Remove ads
ইউরোপের দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের আশেপাশে ভৌগলিক অঞ্চল উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
দক্ষিণ ককেশাস বা ট্রান্সককেশিয়া/ট্রান্সককেশাস হল পূর্ব ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ার সীমান্তে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ভৌগোলিক অঞ্চল, যা ককেশাস অঞ্চলের দক্ষিণ ককেশাস পর্বতমালাকে ঘিরে রয়েছে এবং আধুনিক কালে দক্ষিণ ককেশাস মোটামুটিভাবে আর্মেনিয়া, জর্জিয়া ও আজারবাইজানকে অন্তর্ভুক্ত করে। [১] [২] এই রাষ্ট্রগুলি সম্মিলিতভাবে ককেশীয় রাষ্ট্র হিসেবেও পরিচিত। এই দেশগুলির মোট আয়তন প্রায় ১,৮৬,১০০ বর্গকিলোমিটার (৭১,৮৫০ বর্গমাইল)। [৩] দক্ষিণ ককেশাস ও উত্তর ককেশাস একত্রে বৃহত্তর ককেশাসের ভৌগলিক অঞ্চল গঠন করে, যা ( দক্ষিণ ককেশাস) এশিয়া থেকে ইউরোপকে বিভক্ত করে।
আয়তন | ১,৮৬,১০০ বর্গ কি.মি. |
---|---|
জনসংখ্যা | ১৫,৬৫৪,৬৫৮ (২০১৪) |
জাতিগোষ্ঠী | |
ধর্ম |
|
দেশসমূহ | |
ভাষাসমূহ | আজারবাইজানি, জর্জীয়, আর্মেনীয়, রুশ, অসেটীয়, আবখাজ, গ্রিক ভাষা ও অন্যান্য |
সময় অঞ্চলসমূহ | ইউটিসি+৪ |
ইন্টারনেট টিএলডি | |
বৃহত্তম শহরসমূহ |
দক্ষিণ ককেশাস ককেশাস পর্বতমালার দক্ষিণ অংশ এবং এর নিম্নভূমি জুড়ে বিস্তৃত। ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সীমানা এর বিস্তৃত। দক্ষিণ–পশ্চিম রাশিয়ার প্রধান ককেশীয় রেঞ্জের দক্ষিণ অংশ থেকে তুর্কি ও আর্মেনীয় সীমান্ত পর্যন্ত দক্ষিণ দিকে প্রসারিত এবং পশ্চিমে কৃষ্ণ সাগর থেকে পূর্ব দিকে ইরান এবং কাস্পিয়ান সাগরের উপকূল পর্যন্ত। এ অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে বৃহত্তর ককেশাস পর্বতশ্রেণীর দক্ষিণ অংশের ককেশাস পর্বতশ্রেণী, কোলচিস নিম্নভূমি, কুরা-আরাস নিম্নভূমি, কারাদাঘ ও তালিশ পর্বতমালা, লঙ্কারান নিম্নভূমি, জাভাখেতি এবং আর্মেনীয় উচ্চভূমির পূর্ব অংশ।
বর্তমান আর্মেনিয়া রাষ্ট্রের পুরোটাই দক্ষিণ ককেশাসে অবস্থিত। এছাড়া বর্তমান জর্জিয়া ও আজারবাইজান রাষ্ট্রের বেশিরভাগ অংশ ( নাখচিভানের স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রসহ ) এই অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। ইরান এবং তুরস্কের কিছু অংশও দক্ষিণ ককেশাসের অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।[৪] এ অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে তেল, ম্যাঙ্গানিজ, চা, সাইট্রাস ফল ও ওয়াইন। এটি সোভিয়েত পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে রাজনৈতিকভাবে উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি এবং তিনটি ভারী বিতর্কিত এলাকা এতে রয়েছে: আবখাজিয়া, আর্টসাখ ও দক্ষিণ ওসেটিয়া। ১৮৭৮ ও ১৯১৭ সালের মধ্যে রুশ নিয়ন্ত্রিত প্রদেশ কার্স ওব্লাস্টকেও দক্ষিণ ককেশাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল
