ মৌসুম থেকে চলমান রয়েছে। এই দুইটি ধারা ক্লাবগুলোর ঘরোয়া লিগের পয়েন্ট তালিকায় নিজেদের অবস্থানের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়ে থাকে, যার মধ্যে একটিতে অবস্থান করে উক্ত লিগগুলোর চ্যাম্পিয়ন দলগুলো এবং অন্যটিতে অবস্থান করে লিগে দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ স্থান অর্জনকারী দলগুলো।
উয়েফা সদস্য দেশগুলোর মধ্যকার উয়েফা গুণাঙ্কের ওপর ভিত্তিতে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে কোন সদস্য দেশ থেকে কতটি ক্লাব অংশগ্রহণ করবে তা নির্ধারণ করা হয়। এই ক্লাব গুণাঙ্ক পূর্ববর্তী পাঁচটি মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ, উয়েফা কাপ অথবা উয়েফা ইউরোপা লিগের মৌসুমে ক্লাবগুলোর ফলাফলের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়। গুণাঙ্ক তালিকায় যে অ্যাসোসিয়েশন যত উপরে অবস্থান করে সেই অ্যাসোসিয়েশন হতে ততবেশি দল চ্যাম্পিয়নস লিগে অংশগ্রহণ করে, একই সাথে তারা কমসংখ্যক বাছাইপর্বেও অংশগ্রহণ করে থাকে।
বিদ্যমান ছয়টি স্থান হতে চারটি স্থান বাছাইপর্বে অংশগ্রহণকারী দলের জন্য বরাদ্দ থাকে, যেগুলো অবশিষ্ট ৪৩ অথবা ৪৪টি দেশের ঘরোয়া লিগের চ্যাম্পিয়ন দলের মধ্যকার আয়োজিত ছয় পর্ব বিশিষ্ট বাছাইপর্বের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দল গ্রহণ করে থাকে। অন্য দুইটি পঞ্চম হতে ১৫তম স্থানে অবস্থান করা অ্যাসোসিয়েশনের প্রায় ১১টি ক্লাবের মধ্যকার তিন পর্ব বিশিষ্ট বাছাইপর্বের প্রতিযোগিতা শেষে নির্ধারিত হয়ে থাকে, যারা তাদের নিজের ঘরোয়া লিগে দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।
সাধারণ ক্রীড়া মানদণ্ড ছাড়াও চ্যাম্পিয়নস লিগে অংশগ্রহণ করার জন্য সকল ক্লাবকে তাদের নিজের দেশের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন হতে অনুমতিপত্র গ্রহণ করতে হয়। অনুমতিপত্র অর্জনের জন্য একটি ক্লাবের কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়, যার মধ্যে স্টেডিয়াম অবকাঠামো, এবং অর্থের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্য।
২০০৫–০৬ মৌসুমে লিভারপুল এবং আর্টমিডিয়া ব্রাতিস্লাভ প্রথম দল হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের তিনটি বাছাইপর্ব অতিক্রম করে গ্রুপ পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। ২০০৮–০৯ মৌসুমে বিএটিই বরিসভ এবং আনোরথোসিস ফামাগুস্তা উভয় ক্লাবই একই কৃতিত্ব অর্জন করেছিল। রিয়াল মাদ্রিদ টানা ২২ বার (১৯৯৭ হতে বর্তমান) চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে অংশগ্রহণ করে এক অনন্য রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আর্সেনাল, যারা টানা ১৯ বার (১৯৯৮–২০১৬)[61] এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যারা টানা ১৮ বার (১৯৯৬–২০১৩) চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে অংশগ্রহণ করেছে।[62]
১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস লিগের বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন এবং চ্যাম্পিয়ন বহির্ভূত দলের মধ্যে কোন ভেদাভেদ ছিল না। উয়েফার অন্তর্ভুক্ত ১৬টি শীর্ষ লিগের চ্যাম্পিয়ন দল সরাসরি গ্রুপ পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতো। এর পূর্বে, বাছাইপর্ব তিনটি প্রাথমিক নকআউট পর্বে বিভক্ত ছিল, যেখানে বিভিন্ন ক্লাব উয়েফা গুণাঙ্কের ভিত্তিতে বিভিন্ন পর্ব হতে খেলা শুরু করতো।
