Loading AI tools
ভারতের অবস্থানের বিস্তারিত বিবরণ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভারতের ভূগোল দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্র ভারতের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি বর্ণনা করে। ভারত সম্পূর্ণত ইন্দো-অস্ট্রেলীয় পাতের উত্তরাংশে ভারতীয় পাতের উপর ৮°৪' ও ৩৭°৬' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৬৮°৭' ও ৯৭°২৫' পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।.[2] ভারত বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। দেশটির মোট আয়তন ৩২,৮৭,২৬৩ বর্গকিলোমিটার।[3] ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তার ৩,২১৪ কিলোমিটার এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমের বিস্তৃতি ২,৯৩৩ কিলোমিটার। ভারতের স্থলভাগের পরিসীমা ১৫,২০০ কিলোমিটার এবং উপকূলভাগের দৈর্ঘ্য ৭,৫১৭ কিলোমিটার।[4]
মহাদেশ | এশিয়া |
---|---|
অঞ্চল | দক্ষিণ এশিয়া ভারতীয় উপমহাদেশ |
স্থানাঙ্ক | ২১° উত্তর ৭৮° পূর্ব |
আয়তন | ৭ম |
• মোট | ৩২,৮৭,২৬৩ কিমি২ (১২,৬৯,২১৯ মা২) |
• স্থলভাগ | 90.44% |
• জলভাগ | 9.56% |
উপকূলরেখা | ৭,৫১৬.৬ কিমি (৪,৬৭০.৬ মা) |
সীমানা | স্থলসীমান্ত:[1] ১৫,১০৬.৭০ কিমি (৯,৩৮৭ মা) বাংলাদেশ: ৪,০৯৬.৭০ কিমি (২,৫৪৬ মা) গণপ্রজাতন্ত্রী চীন: ৩,৪৮৮ কিমি (২,১৬৭ মা) পাকিস্তান: ৩,৩২৩ কিমি (২,০৬৫ মা) নেপাল: ১,৭৫১ কিমি (১,০৮৮ মা) মায়ানমার: ১,৬৪৩ কিমি (১,০২১ মা) ভুটান: ৬৯৯ কিমি (৪৩৪ মা) আফগানিস্তান: ১০৬ কিমি (৬৬ মা) |
সর্বোচ্চ বিন্দু | কাঞ্চনজঙ্ঘা ৮,৫৯৮ মি (২৮,২০৮.৭ ফু) |
সর্বনিম্ন বিন্দু | কুট্টনাড় −২.২ মি (−৭.২ ফু) |
দীর্ঘতম নদী | গঙ্গা–ব্রহ্মপুত্র |
বৃহত্তম হ্রদ | চিল্কা হ্রদ |
ভারত দক্ষিণ-পশ্চিমে আরব সাগর, দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণে ভারত মহাসাগর দিয়ে ঘেরা। ভারতীয় উপদ্বীপের দক্ষিণতম বিন্দুটি হল ভারত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ইন্দিরা পয়েন্ট হল ভারতের দক্ষিণতম বিন্দু।[4] ভারতের দক্ষিণে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্রগুলি হল মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া। পক প্রণালী ও মান্নার উপসাগর ভারতকে শ্রীলঙ্কা থেকে পৃথক করেছে। ভারতের রাষ্ট্রাধীন জলভাগের দৈর্ঘ্য যথাযথ উপকূলসীমা থেকে ১২ সামুদ্রিক মাইল (২২ কিলোমিটার) পর্যন্ত।[5]
ভারতের উত্তর সীমা জুড়ে অবস্থান করছে হিমালয় পর্বতমালা। দেশের উত্তর সীমান্তের রাষ্ট্রগুলি হল গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (তিব্বত), ভুটান ও নেপাল। পশ্চিমে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত পাঞ্জাব সমভূমি ও থর মরুভূমির উপর দিয়ে প্রসারিত। সুদূর উত্তর-পূর্বে ঘন বনাকীর্ণ চিন ও কাচিন পার্বত্য অঞ্চল ভারতকে মায়ানমার রাষ্ট্রের থেকে পৃথক করেছে। অন্যদিকে এই অঞ্চলেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের জলবিভাজিকা এবং খাসি ও মিজো পাহাড় দ্বারা পৃথকীকৃত হয়েছে। ভারতের শীতলতম মেরু হিমাচল প্রদেশ।
