Loading AI tools
ভারতের সর্বোচ্চ আইন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভারতের সংবিধান ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন। এই সংবিধানে বহুকক্ষবিশিষ্ট সরকারব্যবস্থা গঠন, কার্যপদ্ধতি, আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদ, গোত্রীয় স্বাতন্ত্র্যবাদ, সমকামী অধিকারত্ববাদ, ক্ষমতা ও কর্তব্য নির্ধারণ; মৌলিক অধিকার, নির্দেশমূলক নীতি, এবং নাগরিকদের কর্তব্য নির্ধারণের মাধ্যমে দেশের মৌলিক রাজনৈতিক আদর্শের রূপরেখাটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদে ২৮৪ জনের সই করলে গৃহীত হয় এবং এই দিনটি জাতীয় আইন দিবস হিসেবে পরিচিত। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে এই সংবিধান জোরদারভাবে কার্যকরী হয়।[3]
ভারতের সংবিধান | |
---|---|
সাধারণ | |
এখতিয়ার | ভারত |
অনুমোদন | ২৬ নভেম্বর ১৯৪৯ |
কার্যকরের তারিখ | ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ |
পদ্ধতি | যুক্তরাষ্ট্রীয় সংসদীয় সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র |
সরকারি কাঠামো | |
শাখা | তিনটি (আইনসভা, নির্বাহী ও বিচার বিভাগ) |
রাষ্ট্র প্রধান | ভারতের রাষ্ট্রপতি |
কক্ষ | দুটি (রাজ্যসভা ও লোকসভা) |
নির্বাহী | সংসদের নিম্নকক্ষের নিকট দায়বদ্ধ প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা |
বিচারব্যবস্থা | সর্বোচ্চ আদালত, উচ্চ আদালত ও জেলা আদালত |
মৈত্রীতন্ত্র | যুক্তরাষ্ট্রীয়[1] |
নির্বাচনী কলেজ | হ্যাঁ, রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য |
নিহিত ধারা | ২টি |
ইতিহাস | |
সংশোধনী | ১০৬ |
সর্বশেষ সংশোধনী | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ (১০৬তম) |
উদ্ধৃতি | Constitution of India (পিডিএফ), ২০২০-০৯-০৯, ২০২০-০৯-২৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা |
অবস্থান | সংবিধান সদন, নয়াদিল্লি, ভারত |
লেখক |
|
স্বাক্ষরকারী | গণপরিষদের ২৮৪ জন সদস্য |
স্থানান্তর | ভারত শাসন আইন, ১৯৩৫ ভারতীয় স্বাধীনতা অধিনিয়ম ১৯৪৭ |
উল্লেখ্য,১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি জাতীয় কংগ্রেসের ঐতিহাসিক স্বাধীনতা ঘোষণার স্মৃতিতে ২৬ জানুয়ারি তারিখটি সংবিধান পরিচালনার জন্য গৃহীত হয়েছিল। সংবিধানে ভারতীয় রাজ্যসংঘকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মসাপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র রূপে ঘোষণা করা হয়েছে; এই দেশের নাগরিকবৃন্দের জন্য ন্যায়বিচার, সাম্য ও স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা হয়েছে এবং জাতীয় ও প্রাদেশিক সংহতি সুরক্ষার জন্য নাগরিকদের পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃভাব ও গোত্রপ্রীতি সুজাগরিত করে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করা হয়েছে। "সমাজতান্ত্রিক", "ধর্মসাপেক্ষ" ও "সংহতি" এবং সকল নাগরিকের মধ্যে "ভ্রাতৃভাব-গোত্রপ্রীতি",পূর্বপ্রচলিত আইন সমূহ "ভারত শাসন আইন, ভারত কাউন্সিল আইন, ভারত স্বাধীনতা আইন"– এই শব্দগুলি ১৯৭৬ সালে একটি সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়।[4] সংবিধান প্রবর্তনের স্মৃতিতে ভারতীয়রা প্রতিবছর ২৬ জানুয়ারি তারিখটি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে উদ্যাপন করে।[5] ভারতের সংবিধান বিশ্বের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহ মধ্যে বৃহত্তম[6] লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান। এই সংবিধানে মোট ২৫টি ভাগে ৪৭০টি অনুচ্ছেদ, ১২টি তফসিল এবং ১০৫টি সংশোধন বিদ্যমান।[7] ভারতের সংবিধানের ইংরেজি সংস্করণে মোট শব্দসংখ্যা ১৯৫,০০০টি। এই সংবিধানের প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পূর্বপ্রচলিত ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের চিরকালের জন্য বহাল রাখা হয়। দেশের সর্বোচ্চ আইন হওয়ার দরুন ভারত সরকার প্রবর্তিত প্রতিটি আইনকে সংবিধান অনুসারী হতে হয়। সংবিধানের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান ভীমরাও রামজি আম্বেদকর ছিলেন ভারতীয় সংবিধানের প্রধান মহাস্থপতি।
