Loading AI tools
২০২৪ বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অসহযোগ আন্দোলন হলো ২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি হওয়া বাংলাদেশের সরকার বিরোধী একটি আন্দোলন। এই আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হয়।[8] ৩ আগস্ট ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন,[9][10] এজন্য একে এক দফা আন্দোলন নামেও ডাকা হয়ে থাকে। আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আপামর জনতা অংশগ্রহণ করা ও ব্যাপক গণহত্যার মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন নিশ্চিত হওয়ায় একে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলেও অভিহিত করা হয়।[11][12]
অসহযোগ আন্দোলন | |||
---|---|---|---|
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান-এর অংশ | |||
তারিখ | ৪–৫ আগস্ট (১ দিন) | ||
অবস্থান | |||
কারণ | |||
লক্ষ্য | শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগ | ||
পদ্ধতি |
| ||
ফলাফল | আন্দোলনকারীদের বিজয়
| ||
পক্ষ | |||
নেতৃত্ব দানকারী | |||
সম্মিলিত নেতৃত্ব
কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব: | |||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||
মৃত্যু: ১ জন সাংবাদিক[7] |
আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা ৫ আগষ্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান, সেনাপ্রধান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে ৮ আগস্ট ২০২৪ সালে মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্ৰহণ করে।
২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের হয়রানি, গণ-গ্ৰেফতার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শত শত শিক্ষার্থী ও জনসাধারনের মৃত্যু এবং হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হওয়ার প্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকারের কাছে নয় দফা দাবি পেশ করে।[13] উক্ত দাবিগুলো না মেনে গ্ৰেফতার ও আন্দোলনে বলপ্রয়োগ অব্যহত রাখায় বাংলাদেশের জাতীয় শহীদ মিনারে এক দফা হিসাবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৩ আগষ্টে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেয়া হয় অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা। রূপরেখাগুলো ছিল:
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় রাজধানী ঢাকায় এক দফা আন্দোলন শুরু হয়। দুপুরের আগেই বেশ কিছু সড়কে নেমে আসেন বিক্ষোভকারীরা। সরকারি দলের নেতা-কর্মী ও পুলিশের হামলায় বাঁধে সংঘর্ষ। বিভিন্ন স্থানে গুলি, টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেডে আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয় রাজধানী ঢাকা। উত্তরার আজমপুর এলাকায় দিনভর বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। অন্যদিকে সকাল ১০টা থেকেই যাত্রাবাড়ীতে সংঘর্ষ শুরু হয়।[15] সরকারের পক্ষ থেকে দুপুর ১২টার পর মোবাইল অপারেটরদের ফোরজি ইন্টারনেট বন্ধ করতে বলা হয়।[16]
অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে এদিন অনেক জেলায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ এবং গোলাগুলির ঘটনা ঘটে, এতে ৯৮ জন সাধারন মানুষ ও পুলিশ নিহত হয়। লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় এক কলেজছাত্র। আহত হয় অর্ধশতাধিক মানুষ। বেলা ১১টার দিকে জেলা শহরের উত্তর তেমুহনী থেকে ঝুমুর পর্যন্ত এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুপুর ১২টার দিক থেকে সরকারের নির্দেশে মোবাইল অপারেটররা দেশজুড়ে ফোর-জি নেটওয়ার্ক সেবা বন্ধ রাখে।[17] ৫ আগস্ট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বেলা ২টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়।[18]
সারা দেশের মধ্যে সংঘর্ষে সিরাজগঞ্জে পুলিশের ১৩ সদস্যসহ ২২ জন, রাজধানীতে ১১, ফেনীতে ৮[19], লক্ষ্মীপুরে ৮, নরসিংদীতে ৬, সিলেটে ৫, কিশোরগঞ্জে ৫, বগুড়ায় ৫, মাগুরায় ৪, রংপুরে ৪, পাবনায় ৩, মুন্সিগঞ্জে ৩[20], কুমিল্লায় পুলিশের সদস্যসহ ৩, শেরপুরে ৩[21], জয়পুরহাটে ২, ভোলায় ১, হবিগঞ্জে ১, ঢাকার কেরানীগঞ্জে ১, সাভারে ১, বরিশালে ১ জন, কক্সবাজারে ১, গাজীপুরের শ্রীপুরে ১ জন নিহত হয়েছেন।[22]
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক বার্তায় জানানো হয়, ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক আন্দোলন ঘিরে ৪ আগষ্ট দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২৭টি থানা-ফাঁড়ি, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, রেঞ্জ অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় তিন শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।[23]
ত্রিমুখী সংঘর্ষে প্রথম দিনেই নীলফামারী রণক্ষেত্রে পরিণত হয়, ভাংচুর করা হয়েছে নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের বাড়ী। এতে আহত হয় অন্তত ১২জন। [24]
অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তিন দিনের (৫,৬ ও ৭ আগস্ট) সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। সাধারণ ছুটিকালীন সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসগুলো বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি পরিষেবা যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস ও বন্দরগুলোর কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ডাকসেবা এবং এ-সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এই ছুটির আওতার বাইরে থাকবেন।[25] এছাড়া ঢাকাসহ সব বিভাগীয় সদর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা ও উপজেলা সদরের জন্য সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়।[26]
সুপ্রিম কোর্টের পৃথক তিনটি বিজ্ঞপ্তিতে এদিন জানানো হয় সান্ধ্য আইন (কারফিউ) চলাকালে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম ও আপিল বিভাগের সব দপ্তর ও শাখা বন্ধ থাকবে। তবে প্রধান বিচারপতি জরুরি বিষয়ে প্রয়োজন সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। একই সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিতে ৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত হাইকোর্ট বিভাগ ও দেশের সব অধস্তন আদালত বা ট্রাইব্যুনালের বিচারিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।[27]
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে অবিলম্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব ‘রূপান্তরের রূপরেখা’ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। প্রস্তাব অনুসারে, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করবে।[28] এদিন গান বাংলার দপ্তরে হামলা চালানো হয়।
এদিন জুলাই মাসের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন অধ্যাপক নিজ কার্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে ফেলেন।[29] এদিন বেলা তিনটার দিকে শাহবাগে বিক্ষোভে যোগ দিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন,
“ | আমাদের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও গন্তব্য পরিষ্কার। বিজয় এবং একমাত্র বিজয়ই আমাদের লক্ষ্য। আমরা এখনো সময় দিচ্ছি। সরকার যদি এখনো সহিংসতা চালিয়ে যায়, আমরা কিন্তু গণভবনের দিকে তাকিয়ে আছি। শেখ হাসিনাকে ঠিক করতে হবে, এখনো সহিংসতা চালাবেন, রক্তপাত চালাবেন, নাকি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে পদত্যাগ করবেন। | ” |
— নাহিদ ইসলাম |
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ এক বিবৃতিতে আহ্বান করেন,
“ | পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এক জরুরি সিদ্ধান্তে আমাদের “মার্চ টু ঢাকা” কর্মসূচি মঙ্গলবার থেকে পরিবর্তন করে সোমবার (৫ আগষ্ট) করা হলো। | ” |
— আসিফ মাহমুদ |
তিনি আজই সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার আহ্বান জানান।[31]
