Loading AI tools
বাংলাদেশের একটি নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (সংক্ষেপে ছাত্রলীগ) হলো বাংলাদেশের একটি নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্র সংগঠন, যেটিকে রাষ্ট্রবিরোধী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।[2][3][4][5] এটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত।[6] প্রতিষ্ঠার পর এটি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ নামে পরিচিত ছিল।[7] ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে শেখ মুজিবুর রহমান দলটি প্রতিষ্ঠা করেন।[8]
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ | |
---|---|
সভাপতি | সাদ্দাম হোসেন[1] |
সাধারণ সম্পাদক | শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান[1] |
প্রতিষ্ঠাতা | শেখ মুজিবুর রহমান |
প্রতিষ্ঠা | ৪ জানুয়ারি ১৯৪৮ |
নিষিদ্ধ | ২৩ অক্টোবর ২০২৪ |
পূর্ববর্তী | পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ (১৯৪৮-১৯৫৩) পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ (১৯৫৩-১৯৭১) |
সদর দপ্তর | ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ঢাকা |
ভাবাদর্শ | মুজিববাদ |
স্লোগান | শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি |
দলীয় পতাকা | |
প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর, বিশেষত ১৯৯০-এর দশকের পর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংগঠনটিকে তাদের অঘোষিত প্যারামিলিটারি বা লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে।[9][10][11][7]
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নির্যাতন, চাঁদাবাজি, সহিংসতা, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি ও হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ছাত্রলীগের হামলায় কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত এবং ১,৫০০ জন গুরুতর আহত হয়েছিল।[12][13] ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিলো ১২৯ জনে, শুধু ২০১৮ সালেই ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।[14][15][16]
২০১৬ সালের জুলাইয়ে গুলশান হামলার পর জঙ্গি তল্লাশিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।[17] ২০২১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সাথেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।[18] ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ইডেন মহিলা কলেজ শাখার ছাত্রীদের ব্ল্যাকমেইল করে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি চক্র চালানোর অভিযোগ রয়েছে।[19]
২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগের হামলার পর সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে "বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করার" দাবি জানিয়ে চেইঞ্জ.অর্গে একটি আবেদন শুরু হয়।[20][21] ২০১৯ সালে, অনলাইন সংবাদ পোর্টাল ঢাকা ট্রিবিউন এই সংগঠনকে "লজ্জার ব্র্যান্ড" হিসেবে অভিহিত করে।[22] ২৬ মে ২০২২ সালে, ভিন্নমতাবলম্বী ছাত্র সংগঠনগুলোর উপর ধারাবাহিক হামলার পর, আটটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে 'সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে আখ্যা দেয়।[23]
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অ্যাসেম্বলি হলে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।[24] প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ।[25] এবং এই সংগঠনের প্রথম অফিস ছিল ১৫০ মোগলটুলীতে। এই ১৫০ মোগলটুলীই ছিল মুসলিম লীগেরও অফিস। মুসলিম লীগের কিছু বাঙালি নেতা যখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করলেন তখন মুসলিম লীগের অন্যান্য নেতারা তা মেনে নিতে পারেননি। শুরু হয়ে গেল এক ধরনের ছোটখাটো গৃহযুদ্ধ। তাঁরা দফায় দফায় আক্রমণ চালাতে লাগল এই অফিসটি দখল করতে। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতাদের, বিশেষ করে শওকত আলীর বলিষ্ঠতার কারণে তারা অফিসটি দখল করতে সক্ষম হয়নি। নতুন অফিসের জন্য টেবিল, চেয়ার, আলমারি, সবকিছুর বন্দোবস্ত করেছিলেন তরুণ ছাত্র নেতা শওকত আলী।
১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি তারিখে ফজলুল হক মুসলিম হলের এসেম্বলি হলে এক সভা ডাকা হল, সেখানে স্থির হল একটা ছাত্র প্রতিষ্ঠান করা হবে যার নাম হবে ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’।…প্রতিষ্ঠানের অফিস করলাম ১৫০ নম্বর মোগলটুলী। মুসলিম লীগ নেতারা কয়েকবার চেষ্টা করেছেন এই অফিসটা দখল করতে, কিন্তু শওকত মিয়ার জন্য পারেন নাই। আমরা ‘মুসলিম লীগ ওয়ার্কার্স ক্যাম্প’ নাম দিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছিলাম। এখন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের অফিসও করা হল। শওকত মিয়া টেবিল, চেয়ার, আলমারি সকল কিছুই বন্দোবস্ত করল। তাকে না হলে, আমাদের কোন কাজই হত না তখন। আমরা যে কয়েকজন তার সাথে মোগলটুলীতে থাকতাম, আমাদের খাওয়া থাকার ভার তার উপরই ছিল। … মোগলটুলীতেই ন্যাশনাল গার্ডের অফিস করা হয়েছিল। তিনতলা বাড়ি, অনেক জায়গা ছিল।