২০০৫ সালে ইউরোপীয় বাছাইপর্বের পদ্ধতিতে একটি ব্যতিক্রমী চিত্র লক্ষ্য করা গিয়েছে, এর পূর্ববর্তী মৌসুমে লিভারপুল উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জয়লাভ করলেও চলমান মৌসুমের তারা তাদের ঘরোয়া লিগের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। অতঃপর উয়েফা লিভারপুলকে একটি বিশেষ বিধান অনুসারে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে খেলার জন্য উত্তীর্ণ করে; যার ফলে উক্ত মৌসুমে ইংল্যান্ড হতে পাঁচটি দল গ্রুপ পর্বে অংশগ্রহণ করেছিল।[63] পরবর্তীতে উয়েফা একটি নতুন নিয়ম সংযুক্ত করে, যার ফলে চ্যাম্পিয়নস লিগের পূর্ববর্তী মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন দল পরবর্তী আসরের গ্রুপ পর্বের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে উত্তীর্ণ হবে, যদিও তারা নিজেদের ঘরোয়া লিগের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়। এই নিয়মের ফলে যেসকল লিগ হতে চ্যাম্পিয়নস লিগে চারটি দল অংশগ্রহণ করে, যদি পূর্ববর্তী আসরের চ্যাম্পিয়নস লিগ বিজয়ী দল ঘরোয়া লিগের শীর্ষ চারের বাইরে থেকে লিগ সম্পন্ন শেষ করে, তবে উক্ত দলটি উক্ত মৌসুমে পয়েন্ট তালিকার চতুর্থ স্থান অর্জনকারী দলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে অংশগ্রহণ করবে। যার ফলে চতুর্থ স্থান অর্জনকারী দলটি চ্যাম্পিয়নস লিগের পরিবর্তে ইউরোপা লিগে অংশগ্রহণ করবে। ২০১৫–১৬ মৌসুম পর্যন্ত কোন অ্যাসোসিয়েশন হতে ৪-এর অধিক দল চ্যাম্পিয়নস লিগে অংশগ্রহণ করতে পারত না।[64] যার ফলে ২০১২ সালের মে মাসে টটেনহ্যাম হটস্পার ২০১১–১২ প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকার চতুর্থ স্থানে থেকে সম্পন্ন করেছিল, যা চেলসি হতে দুই স্থান উপরে ছিল। কিন্তু তারা ২০১২–১৩ চ্যাম্পিয়নস লিগের জন্য উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়; কেননা চেলসি পূর্ববর্তী মৌসুমের শিরোপা জয়লাভ করেছিল।[65] এর ফলস্বরূপ টটেনহ্যাম হটস্পারকে ২০১২–১৩ ইউরোপা লিগে অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল।[65]
২০১৩ সালের মে মাসে এক ঘোষণায় জানানো হয় যে,[66] ২০১৫–১৬ মৌসুম হতে এই নিয়মটি কমপক্ষে তিন বছর অর্থাৎ ২০১৭–১৮ মৌসুম পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে। পূর্ববর্তী আসরের উয়েফা ইউরোপা লিগের বিজয়ী দল উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে উত্তীর্ণ হবে, কমপক্ষে প্লে-অফ পর্বে অংশগ্রহণ করবে (তবে যদি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাধারীর জন্য নির্দিষ্ট স্থানটি ব্যবহৃত না হয়, তবে তারা সরাসরি গ্রুপ পর্বে অংশগ্রহণ করতে পারবে)। একই সাথে আরো জানানো হয় যে, পূর্বে বিদ্যমান যেকোন অ্যাসোসিয়েশন হতে সর্বোচ্চ চারটি দলের অংশগ্রহণকে বাড়িয়ে বর্তমানে পাঁচটি করা হয়েছে। যার ফলে শীর্ষ তিনটি অ্যাসোসিয়েশনের ঘরোয়া লিগের পয়েন্ট তালিকার চতুর্থ স্থান অর্জনকারী দলটি শুধুমাত্র তখনই চ্যাম্পিয়নস লিগে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হবে, যদি তাদের লিগ হতে দুটি দল পূর্ববর্তী আসরে চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ইউরোপা লিগ জয়লাভ করে থাকে এবং তারা পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ চারের বাইরে থেকে লিগ সম্পন্ন করে।[67]
