Loading AI tools
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত উপন্যাস উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
দেবদাস শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি প্রণয়ধর্মী বাংলা উপন্যাস। দেবদাস শরৎচন্দ্রের প্রথমদিককার উপন্যাস। রচনার সমাপ্তিকাল সেপ্টেম্বর ১৯০০,[1] কিন্তু প্রকাশনার বছর ১৯১৭। উপন্যাসটি নিয়ে শরৎচন্দ্রের দ্বিধা ছিল বলে দীর্ঘ ১৭ বছর প্রকাশ করা থেকে বিরত ছিলেন। উপন্যাসটি তিনি রচনা করেছিলেন মাতাল হয়ে এবং বন্ধু প্রমথনাথ ভট্টাচার্যকে ১৯১৩-তে লেখা এক চিঠিতে শরৎচন্দ্র লিখেছেন, 'ওই বইটা [দেবদাস] একেবারে মাতাল হইয়া বোতল খাইয়া লেখা।'[2] ভারতীয় উপমহাদেশের প্রধান প্রধান ভাষায় উপন্যাসটি অনূদিত হয়েছে। পারুর জন্য দেবদাসের বিরহ উপজীব্য করে রচিত এই উপন্যাস অবলম্বনে ভারতীয় উপমহাদেশে ১৯টি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। দেবদাস বিরহকাতর চিরায়ত প্রেমিকের ধ্রুপদি নিদর্শন হিসেবে গণ্য।
লেখক | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
---|---|
ভাষা | বাংলা |
ধরন | উপন্যাস |
প্রকাশক | জিসিএস |
প্রকাশনার তারিখ | ৩০ জুন, ১৯১৭ |
উপন্যাসে দেবদাস (সম্পূর্ণ নাম দেবদাস মুখার্জি) বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তৎকালীন ব্রাহ্মণ জমিদার বংশের সন্তান, পার্বতী(পারু) এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে৷ বাংলার তালসোনাপুর গ্ৰামে এই দুই পরিবারের পাশাপাশি বাস। ছোটবেলা থেকেই দেবদাস ও পার্বতীর অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব যা পরবর্তীতে প্রেমের রূপ নেয়। দেবদাস বয়সে পার্বতীর চেয়ে কিছু বড়ো। দেবদাস ও পার্বতী একে অপরকে 'পারু' ও 'দেবদা' বলে ডাকে। বিদ্যালয়ে পড়াশোনা থেকে পুকুরে মাছ ধরা পর্যন্ত প্রত্যেকটি কাজই তারা এক সঙ্গে করত৷ পার্বতী কিছু ভুল করলে দেবদাস তাকে মারতো, তবুও এদের সম্পর্ক বন্ধুর মতই ছিল৷
ঘটনা পরম্পরায় দেবদাসকে কলকাতা শহরে পাঠানো হয় পড়াশোনা করার জন্য। কয়েক বছর পর ছুটির সময় সে তার গ্ৰামে ফিরে আসে। কৈশোরে উত্তীর্ণ দুজন হঠাৎই অনুভব করে, তাদের বাল্যকালের বন্ধুত্ত্ব আরও গভীর কিছুতে উত্তীর্ণ হয়েছে। দেবদাস দেখে যে তার ছোটবেলার পারু বদলে গেছে। পার্বতী তাদের কৈশোরের প্রেম বিবাহবন্ধনে পরিস্ফুটনের কথা ভাবে। প্রচলিত সামাজিক রীতি অনুযায়ী, পার্বতীর বাবা-মাকে দেবদাসের বাবা-মায়ের কাছে তাদের বিবাহের প্রস্তাব আনতে হবে।
পার্বতীর মা দেবদাসের মা হরিমতির কাছে বিয়ের প্রস্তাব আনলে তিনি আনন্দিত হলেও অ-জমিদার পরিবারের সাথে এই সম্পর্ক রাখতে তিনি বিশেষ উৎসাহী হননা। তাছাড়া পার্বতীর পরিবারে দির্ঘকাল থেকে বরের পরিবার থেকে 'পণ' গ্ৰহনের প্রথা চলে আসছে। দেবদাসের মা তাই পার্বতীর পরিবারকে "বেচা-কেনা ছোটঘর" মনে করে এই সম্পর্কে অসম্মত হন। দেবদাসের বাবা, নারায়ণ মুখার্জিও এই যুক্তি সমর্থন করেন। এতে পার্বতীর পিতা নীলকন্ঠ চক্রবর্তী অপমানিত বোধ করেন ও পার্বতীর জন্য আরও ধনী গৃহে বিয়ে ঠিক করেন।
