Loading AI tools
বাংলাদেশের তৃতীয় সরকারি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) চট্টগ্রামে অবস্থিত দেশের তৃতীয় সরকারি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষাঙ্গন আয়তনের দিক থেকে এটি দেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়।[4] এটি বাংলাদেশের সরকারি বহু-অনুষদভিত্তিক স্বায়ত্তশাসিত গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়। গানের ক্যাম্পাস নামে খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৬ সালের ১৮ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলায় স্থাপিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে এই বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিল।
ধরন | গবেষণাধর্মী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় |
---|---|
স্থাপিত | ১৮ নভেম্বর ১৯৬৬ |
অধিভুক্তি | বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন |
বাজেট | ৩৯৭,৭২,০০০০০ (২০২৪-২৫) [1] |
আচার্য | রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন |
উপাচার্য | পদ শূন্য |
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ | ৯৭৪[2] |
প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ | ৩১১ |
শিক্ষার্থী | ২৯,০০০+ |
ঠিকানা | , , ৪৩৩১[2] , বাংলাদেশ ২২.৪৭১০০২১° উত্তর ৯১.৭৮৮৪৬৯৩° পূর্ব |
শিক্ষাঙ্গন | ২৩১২.৩২ একর [3] |
ভাষা | বহুভাষিক |
আদ্যক্ষর | চবি (সিইউ) |
ওয়েবসাইট | www |
২০২৩ সালের হিসাবে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৭,৫৫০ শিক্ষার্থী এবং ৯০৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অর্ন্তভূক্ত রয়েছে। এখানে রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম আকর্ষণ হলো শাটল ট্রেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থী শিক্ষাগ্রহণ ও অধ্যাপনা করেছেন যার মধ্যে ১ জন নোবেল বিজয়ী এবং একাধিক একুশে পদক বিজয়ী অর্ন্তভূক্ত রয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার (১৪ মা) উত্তরে হাটহাজারী থানার ফতেহপুর ইউনিয়নের জঙ্গল পশ্চিম-পট্টি মৌজার ২৩১২.৩২ একর[3] পাহাড়ি এবং সমতল ভূমির উপর অবস্থিত।[2] পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন ছিল ১,৭৫৩.৮৮ একর (৭০৯.৭৭ হেক্টর),[5] যা পরবর্তীতে ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রায় ৯ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সীমানা প্রাচীর নিমার্ণের মাধ্যমে বর্ধিত করা হয়।[6] ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাঙ্গণ আয়তনের দিক থেকে দেশের সর্ববৃহৎ এই বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু হয়।[5]
বিশ শতাব্দীর শুরুর দিকে চট্টগ্রাম বিভাগে কোন বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় চট্টগ্রামের অধিবাসিরা স্থানীয়ভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন অনুভব করে । ১৯৪০ সালের ২৮ ডিসেম্বর, কলকাতায় অনুষ্ঠিত জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সর্বভারতীয় সম্মেলনে মওলানা মুনিরুজ্জামান ইসলামবাদী সভাপতির ভাষণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি’ নির্মাণের কথা উপস্থাপন করেন এবং একই লক্ষ্যে তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার দেয়াঙ পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মানের জন্য ভূমি ক্রয় করেন। দুই বছর পর, ১৯৪২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নূর আহমদ বঙ্গীয় আইন পরিষদে চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক দাবি উত্থাপন করেন।[5]
ষাটের দশকে তৎকালীন পাকিস্তানের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৬০-১৯৬৫) প্রণয়নকালে চট্টগ্রামে একটি ‘বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মানের স্থান হিসেবে শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত চট্টগ্রাম সরকারি কলেজকে সম্ভাব্য ক্যাম্পাস হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬২ সালে, তৎকালিন পূর্ব-পাকিস্তানের জনশিক্ষা উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফেরদাউস খান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার একটি প্রাথমিক খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করেন। একই বছর, ১৯৬২ সালের নির্বাচন প্রচারনায় ফজলুল কাদের চৌধুরী এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাধারণ প্রতিশ্রুতি দেন। এবং নির্বাচন পরবর্তীকালে তিনি কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন।[5]
চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের স্থানে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হওয়ার পর, ১৯৬১ সালের ৭ মে চট্টগ্রামের নিবাসির উদ্যোগে স্থানীয় মুসলিম হলে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রধান অতিথির ভাষণে চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত প্রকাশ করেন এবং তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। পরবর্তীকালে ১৯৬২ সালে ৩০ ডিসেম্বর, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদ’ নামে আরেকটি পরিষদ গঠিত হয়। এই সকল সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ ও স্মারকলিপি প্রদান, পত্রপত্রিকায় বিবৃতি, সেমিনার অনুষ্ঠিত হতে থাকে। সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ১৯৬২ সালের ৯ ডিসেম্বর লালদিঘী ময়দানে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৩ সালের ৮ জানুয়ারি, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়।[5]
১৯৬৩ সালের ২৯ নভেম্বর, ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার মনোনীত হন। প্রথমদিকে এ বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালিতে স্থাপনের পরিকল্পনা করা হলেও ১৯৬৩ সালের ১২ ডিসেম্বর, রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের অনুপস্থিতিতে মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে সভাপতিত্বকালে ফজলুল কাদের চৌধুরী কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী এ.টি.এম মোস্তফাকে বিশ্ববিদ্যালয়টি কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ১৯৬৪ সালের ৯ মার্চ তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের বৈঠকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ মঞ্জুর করা হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর এম ওসমান গণিকে চেয়ারম্যান এবং ডক্টর কুদরাত-এ-খুদা, ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, এম ফেরদৌস খান ও ডক্টর মফিজউদ্দীন আহমদকে সদস্য নির্বাচিন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্থান নির্বাচন কমিশন’ গঠিত হয়। এই কমিশন সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে হাটহাজারী উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের জঙ্গল পশ্চিম-পট্টি মৌজার নির্জন পাহাড়ি ভূমিকে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হিসেবে সুপারিশ করে। ১৯৬৪ সালের ১৭-১৯ জুলাই পাকিস্তানের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ফজলুল কাদের চৌধুরীর সভাপতিত্বে ইসলামাবাদে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের সভায় ‘স্থান নির্বাচন কমিশন’-এর সুপারিশের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহণ এবং এর চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করা হয়।[5] ১৯৬৪ সালের ২৯ আগস্ট পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।[7]
১৯৬৫ সালের ৩ ডিসেম্বর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের প্রাক্তন কিউরেটর ড. আজিজুর রহমান মল্লিককে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প-পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এরপর আজিজুর রহমান মল্লিককে চট্টগ্রাম শহরের নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ৩নং সড়কের ‘কাকাসান’ নামের একটি ভবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের অফিস স্থাপন করেন। ১৯৬৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর, এক সরকারি প্রজ্ঞাপন বলে তৎকালীন পাকিস্তান শিক্ষা পরিদপ্তরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমস্ত কর্মকর্তাকর্মচারীকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প অফিসে বদলি করা হয়। স্থপতি মাজহারুল ইসলামের ‘বাস্তকলা’ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাষ্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়। প্রাথমিকভাবে ১টি দ্বিতল প্রশাসনিক ভবন, বিভাগীয় অফিস, শ্রেণিকক্ষ ও গ্রন্থাগারে জন্য একতলা ভবন তৈরি করার পাশাপাশি শিক্ষক ও ছাত্রদের আবাসনের ব্যবস্থাও করা হয়।[5]