২০০৭ সালে, উয়েফার তৎকালীন সভাপতি মিশেল প্লাতিনি একটি নতুন প্রস্তাব পেশ করেন; প্রস্তাবটি ছিল শীর্ষ তিনটি লিগের জন্য বরাদ্দকৃত চারটি স্থান হতে তিনটি স্থান লিগের ক্লাবগুলোর অবস্থানের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে এবং একটি উক্ত অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় কাপ বিজয়ীকে প্রদান করা হবে। এই প্রস্তাবটি ভোটের ভিত্তিতে উয়েফা স্ট্রেটিজি কাউন্সিলের এক সভায় প্রত্যাখ্যান হয়েছিল।[68] একই সভায় জানানো হয় যে, শীর্ষ তিনটি দল তৃতীয় বাছাইপর্বে অংশগ্রহণ করার পরিবর্তে সরাসরি গ্রুপ পর্বে খেলার জন্য উত্তীর্ণ হবে এবং চতুর্থ স্থান অর্জনকারী দলটি প্লে-অফ পর্বে অংশগ্রহণ করবে, যেখানে উক্ত দলটি ইউরোপের শীর্ষ ১৫ লিগের একটি ক্লাবের মুখোমুখি হবে। মূলত এই প্রস্তাবটিও প্লাতিনির ছিল, যেন গ্রুপ পর্বে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উত্তীর্ণ দলের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি গ্রুপ পর্বে উয়েফা গুণাঙ্কে নিম্ন স্থান অর্জনকারী অ্যাসোসিয়েশন হতে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা বাড়ানো যায়।[69]
২০১২ সালে, আর্সেন ওয়েঙ্গার ইংরেজ প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ চারে নিজেদের স্থান নিশ্চিত করার পর এটিকে "চতুর্থ স্থান ট্রফি" হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের যোগ্যতা অর্জনের কথা উল্লেখ করেছিলেন। এফএ কাপ থেকে বাদ পড়ার পরে ম্যাচ পূর্ববর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে আর্সেনালের ট্রফি না পাওয়ার বিষয়ে যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন তিনি এমন মন্তব্য করেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, "প্রথম শিরোপাটি হচ্ছে নিজেদের ঘরোয়া লিগে শীর্ষ চারে স্থান নির্ধারণ করা"।[70] আর্সেনালের ২০১২ সালের এজিএম-এ ওয়েঙ্গারও আরও বলেছিলেন: "আমার জন্য প্রতি মৌসুমে পাঁচটি শিরোপা রয়েছে: প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, তৃতীয়টি হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের জন্য উত্তীর্ণ হওয়া..."।[71]
৩২ দলের সমন্বয়ে গ্রুপ পর্বের খেলার মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতার মূল পর্ব শুরু হয়, যেখানে দলগুলোকে চারটি করে মোট আট ভাগে বিভক হয়ে থাকে।[72] এই পর্বের ড্রয়ের জন্য সিডিং ব্যবহার করা হয়, যেখানে একই অ্যাসোসিয়েশনের দলগুলো একত্রে কোন গ্রুপে অবস্থান করে না। প্রতিটি দল গ্রুপ পর্বে ৬টি করে ম্যাচ খেলে থাকে, যেখানে তারা অপর তিনটি দলের সাথে হোম এবং অ্যাওয়ে ম্যাচের মাধ্যমে রাউন্ড-রবিন পদ্ধতিতে মুখোমুখি হয়। প্রত্যেক গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন এবং রানার-আপ দল পরবর্তী পর্বের জন্য উত্তীর্ণ হয়। অন্যদিকে, তৃতীয় স্থান অধিকারী দল ইউরোপা লিগের গ্রুপ পর্বে প্রবেশ করে।
পরবর্তী পর্বের জন্য অর্থাৎ ১৬ দলের পর্বের জন্য প্রত্যেক গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল অন্য এক গ্রুপের এক রানার-আপ দলের মুখোমুখি হয়; এখানেও একই অ্যাসোসিয়েশনের দলগুলো পরস্পরের মুখোমুখি হয় না। কোয়াটার ফাইনালের পর থেকে ড্র সম্পূর্ণরূপে এলোমেলোভাবে আয়োজিত হয়, যেখানে একই এসোসিয়েশনের দলগুলো পরস্পরের মুখোমুখি হতে পারে। এই প্রতিযোগিতায় অ্যাওয়ে গোল নিয়ম ব্যবহৃত হয়; যদি সামগ্রিক ফলাফলের ভিত্তিতে দুটি লেগের ফলাফল সমতায় থাকে, তবে যে দল বিপরীত দলের স্টেডিয়ামে অধিক গোল করে সে দল পরবর্তী পর্বে অগ্রসর হয়।[73]
