Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রাশিয়ার চেচনিয়ায় সংঘটিত সমকামী-বিরোধী অভিযানের মধ্যে রয়েছে জোরপূর্বক গুম-খুন–গোপন অপহরণ, কারারুদ্ধকরণ, নির্যাতন–এবং ব্যক্তিদের যৌন অভিমুখিতার উপর ভিত্তি করে কর্তৃপক্ষের দ্বারা সংঘটিত বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, যেখানে মূলত সমকামী পুরুষদের টার্গেট করা হচ্ছে। মানবাধিকার গোষ্ঠী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষের দ্বারা সমকামী বা উভকামী সন্দেহে আটককৃত প্রতি ১০০ জনের মধ্যে অন্তত ২ জন বন্দিশিবিরে বন্দী থাকা অবস্থায় মারা গেছে বলে জানা গেছে।[3]
চেচনিয়ায় সমকামী-বিরোধী অভিযান | |||
---|---|---|---|
তারিখ | ২০১৭–বর্তমান | ||
অবস্থান | |||
কারণ | কর্তৃত্ববাদ, ইসলামবাদ, এলজিবিটি অধিকারের বিরোধিতা | ||
পদ্ধতি | বন্দিশিবির, নির্যাতন, সম্মান রক্ষার্থে হত্যা, মৃত্যুদণ্ড | ||
ফলাফল | চলমান | ||
পক্ষ | |||
| |||
নেতৃত্ব দানকারী | |||
রাশিয়ান এলজিবিটি নেটওয়ার্ক | |||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||
|
১ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে রুশ ভাষার একটি সরকার-বিরোধী সংবাদপত্র নোভায়া গাজেতা উক্ত অভিযোগগুলো নিয়ে প্রাথমিকভাবে একটি রিপোর্ট করে, যেখানে বলা হয় যে ফেব্রুয়ারি ২০১৭ থেকে ১০০ জনেরও বেশি লোককে আটক ও নির্যাতন করা হয়েছে এবং অন্তত তিনজন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে মারা গেছে। সংবাদপত্রটি চেচেন স্পেশাল সার্ভিসের সূত্রের বরাত দিয়ে সমকামী আটকের এই সারিকে একটি "প্রতিষেধক ঝাঁটা" বলে অভিহিত করে। যে সাংবাদিক এই বিষয়ে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন তিনি আত্মগোপনে চলে যান। পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনকারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
চেচেন কর্তৃপক্ষের পদ্ধতিগত এলজিবিটি-বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে বর্ণিত কার্যকলাপের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রুশ ও আন্তর্জাতিক কর্মীরা বন্দিশিবির থেকে বেঁচে যাওয়া এবং অন্যান্য দুর্বল চেচেনদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে, কিন্তু তাঁদের নিরাপদে রাশিয়া ত্যাগ করার জন্য ভিসা পেতে অসুবিধা হয়েছিল।[4]
নিপীড়নের রিপোর্টগুলো বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়। চেচেন প্রজাতন্ত্রের প্রধান রমজান কাদিরভ কেবলমাত্র কোনো ধরনের নিপীড়নের ঘটনাকেই অস্বীকার করেন নি, বরং চেচনিয়ায় সমকামী পুরুষদের অস্তিত্বের কথাও অস্বীকার করেছেন, আরও মন্তব্য করেন যে এই ধরনের লোক থেকে থাকলে তাঁদের নিজেদের পরিবারই হত্যা করবে।[5][6] মস্কোর কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সন্দিহান ছিলেন, যদিও মে মাসের শেষের দিকে রুশ সরকার চেচনিয়ায় একটি তদন্তকারী দল পাঠাতে সম্মত হয়।[7] অসংখ্য জাতীয় নেতা ও পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য জনসাধারণ চেচনিয়ার কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেন এবং রাশিয়া ও অন্যত্র প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই) দ্বারা ডিসেম্বর ২০১৮ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে এলজিবিটি ব্যক্তিদের উপর নিপীড়ন সংঘটিত হয়েছিল এবং কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি উপেক্ষা করে যায়।[8][9] ২০২১ সালের কাউন্সিল অফ ইউরোপের এলজিবিটিআই-বিরোধী ঘৃণামূলক অপরাধের প্রতিবেদনে প্রতিবেদক ফোরা বেন শিখা "২০১৭ সালে চেচনিয়ায় এলজিবিটিআই লোকেদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হামলা"কে "ইউরোপে কয়েক দশকের মধ্য ঘটা এলজিবিটিআই লোকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার একক সবচেয়ে ভয়াবহ উদাহরণ" হিসেবে বর্ণনা করেন।[10]