২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করে।[8]
মুক্তিযুদ্ধের পাঁচ বছর পূর্বে চালু হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সহ দেশের বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। পরবর্তীতে ১৯৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং ২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিলো।[9]
১৯৭১ সালে, মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আজিজুর রহমান মল্লিকের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়েছিল। ২৪ মার্চ, স্বাধীনতা সংগ্রামের সমর্থনে প্রাক্তণ ছাত্র সমিতির আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে আয়োজন করা হয় গণসঙ্গীত। ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দখল করে, এবং টানা নয় মাস তাদের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করে। পাকিস্তানি সেনারা এখানে তাদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বানিয়েছিল। পরবর্তীতে যুদ্ধের শেষে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাফর ইমামের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালায় এবং ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের নয়দিন পর ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানিদের আওতা মুক্ত হয়।[9]
১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, বারোজন শিক্ষার্থী সহ তিন জন কর্মকর্তা নিহত হন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দপ্তরের কর্মচারী মোহাম্মদ হোসেনকে বীরপ্রতীক খেতাব দেয়া হয়।[10] হোসেন গণবাহিনী (সেক্টর-১)-এর অধিনে নৌ-কমান্ডো হিসাবে যুদ্ধে অংশ নিয়ে ছিলেন।[11] এই ইতিহাস সংরক্ষণের লক্ষে, মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে জিরো পয়েন্ট চত্বরে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ স্মরণ।[12]
মুক্তিযুদ্ধে নিহতরা হলেন:[9]
ক্রম | নাম | বিবরণ |
---|---|---|
০১ | বীর প্রতীক মোহাম্মদ হোসেন | প্রকৌশল দপ্তরের চেইনম্যান |
০২ | অবনী মোহন দত্ত। | দর্শন বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক |
০৩ | আবদুর রব | চাকসুর সাধারণ সম্পাদক ও ইতিহাস বিভাগের ছাত্র |
০৪ | প্রভাস কুমার বড়ুয়া | উপ-সহকারী প্রকৌশলী |
০৫ | মনিরুল ইসলাম খোকা | বাংলা বিভাগের ছাত্র |
০৬ | মোহাম্মদ হোসেন | বাংলা বিভাগের ছাত্র |
০৭ | মোস্তফা কামাল | বাংলা বিভাগের ছাত্র |
০৮ | নাজিম উদ্দিন খান | অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র |
০৯ | আবদুল মান্নান | অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র |
১০ | ফরহাদ উদ-দৌলা | ইতিহাস বিভাগের ছাত্র |
১১ | খন্দকার এহসানুল হক আনসারি | বাণিজ্য অনুষদের ছাত্র |
১২ | আশুতোষ চক্রবর্তী | ইংরেজি বিভাগের ছাত্র |
১৩ | ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদ | সমাজতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র |
১৪ | আবুল মনসুর | রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র |
১৫ | ভুবন | গণিত বিভাগের ছাত্র (মুক্তিযুদ্ধের মহানায়কেরা-নভেম্বর ১৮, ২০১৬-দৈনিক পূর্বকোন) |
১৬ | ছৈয়দ আহমদ | আলাওল হলের প্রহরী |
১৯৭৩ সালের ১৪ জুন, মধ্যযুগের চারটি কামান নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে জাদুঘরে বেলে পাথরের একাধিক ভাস্কর্যসহ বেশকিছু প্রাচীন পাথরের ভাস্কর্য এবং একটি কামান রয়েছে। জাদুঘর ভবনটি পাঁচটি গ্যালারিতে বিভক্ত। যেখানে রয়েছে: প্রাগৈতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক গ্যালারি, ভাস্কর্য গ্যালারি, ইসলামিক আর্ট গ্যালারি, লোকশিল্প গ্যালারি এবং সমসাময়িক আর্ট গ্যালারি।[13]