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন করে ৬ আগস্টের পরিবর্তে ৫ আগষ্ট সোমবার এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। এতে সারা দেশ থেকে আন্দোলনকারীদের ঢাকায় আসার আহ্বান জানানো হয়।[32]
ঢাকায় এদিন ভোর হয়েছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে। সকালটা ছিল মেঘলা, রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। বেলা ১০টার পর থেকে যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, শহীদ মিনার, বাড্ডা, মিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীদের জমায়েতের খবর আসতে শুরু করে। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও শুরু হয়।[33] এদিন সকাল ১০ টায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও সরকারের তরফ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়, ফলে পুরো দেশ আন্দোলনের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মত ইন্টারনেট বিভ্রাটের মধ্যে পড়ে যায় এবং বাংলাদেশ বহির্বিশ্ব থেকে অনলাইনে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।[34]
সকাল ১০ টার পর থেকে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। এসময় ছাত্র-জনতার গনমিছিল ও বিক্ষোভকে যেকোন উপায়ে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছিলো আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ডাকা হয়। এসময় নিরাপত্তা বাহিনী কেন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না তার জন্য শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া বিশ্বাস করে এই কর্মকর্তাদের শীর্ষ পদে যে বসান সেটাও তিনি স্মরন করিয়ে দেন। ওই সময়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়, বলপ্রয়োগ করে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটা মানতে চাচ্ছিলেন না।[35]
ক্রমেই যখন পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে তখন গনভবনে অবস্থানরত কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ ও পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে শেখ রেহানার সঙ্গে আরেক কক্ষে আলোচনা করেন। তাঁকে পরিস্থিতি জানিয়ে শেখ হাসিনাকে বোঝাতে অনুরোধ করেন। শেখ রেহানা এরপর বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু তখনও ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যাপারে শেখ হাসিনা অনড় থাকেন। একপর্যায়ে বিদেশে থাকা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। এরপর জয় তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি হন। তিনি তখন একটা ভাষণ রেকর্ড করতে চান জাতির উদ্দেশে প্রচারের জন্য। ততক্ষণে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা শাহবাগ ও উত্তরা থেকে গণভবন অভিমুখে রওনা হয়েছে। দূরত্ব বিবেচনায় ৪৫ মিনিটের মধ্যে শাহবাগ থেকে গণভবনে আন্দোলনকারীরা চলে আসতে পারে বলে অনুমান করা হয়। ভাষণ রেকর্ড করতে দিলে গণভবন থেকে বের হওয়ার সময় না-ও পাওয়া যেতে পারে। এই বিবেচনায় শেখ হাসিনাকে ভাষণ রেকর্ডের সময় না দিয়ে ৪৫ মিনিট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে হেলিপ্যাডে আসেন শেখ হাসিনা। সেখানে তাঁদের কয়েকটি লাগেজ ওঠানো হয়। তারপর তাঁরা বঙ্গভবনে যান। সেখানে পদত্যাগের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বেলা আড়াইটার দিকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে ছোট বোনসহ ভারতের উদ্দেশে উড্ডয়ন করেন শেখ হাসিনা।[35][36]
দেড়টার দিকে আবার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়, যা সকালে বন্ধ করা হয়েছিল। বেলা ২ টায় খবর আসে যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে সে সময় পর্যন্ত জনসাধারণকে সহিংসতা পরিহার করে ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করেন। তখনই মানুষ বুঝে যায়, পট বদলে যাচ্ছে। মানুষ একে একে ঘর থেকে বের হতে শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাস্তায় মানুষকে আর বাধা দেয়নি। বেলা আড়াইটায় শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবরের পর লাখো মানুষের মিছিল, স্লোগানে মুখর হয় ঢাকা।[37] বেলা পৌনে দুইটার দিকে মোবাইল ইন্টারনেটও চালুর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এসময় রাজধানীর শাহবাগে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। বিভিন্ন জায়গা থেকে সেখানে মানুষ স্লোগান দিয়ে আসতে থাকেন। একি সময়ে মিরপুরের পল্লবী ও ১১ নম্বর থেকে হাজারো মানুষ ১০ নম্বর গোল চত্ত্বরে জড়ো হন। সেখান থেকে তাঁরা আগারগাঁওয়ের দিকে রওনা দেন। প্রায় একি সময়ে রাজধানীর উত্তরা থেকে বনানী অভিমুখে আগিয়ে আসেন আন্দোলনকারীদের আরেকটি দল। সেখানে থাকা শিক্ষার্থী-অভিভাবক ছাড়াও স্থানীয় সাধারন মানুষ রয়েছে ওই দলে যোগ দেন। তারা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে এগিয়ে যান। সবার উদ্দেশ্য হলো গনভবন।[38]
অবশেষে ছাত্র ও জনতার ৩৬ দিনের[39] দেশ কাঁপানো আন্দোলনে পতন হলো আওয়ামী লীগ সরকারের। পালিয়ে যাবার আগে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন। বেলা আড়াইটায় হাসিনা পালিয়ে যাবার পর মিছিল নিয়ে গণভবনে ঢুকে পড়ে অসংখ্য মানুষ। পরে তাঁদের অনেককে গণভবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস নিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।[40] প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকেন কেউ কেউ। এসব গ্রাফিতিতে লেখা ছিল, ‘হাসিনা পালাইছে’, ‘লিবারেশন ওয়ার ২০২৪’, ‘বিজয়’, ‘খুনি হাসিনা’ প্রভৃতি।
পরে অবশ্য বিভিন্ন ব্যক্তি যেসব সরঞ্জাম নিয়ে যেতে চাইছিলেন, তাঁদের অনেকের কাছ থেকে সেসব সরঞ্জাম উদ্ধার করেন ছাত্ররা। উদ্ধারকারী সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র দেলোয়ার হোসেন জনি বলেন, "অনেকেই এখান থেকে বিভিন্ন সরঞ্জামাদি নিয়ে যাচ্ছিলেন। কেউ বলছিলেন, তাঁরা স্মৃতি হিসেবে নিচ্ছেন। তবে যেহেতু এগুলো রাষ্ট্রীয় সম্পদ, তাই এসব সম্পদ ও তথ্য যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য আমরা কাউকে কিছু নিতে দিচ্ছি না।"[41]
প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে যাবার পর দুপুরে সেনা সদর দপ্তরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বৈঠকে ডাক পান জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মুজিবুল হক চুন্নু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাস।[42]
বিকেল চারটায় জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ভাষনে সেনাপ্রধান বলেন,
“ | দেশে একটা ক্রান্তিকাল চলছে। সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ করেছিলাম। আমরা সুন্দর আলোচনা করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীন দেশের সব কার্যক্রম চলবে। আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে ওনার সঙ্গে কথা বলব। তাঁর সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা হবে। | ” |
— জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান |
সমস্ত হত্যা ও অন্যায়ের বিচার হবে বলে জনগণের উদ্দেশে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আরো বলেন,
“ | আপনারা সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখেন। আমরা সমস্ত দায়দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনাদের কথা দিচ্ছি, আশাহত হবেন না। যত দাবি আছে, সেগুলো আমরা পূরণ করব। দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসব। আমাদের সহযোগিতা করেন। প্রতিটি হত্যার বিচার হবে। | ” |
— জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান |
ভাঙচুর, হত্যা, সংঘর্ষ ও মারামারি থেকে জনগণকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, "আপনারা যদি কথামতো চলেন, একসঙ্গে কাজ করি। নিঃসন্দেহে সুন্দর পরিণতির দিকে অগ্রসর হতে পারব। মারামারি ও সংঘাত করে আর কিছু পাব না। তাই দয়া করে ধ্বংসযজ্ঞ, অরাজকতা ও সংঘর্ষ থেকে বিরত হন। সবাই মিলে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হব।"
রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হবে জানিয়ে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, "তাদের সঙ্গে সুন্দর আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে কাজ পরিচালনা করব। ধৈর্য ধরেন, সময় দেন। আমরা সবাই মিলে সব সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হব।"
সংঘাতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, "অর্থসম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। লোকজন মারা যাচ্ছে। সংঘাতের পথে যাবেন না। শান্তিশৃঙ্খলার পথে ফিরে আসেন।" এছাড়াও সেনাপ্রধান আন্দোলনরত ছাত্র–জনতা সবাইকে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।[43] পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অতি শিগগির ছাত্র-শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসবেন।[44]
বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক দেশের সর্বস্তরের জনগণকে শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ জানান। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। তিনি বলেন,
“ | গণতন্ত্রের এই বিজয়ের মুহূর্তে সব নাগরিককে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। একই সঙ্গে জুলাই হত্যাকাণ্ডে নিহত শহীদদের স্মরণ করছি। তবে আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই যে সম্পূর্ণ বিজয় এখনো অর্জিত হয়নি। এই সংবেদনশীল মুহূর্তে প্রত্যেক নাগরিকের কাছে আমাদের অনুরোধ, আপনারা দয়া করে শান্তি বজায় রাখুন। আমাদের জাতীয় সম্পদ গণভবন, সংসদ ভবনসহ যেকোনো ধ্বংস, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গনির্বিশেষে সবার। ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন মতাদর্শ ও ভিন্ন পরিচয়ের সবার সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। এই অর্থহীন হিংসা-বিদ্বেষ ও প্রতিশোধপরায়ণতা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের এই অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে জনগণকে শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ করছি। আপনারা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকুন। | ” |
— অধ্যাপক সামিনা লুৎফা |
শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার খবর শুনে আনন্দে ফেটে পড়ে পুরো দেশ। বিকেলে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় জড়ো হওয়া হাজারো মানুষকে বিজয় উল্লাস করতে দেখা গেছে। হাসপাতালের কর্মীদের রাস্তায় এসে নাচতে দেখা গেছে। অসুস্থ নারীরা হুইলচেয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসেন। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় রিকশায় করে তরুণ-তরুণীদের হাতে ও মাথায় পতাকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।[45]
শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার খবর শুনে চট্টগ্রামের ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, বায়েজিদ, জিইসি, আগ্রাবাদ, এ কে খান, কাজীর দেউড়ি, প্রবর্তকসহ বিভিন্ন সড়কে মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে হাজারো মানুষ। সাধারন মানুষ জাতীয় পতাকা নিয়ে উল্লাস করে ও স্লোগান দেয়। পরে তারা সড়ক থেকে দলে দলে চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট এলাকায় জড়ো হয়ে স্লোগান দেয়।[46]
বগুড়ায় শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে বেলা দুইটার পর কারফিউ ভেঙে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথাকে ঘিরে সব কটি রাস্তায় মিছিল নিয়ে লাখো ছাত্র-জনতার ঢল নামে। এ সময় শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ, নারী থেকে কিশোরী সব বয়সীকে উল্লাস করতে দেখা যায়। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের বেশ কিছু গাড়ি দেখে মিছিলকারীরা সেনাসদস্যদের স্যালুট দিয়ে ও হাত নাড়িয়ে ধন্যবাদ জানান। মিছিলে আসা বগুড়া জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন,
“ | ১৯৭১–এ দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাঙালির বিজয়ের সেই দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হয়নি, কিন্তু ২০২৪ সালের আমার শত শত ভাইদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয়ের অন্য রকম অনুভূতি। ঠিক যেন একাত্তরের সেই বিজয়ের স্বাদ অনুভব করছি আজ। | ” |
রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সংগে বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে জাতির উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি জরুরি ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা জানান।[48]
রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।[49] তার বোন শেখ রেহানার সাথে বিমানবাহিনীর একটি সি-১৩০ হারকিউলিস হেলিকপ্টারে দেশত্যাগ করেন। হেলিকপ্টারটি উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন এয়ার কমোডর আব্বাস, যিনি ১০১ স্কোয়াড্রনের সদস্য।[50] শেখ হাসিনা দেশত্যাগের আগে একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন, তবে তিনি সে সুযোগ পাননি।[51] ঐ হেলিকপ্টারটি বেলা ১:৩০-এ ভারতের আগরতলায় অবতরণ করে। সেখান থেকে ভারতীয় বিমানে শেখ হাসিনা দিল্লির উপকণ্ঠে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের কাছে হিন্দন বিমানঘাঁটিতে পৌঁছান। শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চান। কলকাতা থেকে আনন্দবাজার পত্রিকা দাবি করে, সেনাবাহিনী এবং দিল্লির সঙ্গে আলোচনার সাপেক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তরফে প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে ৪৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার জন্য। তার পরেই শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন।[52]
আন্দোলন পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেউ যেন লুটপাটের সুযোগ না পায়, তা নিশ্চিত করতে ছাত্র–জনতার প্রতি আহ্বান জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। সন্ধ্যা সাতটার দিকে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নয়জন সমন্বয়ক। সেখানে বক্তব্যে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র–জনতাকে শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে অবস্থানের আহ্বান জানান নাহিদ ইসলাম। লুটপাটকারীদের রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন,
“ | আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। এই সুযোগে কেউ যেন লুটপাটের সুযোগ না পায়। | ” |
শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ সম্পর্কিত ব্যক্তিবর্গ ও পুলিশের হত্যা, বাসা বাড়ি ভাংচুর ও থানা পুড়িয়ে দেবার ঘটনা ঘটে। হাসিনার পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণভবন ও সংসদ ভবনে অসংখ্য মানুষ ঢুকে পড়েন। তারা গণভবন ও সংসদ ভবন লুট করেন। বেলা ৪টায় আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কার্যালয়ে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা।[54][55] প্রধান বিচারপতি বাসভবনে হামলা করে বিক্ষোভকারীরা। এরপর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। এদিন একাত্তর টিভি, সময় টিভি, এটিএন বাংলা ও মাই টিভির কার্যালয় হামলা করা হয়।[56] আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির বাসায় ভাঙচুর করা হয়।[57]সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কয়েক শত ব্যক্তি আকস্মিকভাবে পুলিশ সদরদপ্তরে হামলা চালায়।[58] ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সন্ধ্যা ৬টা হতে ৬ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। রাজধানী গুলিস্তানে পুলিশ সদর দপ্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুটি ভবনে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।[59] রাজধানীর গুলশানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার বাড়ি এবং সাবেক অর্থ মন্ত্রী লোটাস কামাল টাওয়ার ভবনে আগুন দিয়েছে উত্তেজিত জনতা।[60] রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরের ৭১ নম্বর সড়কে অবস্থিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে উত্তাল জনতা। এসময় বাসার সামনে থাকা দুটি গাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।[61]