১১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে রিপোর্ট করা হয় যে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দেশটিতে আবারও একটি 'সমকামী শুদ্ধি অভিযান' আরম্ভ হয়, বেশ কয়েকজন সমকামী পুরুষ ও মহিলাকে আটক করা হয়।[11][12][13][14] রাশিয়ান এলজিবিটি নেটওয়ার্ক দাবি করে যে প্রায় ৪০ জনকে আটক করা হয় এবং দুজনকে হত্যা করা হয়।[15][16]
যদিও কিছু লোক চেচনিয়া থেকে পালিয়ে গেছে এবং কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা যে দেশে স্থানান্তরিত হয়েছে সেখানে মর্যাদা পেয়েছে, তবুও চেচনীয় এজেন্টরা তাঁদের এই অঞ্চলের বাইরে তাড়া করছে।[17][18][19][20][21] কিছু কিছু ক্ষেত্রে আটকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।
চেচেন প্রজাতন্ত্রে এলজিবিটি অধিকারের অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই মানবাধিকার সংস্থাগুলোর (অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ) উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং এটিকে রুশ ফেডারেশনের অভ্যন্তরে সামগ্রিকভাবে "বিশেষত বিবর্ণ" হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে।[22] ২০১৭ সালের ক্র্যাকডাউনের পূর্বে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনার জন্যও একে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হতো।[23] চেচনিয়া হলো মূলত একটি মুসলিম, অতি-রক্ষণশীল সমাজ যেখানে সমকামভীতি ব্যাপক এবং সমকামিতা ট্যাবু, এবং যেখানে একজন সমকামী আত্মীয় থাকা "পুরো বংশের উপর দাগ" হিসেবে দেখা হয়।[24]
ফেডারেল রুশ এলজিবিটি আইন চেচনিয়াতেও প্রযোজ্য, যেহেতু এটি রুশ ফেডারেশনের একটি অংশ। যাইহোক, দক্ষিণ রাশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের মতো চেচনিয়াতেও রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন "আংশিকভাবে ধর্মীয় চরমপন্থাকে সহযোজিত করার প্রয়াসে স্থানীয় নেতাদের তাঁদের প্রথাগত মূল্যবোধের উদ্ভাসন কার্যকর করার ক্ষমতা দিয়েছেন, যেটি মূলত লোকচক্ষুর আড়ালে পরিচালিত হচ্ছে"।[25]
যদিও ১৯৯৩ সালে রাশিয়ায় সমকামিতাকে বৈধ করা হয়েছিল,[26] তথাপি ১৯৯৬ সালে চেচনিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী রাষ্ট্রপতি আসলান মাসখাদভ তাঁর চেচেন রিপাবলিক অফ ইচকেরিয়াতে শরিআ আইন গ্রহণ করেছিলেন এবং চেচেন দণ্ডবিধির ১৪৮ অনুচ্ছেদটি সকল প্রকার "অপ্রাকৃতিক যৌনসঙ্গম"কে শাস্তিযোগ্য করে তোলে, যেখানে প্রথম দুবার অপরাধের পরে বেত্রাঘাত এবং তৃতীয়বার অপরাধের পরে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার বিধান করা হয়।[23] চেচনিয়া ২০০০ সালে সরাসরি রুশ শাসনে ফিরে আসে এবং এরপর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ফেডারেল আইন ও মানবাধিকার বিধি মেনে চলে। প্রকৃতপক্ষে, চেচনিয়া কিছুটা স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখেছে এবং চেচেন প্রজাতন্ত্রের বর্তমান প্রধান রমজান কাদিরভ, "চেচনিয়ার দৈনন্দিন জীবনে ইসলামকে সামনে নিয়ে এসেছেন, এবং সমকামী ব্যক্তিরা যাঁরা তাদের যৌনতা প্রকাশ করে, তাঁদের প্রতি প্রায়শই বৈষম্য করা হয় এবং তাঁদের পরিবার কর্তৃক নিগৃহীত হয়"।[27]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.