ভারত
দক্ষিণ এশিয়ার সার্বভৌম দেশ / From Wikipedia, the free encyclopedia
ভারত (শুনুনⓘ), যার সরকারি নাম ভারতীয় প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র।[19] ভৌগোলিক আয়তনের বিচারে এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। অন্যদিকে, জনসংখ্যার বিচারে এটি বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল রাষ্ট্র এবং পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ভারতের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তান[20] উত্তর-পূর্বে চীন, নেপাল ও ভুটান এবং পূর্বে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার অবস্থিত। এছাড়া, ভারত মহাসাগরে অবস্থিত শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়া হল ভারতের নিকটবর্তী কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্র। দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর ও পূর্বে বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত ভারতের উপকূলরেখার সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ৭,৫১৭ কিলোমিটার (৪,৬৭১ মাইল)।[21]
ভারতীয় প্রজাতন্ত্র | |
---|---|
ভারতের অবস্থান | |
রাজধানী | নয়াদিল্লি ২২°৪৮′ উত্তর ৮৩°০′ পূর্ব |
বৃহত্তম নগরী | মুম্বই (পৌরসভা) দিল্লি (মহানগর এলাকা) |
সরকারি ভাষা | কেন্দ্রীয় স্তরে: |
স্বীকৃত জাতীয় ভাষা | নেই |
স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা | |
ধর্ম (২০১১) | |
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | ভারতীয় |
সরকার | যুক্তরাষ্ট্রীয় সংসদীয় সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র |
দ্রৌপদী মুর্মু | |
জগদীপ ধনখড় | |
নরেন্দ্র মোদী | |
ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড় | |
• লোকসভা অধ্যক্ষ | ওম বিড়লা |
আইন-সভা | সংসদ |
• উচ্চকক্ষ | রাজ্যসভা |
• নিম্নকক্ষ | লোকসভা |
স্বাধীনতা যুক্তরাজ্য থেকে | |
• ঘোষিত | ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ |
২৬ জানুয়ারী ১৯৫০ | |
আয়তন | |
• মোট | ১২,৬৯,৩৪৬ মা২ (৩২,৮৭,৫৯০ কিমি২) (৭ম) |
• পানি (%) | ৯ |
জনসংখ্যা | |
• ২০২২ আনুমানিক | ১৩৭,৫৫,৮৬,০০০ [11] (১ম) |
• ২০১১ আদমশুমারি | ১২১,০৮,৫৪,৯৭৭ [12][13] (২য়) |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০২২ আনুমানিক |
• মোট | $১১.৭৪৫ ট্রিলিয়ন[14] (৩য়) |
• মাথাপিছু | $৮,৩৫৮[15] (১২৮তম) |
জিডিপি (মনোনীত) | ২০২২ আনুমানিক |
• মোট | $৩.৫৩৫ ট্রিলিয়ন[14] (৫ম) |
• মাথাপিছু | $২,৫১৫[15] (১৪২তম) |
জিনি (২০১০) | ৩৩.৯[16] মাধ্যম |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০২১) | ০.৬৩৩[17] মধ্যম · ১৩২তম |
মুদ্রা | ভারতীয় টাকা প্রতীক: (INR) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+৫:৩০ (ভারতীয় প্রমাণ সময়) |
প্রচলিত নয় | |
তারিখ বিন্যাস |
|
গাড়ী চালনার দিক | বাম [18] |
কলিং কোড | +৯১ |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | IN |
ইন্টারনেট টিএলডি | .in |
সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। ঐতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতা এই অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে এখানেই স্থাপিত হয়েছিল বিশালাকার একাধিক সাম্রাজ্য। নানা ইতিহাস-প্রসিদ্ধ বাণিজ্যপথ এই অঞ্চলের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রক্ষা করত। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ—বিশ্বের এই চার ধর্মের উৎসভূমি ভারত। খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে জরথুস্ত্রীয় ধর্ম (পারসি ধর্ম), ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম এ দেশে প্রবেশ করে এবং ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চল নিজেদের শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হয়। উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই দেশ পুরোদস্তুর একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়ে ওঠে। অতঃপর, এক সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালে ভারত একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে ভারত একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।
বর্তমানে ভারত ২৮টি রাজ্য ও আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বিশিষ্ট একটি সংসদীয় সাধারণতন্ত্র। ভারতীয় অর্থব্যবস্থা বাজারি বিনিময় হারের বিচারে বিশ্বে দ্বাদশ ও ক্রয়ক্ষমতা সমতার বিচারে বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম। ১৯৯১ সালে ভারত সরকার কর্তৃক গৃহীত আর্থিক সংস্কার নীতির ফলশ্রুতিতে আজ আর্থিক বৃদ্ধিহারের বিচারে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলির মধ্যে দ্বিতীয়।[22]
ভারত ১৯৫০ সাল থেকে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র, এবং গণতান্ত্রিক সংসদীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে শাসিত একটি রাষ্ট্র। এটি একটি বহুত্ববাদী, বহুভাষিক এবং বহু-জাতিগত সমাজ। ভারতের জনসংখ্যা ১৯৫১ সালে ৩৬১ মিলিয়ন থেকে ২০২২ সালে প্রায় ১.৪ বিলিয়নে বেড়েছে।[23] একই সময়ে, এর নামমাত্র মাথাপিছু আয় বার্ষিক US$৬৪ থেকে US$২,৬০১ বেড়েছে এবং এর সাক্ষরতার হার ১৬.৬% থেকে ৭৪% হয়েছে।[24] ভারত একটি দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে এবং একটি বিস্তৃত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সাথে তথ্য প্রযুক্তি পরিষেবার একটি কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে।[25] ভারতের বেশ কয়েকটি পরিকল্পিত বা সম্পূর্ণ বহির্জাগতিক মিশন সহ একটি মহাকাশ কর্মসূচি রয়েছে। এটি চতুর্থ দেশ যেটি চাঁদে একটি নৈপুণ্য অবতরণ করেছে এবং চন্দ্রের দক্ষিণ মেরুর লুনার পয়েন্টে ৬০০ কিলোমিটার (৩৭০ মা.) যার মধ্যে এটি করা প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।[26] ভারতীয় চলচ্চিত্র, সঙ্গীত এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষা বিশ্ব সংস্কৃতিতে ক্রমবর্ধমান ভূমিকা পালন করে।[27] ভারত তার দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে, যদিও অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধির মূল্যে।[28] ভারত একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র, যেটি সামরিক ব্যয়ের দিক থেকে শীর্ষস্থানীয় দেশ গুলোর মধ্যে একটি। কাশ্মীর নিয়ে তার প্রতিবেশী পাকিস্তান ও চীনের সাথে বিরোধ রয়েছে, যা বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে এখনো অমীমাংসিত।[29] আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে লিঙ্গ বৈষম্য, শিশুর অপুষ্টি, এবং ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণ।[30][31] চারটি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট সহ ভারতের ভূমি মেগাবৈচিত্র্যময়।[32] এর মোট আয়তনের ২১.৭% বনভূমি।[33] ভারতের বন্যপ্রাণী, যা ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের সংস্কৃতিতে সহনশীলতার সাথে দেখা হয়, এই বনের মধ্যে এবং অন্যত্র সুরক্ষিত আবাসস্থলে সমর্থিত।[34]