ঢাকা ছাড়াও বাংলাদেশে অন্যান্য জেলাতেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়ি, কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটনা ঘটে:
৫ আগষ্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারাদেশে জনসাধারনের উপর ব্যাপক গুলি করে, যাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাতে নিহত হন অন্তত ১০৯ জন। দুপুরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনরত গনমানুষের উপর লক্ষ্য করে গুলি করেন। এতে ৩০ জন নিহত হয়। [150] যাত্রাবাড়ীর ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন,
“ | জোহরের নামাজ আদায়ের পর আমরা সবাই যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ছিলাম। হঠাৎ পুলিশ আমাদের ওপর গুলি করতে শুরু করে। আমি অন্তত ১০–১৫ জনকে থানার সামনে মরে পড়ে থাকতে দেখি। পরে যখন গোলাগুলি থামে, তখন থানার সামনে পড়ে থাকা লাশগুলো নিয়ে আসি। | ” |
রাজধানীর উত্তরায় পুলিশের গুলিতে ১০ জন, সাভারে ১৮ জন, কুষ্টিয়া শহরে পুলিশের গুলিতে ৬ জন, হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে পুলিশের গুলিতে ৬ জন, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় নৌ পুলিশের গুলিতে ব্যক্তি ১ জন, গাজীপুরের শ্রীপুরে বিজিবির গুলিতে ৫ জন নিহত হন ও অর্ধশতাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সফিপুর আনসার–ভিডিপি একাডেমিতে আনসার সদস্যদের গুলিতে প্রান হারান ২ জন।[150]
আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে ৫ আগষ্ট ২০২৪ তারিখে আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানারাত ইউনিভার্সিটির ইইই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আহনাফ আবীর আশরাফুল্লাহসহ ৪৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে আশুলিয়া থানায় কয়েকজন এসআই লাশ পুড়িয়ে ফেলে।[151] এই ঘটনার সন্দেহভাজন ‘কারিগর’ ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফিকে বিমানবন্দর দিয়ে পালিয়ে যাবার সময় আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।
এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক ভাইরাল হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন পুলিশ সদস্য কয়েকটি মরদেহ একটি ভ্যানে তুলে সেগুলো ব্যানার দিয়ে ঢাকছেন। গুগলের জিওলোকেশন উপাত্ত ও আশপাশের ছবি বিশ্লেষণ করার পর পুলিশ সূত্র ভিডিওটির তারিখ ও অবস্থান নিশ্চিত করে। মানবতাবিরোধী এ অপরাধটি বাইপাইল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের কাছে থানার সামনের এক গলিতে ঘটে। ভিডিওতে দেখা যায়, দুই পুলিশ কর্মকর্তা মরদেহ স্তূপ করে রাখছেন। পরে পুলিশ ভ্যানে স্তূপ করে রাখা লাশগুলো পুড়িয়ে দেয়।[152] এএফপির বাংলাদেশ ব্যুরোর ফ্যাক্ট চেকিং এর প্রধান কদর উদ্দিন শিশির বলেন, বাইপাইল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের কাছে থানার সামনের একটি গলিতে এ ঘটনা ঘটে।[153]
শুধু ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, ফেনীসহ ৩০টি জেলায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের মন্দির ও অবকাঠামোয় হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।[154][155] ডেইলি স্টারের তথ্যমতে, সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার প্রথম ঘণ্টায় অন্তত ২৭টি জেলায় হিন্দুদের বাড়ি, মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে।[156] আজকের পত্রিকা সংবাদমাধ্যমের মতে পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালিয়ে তাদের বাড়ি পোড়ানো হয়।[157] প্রথম আলো অনুযায়ী দিনাজপুরে হিন্দুদের ৪০ দোকানপাটে ভাঙচুর–লুটপাট করা হয়।[158]বিডি জার্নাল অনুযায়ী ৫ - ৯ আগস্ট দেশের ৫২টি জেলায় কয়েক হাজার সংখ্যালঘুদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মন্দির ভাংচুর, হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।[159][160][161][162] এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় আদিবাসীদের ওপরও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে।[163] দেশের কিছু দরবার ও মাজার শরিফ হামলার শিকার হয়।[164] প্রথম আলোর তথ্যানুযায়ী ৫ থেকে ২০ আগস্ট সারাদেশে ১০৬৮ টি সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ২২ টি উপসানালয় হামলার শিকার হয়।[165]
এছাড়াও অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদের নোয়াখালীতে বসবাসকারী সদস্যদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট লাকসাম উপজেলার বিপুলাসার এলাকায় হেযবুত তওহীদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রজেক্টে কর্মরত হেযবুত তওহীদ সদস্যদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার সম্পদ লুটপাট ও বিনষ্ট করে।[166] এর বাইরে সংগঠনটির শেরপুর, জয়পুরহাট, পঞ্চগড়, পাবনা, সুনামগঞ্জসহ ৮টি কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগে একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠী এ হামলা চালায় বলে এক বিবৃতিতে জানায় সংগঠনটি।[167][168]
শেখ হাসিনার পালিয়ে যাবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যম বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলার ভুয়া খবর ও গুজব ছড়াতে শুরু করে। ভারতজুড়ে নানা গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও বিভ্রান্তিকর নানা ভিডিও, ছবি ও সংবাদ প্রকাশ পেতে শুরু করে। আল জাজিরা স্বাধীনভাবে যাচাই করে দেখেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের দিন দুজন হিন্দু নিহত হয়েছেন। নিহতদের একজন পুলিশ সদস্য এবং একজন হাসিনার দল আওয়ামী লীগের কর্মী। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা ঐতিহ্যগতভাবেই সাধারণত আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন। যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার গনহত্যা ও দুঃশাষনের সাথে জড়িত তাই জনরোষ স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগের উপরে এসে পড়ে, এক্ষেত্রে হিন্দু মুসলিম খোজা হয়নি। আল–জাজিরার প্রতিনিধিরা যে কয়েকটি জেলায় আক্রমণ ও লুটের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে, ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে ওই সব বাড়িতে হামলা ও লুটের ঘটনা ঘটেছে।বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন নেতা গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক আল–জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যত দূর তিনি জানতে পেরেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে, এমন হিন্দু ব্যক্তিরা ছাড়া সাধারণ হিন্দু ব্যক্তি বা পরিবার আক্রমণের শিকার হয়নি। গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন,
“ | হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন নেতা হিসেবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, হামলার কারণ রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক নয়। দেশজুড়ে যতগুলো হিন্দু বাড়ি বা অবস্থানে হামলা হয়েছে, তার থেকে ১০ গুণ বেশি মুসলমান বাড়িতে হামলা হয়েছে, শুধু আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে। | ” |
