গঙ্গা নদী
ভারত ও বাংলাদেশে প্রবাহিত একটি আন্তর্জাতিক নদী / From Wikipedia, the free encyclopedia
গঙ্গা (সংস্কৃত উচ্চারণ: [ˈɡɐŋɡaː]) ভারত ও বাংলাদেশে প্রবাহিত একটি আন্তর্জাতিক নদী। এই নদী ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় নদীও বটে। গঙ্গার দৈর্ঘ্য ২,৭০৪ কিমি (১,৬৮০ মা); উৎসস্থল পশ্চিম হিমালয়ে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে। দক্ষিণ ও পূর্বে গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গঙ্গা মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। এক্ষেত্রে এর দুটি ধারা বা শাখা লক্ষনীয়- একটি ফারাক্কা বাঁধ থেকে এসে ভাগীরথী ও হুগলী নদী নামে মূলত দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে; অপরটি বাংলাদেশ সীমান্তে মহানন্দার সঙ্গে মিলিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে পদ্মা নামে গোয়ালন্দ পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে। পদ্মাকে মূলত গঙ্গার প্রধান শাখানদী বলা হয়। তবে ঐতিহাসিক কারণবশত এর অববাহিকাকেও গাঙ্গেয় বদ্বীপের অন্তর্গত বিবেচনা করা হয়। জলপ্রবাহের ক্ষমতা অনুযায়ী গঙ্গা বিশ্বের প্রথম ২০টি নদীর একটি।[5] গাঙ্গেয় অববাহিকার জনসংখ্যা ৪০ কোটি এবং জনঘনত্ব ১,০০০ জন/বর্গমাইল (৩৯০/কিমি২)। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নদী অববাহিকা।[6]
গঙ্গা নদী | |
---|---|
ব্যুৎপত্তি | সংস্কৃত ধাতু গম্ (গমন করা) |
অবস্থান | |
দেশ | ভারত, বাংলাদেশ (পদ্মা রূপে) |
নগরসমূহ | উত্তরাখণ্ড: ঋষিকেশ, হরিদ্বার
উত্তরপ্রদেশ:ফতেহগড়, বিজনোর, কনৌজ, বীথুর, কাসগঞ্জ, কানপুর, এলাহাবাদ, মির্জাপুর, বারাণসী, গাজীপুর, ফররুখাবাদ, নরোরা বিহার: ভাগলপুর, পাটনা, হাজিপুর, কাটিহার, মুঙ্গের পশ্চিমবঙ্গ: মুর্শিদাবাদ, পলাশী, নবদ্বীপ, শান্তিপুর, কলকাতা, বরাহনগর, ডায়মন্ড হারবার, হলদিয়া, বজবজ, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, ব্যারাকপুর রাজশাহী বিভাগ: রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী ঢাকা বিভাগ: ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর চট্টগ্রাম বিভাগ: চাঁদপুর, নোয়াখালী বরিশাল বিভাগ: ভোলা |
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য | |
উৎস | উত্তরাখণ্ডের দেবপ্রয়াগে অলকানন্দা নদী (দীর্ঘ দৈর্ঘ্যের কারণে বিবেচিত উৎস প্রবাহ) এবং ভাগীরথী নদীর (হিন্দু পুরাণে উৎস প্রবাহ) মিলনস্থল। নদীর জলের প্রধান উৎসের মধ্যে রয়েছে অলকানন্দার উপনদীসমূহ: মন্দাকিনী, নন্দাকিনী, পিন্ডার এবং ধৌলিগঙ্গা[1] |
• অবস্থান | দেবপ্রয়াগ, গঙ্গার প্রধান উৎসপ্রবাহের সূচনা |
মোহনা | বঙ্গোপসাগর |
• অবস্থান | গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ |
দৈর্ঘ্য | ২,৫২৫ কিমি (১,৫৬৯ মা)[2] |
অববাহিকার আকার | ১৩,২০,০০০ কিমি২ (৫,১০,০০০ মা২)[3] |
নিষ্কাশন | |
• অবস্থান | ফারাক্কা বাঁধ[4] |
• গড় | ১৬,৬৪৮ মি৩/সে (৫,৮৭,৯০০ ঘনফুট/সে) |
• সর্বনিম্ন | ১৮০ মি৩/সে (৬,৪০০ ঘনফুট/সে) |
• সর্বোচ্চ | ৭০,০০০ মি৩/সে (২৫,০০,০০০ ঘনফুট/সে) |
নিষ্কাশন | |
• অবস্থান | বঙ্গোপসাগর[4] |
• গড় | ৩৮,১২৯ মি৩/সে (১৩,৪৬,৫০০ ঘনফুট/সে) |
অববাহিকার বৈশিষ্ট্য | |
উপনদী | |
• বামে | রামগঙ্গা, ঘর্ঘরা, গোমতী, গণ্ডকী, বুড়ি গণ্ডক, কোশী, মহানন্দা |
• ডানে | যমুনা, কালিন্দী-ফুলহার, তমসা, কর্মনাশা, শোন, পুনপুন, ফল্গু, কিউল, চন্দন, অজয়, দামোদর, রূপনারায়ণ |
গঙ্গা হিন্দুদের কাছে পবিত্র নদী। তারা এই নদীকে গঙ্গা দেবীজ্ঞানে পূজা করেন।[7] গঙ্গার ঐতিহাসিক গুরুত্বও অপরিসীম। একাধিক পূর্বতন প্রাদেশিক ও সাম্রাজ্যিক রাজধানী (যেমন পাটলিপুত্র,[8] কনৌজ,[8] কাশী, এলাহাবাদ, মুর্শিদাবাদ, মুঙ্গের, নবদ্বীপ ও কলকাতা) এই নদীর তীরেই অবস্থিত।
গঙ্গা বিশ্বের পাঁচটি সবচেয়ে দূষিত নদীর একটি।[9] বারাণসীর কাছে এই নদীতে ফেসাল কলিফর্মের পরিমাণ ভারত সরকারের নির্ধারিত সীমার চেয়ে একশো গুণ বেশি।[10][11] গঙ্গাদূষণ শুধুমাত্র গঙ্গাতীরে বসবাসকারী কয়েক কোটি ভারতীয়দেরই ক্ষতি করছে না, ১৪০টি মাছের প্রজাতি, ৯০টি উভচর প্রাণীর প্রজাতি ও ভারতের জাতীয় জলচর প্রাণী গাঙ্গেয় শুশুক-এরও ক্ষতি করছে।[9] গঙ্গাদূষণ রোধে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান নামে একটি পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতি, প্রযুক্তিগত অদক্ষতা,[12] সুষ্ঠু পরিবেশ পরিকল্পনার অভাব,[13] ভারতীয় ধর্মীয় ঐতিহ্য ও বিশ্বাস[14] এবং ধর্মীয় সংগঠনগুলোর অসহযোগিতার কারণে[15] এই প্রকল্প ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।[16][17][18] কিন্তু বর্তমানে সরকারের তৎপরতায় গঙ্গা নদী অনেকটাই দূষণমুক্ত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে পুরো নদী দূষণ মুক্ত হবে, সেই আশা রাখা যায়।