মীর জাফর আলী খান
ঔপনিবেশিক যুগের প্রথম নবাব এবং নবাব সিরাজউদ্দউলার সেনাপ্রধান / From Wikipedia, the free encyclopedia
মীর জাফর (সম্পূর্ণ নাম সৈয়দ মীর জাফর আলী খান) [4] (১৬৯১ – ৫ ফেব্রুয়ারি ১৭৬৫), ছিলেন ইংরেজ প্রভাবিত বাংলার একজন নবাব। তার শাসনামল ভারতে কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার শুরু এবং সমগ্র উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ভূতপূর্ব নবাব সিরাজউদ্দৌলা নদীয়ার পলাশীর কাছে যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন। মীর জাফর ছিলেন পলাশী যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এবং প্রধান বিশ্বাসঘাতক। তার অধীনের সৈন্যবাহিনী যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করা ও তার বাংলা-বিরোধী পদক্ষেপের জন্য বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা-কে পরাজয় বরণ করতে হয়। ইংরেজদের সাথে মীর জাফরের পূর্বেই এই মর্মে একটি চুক্তি ছিল যে, যুদ্ধে ইংরেজরা জয়ী হলে মীর জাফর বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব হবেন। বিনিময়ে মীর জাফর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে পাঁচ লক্ষ পাউন্ড ও কলকাতায় বসবাসকারী ইউরোপীয়দের আড়াই লক্ষ পাউন্ড প্রদান করবেন।[5] ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত, সিংহাসনচ্যুত ও নিহত হলে মীর জাফর বাংলার নবাব হন। কিন্তু ব্রিটিশদের দাবিকৃত বিপুল অর্থের যোগান দিতে তিনি সমর্থ হননি। ১৭৫৮ সালে রবার্ট ক্লাইভ তার প্রতিনিধি খোজা ওয়াজিদের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, মীর জাফর চিনশুরায় ওলন্দাজদের সাথে একটি চুক্তি করেছেন। হুগলি নদীতে ওলন্দাজ জাহাজের আনাগোনা দেখতে পাওয়া যায়। এসব কিছু চুঁচুড়া যুদ্ধের পটভূমি সৃষ্টি করে।
মীর জাফর | |||||
---|---|---|---|---|---|
বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব সুজা উল-মুলক (দেশ নায়ক) হাশিম উদ-দৌলা (রাষ্ট্রের তরবারি) জাফর আলী খান বাহাদুর মাহাবাত জঙ্গ (যুদ্ধের নায়ক) | |||||
রাজত্ব | ১৭৫৭–১৭৬০ এবং ১৭৬৩–১৭৬৫ | ||||
পূর্বসূরি | সিরাজউদ্দৌলা (১৭৫৭ সালের পর) এবং মীর কাশিম (১৭৬৩ সালের পর) | ||||
উত্তরসূরি | মীর কাশিম (১৭৬০ সালের পর) এবং নাজিম উদ্দিন আলী খান (১৭৬৫ সালের পর) | ||||
জন্ম | ১৬৯১ | ||||
মৃত্যু | ৫ ফেব্রুয়ারি ১৭৬৫ (৭৪ বছর) | ||||
সমাধি | |||||
স্ত্রীগণ |
| ||||
বংশধর | সাদিক আলী খান বাহাদুর (মীর মিরন) নাজিম উদ্দিন আলী খান | ||||
| |||||
রাজবংশ | নাজাফি | ||||
পিতা | সৈয়দ আহমদ নাজাফি (মীর মিরাক) | ||||
ধর্ম | শিয়া ইসলাম[1][2][3] |
ব্রিটিশ কর্মকর্তা হেনরী ভেন্সিটার্ট মীর জাফরের কাজে সহায়তা করার জন্য তার জামাতা মীর কাশিমকে বাংলার সহকারী সুবেদার নিয়োগ করার জন্য প্রস্তাব করেন। ১৭৬০ সালে কোম্পানি মীর জাফরকে মীর কাশিমের নিকট ক্ষমতা অর্পণ করতে বাধ্য করে। মীর কাশিম ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা ব্যক্তি এবং তিনি বাংলাকে স্বাধীনভাবে শাসন করার ইচ্ছা পোষণ করতেন। ফলশ্রুতিতে ইংরেজদের সাথে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয় এবং ১৭৬৩ সালে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে পুনরায় মীর জাফরকে নবাব করা হয়। ক্ষমতাচ্যুত নবাব এই সিদ্ধান্ত মেনে নেননি। বরং তিনি কোম্পানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। মীর জাফর ১৭৬৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জাফরগঞ্জ কবরস্থানে তার সমাধি আছে।[6] বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশে মীর জাফর নামটি বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মুর্শিদাবাদের তার বাড়িটি নিমক হারাম দেউরি (বিশ্বাসঘাতকের ঘর) নামে পরিচিত। মীরজাফর এতটাই বিশ্বাসঘাতক ছিল যে এখনও কেউ অবিশ্বাসী হলে তাকে মীরজাফরের সাথে তুলনা করা হয়।