গঙ্গা ভারতের দীর্ঘতম নদী। এই নদী উত্তর ভারতে গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের স্রষ্টা। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা সমগ্র উত্তর, পূর্ব ও মধ্য ভারত অধিকার করে আছে। অন্যদিকে দাক্ষিণাত্য মালভূমি অধিকার করে আছে ভারতের সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল। ভারতের পশ্চিম সীমান্তে দেখা যায় থর মরুভূমি। এই মরুভূমি বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম মরুভূমি।
সিক্কিমের কাঞ্চনজঙ্ঘা (উচ্চতা ৮৫৮৬ মিটার) বর্তমান ভৌগোলিক পরিস্থিতিতে ভারতের সর্বোচ্চ বিন্দু। যদিও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের কারাকোরাম (উচ্চতা ৮৬১১ মিটার) শৃঙ্গটিকে ভারত সরকার ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বলে দাবি করে। ভারতের জলবায়ু স্থানবিশেষে বিভিন্ন প্রকার। সুদূর দক্ষিণে ভারতের জলবায়ু বিষুব প্রকৃতির হলেও উত্তরে হিমালয় অঞ্চলে দেশের জলবায়ু আল্পীয় প্রকৃতির।
প্রাচীন মহাদেশ গন্ডোয়ানাল্যান্ডের প্রক্ষিপ্তাংশ ভারতীয় পাত নামক একটি প্রধান টেকটনিক পাতের উপর ভারতের সম্পূর্ণ অংশ অবস্থিত। প্রায় ৯,০০,০০,০০০ বছর আগে ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষ পর্বে ভারতীয় পাতটি উত্তর দিকে বার্ষিক ১৫ সেন্টিমিটার (৬ ইঞ্চি/বছর) হারে সরতে শুরু করে।[6] ৫,০০,০০,০০০ থেকে ৫,৫০,০০,০০০ বছর আগে সিনোজোয়িক যুগের ইয়োসিন পর্যায়ে ২,০০০-৩,০০০ কিলোমিটার (১,২০০- ১,৯০০ মাইল) পথ অতিক্রম করার পর পাতটির সঙ্গে এশিয়ার সংঘর্ষ হয়। এই পাতের সরণ ছিল অন্যান্য জ্ঞাত পাতগুলির সরণের মধ্যে দ্রুততম। ২০০৭ সালে জার্মান ভূতাত্ত্বিকরা এই এই দ্রুত সরণের কারণ সম্পর্কে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে গন্ডোয়ানাল্যান্ড থেকে প্রক্ষিপ্ত যে কোনো পাতের তুলনায় এই পাতের বেধ অর্ধেক মাত্র।[7] ভারত ও নেপালের বর্তমান সীমান্তের নিকট ইউরেশীয় পাতের সঙ্গে ভারতীয় পাতের সংঘর্ষের ফলে অরোজেনীয় বৃত্তের সৃষ্টি হয়, যার ফলে সৃষ্ট হয় তিব্বত মালভূমি ও হিমালয় পর্বতমালা। ২০০৯ সালের হিসেব অনুসারে, ভারতীয় পাতটি উত্তর-পূর্বে বার্ষিক ৫ সেন্টিমিটার (২ ইঞ্চি/বছর) হারে সরছে। যেখানে ইউরেশীয় পাতটি উত্তরে সরছে বার্ষিক ২ সেন্টিমিটার (০.৮ ইঞ্চি/বছর) হারে। এই কারণে ভারতকে "সর্বাপেক্ষা দ্রুতগামী মহাদেশ" বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।[7] এই সরণের ফলে ইউরেশীয় পাতটির রূপ পরিবর্তিত হচ্ছে এবং ভারতীয় পাতটি বার্ষিক ৪ মিলিমিটার (০.১৫ ইঞ্চি/বছর) হারে ঘনসন্নিবিষ্ট হচ্ছে।
ভারতীয় প্রজাতন্ত্র ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত। এই রাজ্য ও অঞ্চলগুলি আবার ৭৩৯টি জেলায় বিভক্ত।
রাজ্য | কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল | ||
---|---|---|---|
1. অন্ধ্রপ্রদেশ |
01234567 |
খ. চণ্ডীগড় গ.& ঘ. দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ ঙ. লাক্ষাদ্বীপ চ. পুদুচেরি ছ. দিল্লি জাতীয় রাজধানী অঞ্চল জ. জম্মু ও কাশ্মীর ঝ. লাদাখ |