অন্যদিকে ভারতের গুজবের ফলে কোন হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের বাড়িতে যাতে আক্রমন না হয় সেজন্য দেশের সব স্থানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হিন্দুদের মন্দির পাহারা দেন ছাত্র-জনতা। রংপুর মহানগরী ও জেলার আট উপজেলায় হিন্দু ধর্মাবলাম্বীসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়গুলো পাহারা দেন বিএনপি নেতারা।[170] পিরোজপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির পাহারা দেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।[171] চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে কালীমন্দিরসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয় পাহারা দেন হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা।[172] যশোরে হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে রাত জেগে পাহারা দেন স্থানীয় বাসিন্দারা[173] টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায় মন্দির পাহারা দেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা।[174]
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণ–আন্দোলন এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা, গুজব ও অপতথ্য ছড়ানো নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানান দেশের শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকেরা। বাংলাদেশ নিয়ে গুজব না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ১৩ই আগষ্ট ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর উদ্দেশে একটি খোলাচিঠি দেন তাঁরা। চিঠিতে ভারতের বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের গণ–আন্দোলনকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা। এছাড়াও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ছাত্রলীগ যে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তা ভারতের বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যমের খবরে উপেক্ষিত। এর বদলে তারা নানা গুজব ও অপতথ্য ছড়াচ্ছে বলে তারা চিঠিতে অভিযোগ করেন।[175]
এছাড়া এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভারতীয় মিডিয়ায় অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। এছাড়াও তিনি ভারতীয় মিডিয়াকে বাংলাদেশে এসে সাংবাদিকদের রিপোর্ট করার আহ্বান জানান যাতে সত্যিকার অর্থে কী ঘটেছে সেটি সবাই জানতে পারে।[176]
আতঙ্কে জলপাইগুড়ির মানিকগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ১২ শতাধিক[177][178] এবং ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল সীমান্ত দিয়ে ৩ শতাধিক নারী–শিশুসহ সাধারণ বাংলাদেশী ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে।[179]
শেখ হাসিনা ছাড়াও তার প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যায়। তবে বেশ কয়েকজনকে পথিমধ্যে আটকে দেওয়া হয়। ৬ আগস্ট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেশত্যাগ করতে চাইলে হাসিনা প্রশাসনের মুখ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ ও সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলককে আটকে দেয়া হয়।[180][181][182]
১৩ আগস্ট ২০২৪ প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান কে সদরঘাটে নৌকায় করে পালানোর চেষ্টাকালে গ্রেফতার করা হয়।[183] কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই ২০২৪ এ ঢাকা কলেজের সামনে সংঘর্ষে মো. শাহজাহান নামে এক হকার নিহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই মামলায় তাদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[184] ২৪ আগস্ট ২০২৪ নিউমার্কেট থানায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সবুজ আলী ও লালবাগ থানায় ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ নিহতের ঘটনায় করা পৃথক মামলায় সালমান ফজলুর রহমান কে আবার ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয় আদালত।[185] ২৯ আগস্ট ২০২৪ রাজধানীর বাড্ডা থানায় করা সুমন শিকদার হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ০৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[186]
১৩ আগস্ট ২০২৪ সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক কে সদরঘাটে নৌকায় করে পালানোর চেষ্টাকালে গ্রেফতার করা হয়।[183] কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই ২০২৪ এ ঢাকা কলেজের সামনে সংঘর্ষে মো. শাহজাহান নামে এক হকার নিহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই মামলায় তাদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[184] ২৪ আগস্ট ২০২৪ নিউমার্কেট থানায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সবুজ আলী ও লালবাগ থানায় ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ নিহতের ঘটনায় করা পৃথক মামলায় আনিসুল হক কে আবার ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয় আদালত।[185] ২৯ আগস্ট ২০২৪ রাজধানীর বাড্ডা থানায় করা সুমন শিকদার হত্যা মামলায়সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[186]
১৪ আগস্ট ২০২৪ দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।[187] পল্টন থানায় দায়ের করা কামাল মিয়া হত্যা মামলায় ১৫ আগস্ট তাকে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। গত ১৯ জুলাই রিকশাচালক কামাল মিয়া পল্টন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।[188] ২৫ আগস্ট ২০২৪ লালবাগ থানায় ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ নিহতের ঘটনায় করা মামলায় শামসুল হক টুকু কে ০৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[189] ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ লালবাগ থানায় দায়ের করা কলেজছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় ০৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[190]
১৪ আগস্ট ২০২৪ সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।[187] পল্টন থানায় দায়ের করা কামাল মিয়া হত্যা মামলায় ১৫ আগস্ট তাকে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। গত ১৯ জুলাই রিকশাচালক কামাল মিয়া পল্টন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।[188] ২৫ আগস্ট ২০২৪ লালবাগ থানায় ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ নিহতের ঘটনায় করা মামলায় শামসুল হক টুকু কে ০৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[189] ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বাড্ডা থানায় দায়ের করা সুমন শিকদার হত্যা মামলায় পলক কে আদালত ০৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সূত্রাপুর থানার দায়ের করা কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউসার ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজর ছাত্র ওমর ফারুক হত্যা মামলায় পলক কে আদালত ০৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।[190][191] ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সাবেক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।[192]
১৪ আগস্ট ২০২৪ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।[187] পল্টন থানায় দায়ের করা কামাল মিয়া হত্যা মামলায় ১৫ আগস্ট তাকে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। গত ১৯ জুলাই রিকশাচালক কামাল মিয়া পল্টন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।[188] ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ আদাবর থানায় দায়ের করা পোশাককর্মী রুবেল হত্যা মামলায় ০৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[190]
১৬ আগস্ট ২০২৪ ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাচনী বোর্ডের অন্যতম সদস্য সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনকে (৮৪) আটক করা হয়। বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যসহ সর্বশেষ কেন্দ্রীয় নির্বাচনি বোর্ডের সদস্য ছিলেন।[193][194] ১৭ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। আদালতে মামলাটি করে ঠাকুরগাঁওয়ের হাজীপাড়া এলাকার রিপন। রমেশ চন্দ্র সেন অসুস্থ থাকায় রিমান্ড চাওয়া হয়নি।[195]