জাদুঘরের মূল কক্ষের প্রবেশ পথে রয়েছে দ্বাদশ শতকের একটি প্রাচীন শিলালিপি। এখানে অষ্টম শতকের পাহাড়পুর থেকে প্রাপ্ত পোড়ামাটির চিত্রফলক, বৌদ্ধমূর্তি, মধ্যযুগের ১০-১৫টি বিষ্ণুমূর্তি, সৈন্যদের ব্যবহৃত অস্ত্র-শস্ত্র, বিভিন্ন রকম মুদ্রা, প্রাচীন বই, বাদ্যযন্ত্র, আদবিাসীদের বিভিন্ন নিদর্শন, চিনামাটির পাত্র ইত্যাদি সংরক্ষিত রয়েছে। সমসাময়িক আর্ট গ্যালারিতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান, রশিদ চৌধুরী, জিয়া উদ্দীন চৌধুরী, নিতুন কুন্ডু চৌধুরীর পেইন্টিংস এবং সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদের ভাস্কর্য রয়েছে।[14] প্রাগৈতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক আর্ট গ্যালারিতে প্রাচীনকালের চিত্রকর্ম, জীবাশ্ম, মাটির মূর্তি রয়েছে। ভাস্কর্য গ্যালারিতে রয়েছে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কালের কাঠের মূর্তি, বিষ্ণুমূর্তি, শিবলিঙ্গ প্রভৃতী। লোকশিল্প গ্যালারিতে সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকের তামা, পিতল ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র, বেতের ঝুড়ি, মাটির ভাস্কর্য, মাটির পুতুল প্রভৃতির বিশাল সম্ভার রয়েছে। ইসলামিক আর্ট গ্যালারিতে রয়েছে মোগল আমলের কামান, স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, হস্তলিখিত কুরআন, মধ্যযুগীয় অস্ত্র, প্রাচীন মসজিদের ও তাদের ধ্বংসাবশেষের ছবি। জাদুঘরটি সকল খোলার দিনে দর্শকদের জন্য উম্মুক্ত থাকে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত প্রাণিবিদ্যা জাদুঘর ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের পাঠক্রমের সমর্থনে সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থাপিত হয়। জাদুঘরে প্রায় ৫৪০ টি নমুনা সংরক্ষিত রয়েছে, এর মধ্যে প্রাণীর সংখ্যা ৫৭ টি এবং ফরমালিন (ভেজা সংরক্ষিত) নমুনার সংখ্যা ৪৮৫ টি।[15]
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের একটি কক্ষে গড়ে তোলা হয়েছে এ জাদুঘর। এখানে ৫৫০ টির মতো সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণ করা হয়েছে। হাঙ্গর থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক মাছ আজব বাণাকেল, অক্টোপাস, শামুক, বিভিন্ন প্রজাতীর সাপ সহ রয়েছে অসংখ্য বিস্ময়কর জীববৈচিত্রের সংরক্ষণ।[15]
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বিপরীত পাশে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ অবস্থিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ভাষ্কর্যটি স্থাপন করা হয় বলে স্তম্ভটির অবস্থান বুদ্ধিজীবী চত্বর নামে পরিচিত। প্রথিতযশা শিল্পী রশিদ চৌধুরী স্মৃতিস্তম্ভের নকশা প্রণয়ন করেন। ১৯৮৫ সালে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভটি এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃজনশীল কর্মের সূতিকাগার হিসাবে ভাবা হয়।[16][17]
ষাটের দশকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর, তিনটি স্তম্ভের আদলে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল।[18] পরবর্তীতে প্রাকৃতির দুযোর্গে সেটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায়, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভের বিপরীত পাশে প্রায় দশ শতক জায়গার ওপর[19] ১৯৯৩ সালে বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়।[9] এটির নকশা প্রনয়ন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক ও ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ।[18] ত্রিভুজাকৃতির তিনটি মিনারের চূড়ায় রয়েছে একটি শাপলা ফুলের কলি।[19] বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৯৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।[19]