১৮৫৮ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলই ছিল ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে। এই সময় দেশকে বিদেশি শাসকদের হাত থেকে চিরতরে জন্য মুক্ত করতে এক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত অধিরাজ্য ও পাকিস্তান অধিরাজ্যের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে এই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের সংবিধান গৃহীত হলে ভারতকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক রূপে ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতা অর্জনের পরে ভারত শাসনের জন্য প্রয়োজনীয় আইনের নীতি ও রূপরেখাগুলি এই সংবিধানে ঘোষিত হয়। সংবিধান কার্যকরী হওয়ার দিন থেকে ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির অধিরাজ্যের পরিবর্তে পূর্ণ স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সংসদ ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পনির হাত থেকে স্বহস্তে তুলে নেয়। এর ফলে ব্রিটিশ ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আসে। ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন বলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতে ব্রিটিশ সরকারের রূপরেখাটি চূড়ান্ত করে। ইংল্যান্ডে ভারত সচিব বা সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর ইন্ডিয়া পদটি সৃষ্টি করা হয়। এঁর মাধ্যমে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারত শাসন করত। সেক্রেটারি অফ স্টেটকে সহায়তা করত ভারতীয় কাউন্সিল (কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া)। ভারতের গভর্নর-জেনারেলের পদটিও সৃষ্টি করা হয় এই সময়। সেই সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের উচ্চ পদাধিকারীদের নিয়ে ভারতে একটি কার্যনির্বাহী পরিষদও (এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল) সৃষ্টি করা হয়। ১৮৬১ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইন বলে কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ও অ-পদাধিকারী সদস্যদের নিয়ে আইন পরিষদ বা লেজিসলেটিভ কাউন্সিল স্থাপিত হয়। ১৮৯২ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইন বলে দেশে প্রাদেশিক আইনসভা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আইন পরিষদে ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। এই সকল আইন বলে সরকার ব্যবস্থায় ভারতীয়দের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলেও তাঁদের ক্ষমতা ছিল সীমিতই। ১৯০৯ ও ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন দুটি সরকার ব্যবস্থায় ভারতীয়দের অংশগ্রহণের সুযোগ আরও প্রসারিত করে।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের সম্পূর্ণ প্রয়োগ না ঘটলেও পরবর্তীকালে ভারতের সংবিধানে এই আইনের প্রভাব অপরিসীম। সংবিধানের বহু বিষয় সরাসরি এই আইন থেকে গৃহীত হয়। সরকারের যুক্তরাষ্ট্রীয় গঠন, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিষদ ও রাজ্যসভা নিয়ে দ্বিকক্ষীয়/বহুকক্ষীয় আইনসভা, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারগুলির মধ্যে আইনবিভাগীয় ক্ষমতাবণ্টনের মতো বিষয়গুলি উক্ত আইনের এমন কতকগুলি বিষয় যা বর্তমান সংবিধানেও গৃহীত হয়েছে।
