Loading AI tools
বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক একটি সংগঠন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক একটি সংগঠন, যেটি ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই সংগঠনটি বাংলাদেশে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন পরিচালনা করে আসছে।[২][৩][৪]
ধরন | ইসলামী আন্দোলন |
---|---|
উদ্দেশ্য | ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা |
সদরদপ্তর | আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর[১] |
অবস্থান |
|
যে অঞ্চলে কাজ করে | বাংলাদেশ |
দাপ্তরিক ভাষা | বাংলা ভাষা |
আমির | মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী |
মহাসচিব | সাজিদুর রহমান |
মূল ব্যক্তিত্ব | শাহ আহমদ শফী |
১৯ জানুয়ারি ২০১০ সালে এই সংগঠনটি চট্টগ্রামের প্রায় একশত কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত হয়। হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা।[৩][৫] এটি ২০১০ সালে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১১ সালে তারা বাংলাদেশ নারী উন্নয়ন নীতি (২০০৯) এর কয়েকটি ধারাকে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক দাবি করে এর তীব্র বিরোধিতা করে।
২০২০ সালে শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর এই সংগঠনের আমির হন জুনায়েদ বাবুনগরী। জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী আমীর নিযুক্ত হন।
২০১১ সালে এই সংগঠনটি, সর্বক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে গঠিত নারী উন্নয়ন নীতির তীব্র বিরোধিতা করে।[৬][৭] ২০১৩ সালে তারা ইসলাম ও রাসুলকে কটূক্তিকারী নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসি দাবি করে ব্যাপক আন্দোলন ও সমাবেশ শুরু করে। এ প্রেক্ষিতে তারা ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করে।[৫][৮][৯] হেফাজতর ইসলামের এই দাবির কয়েকটি দফা সমালোচিত হলে পরবর্তীতে তারা সংবাদ সম্মেলনে ১৩ দফার ব্যাখ্যা প্রদান করে।[১০]
হেফাজতে ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী তাদের দাবিসমূহ হলো:
৫ মে ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লং মার্চ করে এবং ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্ত্বরে তাদের প্রথম সমাবেশ করে। এই সমাবেশে প্রচুর লোকের সমাগম হয়।[১২] এসময় বিভিন্ন বাধার কারণে অনেক কর্মী চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে তারা চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড়ে সমাবেশ করে। এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠনের কর্মীদের সাথে আইনশৃঙ্খলারক্ষী বাহিনীর সংঘর্ষ হয় এবং কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটে।[১৩][১৪][১৫][১৬]
৫ মে ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি এবং ঢাকার মতিঝিলে তাদের দ্বিতীয় সমাবেশের আয়োজন করে। ৫ ও ৬ মে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে এই সংগঠনের কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষে বহু হেফাজতে ইসলামের কর্মী, পুলিশ, বিজিবি সদস্যসহ মোট ৪৭ জন নিহত হয় এবং সাংবাদিকসহ আরও অনেকে আহত হয়।[১৭][১৮] তাদের উপর ফুটপাতের দোকান ও অন্যান্য বইয়ের সাথে কুরআন শরিফ পোড়ানোরও অভিযোগ আনা হয়।[১৯] এদিন ধর্মীয় বইয়ের প্রায় ৮২টি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়।[২০] তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা দেবাশীষের নেতৃত্বে কুরআন শরিফ পোড়ানো হয়।[২১] পল্টন মোড় ও সিপিবির কার্যালয়ের সামনে পুরোনো ৩৫টি বইয়ের দোকানের মধ্যে ৩টি বাদে সবগুলোই পুড়িয়ে দেওয়া হয়।[২২]
হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা মতিঝিল, পল্টন, জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলার মোড় ও আশেপাশের এলাকায় বহু প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।[২০] এক প্রাথমিক হিসাবে বায়তুল মোকাররম মার্কেট ও তার আশেপাশে প্রায় ৩০০টি দোকান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং তাতে প্রায় ১৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।[২৩][২৪] এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)-এর ১৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা ও একই ইমারতে অবস্থিত জনতা ব্যাংকের ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।[২২] ক্ষতিগ্রস্ত হয় সোনালী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সিটি সেন্টার, কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরবর্তীতে তথ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানান, ওই দিন শিল্প ব্যাংকের পাশে সরকারের পরিবহন পুলে রাখা ৪০টি বাসসহ বিভিন্ন স্থানে দুই শতাধিক যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।[২২] এছাড়া অসংখ্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকাররা ক্ষতিগ্রস্ত হন সেদিনকার ধ্বংসযজ্ঞে। হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা এদিন অবরোধ সৃষ্টির জন্য পল্টন মোড় থেকে বিজয়নগর মোড় পর্যন্ত প্রায় ৭০টি গাছ এবং পল্টন মোড় থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি গাছ কেটে ফেলে।[২৫] ঢাকা সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তার মতে ৫ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) র ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা।[২২][২৫]