ভারতের সীমান্তের মোট পরিসীমা ১৫,১০৬.৭০ কিলোমিটার (৯,৩৮৭ মাইল)।[1] ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের কালে সৃষ্ট র্যাডক্লিফ লাইন অনুসারে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সীমা নির্ধারিত হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৩,৩২৩ কিলোমিটার (২,০৬৫ মাইল)। এই সীমান্ত পাঞ্জাব অঞ্চলকে দ্বিখণ্ডিত করে থর মরুভূমি ও কচ্ছের রাণের সীমান্ত বরাবর প্রসারিত।[1] কাশ্মীরে ভারতীয় কাশ্মীর ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যবর্তী নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) এই অঞ্চলে দুই দেশের মধ্যবর্তী অনানুষ্ঠানিক সীমান্ত। ভারতের দাবি অনুসারে, উত্তর-পশ্চিম কাশ্মীরে আফগানিস্তানের সঙ্গে দেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য ১০৬ কিলোমিটার (৬৬ মাইল)। এই অঞ্চলটি বর্তমানে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তর্গত।[1]
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য ৪,০৯৬.৭০ কিলোমিটার (২,৫৪৬ মাইল)।[1] এছাড়া ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের ৯২টি এবং বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের ১০৬টি ছিটমহল রয়েছে।[8] তিনবিঘা করিডোর নামক একটুকরো ভারতীয় জমি অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশকে ইজারা দেওয়া হয়েছে, যাতে বাংলাদেশ সহজে তাদের দহগ্রাম-আঙলপোতা ছিটমহলে পৌঁছতে পারে।[9]
৩১ জুলাই ২০১৫ মধ্য রাত থেকে ভারতে অবস্থিত ৫১ ছিটমহল ও বাংলাদেশ অবস্থিত ১১১ ছিটমহল একে ওপর দেশ কে হস্থানান্তরিত করে। [10]
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ভারত ও গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মধ্যবর্তী সীমান্তরেখা। ভারতীয় রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, সিক্কিম ও অরুণাচল প্রদেশ বরাবর ৪,০৫৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য জুড়ে এই সীমান্ত প্রসারিত।[11] উভয় রাষ্ট্রই কাশ্মীর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উপর নিজ কর্তৃত্ব দাবি করে। ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের পর এই অঞ্চল চীনের দখলে চলে যায়। ভারত-মায়ানমার সীমান্তের দৈর্ঘ্য ১,৬৪৩ কিলোমিটার (১,০২১ মাইল)। এই সীমান্ত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত রাজ্যগুলির সীমানা-বরাবর প্রসারিত। উত্তর-পূর্ব ভারতে হিমালয় অঞ্চলে ভারত-ভুটান সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৬৯৯ কিলোমিটার (৪৩৪ মাইল) এবং উত্তর ভারতে হিমালয়ের পাদদেশ-অঞ্চলে ভারত-নেপাল সীমান্তের দৈর্ঘ্য ১,৭৫১ কিলোমিটার (১,০৮৮ মাইল)।[1] ভুটান, নেপাল ও বাংলাদেশ সীমান্ত দ্বারা সংকীর্ণায়িত শিলিগুড়ি করিডোর উপদ্বীপীয় ভারতের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের সংযোগ রক্ষা করছে।
ভারত সাতটি ভূপ্রাকৃতিক বিভাগে বিভক্ত। এগুলি হল:
ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর সীমান্ত জুড়ে অবস্থান করছে হিমালয়, হিন্দুকুশ ও পাটকই পর্বতমালার এক সুবিস্তৃত পার্বত্য-মেখলা। এই পার্বত্য অঞ্চলের উৎপত্তি ঘটে ভারতীয় পাত ও ইউরেশীয় পাতের মধ্যে সংঘটিত এক টেকটনিক সংঘর্ষের ফলে। উল্লেখ্য, ৫ কোটি বছর আগে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ এখনও ঘটমান। এই পার্বত্য অঞ্চলের কয়েকটি পর্বত বিশ্বে উচ্চতম। এই পর্বতগুলি মেরুপ্রদেশীয় শীতল বায়ুর ভারতে প্রবেশপথে প্রাকৃতিক বাধারূপে দণ্ডায়মান। এছাড়াও মৌসুমি বায়ুকে বাধা দিয়ে এই পর্বতমালা ভারতের জলবায়ুকেও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এই পার্বত্য অঞ্চলে উৎপন্ন নদীগুলি উর্বর সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত। প্রায় সমগ্র ইউরেশিয়া জুড়ে প্রসারিত নাতিশীতোষ্ণ মেরুবৃত্তীয় এবং ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া জুড়ে প্রসারিত ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় – জৈবভৌগোলিকগণ এই পার্বত্য অঞ্চলকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান এই দুই জৈবক্ষেত্রের সীমানা বলে মনে করেন।
ভারতে ১০০০ মিটার বা ততোধিক উচ্চতা সম্পন্ন পার্বত্য অঞ্চলের সংখ্যা আট। এগুলি হল: হিমালয়, কারাকোরাম, পাটকই, বিন্ধ্য, সাতপুরা, আরাবল্লী, পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতমালা।
হিমালয় পর্বতমালা বিশ্বের উচ্চতম পর্বতমালা। নেপাল-চীন সীমান্তে অবস্থিত মাউন্ট এভারেস্ট এই পর্বতের উচ্চতম শৃঙ্গ।[12] ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে এই পর্বতমালা ভারতকে উত্তর-পূর্ব এশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। হিমালয় বিশ্বের নবীনতম পর্বতমালাগুলির অন্যতমও বটে। প্রায় ৫ লক্ষ বর্গকিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত এই পর্বতমালা পশ্চিমে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্নভাবে প্রায় ২,৫০০ কিলোমিটা দীর্ঘ।[12] এই দুই রাজ্যের সঙ্গে হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, সিক্কিম ও পশ্চিমবঙ্গ (দার্জিলিং জেলার কিয়দংশ) হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের অন্তর্গত। হিমালয়ের অসংখ্য শৃঙ্গের উচ্চতা ৭০০০ মিটারের অধিক। তুষাররেখা সিক্কিমের কাছে ৬০০০ মিটার ও কাশ্মীরে ৩০০০ মিটারের উপর অবস্থিত। ভারতের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল সিক্কিম-নেপাল সীমান্তে অবস্থিত কাঞ্চনজঙ্ঘা। হিমালয়ের অধিকাংশ শৃঙ্গই সারাবছর তুষারাবৃত অবস্থায় থাকে। মধ্য এশিয়া থেকে আগত হিমশীতল ক্যাটাবেটিক বায়ু ভারতে প্রবেশে বাধাদান করে হিমালয়। এই কারণে উত্তর ভারতে শীতকাল বেশ সহনীয় হয়। আবার একই কারণে এদেশে গ্রীষ্মকাল বেশ উষ্ণ হয়।
