বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ (১৯০৮ - ১০ এপ্রিল ১৯৬৪) ছিলেন এ দেশের নারী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী, বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ এবং সমাজসেবিকা ৷ তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্নেহধন্য। কবির নিকট থেকে তিনি ব্যাপক অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা পান। কবিকে নিয়ে লেখা তাঁর সুবিখ্যাত গ্রন্থ "নজরুলকে যেমন দেখেছি"। মুসলমান সমাজে নারী শিক্ষা প্রসার ও অবরোধপ্রথা রহিত করার জন্য যাঁরা জীবন উত্সর্গ করেছিলেন তাদের মধ্যে তার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ছাত্রী হল, এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল তার নামে নামকরণ করা হয়।
বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ | |
---|---|
জন্ম | ১৯০৮ ফেনী জেলায় |
মৃত্যু | ১০ এপ্রিল ১৯৬৪ |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯০৮-১৯৪৭) পাকিস্তান, বাংলাদেশ (১৯৪৭-১৯৬৪) |
পরিচিতির কারণ | নারী নেত্রী, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ এবং সমাজসেবিকা |
দাম্পত্য সঙ্গী | ডাঃ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ |
পিতা-মাতা | মুহাম্মদ নুরুল্লাহ চৌধুুরী (বাবা)[1][2] আসিয়া খাতুন চৌধুরানী (মা)[1] |
আত্মীয় | খান বাহাদুর আবদুল আজিজ (নানা), হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী (ভাই) |
পুরস্কার | স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার |
জন্ম ও শিক্ষা
শামসুন নাহার ১৯০৮ সালের ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশের বর্তমান ফেনী জেলায় গুথুমা গ্রামে, মুন্সীবাড়ীতে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মৌলভী মুহাম্মদ নুরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন মুন্সেফ এবং মা আছিয়া খাতুন চৌধুরী ছিলেন গৃহিনী। তিনি ছিলেন পিতৃহীনা। চট্টগ্রামের তামাকুমন্ডিস্থ নানা খান বাহাদুর আবদুল আজিজের বাড়িতে মা ও ভাই হবীবুল্লাহ বাহারের সাথে বড় হন।
তিনি লেখাপড়া করেন ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ও ১৯২৬ সালে ব্যক্তিগতভাবে পরীক্ষা দিয়ে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯২৮ সালে তিনি ডায়েসিমন কলেজ থেকে আই এ পাশ করেন। একই কলেজ থেকে ১৯৩২ সালে শামসুন নাহার বিএ পাশ করেন, তখন বেগম রোকেয়া এ উপলক্ষে সংবর্ধনার আয়োজন করেন। দশবছর পর ১৯৪২ সালের তিনি এমএ পাশ করেন।[3] তার পড়াশুনা শেষ করার পর তিনি বেগম রোকেয়ার নেতৃত্বে নারী অধিকার আন্দোলনে যোগ দেন।[4]
কর্মজীবন
শামসুন নাহার কিছুদিন নিখিল বঙ্গ মুসলিম মহিলা সমিতির সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫২ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন। কলম্বোতে ইন্টারন্যাশন্যাল কাউন্সিল অব ওমেন-এ তিনি একটি দলের নেতৃত্ব দেন। সমগ্র এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে তিনি ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ অর্গানাইজেশনে যোগ দেন। ১৯৬২ তে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
সাহিত্য চর্চা
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাথে শামসুন নাহার মাহমুদ ও তার ভাই হবীবুল্লাহ বাহারের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল।কলকাতা থাকাকালীন শামসুন নাহার কবি কর্তৃক অনুপ্রানিত হয়ে লেখা শুরু করেন।[5] তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়, আঙ্গুর পত্রিকায়। আইএ পড়বার সময় থেকেই তিনি নওরোজ ও আত্মশক্তি পত্রিকার নারী বিষয়ক অংশের সম্পাদকের কাজ করেন।
রচিত গ্রন্থ
- পূন্যময়ী (১৯২৫),
- ফুলবাগিচা (১৯৩৫);
- বেগম মহল (১৯৩৬);
- রোকেয়া জীবনী (১৯৩৭);
- শিশুর শিক্ষা (১৯৩৯);
- আমার দেখা তুরস্ক (১৯৫৫);
- নজরুলকে যেমন দেখেছি (১৯৫৮)।
কাজী নজরুল ইসলাম তার সিন্ধু হিন্দোল কাব্যগ্রন্থ "বাহার ও নাহার"-কে (হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী ও শামসুন নাহার) উৎসর্গ করেন। [4]
ব্যক্তিগত জীবন
১৯২৭ সালে তিনি ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদকে বিয়ে করেন। যিনি তখন পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ শল্য-চিকিৎসক ছিলেন। তাদের দুই ছেলে হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মামুন মাহমুদ শহীদ হন, অন্য ছেলে মইনউদ্দীন মাহমুদ একজন ক্রিকেটার এবং ক্রীড়া উদ্যোক্তা।
মৃত্যু
১৯৬৪ সালের ১০ এপ্রিল তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৮১ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে সমাজসেবার জন্য মরণোত্তর স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার প্রদান করেন।[6] ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার বেগম শামসুন নাহার মাহমুদকে মরণোত্তর ,'বেগম রোকেয়া পদক' প্রদান করে।
তথ্যসূত্র
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.