ভূমধ্যসাগর
ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যবর্তী একটি সাগর উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভূমধ্যসাগর (ইংরেজি: Mediterranean Sea) এশিয়া,ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যবর্তী একটি সাগর। এটি জিব্রাল্টার প্রণালী দ্বারা আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত এবং উত্তরে দক্ষিণ ইউরোপ ও তুরস্কের আনাতোলিয়া, দক্ষিণে উত্তর আফ্রিকা, পূর্বে লেভ্যান্ট এর দ্বারা প্রায় পুরোপুরি আবদ্ধ। যদিও সাগরটিকে মাঝে মাঝে আটলান্টিক মহাসাগরের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভূতাত্ত্বিক প্রমাণ নির্দেশ করে যে ভূমধ্যসাগর প্রায় ৫৯ লক্ষ বছর আগে আটলান্টিক মহাসাগরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং ৫৩ লক্ষ বছর আগে জানক্লিন বন্যায় পুনরায় পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে প্রায় ৬ লক্ষ বছর ধরে শুষ্ক ছিল।
ভূমধ্যসাগরের আয়তন প্রায় ২৫ লক্ষ বর্গকিলোমিটার (৯,৬৫,০০০ বর্গমাইল) যা বৈশ্বিক মহাসাগরের পৃষ্ঠতলের মাত্র ০.৭%। কিন্তু জিব্রাল্টার প্রণালী দ্বারা আটলান্টিকের প্রধান জলভাগের সঙ্গে সংযুক্ত স্থানে এটি মাত্র ১৪ কিলোমিটার (৯ মাইল) প্রশস্ত।[২][৩] ভূমধ্যসাগরের গড় গভীরতা প্রায় ১,৫০০মি (৪৯২১ফুট) এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ৫,২৬৭মি (১৭২৮০ ফুট) যা আয়োনীয় সাগরের ক্যালিপ্সো ডিপে অবস্থিত।এ স্থান ৩৬°৩৪′ উত্তর ২১°৮′ পূর্ব অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত।এর পূর্ব থেকে পশ্চিমের দৈর্ঘ্য অর্থাৎ জিব্রাল্টার প্রণালী থেকে ইস্কেন্দেরুন উপসাগরে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূল পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ৪০০০ কিমি। উত্ত্র-দক্ষিণ বরাবর এর বিস্তৃতি একেক জায়গায় একেক রকম হয়ে থাকে। সবথেকে ক্ষুদ্র নদী পথটি অবস্থিত ট্রিয়েস্ট উপসাগর এবং সিদরা উপসাগরের মাঝে যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০০ মাইল। পানির তাপমাত্রা শীতকালে মৃদু এবং গ্রীষ্মে উষ্ণ হয় এবং শীতের মাসগুলোতে বেশিরভাগ বৃষ্টিপাত হওয়া ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু হিসেবে পরিচিত। এর উপকূল রেখা থেকে উষ্ণ মরুভূমি খুব একটা দূরে নয়, তবে উপকূল গুলোতে উপকূলিয় আবহাওয়া বিদ্যমান।
প্রাচীন কালে বণিক ও ভ্রমণকারীদের জন্য সমুদ্র ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ, যা এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের পথ করে দিয়েছিলো। অনেক আধুনিক সমাজের উৎপত্তি এবং বিকাশ বোঝার জন্য ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ইতিহাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোমান সাম্রাজ্য বহু শতাব্দী ধরে ভূমধ্যসাগরে সামুদ্রিক আধিপত্য বজায় রেখেছিল।
