Loading AI tools
বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
চাষী নজরুল ইসলাম (২৩ অক্টোবর ১৯৪১ - ১১ জানুয়ারি ২০১৫)[1][2] বাংলাদেশের একজন চলচ্চিত্র পরিচালক ছিলেন। তিনি ১৯৬১ সালে তখনকার খ্যাতিমান পরিচালক ফতেহ লোহানীর সাথে আসিয়া চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর প্রখ্যাত সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার ওবায়েদ উল হকের সহকারী হিসাবে 'দুইদিগন্ত' চলচ্চিত্রে কাজ করেন ১৯৬৩ সালে। ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনিই প্রথম নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক চলচ্চিত্র 'ওরা ১১ জন'। এই চলচ্চিত্রটি ১৯৭২-এ মুক্তি পাওয়ার মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে চাষী নজরুলের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
চাষী নজরুল ইসলাম | |
---|---|
জন্ম | চাষী নজরুল ইসলাম ২৩ অক্টোবর ১৯৪১ |
মৃত্যু | ১১ জানুয়ারি ২০১৫ ৭৩) | (বয়স
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশী |
পেশা | চলচ্চিত্র পরিচালক |
কর্মজীবন | ১৯৬১ - ২০১৫ |
দাম্পত্য সঙ্গী | জোত্স্না কাজী |
পুরস্কার | একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার |
১৯৪১ সালের ২৩ অক্টোবর বিক্রমপুর শ্রীনগর থানার সমষপুর গ্রামে আজকের চাষী নজরুলের জন্ম। চাষী ছিলেন বাবা-মায়ের জ্যেষ্ঠপুত্র। বাবা মোসলেহ উদ্দিন আহম্মদ বর্তমান ভারতের ঝাড়খণ্ডের টাটা আয়রন এন্ড স্টীল কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। বাবা মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ লস্করের পূর্বপুরুষেদের সমন্ধে যা জানা যায় সে অনুযায়ী প্রথম পুরুষ আমিন লস্কর, তারপর মোমেন লস্কর। এভাবে আহমেদ লস্কর, জরিপ লস্কর তারপর চাষীর দাদা হেলাল উদ্দিন আহমদ লস্কর। জানা যায়, শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক চাষীর নাম রেখেছিলেন। চাষীর মামা চাষী ইমাম উদ্দিন শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন এবং নবযুগ ও লাঙ্গল পত্রিকার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই সূত্রেই একদিন ফজলুল হককে একটা নাম দিতে বলা হলে তিনি চাষী ইমাম উদ্দিনের 'চাষী' আর কাজী নজরুল ইসলামের 'নজরুল ইসলাম' মিলিয়ে একটা নাম দেন।[3]
তিন মাস বয়সের চাষীকে নিয়ে চাষীর মা স্বামীর চাকরিস্থল জামশেদপুরে গিয়েছিলেন। তারপর টানা চার বছর সেখানে ছিলেন। এরপর কিছুদিনের জন্য আবার নিজেদের গ্রাম বিক্রমপুরে ফিরে এলেন। বিক্রমপুরে চাষীদের বাড়ির সামনে বেশ খোলা জায়গা ছিল। তার কিছু অংশে পারিবারিক হাট বসতো-সবাই বলতো হাটখোলা। পাশেই ছিল একটা প্রাইমারি স্কুল। এ স্কুলটার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চাষীর মামা চাষী ইমাম উদ্দিন,বর্তমানে সমরপুর হাইস্কুল ও কলেজ। ঐ স্কুলেই ক্লাস ওয়ানে তাকে ভর্তি করানো হয়। ক্লাস টুতে ওঠার পর চাষীর বাবা আবার তাকে নিয়ে গেলেন জামশেদপুরে। ওখানে চাষীর বাবারই প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল মুসলিম স্কুলে তিনি ফাইভ পর্যন্ত পড়েন। তারপর ক্লাস সিক্স-সেভেন পড়েন গোলামুড়ি মাধ্যমিক স্কুলে। তারপর আরডি টাটা হাইস্কুলে-এখান থেকেই পরে চাষী ইলেভেন পাস করেন। ঠিক এ সময় চাষীর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবা অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও তিনি চাননি সবাই বিক্রমপুরে ফিরে আসুক। মোসলেহ উদ্দিন সাহেব ভেবেছিলেন টাটা কোম্পানিতে চাষীর একটা চাকরি হবে। মূলত তিনি জামশেদপুরে স্থায়ীভাবে থাকার পরিকল্পনা করেছিলেন। চাষীর মা শায়েস্তা খানম সেরকমটি চাইলেন না। শেষমেশ ১৯৫৮ সালে সবাই বিক্রমপুর চলে এলেন।
১৯৫৭ সালের দিকে মুসলেহ উদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। টাটার চাকরি ছেড়ে দিয়ে সপরিবারে স্বদেশে চলে এলেন। কিছুদিন পর তিনি মারা যান। পিতার শোক ভুলে যাবার আগেই সংসারের বড় ছেলে হিসেবে সব দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়ে। এজি অফিসে পোস্ট-সর্টার হিসেবে ১৯৬৯ পর্যন্ত চাকরি করেছেন। এফডিসি মাত্র তখন গড়ে উঠছে। আউয়াল সাহেব বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ফতেহ্ লোহানীর প্রধান সহকারী। চাষী চাকরির ফাঁকে ফাঁকে তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, একই সঙ্গে শুরু করলেন নাটক। আলী মনসুর সাহেবের কৃষ্টি সংঘের সঙ্গে কাজ করেন, মঞ্চে অভিনয় করেন। এদিকে চাষীর সিনেমা প্রীতিটা জানতেন তার খালাতো বোনের স্বামী সৈয়দ আওয়াল। একদিন সুযোগ এলে চাষীকে পরিচয় করিয়ে দিলেন পরিচালক অভিনেতা ফতেহ লোহানীর সঙ্গে। ফতেহ লোহানী তখন 'আছিয়া' করছিলেন। চাষীকে ছোট্ট একটা চরিত্র করার জন্য নিয়েছিলেন। কিন্তু ফতেহ্'র নির্দেশে পরদিন সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৬১'র জুন মাসে চাষী কাজ শুরু করলেন। এরপর ১৯৬৩-তে কাজ করেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রাকার ওবায়েদ-উল-হকের সহকারী হিসাবে 'দুইদিগন্ত' ছবিতে। এভাবে কাজ করতে করতে এলো ১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলেন আর সবার মতো। তারপর যুদ্ধশেষে বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক চলচ্চিত্র 'ওরা ১১ জন' নির্মাণ করলেন। ১৯৭২-এ এই ছবির মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে চাষী নজরুলের আত্মপ্রকাশ ঘটলো। এছাড়া নিয়মিত বেতারে, টিভিতে সান্ধ্য অভিনয় অব্যাহত ছিল।
১৯৬৯ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর দেশের অন্যতম বিখ্যাত কাজী পরিবারের কে.জি.আহমেদের মেয়ে জোত্স্না কাজীকে বিয়ে করেন চাষী নজরুল ইসলাম।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে চারবারের মতো সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সব শেষে ২০০২-২০০৪ পর্যন্ত তিনি নির্বাচিত ছিলেন - সদস্য-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের চতুর্থবারের মতো - সাবেক সদস্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যৌথ প্রযোজনা কমিটি -সাবেক নির্বাহী সদস্য- চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি - সাবেক সদস্য ঢাকা মেট্রোপলিটন ফুটবল লিগ এসোসিয়েশন (ডামফা) - সাবেক ফুটবল সম্পাদক (১৯৭৬-৮১) ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব - ভাইস প্রেসিডেন্ট (২০০৩) ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব - জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি। - সাংস্কৃতিক সম্পাদক শত নাগরিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী - উপদেষ্টা, জাতীয়তাবাদী চলচ্চিত্র পরিষদ - সমরপুর হাইস্কুলের পরিষদ সদস্য[6]।
তিনি সক্রিয়ভাবে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ছিলেন।[7][8]
ক্রমিক পুরস্কারের নাম ছবির নাম সাল অবস্থান
১. বাংলাদেশ সিনে জার্নালিষ্ট এ্যসোসিয়েশন এওয়ার্ড সংগ্রাম ১৯৭৪ শ্রেষ্ঠ পরিচালক
২. জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শুভদা ১৯৮৬ শ্রেষ্ঠ পরিচালক
৩. সিনে ডিরেক্টরাল এসোসিয়েটস সার্বিক বিবেচনায় ১৯৮৫ চলচ্চিত্র নির্মাণ
৪. শের-ই-বাংলা স্মৃতি পুরস্কার। সার্বিক বিবেচনায় ১৯৮৮ শ্রেষ্ঠ পরিচালক
৫. বাংলাদেশ ফিল্ম ক্রিটিকস্। বিরহ ব্যথা ১৯৮৯ শ্রেষ্ঠ পরিচালক
৬. বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইয়ুথ অর্গানাইজেশন ফেডারেশন এওয়ার্ড। সার্বিক বিবেচনায় ১৯৮৯ শ্রেষ্ঠ পরিচালক
৭. সিনে ডিরেক্টরাল সোস্যাল ওয়েলফেয়ার। সার্বিক বিবেচনায় ১৯৮৯ পরিচালনায়
৮. বাংলাদেশ সোস্যাল ওয়েলফেয়ার। সার্বিক বিবেচনায় ১৯৯৫ চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব
৯. স্যার জগদীশচন্দ্র বসু স্বর্ণপদক। সার্বিক বিবেচনায় ১৯৯৫ চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব
১০. জহির রায়হাণ স্বর্ণপদক। সার্বিক বিবেচনায় ১৯৯৫ চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব
১১. জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ১৯৯৭ হাঙর নদী গ্রেনেড ১৯৯৭ শ্রেষ্ঠ পরিচালক
১২. একুশে পদক । ২০০৪ ।
১৩. বিনোদন বিচিত্রা অ্যাওয়ার্ড । ২০০৩ শ্রেষ্ঠ পরিচালক
১৪. জেনেসিস নজরুল সন্মামনা পদক । ২০০৩ ১৫. বি.সি. আর.এ.অ্যাওয়ার্ড । ২০০৫ শ্রেষ্ঠ পরিচালক
১৬. তারকালোক অ্যাওয়ার্ড । ১৯৯৭ ।
১৭. আন্তজাতির্ক বাংলাদেশ।ইন্দোকালা মিউজিক । ২০০৩ জহির রায়হান আজীবন সন্মাননা
১৮. CJFB অ্যাওয়ার্ড । । শ্রেষ্ঠ পরিচালক
১৯. আন্তজাতির্ক কালাকার পুরস্কার । ২০০৫ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রএবং শ্রেষ্ঠ পরিচালক
২০. ট্রাব অ্যাওয়ার্ড । ২০০৩ ।
চাষী নজরুল ইসলাম ২০১৪ সালের মে মাস থেকে চিকিৎসক সৈয়দ আকরামের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। এর মাঝে তার বেশ কয়েকবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে ২০১৫ সালের ১১ই জানুয়ারি রোববার ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে এই চলচ্চিত্র নির্মাতা মৃত্যুবরণ করেন।[9][10]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.