১৯ আগস্ট ২০২৪ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক ও সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী,সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি কে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় করা একটি হত্যা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।[196][197] মুদিদোকানি আবু সায়েদকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে ১৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়। দীপু মনির ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[198][199] ২৪ আগস্ট ২০২৪ বাড্ডা থানায় দায়ের করা সুমন শিকদার হত্যা মামলায় সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি কে ৪ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয় আদালত।[200]
১৯ আগস্ট ২০২৪ সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী ও নেত্রকোণা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আরিফ খান জয় কে গ্রেপ্তার করা হয়।ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় করা একটি হত্যা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। মুদিদোকানি আবু সায়েদকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে ১৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়। আরিফ খান জয়ের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। [199] ২৫ আগস্ট ২০২৪ লালবাগ থানায় ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ নিহতের ঘটনায় করা মামলায় আরিফ খান জয় কে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[189] ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ লালবাগ থানায় দায়ের করা কলেজছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় ০৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[190]
২০ আগস্ট ২০২৪ চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে গ্রেফতার করা হয়।[201] কক্সবাজারের টেকনাফে একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আবদুর রহমান বদিকে গ্রেফতার করা হয়।[202]
২১ আগস্ট ২০২৪ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোনা-৫ আসন এর সংসদ সদস্য আহমদ হোসেন কে পল্টন থানায় করা যুবদল নেতা ও মুদিদোকানদার নবীন তালুকদার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।[203] আহমদ হোসেনকে ০৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[204][201] ২৫ আগস্ট ২০২৪ লালবাগ থানায় ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ নিহতের ঘটনায় করা মামলায় আহমদ হোসেন কে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[189] ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ আদাবর থানায় দায়ের করা পোশাককর্মী রুবেল হত্যা মামলায় ০৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[190]
২১ আগস্ট ২০২৪ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনের আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।[201] [205] ২১ মাস আগে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে করা এক মামলায় তার ৯ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[206]
২২ আগস্ট ২০২৪ বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এর সভাপতি রাশেদ খান মেনন কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।[207][208] রাজধানীর নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে ০৫ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয় আদালত। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টি। আওয়ামী লীগ আমলে রাশেদ খান মেনন প্রথমে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী এবং পরে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। [209][210] আদাবর থানায় করা পোশাকশ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এর সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন কে আরও ০৬ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয় আদালত। [211] ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এর সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন কে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।[192]
২৩ আগস্ট ২০২৪ জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ ও পটুয়াখালী-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পটুয়াখালী-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ দশম জাতীয় সংসদে চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন।[212][213] ২৪ আগস্ট ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই বিকেলে ভাটারা থানাধীন ফরাজী হাসপাতালের সামনে সোহাগ মিয়া হত্যা মামলায় ০৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।[214] ৩১ আগস্ট ২০২৪ রাজধানী ভাটারা থানা এলাকায় সোহাগ মিয়া নামে এক কিশোরকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এর ফের ০৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[214][215]
২৪ আগস্ট ২০২৪ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোহাম্মদপুর-আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানার একাংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা–১৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সাদেক খান।[216] ২৪ আগস্ট ২০২৪ ট্রাকচালক মো. সুজন (২৪) হত্যা মামলায় ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান এর ০৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[217] ২৯ আগস্ট ২০২৪ রাজধানী আদাবরে জাকির নামের এক যুবককে হত্যা মামলায় সাদেক খানের ০৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[218]
২৫ আগস্ট ২০২৪ নারায়ণগঞ্জ-১ আসন এর সাবেক সংসদ সদস্য বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী রাজধানী ঢাকার শান্তিনগর এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রূপগঞ্জ থানায় করা দশম শ্রেণির ছাত্র রোমান মিয়া হত্যা মামলায় ০৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে প্রথমবারের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর টানা চারবার তিনি একই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে তৃতীয় দফায় সংসদ সদস্য হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি।[219][220] ৩০ আগস্ট ২০২৪ এ ০৬ দিনের রিমান্ড শেষে সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী কে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।[221] ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুবদলকর্মী শফিকুল ইসলাম হত্যা মামলায় নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর কে ০৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ নারায়ণগঞ্জের দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলায় নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর কে ০৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।[222][223] ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীকে চতুর্থ দফায় ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় করা চার হত্যা মামলায় দুইদিন করে ০৮ দিনের এই রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[224]
২৫ আগস্ট ২০২৪ মাদারীপুর-৩ আসন এর সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ কে আদাবর থানা এলাকায় পোশাকশ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। এই হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ কে ০৭ দিন এর রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। [225] আব্দুস সোবহান গোলাপ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পান। এর আগে তিনি দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ছিলেন।[226] ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রাজধানীর আদাবরে পোশাকশ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ এর আবার ০৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[227]