সাধারণত প্রতি মৌসুমের গ্রুপ পর্বের খেলাগুলো সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আয়োজিত হয়ে থাকে অতঃপর প্রায় এক মাস বিরতির পর ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে নকআউট পর্ব শুরু হয়। নকআউট পর্বের প্রতিটি খেলা (ফাইনাল ব্যতীত) দুই লেগের বিন্যাসে আয়োজিত হয়। সাধারণত প্রতি মৌসুমের ফাইনাল ম্যাচটি মে মাসের শেষ দুই সপ্তাহে অথবা জুন মাসের শুরুর দিকে আয়োজিত হয়, যা ২০১৫ সালের পর থেকে বিজোড় সালগুলোতে টানা তিনবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নিম্নে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রবেশাধিকার তালিকার উল্লেখ করা হয়েছে:[74]
পর্বসমূহ | যেসকল দল এই পর্বে প্রবেশ করে | যেসকল দল পূর্ববর্তী পর্ব হতে প্রবেশ করে | |
---|---|---|---|
প্রাথমিক পর্ব (৪টি দল) |
|
||
প্রথম বাছাইপর্ব (৩৪টি দল) |
|
| |
দ্বিতীয় বাছাইপর্ব (২৪টি দল) |
চ্যাম্পিয়ন পথ (২০টি দল) |
|
|
লিগ পথ (৬টি দল) |
|
||
তৃতীয় বাছাইপর্ব (২০টি দল) |
চ্যাম্পিয়ন পথ (১২টি দল) |
|
|
লিগ পথ (৮টি দল) |
|
| |
প্লে-অফ পর্ব (১২টি দল) |
চ্যাম্পিয়ন পথ (৮টি দল) |
|
|
লিগ পথ (৪টি দল) |
| ||
গ্রুপ পর্ব (৩২টি দল) |
|
| |
নকআউট পর্ব (১৬টি দল) |
|
চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং/অথবা ইউরোপা লিগের শিরোপাধারী দল যদি তাদের ঘরোয়া লিগের মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতার জন্য উত্তীর্ণ হয় তবে উপরের উল্লেখিত প্রবেশাধিকার তালিকায় পরিবর্তন করা হবে।
ম্যাচ পরিচালনায় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উয়েফা রেফারি ইউনিট ৫টি বিভাগে বিভক্ত। ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড, ইতালি বা স্পেনের রেফারিদের বাদ দিয়ে প্রথমে যেকোনো রেফারিকে চতুর্থ শ্রেণির রেফারি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই পাঁচটি দেশের রেফারি সাধারণত শীর্ষস্থানীয় ঘরোয়া লিগে রেফারির দায়িত্ব পালন করে এবং তারা সরাসরি তৃতীয় শ্রেণির রেফারি হিসেবে নিয়োগ পান। প্রতিটি ম্যাচের পরে রেফারিদের কর্মদক্ষতা পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করা হয়; প্রতি মৌসুমে ২ বার রেফারিদের শ্রেণির সংশোধন করা হয়ে থাকে, তবে কোন রেফারিকে সরাসরি তৃতীয় শ্রেণি থেকে এলিট বিভাগে উন্নীত করা হয় না।[75]
উয়েফা রেফারি ইউনিটের সহযোগিতায়, উয়েফা রেফারি কমিটি ম্যাচে রেফারি নিয়োগের কাজে নিয়োজিত থাকে। পূর্ববর্তী ম্যাচ, নম্বর, কর্মদক্ষতা এবং ফিটনেস স্তরের উপর ভিত্তি করে রেফারি নিয়োগ দেওয়া হয়। পক্ষপাতিত্ব নিরুৎসাহিত করার জন্য, চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে রেফারি নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতীয়তার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। কোন রেফারি যে দেশ অথবা জাতির অংশ, তিনি উক্ত দেশের অথবা জাতির ক্লাব সংবলিত কোন গ্রুপের ম্যাচে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকেন না। উয়েফা রেফারি ইউনিট কর্তৃক প্রস্তাবিত অথবা নিয়োগকৃত রেফারি আলোচনা বা সংশোধন করার জন্য উয়েফা রেফারি কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। ঐক্যমত্য হওয়ার পরে, জনগণের প্রভাব হ্রাস করার উদ্দেশ্যে এবং গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে ম্যাচের দুই দিন পূর্বে নিযুক্ত রেফারির নাম প্রকাশ করা হয়।[75]