১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এট্লি ভারতে একটি ক্যাবিনেট মিশন প্রেরণ করেন। এই মিশনের সদস্য ছিলেন এ. ভি. আলেকজান্ডার, প্যাথিক লরেন্স ও স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস। এই মিশনের উদ্দেশ্য ছিল ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ রাজশক্তির হাত থেকে ভারতীয় নেতৃবর্গের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ ও চূড়ান্তকরণ এবং কমনওয়েলথ অফ নেশনসে একটি অধিরাজ্যের মর্যাদায় ভারতকে স্বাধীনতা প্রদান।[8][9] এই মিশন সংবিধানের রূপরেখা নিয়েও আলোচনা করে এবং সংবিধান খসড়া কমিটি স্থাপনের জন্য প্রাথমিক কয়েকটি নির্দেশিকাও চূড়ান্তকরণ হয়। ১৯৪৬ সালের আগস্ট মাসে ব্রিটিশ ভারতীয় প্রদেশগুলির মোট ২৯৬টি আসনে নির্বাচন সমাপ্ত হয়। ১৯৪৬ সালের ৯ ডিসেম্বর ভারতের গণপরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং এই দিনই সংবিধান রচনার কাজ শুরু হয়।[10]
১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই ভারতীয় স্বাধীনতা আইন কার্যকরী হয়। এই আইনবলে ব্রিটিশ ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি করা হয়। স্থির হয়, সংবিধান প্রবর্তন পর্যন্ত এই দুই রাষ্ট্র কমনওয়েলথ অফ নেশনসের দুটি অধিরাজ্যের মর্যাদা পাবে। এই আইনবলে ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে ভারত ও পাকিস্তান সংক্রান্ত বিষয় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং উভয় রাষ্ট্রের উপর সংশ্লিষ্ট গণপরিষদের সার্বভৌমত্ব মেনে নেওয়া হয়। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি সংবিধান প্রবর্তিত হলে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন প্রত্যাহৃত হয় এবং ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির অধিরাজ্যের বদলে সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক মর্যাদা অর্জন করে। ১৯৪৯ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের জাতীয় আইন দিবস হিসেবেও পরিচিত।
প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত ভারতের গণপরিষদ সংবিধানের খসড়াটি রচনা করে।[10] জওহরলাল নেহরু, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী, রাজেন্দ্র প্রসাদ, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নলিনীরঞ্জন ঘোষ প্রমুখেরা ছিলেন এই গণপরিষদের প্রধান ব্যক্তিত্ব। তফসিলি শ্রেণীগুলি থেকে ৩০ জনেরও বেশি সদস্য ছিলেন। ফ্র্যাঙ্ক অ্যান্টনি ছিলেন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের, এবং এইচ. পি. মোদী ও আর. কে. সিধওয়া ছিলেন পারসি সম্প্রদায়ের সদস্য। সংখ্যালঘু কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন হরেন্দ্রকুমার মুখোপাধ্যায়; তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট খ্রিস্টান এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ব্যতীত অন্যান্য ভারতীয় খ্রিস্টানদের প্রতিনিধি। অরি বাহাদুর গুরুং ছিলেন গোর্খা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। বিশিষ্ট জুরি আল্লাদি কৃষ্ণস্বামী আইয়ার, বি. আর. আম্বেডকর, বেনেগাল নরসিং রাউ এবং কে. এম. মুন্সি, গণেশ মভলঙ্কার প্রমুখেরাও গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। বিশিষ্ট মহিলা সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সরোজিনী নাইডু, হংস মেহেতা, দুর্গাবাই দেশমুখ ও রাজকুমারী অমৃত কৌর। সচ্চিদানন্দ সিনহা ছিলেন গণপরিষদের প্রথম সভাপতি। পরে রাজেন্দ্র প্রসাদ এর নির্বাচিত সভাপতি হন।[10]
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পরিষদের অধিবেশনে একাধিক কমিটি গঠন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই কমিটিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মৌলিক অধিকার কমিটি, কেন্দ্রীয় ক্ষমতা কমিটি ও কেন্দ্রীয় সংবিধান কমিটি। ১৯৪৭ সালের ২৯ আগস্টে ভীমরাও রামজি আম্বেদকরের নেতৃত্বে খসড়া কমিটি গঠিত হয়। আম্বেদকর ছাড়াও এই কমিটিতে আরও ছয় জন সদস্য ছিলেন। কমিটি একটি খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে সেটি ১৯৪৭ সালের ৪ নভেম্বরের মধ্যে গণপরিষদে পেশ করেন।