২৬ আগস্ট ২০২৪ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।[228] রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় করা ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে ০৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয় আদালত।[211] ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ট্রাকচালক সুজন হত্যা মামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ০৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[229][230] ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ লালবাগ থানায় আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় ০৪ দিনের রিমান্ডে দেওয়া হয়।[231] ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু কে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।[192]
২৯ আগস্ট ২০২৪ রংপুর-৪ আসনের (পীরগাছা-কাউনিয়া) সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিক মুসলিম উদ্দিন মিলন নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার করে র্যাব।[232] রাজধানীর বাড্ডা থানায় দায়ের করা সুমন শিকদার নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগের মামলায় সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির ০৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। [233] ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বাড্ডায় সুমন শিকদার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে কারাগারে পাঠানো হয়। [227]
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজি মোহাম্মদ সেলিম কে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুরান ঢাকার লালবাগ ও চকবাজার এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজি মোহাম্মদ সেলিম দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৯৬ সালে তৎকালীন ঢাকা–৮ আসন থেকে। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৭ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন হাজি মোহাম্মদ সেলিম। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হাজি মোহাম্মদ সেলিম। [234][235][236][237] আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা হাজি মোহাম্মদ সেলিম এর ০৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[238][239][240] ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাজি মোহাম্মদ সেলিম অসুস্থ হয়ে পড়ায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষ হওয়ার আগেই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।[241]
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু কে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি পিরোজপুর জেলার কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও জিয়ানগর উপজেলা নিয়ে গঠিত পিরোজপুর-২ আসন থেকে ৬ বারের (১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪) নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি বিভিন্ন সরকারের মেয়াদে তিন বার বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের (পানিসম্পদমন্ত্রী,যোগাযোগমন্ত্রী ও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের মন্ত্রী) দায়িত্ব পালন করে। তার পিতা তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া একজন রাজনীতিবিদ এবং দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ১৯৭২-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক ছিলেন। [242][243][244] একই দিনে অসুস্থতা বিবেচনায় জামিন পায় জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।[245]
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান কে গ্রেপ্তার করা হয়। মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন শাজাহান খান। তিনি এই আসন থেকে প্রথম ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। শাজাহান খান ৩১ জুলাই ২০০৯ – ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত নৌপরিবহনমন্ত্রী ছিলেন।[246] রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা কিশোর আবদুল মোতালিব (১৪) হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। [247] ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রিমান্ডে থাকা অবস্থায় শাজাহান খান অসুস্থ বোধ করে। পরে তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।[231]
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী গ্রেপ্তার হয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।[248] রাজধানীর বাড্ডা থানায় দায়ের করা সুমন শিকদার হত্যার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর ০৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[249]
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নায়েব আলী জোয়ার্দ্দারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।[250] ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নায়েব আলী জোয়ার্দ্দারকে দুই মামলায় পৃথকভাবে চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। তবে পৃথকভাবে নয়; একই সঙ্গে চার দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।[251]
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন কে গ্রেপ্তার করে র্যাব।[252] রাজধানীর আদাবর থানায় করা পোশাককর্মী রুবেল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন কে ০৫দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয় আদালত।[253]
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বীর মুক্তিযোদ্ধা নাট্য অভিনেতা হিসেবে খ্যাতিমান আসাদুজ্জামান নূর ২০০১ সালে প্রথম আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনেও আসাদুজ্জামান নূর সংসদ সদস্য হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর তিনি সংস্কৃতিমন্ত্রী হয়েছিলেন।[254] মিরপুর থানায় দায়ের করা সিয়াম সরদার হত্যা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।[255]
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সাবেক পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন মো. মাহবুব আলী। ২০১৮ সালে তিনি বিমান প্রতিমন্ত্রী হন।[254] মিরপুর থানায় দায়ের করা সিয়াম সরদার হত্যা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।[255]
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সাবেক রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি রেলপথমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নূরুল ইসলাম।[256] রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা ইমরান হাসান হত্যা মামলায় সাবেক রেলমন্ত্রী, নূরুল ইসলাম সুজনকে ০৩ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।[257] ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ যাত্রাবাড়ী থানার রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলায় সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে ৫ দিনের রিমান্ড দেয় আদালত।[258]
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি ও লেখক শাহরিয়ার কবির কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।[256] রমনা থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরকে ০৭ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। [259]
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ কুষ্টিয়া-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।[260] মো. রনি নামের এক তরুণকে হত্যার মামলায় কুষ্টিয়া-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জকে ০৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয় আদালত।[261] ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অটোরিকশাচালক মো. রনি হত্যা মামলায় কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জকে আরও ০২ দিনের রিমান্ড দেয় আদালত।[262]
