নাজাফ (আরবি: النجف) ইরাকের একটি শহর। শহরটি বাগদাদ থেকে ১৬০ কিমি (প্রায় ১০০ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত। ২০১৩ সালে এখানকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১০,০০,০০০।[2] এটি নাজাফ প্রদেশের রাজধানী। শহরটিকে শিয়া মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি শিয়া বিশ্বের আধ্যাতিক রাজধানী ও ইরাকের শিয়া রাজনীতির কেন্দ্র।[3][4][5][6][7]

দ্রুত তথ্য নাজাফ النجف, রাষ্ট্র ...
নাজাফ
النجف
Thumb
ইরাকে নাজাফের অবস্থান (লাল রং)
স্থানাঙ্ক: ৩২°০০′০০″ উত্তর ৪৪°২০′০০″ পূর্ব
রাষ্ট্র ইরাক
প্রদেশনাজাফ প্রদেশ
উচ্চতা৬০ মিটার (২০০ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১৪)
  মোট১৩,৮৯,৫০০[1]
 প্রায়[2]
সময় অঞ্চলUTC+3
বন্ধ

ধর্মীয় গুরুত্ব

শিয়া মতাবলম্বীদের নিকট নাজাফ পবিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে চতুর্থ খলিফা আলি ইবনে আবি তালিবের মাজার থাকায় নাজাফ বিখ্যাত। শিয়া মতাবলম্বীরা তীর্থস্থান হিসেবে নাজাফ সফরে আসে। আলির মাজার অবস্থিত হওয়ায় ইমাম আলি মসজিদ শিয়াদের নিকট ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।[8][8][9][10][11][12][13][14][15][16]

ইমাম আলি মসজিদ সোনায় মোড়ানো গম্বুজ সংবলিত; এছাড়াও এর দেয়ালে আরো অনেক মূল্যবান বস্তু রয়েছে। মসজিদের নিকটে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কবরস্থান ওয়াদিউস সালাম কবরস্থান অবস্থিত।[17] এখানে কয়েকজন নবির কবর আছে বলে বিশ্বাস করা হয়। হাশরের দিন আলির সাথে পুনরুত্থিত হওয়ার জন্য অনেকে মৃত্যুর পর এখানে দাফন হওয়ার ইচ্ছা করে থাকে। কয়েক শতাব্দী ধরে এখানে বিভিন্ন আশ্রয়স্থল, বিদ্যালয়, গ্রন্থাগার ও খানকা গড়ে উঠেছে। রুহুল্লাহ্ খামেনেই ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত নাজাফের মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন।[2] ইরাক, ইরান ও লেবাননের বিভিন্ন ইসলামি আন্দোলনের অনেক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ১৯৭০ এর দশকে নাজাফে পড়াশোনা করেছেন।[18]

জলবায়ু

নাজাফ মরু জলবায়ুর অঞ্চল। এখানকার বার্ষিক উষ্ণতা ২৩.৬° সেলসিয়াস এবং গড় বৃষ্টিপাত ৯৭মিমি।

আরও তথ্য নাজাফ-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য, মাস ...
নাজাফ-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) ১৪
(৫৮)
১৮
(৬৫)
২৩
(৭৪)
৩০
(৮৬)
৩৬
(৯৭)
৪১
(১০৫)
৪২
(১০৮)
৪২
(১০৭)
৩৯
(১০২)
৩৩
(৯১)
২৩
(৭৪)
১৭
(৬২)
৩০
(৮৬)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা)
(৪৪)

(৪৯)
১৩
(৫৬)
১৯
(৬৬)
২৩
(৭৪)
২৮
(৮২)
২৯
(৮৫)
২৯
(৮৪)
২৭
(৮০)
২১
(৭০)
১৩
(৫৫)

(৪৭)
১৯
(৬৬)
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) −৭.২
(১৯.০)
−৪.৫
(২৩.৯)
২.২
(৩৬.০)
৭.০
(৪৪.৬)
১৩.০
(৫৫.৪)
১৭.৮
(৬৪.০)
১৯.৪
(৬৬.৯)
২২.২
(৭২.০)
১৮.৩
(৬৪.৯)
৭.০
(৪৪.৬)
০.২
(৩২.৪)
−২.৫
(২৭.৫)
−৭.২
(১৯.০)
অধঃক্ষেপণের গড় সেমি (ইঞ্চি) ২.৫
(১)
১.৩
(০.৫)
১.৩
(০.৫)
১.৩
(০.৫)
০.৫১
(০.২)