ঘড়ির কাঁটার ক্রমে ভূমধ্যসাগরকে ঘিরে থাকা দেশগুলি হল স্পেন, ফ্রান্স, মোনাকো, ইতালি, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মন্টিনিগ্রো, আলবেনিয়া, গ্রীস, তুরস্ক, সিরিয়া, লেবানন, ইসরাইল, ফিলিস্তিন, মিশর, লিবিয়া, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া এবং মরক্কো; মাল্টা এবং সাইপ্রাস এই সমুদ্রের দ্বীপ দেশ। এছাড়াও, উত্তর সাইপ্রাসের বিতর্কিত অঞ্চল এবং কিছু ছিটমহল, বিশেষ করে জিব্রাল্টার এবং সেউতা সমুদ্রের উপকূলে অবস্থিত। আলেকজান্দ্রিয়া হল বৃহত্তম উপকূলীয় মানববসতি। নদির অবাহিকাগুলো অন্যান্য দেশগুলির একটি বড় সংখ্যাকে এই সমুদের সাথে যুক্ত করেছে, নীলনদ ভূমধ্যসাগরে পতিত হওয়া দীর্ঘতম নদী।
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
প্রাচীন সভ্যতা



প্রধান প্রাচীন সভ্যতাগুলি ভূমধ্যসাগরের চারপাশে অবস্থিত ছিল। সমুদ্র যুগে অসংখ্য সম্প্রদায়ের জন্য বাণিজ্য, উপনিবেশ এবং যুদ্ধের পাশাপাশি খাদ্যের যোগানের (মাছ ধরা এবং অন্যান্য সামুদ্রিক খাবার সংগ্রহ থেকে) মাধ্যম ছিলো ভূমধ্যসাগর।[৪]
ধ্রুপদী প্রাচীনত্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমধ্যসাগরীয় সভ্যতাগুলি ছিল গ্রীক নগর রাষ্ট্র, পারস্য এবং ফিনিশিয়ানরা উভয়ই ভূমধ্যসাগরের উপকূলে ব্যাপকভাবে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল।
পারস্যের প্রথম দারিয়াস, যিনি প্রাচীন মিশর জয় করেছিলেন, ভূমধ্যসাগরকে লোহিত সাগরের সাথে সংযুক্ত করার জন্য একটি খাল খনন করেছিলেন। দারিয়াসের খালটি দুটি ট্রাইমেমের (একধরণের দাড়টানা জাহাজ) পাশাপাশি চলাচলের জন্য যথেষ্ট প্রশস্ত ছিল এবং খাল দিয়ে লোহিত সাগর থেকে ভুমধ্যসাগরে পৌছতে চার দিন সময় লাগত।[৫]
পরে, যখন অগাস্টাস রোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন, রোমানরা ভূমধ্যসাগরকে মেরে নস্ট্রাম ("আমাদের সাগর") বলে উল্লেখ করতো। পরবর্তী ৪০০ বছর ধরে, রোমান সাম্রাজ্য সম্পূর্ণরূপে ভূমধ্যসাগর এবং জিব্রাল্টার থেকে লেভান্ট পর্যন্ত এর সমস্ত উপকূলীয় অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে।
২০১৯ সালে, আকদেনিজ ইউনিভার্সিটির আন্ডারওয়াটার রিসার্চ সেন্টারের প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের দল তুরস্কের উপকূলবর্তী ভূমধ্যসাগরে ৩,৬০০ বছর আগের একটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করে। জাহাজে পাওয়া ১.৫ টন তামার বিশুদ্ধ আকরিক এর সাহাজ্যে জাহাগটির বয়স অনুমান ক্রা হয়েছিল। আনাতোলিয়ার গভর্নর মুনির কারালোগলু এই মূল্যবান আবিষ্কারটিকে "পানির নিচের গোবেকলি তেপে" হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন৷ এটি নিশ্চিত করা গিয়েছে যে জাহাজের ধ্বংসাবশেষটি ১৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের,যা ১৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের "উলুবুরুন জাহাজের ধ্বংসাবশেষ" থেকেও পুরানো৷[৬][৭][৮]
দক্ষিণ
৪৭৬ সালের দিকে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। ৪র্থ শতকে সম্রাজ্যের পূর্বাংশ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য নাম নিয়ে রোমান আধিপত্য বজায় রাখে প্রাক্তন সম্রাজ্যের পূর্ব অংশে। ৭ম শতকে আরেকটি পরাশক্তির আবির্ভাব হয়, যা সাথে নিয়ে এসেছিলো ইসলাম ধর্ম। খুব দ্রুতই এই শক্তি ভুমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে, এবং এর সর্বচ্চো বিস্তার কালে, উমাইয়াদের সময়ে সমস্ত পূর্ব এবং দক্ষিণ উপকূলে এই সম্রাজ্য বিস্তার লাভ করে এখানে স্থায়ি প্রভাব রেখে যায়।