— শেখ মুজিবুর রহমান (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা ৮৮, ৮৯)
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অধিকার সংক্রান্ত আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন[26], শিক্ষার অধিকার, বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলন। প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়কের ভূমিকা পালন করেন নাঈমউদ্দিন আহমেদ এবং পরবর্তীতে সাংগঠনিকভাবে এর সভাপতি মনোনীত হন দবিরুল ইসলাম। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন খালেক নেওয়াজ খান।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পর সর্বপ্রথম মাতৃভাষা বাংলার জন্য সংগ্রাম করেছিল। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী ছিলেন, যাতে ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর ভ্যানগার্ড ছিল। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল।
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবি দিয়েছিলেন, যা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন বেগমান হয়। তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯৬৯ সালে বাংলার ছাত্রসমাজ সারাদেশে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলে, যা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বাংলার ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেন, যা ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের গতিকে ত্বরান্বিত করে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্যানগার্ড হিসেবে ছাত্রলীগ কাজ করত। সারা বাংলাদেশে পাকিস্তানের অপশাসনের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বাচিত করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ছাত্রলীগ ভূমিকা পালন করে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী শহীদ হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। নূরে আলম সিদ্দিকী, তোফায়েল আহমেদ-সহ তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতারা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে প্রতিটি জেলায়, উপজেলায়, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিল।
জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ ও যুক্ত করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের অবদান ছিল। ছাত্রলীগের বহু নেতাকর্মী যুদ্ধে শহীদ হন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের নাম পরিবর্তন হয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হয়।
১/১১’র সময় শেখ হাসিনাসহ ছাত্র-শিক্ষক সবার মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গণআন্দোলন গড়ে তুলেছিল।
২০১৮ সালের ৩১ জুলাই ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে সংগঠনটির নেতৃত্বে আসেন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। উক্ত কেন্দ্রীয় নেতাদ্বয়ের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তাদের বাদ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে আসেন আল নাহিয়ান খান জয় এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদের দায়িত্বে আসেন লেখক ভট্টাচার্য।[27] পরবর্তী কাউন্সিলে তাদের নিয়মিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়।[28]
২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে “সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯” এর আওতায় বাংলাদেশ সরকার ২৩ অক্টোবর ২০২৪ বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং এই আইনের তফসিল-২ অনুযায়ী ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামের ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। [29][30]
অবিভক্ত পাকিস্তানের সর্বপ্রথম ছাত্র সংগঠন এটি। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ নামে যাত্রা শুরু এই সংগঠনটির। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এর নাম হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। পরবর্তীতে দলে সাম্প্রদায়িক বিতর্ক এড়িয়ে চলতে ১৯৫৫ সালে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে নামকরণ করা হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। সাম্প্রদায়িক অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে একই সাথে ছাত্রলীগের নামেও পরিবর্তন আসে, ছাত্রলীগের নাম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ’।