কারাকোরাম বিতর্কিত জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে অবস্থিত। এই পর্বতমালার প্রায় ৬০টি শৃঙ্গের উচ্চতা ৭০০০ মিটার বা ততোধিক। এর মধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্বতশৃঙ্গ কে২ (উচ্চতা ৮৬১১ মিটার) অন্যতম। মাউন্ট এভারেস্টের (উচ্চতা ৮৮৪৮ মিটার) তুলনায় এই শৃঙ্গের উচ্চতা মাত্র ২৩৭ মিটার কম। কারাকোরামের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। মেরু অঞ্চলের বাইরে কারাকোরামেই সর্বাধিক সংখ্যক হিমবাহের দেখা মেলে। সিয়াচেন হিমবাহ (দৈর্ঘ্য ৭০ কিলোমিটার) ও বিয়াফো হিমবাহ (দৈর্ঘ্য ৬৩ কিলোমিটার) মেরু অঞ্চলের বাইরে বিশ্বের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দীর্ঘতম হিমবাহ। .[13] কারাকোরামের উত্তর-পশ্চিম সীমার ঠিক পশ্চিমে অবস্থিত হিন্দুরাজ পর্বতশ্রেণী। এর পিছনেই অবস্থিত হিন্দুকুশ পর্বতশ্রেণী। কারাকোরামের দক্ষিণ সীমা নির্ধারিত করেছে গিলগিট সিন্ধু ও শায়োক নদী। এই তিন নদীই কারাকোরামকে হিমালয়ের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।
পাটকই বা পূর্বাঞ্চল ভারতের পূর্বে মায়ানমার সীমান্তে অবস্থিত। যে টেকটনিক পদ্ধতিতে হিমালয়ের উৎপত্তি সেই একই পদ্ধতিতে এই পর্বতমালারও উৎপত্তি হয়। পাটকই পর্বতমালার ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হল কৌণিক চূড়া, খাড়া ঢাল ও গভীর উপত্যকা। পাটকই পর্বতমালা হিমালয়ের মতো সুউচ্চ ও শিলাময় নয়। তিনটি পর্বতশ্রেণী নিয়ে পাটকই পর্বতমালা গঠিত: পাটকই-বাম, গারো-খাসি-জয়ন্তিয়া ও লুসাই পাহাড়। গারো-খাসি পাহাড় মেঘালয়ে অবস্থিত। এই পাহাড়ের প্রতিবাত ঢালে চেরাপুঞ্জির নিকটে অবস্থিত মৌসিনরাম গ্রামটি পৃথিবীর সিক্ততম স্থান। এই অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বিশ্বে সর্বাধিক।[14]
প্রায় সমগ্র মধ্য ভারত জুড়ে প্রসারিত বিন্ধ্য পর্বতমালার দৈর্ঘ্য ১০৫০ কিলোমিটার।[12] এই পার্বত্য অঞ্চলের গড় উচ্চতা ৩০০০ মিটার।[12] মনে করা হয়, আরাবল্লী পর্বতের ক্ষয়াবশেষ থেকে এই পর্বতের উৎপত্তি। ভৌগোলিকভাবে, এই পর্বত উত্তর ভারতকে দক্ষিণ ভারত থেকে পৃথক করেছে। এই পর্বতশ্রেণীর পশ্চিম সীমা পূর্ব গুজরাতে মধ্যপ্রদেশ সীমান্তের কাছে অবস্থিত; আবার এর পূর্ব সীমা মির্জাপুরে গঙ্গাকে প্রায় স্পর্শ করেছে।
পূর্ব গুজরাতে আরব সাগর উপকূল অঞ্চল থেকে পূর্বে মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ে ৯০০ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে প্রসারিত সাতপুরা পর্বতশ্রেণী। এই পর্বতের অনেক শৃঙ্গই ১০০০ মিটার বা ততোধিক উচ্চতাবিশিষ্ট।[12] ত্রিকোনাকার এই স্তুপ পর্বতটির দুই ধার দিয়ে নর্মদা ও তাপ্তি নদী প্রবাহিত হয়েছে। এর সর্বোচ্চ স্থান রত্নপুরী।[15] সাতপুরা পর্বতের উত্তরে এর সমান্তরালে প্রসারিত বিন্ধ্য পর্বত। নর্মদা নদীর উত্তরে অবস্থিত এই দুই পর্বত গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলকে দাক্ষিণাত্য মালভূমি থেকে পৃথক করেছে।
