টেস্ট ক্রিকেট
পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ক্রিকেট খেলা / From Wikipedia, the free encyclopedia
টেস্ট ক্রিকেট ক্রিকেট খেলার দীর্ঘতম সংস্করণ ও এটি সর্বোচ্চ মানদণ্ডরূপে বিবেচিত।[1][2] ক্রিকেটবোদ্ধাদের কাছে প্রকৃত ক্রিকেট হিসেবে এটি পরিচিত। সাধারণত কোন একটি ক্রিকেট দলের খেলার সক্ষমতা যাচাইয়ের প্রধান মানদণ্ডরূপে বিবেচনায় আনা হয়।
টেস্ট খেলায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) কর্তৃক নির্ধারিত ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বকারী টেস্ট মর্যাদাসম্পন্ন দলগুলো অংশ নিয়ে থাকে। উভয় দলে ১১জন করে খেলোয়াড় সর্বাধিক চার ইনিংসে অংশ নিতে পারে। সর্বোচ্চ পাঁচদিন পর্যন্ত এর কার্যকারীতা থাকে। অবশ্য অনেক পূর্বেকার কিছু কিছু টেস্টে এর ব্যতিক্রম ছিল ও অধিক সময় নিয়ে টেস্ট খেলা হতো। সচরাচর, টেস্ট খেলার মাধ্যমে কোন দলের খেলার যোগ্যতা ও সহনশীলতার সর্বাপেক্ষা পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষারূপে গণ্য করা হয়।[3][4][5] মানসিক ও শারীরিক পরীক্ষাকল্পে দীর্ঘ, কঠোরপ্রকৃতির খেলা থেকে ‘টেস্ট’ নামটি আহরণ করা হয়েছে। [6]
আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত প্রথম টেস্ট খেলাটি ১৫-১৯ মার্চ, ১৮৭৭ তারিখে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ঐ খেলায় অস্ট্রেলিয়া দল ৪৫ রানে বিজয়ী হয়েছিল।[7] টেস্ট ক্রিকেটের ১০০ বছর পূর্তিতে মেলবোর্নে ১২-১৭ মার্চ, ১৯৭৭ তারিখে আয়োজন করা হয়। ইতিহাসের প্রথম টেস্টের ন্যায় অস্ট্রেলিয়া দল সফরকারী ইংল্যান্ড দলকে ৪৫ রানের একই ব্যবধানে পরাভূত করেছিল।[8]
অক্টোবর, ২০১২ সালে আইসিসি টেস্ট খেলার নিয়মাবলী পুণর্গঠিত করে দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলার আয়োজন করে।[9] ২৭ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর, ২০১৫ তারিখে অ্যাডিলেড ওভালে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দল প্রথমবারের মতো দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলায় অংশ নিয়েছিল।[10]
জানুয়ারি, ২০১৪ সালে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত আইসিসির সাধারণ সভায় নতুন সম্ভাব্য টেস্টভূক্ত দেশের অন্তর্ভূক্তির রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। এতে, আইসিসি আন্তঃমহাদেশীয় কাপ প্রতিযোগিতার বিজয়ী দলের সাথে র্যাঙ্কিংয়ের তলানীতে অবস্থানকারী টেস্ট দলের সাথে ৫-দিনের খেলা আয়োজনের কথা উল্লেখ করা হয়। যদি সহযোগী দলটি টেস্ট দলকে পরাজিত করতে পারে, তাহলে তারা নতুন টেস্ট দেশের মর্যাদা লাভসহ পূর্ণাঙ্গ সদস্যের মর্যাদা পাবে।[11]
১৮৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অস্ট্রেলীয় ক্ল্যারেন্স মুডি একগুচ্ছ খেলাকে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলার সংজ্ঞায় ফেলেছিলেন। ১৮৯১-৯২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা, ১৯২৯-৩০ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ড সফরে ইংল্যান্ড দলের প্রতিনিধিত্বমূলক খেলাগুলোয় অংশগ্রহণে টেস্ট মর্যাদা পায়।
১৯৭০ সালে ইংল্যান্ড-বহিঃবিশ্ব একাদশের মধ্যকার পাঁচটি টেস্ট খেলা ইংল্যান্ডের মাটিতে সম্পন্ন হয়। এ খেলাগুলো মূলতঃ ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার আয়োজনের কথা ছিল। তবে, দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের গৃহীত বর্ণবাদ বিরোধী নীতি প্রবর্তনের কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। শুরুতে উইজডেনসহ কিছু রেকর্ড বুকে খেলাগুলোকে টেস্টের মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে এ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এ নীতি প্রবর্তিত হয় যে, শুধুমাত্র টেস্টভূক্ত দেশসমূহের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট খেলার আয়োজন করা হবে। এর ব্যতিক্রম রয়েছে ভৌগোলিক ও জনসংখ্যাগত ছোট দেশসমূহের জোট ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৯২৮ সালে একত্রিত আকারে দল গঠন)। তাসত্ত্বেও, ২০০৫ সালে আইসিসি ছয়দিনের সুপার সিরিজকে নিয়মের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক টেস্ট খেলা হিসেবে ঘোষণা করে। অক্টোবর, ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়া-বহিঃবিশ্ব একাদশের মধ্যে খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিছু ক্রিকেটবোদ্ধা ও বিল ফ্রিন্ডলের ন্যায় কিছু পরিসংখ্যানবিদ আইসিসির এ নিয়মকে অস্বীকার করেছেন ও এ রেকর্ডগুলোকে বাদ দিয়ে রেখেছেন। ১৯৭১-৭২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়া-বহিঃবিশ্ব একাদশের খেলাগুলো টেস্টের মর্যাদা পায়নি। কেরি প্যাকারের ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটের অংশ হিসেবে বাণিজ্যধর্মী সুপারটেস্টগুলো ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ সময়কালে ডব্লিউএসসি অস্ট্রেলিয়া, ডব্লিউএসসি বিশ্ব একাদশ ও ডব্লিউএসসি ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামে খেলানো হয়। এগুলোও আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট খেলারূপে গণ্য করা হয় না।
লিঙ্গ সমতায়ণে মহিলাদের টেস্ট ক্রিকেটকে পুরুষদের টেস্ট ক্রিকেটের সমতুল্যরূপে গণ্য করা হয়। পুরুষদের তুলনায় এ খেলার ধরনে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। তন্মধ্যে, চারদিনব্যাপী টেস্ট খেলার আয়োজন অন্যতম।