১৯৯০ সাল থেকে, ৪৫ বছর বয়সের বেশি বয়সী ব্যক্তিকে উয়েফার একজন আন্তর্জাতিক রেফারি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় না। ৪৫ বছর বয়সী হওয়ার পরে একজন রেফারিকে অবশ্যই চলমান মৌসুম শেষে পদত্যাগ করতে হবে। যোগ্যতার স্তরের ক্ষেত্রে ফিটনেস নিশ্চিত করতে বয়সের এই সীমাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে, উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে রেফারিকে আন্তর্জাতিক স্তরের রেফারি হিসেবে পরিগণিত হওয়ার জন্য একটি ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।[75]
প্রতি বছর, বিজয়ী দল হিসেবে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস ক্লাবস' কাপ গ্রহণ করে থাকে, এই প্রতিযোগিতার বর্তমান সংস্করণটি ১৯৬৭ সাল থেকে প্রদান করা হচ্ছে। ১৯৬৮–৬৯ মৌসুম থেকে ২০০৮–০৯ মৌসুমের পূর্ব পর্যন্ত টানা তিন বছর বা সার্বিকভাবে পাঁচবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়লাভ করা দলকে স্থায়ীভাবে মূল শিরোপাটি প্রদান করা হতো।[76] প্রতিবার কোনও ক্লাব এই শিরোপা জয়লাভ করার পরে পরবর্তী মৌসুমের জন্য একটি নতুন মূল শিরোপা তৈরি করা হতো।[77] এপর্যন্ত পাঁচটি ক্লাব মূল শিরোপাটি জয়লাভ করেছে, রিয়াল মাদ্রিদ, আয়াক্স, বায়ার্ন মিউনিখ, এসি মিলান এবং লিভারপুল।[76] ২০০৮ সাল থেকে মূল শিরোপাটি উয়েফার কাছে রয়েছে এবং বিজয়ী ক্লাবগুলোকে শুধুমাত্র এর একটি প্রতিলিপি প্রদান করা হয়।[76]
বর্তমান শিরোপাটি ৭৪ সেমি (২৯ ইঞ্চি) লম্বা এবং রূপার তৈরি, যার ওজন হচ্ছে ১১ কেজি (২৪ পা)। এটি ১৯৬৬ সালে রিয়াল মাদ্রিদকে তাদের ষষ্ঠ শিরোপা জয়লাভ করার পর মূল শিরোপাটি প্রদান করার পর, সুইজারল্যান্ডের বের্নের ইয়র্গ স্টাডেলমান নামক একজন জুয়েলার্স নকশা করেছিলেন; যার মূল্য ছিল প্রায় ১০,০০০ সুইস ফ্রাংক।
২০১২–১৩ মৌসুম পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস লিগের বিজয়ীদের ৪০টি স্বর্ণপদক এবং রানার-আপদের জন্য ৪০টি রৌপ্য পদক প্রদান করা হয়।[78]
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ক্লাবগুলো অংশগ্রহণ এবং ফলাফলের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করে থাকে। এই প্রদানকৃত অর্থের পরিমাণ বিভিন্ন পর্যায়ের বিভক্ত, যার ওপর তাদের টেলিভিশন বাজারের মূল্য নির্ভর করে। ২০১৯–২০ মৌসুমের জন্য, ক্লাবগুলোকে প্রদত্ত পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ নিম্নরূপ:[79]
এর অর্থ হচ্ছে, সর্বোপরি কোন ক্লাব এই তালিকার অধীনে সর্বোচ্চ €৮২,৪৫,০০০ করতে পারে; এখানে বাছাইপর্ব, প্লে-অফ অথবা মার্কেট পুল শেয়ার গণনা করা হয় নি।
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন লিগে বিতরণকৃত রাজস্বের একটি বড় অংশ "মার্কেট পুল"-এর সাথে সংযুক্ত, যার পরিমাণ প্রতিটি দেশের টেলিভিশন বাজার মূল্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। ২০১৪–১৫ মৌসুমে ইয়ুভেন্তুস (যারা রানার-আপ হয়েছিল) প্রায় €৮৯.১ মিলিয়ন আয় করেছিল, যার মধ্যে €৩০.৯ মিলিয়ন ছিল পুরস্কৃত অর্থ; অন্যদিকে, উক্ত আসরের বিজয়ী দল বার্সেলোনা প্রায় €৬১.০ মিলিয়ন আয় করেছিল, যার মধ্যে €৩৬.৪ মিলিয়ন ছিল পুরস্কৃত অর্থ।[80]