আরাবল্লী পর্বতশ্রেণী ভারতের প্রাচীনতম পর্বতশ্রেণী। রাজস্থান রাজ্যে উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রসারিত এই পর্বতশ্রেণীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। এই পর্বতশ্রেণীর উত্তরপ্রান্ত বিচ্ছিন্ন পাহাড় ও শিলাময় শৈলশিরার আকারে হরিয়ানা রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রসারিত হয়ে দিল্লির নিকটে সমাপ্ত হয়েছে। এই পর্বতশ্রেণীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট আবু। গুজরাত সীমান্তের নিকট পর্বতশ্রেণীর দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত মাউন্ট আবুর উচ্চতা ১৭২২ মিটার। আরাবল্লী পর্বতমালা প্রাচীন এক তুষারাবৃত ভঙ্গিল পর্বতের ক্ষয়াবশেষ। আরাবল্লী-দিল্লি অরিগন নামে পরিচিত একটি প্রিক্যামব্রিয়ান ঘটনার ফলে আরাবল্লী পর্বতশ্রেণীর উৎপত্তি। ভারতীয় ক্রেটনের দুটি প্রাচীন খণ্ডকে সংযুক্ত করেছে এই পর্বতশ্রেণী। এই খণ্ডদুটি হল উত্তর-পশ্চিমে মারওয়াড় খণ্ড ও দক্ষিণ-পূর্বে বুন্দেলখণ্ড খণ্ড।
পশ্চিমঘাট বা সহ্যাদ্রি পর্বতমালা দাক্ষিণাত্য মালভূমির পশ্চিম সীমা বরাবর প্রসারিত। এই পর্বতমালা দাক্ষিণাত্য মালভূমিকে আরব সাগর তীরবর্তী সংকীর্ণ উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। গুজরাত-মহারাষ্ট্র সীমানার নিকট তাপ্তি নদীর দক্ষিণ ভাগ থেকে মহারাষ্ট্র, গোয়া, কর্ণাটক, কেরল ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে দাক্ষিণাত্য উপদ্বীপের দক্ষিণতম বিন্দু পর্যন্ত প্রসারিত এই পর্বতমালার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার।[15] এই পর্বতমালার গড় উচ্চতা ১০০০ মিটার।[15] কেরলে অবস্থিত আনাইমালাই পর্বতের আনাইমুদি (উচ্চতা ২৬৯৫ মিটার) পশ্চিমঘাটের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
পূর্বঘাট একটি বিচ্ছিন্ন পর্বতশ্রেণী। গোদাবরী, মহানদী, কৃষ্ণা ও কাবেরী – দক্ষিণ ভারতের এই প্রধান চার নদীর দ্বারা ক্ষয়িত ও বিচ্ছিন্ন পূর্বঘাট পশ্চিমবঙ্গ থেকে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু পর্যন্ত পূর্ব উপকূল তথা বঙ্গোপসাগরের সমান্তরালে প্রসারিত। পশ্চিমঘাট পর্বতের মতো উঁচু না হলেও পূর্বঘাটের কোনো কোনো শৃঙ্গের উচ্চতা ১০০০ মিটারের অধিক।[15] তামিলনাড়ুর নীলগিরি পর্বত পূর্ব ও পশ্চিমঘাটের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করছে।
সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমি হল সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদী-অববাহিকা জুড়ে অবস্থিত এই সুবিস্তৃত প্লাবন সমভূমি। হিমালয় পর্বতমালার সমান্তরালে পশ্চিমে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে পূর্বে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত এই সমভূমি প্রায় সমগ্র উত্তর ও পূর্ব ভারত জুড়ে প্রসারিত। এই সমভূমির আয়তন প্রায় ৭০০০০০ বর্গকিলোমিটার।
এটি বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম মরুভূমি, রাজস্থান রাজ্যে অবস্থিত। এর আয়তন ২ লক্ষ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি এবং গুজরাত রাজ্যের কিছু অংশে বিস্তৃত।
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে ২০৪ টি দ্বীপ আছে। নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ১৯ টি দ্বীপ আছে। এছাড়া ও লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ ভারতের অর্ন্তগত।