স্বাধীনতা যুদ্ধে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে মুজিব বাহিনী গঠিত হয়। মুক্তিবাহিনী, মুজিব বাহিনীসহ বিভিন্ন নামে মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর দলের নামেও পরিবর্তন আসে । ছাত্রলীগের নাম হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।[31]
বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের এই সংগঠনের নাম “বাংলাদেশ ছাত্রলীগ” ও ইংরেজিতে “বাংলাদেশ স্টুডেন্টস লিগ”, সংক্ষেপে বাংলায় ছাত্রলীগ নামে ও ইংরেজিতে “বিএসএল” নামে অভিহিত করা হয়। এর জাতীয় ভিক্তিতে সর্বোচ্চ কমিটি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ সংক্ষেপে নির্বাহী সংসদ নামে অভিহিত হয়। সংগঠনের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক ফোরামের নাম কেন্দ্রীয় কমিটি (পূর্বতন জাতীয় পরিষদ)।[32]
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং এগারো দফা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্বাধিকার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।[33] ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধের উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগ মুজিব বাহিনী গঠন করে এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
ছাত্রলীগ বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগ্রামে প্রথম সারিতে থাকলেও, ১৯৯০-এর দশক পরবর্তী সময়ে সংগঠনটি তাদের বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের কর্মকাণ্ডের কারণে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে।[7] সংগঠনটি আতঙ্ক ছড়ান, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, সহিংসতা, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি প্রভৃতি নানা অভিযোগে জর্জরিত।[34] সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেস্টরুম নির্যাতনের মাধ্যমে জোরপূর্বক দলীয় কর্মী বানিয়েছে।[35][36] ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ছাত্রলীগের হামলায় কমপক্ষে ১৬২ জন নিহত হয়েছে।[36] এবং ২০০৯ সাল থেমে ২০১৪ সালের মধ্যেই ১৫০০ জন গুরুতর আহত হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে কমপক্ষে ৫০০ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে, এতে নিজেদের ৫৫ জন কর্মী মারা গিয়েছে।[36] এছাড়া জুলাই গণহত্যায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলায় ১,০০০-এরও বেশি শিক্ষার্থী নিহত এবং ১৫,০০০-এরও বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়।[37][38]
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হল দখল, ক্যাম্পাস আধিপত্য, চাঁদাবাজি প্রভৃতির জন্য নানা হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ছাত্রলীগ ১২৯ জনকে হত্যা করেছে। এই সময়ে বহুবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে আন্তঃকোন্দলে নিজেদের ৫৫ জন কর্মীকে হত্যা করেছে।[39]
আবরার ফাহাদ হত্যা
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে শিবিরের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের লোকজন জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।[40] ভারতের সাথে বাংলাদেশের তৎকালীন কিছু চুক্তির সমালোচনা ফেসবুকে পোস্ট দিলে ছাত্রলীগ আবরারকে নির্যাতন কক্ষে ডেকে নেয়। এরপর ভোঁতা জিনিসের মাধ্যমে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।[41]
বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ড
বিশ্বজিৎ দাস, ঢাকার একজন ২৪ বছর বয়সী দর্জি। ২০১১ সালের ৯ই ডিসেম্বর, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্যরা তাকে বিরোধীদল সমর্থক সন্দেহে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। বিশ্বজিৎকে ধাওয়া করা হয় এবং ছুরি, লোহার বার এবং হকি স্টিক দিয়ে আক্রমণ করা হয়।[42] আহত অবস্থায় তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে শীঘ্রই তার মৃত্যু হয়।[43]
আবু বকর হত্যাকাণ্ড
আবু বকর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।[44] তিনি ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্যার এ এফ রহমান হলে সিট দখল নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় আহত হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।[45]
নাহিদ হোসেন হত্যা
ঢাকার নিউ মার্কেটের স্থানীয় দোকানদারদের সাথে সংঘর্ষের সময় ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে একটি জনতা দরিদ্র ডেলিভারিম্যান নাহিদ হোসেনকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ বছরের যুবক নাহিদ হোসেন ২০ এপ্রিল ২০২২ সালে, কামরাঙ্গীরচরের বাড়ি থেকে শুরু করে এলিফ্যান্ট রোডের কর্মস্থলে যান। কিন্তু তার কর্মস্থল থেকে কয়েক গজ দূরে, তাকে ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কথিত একটি জনতা দ্বারা ঘেরাও করে, যারা তাকে বেধড়ক পিটিয়ে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়।[46]
জুবায়ের হত্যাকাণ্ড