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুককে গ্রেপ্তার করে র্যাব। বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক ২০১৯ সাল থেকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন।[263]
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।[264]
হাসিনা প্রশাসনের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়াও বেশ কয়েকজন সাবেক সেনা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিকদের কে গ্রেফতার করা হয়।
১৬ আগস্ট ২০২৪ সেনাবাহিনীর পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। [265] ১৭ আগস্ট সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান এর আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[266] ২৪ আগস্ট ২০২৪ নিউমার্কেট থানায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সবুজ আলী ও লালবাগ থানায় ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ নিহতের ঘটনায় করা পৃথক মামলায় জিয়াউল আহসানকে কে আবার ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয় আদালত।[185] ২৯ আগস্ট ২০২৪ রাজধানীর আদাবরে জাকির নামের এক যুবককে হত্যা মামলায় জিয়াউল আহসানকে ০৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[218]
২১ আগস্ট ২০২৪ চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল কে পল্টন থানায় করা যুবদল নেতা ও মুদিদোকানদার নবীন তালুকদার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ৭ আগস্ট ২০২৪ বন্দর চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে তাকে নৌবাহিনীর ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিনের কমান্ডার হিসেবে বদলি করা হয়। ১৯ আগস্ট মোহাম্মদ সোহায়েলকে চাকরিচ্যুত করে চিঠি দেয় নৌবাহিনী। ১২ এপ্রিল ২০২৩ চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ছিলেন। কমান্ডার থাকা অবস্থায় ২০১০ সাল থেকে দুই বছর র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মোহাম্মদ সোহায়েলকে ০৪ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয় আদালত।[201] [203][204][205] ২৫ আগস্ট ২০২৪ লালবাগ থানায় ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ নিহতের ঘটনায় করা মামলায় মোহাম্মদ সোহায়েল কে ০৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[189] ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ লালবাগ থানায় দায়ের করা কলেজছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় ০৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[190]
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক কে গ্রেপ্তার করা হয়। এ কে এম শহীদুল হক ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন।[267][268] রাজধানীর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় এ কে এম শহীদুল হক এর.০৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[269][270]
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন কে গ্রেপ্তার করা হয়। চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন।[267][268] রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মুদিদোকানি আবু সায়েদ হত্যা মামলায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের ০৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[269][270] ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সাবেক পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।[192]
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিমএপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।[271] খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান জনি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে ০৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয় আদালত।[272]
২১ আগস্ট ২০২৪ একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রূপা ও প্রধান বার্তা সম্পাদক শাকিল আহমেদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উত্তরা পূর্ব থানার ফজলুল করিম হত্যা মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।[273] ২২ আগস্ট ২০২৪ তাদেরকে ০৪ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয় আদালত। [274] ২৬ আগস্ট ২০২৪ রাজধানীর আদাবর থানায় গার্মেন্টস কর্মী রুবেল হত্যা মামলায় একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ ও সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ও উপস্থাপক ফারজানা রুপার ০৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।[275] ৩১ আগস্ট ২০২৪ সাংবাদিক দম্পতি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ ও সাবেক প্রধান প্রতিবেদক-উপস্থাপক ফারজানা রুপা কে ০৯ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।[276]
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ভাষানটেক থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তকে ০৭ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় আদালত।[259]
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রমনা থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু কে ০৭ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় আদালত।[259]
দৈনিক ইত্তেফাকে বলা হয়, ৯ আগস্ট লালমনিরহাটের জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী সীমান্ত দিয়ে বসত ভিটেসহ সব ফেলে রেখে কয়েক হাজার লোক দেশ ত্যাগের চেষ্টা করে।[277] কিন্তু পরবর্তীতে প্রথম আলোর একটি সংবাদে প্রমাণিত হয় যে, উক্ত সংবাদটি ভুলভাবে পরিবেশিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় নেতারা এসেছেন, আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা এমন গুজব ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের সীমান্ত এলাকায় জড়ো করেন।[278][279]
সরকারকে পদত্যাগ করে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ থেকে দেশকে রক্ষা করার আহ্বান জানায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।[280]
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস বলেন,
প্রথম কথা হলো আমরা স্বাধীন হয়েছি। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এত দিন আমরা ছিলাম দখল হয়ে যাওয়া একটি দেশে থাকার মতো। এখানে শেখ হাসিনা যে আচরণ করছিলেন তা দখলদার বাহিনী, একজন স্বৈরশাসক, একজন জেনারেল এবং আরো অনেকের মতো। তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। সোমবার বাংলাদেশের সব মানুষ নিজেদের স্বাধীন মনে করছেন। আবারো তারা দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করলেন। সারা দেশে এই স্বাধীনতা উদযাপিত হচ্ছে। যারা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেই তরুণদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন সবাই। তারা আমাদের স্বাধীন করেছেন। সবাইকে একত্র করেছেন। পুরো দেশকে স্বাধীন করেছেন। সবাই স্বাধীনতার আনন্দ উপভোগ করছেন। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ শুরু করতে হবে। আমাদের সামনে এখন সব সমস্যা।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার সংবাদে লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে বিজয়োৎসবে শামিল হন হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নারী, পুরুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে এ পার্কের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।[282] এদিকে বাংলাদেশে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও প্রাণহানি রোধ করতে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি।[283]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.