বাংলার ইতিহাস
অধুনা বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের বরাক উপত্যকার চার সহস্রাব্দের ইতিহাস / From Wikipedia, the free encyclopedia
বাংলার ইতিহাস বলতে এখন বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং আসামের বরাক উপত্যকার বিগত চার সহস্রাব্দের ইতিহাসকে বোঝায়।[1]গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদ এক অর্থে বাংলাকে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভারতের ইতিহাসে বাংলা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। প্রাচীন রোমান ও গ্রিকদের কাছে এই অঞ্চল গঙ্গারিডাই নামে পরিচিত ছিল। চার সহস্রাব্দ পূর্বে বাংলায় সভ্যতার ক্রমবিকাশ শুরু হয়।[1] প্রাচীন গ্রিক ও রোমান ভাষায় এই অঞ্চলকে গঙ্গারিডই নামে উল্লেখ করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে বাংলা সর্বদাই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রাচীন বাংলা কয়েকটি জনপদে বিভক্ত ছিল এবং বেশ কিছু প্রাচীন নগরের বৈদিক যুগে পত্তন এখানে হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। প্রাচীন বাংলার অধিবাসীরা ভারত মহাসাগরে অবস্থিত বিভিন্ন দ্বীপে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। পারস্য, আরব এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সাথে বাংলার দৃঢ় বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। [2] এই অঞ্চল মৌর্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্য সহ আরও অনেক ভারতীয় সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। বাংলা বিভিন্ন সময়ে আঞ্চলিক শাসকদের রাজধানী রূপে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রাচীন দুর্গ নগর গৌড়(কখনো একটি জনপদ রূপেও গড়ে উঠেছিল), বহু বছর ধরে বাংলার রাজধানী ছিল। (৮ম থেকে ১১ শতকে) বৌদ্ধ শাসক পাল আমলে এবং (১১ থেকে ১২ শতকের) হিন্দু শাসক সেন আমলে শাসনকালে বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। এই সময়ে বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সঙ্গীত, কলা এবং স্থাপত্যের প্রভূত উন্নতি হয়। ১৩ শতাব্দীর পর এই অঞ্চল মুসলমান সুলতান, বারো ভুঁইয়া এবং হিন্দু রাজন্যবর্গের দ্বারা শাসিত হয়েছিল। [3] ১৬ শতকের শেষে এবং ১৭ শতকের শুরুতে ঈশা খাঁ নামের একজন মুসলিম রাজপুত বারো ভূঁইয়াদের নেতৃত্ব দেন।[4]
দিল্লি সালতানাত এবং শাহী বাংলার সুলতানদের সময়, ইউরোপবাসীরা বাংলাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী বাণিজ্যিক দেশ রূপে গণ্য করত [5] এরপর, বাংলা মুঘলদের অধিকারে চলে আসে। মুঘল আমলে বাংলা ছিল সবচেয়ে সম্পদশালী প্রদেশ। মুঘল আমলে, সুবাহ বাংলা সমগ্র সাম্রাজ্যের শতকরা ৫০ ভাগ জিডিপি এর যোগান দিত।,[6] বাংলা সমুদ্রগামী জাহাজ ও বস্ত্র শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল।[7][8][9]মুঘল সাম্রাজ্যের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপির) ১২ শতাংশ উৎপন্ন হত সুবাহ বাংলায়,[6][10][11] যা সে সময় সমগ্র ইউরোপের মোট দেশজ উৎপাদনের চেয়ে অধিক ছিল।[12] ক্রমে মুঘল শাসন দুর্বল হয়ে পড়লে, মারাঠা আক্রমণের পর বাংলায় প্রায়-স্বাধীন নবাবদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর বাংলা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনে চলে যায়।
১৮ শতকের দ্বিতীয় ভাগে ব্রিটিশরা সমগ্র বাংলার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। ১৭৫৭ সলে পলাশীর যুদ্ধ ও ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধের পর কোম্পানি বাংলায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। বাংলায় ব্রিটিশদের লুণ্ঠনক্রিয়া তৎকালীন ব্রিটেনে শিল্প বিপ্লবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল।[7][8][9][13] বাংলা থেকে নিয়ে যাওয়া পুঁজি ব্রিটেনের বিভিন্ন শিল্পে, বিশেষ করে বস্ত্র শিল্পে বিনিয়োগ করে, ব্রিটিশরা প্রভূত সম্পদের অধিকারী হয়েছিল। একই সাথে, এই লুণ্ঠনের ফলে বাংলায় শিল্পায়ন ব্যাহত হয় এবং দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।[7][8][9] ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তানের স্বাধীনতার সময়ে বাংলাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। বাংলার পশ্চিম অংশ ভারতের একটি রাজ্যে পরিণত হয়। পূর্ব অংশ যুক্ত হয় পাকিস্তানের সাথে। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে আত্মপ্রকাশ করে।