বাংলার নবাব
বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার প্রাক্তন শাসকবর্গ / From Wikipedia, the free encyclopedia
বাংলার নবাব[1][2][3] মুঘল ভারতে বাংলা সুবাহের বংশগত শাসক ছিলেন। ১৮শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলার নবাব বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা তিনটি অঞ্চলের প্রকৃত স্বাধীন শাসক ছিলেন যা আধুনিক সার্বভৌম বাংলাদেশের এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ওড়িশা রাজ্য নিয়ে গঠিত ছিল। নবাব সুজাউদ্দিন খানের শাসনামলে সুবাহ বাংলার সীমা সর্বোচ্চ বিস্তার লাভ করে।[4][5][6] তাদেরকে প্রায়ই বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব হিসেবে উল্লেখ করা হয়।[7] মুর্শিদাবাদে নবাবদের বাসস্থান ছিল যা কেন্দ্রীয়ভাবে বাংলা, বিহার ও ওড়িশার মধ্যে অবস্থিত। তাদের প্রধান একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রথম নবাব হয়েছিলেন। নবাবরা মুঘল সম্রাটের নামে মুদ্রা জারি করতে থাকলেও সকল ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে স্বাধীন রাজা হিসেবে শাসন করতেন। সুবাহ বাংলা দিল্লির রাজকীয় কোষাগারে বৃহত্তম অবদান রাখতে থাকে। জগৎ শেঠের মতো ব্যাংকারদের দ্বারা সমর্থিত নবাবরা মুঘল দরবারের আর্থিক মেরুদণ্ডে পরিণত হয়।
বাংলার নবাব | |
---|---|
প্রাক্তন রাজতন্ত্র | |
প্রাদেশিক | |
বাংলার নবাবের কোট অফ আর্মস | |
সুবাহ বাংলার মানচিত্র (পূর্বে লাল) | |
প্রথম রাজশাসক | মুর্শিদকুলি খাঁ |
শেষ রাজশাসক | সিরাজউদ্দৌলা (স্বাধীন) মনসুর আলী খান (ব্রিটিশদের অধীনে) |
সম্বোধন | মহামান্য |
দাপ্তরিক আবাস | হাজারদুয়ারী প্রাসাদ |
নিয়োগকর্তা |
|
রাজতন্ত্রের সূচনা | ১৭১৭; ৩০৭ বছর আগে (1717) |
রাজতন্ত্রের সমাপ্তি | ১৮৮৪; ১৪০ বছর আগে (1884) |
নবাবগণ, বিশেষ করে ১৬ বছরের আলীবর্দী খানের শাসনামলে মারাঠাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুদ্ধে জড়িত ছিলেন। শেষের দিকে, তিনি বাংলার পুনর্গঠন ও পুনরুদ্ধারের দিকে মনোযোগ দেন।[8]
বাংলার নবাবরা প্রাক-শিল্পায়নের সময়কাল তত্ত্বাবধান করছিলেন। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা ত্রিভুজ ছিল সুতি মসলিন কাপড়, সিল্ক কাপড়, জাহাজ নির্মাণ, বারুদ, সল্টপেটর ও ধাতব শিল্পের প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র। মুর্শিদাবাদ, ঢাকা, পাটনা, সোনারগাঁও, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কশিমবাজার, বালেশ্বর, পিপেলি ও হুগলিতে অন্যান্য শহর, নগর এবং বন্দরগুলোয় কারখানা স্থাপন করা হয়। এই অঞ্চলটি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ডেনিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, অস্ট্রীয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, অস্টেন্ড কোম্পানি ও ওলন্দাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল।
ব্রিটিশ কোম্পানি শেষ পর্যন্ত নবাবদের কর্তৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ১৭৫৬ সালে কলকাতা অবরোধের নবাব বাহিনী প্রধান ব্রিটিশ ঘাঁটি দখল করার ঘটনার পর ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে একটি নৌবহর প্রেরণ করে যারা পলাশীর যুদ্ধে শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে। মীরজাফরকে পুতুল নবাব হিসেবে বসানো হয়। তার উত্তরসূরী মীর কাসিম ব্রিটিশদের ক্ষমতাচ্যুত করার ব্যর্থ চেষ্টা করেন। ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে বাংলার নবাব মীর কাসিম, অবধের নবাব সুজাউদ্দৌলা ও মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের পরাজয় ভারতজুড়ে ব্রিটিশ সম্প্রসারণের পথ প্রশস্ত করে। টিপু সুলতানের নেতৃত্বে দক্ষিণ ভারতীয় মহীশূর রাজ্য উপমহাদেশের সবচেয়ে ধনী রাজতন্ত্র হিসেবে বাংলার নবাবকে ছাড়িয়ে যায়; কিন্তু এটি স্বল্পস্থায়ী ছিল যা ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের মাধ্যমে শেষ হয়। ব্রিটিশরা তখন মারাঠা ও শিখদের পরাজিত করার দিকে নজর দেয়।
১৭৭২ সালে গভর্নর-জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় কার্যালয় মুর্শিদাবাদ থেকে নবগঠিত বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি এবং ব্রিটিশ ভারতের প্রকৃত রাজধানী কলকাতায় স্থানান্তরিত করেন।[9] নবাবরা ১৭৫৭ সাল থেকে সমস্ত স্বাধীন কর্তৃত্ব হারিয়ে ফেলে। ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ সরকার মুঘল দরবারের প্রতীকী কর্তৃত্ব বাতিল করে। ১৮৮০ সালের পর বাংলার নবাবদের বংশধরগণ কেবলমাত্র আভিজাতিক খেতাবের মর্যাদা নিয়ে মুর্শিদাবাদের নবাব হিসাবে স্বীকৃত হয়।[10]