গণপরিষদ সংবিধান রচনা করতে ২ বছর ১১ মাস ১৭ দিন সময় নিয়েছিল। এই সময়কালের মধ্যে ১৬৬ দিন গণপরিষদের অধিবেশন বসে।[5] একাধিকবার পর্যালোচনা ও সংশোধন করার পর ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি গণপরিষদের মোট ৩০৮ জন সদস্য সংবিধান নথির দুটি হস্তলিখিত কপিতে (একটি ইংরেজি ও একটি হিন্দি) সই করেন। দুই দিন বাদে এই নথিটি ভারতের সর্বোচ্চ আইন ঘোষিত হয়।
পরবর্তী ৭০ বছরে ভারতের সংবিধানে মোট ১০৫টি সংশোধন আনা হয়েছে।
ভারতের সংবিধান বিশ্বের কোনো সার্বভৌম রাষ্ট্রের বৃহত্তম সংবিধান,[11][12][13] এবং বলবৎ হওয়ার সময় এতে ২২টি ভাগ, ৩৯৫টি অনুচ্ছেদ ও ৮টি তফসিল ছিল।[14] প্রায় ১,৪৫,০০০টি শব্দবিশিষ্ট ভারতের সংবিধান বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সংবিধান। প্রথম স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য অ্যালাবামার সংবিধান।[15]
এই সংশোধিত সংবিধান একটি প্রস্তাবনা ও ৪৭০টি অনুচ্ছেদ নিয়ে গঠিত,[lower-alpha 1] যাদের ২৫টি ভাগে দলবদ্ধ করা হয়েছে।[lower-alpha 2][16] এছাড়া এতে ১২টি তফসিল[lower-alpha 3] ও একাধিক পরিশিষ্ট রয়েছে।[16][17] একে ১০৬ বার সংশোধন করা হয়েছে, এবং ২০২৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরে এর সবচেয়ে সাম্প্রতিক (১০৬তম) সংশোধন বলবৎ হয়েছিল।
সংবিধানের পৃথক পৃথক অধ্যায়গুলি "ভাগ" নামে পরিচিত। প্রত্যেকটি ভাগে আইনের এক একটি ক্ষেত্রে আলোচিত হয়। ভাগের অনুচ্ছেদগুলি উপজীব্য হল নির্দিষ্ট বিষয়গুলি।
সরকারের আমলাতান্ত্রিক কাজকর্ম ও নীতিগুলির বর্গবিভাজন ও সারণীকরণ করা হয়েছে তফসিলগুলিতে।
সংবিধানের বিভিন্ন সংস্করণে পরিশিষ্টের সংখ্যা বিভিন্ন। বাংলা ভাষায় সংবিধানের তৃতীয় সংস্করণে তিনটি পরিশিষ্ট রয়েছে:
সংবিধান সরকারের আইনসভা, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা নির্ধারণ করে এবং তারা সেই নির্ধারিত ক্ষমতার মধ্যেই সীমিত থাকে।[46] সংবিধানের ফলে ভারত এক সংসদীয় ব্যবস্থা দ্বারা শাসিত, যেখানে নির্বাহিকবর্গ আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ।
প্রত্যেক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নিজস্ব সরকার রয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুরূপে প্রত্যেক রাজ্যের নিজস্ব রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী রয়েছে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ক্ষেত্রে উপরাজ্যপাল বা প্রশাসক এবং দিল্লি ও পুদুচেরি (কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল) কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ক্ষেত্রে নিজস্ব মুখ্যমন্ত্রী রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য সরকার পরিচালনা করা সম্ভব না হলে অনুচ্ছেদ ৩৫৬ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি রাজ্য সরকার উচ্ছেদ করে সেখানে প্রত্যক্ষ শাসনব্যবস্থা চালু করতে পারেন, যা রাষ্ট্রপতি শাসন নামে পরিচিত। এই ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে, এবং বিভিন্ন যুক্তিহীন রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে রাজ্য সরকার উচ্ছেদ করে সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন লাগু করা হতো। এস. আর. বোম্মাই বনাম ভারতীয় সংঘ মামলার পর[47][48] রাষ্ট্রপতি শাসন লাগু করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে যেহেতু আদালতেরা তাদের পর্যালোচনার অধিকারকে জাহির করেছে।[49]
৭৩তম ও ৭৪তম সংশোধন আইনের ফলে গ্রামাঞ্চলে পঞ্চায়েত প্রথা ও নগরাঞ্চলে পৌরসভা চালু করেছিল।[16] অনুচ্ছেদ ৩৭০ জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেছিল।