আন্দামান ও নিকোবর ভারতের বৃহত্তম দ্বীপপুঞ্জ। ইহা বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত। হিমালয় দক্ষিণমুখী শাখার নিমজ্জিত পর্বতের চুড়াতে দীপগুলি অবস্থিত। আন্দামানের চারটি প্রধান দ্বীপ আছে এবং নিকোবরের তিনটি। আন্দামানে ব্যারেন ও নারকোন্ডাম নামক দুটি আগ্নেয় গিরি অবস্থিত। উত্তর আন্দামানের স্যাডল পিক ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে অবস্হিত সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
আরব সাগরে অবস্থিত ২৫ টি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ গঠিত। এটি একটি প্রবাল দ্বীপ ।আরাবল্লী পর্বতের সম্প্রসারিত অংশে প্রবাল কীট এর দেহাবশেষ সঞ্চিত হয়ে এই দ্বীপ গঠিত হয়েছে।
== জলবায়ু ==
ভারতের মোট পুনর্নবীকরণযোগ্য জলসম্পদের পরিমাণ প্রায় ১,৯০৭.৮ ঘনকিমি/বছর।[16] দেশের মোট ব্যবহারযোগ্য ও পুনর্ভরনযোগ্য ভূমিগত জলের পরিমাণ ৩৫০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার।[17] ভারতে ভূমিগত জলের উৎসের মাত্র ৩৫% ব্যবহৃত হয়ে থাকে।[17] দেশের প্রধান নদী ও জলপথে প্রতিবছর ৪৪ মিলিয়ন টন পণ্যদ্রব্য পরিবাহিত হয়।[18] ভারতে সেচখালগুলির জলের ৪০% সরবরাহ করে ভূমিগত জল। দেশের ৫৬% জমি উর্বর ও চাষযোগ্য। কৃষ্ণমৃত্তিকা আর্দ্রতাবহ এবং শুষ্কচাষ ও তুলো, তৈলবীজ প্রভৃতি চাষের উপযোগী। বনাঞ্চলের মাটিতে চা ও কফিচাষ করা হয়। অন্যদিকে রক্তমৃত্তিকা লৌহমিশ্রিত মাটি।[19]
মুম্বাই হাই, উচ্চ অসম, কাম্বে, কৃষ্ণা-গোদাবরী ও কাবেরী উপত্যকায় ভারতের ৫.৪ বিলিয়ন ব্যারেল (৮৬০,০০০,০০০ ঘনমিটার) তেল মজুত রয়েছে।[20] অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাত ও ওড়িশায় দেশের সতেরো ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুত রয়েছে।[20] অন্ধ্রপ্রদেশে ইউরেনিয়ামের খনিও রয়েছে। হিমালয়, সোহানা, কাম্বে, নর্মদা-তাপ্তি বদ্বীপ, গোদাবরী বদ্বীপ, ও আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (বিশেষত আগ্নেয় ব্যারন দ্বীপ) – এই সাতটি “প্রদেশ”-এ উষ্ণ প্রস্রবণ থেকে ভূউত্তাপ শক্তি উৎপাদিত হয়।[21]
ভারত বিশ্বের বৃহত্তম অভ্র ব্লক ও স্পিটিং উৎপাদক।[22] ব্যারাইট ও ক্রোমাইট উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়।[22] প্লেইস্টোসিন ব্যবস্থা খনিজ সমৃদ্ধ। কয়লা ও আকরিক লৌহ উৎপাদনে ভারতের স্থান বিশ্বে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ।[20][22] আবার বক্সাইট ও কাঁচা ইস্পাত উৎপাদনে ভারত বিশ্বে পঞ্চম, আকরিক ম্যাঙ্গানিজ উৎপাদনে সপ্তম ও অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনে অষ্টম স্থানাধিকারী।[22] এছাড়া ভারতে প্রচুর আকরিক টাইটানিয়াম, হিরে ও চুনাপাথর উৎপাদিত হয়।[23] কেরলের উপকূলে বিশ্বের জ্ঞাত ও অর্থনৈতিকভাবে উপযোগী থোরিয়ামের ২৪% মজুত রয়েছে।[24] কর্ণাটকের অধুনা-পরিত্যক্ত কোলার স্বর্ণখনি থেকে সোনা উত্তোলিত হত।[25]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.