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথেই ২০০৯ সালের ৫ নভেম্বরে স্থাপন করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ স্মরণ।[12] স্মৃতিস্তম্ভটির স্থপতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ সাইফুল কবীর। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন শিক্ষক, ১১ জন ছাত্র এবং ৩ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী সহ সর্বমোট ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগ আর বীরত্বের স্মৃতিস্বরূপ ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে। ভূমি থেকে স্মরণের মূল বেদি পর্যন্ত সর্বমোট চারটি ধাপ যার প্রতিটি ধাপ বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। প্রথম ধাপ বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, দ্বিতীয় ধাপ ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, তৃতীয় ধাপ সত্তরের নির্বাচন ও চতুর্থ ধাপে প্রতিফলিত হয়েছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।[16][17] স্মৃতিস্তম্ভে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন মুক্তিযোদ্ধার নাম ও ছবি রয়েছে, তারা হলেন- প্রকৌশল দপ্তরের চেইন ম্যান বীর প্রতীক মোহাম্মদ হোসেন, চাকসুর জিএস আব্দুর রব, শিক্ষার্থী ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদ, ফরহাদ-উদ-দৌলা, নাজিম উদ্দিন খান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রভাষ কুমার বড়ুয়া এবং প্রহরী সৈয়দ আহমদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সামনে ভাস্কর্যটির অবস্থান। খ্যাতিমান শিল্পী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক মুর্তজা বশীরের একক প্রচেষ্টায় এটি নির্মিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক সৈয়দ সাইফুল কবীর ভাস্কর্যটির নকশায় করেন।[17][12] ভাস্কর্যটিতে ৪টি পাখির প্রতীকী নির্মাণে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাঙালির ছয় দফা ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্রমধারা এবং পাখির ডানায় ২১টি পাথরের টুকরায় লিপিবদ্ধ হয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সমৃতি। ভাস্কর্টির মূল ভিত্তি রচিত হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলার ওপর।[16] ২৫ মার্চ, ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আবু ইউসুফ, ও উপ-উপাচার্য মোহাম্মদ আলাউদ্দিন এটি উদ্ভোধন করেন।[12]
বুদ্ধিজীবী চত্ত্বরে নির্মিত জয় বাংলা ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয় অক্টোবর ২০১৮ সালে। সৈয়দ মোহাম্মদ সোহরাব জাহানের নকশাকৃত ভাস্কর্যটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৮ সালের মার্চে এবং তৈরি করতে সময় লাগে নয় মাস। এটি নির্মাণ সহযোগী ছিলেন মুজাহিদুর রহমান মূসা ও জয়াশীষ আচার্য।[20] বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই ভাস্কর্যের দুটি স্তরের, উপরের অংশে রয়েছে চামড়া সংযুক্ত তিনজন সরাসরি মুক্তিযোদ্ধার অবয়ব; যাাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। নিচের অংশে ব্যবহৃত ২০টি মানব অবয়বের মধ্যে রয়েছে রয়েছে দুজন পাহাড়ি-বাঙালির অবয়ব, যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি ও বাঙালিদের অংশগ্রহণ তুলে ধরা হয়েছে। বেদি থেকে প্রায় ১৮ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্যটির প্রস্থ প্রায় ২০ ফুট। উপরের স্তরে দুই পুরুষ মুক্তিযোদ্ধার উচ্চতা ১১ ফুট এবং নিচের স্তরে প্রতিটি মানব অবয়বের উচ্চতা ‘লাইফ সাইজ’ ফুট হিসাবে বিবেচিত।[20][21] ২০ লক্ষ টার্ক ব্যায়ে নির্মিত ভাস্কর্ডটি ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।[22][21]
অনুষদ | ১০[23] |
বিভাগ | ৫৪[24] |
ইনস্টিটিউট | ৭[25] |
গবেষণাকেন্দ্র | ৬[26] |
অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ | ২১ |
২০২৪ সালের হিসেবে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯টি অনুষদের অধীনে ৫৪টি বিভাগ রয়েছে।
অনুষদ | স্থাপিত | বিভাগ |
---|---|---|
কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ | ১৯৬৬ | ১৪ |
আইন অনুষদ | ১৯৬৬ | ০১ |
বিজ্ঞান অনুষদ | ১৯৬৯ | ০৫ |
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ | ১৯৭০ | ০৬ |
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ | ১৯৭১ | ১০ |
প্রকৌশল অনুষদ | ২০০১ | ০২ |
জীব বিজ্ঞান অনুষদ | ০৯ | |
শিক্ষা অনুষদ | ০১ | |
চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুষদ | ০১ | |
মেরিন সায়েন্স ও ফিশারিজ অনুষদ | ২০১৯ | ০২ |
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৭টি ইনস্টিটিউট রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬টি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে বর্তমানে ২৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ গ্রন্থাগার যা দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই গ্রন্থাগারে বর্তমান সংগ্রহ সংখ্যা প্রায় ৩.৫ লক্ষ[27] যার মধ্যে রয়েছে বিরল বই, জার্নাল, অডিও-ভিজ্যুয়াল উপাদান, পান্ডুলিপি এবং অন্ধদের জন্য ব্রেইল বই।[5][28] ১৯৬৬ সালের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোবধনের সাথে এই গ্রন্থাগারের যাত্রা শুরু হয় মাত্র ৩০০ বই নিয়ে।[28] লাইব্রেরি বর্তমান ভবনে স্থানান্তরিত হয় ১৯৯০ সালের নভেম্বরে। তিনতলা বিশিষ্ট গ্রন্থাগারটিতে শিক্ষার্থী, গবেষক এবং শিক্ষকদের জন্য পৃথক কক্ষ রয়েছে। গ্রন্থাগার ভবনে একটি মিলনায়তনও রয়েছে। গ্রন্থাগারে ফটোকপির ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রন্থাগারটিতে প্রতিদিন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। গ্রন্থাগারটিকে বর্তমানে অটোমেশনের আওতায় আনা হয়েছে।[29]
বিশ্ববিদ্যালয়েরর আইন অনুষদের কাছেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার অবস্থিত। এটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের এবং প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা গ্রহণের জন্য কাজ করে থাকে। পাশাপাশি এখানে শিক্ষক ও কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যদের জন্যও বিনামূল্যে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এই মেডিকেল সেন্টারে সপ্তাহের প্রতিদিন সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে চিকিৎসকগণ পালা করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন। এই সেন্টারে ১১ জন চিকিৎসক ও ৪ টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এছাড়াও মেডিকেল সেন্টার প্রাঙ্গণে ৬ টি অস্থায়ী বিছানার ব্যবস্থা রয়েছে।[30]
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাস প্রাকৃতিক সৌর্ন্দের লীলাভূমি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ জুড়ে রয়েছে আঁকাবাঁকা পথ, পাহাড়ী পথ, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এবং বন্য প্রাণী। প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটা পাহাড়, বাণিজ্য অনুষদের পেছনে, ফরেস্ট্রি একালাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক পরিবেশে ছোট আকারের লালচে বাদামী পিঙ্গল রংয়ের মায়া হরিণ দেখা যায়। এইসব মায়া হরিণগুলো খর্বকায় ও লাজুক স্বভাবের। তবে এই হরিণের প্রকৃত সংখ্যা কত তা জানাে নেই।[31] এছাড়াও কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের পেছনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ি ঝরনা।[32]
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে ১২টি আবাসিক হল রয়েছে যার মধ্যে ৮টি ছাত্র হল ও ৪টি ছাত্রী হল।[33] এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে ১টি হোস্টেল রয়েছে।[5]
ছাত্র হল
|
ছাত্রী হল
ছাত্রাবাস
|
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ভবনের ৩য় তলায় সাংবাদিক সমিতির অবস্থান। ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর এটির যাত্রা শুরু। শুরু থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যগণ পদাধিকারবলে সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। চবি সাংবাদিক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট অনুমোদিত একটি সংগঠন। সদস্যরা সরাসরি ভোট দিয়ে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং অন্যান্য পদ নির্বাচন করেন। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠার পরে এখন পর্যন্ত মোট ৬ বার চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। সর্বশেষ ১৯৯০ সালে নির্বাচনের পর এ ছাত্র সংসদের নির্বাচন ২৪ বছর ধরে বন্ধ আছে।