ভারতের সংবিধানকে প্রকৃতি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং অন্তরাত্মা অনুযায়ী এককেন্দ্রিক বলা হয়। এই সংবিধানে একটি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন একটি লিখিত, শীর্ষ সংবিধান; ত্রিস্তরীয় সরকার ব্যবস্থা (কেন্দ্র, রাজ্য ও স্থানীয়); ক্ষমতার বিভাজন; দ্বিকক্ষ আইনসভা; ও স্বাধীন বিচার বিভাগ। আবার, এই সংবিধানে একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন একক সংবিধান, একক নাগরিকত্ব, সম্মিলিত বিচার ব্যবস্থা, নমনীয় সংবিধান, শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা রাজ্যপাল নিয়োগ, সর্বভারতীয় সেবা (আইএএস, আইপিএস ও আইএফএস) ও জরুরি অবস্থার বিধানাবলী। যুক্তরাষ্ট্রীয় ও এককেন্দ্রিক কাঠামোর মধ্যে এই নজিরবিহীন সংমিশ্রণের জন্য ভারতের সংবিধানকে আধা-যুক্তরাষ্ট্রীয় বলা হয়।[50]
ভারতের সংবিধানে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য/প্রাদেশিক সরকারগুলির মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে।
সংসদ ও রাজ্য বিধানসভাগুলির ক্ষমতাগুলিকে শ্রেণীবিভক্ত/বিকেন্দ্রীকরণ করে তিনটি তালিকাভুক্তি করা হয়েছে। এই তালিকাগুলি হল কেন্দ্রীয়/ইউনিয়ন তালিকা, রাজ্য/প্রাদেশিক তালিকা ও যুগ্ম/সমবর্তী তালিকা। জাতীয় প্রতিরক্ষা, বৈদেশিকনীতি, মুদ্রাব্যবস্থার মতো বিষয়গুলি কেন্দ্রীয়/ইউনিয়ন তালিকার অন্তর্গত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, স্থানীয় সরকার ও কয়েকটি করব্যবস্থা রাজ্য/প্রাদেশিক তালিকাভুক্ত। ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি ব্যতিরেকে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য/প্রাদেশিক তালিকায় আইন প্রণয়ন করতে পারে না। আবার শিক্ষা, পরিবহন, অপরাধমূলক আইনের মতো কয়েকটি বিষয় যুগ্ম/সমবর্তী তালিকাভুক্ত। এই সব ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়েই আইন প্রণয়ন করতে পারেন। অবশিষ্ট ক্ষমতা ভারতের সংসদ/গভর্নর উপদেষ্টা বোর্ডের হাতে ন্যস্ত।
ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা, যা রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত, তাও ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রবণতার একটি নিদর্শন।
ভারতের সংবিধানের অধ্যায় ১ একটি সংসদীয় ব্যবস্থা গঠন করে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী কার্যত বেশিরভাগ নির্বাহিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। প্রধানমন্ত্রী ততক্ষণই ক্ষমতাসীন থাকেন, যতক্ষণ তিনি লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন লাভে সক্ষম হন। প্রধানমন্ত্রী লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন লাভে সক্ষম না হলে লোকসভা অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করতে পারে, যা প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করতে পারে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী সেই সংসদ সদস্য যিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটকে নেতৃত্ব দেন।[51] মন্ত্রিপরিষদের সাহায্যের দ্বারা প্রধানমন্ত্রী শাসনকার্য পরিচালনা করেন। বিশেষ করে অনুচ্ছেদ ৭৫(৩) অনুযায়ী, "মন্ত্রিপরিষদ সমষ্টিগতভাবে লোকসভার নিকট দায়ী থাকিবেন।" লোকসভার এই অনুচ্ছেদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সমগ্র মন্ত্রিপরিষদ অনাস্থা প্রস্তাবে শামিল হতে পারে[52] এবং এই প্রস্তাবটি সফল হলে সমগ্র মন্ত্রিপরিষদকে ইস্তফা দিতে হবে।