প্রাথমিক মুসলিম বিজয় পূর্ব এবং পশ্চিম ইউরোপের মধ্যকার বাণিজ্য পথে বাধা সৃষ্টি করে এবং পূর্বের এশিয় দেশগুলির সাথে ইউরপের বাণিজ্য বাধাগ্রস্থ করে। যা কাসপিয়ান সাগর ঘিরে গরে ওঠা নতুন বাণিজ্য পথ সৃষ্টিতে পরোক্ষ ভূমিকা রাখে। মিশরের পরিবর্তে পূর্বের দেশেরগুলো থেকে শস্য আমদানি শুরু হয়। পূর্বের বিলাসপন্য যেমং সিল্ক এবং মশলা মিশর এবং ভেনিস ও কনসট্যান্টিনোপেল এর বন্দরগুলোতে আসতে শুরু করে। ভাইকিং দের আক্রমণ এই বাণিজ্য পথকে আর অধীকতর বাধাগ্রস্থ করে এবং এ বাণিজ্য পথে স্থবিরতা নেমে আসে। যাইহক, নর্সমেনরা নরওয়ে থেকে শ্বেত সাগর মাধ্যমএ নতুন বাণিজ্য পথসৃষ্টি করে, এবং একি সাথে স্পেন থেকে বিলাস পণ্য আমদানি অব্যাহত রাখে। ৮ম শতকের মাঝামাঝি বাইজেন্টাইনরা উত্তর-পূর্ব অংশের দখল ফিরে পায়। অপরদিকে আরব আক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য ভেনিসীয় জাহাজগুলোতে সমরাস্ত্রীয়করণ শুরু হয় এবং এশিয়া থেকে ভেনিসের বন্দরে পণ্য আসতে থাকে।[৯]

ফাতিমীয়রা ক্রুসেডের আগ পর্যন্ত ইতালির নগর রাষ্ট্র, যেমনঃ আমালফি রাজ্য এবং জেনোয়ার সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রেখেছিলো। ৯৯৬ সালের দস্তাবেজ থেকে আলামফির বনিকদের কায়রোতে বসবাসের প্রমান পাওয়া যায়। আরেকতি চিঠিতে জেনোয়ানদের সাথে আলেকজান্দ্রিয়ার বাণিজ্য সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়। ১০৬০ সাল নাগাদ খলিফা আল মুসতানজির ল্যাটিনদের পরিবর্তে আলমাফিদের জেরুজালেমে থাকার অনুমতি প্রদান করেন।[১০]
ক্রুসেডের ফলে ইউরপের সাথে দখলকৃত অঞ্চলের নতুন বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে ওঠে।[১১] জেনোয়া। ভেনিস এবং পিসা ক্রুসেডারদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে উপনিবেশ গড়ে তোলে এবং এর মাধ্যমে প্রাচ্যের সাথে বনিজ্যের নিয়ন্ত্রন লাভ করে। এই উপনিবেশগুলোর মাধ্যমে তাঁরা প্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য করতো। যদিও কেউসেডারদের পতনের পর এবং মুসলিম শাসকদের দ্বারা পোপের সাথে বাণিজ্যে অবরোধ আরোপের ফলে এ বাণিজ্য বাধাগ্রস্থ হয়েছিলো, তবুও এ বাণিজ্য পথ চলমান থাকে।[১২]
ইউরোপ ঘুড়ে দাঁড়ায় এবং মধ্যযুগে রেনেসাঁ শুরু হলে আরো সুসংগঠিত এবং এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়।

আনাতোলিয়াতে অটোম্যানদের ক্ষমতা বাড়তে থাকে এবং তাঁরা কন্সট্যান্টিনোপেল দখলের মাধ্যমে বাইজ্যানটাইন সম্রাজ্যের সমাপ্তি ঘটায়। ১৬০০ সাল নাগাদ অটোমানরা সমুদ্রের পূর্বাংশের বেশিরভাগেরই নিয়ন্ত্রণ লাভ করে এবং দক্ষিণ ফ্রান্স (১৫৪৩-১৫৪৪), আলজেরিয়া ও তিউনিশিয়াতে তাঁরা নৌবহর স্থাপন করে। হাইরেদ্দীন বারবারোসা সাগরে আধীপত্যের প্রতীক হয়ে ওঠেন পার্ভারজা যুদ্ধ (১৫৩৮) জয়ের মাধ্যমে। ইউরপীয়রা আবারো ভূমধ্যসাগরে তাদের দৃষ্টি নিবন্ধ করে এবং ১৫৭১ সালে লেপান্তো যুদ্ধে অটোম্যানদের শক্তির পরীক্ষা দিতে হয়ে ছিলো। এই যুদ্ধ ছিলো দাড়টানা জাহাদের শেষ যুদ্ধ।