১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে ১৯৮১ সালে একটি বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।[5] সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৬ সালের জানুয়ারি ৩১ তারিখ।[37]
বছর | নাম | উপাধি | পরিচয় |
---|---|---|---|
১৯৮১ | আবদুস সালাম | ডক্টর অব সায়েন্স | তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী |
২০০৮ | জামাল নজরুল ইসলাম | ডক্টর অব সায়েন্স | একুশে পদক বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী |
২০১৮ | প্রণব মুখোপাধ্যায় | ডক্টর অব লেটার্স | ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি |
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরবর্তী এ যাবৎকাল পর্যন্ত মোট ১৯ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য মো. আবু তাহের
ক্রম | চিত্র | উপাচার্য | থেকে | পর্যন্ত |
---|---|---|---|---|
১ | আজিজুর রহমান মল্লিক | ০১-১০-১৯৬৬ | ৩১-০১-১৯৭২ | |
২ | ইউ এন সিদ্দিকী (ভারপ্রাপ্ত) | ২১-০৪-১৯৭১ | ৩০-০১-১৯৭২ | |
৩ | এম ইন্নাস আলী | ০১-০২-১৯৭২ | ১৮-০৪-১৯৭৩ | |
৪ | আবুল ফজল | ১৯-০৪-১৯৭৩ | ২৭-১১-১৯৭৫ | |
৫ | আব্দুল করিম | ২৮-১১-১৯৭৫ | ১৮-০৪-১৯৮১ | |
৬ | এম এ আজিজ খান[38] | ১৯-০৪-১৯৮১ | ১৮-০৪-১৯৮৫ | |
৭ | মোহাম্মদ আলী | ১৯-০৪-১৯৮৫ | ২২-০৫-১৯৮৮ | |
৮ | আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন | ২৩-০৫-১৯৮৮ | ২৯-১২-১৯৯১ | |
৯ | রফিকুল ইসলাম চৌধুরী | ৩০-১২-১৯৯১ | ০৬-১১-১৯৯৬ | |
১০ | আবদুল মান্নান | ০৬-১১-১৯৯৬ | ১৩-০২-২০০১ | |
১১ | মোহাম্মদ ফজলী হোসেন | ১৪-০২-২০০১ | ০২-০২-২০০২ | |
১২ | এ জে এম নূরুদ্দীন চৌধুরী | ০২-০২-২০০২ | ০২-০২-২০০৬ | |
১৩ | এম বদিউল আলম | ০৩-০২-২০০৬ | ২৪-০২-২০০৯ | |
১৪ | আবু ইউসুফ[39] | ২৫-০২-২০০৯ | ২৮-১১-২০১০[40] | |
১৫ | মোহাম্মদ আলাউদ্দীন (ভারপ্রাপ্ত)[41] | ০৯-১২-২০১০[40] | ১৪-০৬-২০১১ | |
১৬ | আনোয়ারুল আজিম আরিফ[42] | ১৫-০৬-২০১১ | ০১-০৬-২০১৫ | |
১৭ | ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | ১৫-০৬-২০১৫[43][44][45] | ১২/০৬/২০১৯[46] | |
১৮ | শিরীণ আখতার | ৩ নভেম্বর ২০১৯ | ১৯ মার্চ ২০২৪ | |
১৯ | মো. আবু তাহের | ২০ মার্চ ২০২৪ | বর্তমান |
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জার্নাল বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন গবেষণাপত্র প্রকাশের উন্মুক্ত সাধারণ মাধ্যম। পূর্বে এর নাম ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডিজ। আলাদা পৃথক অনুষদ জন্য এর সাথে প্রত্যয়রূপে অনুষদের নাম যুক্ত হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল অব আর্টস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল অব সোশ্যাল সায়েন্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল অব বিজনেস এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল অব ল দুই বছর অন্তর প্রকাশিত হয়।[47] এছাড়াও বাংলা বিভাগ থেকে পান্ডুলিপি, ইতিহাস বিভাগ থেকে ইতিহাস পত্রিকা এবং অর্থনীতি বিভাগ থেকে ইকনমিক ইকো পত্রিকা প্রকাশিত হয়।[5]
বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য ট্রেন ব্যাবস্থা রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন একক প্লাটফর্ম বিশিষ্ট দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন। এছাড়াও শিক্ষকদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে বাস এবং মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ১০টি বগি বিশিষ্ট দুইটি শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার শিক্ষার্থী শাটল ট্রেনে যাতায়াত করে থাকে। বর্তমানে ট্রেন দুইটি দৈনিক সাতবার চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ও ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন থেকে পুনরায় বটতলি ও ষোলশহর স্টেশন পর্যন্ত নির্ধারিত সময়সূচী[48] অনুযায়ী যাতায়াত করে।[49]
১৯৮০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের একমাত্র বাহন হিসেবে শাটল ট্রেনের প্রথম যাত্রা শুরু হয়।[50] শাটল ট্রেনের পাশাপাশি কমিউটার ট্রেনের ব্যবস্থাও রয়েছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.