ফিফা বিশ্বকাপের মতো, উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগেও বহুজাতিক সংস্থাগুলো পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব পালন করে থাকে; যা সাধারণত ইউরোপের শীর্ষ স্তরের ঘরোয়া লিগ হতে ভিন্ন চিত্র, যেখানে শুধুমাত্র একটি সংস্থা পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। ১৯৯২ সালে যখন চ্যাম্পিয়নস লিগে পুনঃনামকরণ করা হয়েছিল, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে সর্বোচ্চ আটটি সংস্থা এই প্রতিযোগিতাটির পৃষ্ঠপোষকতা করার অনুমতি দেওয়া হবে, প্রতিটি কর্পোরেশনের জন্য পিচের চারপাশে চারটি বিজ্ঞাপন বোর্ড বরাদ্দ করা হয়েছিল, এর পাশাপাশি ম্যাচের পূর্বে এবং ম্যাচের পরবর্তী সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে লোগো ব্যবহার এবং প্রতিটি ম্যাচের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক টিকিট প্রদান করা হতো। এই প্রতিযোগিতার পৃষ্ঠপোষকদের ম্যাচ চলাকালীন টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়, একই সাথে এও নিশ্চিত করা হয় যে আসরের প্রধান পৃষ্ঠপোষককে বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে। [81]
২০১২–১৩ মৌসুমের নকআউট পর্ব হতে, উয়েফা ফাইনাল ম্যাচসহ নকআউট পর্বে অংশগ্রহণকারী স্টেডিয়ামগুলোতে এলইডি বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং ব্যবহার করে আসছে। ২০১৫–১৬ মৌসুমের পর থেকে উয়েফা প্লে-অফ থেকে ফাইনাল পর্যন্ত সকল ম্যাচে এই জাতীয় হোর্ডিং ব্যবহার করে।[82]
এই প্রতিযোগিতার বর্তমান প্রধান পৃষ্ঠপোষকগুলো হচ্ছে:
আডিডাস একটি মাধ্যমিক পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি অফিসিয়াল ম্যাচ বল সরবরাহ করে এবং ম্যাক্রন রেফারিদের পোশাক সরবরাহ করে।[91] এই প্রতিযোগিতার চতুর্থ প্রাতিষ্ঠানিক বোর্ড হিসেবে হুবলোত-ও একটি মাধ্যমিক পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করে।[92]
পানিনি ২০১৫ সাল পর্যন্ত উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ একটি অংশীদার ছিল, অতঃপর টপস এই প্রতিযোগিতার জন্য স্টিকার, ট্রেডিং কার্ড এবং ডিজিটাল সংগ্রহ উৎপাদন করার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।[93]
এই প্রতিযোগিতার পূর্ববর্তী পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে: নাইকি, ফোর্ড, আমস্টেল, নিউটেলা, ইউরোকার্ড, কন্টিনেন্টাল, ম্যাকডোনাল্ড'স, ভোডাফোন, ইউনিক্রেডিট।[94]
ব্যক্তিগত ক্লাবগুলো বিজ্ঞাপনসহ জার্সি পরিধান করতে পারে। তবে পোশাক প্রস্তুতকারকের পাশাপাশি জার্সিতে কেবল একটি পৃষ্ঠপোষকে লোগো প্রদর্শন করার অনুমতি রয়েছে। অলাভজনক সংস্থাগুলোর জন্য ব্যতিক্রম নিয়ম ব্যবহার করা হয়, যা হচ্ছে শার্টের সামনের অংশে মূল স্পনসর হিসেবে বা এটির জায়গায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে; নয়তো জার্সির পেছনে (জার্সি নম্বর নিচে বা উপরের অংশে) প্রদর্শন করা যেতে পারে।[95]