৬ মে সংগঠনের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে, ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ আরও বিভিন্ন অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করা হয়।[২৬] এর আগে ৫ মে শাপলা চত্ত্বরে গভীর রাতে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে[২৭] হেফাজতের কর্মীদের বাণিজ্যিক এলাকা থেকে সরানোর উদ্দেশ্যে সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আক্রমণ পরিচালনা করে। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা এতে অংশগ্রহণ করে।[২৮] এছাড়া এই অভিযান পরিচালনার পূর্বেই সরকার বিরোধী স্যাটেলাইট টেলিভিশন - দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করে দেওয়া হয়।[২৯] বিরোধী দল বিএনপি এবং হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় ৫ মে শাপলা চত্বরে গভীর রাতে সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার কর্মীকে হত্যা করে এবং তাদের লাশ গুম করে।[৩০] এশীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে বলা করা হয়, বিভিন্ন ইন্টারনেট রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে তারা ২৫০০ বা তারও বেশি হেফাজত কর্মী ওই হামলায় নিহত হতে পারে বলে ধারণা করছে এবং এজন্য তার তাদের রিপোর্টে একে গণহত্যা বলে অভিহিত করে।[৩১] অন্যান্য তথ্য থেকেও প্রতীয়মান হয় যে, এই অভিযানে কমপক্ষে ৫০ জন হেফাজত কর্মী নিহত হয়েছে।[২৭][৩২] এর প্রেক্ষিতে ঢাকা পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয় এবং হেফাজতে ইসলামের হাজার লোক গুমের এই দাবিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করা হয়। কমিশনার হেফাজতের নেতৃবৃন্দের কাছে নিহতদের তালিকা আহবান করেন এবং বলেন যে সমাবেশস্থলে অসংখ্য সাংবাদিকের উপস্থিতিতে এই ধরনের লাশ গুমের ঘটনা অসম্ভব।[৩৩]
ফ্রান্সভিত্তিক বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয় ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের দাবিতে ঢাকায় জড়ো হওয়া মানুষদের হটিয়ে দিতে পুলিশ স্টান্ট গ্রেনেড, জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এই সহিংসতার কারণে মতিঝিল এলাকার ব্যাংক, বিমা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের শত শত কর্মী রোববার নিজ নিজ অফিসে রাত কাটাতে বাধ্য হন। যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, ব্লাসফেমি আইনের দাবিতে আন্দোলনরত কট্টরপন্থী মুসলমানদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে ঢাকায় কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, ঐদিন বিক্ষোভকারীদের কর্মকাণ্ড ছিল ব্যাপক ধ্বংসাত্মক। শক্তি প্রয়োগ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর আর কিছু করার ছিল না। সহিংসতায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফ লিখেছে, ঢাকায় ইসলামী মৌলবাদীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন।[৩৪]
অনেকেই অভিযোগ করেন, এই সংগঠনের নামটি আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামক একটি সংগঠন থেকে নেওয়া হয়েছে এবং একারণে তারা বিভ্রান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ২০১৩ সালে এই সংগঠনের নেতা সন্দেহে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি শেখ নূরে আলমকে গ্রেফতার করা হয়।[৩৫] তবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতারা বলেন, উক্ত সংগঠনটির নামের আগে আঞ্জুমান রয়েছে। শব্দের এই পার্থক্যের কারণে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
হেফাজতে ইসলামের নারী নীতি বাতিলের দাবির বিরোধিতা করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নারীদের প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজিত হয়। এতে নারী আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, হেফাজতে ইসলাম তাদের এই দাবির মধ্য দিয়ে নারীদের ঘরের বাইরে কাজের সুযোগ বন্ধ করার চেষ্টা করছে।[৩৬] এছাড়া ৬ এপ্রিল ২০১৩ সালে নারী হয়ে পুরুষদের সমাবেশে সংবাদ সংগ্রহ করতে আসার কারণে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা এক নারী সাংবাদিককে প্রহার করে যা দেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে।[৩৭][৩৮]
অভিযোগ রয়েছে যে এই সংগঠনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মদদপুস্ট[৩৯] এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের মানবতাবিরোধীদের বিচার বানচালের উদ্দ্যশেই তারা সকল আন্দোলন ও কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এছাড়া তারা জামায়াতের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পায় বলেও অভিযোগ আছে।[১২] তবে দলটি এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
৬ মার্চের ঢাকা অভিমুখী লং মার্চের সময়ে এই সংগঠনের একজন সংগঠকের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে এক বুলেটিনে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অভিযোগ করা হয় যে, ১৯৮৮ সালের আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় তিনি আফগানিস্তান ভ্রমণ করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হারকাত-উল-জিহাদ-আল-ইসলামি এবং তালিবান সংশ্লিষ্টতারও অভিযোগ করা হয়।[৪০] ২০০৪ সালের একটি সাক্ষাতকারে তিনি প্রকাশ করেন যে, তার সাথে ওসামা বিন লাদেন ও হারকাত-উল-জিহাদ-আল-ইসলামির সম্পৃক্ততা রয়েছে। তিনি সেই সাক্ষাতকারে বলেন,
“ হারকাত-উল-জিহাদ-আল-ইসলামির আমন্ত্রণের কারণেই আমার আফগানিস্তান ভ্রমণ সম্ভব হয়েছে। .........আমরা যারা আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্র ভ্রমণ করছি তারা হলেন, শাইখুল হাদিস, আতাউর রহমান খান, সুলতান যাউক, আবদুল মান্নান, হাবিবুল্লাহ, আমি নিজে এবং আরও তিনজন।” [৪০]
বাংলা নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখকে বিজাতীয় সংস্কৃতি হিসেবে প্রচার করে এর বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলাম। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় বক্ততা, গণমাধ্যমে বাঙালি জাতির মধ্যে বিভেদমূলক, বিদ্বেষমূলক ও ভিন্ন ধর্মের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান ও প্রচার করে থাকে।[৪১] এখানে উল্লেখ্য, বাংলা নববর্ষ বাঙালিদের কাছে বাংলা বছরের প্রথম দিন হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.