বর্তমান এই অঞ্চলটিকে দক্ষিণ ককেশাস বা দক্ষিণ ককেশিয়া ( আর্মেনীয়: Հարավային Կովկաս, প্রতিবর্ণী. Haravayin Kovkas; আজারবাইজানি: Ҹәнуби гафгаз ; জর্জীয়: სამხრეთ კავკასია ; রুশ: Южный Кавказ, প্রতিবর্ণীকৃত: Yuzhnyy Kavkaz ) নামে ডাকা হলেও এর পূর্বের নাম ট্রান্সকাকেশিয়া ছিল, রুশ শব্দ জাকাভকাজিয়ে ( Закавказье ) এর একটি ল্যাটিন প্রতিবর্ণীকরণ; যার অর্থ : ককেশাসের বাইরের এলাকা। [৩]
এটি একটি রুশ সুবিধার পয়েন্টকে বোঝায় এবং এটি ট্রান্সনিস্ট্রিয়া এবং ট্রান্সলেইথানিয়ার মতো অনুরূপ পদগুলির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই শব্দের অন্যান্য বিরল ও অপ্রচলিত রূপগুলির মধ্যে রয়েছে ট্রান্স-ককেশাস ট্রান্সককেসাস ( রুশ: Транскавказ)।
নিম্নে দক্ষিণ ককেশাসের ঐতিহাসিক জনসংখ্যা উল্লেখ করা গেল:
বছর | আর্মেনিয়া | আজারবাইজান | জর্জিয়া | মোট |
---|---|---|---|---|
1897 | 798,853 [৫] | 1,806,700 [৬] | 1,919,400 [৭] | ৪,৫২৪,৯৫৩ |
1908 | ৮৭৭,৩২২ [৫] | 2,014,300 [৬] | ||
1914 | 1,014,255 [৫] | 2,278,245 | 2,697,500 [৮] | 5,990,000 [৯] |
1916-17 | 993,782 [৫] | 2,353,700 [৬] | 2,357,800 [৮] | 5,705,282 |
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং রুশ বিপ্লব | ||||
1920-22 | 780,000 | 1,863,000 | 2,677,000 | 5,321,000 [৯] |
1926 | 880,464 | ২,৩১৪,৫৭১ | 2,666,494 | 5,861,529 [১০] |
1929 | 6,273,000 [৯] | |||
1931 | 1,050,633 [৫] | 6,775,000 [৯] | ||
1932 | ৬,৯৭৬,০০০ [৯] | |||
1933 | 7,110,000 [৯] | |||
1939 | 1,282,338 | 3,205,150 | 3,540,023 | 8,027,511 [১১] |
1956 | 9,000,000 [৯] | |||
1959 | 1,763,048 | ৩,৬৯৭,৭১৭ | ৪,০৪৪,০৪৫ | 9,504,810 [১২] |
1970 | 2,491,873 | 5,117,081 | ৪,৬৮৬,৩৫৮ | 12,295,312 [১৩] |
1979 | 3,037,259 | 6,026,515 | 4,993,182 | 14,056,956 [১৪] |
1989 | ৩,৩০৪,৭৭৬ | 7,037,867 | 5,400,841 | 15,743,484 [১৫] |
1999-2002 | 3,213,011 [১৬] | 7,953,400 [৬] | ৩,৯৯১,৩০০ [১৭] | 15,157,711 |
2009-14 | 3,018,854 [১৮] | ৮,৯২২,০০০ [৬] | 3,713,804 [১৯] | 15,654,658 |
ইতিহাসের জনক গ্রীক ইতিহাসবিদ হিরোডোটাস এবং স্ট্র্যাবো ( গ্রীক ভূগোলবিদ, দার্শনিক ও ইতিহাসবিদ) তাদের বইয়ে ককেশাসের স্বয়ংক্রিয় জনগণের কথা বলেছেন। মধ্যযুগে সিথিয়ান, অ্যালানি, আর্মেনিয়ান, হুন, খাজার, আরব, সেলজুক তুর্কি এবং মঙ্গোলসহ বিভিন্ন মানুষ ককেশিয়ায় বসতি স্থাপন করেছিল। তাদের আগমনগুলি দক্ষিণ ককেশাসের জনগণের সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছিল। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাব ককেশাসে ইরানি ভাষা ও ইসলাম ধর্মকে ছড়িয়ে দেয়। [৩]