যদি ক্লাবগুলো এমন একটি দেশে ম্যাচ খেলে যেখানে উক্ত পৃষ্ঠপোষকটি নিষিদ্ধ থাকে (যেমন ফ্রান্সের ক্ষেত্রে মদজাতীয় পৃষ্ঠপোষক), উক্ত পরিস্থিতিতে ক্লাবকে অবশ্যই তাদের জার্সি থেকে উক্ত পৃষ্ঠপোষকের লোগো সরিয়ে ফেলতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৬–৯৭ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং উয়েফা কাপে স্কটিশ ক্লাব রেঞ্জার্স ফ্রান্সে আয়োজিত লেগে যথাক্রমে অসের এবং স্ত্রাসবুর আলজাসের বিরুদ্ধে ম্যাচে ম্যাকইওয়ান'সের পরিবর্তে সেন্টার পার্কস ইউরোপের (উক্ত সময়ে উভয় প্রতিষ্ঠানই স্কটিশ অ্যান্ড নিউক্যাসেলের উপবিভাগ ছিল) লোগো সংবলিত জারসি পরিধান করেছিল।[96]
এই প্রতিযোগিতাটি কেবল ইউরোপেই নয়, পুরো বিশ্ব জুড়ে দর্শক টেলিভিশনের মাধ্যমে উপভোগ করে থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রতিযোগিতার ফাইনাল ম্যাচটি, বিশ্বের সর্বাধিক প্রদর্শিত বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।[97] ২০১২–১৩ মৌসুমের ফাইনাল ম্যাচটি এই প্রতিযোগিতার সর্বাধিক টিভি রেটিং সংগ্রহকারী ম্যাচ ছিল; উক্ত ম্যাচটি প্রায় ৩৬০ মিলিয়ন দর্শক টেলিভিশনের মাধ্যমে উপভোগ করেছিল।[98]
অতিরিক্ত সময়ে ফলাফল নির্ধারণ | |
পেনাল্টি শুট-আউটের মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারণ | |
রিপ্লের পর ফলাফল নির্ধারণ |
নিম্নে উল্লেখিত তালিকায় বাছাইপর্বে করা গোল অন্তর্ভুক্ত নয়।
অব | খেলোয়াড় | গোল | ম্যাচ | সাল | ক্লাব |
---|---|---|---|---|---|
১ | ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো | ১৪০ | ১৮৩ | ২০০৩–২০২২ | ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (২১), রিয়াল মাদ্রিদ (১০৫), ইয়ুভেন্তুস (১৪) |
২ | লিওনেল মেসি | ১২৯ | ১৬৩ | ২০০৫–২০২৩ | বার্সেলোনা (১২০), পারি সাঁ-জেরমাঁ (৯) |
৩ | রবের্ত লেভানদোভস্কি | ৯৪ | ১২০ | ২০১১– | বরুসিয়া ডর্টমুন্ড (১৭), বায়ার্ন মিউনিখ (৬৯), বার্সেলোনা (৮) |
৪ | করিম বেনজেমা | ৯০ | ১৫২ | ২০০৫–২০২৩ | ওলাঁপিক লিয়োনে (১২), রিয়াল মাদ্রিদ (৭৮) |
৫ | রাউল গোনসালেস | ৭১ | ১৪২ | ১৯৯৫–২০১১ | রিয়াল মাদ্রিদ (৬৬), শালকে ০৪ (৫) |
৬ | রুড ভান নিস্টেলরুই | ৫৬ | ৭৩ | ১৯৯৮–২০০৯ | পিএসভি (৮), ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (৩৫), রিয়াল মাদ্রিদ (১৩) |
৭ | থমাস মুলার | ৫৪ | ১৫১ | ২০০৯– | বায়ার্ন মিউনিখ |
৮ | থিয়েরি অঁরি | ৫০ | ১১২ | ১৯৯৭–২০১২ | মোনাকো (৭), আর্সেনাল (৩৫), বার্সেলোনা (৮) |
৯ | আলফ্রেদো দি স্তেফানো | ৪৯ | ৫৮ | ১৯৫৫–১৯৬৪ | রিয়াল মাদ্রিদ |
১০ | কিলিয়ান এমবাপে | ৪৮ | ৭৩ | ২০১৬– | মোনাকো (৬), পারি সাঁ-জেরমাঁ (৪২) |
আন্দ্রেই শেভচেঙ্কো | ৪৮ | ১০০ | ১৯৯৪–২০১২ | দিনামো কিয়েভ (১৫), এসি মিলান (২৯), চেলসি (৪) | |
জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ | ৪৮ | ১২০ | ২০০১–২০১৭ | আয়াক্স (৬), ইয়ুভেন্তুস (৩), ইন্টার মিলান (৬), বার্সেলোনা (৪), এসি মিলান (৯), পারি সাঁ-জেরমাঁ (২০) |
নিম্নে উল্লেখিত তালিকায় বাছাইপর্বে অংশগ্রহণ করা ম্যাচ অন্তর্ভুক্ত নয়।
অব | খেলোয়াড় | ম্যাচ | সাল | ক্লাব |
---|---|---|---|---|
১ | ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো | ১৮৩ | ২০০৩–২০২২ | ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (৫৯), রিয়াল মাদ্রিদ (১০১), ইয়ুভেন্তুস (২৩) |
২ | ইকার ক্যাসিয়াস | ১৭৭ | ১৯৯৯–২০১৯ | রিয়াল মাদ্রিদ (১৫০), এফসি পোর্তু (২৭) |
৩ | লিওনেল মেসি | ১৬৩ | ২০০৫–২০২৩ | বার্সেলোনা (১৪৯), পারি সাঁ-জেরমাঁ (১৪) |
৪ | করিম বেনজেমা | ১৫২ | ২০০৬–২০২৩ | লিওঁ (১৯), রিয়াল মাদ্রিদ (১৩৩) |