জুবায়ের আহমেদ ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র।[47] ২০১২ সালের ৮ই জানুয়ারি ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে অন্তর্কলহ শুরু হয়। একপক্ষের হামলায় অপরপক্ষের ছাত্রলীগ কর্মী জুবায়ের আহত হয়ে একদিন পর মারা যান।
সাদ ইবনে মমতাজ হত্যাকাণ্ড
২০১৪ সালের ৩১ মার্চ রাতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশরাফুল হক হলের ২০৫ নং কক্ষে সাদ ইবনে মমতাজকে ছাত্রলীগের কর্মীরা বেধড়ক পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে।[48] তাকে কয়েক ঘন্টা সময় ধরে কার্পেট দিয়ে মুড়িয়ে লোহার রড, লাঠি, হকিস্টিক ইত্যাদি দিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হয়।[49] পরে তিনি ময়মনসিংহ শহরের একটি ক্লিনিকে মারা যান।
তোফাজ্জল হোসেন হত্যাকাণ্ড
২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে এক মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিকে মব জাস্টিসে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।[50][51][52] তাকে মোবাইল চুরির অভিযোগে আটক করা হয় এবং পরে শিক্ষার্থীরা তাকে নির্মমভাবে মারধর করে, যার ফলে তার মৃত্যু হয়।[53][54] হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি আটককৃত ছয়জনই ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ছিলো।[55]
সংগঠনটি প্রায়সময় ধর্ষণ, যৌন সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে থাকে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা দুর্ধর্ষ ক্যাডার জসিমউদ্দিন মানিক ১০০ ছাত্রীকে ধর্ষণের ‘সেঞ্চুরি উৎসব’ পালন করেছিল।[56][57][58] এছাড়াও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলপরী নির্যাতন, ইডেন কলেজে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তির মত ঘটনা ঘটিয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ সংস্কৃতি
১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জসিমউদ্দিন মানিক ও তার অনুসারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২০ জন ছাত্রীসহ ১০০তম ছাত্রীকে ধর্ষণের 'শতধর্ষন বা সেঞ্চুরি উৎসব' উদযাপন করেছিল। যার ফলস্বরূপ ১৯৯৯ সালে জাবি ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। এই ধর্ষণ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রায় এক বছর ধরে আন্দোলন চলে। ১৯৯৯ সালের ২ আগস্ট মানিক এবং তার অনুসারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলায়ন করে এবং তাদের বহিষ্কার করা হয়।[59]
২০১৫ পহেলা বৈশাখে নারী হয়রানি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে ছাত্রলীগের একদল শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানস্থলে নারীদের যৌন হয়রানি করে এবং তাদের বস্ত্রহরণ করার চেষ্টা করে।[60] প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুসারে প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারীরা আশেপাশে উপস্থিত ছিল, তবুও দুষ্কৃতীদের থামানো হয়নি এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।[61][62] এ ঘটনার প্রতিবাদকারীদের বাধা দেয় ছাত্রলীগ।[63]
ইবিতে ফুলপরী খাতুন নির্যাতন
২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী তাকে হলের "দোয়েল" নামক গণরুমে ডেকে নিয়ে যায়। ৫-৬ জনের একটি দল এই গণরুমে তাকে রাত ৩.৩০ পর্যন্ত নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন করে।[64] ফুলপরীকে কিল, ঘুষি ও থাপ্পর দেওয়া হয়, আলপিন দিয়ে পায়ে ফুটা করা হয়, অশ্লীল গালিগালাজ করা হয়।[65] এছাড়াও তাকে জোর করে ডাইনিংয়ের ময়লা গ্লাস চাটানো, গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে শরীরে আঘাত করা এবং যৌন হয়রানি করা হয়।[66][67] এক পর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করা হয়।[68]
ইডেন কলেজে যৌন শোষণ
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ইডেন মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মহিলা ছাত্রীদের যৌন শোষণের অভিযোগ মিডিয়াতে উঠে আসে।[69] ইডেন কলেজের ছাত্রলীগ নেতাদের একাংশ দাবি করেছেন যে সংগঠনের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের আশীর্বাদপ্রাপ্ত ইউনিটের সভাপতি তরুণ ছাত্রদের তাদের আপোষমূলক ছবি এবং ভিডিও ধারণ করে। পরে এই ছবি দিয়ে উচ্চপদস্থদের কাছে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ব্ল্যাকমেইল করে।[70]
মুরারিচাঁদ ছাত্রাবাসে গৃহবধু ধর্ষণ
২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের শাহ পরাণের মাজার ভ্রমণ করে ফেরার পথে মুরারিচাঁদ কলেজের ছাত্রাবাসে এক গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার হয়।[71][72][73] স্বামীর কাছ থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের এই ঘটনায় ৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়, যাদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।[74][75] ধর্ষণের এই ঘটনায় ছাত্রলীগের ভূমিকা নিয়ে সারাদেশে সমালোচনা হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, “ধর্ষণ তো দূরের কথা, কেউ নারীর প্রতি বিন্দুমাত্র আড়চোখে তাকানোর সাহস করে, এমন কোনো কর্মী বাংলাদেশ ছাত্রলীগে নেই।”[76]