ইরান, রাশিয়া এবং তুরস্কের পরিধিতে অবস্থিত এই অঞ্চলটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রাজনৈতিক, সামরিক, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং সম্প্রসারণবাদের একটি ক্ষেত্র। তার ইতিহাস জুড়ে অঞ্চলটি বিভিন্ন সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে এসেছিল; যার মধ্যে রয়েছে হাখমানেশি, নিও-অ্যাসিরীয়, পার্থিয়ান, রোমান, সাসানি, বাইজেন্টাইন, উমাইয়া, আব্বাসি, মঙ্গোল, উসমানীয়, ইরানী ( সাফাভি, আফজার্জাজ) ও রুশ সাম্রাজ্য, যার সবকটি তাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির পরিচয় এখানে ছড়ায়। [২০][২১] ইতিহাস জুড়ে বেশির ভাগ দক্ষিণ ককেশাস সাধারণত ইরান-ভিত্তিক বিভিন্ন সাম্রাজ্য ও ইরানী বিশ্বের অংশের সরাসরি শাসনের অধীনে ছিল।[২২] ১৯ শতকে রুশদের কাছে শতাব্দীর সেই দুটি রুশ-পারস্যিক যুদ্ধের ফলে কাজার ইরানকে এই অঞ্চলের কিছু অংশ ছেড়ে দিতে হয়েছিল। [২৩]
এ অঞ্চলের প্রাচীন রাজ্যগুলির মধ্যে আছে কোলচিস, উরার্তু, আইবেরিয়া, আর্মেনিয়া, আলবেনিয়া ইত্যাদি। এই রাজ্যগুলি পরে বিভিন্ন ইরানী সাম্রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। যার মধ্যে রয়েছে হাখমানেশি সাম্রাজ্য, পার্থিয়ান সাম্রাজ্য ও সাসানি সাম্রাজ্য এবং এসব রাজ্যের সময় জরথুস্ট্রবাদ এই অঞ্চলে প্রভাবশালী ধর্ম হয়ে ওঠে। যাহোক, খ্রিস্টধর্মের উত্থান ও ককেশীয় রাজ্যগুলিকে নতুন ধর্মে রূপান্তরিত করার পরে জরথুষ্ট্রবাদ নিজের প্রচলন হারিয়ে ফেলে এবং শুধুমাত্র পারস্যের কিছু অংশ টিকে টিকে আছে। এইভাবে দক্ষিণ ককেশাস শুধুমাত্র সামরিক নয়; বরং ধর্মীয় অভিসারের এলাকা হয়ে ওঠে, যা প্রায়শ অঞ্চলটিকে সাম্রাজ্যিক সংঘর্ষের দিকে পরিচালিত করে।
৮ম শতাব্দীর মাঝামাঝি আরব-খাজার যুদ্ধের সময় উমাইয়া সেনাবাহিনীর দ্বারা দারবান্দ দখলের সাথে সাথে দক্ষিণ ককেশাসের বেশিরভাগই খিলাফতের অংশ হয়ে ওঠে এবং ইসলাম এর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। [২৪] পরবর্তীতে জর্জিয়ার অর্থোডক্স খ্রিস্টান রাজ্য দক্ষিণ ককেশাসের বেশিরভাগ অংশে আধিপত্য বিস্তার করে। অঞ্চলটি তখন সেলজুক, মঙ্গোল, তুর্কি, সাফাভি, উসমানীয়, আফশারি ও কাজার রাজবংশ কর্তৃক বিজিত হয়েছিল।
১৯ শতকের প্রথমার্ধে দুটি যুদ্ধের পর ( রুশ-পারস্যিক যুদ্ধ: ১৮০৪-১৮১৩; এবং রুশ-পারস্যিক যুদ্ধ (১৯২৬ -১৮২৮) রুশ সাম্রাজ্য বেশিরভাগ দক্ষিণ ককেশাস ( ও উত্তর ককেশাসে দাগেস্তান) জয় করে। ইরানি কাজার রাজবংশ থেকে ইরানের সাথে অঞ্চলটি ঐতিহাসিক আঞ্চলিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। [২২] [২৫] ১৮০৪-১৮১৩ সালের যুদ্ধের পরে গুলিস্তান চুক্তির মাধ্যমে ইরান আধুনিক দিনের দাগেস্তান, পূর্ব জর্জিয়া ও বেশিরভাগ আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছিল এবং ১৮২৬-১৮২৮ সালের যুদ্ধের পর তুর্কমেঞ্চে চুক্তির মাধ্যমে ইরান আধুনিক আর্মেনিয়া ও সমসাময়িক আজারবাইজানি প্রজাতন্ত্রের অবশিষ্টাংশ হারায়। ১৮২৮-১৮২৯ সালের যুদ্ধের পর উসমানীয়রা পশ্চিম জর্জিয়া ( আদজারিয়া বাদে, যা তখন বাতুমের সানজাক নামে পরিচিত ছিল) রুশদের হাতে তুলে দেয় এবং তখন থেকে গোটা অঞ্চলে রুশ আধিপত্য পাকা হয়ে যায়।