ভারতের রাষ্ট্রপতি জনগণ কর্তৃক প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন না, তিনি সংসদ ও রাজ্য বিধানসভাগুলির সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান। শাসনবিভাগের সকল কাজের সম্পাদনা ও সংসদের প্রত্যেক আইন পাস তাঁর নামে হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী কার্যত নির্বাহিক ক্ষমতা ব্যবহার করলেও অনুচ্ছেদ ৫৩(১) অনুযায়ী সংঘের নির্বাহিক ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির উপর বর্তানো হয়েছে। অবশ্য এই আইনি ক্ষমতা কার্যত প্রয়োগ করা হয়না। অনুচ্ছেদ ৭৪ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। তার মানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা মূলত আনুষ্ঠানিক এবং প্রধানমন্ত্রী নির্বাহিক ক্ষমতা ব্যবহার করেন কারণ রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।[53] তবে রাষ্ট্রপতির কাছে মন্ত্রিপরিষদকে তার মন্ত্রণাকে পুনর্বিবেচনার জন্য অনুজ্ঞাত করার ক্ষমতা রয়েছে, যা রাষ্ট্রপতি জনসমক্ষে করতে পারেন। রাষ্ট্রপতিকে পুনরায় তাদের মন্ত্রণাকে পেশ করার আগে মন্ত্রিপরিষদকে এর কোনো পরিবর্তন করতে হয় না। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে সাংবিধানিকভাবে পুনরায় পেশ করা মন্ত্রণা অনুযায়ী কাজ করতে হবে, যা রাষ্ট্রপতির অনুজ্ঞাকে কার্যত অগ্রাহ্য করে দিচ্ছে।
ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হন। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ ততক্ষণই ক্ষমতাসীন থাকেন, যতক্ষণ তিনি লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সমর্থন লাভে সক্ষম হন। মন্ত্রীরা সংসদের উভয় কক্ষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন। তাছাড়া সংসদের কোনো একটি কক্ষের নির্বাচিত সদস্যরাই মন্ত্রিত্বের পদ গ্রহণ করতে পারেন। এইভাবে ভারতে আইনবিভাগ শাসনবিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
যদিও সংবিধান সংসদের উভয় কক্ষকে বিধানিক ক্ষমতা প্রদান করেছে, অনুচ্ছেদ ১১১ অনুযায়ী কোনো বিলকে আইনসিদ্ধ করার জন্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রয়োজন। মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রণার মতোই রাষ্ট্রপতি বিলে সম্মতি দিতে রাজি হবেন না এবং তিনি একে সংসদকে প্রত্যর্পণ করতে পারেন, তবে সংসদ একে রাষ্ট্রপতিকে পুনরায় উপস্থাপন করতে পারে এবং রাষ্ট্রপতি তখন এতে সম্মতি দিতে বাধ্য।
যদিও রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রণা মেনে চলতে হয়, অনুচ্ছেদ ৭৫ অনুযায়ী, "মন্ত্রিগণ যাবৎ রাষ্ট্রপতির তাবৎ পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন।" অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিপরিষদকে বরখাস্ত করার সাংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে। তবে লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট বজায় রাখলে এক সাংবিধানিক সংকট দেখা দিতে পারে, কারণ ঐ একই অনুচ্ছেদে বলা আছে যে মন্ত্রিপরিষদ লোকসভার প্রতি দায়বদ্ধ এবং তাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হতেই হবে। অবশ্য এরকম সংকট কোনোদিনই ঘটেনি, যদিও রাষ্ট্রপতি জৈল সিং ১৯৮৭ সালে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে বরখাস্ত করার ধমকি দিয়েছিলেন।[54]
ভারতের বিচারব্যবস্থা শাসনবিভাগ বা সংসদের নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। বিচারবিভাগ শুধুমাত্র সংবিধানের ব্যাখ্যাকর্তাই নয়, দুই বা ততোধিক রাজ্য অথবা কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাও পালন করে থাকে। সংসদ বা বিধানসভা থেকে পাস হওয়া যে কোনো আইনের বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনা হয়ে থাকে। এমন কি বিচারবিভাগ যদি মনে করে যে, কোনো আইন সংবিধানের কোনো আদর্শের পরিপন্থী, তবে তারা সেই আইনকে অসাংবিধানিক বলেও ঘোষণা করতে পারে।
ভারতের সংবিধানে ঘোষিত কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার সরকার কর্তৃক লঙ্ঘিত হলে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে সাংবিধানিক প্রতিবিধান পাওয়া যায়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.