৫ | টনি ক্রুস | ১৫১ | ২০০৮–২০২৪ | বায়ার্ন মিউনিখ (৪১), রিয়াল মাদ্রিদ (১১০) |
থমাস মুলার | ২০০৯– | বায়ার্ন মিউনিখ | ||
জাভি হার্নান্দেজ | ১৯৯৮–২০১৫ | বার্সেলোনা | ||
৮ | রাউল গোনসালেস | ১৪২ | ১৯৯৫–২০১১ | রিয়াল মাদ্রিদ (১৩০), শালকে ০৪ (১২) |
সার্জিও রামোস | ১৪২ | ২০০৫– | রিয়াল মাদ্রিদ (১২৯), পারি সাঁ-জেরমাঁ (৮), সেভিয়া (৫) | |
১০ | রায়ান গিগস | ১৪১ | ১৯৯৪–২০১৪ | ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড |
ক্লাব | বিজয়ী | রানার-আপ | বিজয়ের মৌসুম | রানার-আপের মৌসুম |
---|---|---|---|---|
রিয়াল মাদ্রিদ | ১৫ | ৩ | ১৯৫৬, ১৯৫৭, ১৯৫৮, ১৯৫৯, ১৯৬০, ১৯৬৬, ১৯৯৮, ২০০০, ২০০২, ২০১৪, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০২২, ২০২৪ |
১৯৬২, ১৯৬৪, ১৯৮১ |
এসি মিলান | ৭ | ৪ | ১৯৬৩, ১৯৬৯, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯৪, ২০০৩, ২০০৭ |
১৯৫৮, ১৯৯৩, ১৯৯৫, ২০০৫ |
বায়ার্ন মিউনিখ | ৬ | ৫ | ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬, ২০০১, ২০১৩ ২০২০ |
১৯৮২, ১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০১০, ২০১২ |
লিভারপুল | ৬ | ৪ | ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৮১, ১৯৮৪, ২০০৫, ২০১৯ |
১৯৮৫, ২০০৭, ২০১৮, ২০২২ |
বার্সেলোনা | ৫ | ৩ | ১৯৯২, ২০০৬, ২০০৯, ২০১১, ২০১৫ | ১৯৬১, ১৯৮৬, ১৯৯৪ |
আয়াক্স | ৪ | ২ | ১৯৭১, ১৯৭২, ১৯৭৩, ১৯৯৫ | ১৯৬৯, ১৯৯৬ |
ইন্টার মিলান | ৩ | ৩ | ১৯৬৪, ১৯৬৫, ২০১০ | ১৯৬৭, ১৯৭২, ২০২৩ |
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড | ৩ | ২ | ১৯৬৮, ১৯৯৯, ২০০৮ | ২০০৯, ২০১১ |
ইয়ুভেন্তুস | ২ | ৭ | ১৯৮৫, ১৯৯৬ | ১৯৭৩, ১৯৮৩, ১৯৯৭, ১৯৯৮, ২০০৩, ২০১৫, ২০১৭ |
বেনফিকা | ২ | ৫ | ১৯৬১, ১৯৬২ | ১৯৬৩, ১৯৬৫, ১৯৬৮, ১৯৮৮, ১৯৯০ |
চেলসি | ২ | ১ | ২০১২, ২০২১ | ২০০৮ |
নটিংহ্যাম ফরেস্ট | ২ | ০ | ১৯৭৯, ১৯৮০ | — |
পোর্তু | ২ | ০ | ১৯৮৭, ২০০৪ | — |
বরুসিয়া ডর্টমুন্ড | ১ | ২ | ১৯৯৭ | ২০১৩, ২০২৪ |
সেল্টিক | ১ | ১ | ১৯৬৭ | ১৯৭০ |
হাম্বুর্গার | ১ | ১ | ১৯৮৩ | ১৯৮০ |
স্তেউয়া বুকুরেশতি | ১ | ১ | ১৯৮৬ | ১৯৮৯ |
মার্সেই | ১ | ১ | ১৯৯৩ | ১৯৯১ |
ম্যানচেস্টার সিটি | ১ | ১ | ২০২৩ | ২০২১ |
ফেইয়ানর্ট | ১ | ০ | ১৯৭০ | — |
অ্যাস্টন ভিলা | ১ | ০ | ১৯৮২ | — |
পিএসভি | ১ | ০ | ১৯৮৮ | — |
রেড স্টার বেলগ্রেড | ১ | ০ | ১৯৯১ | — |
আতলেতিকো মাদ্রিদ | ০ | ৩ | — | ১৯৭৪, ২০১৪, ২০১৬ |
রেঁস | ০ | ২ | — | ১৯৫৬, ১৯৫৯ |
ভালেনসিয়া | ০ | ২ | — | ২০০০, ২০০১ |
ফিওরেন্তিনা | ০ | ১ | — | ১৯৫৭ |
আইন্ট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্ট | ০ | ১ | — | ১৯৬০ |
পার্তিজান | ০ | ১ | — | ১৯৬৬ |
পানাথিনাইকোস | ০ | ১ | — | ১৯৭১ |
লিডস ইউনাইটেড | ০ | ১ | — | ১৯৭৫ |
সেঁত-এতিয়েন | ০ | ১ | — | ১৯৭৬ |
বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখ | ০ | ১ | — | ১৯৭৭ |
ক্লাব ব্রুজ | ০ | ১ | — | ১৯৭৮ |
মালমো এফএফ | ০ | ১ | — | ১৯৭৯ |
রোমা | ০ | ১ | — | ১৯৮৪ |
সাম্পদোরিয়া | ০ | ১ | — | ১৯৯২ |
বায়ার লেভারকুজেন | ০ | ১ | — | ২০০২ |
মোনাকো | ০ | ১ | — | ২০০৪ |
আর্সেনাল | ০ | ১ | — | ২০০৬ |
টটেনহ্যাম হটস্পার | ০ | ১ | — | ২০১৯ |
পারি সাঁ-জেরমাঁ | ০ | ১ | — | ২০২০ |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.