১৮৪৪ সালে বর্তমানকালের জর্জিয়া, আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রকে একটি একক জারবাদী সরকার-জেনারেল হিসাবে একত্রিত করা হয়, যাকে ১৮৪৪-১৮৮১ ও ১৯০৫-১৯১৭ সালে ভাইস-রয়্যালটি বলা হয়েছিল। রুশ–তুর্কি যুদ্ধের (১৮৭৭–১৮৭৮) পর রাশিয়া উসমানীয়দের কাছ থেকে কার্স, আরদাহান, এগ্রি ও বাতুমিকে দখল করে এই ইউনিটে যোগ দেয় এবং কারস ওব্লাস্ট প্রদেশটিকে দক্ষিণ ককেশাসের সবচেয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চল হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে।
১৯১৮ সালে রাশিয়ান সাম্রাজ্যের পতনের পর দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলটি ৯ এপ্রিল থেকে ২৬শে মে পর্যন্ত ট্রান্সককেসিয়ান ডেমোক্রেটিক ফেডার্টিভ রিপাবলিক হিসাবে এবং ১৯৩৬ সাল থেকে ১৯৫২ সালের ১২ মার্চ এটি পর্যন্ত ট্রান্সককেশীয় সমাজতান্ত্রিক ফেডারেটিভ সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র হিসাবে দুবার একক রাজনৈতিক সত্তায় একীভূত হয়েছিল এবং প্রতিবারই আর্মেনিয়া, জর্জিয়া ও আজারবাইজান নামের তিনটি সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে বিলীন হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ১৯৯১ সালে সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেলে তিনটিই স্বাধীনতা ফিরে পায়।
রুশো-জর্জীয় যুদ্ধ ২০০৮ সালে দক্ষিণ ককেশাস জুড়ে সংঘটিত হয়েছিল, যা এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছিল। এর সমীকরণ মধ্যপ্রাচ্যের মতোই জটিল। এখানে ধর্মের জটিল মিশ্রণের (প্রধানত মুসলিম এবং অর্থোডক্স খ্রিস্টান) সাথে জাতি ও ভাষাগত মিশ্রণও রয়েছে।
তাদের স্বাধীনতার পর থেকে তিনটি দেশ রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশের সাথে তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাত্রায় সাফল্য পায়। ২০০৪ সালে জর্জিয়ায় গোলাপ বিপ্লবের পর দেশটি বাল্টিক রাজ্যগুলির মতো ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক খোলার মাধ্যমে পশ্চিম ইউরোপে একীভূত হতে শুরু করে। আর্মেনিয়া রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক জোরদার করে চলেছে এবং আজারবাইজান রাশিয়ার উপর নির্ভরতা কমিয়ে এনেছে করে। এটি কৌশলগতভাবে তুরস্ক ও অন্যান্য ন্যাটো রাষ্ট্রগুলির সাথে অংশীদারিত্ব করে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.