পশ্চিম ভূমধ্যসাগরে উত্তর -পশ্চিম আফ্রিকার বার্বারি জলদস্যুরা খ্রিস্টান এবং ইউরপীয় জাহারের শিকারে নেমেছিলো।[১৩] রবার্ট ডেভিসের মতে, জলদস্যুরা ১৬ ও ১৯ শতকের মাঝামাঝি ১০ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ ২৫ হাজারের মত ইউরপীয়দের কৃতদাস হিসেবে বন্দি করেছিলো।[১৪]
মহাসাগরের মাধ্যমে বাণিজ্যপথ চালু হলে তা এখানের বাণিজ্যকে পুরপুরি প্রভাবিত করেছিলো। একসময়ে ইউরপ ও প্রাচ্যের অধিকাংশ বাণিজ্য এপথে হলেও ১৪৯০ এর দিকে বাণিজ্য ভারত মহাসাগর কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। এর মাধ্যমে আটলান্টিক মহাসাগর হয়ে প্রাচ্যকে থেকে মশলা এবং অন্যান্য পণ্য ইউরোপে আসতে শুরু করে।[১৫][১৬][১৭]
এই সাগরটি এরপরো কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। জিব্রাল্টারের ওপর ব্রিটিশ কতৃত্ব উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়াতে তাদের প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা রাখে। বিশেষত আবুরকির যুদ্ধ (নীল নদের যুদ্ধ) এবং ট্রাফালগার যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের একক আধীপত্য স্থাপিত হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ভূমধ্যসাগর নৌযুদ্ধের ক্ষেত্র হয়ে ওঠে।[১৮]
১৮৬৯ সালে সুয়েজ খাল উনমুক্ত হলে তা ইউরপ ও এশিয়ার বাণিজ্যে মৌলিক পরিবর্তন আনে। তখন এশিয়া এর পূর্ব আফ্রিকা হয়ে নতুন দ্রততর নৌপথের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে ভুমধ্যসাগরীয় বন্দরগুলোর গুরুত্ব বাড়তে থাকে এবং তাদের অর্থনৈতিক জাগরণ দেখা দেয়। ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধ, সুয়েজ সংকট এবং স্নায়ুযুদ্ধ আবার দৃষ্টিবিন্দু উত্তর ইউরপের বন্দরের দিকে ফিরিয়ে নেয় এবং দক্ষীনের বন্দরগুলোর প্রভাবে পরিবর্তন দেখা দেয় নতুন সিল্ক রোড ও মুক্ত বাণিজ্য স্থাপনের মাধ্যমে।[১৯]
২১শ শতক ও অভিবাসন
রাতে ভুমধ্যসাগরের উপগ্রহ চিত্র
২০১৩ সালে মাল্টার রাষ্ট্রপতি অভিবাসীবাহী নৌকাডুবির ফলে অভিবাসীদের মৃত্যুর কারণে ভুমধ্যসাগরকে একটা কবরস্থান বলেছিলেন।[২০] ইউরোপীয় সংসদের সভাপতি মার্টিন শুলজ ইউরোপের অভিবাসননীতিকে দায়ী করে বলেছিলেন, "ইউরোপ ভূমধ্যসাগরকে একতি কবরস্থানে রূপান্তরিত করেছে।"[২১] আজারবাইজানের এক কর্মকর্তা বলেছিলেন,"এটা এমন এক কবরখানা... যেখানে মানুষ মৃত্যু বরন করে।"[২২]
২০১৩ সালের লাম্পেদুসা অভিবাসীদের জাহাজ ডুবির পর ইতালির সরকার "অপারেশন মারে রস্ট্রাম" নামে ভূমধ্যসাগরে তাদের জাতীয় নজরদারীকে আর জোরদার করেছে। এর উদ্দেশ্য মানবিক বিবেচনায় শরনার্থীদের রক্ষা করা এবং মানবপাচারকারীদের গ্রেফতার করা। শুধু ২০১৫ তেই ১০ লাখেরও বেশি শরনার্থী ইউরোপের উদ্দেশ্যে ভুমধ্যসাগর পাড়ী দিয়েছিলো।[২৩]
ইউরোপীয় অভিবাসী সংকটের সরাসরি প্রভাব ইতালির ওপর পরছিলো। ২০১৩ সালের পর থেকে প্রায় ৭ লক্ষ শরনার্থী ইতালীতে প্রবেশ করেছে,[২৪] যাদের অধীকাংশই সাব-সাহারান আফ্রিকা থেকে এসেছে।[২৫]
ভূগোল
উপগ্রহ চিত্রে ভূমধ্যসাগর। নিচের বাম (উত্তর-পশ্চিম) পাশে জিব্রাল্টার প্রণালী দেখা যাচ্ছে, এর বামে রয়েছে ইউরোপের ইবেরীয় উপদ্বীপ, এবং ডানে রয়েছে আফ্রিকার মাগরেব।