পার্বতী একথা জানলে দেবদাস অন্তত তাকে গ্ৰহণ করবে এই আশায় রাতের অন্ধকারে তার সাথে দেখা করে। দেবদাস মনস্থির করে তার বাবাকে বললে, তিনি অরাজি হন।
বিভ্রান্ত অবস্থায়, দেবদাস বাড়ি থেকে কলকাতায় পালিয়ে যায়। সে চিঠি লিখে পার্বতীকে জানায় যে সে এই সম্পর্ক আর রাখতে চায় না।
পার্বতী বিয়ের জন্য প্রস্তুত হয়। এরপর দেবদাস বললেও আর সে ফিরে যেতে চায় না ও কাপুরুষতার জন্য তাকে ধিক্কার জানায়। তবুও, সে দেবদাসকে বলে যে তার মৃত্যুর আগে যেন সে দেবদাসকে অন্তত একবার দেখতে পায়। দেবদাস এই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
দেবদাস কলকাতায় ফিরে যায় ও পার্বতীর হাতিপোতা গ্ৰামে ভুবন চৌধুরী নামে এক জমিদারের সাথে বিয়ে হয়। ভুবন চৌধুরীর পূর্বের স্ত্রী মারা গেছেন ও তার তিনজন সন্তান রয়েছে, যারা পার্বতীর প্রায় সমবয়সী বা তার চেয়ে বড়ো।
কলকাতায় গিয়ে দেবদাসের চুনীলালের সাথে বন্ধুত্ব হয় ও তার মাধ্যমে সে চন্দ্রমুখী নামে এক [[বাঈজী র সাথে পরিচিত হয়। সে দেবদাসের প্রেমে পড়ে, যদিও দেবদাস তাকে ঘৃণা করতে থাকে। হতাশাগ্ৰস্ত দেবদাস অত্যধিক মদ্যপান শুরু করলে তার শরীর ক্রমশ ভেঙে পড়ে। চন্দ্রমুখী তার দেখভাল করতে থাকে। দেবদাস তার মনে প্রতিনিয়ত পার্বতী ও চন্দ্রমুখীর তুলনা করতে থাকে ও চন্দ্রমুখীকে সে পারুর কথা বলে। দুঃখ ভুলতে দেবদাস ক্রমশ মদ্যপানের মাত্রা বাড়াতে থাকে ও তাতে তার স্বাস্থ্যের চরম অবনতি ঘটে। চন্দ্রমুখী বুঝতে পারে যে দেবদাসের ভিতরের আসল মানুষটির আজ পতন ঘটেছে। লক্ষ্যশূন্য দেবদাস শেষপর্যন্ত চন্দ্রমুখীর প্রেমে পড়তে বাধ্য হয়।
শীঘ্র আসন্ন মৃত্যুর কথা অনুভব করতে পেরে দেবদাস, পারুকে দেওয়া তার পূর্বের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে হাতিপোতা গ্ৰামে পার্বতীর কাছে রওনা হয়। পার্বতীর বাড়ির সামনে পৌঁছে, এক অন্ধকার শীতের রাতে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে দেবদাসের মৃত্যু হয়। দেবদাসের মৃত্যুর খবর শুনে পার্বতী সেখানে ছুটে যায়, কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই, বাড়ির লোকজন তাকে বাড়ির চৌকাঠ অতিক্রম করতে দেয়না।
শরৎচন্দ্র তার অন্যান্য অনেক উপন্যাসগুলির মতো এটিতেও তৎকালীন বঙ্গসমাজের নিষ্ঠুরতার চিত্র কঠোরভাবে তুলে ধরেছেন, যে সমাজব্যবস্থা এক সত্যিকারের প্রেমের শুভ পরিনতির এক বৃহৎ বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দেবদাস-এর প্রথম চলচ্চিত্ররূপ ১৯২৮ সালে। এটি ছিলো নির্বাক ছবি। এরপর ১৯৩৫ ও ৩৬ সালে আবার নির্মিত হয়। এ দুটি সবাক। প্রথমটি বাংলায়, দ্বিতীয়টি হিন্দিতে। ১৯৫৫, ২০০২ ও ২০০৯ সালে আবার হিন্দিতে সিনেমা নির্মিত হয়। এ ছাড়া তামিল, তেলুগু, উর্দু, মালয়ালম ও অসমীয়া ভাষাতেও নির্মিত হয়েছে।[3][4][5] ভারতে অ-মহাকাব্যিক কাহিনী হিসেবে এটিই সবচেয়ে বেশিবার চিত্রায়িত কাহিনী।