তদন্ত মোতাবেক ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ছাত্রলীগের শারীরিক নির্যাতনে কমপক্ষে ১৫০০ জন গুরুতর আহত হয়েছে। এই নির্যাতনের ফলে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বুয়েটের অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী বুয়েট ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।[77] এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, বুয়েটে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা খণ্ডচিত্রে ছাত্রলীগের নানা নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে।
এহসান রফিক নির্যাতন
২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী দ্বারা নির্যাতিত হোন। এতে তার চোখের কর্ণিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[78] হল সহসভাপতি আরিফুল ইসলাম তাকে নিয়ে ছাত্রলীগের কিছু ছাত্ররা মিলে তাকে দেড় ঘন্টা নির্যাতন করে হল থেকে বের করে দেন। পরে ওমর ফারুকের নেতৃত্বে আবারও তাকে মারধর করা হয়।[79] এতে তার একটি চোখ মারাত্মক জখম হয় এবং কপাল ও নাক ফেটে রক্ত বের হয়ে যায়।[80]
মাহাদি জে আকিব নির্যাতন
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহাদি জে আকিবকে প্রধান ফটকের সামনে পিটিয়ে গুরুতরভাবে আহত করা হয়।[81][82] কাঁচের বোতল, ছুরি, রড, ক্ষুর, ক্রিকেটের স্ট্যাম্প প্রভৃতি দিয়ে তার উপর আক্রমণ করা হয়।[83]
কুয়েটে জাহিদুর নির্যাতন
২০২২ সালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহিদুর রহমানকে ছাত্রশবির সন্দেহে নির্যাতন করা হয়।[84] ১০-১২ জন মিলে তাকে পাইপ দিয়ে পাগলের মত পেটাতে থাকে। শব্দ যেন বাইরে না যায় এইজন্য রুমে সাউন্ড বক্সে উচ্চস্বরে গান বাজানো হয়। তাকে কিল, লাথি, চড়, ঘুষি মারতে থাকে, এক পর্যায়ে অবস্থা গুরুতর হলে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঢামেকে শিক্ষার্থী নির্যাতন
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি হলে ইন্টার্ন চিকিৎসক এএসএম আলী ইমাম শীতলকে তার কোমর থেকে পা পর্যন্ত রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করাসহ হাঁটুর নিচের হাড় ভেঙে দেয়। মাথায় আঘাতের ফলে বমি শুরু হলে তাকে বের করে দেওয়া হয়।[85][86] এর সঙ্গে কলেজ ছাত্রলীগ এবং ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের নেতারা জড়িত। শীতল ঢামেক ছাত্রলীগের সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক।[87][88]
শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন ও অবরোধ করতে চাইলেও দুর্ঘটনার পরদিন থেকেই পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার চেষ্টা করে; পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও তৎকালীন আওয়ামী সরকার-সমর্থক যুবকেরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রছাত্রী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে। এদিকে ২, ৪, ৫ ও ৬ তারিখ ছাত্রলীগসহ তৎকালীন আওয়ামী সরকার-সমর্থক যুবকেরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সংবাদ-সংগ্রহে-যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ করে; সেসব সংঘর্ষে প্রায় দেড় শতাধিক জন আহত হন; পুলিশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে আক্রমণকারীদের প্রতি নির্বিকার থাকলেও বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের দমাতে লাঠিচার্জ, কাঁদানেগ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। প্রায় ১১৫ জন শিক্ষার্থী ও ১৫ জন সাংবাদিক আহত হন।[89][90]
২০১৩, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মিছিল করে এবং আন্দোলকারীদের উপর রড, লাঠি, হকি স্টিক, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। ১৫ জুলাই, ২০২৪ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে নারীদের উপর সহিংসতার অভিযোগও রয়েছে।[91][92]
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা নামে একসময়ের দুর্ধর্ষ সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে ৩ দফায় গণপিটুনির শিকার হন। পরবর্তীতে তার মৃত্যু হয়।[93] [94] দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর প্রতিবেদন অনুসারে এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রদল নেতারা।[95][96]
২৭ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে পরীক্ষা দিতে আসা নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেত্রীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে মহিলা দলের নেত্রীরা লাঞ্ছিত করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।[97]
২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর বাহাত্তরের সংবিধানকে বাতিল, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে পদচ্যুত, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের আলোকে 'প্রজাতন্ত্র ঘোষণা' করা এবং ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে, এই মর্মে ৫ দফা দাবী জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।[98] ২৪ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির পদত্যাগসহ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি জানায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ।[99] আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য পরদিন মধ্যরাত পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়।[100] তবে তার আগেই হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ড, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে এবং সন্ত্রাসী কার্যের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে “সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯” এর আওতায় ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।[101][4][102]
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিফোনে ডয়েচে ভেলেকে ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়ায় এই প্রজ্ঞাপনকে তামাশা ও অসাংবিধানিক এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবৈধ দাবী করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান।[103] গণমাধ্যমে পাঠানো সই করা সংগঠনের লিখিত প্রতিক্রিয়ায় সাদ্দাম হোসেন এবং ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লাগামহীন অরাজকতা, মব জাস্টিস, হাজার-হাজার দলীয় নেতাকর্মীকে হত্যাসহ ইত্যাদি কারণ লুকানোর জন্য সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে বলে অভিহিত করে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে।[104]
ছাত্রলীগের নেতৃত্বে থাকেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ। তারা জাতীয় সম্মেলন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাসহ বিভিন্ন ভাবে নির্বাচিত হন। নিচের ছাত্রলীগের শুরু থেকে নেতৃবৃন্দের তালিকা দেওয়া হলো:[105]
সময়কাল | সভাপতি | সাধারণ সম্পাদক | টীকা |
---|---|---|---|
১৯৪৮ | নাঈমউদ্দিন আহমেদ (আহবায়ক) | [105] | |
১৯৪৮-১৯৫০ | দবিরুল ইসলাম | খালেক নেওয়াজ খান | |
১৯৫০-১৯৫২ | খালেক নেওয়াজ খান | কামরুজ্জামান | |
১৯৫২-১৯৫৩ | কামরুজ্জামান | এম.এ ওয়াদুদ | |
১৯৫৩-১৯৫৭ | আব্দুল মোমিন তালুকদার | এম. এ আউয়াল | |
১৯৫৭-১৯৬০ | রফিকুল্লাহ চৌধুরী | আযহার আলী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন (ভারপ্রাপ্ত) | |
১৯৬০-১৯৬৩ | শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন | শেখ ফজলুল হক মনি | |
১৯৬৩-১৯৬৫ | কে.এম ওবায়দুর রহমান | সিরাজুল আলম খান | |
১৯৬৫-১৯৬৭ | সৈয়দ মাজহারুল হক বাকী | আব্দুর রাজ্জাক | |
১৯৬৭-১৯৬৮ | ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী | আব্দুর রাজ্জাক | |
১৯৬৮-১৯৬৯ | আব্দুর রউফ (বহিস্কৃত) | খালেদ মোহাম্মদ আলী | |
১৯৬৯-১৯৭০ | তোফায়েল আহমেদ | আ.স.ম. আব্দুর রব | |
১৯৭০-১৯৭২ | নূরে আলম সিদ্দিকী | শাহজাহান সিরাজ (বহিস্কৃত), ইসমত কাদির গামা | |
১৯৭২-১৯৭৩ | শেখ শহিদুল ইসলাম | এম. এ রশিদ | |
১৯৭৩-১৯৭৪ | মনিরুল হক চৌধুরী | শফিউল আলম প্রধান (বহিস্কৃত), মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন | |
১৯৭৬-১৯৭৭ | এম. এ আউয়াল (আহ্বায়ক) | ||
১৯৭৭-১৯৮১ | ওবায়দুল কাদের | বাহালুল মজনুন চুন্নু | |
১৯৮১-১৯৮৩ | মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন | খ.ম জাহাঙ্গীর | |
১৯৮৩-১৯৮৫ | আব্দুল মান্নান | জাহাঙ্গীর কবির নানক | |
১৯৮৬-১৯৮৮ | সুলতান মোহাম্মদ মনসুর | মোঃ আব্দুর রহমান | |
১৯৮৮-১৯৯২ | হাবিবুর রহমান (বহিস্কৃত), শাহে আলম (কার্যকরী) | অসীম কুমার উকিল | |
১৯৯২-১৯৯৪ | মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী | ইকবালুর রহিম | |
১৯৯৪-১৯৯৮ | এ. কে. এম. এনামুল হক শামীম | ইসহাক আলী খান পান্না | |
১৯৯৮-২০০২ | বাহাদুর বেপারী | অজয় কর খোকন | |
২০০২-২০০৬ | লিয়াকত সিকদার | নজরুল ইসলাম বাবু | |
২০০৬-২০১১ | মাহমুদ হাসান রিপন | মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন | |
২০১১-২০১৫ | এইচ. এম. বদিউজ্জামান সোহাগ | সিদ্দিকী নাজমুল আলম | [106] |
২০১৫-২০১৮ | মো: সাইফুর রহমান সোহাগ | এস. এম জাকির হোসাইন | [107] |
২০১৮-২০১৯ | রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন | গোলাম রাব্বানী | [27] |
২০১৯-২০২২ | আল নাহিয়ান খান জয় | লেখক ভট্টাচার্য | [27] |
২০২২-বর্তমান | সাদ্দাম হোসেন | শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান | [1] |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.