তুরষ্কের দার্দানেলেস প্রণালী।ইউরোপের উওরাংশ (থ্রেস অঞ্চলের গ্যালিপলি উপদ্বীপ); দক্ষিণে (নীচে)এশিয়ার আনাতোলিয়া।
ভূমধ্যসাগর সংযুক্ত করেছেঃ
- পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগরকে জিব্রালটার প্রণালীর মাধ্যমে (যাকে হোমার তাঁর লেখায় হারকিউলিক্সের স্তম্ভ হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন)।
- পূর্বে দার্দানেলেস এবং বসফরাস প্রনালির মাধ্যমে যথাক্রমে মার্মারা এবং কৃষ্ণ সাগরকে।
১৬৩ কিঃমিঃ বা ১০১ মাইল দীর্ঘ্য সুয়েজ খাল একে লোহিত সাগরের সাথে যুক্ত করেছে কোন প্রকার শিপ লক ছাড়ায়, কারণ এই দুই সাগরের পানির উচ্চতা প্রায় সমান।[২৬][২৭]
প্রান্তিক সমুদ্র সমূহ
বিস্তার
হাইড্রোগ্রাফি
উপকূলীয় দেশসমূহ
একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল
উপকূলের দৈর্ঘ্য
উপকূলীয় শহর
উপপভাগ
বৃহত দ্বিপসমূহ
জলবায়ু
সমূদ্রবিদ্য
সাধারণ পানি প্রবাহ
পানি সঞ্চালন প্রভাবিত করা অন্যান্য ঘটনা
জলবায়ু পরিবর্তন
জৈব-রসায়ন
ভূতত্ত্ব
সারাংশ
প্রসঙ্গ
ভূমধ্যসাগরের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস জটিল। সামুদ্রিক ভূত্বকের অধীনস্থ, সমুদ্র অববাহিকাকে একসময় প্রাচীন টেথিস মহাসাগরের একটি টেকটোনিক অবশিষ্টাংশ বলে মনে করা হত; এটি এখন স্বল্প বয়সী অববাহিকা হিসাবে পরিচিত, যাকে বলা হয় নিওথিস, যা প্রথম ট্রায়াসিক এবং প্রারম্ভিক জুরাসিক সময়ে আফ্রিকান এবং ইউরেশীয় প্লেটের মিলনের ফলে গঠিত হয়। যেহেতু এটি একটি শুষ্ক অঞ্চলের প্রায় স্থলবেষ্টিত জলাধার, তাই ভূমধ্যসাগরে প্রচুর বাষ্পীভবন এবং বাষ্পীভবনের ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। মেসিনিয়ান লবণাক্ততা সংকট শুরু হয়েছিল প্রায় ৬০ লক্ষ বছর আগে যখন ভূমধ্যসাগর স্থলবেষ্টিত হয়ে যায় এবং তারপরে মূলত শুকিয়ে গিয়েছিলো। তল থেকে দশ লক্ষ ঘন কিলোমিটারেরও বেশি নীচে লবণের আমানত রয়েছে - এই স্তর কিছু জায়গায় তিন কিলোমিটারেরও বেশি পুরু।[২৮][২৯]
বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে সাগরটি শেষবার প্রায় ৫.৩ মিলিয়ন বছর আগে, দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে জ্যানক্লিয়ান বন্যায় পানিপূর্ণ হয়েছিল। আটলান্টিক মহাসাগর থেকে একটি ভাঙ্গণের ফলে সৃষ্ট নতুন জলপথের মাধ্যম,যাকে এখন জিব্রাল্টার প্রণালী বলা হয়,আমাজন নদীর বর্তমান প্রবাহের চেয়ে প্রায় তিন অর্ডার বেশি মাত্রার (এক হাজার গুণ) পানি ঢুকেছিলো।[৩০]
টেকটোনিক্স এবং প্যালিওএনভায়রনমেন্টাল বিশ্লেষণ
মেসিনিয়ান লবণাক্ততা সংকট
উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের সুষমকরণ এবং বিনিময়
একটি "ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু"-তে স্থানান্তরিত হওয়া
প্যালিওক্লাইমেট
জীববৈচিত্র্য
পরিবেশগত সমস্যা
প্রাকৃতিক বিপদসমূহ
আক্রমণকারী প্রজাতি
নতুন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আটলান্টিক প্রজাতির আগমন
সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি
দূষণ
প্লাস্টিক দূষণ
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.