(০)

(০)

(০)

(০)
০.৫১
(০.২)
১.০
(০.৪)
১.০
(০.৪)
৬.৯
(২.৭)
উৎস ১: Weatherbase [19]
উৎস ২: [20]
বন্ধ

ইতিহাস

নাজাফ অঞ্চল প্রাচীন ব্যবিলন শহর থেকে ৩০ কিমি দক্ষিণে এবং প্রাচীন উর শহর থেকে ৪০০ কিমি উত্তরে অবস্থিত। আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদ ৭৯১ সালের দিকে আলির মাজার হিসেবে এই শহর গড়ে তোলেন।[21]

প্রাক-ইসলামি যুগ

ইসলামের পূর্বে নাজাফে লোকবসতি ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার অনুযায়ী এখানে খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে মানুষের বসবাস ছিল। এখানে খ্রিষ্টানদের একটি বড় কবরস্থান রয়েছে।

ইসলামি যুগ

Thumb
নাজাফ শহরের দৃশ্য, আনুমানিক ১৯১৪
Thumb
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নাজাফের বাসিন্দা, আনুমানিক ১৯১৪
Thumb
ইমাম আলি মসজিদ, নাজাফ, ১৯৩২

আলিকে নাজাফে দাফন করা হয়েছিল।[22] পরবর্তীতে খলিফা হারুনুর রশিদ এখানে মাজার নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে নাজাফ শহর গড়ে উঠে।

উসমানীয় যুগে নাজাফে আরব বেদুইন গোত্র ও পার্সিয়ান বাহিনীর হামলার ফলে শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৬শ শতাব্দীতে শহরের জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। মূলত পানি সমস্যার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়।

১৮শ শতাব্দীতে নাজাফ ইরানের আলেমদের শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বলাভ করে।[23]

১৮শ শতাব্দীতে সৌদিরা শহরে হামলা চালায়। একারণে শহরের চারপাশে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মিত হয়। পরবর্তীতে এই ব্যবস্থার কারণে একটি সৌদি হামলা প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছিল।

১৮০৩ সালে ফোরাত নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে পানির সমস্যা দূরীভূত হয়। উসমানীয়রা দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর নদীর গতিপথ পরিবর্তনে সক্ষম হয়েছিল। এর ফলে শহরের অবস্থা পূর্বের চেয়ে উন্নত হয়।[24]

১৯১৫ সালে শহরে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণের পর নাজাফ থেকে উসমানীয়রা বিতাড়িত হয়। ১৯১৮ সালে শেখদের একটি বিদ্রোহে শহরের ব্রিটিশ গভর্নর নিহত হন। প্রতিশোধ হিসেবে ব্রিটিশরা শহর অবরোধ করে এবং পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। বিদ্রোহ দমনের পর শেখদের শাসন শেষ হয়ে যায়। অনেক শিয়া আলেম এসময় ইরানে নির্বাসিত হন। তারা কোম শহরকে শিয়া শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন।

সাদ্দাম পরবর্তী যুগ

Thumb
ইমাম আলি মসজিদ।

২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণের সময় নাজাফ মার্কিন বাহিনীর অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল। ২০০৩ সালের মার্চের তীব্র লড়াইয়ের সময় শহর অবরুদ্ধ হয় এবং ৩ এপ্রিল শহর দখল করা হয়।

২০০৪ সালের ৪ এপ্রিল মাহদি আর্মি একটি অভ্যুত্থানের অংশ হিসেবে নাজাফের স্প্যানিশ ঘাটিতে হামলা চালায়। অভ্যুত্থানের পর শহরে মার্কিন সেনারা প্রবেশ করে। ২০০৪ সালের আগস্টে মার্কিন ও মাহদি বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু হয়। তিন সপ্তাহ ধরে এই লড়াই চলে এবং জ্যেষ্ঠ আলেম আয়াতুল্লাহ আলি আল-সিস্তানি আলোচনা করার পর লড়াই সমাপ্ত হয়।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.