বছর | শিরোনাম | ভাষা | পরিচালক | ভূমিকা | নোট | ||
---|---|---|---|---|---|---|---|
দেবদাস | পার্বতী | চন্দ্রমুখী | |||||
১৯২৭ | দেবদাস | নির্বাক চলচ্চিত্র | নরেশ মিত্র | ফণী শর্মা | তারকবালা | নিহারবালা/মিস পারুল | |
১৯৩৫ | দেবদাস | বাংলা | প্রমথেশ বড়ুয়া | প্রমথেশ বড়ুয়া | যমুনা | চন্দ্রাবতী দেবী | |
১৯৩৬ | দেবদাস | হিন্দি | প্রমথেশ বড়ুয়া | কুন্দন লাল সায়গল | যমুনা | রাজকুমারী দুবে | |
১৯৩৭ | দেবদাস | অসমীয়া | প্রমথেশ বড়ুয়া | ফণী শর্মা | জুবেইদা বেগম ধনরাজগির | মোহিনী | |
১৯৫৩ | দেবদাসু | তামিল ও তেলুগু | বেদান্তম রাঘবৈয়াহ | অক্কিনেনী নাগেশ্বর রাও | সাবিত্রী | ললিথা | "দেবদাসু" নামেও এটি পরিচিত |
১৯৫৫ | দেবদাস | হিন্দি | বিমল রায় | দিলীপ কুমার | সুচিত্রা সেন | বৈজয়ন্তীমালা | |
১৯৬৫ | দেবদাস | উর্দু | খাজা সরফরাজ | হাবিব তালিশ | শামিম আরা | নাইয়ার সুলতানা | পাকিস্তানি চলচ্চিত্র |
১৯৭৪ | দেবদাসু | তেলুগু | বিজয়া নির্মলা | ঘত্তমনেনী কৃষ্ণ | বিজয়া নির্মলা | জয়ন্তী | |
১৯৭৯ | দেবদাস | বাংলা | দিলীপ রায় | সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় | সুমিত্রা মুখোপাধ্যায় | সুপ্রিয়া চৌধুরী | |
১৯৮২ | দেবদাস | বাংলা | চাষী নজরুল ইসলাম | বুলবুল আহমেদ | কবরী সারোয়ার | আনোয়ারা | বাংলাদেশী চলচ্চিত্র |
১৯৮৯ | দেবদাস | মালয়ালম | ক্রসবেল্ট মণি | বেণু নাগবল্লী | পার্বতী | রম্য কৃষ্ণা | |
২০০২ | দেবদাস | বাংলা | শক্তি সামন্ত | প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় | অর্পিতা পাল | ইন্দ্রানী হালদার | |
২০০২ | দেবদাস | হিন্দি | সঞ্জয় লীলা বনসালি | শাহরুখ খান | ঐশ্বর্যা রাই | মাধুরী দীক্ষিত | |
২০০৯ | দেব.ডি | হিন্দি | অনুরাগ কাশ্যপ | অভয় দেওল | মাহী গিল | কল্কি কয়েচলীন | দেবদাসের আধুনিক চিত্রায়ন |
২০১০ | দেবদাস | উর্দু | ইকবাল কাশ্মীরি | নাদীম শাহ | জারা শেখ | মীরা | পাকিস্তানি চলচ্চিত্র |
২০১৩ | দেবদাস | বাংলা | চাষী নজরুল ইসলাম | শাকিব খান | অপু বিশ্বাস | মৌসুমী | বাংলাদেশী চলচ্চিত্র |
২০১৭ | দেবি | বাংলা | রিক বসু | পাওলি দাম | শুভ মুখার্জি | শাতাফ ফিগার | আধুনিক রূপায়ণ |
২০১৭ | দেব ডিডি | হিন্দি | কেন ঘোষ | অসীমা ভার্ডান | অখিল কাপুর | সঞ্জয় সুরি | ওয়েব সিরিজ আধুনিক রূপায়ণ |
২০১৮ | দাস দেব | হিন্দি | সুধীর মিশ্র | রাহুল ভাট | রিচা চাদ্দা | অদিতি রাও হায়দারি | আধুনিক রূপায়ণ |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.